Mr_Devil #Part_30,31

0
2463

#Mr_Devil
#Part_30,31
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
Part_30
.

রশ্নির মনে হচ্ছে
সেই চোখগুলোর দিকে তাকালেই যেন এই গভীর অভিযোগগুলোর ভিড়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে ও

কারন সামনে থাকা বেক্তিটি যে নাহিদ

রশ্নি কিছু বলতে পারছে না শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে

নাহিদ– কেমন আছো?

রশ্নি– আমি,,,

রশ্নির কথা শেষ হওয়ার আগে নাহিদ গিয়ে রশ্নির গালে হাত রেখে
বললো– আমি জানি তুমি ভালো নেই,,ওই জানোয়ারটা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তাই না, তুমি চিন্তা করো না আমি ওর হাত থেকে তোমাকে ঠিক বাঁচিয়ে নিব
তুমি শুধু একবার বলো তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো,আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো

রশ্নি নাহিদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজেকে শক্ত করে নিলো– এখন কেনো এসেছ নাহিদ? যখন আমার তোমার প্রয়োজন ছিল তখন তো আসো নি তাহলে এখন কেন

নাহিদ রশ্নির দুইহাত নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো
— ওহ এক দিনেই ওই লোকটা তোমাকে বস করে নিলো, রশ্নি তুমি জানো না ওই লোকটা কতটা খারাপ
ওইদিন ওই লোকটা আমাকে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রেখেছিল,,
তারপর সকালে ছাড়েন,, বাবা যখন সকালে এসেছিল তখন আমি সব বলেছিলাম
কিন্তু বাবাও এতে কিছু বলেনি

হুহ তাতে কি
তোমার জন্য আমি আমি একাই একশ,, সব কিছু করতে পারি তোমার জন্য,,
তুমি একবার শুধু বলো,,তুমি এখন আমার

— নাহিদ শুনো আমার ক,,,,,

–আরেহ তোমাকে কি জিজ্ঞেস করছি,,তুমি তো আমারই
ওই লোকটা তো তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন
তুমি আমার শুধু আমার,,আমার,আমার,,

রশ্নি– নাহিদ শান্ত হও,, প্লিজ পাগলামো করো না,,যেভাবেই হোক,বিয়েটা হয়েছে তো,,সো এখন আমি অন্য কারো বউ,,

রশ্নির কথাটা শেষ হতে পারলো না তার আগেই নাহিদ চেচিয়ে উঠলো
— না,,রশ্নি শুধু নাহিদের,,আর কারো না
আচ্ছা রশ্নি তুমিই বলো ওই লোকটা যা করেছে তা কি ঠিক?
আজ তো আমাদের বিয়ের প্রথম সকাল হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই লোকটা সব কিছু তছনছ করে দিলো

কিন্তু রশ্নি তুমি চাইলে এখনো অনেক কিছু হতে পারে
আমি ডিভোর্স করবো করবো তোমাদের
আমরা বিয়ে করে নিব

রশ্নি– নাহিদ দেখো,,,,,

রশ্নি হঠাৎ দেখলো দরজার সামনে যেন কে দাঁড়িয়ে আছে
ও সেখানে তাকিয়ে ইয়াশকে দেখে কেঁপে উঠলো

ইয়াশের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে
কিন্তু চোখে স্মিথ শান্ত চাহনি যার তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রশ্নি রাখে না
ইয়াশকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে, রাগে ওর হাত পা কাঁপছে

হঠাৎ রশ্নিকে শান্ত হয়ে যেতে দেখে
রশ্নির দৃষ্টি অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো

নাহিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়াশ ওকে পাশ কাটিয়ে
রশ্নির হাত ধরে বলল– চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে (শান্ত হয়ে)

ইয়াশের এমন শান্ত চাহনি আর স্বাভাবিক আচরণে
রশ্নির কলিজার পানি যেন শুকিয়ে যাচ্ছে

কারন এটা যে বড় সর কোনো ঝড়ের আগের শান্তিময় আবহাওয়া
তা বুঝতে রশ্নির আর বাকি নেই

ইয়াশ রশ্নির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল
কিন্তু পিছন থেকে নাহিদ রশ্নির আরেকটা হাত ধরে ফেলে

