Love_with_vampire [১]

0
1094

#Love_with_vampire [১]

কোমরে হাতের স্পর্শে ঘুমের মধ্যেই কেমন নড়েচড়ে উঠলো অহনা।এবার অনুভব করলো পেটের ওপর থেকে সেই শীতল হাতের স্পর্শ বুকের কাছাকাছি আসছে।অহনা ঘুমঘুম ঘোরে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাচ্ছে, কিন্তু পারছে না।বুক বেয়ে সেই শীতল স্পর্শ ঠোঁটে খেলা করছে।অহনা ধরফর করে বিছানা থেকে উঠলো।আশেপাশে কেউ নেই,বিছানায় সে একা বসে আছে।

পাশ ফিরতেই দেখলো তার সদ্য বিবাহিত স্বামী অনুভব, বিছানায় নেই।আজ তাদের বাসররাত ছিলো।অহনা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। তাদের বিয়েটা হয়েছে পারিবারিক ভাবেই।তবে এ বাড়িতে আসতেই অহনার কেমন যেন একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছিলো।বাড়িটা বিশাল।আগেরকার রাজা,জমিদারের বাড়ির মতো।এক কথায় এবানডম হাউজ গুলির মতো।দেয়ালে শ্যাওলা জমা।তবে অহনার ঘরটা অতি সুসজ্জিত ভাবে সাজানো।বিছানাটার ডিজাইন অনেকটা ময়ুরের মতো।বিছানায় বসলে মনে হয় ময়ুরের পিঠে বসে আছি।

ঘরের আবছা আলোয় শাড়ির আঁচলটা বুকে জরিয়ে নিলাম।পেটে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।পেটে হাতের স্পর্শের যায়গা গুলি কালো হয়ে গেছে।বিছানা থেকে নামতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম। পেটে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। দুহাত পেটে চেপে ধরে আয়নায় ঠোঁট দেখতেই অবাক হয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলাম।ঠোঁট লাল টকটকে হয়ে আছে।কখন যেনো রক্ত পড়বে।বুক থেকে শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে দেখলাম বুকে, পেটে সেই শীতল স্পর্শ যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছে সেখানেই কালো হয়ে আছে,আর অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে। ভয় ভয় নিয়ে ব্যালকনিতে যেতেই পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরে ফেললো।রিতিমতো ভয়ে আমি জমে গেছি।পেছন ফিরতেই দেখলাম উনি অনুভব।

বাইরে থেকে হলুদ আলোর ছিটেফোঁটা তার মুখে পড়ছে।মনে মনে ভাবলাম,”পুরুষ মানুষ এতোটা সুন্দর হয় কিভাবে?”।বিয়ের আগে ওনাকে আমি দেখিনি।আমার ইচ্ছে ছিল চাকরি করবো তারপর বিয়ে।কিন্তু একটা হাস্যকর ঘটনার জন্য বিয়েটা করতেই হলো।ওনাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি।ইচ্ছে ছিলো বাসররাতে দেখবো,তাই আগে কোনো পিক দেখিনি।উনি আমার হাত ধরে কাছে টেনে নির্লিপ্ত গলায় বললো-

“ব্যাথা পেয়েছো? দারাও এক্ষুনি সব ঠিক হয়ে যাবে।চোখ বন্ধ করো”

আমি বাধ্য মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করলাম।সত্যি বলতে ওনাকে দেখে আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেছি।চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করলাম উনি আমার পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। প্রথমত ব্যাথায় একটি সরে আসলাম।উনি আমার আরো কাছে টেনে নিলেন।ওনার শ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে।আমার ঠোঁটে,বুকে,পেটে ওনার হাতের ছোঁয়া লাগিয়ে দিলেন।

কি আশ্চর্য! এখন আর ব্যাথা করছে না।কিভাবে সম্ভব এটা? উনি কি যাদু জানে?নইলে ওনার স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাথা গায়েব হয়ে গেলো কিভাবে?তার থেকে বড় কথা,উনি কিভাবে জানলেন আমার ব্যাথার কথা? তবে কি উনিই আমায় স্পর্শ করেছিলেন? আর করলেও এতো ব্যাথা কেন পেয়েছিলাম?।এরকম হাজারো প্রশ্ন মাথা গুরপাক খাচ্ছে।আমার ভাবনাকে অতীত করিয়ে উনি বললেন

“এখন চোখ খোলো।আমাদের তো হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো।একে অপরকে চেনার সুযোগ হয়ে উঠলো না”

লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম “জি”

“অনেক রাত হয়েছে। তুমি শুয়ে পড়ো।কাল তোমায় আমাদের সারা বাড়িটা ঘুড়ে দেখাবো।”

” আপনি ঘুমোবেন না? ”

” হুম ঘুমাবো।নিচে একটু কাজ বাকি আছে।সেটা সেরেই আসছি”

” আপনি কিছু মনে না করলে কিছু কথা বলতাম”

” হুম বলো না,কি বলবে ”

” আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম তখন হঠাৎ কারোর হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে।পাশ ফিরে দেখি আপনিও নেই।তাহলে আমায় স্পর্শ কে করেছিলো? ”

উনি মুচকি হাসলেন।আমি ওনার হাসি দেখে পুরাই শেষ।এতো সুন্দর করে হাসেন কিভাবে উনি?সৃষ্টিকর্তা মনে হয় ওনাকে নিজের হাতে বানিয়েছেন।উনি হেসে উত্তর দিলেন

” এখন ই এতো কিছু ভেবে বসো না।আস্তে আস্তে সব বুঝবা।এখন ঘুমাও।পেটে ব্যাথা এখনো আছে? ”

” না নেই ”

উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে গেলেন।আমি থম মেরে দারিয়ে রইলাম।সারা শরীরে কেমন যেনো শিহরণ জেগে উঠলো।

বিছানায় যেতেই কাঠের তৈরী একটা আলমারির নকশায় আমার দৃষ্টি আটকে গেলো।এ বাড়িতে সবকিছুই কেমন অদ্ভুত রকমের সুন্দর। কাছে গিয়ে আলমারিটায় হাত বুলিয়ে ভেতরে কি আছে দেখার ইচ্ছে জাগলো।আলমারিটা খুলতেই দেখলাম এখানে শাড়ি,লেহেঙ্গা,থ্রি-পিচ আরো এত্তো এত্তো জামা দিয়ে ভর্তি।মনে মনে অনেক খুশি হলাম।

ওখান থেকে একটা সাদা রঙ্গের সাধারণ থ্রি-পিস হাতে নিলাম।দেখতে সাধারণ মনে হলেও হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম এটা অসাধারণ একটা ড্রেস।এরকম হাতের কাজের এতো সুন্দর ডিজাইন আমি কখনো দেখিনি।ঠোঁটের কোনো মুচকি হেসে ড্রেসটা পড়লাম।আয়নায় নিজেকে পরখ করে দেখছি।চোখে একটু কাজলের ছোঁয়া লাগালাম।উফফফ নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেরই হিংসে হচ্ছে।মিনমিনিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই বললাম,কিন্তু অনুভবের সৌন্দর্যের কাছে আমার সৌন্দর্য নেহাত ঠুমকো।

অনুভবের জন্য এই মাঝরাতে সাজলাম।কিন্তু উনি কোথায় গেলেন? আচ্ছা উনি নিচে কি করছেন?এতো কিউট একটা বউকে রেখে উনার নিচের কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি?।

একরাশ অভিমান নিয়ে আয়নার সামনে বসে রইলো অহনা।অতি রুপবতী হওয়ার দরুণ কলেজে উঠার সাথে সাথে প্রতিটা ছেলে অহনার আশেপাশে ঘুরা ঘুরি করতো।এসব বিষয় অহনা লক্ষ্য করতো,কিন্তু কিছু বলতে পারতো না।সবসময় নিজেকে কেমন আনইজি ফিল হতো তখন।সারাক্ষণ একদল চোখ তাকে পরখ করছে,বিষয়টা অহনার প্রচন্ড বাজে লাগে।এমনকি মাঝে মাঝে দরজা বন্ধ করে অনেক কাঁদে।কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলে।অহনা মা নীলাঞ্জনা যখন তার মেয়েকে দেখে এভাবে কান্না করছে তখন তিনি মেয়েকে জরিয়ে ধরে শান্তনা দেন।অহনা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে আর বলে

” আমি এই সৌন্দর্য চাই না মা,আমিও সাধারণ মেয়ের মতো বাঁচতে চাই। এতশত ছেলের দৃষ্টি আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”

অহনার সৌন্দর্যের জন্য অহনার বাবা,মায়ের কাছে সবসময় বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে।অহনার বাবা এই বিষয়ে খুব কঠোর।তিনি চান মেয়ে নিজ পায়ে দারাবে তারপর বিয়ে।

ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর থেকে অহনা আজ কলেজ যায় না।কারনটা তার নিজের সৌন্দর্য।প্রতিদিনের মতোই অহনা সেদিনও কলেজে বান্ধবীদের সাথে বসে গল্প করছিলো।তখনি একজন সিনিয়র ভাইয়া অহনার কাছে এতো এত্তগুলা কালো গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে বসে।অহনা কোনো কিছু না বলে কলেজ থেকে বেড় হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় আসার জন্য রিকশায় উঠতেই সেই সিনিয়র ভাই অহনার রিকশার সামনে দারায়।অহনার হাত ধরে টেনে নিচে নামায়।রিকশার হুড লেগে অগনার হাতের কিছুটা অংশ কেটে র’ক্ত’ও বেড় হয়েছিলো।অহনা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো

” ভাইয়া আমায় যেতে দিন,প্লিজ ”

” খুব অহংকার তোর রুপের তাই না? দেখ তোর কি অবস্থা করি আজ ”

বলেই সিনিয়র ভাইয়াটা অহনার ওরনা টেনে নিয়ে হাতে পেচিয়ে রাখলো।অহনা লজ্জায়, ঘৃনায় লাল হয়ে দুহাত আড়াআড়ি করে বুকে রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।উনি বাইকে বসে বললেন

“কাল কলেজে এসে তুই নিজেই আমায় প্রোপোজ করবি বুঝলি? নইলে আজ তো শুধু ওরনা নিয়েছি।কাল কি হবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারবি”

সেদিন বাড়িতে এসে অহনা তার মাকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করলো।পরের দিন সকালে খবরের কাগজে সেই সিনিয়র ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলো।সারা শরীর ছিন্নবিন্ন হয়ে পড়ে ছিলো যেখানে অহনার সাথে বাজে ব্যাবহার করেছিলো।কোনো এক হিংস্র পশুর কবলে পড়েছিলো সে।তখন থেকেই অহনা কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

হঠাৎ অহনার মনে হলো নিচে গিয়ে দেখবে অনুভব কি করছে।চুপিচুপি দরজা থেকে বেড় হয়ে বারান্দার কার্নিশ ধরে নিচে তাকাতেই অহনা দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চিল্লিয়ে উঠলো।নিচে দেখলো অনুভবের সারা শরীর মানুষের মতো,কিন্তু মাথার যায়গায়…..

চলবে?
লেখক- #জয়ন্ত_কুমার_জয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here