নাহিদ– কোথাও যাবে না ও

ইয়াশ নাহিদকে কিছু না বলে রশ্নির দিকে তাকায়

ইয়াশের এভাবে তাকানো দেখে রশ্নি ভয় নাহিদের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চায়
কিন্তু নাহিদ ঘাড় ত‍্যারার মতো তখনো অমনি ভাবে রশ্নির হাতটা ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে

রশ্নি– নাহিদ প্লিজ হাতটা ছাড়ো (ফিসফিসিয়ে)

নাহিদ– না কোথাও যাবে না তুমি

ইয়াশ আর সহ্য করতে পারলো না
এক টানে রশ্নিকে নিজের কাছে নিয়ে এসে পড়ল

হঠাৎ হাতে টান লাগায় রশ্নি ধুপ করে ইয়াশের বুকে গিয়ে পড়ে
আর হাতেও খুব ব্যথা পায়

ইয়াশ– ফারদার আমার বউয়ের গায়ে হাত দিলে ওই হাতটা আর থাকবে না,,,মাইন্ড ইট
(রশ্নির মুখে স্লাইড করতে করতে বললো)

তারপর রশ্নির হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল
আর নাহিদ ওখানেই বসে ভাঙচুর শুরু করে দিলো

ইয়াশ নীচে এসে রশ্নির মামা মামীকে “ওদের তারা আছে” বলে বেরিয়ে গেল

ওরা কিছু বলবে তার আগেই ইয়াশ হনহন করে চলে

নাঈমা– এদের আবার কি হলো? এত তাড়াতাড়ি চলে গেল?
সাহিদ– কি জানি,,
নাঈমা– কিন্তু উপর থেকে কিসের শব্দ আসছে,,চলো তো দেখি গিয়ে

সাহিদ চৌধুরী কিছু একটা ভেবে
বললেন– তুমি থাকো আমি দেখে আসছি,,
নাঈমা– আমিও আসি?
সাহিদ– যতটুকু বলা হয়েছে ততটুকু করো,,বেশি বাড়াবাড়ি আমি পছন্দ করি না,ইউ নো দ‍্যাট

নাঈমা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না
আর সাহিদ চৌধুরী উপরে চলে গেলেন
কি হচ্ছে তা দেখতে

.

ইয়াশ সেই কখন থেকে এক ধ্যানে ড্রাইভ করতেই আছে
রশ্নির দিকে একটু তাকাচ্ছেও না
রশ্নিও কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না

বার বার ইয়াশের দিকে তাকাচ্ছে,কিন্তু কিছু বলতেও ভয় পারছে না

ইয়াশ– আমাকে দেখার জন্য সারাটা জীবন পরে আছে,,সো এখন এভাবে না তাকালেও পারো
(সামনের দিকে তাকিয়ে)

রশ্নি আর ওর দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো
কেন জানি মনে টা খুব খারাপ লাগছে
কিন্তু কেন তা ওর জানা নেই
ইয়াশ ওকে ভুল বুঝলো তার জন্য? নাকি আগাম পরিস্থিতির ভীতিত্ত্ব এটা

কিন্তু ইয়াশ ওকে ভুল বুঝলেও ওর তো খারাপ লাগার কথা নয়
আর সামনে কি হবে তা নিয়ে ভয় পাবে? সেটা ভাবটাও বিদ্রুপ করা হবে
কারন আজ পর্যন্ত যা যা হয়েছে
নিশ্চই সেগুলো থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না

যাক ওসব নিয়ে আর ভাবতে চায় না ও

ইয়াশ– অস্বস্তি বোধ করতে হবে না,,আমি সবটাই শুনেছি

ইয়াশের কথায় রশ্নি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো

রশ্নি– মানে?
ইয়াশ– মানে টা খুবই পরিষ্কার,নাহিদ আর তোমার পুরো কনভারসেশনটাই আমি শুনেছি,,,সো,,,,,,

রশ্নি– কি?

ইয়াশ একটা টেডি স্মাইল দিয়ে
বললো– তোমার রিপ্লাই গুলো আমার ভালো লেগেছে,,স্পেশালি,,*বিয়েটা যেভাবেই হোক তুমি এখন আমার বউ* ওটা

রশ্নি– দেখুন আমি,,,(আঙ্গুল দেখিয়ে)

ইয়াশ রশ্নির কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর হাতটা নিয়ে একটা চুমু খেয়ে তারপর সেটাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো

রশ্নি– ছাড়ুন আমার হাত

ইয়াশ– আহহা, তুমি জানো চেষ্টা করে লাভ নেই,
আমি ছাড়ছি না
তাই চুপচাপ বসো, এনার্জি ওয়েস্ট করো না,পরে কাজে লাগবে (চোখ টিপে)

ইয়াশের কথায় রশ্নির প্রচুর লজ্জা লাগছে,,

রশ্নি– ছি কি নির্লজ্জ লোক

ইয়াশ– নির্লজ্জ বললে যখন,তাহলে তো এখন নির্লজ্জের মতো কিছু করতে হয় (বাঁকা হেসে)

রশ্নি– না প্লিজ,,,

ইয়াশ– তো চুপ করে বস

রশ্নি ভয় চুও হয়ে গেল
সারা রাস্তায় একটাও কথা বলে নি

ইয়াশ বারবার আর চোখে দেখছিল কিন্তু ঐও কিছু বলে নি



ফাইনালি এক ঘন্টা পর ওরা এসে পৌঁছায় ইয়াশদের বাড়িতে

ইয়াশ– নামো,,,

রশ্নি– ,,,,,,,,,,,,,,,,,

ইয়াশ– কি হলো নামো,,,,

রশ্নি– হাতটা? ?

ইয়াশ খেয়াল করলো
ও রশ্নির হাতটা এখনো ওভাবেই ধরে বসে আছে
তাহলে ও যাবেই বা কি করে?

ইয়াশ হাত ছেড়ে দেওয়াতে রশ্নি গাড়ি থেকে নামে

বেরোতেই ওর চোখ যেন আকাশে

এটা বাড়ি নাকি রাজপ্রাসাদ?

অবশ্য রশ্নিদের বাড়িটাও অনেক সুন্দর কিন্তু ইয়াশ এর বাড়িটা চোখ ধাঁধানো সুন্দর

বাড়ির বাহিরটা ব্ল্যাক মার্বেল স্টোন দ্বারা তৈরি

বাড়ির দুই সাইডে বাগান যার মধ্যে বিভিন্ন ফুল শোভা পাচ্ছে

আর মাঝখানের বাড়ির ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটা
একদম চকচকে পরিষ্কার

আর বাড়ির পিছন সাইডটায় সুইমিং পুল

অসাধারন ওয়ার্ডটা খুবই ছোট এই সুন্দর্যকে ডিস্ক্রাইব করার জন্য

আনমনা হয়ে রশ্নি কখন থেকে যে আ করে বাড়িটাকে দেখছে তা ওর নিজেরই খেয়াল নেই
এটা দেখে ইয়াশ ওকে ঝাকিয়ে বললো– এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে যাবে না?

রশ্নি– এটা আপনার বাড়ি?
ইয়াশ– হুম,,কিন্তু এখন থেকে আমাদের,,
রশ্নি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো
ইয়াশ– কেন তোমার পছন্দ হয়েনি?
রশ্নি– না না,,বাড়িটা খুবই সুন্দর

ইয়াশ মুচকি হেসে রশ্নির হাত ধরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার জন্য পা বাড়ালো

ইয়াশ বেল বাজানোর কিছুক্ষন পরেই একজন এসে দরজা টা খুলে দিল

সম্ভবত এটা ওদের বাড়ির সার্ভেন্ট

ইয়াশকে দেখে মনে হয় উনি খুব চমকে গেলেন

চোখ দুটো যেন এখনি বেরিয়ে আসবে

হঠাৎ কি হলো কে জানে
গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলেন

— আম্মাআআআআআআআআ!!!!!!!!!!

রশ্নি তাড়াতাড়ি ওর দুই হাত কানে চেপে ধরলো

ইয়াশ– ওহ হেল,,,,এভাবে গলা ফলিয়ে চিৎকার করছো কেন

সে কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে একজন ভদ্র মহিলার কন্ঠ শুনতে পেল রশ্নি

— আহা রিনু এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন

— আম্মা ছোট সাহেব আসছেন,,

কথাটা শুনা মাত্র ভদ্র মহিলা ছুটে আসলেন আর ইয়াশকে ধরে আদর করতে লাগলেন যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো ছোট বাচ্চা ফিরে পেয়েছেন

— দুইদিন ধরে তোর কোনো খোঁজ খবর নেই,,কোথায় ছিলি বাচ্চা আমার,,জানিস মা কত টেন্স ছিল তোর জন্য

রশ্নি– মনে হয় এটা স্যারের মা,,কিন্তু বাচ্চা? মানে,,, লাইক সিরিয়াসলি? এটা বাচ্চা? বুইড়া বাচ্চা,হুহঃ,,যাক ভালো ভালো,,একটু পর যখন জানতে পারবে বাচ্চা কি কি গুল খেলিয়ে আসছে তখন আর এই আদর চুমু না শুধু ঝাড়ু আর জুতা পড়বো?? (মনে মনে)

ইয়াশ– কাম ডাউন মম,,, এইত্তো আমি তোমার সামনে আছি,,,আসলে কিছু কাজ পরে গিয়েছিল তাই

(আমরা সবাই জানি এটা অনিমা বেগম সো ভদ্র মহিলা ভদ্র মহিলা টা বাদ দেই ?)

অনিমা বেগম– তাই তুই আমাকে না জানিয়ে চলে গেলি,, একটা বড় কল করে বলে দিলেও তো পারতি

ইয়াশ– আচ্ছা আমার ভুল হওয়ার গেছে,, এইযে কানে ধরছি আর কখনো এমনটা হবে না সরি,, এবার তো শান্ত হও

— হুম

রশ্নি– সালা কত্ত বড় মিথ্যুক বলে কিনা কাজে গিয়েছিল আরেহ আন্টি আপনার পোলা কাজে না আমার সর্বনাশ করতে গেছিল ?? (মনে মনে)

এবার অনিমা বেগমের চোখ গেল রশ্নির দিকে

অনিমা– এটা কে বাবাই? তোমার কোনো ফ্রেন্ড নাকি? কিন্তু তুমি তো মেয়েদের সাথে মিশো না তাহলে?,,,,,

রশ্নি– ইইইহহহ মেয়েদের সাথে মিশে না,,আরেহ আপনি কি জানেন আপনার পোলা কত্ত বড় লেভেলের লুচু? শুধু লুচু না লুচু প্রো? (মনে মনে)

ইয়াশ– বলছি আগে বাড়ির সবাইকে ডাকো

অনিমা– বাড়ির সবাইকে ডাকবো কেন?

ইয়াশ– আরেহ মেরি মা,,সব বলবো আগে সবাইকে ডাকো তো

অনিমা– কিন্তু,,,,,

ইয়াশ– আচ্ছা দাঁড়াও

বলে ইয়াশ নিজেই সবাইকে ডেকে নিলো
তারপর এক এক করে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো

ইয়াশ– রশ্নি,,আগে সবার আগে আমার আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই

ইনি হলেন মিসেস অনিমা আহমেদ চৌধুরী
এটা (রাফি কে দেখিয়ে) হলো রাফি আহমেদ চৌধুরী কাব্য,, আমার ছোট ভাই
আর ইনি আমার ছোট ভাই এর ওয়াইফ নিশা আহমেদ চৌধুরী আর ওর সাথে (নেহাকে দেখিয়ে) তো তোমার আগেও কথা হয়েছে
আমার ভাবীর বোন নেহা

আর উনি মিস্টার ইয়ানাফ আহমেদ চৌধুরী
কথাটা বলে ইয়াশ যেন কেমনটা অস্বস্তি ফিল করছে মনে হলো
যেন ওর বাবার পরিচয় টা ও দিতে চায়নি কিন্তু বাধ্য হলো

মাঝ বয়সী লম্বা,সুঠাম দেহি সুদর্শন লোকটাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে না তার এত বয়স
কিন্তু ইয়াশের সাথে অনেকটা চেহারায় মিল পাওয়া যাচ্ছে যার জন্য আর রশ্নির বুঝতে বাকি রইল না এটা ইয়াশের বাবা
কিন্তু ইয়াশ মিস্টার ইয়ানাফ বললো কেন? বাবাও তো বলতে পারতো,,,যাক ওগুলো নিযে রশ্নির মাথা না ঘামালেও চলবে

.

রশ্নিকে দেখে নেহা ফিসফিসিয়ে নিশার কানে কানে বললো– আপু আমি তোমাকে বলেছিলাম না ইয়াশের একটা গার্লফ্রেন্ড আছে যার সাথে ইয়াশ আমাকে ওর অফিসে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ছিল?
এটা ওই মেয়েটাই

নিশা– মানে তুই ওইদিন সত্তি বলেছিলি?
নেহা– হ্যাঁ কিন্তু তুমি তো আমার কথায় পাত্তাই দিলে না
নিশা– কিন্তু একে এই বাসায় নিয়ে এসেছে কেন
নেহা– আমি কি জানি
নিশা– আচ্ছা দারা,,,

নিশা– আমাদের সবার পরিচয় তো করিয়ে দিলে এবার ওর পরিচয়টাও তো দাও

ইয়াশ– হ্যা,,,সো এভরিওয়ান,,মিট মাই ওয়াইফ রশ্নি আহমেদ চৌধুরী

ইয়াশের কথায় সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো

অনিমা– বাবাই,,এটা কেমন ধরনের ফাজলামো?

নিশা– আর ইউ কিডিং উইথ আস?

ইয়াশ– তোমাদের সত্যিই মনে হয় আমি এমন সিরিয়াস একটা ব্যাপার নিয়ে মজা করছি? (সবার উদ্দেশ্যে)

অনিমা– মানে কি এসবের? তুমি বিয়ে করেছ তাও আবার আমাদের না জানিয়ে? তুমি জানো না আমাদের কত প্ল্যান্স ছিল তোমার বিয়ে নিয়ে?

ইয়াশ– মম আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি,,,

অনিমা– তোমাকে দিয়ে এটা এক্সপেক্ট করিনি
(বলেই অনিমা বেগম হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন)

নেহা তো এসব শুনে আগেই কান্না করতে করতে চলে গেছে তার পিছে পিছে নিশা

বাকি রইল রাফি আর ইয়াশের বাবা

ইয়াশ রাফির দিকে তাকালো
যা দেখে ঐও বউ বউ করতে করতে নিশার পিছে ছুটলো

ইয়াশের আগের থেকেই ভয় ছিল
বিয়ের ব্যাপারে জানলে সবাই এমনটাই রিয়েক্ট করবে
স্পেশালি তার মম
আর তার বাবার থেকে এমনিতেও কিছু আশা করে না সে তাই রশ্নিকে নিয়ে তার রুমের দিকে পা বাড়ালো

তখনই পিছন থেকে তার বাবা ডেকে উঠলো

তার ডাকে দুইজন থেমে গেলো

রশ্নি গিয়ে তাকালে সালাম করলো
সেও রশ্নিকে ভরপুর আশীর্বাদ দিয়ে দিল

— সব সময় সুখে থাক মা (মাথায় হাত দিয়ে)

— রশ্নি মুচকি হাসলো

— দেখ মা কেউ তোকে মানুক বা নাই মানুক আমার কিন্তু তোকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছে।

(তার কথায় রশ্নি সিওর হলো যে এটা ইয়াশের বাবা)

ইয়াশ– চলো রশ্নি,,
রশ্নি– আচ্ছা আঙ্কেল তাহলে আসি,,

ইয়াশের বাবাও হেসে সায় দিলেন

রশ্নি এতক্ষনে বুঝে গেছে যে ইয়াশ আর ওর বাবার মাঝে কোনো কারণে বনি বনাত নেই

কিন্তু আরেকটা জিনিষও রশ্নি লক্ষ করলো যে যখন ইয়াশের বাবা ওর মাথায় হাত রেখেছিল তখন ও একটা অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব করেছিল


চলবে,

#Mr_Devil
#Part_31
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)



ইয়াশের রুমটাও খুব সুন্দর
অনেক বড় আর গোছানো

রশ্নি রুমটায় চোখ বুলিয়ে দেখছিল
তখনই ওর চোখ যায় বেডের পাশের একটা দেওয়ালে
দেওয়ালটাতে বড় একটা কালো কাপড় টানানো

রশ্নির মনে কৌতূহল জাগলো
কাপড়টার পিছনে কি আছে তা জানার

ও হাত দিয়ে কাপড় টা একটু সরাতেই যাচ্ছিল তখনই ইয়াশ এসে ওর হাতটা ধরে ফেলে

ইয়াশ– কি করছো তুমি?
রশ্নি– না মানে এই জায়গাটা ঢাকা কেন

ইয়াশ রশ্নির হাতে চুমু খেয়ে বললো– সময় আসলে আমিই তোমাকে জনাবো এটার পিছনে কি আছে কিন্তু এর আগে তুমি এর ধারে কাছেও আসবে না

রশ্নি অবাক হয়ে ইয়াশের কথা গুলো শুনছিলো
এটার পিছে এমন কি আছে যা ও এখন দেখতে পারবে না

রশ্নি আর বেশি কথা বাড়ালো না,,,

.

★–রাতে–★

রশ্নি ইয়াশের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে এই ৭-৮টা মাসে কি হয়ে গেল তার এই ছোট্ট জীবনটার সাথে

আসলে তার ভাগ্যটাই খারাপ

যাকে চাইলো তাকে পেল না
আর যে তাকে চায় তাকে সে মেনতে পারছে না

প্রচুর ক্লান্ত লাগছে তার
আর খেলতে পারছে না এই মানিয়ে নেওয়ার খেলাটা

প্রথমে মা বাবা আর ওর ভালোবাসার মানুষগুলো চলে যাওয়ার পর মামা দের বাসায় থাকতে শুরু করলো
তারপর শুরু হয়ে মামীর অত্যাচার
এরপর মামার মুখের দিকে তাকিয়ে নাহিদকে মেনে নেওয়া
আর এখন এই লোকটা

কিন্তু অবাক করে দেওয়া বিষয় হলো এটা যে
এত কিছুর পরেও সে ইয়াশকে কিছু বলতে পারছে না বা রাগ দেখতে পারছে না
.

রশ্নি চোখ বন্ধ করে এগুলো ভাবছিল তখনই পিছন থেকে ইয়াশ এসে ওকে জড়িয়ে ধরে

রশ্নি বুঝতে পেরে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু বরাবরের মতোই ইয়াশের সাথে পেরে উঠে না তাই শান্ত হয়ে যায়

ইয়াশ– এখানে বসে কি ভাবছো সুইটহার্ট?
রশ্নি– আমাকে কি একটু একা থাকতে দেওয়া যায় না?
ইয়াশ– ধুর বিয়ে কি একা থাকার জন্য করে নাকি

রশ্নি চুপ হয়ে গেল কারন ও জানে এখন ইয়াশের সাথে তর্ক করে লাভ নাই

ইয়াশ– তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে

রশ্নি ভ্রূ কুঁচকে তাকালো

ইয়াশ– ওয়েট

বলেই ইয়াশ উঠে বাহিরে চলে গেল
তারপর কিছুক্ষন পর হাতে মিডিয়াম সাইজের একটা প্লাস্টিকের বালতি নিয়ে আসলো

রশ্নি– এটা কি?
ইয়াশ– বলছি ওয়েট

বলে ইয়াশ বালতিটা নীচে রেখে দিল

ইয়াশ– দেখি তোমার হাত দুটো দাও
রশ্নি– মানে?
ইয়াশ– যা বলছি তাই করো

রশ্নি হাতটা বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ইয়াশ তা খপ করে ধরে ফেলল তারপর হাতে মধ্যে সাবান ঘষতে শুরু করলো

রশ্নি– আরেহ পাগল হয়ে গেলেন নাকি,,,কি করছেন এসব

ইয়াশ কিছু না বলে ওর কাজ করেই যাচ্ছে

ইয়াশ এতটাই জোরে ঘসছে যে রশ্নির মনে হচ্ছে যেন ওর হাতের চামড়া গুলো কেউ টেনে তুলে ফেলছে

রশ্নি– কি করছেন এসব,,ছাড়ুন আমার হাত

রশ্নির কথায় পাত্তা না দিয়ে ইয়াশ ওর হাত দুটো নিয়ে ওই বালতিতে থাকা গরম পানিতে চুবিয়ে দিলো

এবার রশ্নি চিৎকার না করে পারলো না
ও প্রায় কেঁদেই দিয়েছে

অনেক আকুতি মিনতি করছে ইয়াশের কাছে যেন ওকে ছেড়ে দেয় কিন্তু ইয়াশের ছাড়ার কোনো নামই নেই
ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন রশ্নির কথা কিছুই ওর কানে যাচ্ছে না

বেশ কিছুক্ষণ পর পানি রুম টেম্পারেচারে চলে আসায় ইয়াশ রশ্নিকে ছেড়ে দেয়

আর এখানে রশ্নি গরম পানির তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছে

ইয়াশ রশ্নিকে কোলে তুলে নিয়ে বেডের দিকে পা বাড়ালো তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে এক হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে রইলো

এরপর রশ্নির চোখের কোনের পানিটা নিজের হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে দিলো

ইয়াশ– কেন এমন কাজ কাজ করো বলো তো যার জন্য তোমাকে কষ্ট দিতে হয়ে



●[[[★[[[★[[[[★[[[[◆সকালে◆]]]]★]]]]★]]]★]]]●

রশ্নি পিট পিট করে চোখ খুলে দেখে ইয়াশ এখনো ওভাবেই বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে

কিন্তু ওর চোখ গুলো ফোলা যেন খুব কেঁদেছে

রশ্নি– স্যার কি কেঁদেছে? কিন্তু কেন?
আর কাঁদলে কাঁদুক,,রাক্ষস একটা আমার হাতটার কি অবস্থাটাই না করেছে

ওর হাতটা এখন দেখতে কেমন হবে তা ভেবেই আরো কাঁদো কাঁদো হয়ে পড়লো রশ্নি

ও একটা সিরিয়ালে দেখেছিল একটা মেয়ের হাতে গরম পানি পড়ে যায় যার ফলে হাতটা দেখতে খুব ভয়ঙ্কর হয়ে গিয়েছিল

একটু একটু করে হাতটা সামনে আনলো তারপর চোখটা আস্তে আস্তে খুলে দেখে তার হাতটা

কিছুই হয়েনি,,একটুও পুড়েনি,,শুধু একটু লাল হয়ে আছে যা হয়তো পানি ঢাললেই ঠিক হয়ে যাবে

অবাক লাগলেও সাথে খুব খুশিও লাগছে যে ওর হাতটা একদম ঠিক আছে

রশ্নি হাতটা ঘুরিয়ে দেখছিল তখনই ওর চোখ যায় পাশে থাকা ইয়াশের দিকে

ইয়াশ ওর দুই হাত মাথার নীচে রেখে রশ্নিকে দেখছে

রশ্নি কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারছে না
এটা বুঝতে পেরে ইয়াশ নিজেই রশ্নির কাছে এসে বললো– হাতটা পুড়েনি কেন তাই ভাবছো তো?

রশ্নি মাথা নিচু করে সম্মতি দিলো

ইয়াশ এবার জোরে জোরে হেসে দিলো

ইয়াশের হঠাৎ এমন হাসি দেখে রশ্নি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো

ইয়াশ ওর হাসি কোনো মতে থামিয়ে
বললো– দেখো তুমি যতটা রিয়েক্ট করেছ পানিটা ততটা গরম ছিল না
হ্যাঁ একটু গরম ছিল কিন্তু তা তোমার জন্য সহনীয়

রশ্নি– তাহলে এত কষ্ট হলো কেন আমার?

ইয়াশ– লেট মি গিভ ইউ এ এক্সাম্পেল
দেখো যখন কারো হাত এক্সিডেন্টালি কেটে যায় তখন কিন্তু সে ততটা ব্যথা অনুভব করে না যখন সে সেটা জানার বা বুঝার পর করে সো তোমার ব্যাপারেও তেমনটাই ঘটেছে
পানিটা ততটা গরম না হলেও পানি টা যে গরম সেটা ভেবেই তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল

রশ্নি– ওকে সব বুঝলাম তাহলে এবার বলেন আপনি আমার সাথে ওমনটা করলেনই বা কেন? ?

ইয়াশ– হুহ,,,,আমার বউয়ের গায় অন্য একজন স্পর্শ করবে আর সেটাকে আমি ওভাবেই থাকতে দিব নাকি

রশ্নি এবার বুঝলো ইয়াশ এমনটা কেন করেছে

রশ্নি– ??

ইয়াশ– এমন এক্সপ্রেশন দেওয়ার কিছু নেই
ইয়াশ আহমেদ যেখানে নিজের টিস্যু পেপার অন্য কাউকে ইউজ করতে দেয় না সেখানে তুমি আমার বউ

বলে ইয়াশ সেখান থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল

রশ্নি এখনো হা করে তাকিয়ে আছে

তখনই গেটে নক করার আওয়াজে রশ্নির ধ্যান ভাঙলো ও গিয়ে গেইটটা খুলে দিল

গেইট খুলে দেখলো অনিমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন

রশ্নি তাকে সালাম করে নিলো

অনিমা– শুনো বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে তো
তাই তুমি যে আমাদের বাড়ির বউ সেটা আমরা অস্বীকার করতে পারবো না যাক মেইন পইন্টে আসি নীচে আমাদের কিছু রিলেটিভস এসেছে তোমাকে দেখতে সো রেডি হয়ে নীচে চলে এসো

রশ্নি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো

অনিমা বেগম– আর শুনো,,আমাদের ফ্যামিলি নাইনটি’স এর ওই বিয়ের প্রথম দিন বউয়ের শাড়ি পড়ার নিয়ম ফলো করে না
সো ইউ ক্যান ওয়ের হোয়াটেভার ইউ ওয়ান্ট

বলেই অনিমা বেগম চলে যাচ্ছিল তখনই পিছন থেকে ইয়াশ এসে তাকে আটক দিলো

অনিমা বেগম দাঁড়িয়ে গেলেন

— আমার উপর এখনো রেগে আছো মম?
— অনিমা চৌধুরী যার তার সাথে রাগ করে না
— আজ আমি তোমার কাছে যে সে হয়ে গেলাম?
— নীচে সবাই ওয়েট করছে সো আমি আসছি

অনিমা বেগম গেইট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই ইয়াশ গিয়ে তার সামনে ইনোসেন্ট ফেইস করে দাঁড়িয়ে গেল

ইয়াশ– প্লিজ সরি,,,,

এমন প্রায় একশ বারের উপর ইয়াশ সরি বললো ননস্টপ

এবার অনিমা বেগম ইয়াশের এমন কান্ডে হেসেই দিলো

— হয়েছে এবার সর

ইয়াশ গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো

ইয়াশ– আগে বলো তুমি আমার উপর আর রেগে নেই

অনিমা বেগম ইয়াশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে
বললেন– মা কি কখনো নিজের বাচ্চার থেকে বেশিক্ষন রেগে থাকতে পারে হুমম,,,,

ইয়াশ আর ওর মাকে দেখে রশ্নির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে
ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, আজ ওর মা বেঁচে থাকলে ওকেও এভাবে ভালো বাসতো

অনিমা বেগম বুঝতে পারলো রশ্নি মন খারাপ করেছে
তাই ও গিয়ে রশ্নিকে টেনে সামনে নিয়ে আসলো

— তুমি এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মন খারাপ বুঝি? নিশ্চই নিজের মাকে মিস করছো তাই না? একটা কাজ করো তোমার মাকে কল দিয়ে কথা বলে নাও

রশ্নি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো– কাকে কল করবো আন্টি? আমার যে মাই নেই
ছোট থাকতেই কার এক্সিডেন্টে মা বাবা মারা যান

অনিমা– সরি মা আমি জানতাম না
রশ্নি– ইটস ওকে আন্টি
অনিমা– আন্টি আন্টি কি বলছো,,আজ থেকে আমাকে মা বলে ডাকবে

রশ্নি তাকে জড়িয়ে ধরে সম্মতি দিলো

রশ্নি– হুম মা,,,,

ইয়াশ– জানো তো এখন না আমার খুব আফসোস হচ্ছে কেন যে বিয়েটা করতে গেলাম,,তোমার আরেকজন ভাগিদার হয়ে গেল

অনিমা বেগম হেসে ইয়াশের কান টেনে দিলেন

— ও মেয়েটাই এমন, খুব সহজেই সবার মন জিতে নেয়

ইয়াশ– শুধু মন নয় সব ব‍্যাপারেই জিতে যায়,,কয়েকবার তো আমাকেও টেক্কা দিয়েছিল জিতেও গিয়েছিল

অনিমা বেগম– তাই নাকি

ইয়াশ– হুম,,,কিন্তু অবশ্যই শেষে বিজয়টা আমিই লাভ করি
তাই না মিস রশ্নি এনায়াত খান? (বাঁকা হেসে)

রশ্নি বুঝতে পারলো ইয়াশ কি মিন করেছে ওর কথার লাস্ট লাইন দিয়ে



চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here