Mr_Husband,পর্ব_১১,১২

0
3801

#Mr_Husband,পর্ব_১১,১২
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১১

নিজের একমাত্র রাক্ষস বরের সামনে যে প্রপোজ পাবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি মুন। ভয়ে ওর ছোট্ট কলিজাটা আরো ছোট হয়ে গেছে। আঁধারের মুখের রং পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে মুখটা লাল বর্ন ধারন করছে। চোখ দুটো অগ্নিগিরির মতো জ্বলজ্বল করছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। কিন্তু তারপরও আঁধার নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। মুন মনে হচ্ছে ভয়ে মরেই যাবে। আঁধার বলে ছিল একটা রুল ব্রেক করলেও পানিসমেন্ট পেতে হবে। আর আজ প্রথম দিনেই……….মনে হচ্ছে কপালটাই খারাপ। মুন চাইছে মাটি টা একটু ফাঁক হয়ে যাক তাহলে ও তার ভিতর ঢুকে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। ছেলেটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

—“আই লাভ ইউ মুন। তোমাকে সেই প্রথম দেখেছিলাম শপিং মলে। আর তারপর থেকেই আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কিছু ভালো লাগে না। শুধু ইচ্ছে করে সারাদিন-রাত তোমার কথা ভাবি। তুমি রাজি থাকলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”

মুন মনে মনে বিরবির করলো,

—“এই মালটা আবার কোত্থেকে টপকালো? ভাই তোর রাতের ঘুম সত্যি’ই হারাম হয়েছে কিনা জানিনা। কিন্তু আমার আজ রাতের ঘুম তুই হারাম করেই ছাড়বি দেখছি।”

ছেলেটা আবারো বলল,

—“উইল ইউ ম্যারি মি মুন?”

এর’ই মধ্যে ক্যাম্পাসের সামনে ছোটখাটো একটা ভীর জমা হয়ে গেছে। উৎসুক জনতা মুনের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মুন কি জবাব দিবে সেটাই জানার আগ্রহ তাদের। মুন মুখটা করুন করে জবাব দিলো,

—“ভাই আমি অলরেডি বিবাহিতা। আমার আর বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। ভাই কেনো শুধু শুধু আমার সংসারে আগুন লাগাচ্ছেন বলেন তো। ওই দেখুন আমার একমাত্র রাক্ষস জামাই আর আমি তার একমাত্র মাসুম বউ। আমারা দুজন বিরিয়ানির মতো। আপনি কেনো তাহলে শুধু শুধু তার মধ্যে এলাচের কাজ করছেন ভাই?”

মুনের কথা শুনে ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আর প্রপোজের এমন উওর শুনে আমজনতাদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। মুনের পাশে দাঁড়িয়ে আলিয়া হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আঁধারের এক্সপ্রেশন আর মুনের ভীত ফেস দেখে আলিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সব কিছু। মুন আলিয়া কে ধাক্কা মেরে বলল,

—“আলিয়া বলো না উনাকে?”

আলিয়া হাসি থামিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হাসিরা ওর বন্ধ করে দেয়। মুন কড়া চোখে তাকাতেই আলিয়া অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলল,

—“হ্যা ভাইয়া ও বিবাহিতা। আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ আর আমার একমাত্র ভাবি। একমাত্র আগে এলেও আপনার একটা চান্স ছিলো। কিন্তু এখন আর নেই। কারণ আমার ভাই বুকিং করে ফেলেছে।”

মুন জোড় পূর্বক হেসে বলল,

—“আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমি আপনার জন্য সুন্দর দেখে একটা ভালো মেয়ে খুজে দিবো। কেমন? আর আমি না আপনাকে ভাই বানাতে চাই। তাই আজ থেকে আপনি আমার ধর্মের ভাই। ঠিক আছে? আবার উঠুন উঠুন।”

বলেই ছেলেটির হাত ধরে টেনে তুলল মুন। মুনের কথা শুনে আরেক দফা সবাই হাসিতে ফেটে পরলো। বেচারা এসে ছিল জামাই হতে আর হয়ে গেল ধর্মের ভাই। একেই বলে কপাল। এদিকে মুন ছেলেটার হাত ধরায় আঁধারের রাগ সপ্তম আকাশ ছুঁয়েছে। আজ মুনের কপালে দুঃখ আছে সেটা আঁধার কে দেখেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।

.

মুনের এডমিশন করিয়ে ওখান থেকে সোজা লাইব্রেরিতে চলে গেল আঁধার। আঁধার মুনের জন্য নোটবুকস, টেস্ট পেপারস, প্যাডস ইত্যাদি নিচ্ছে। আর মুন ঘুরে ঘুরে একটা করে গল্পের বই নিচ্ছে। মুন বই গুলো নিয়ে কাউন্টারে রাখলো। আঁধার ভ্রু যুগল কুঁচকে মুনের দিকে আর বই গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। মুন এক গাদা গল্পের বই নিয়েছে। আঁধার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার বুকসেল্ফ গুলো’র দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো এক গাদা বই নিয়ে। মুন প্রশ্নকর দৃষ্টিতে আঁধারের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার বলল,

—“তোমার ওই বই গুলোর মধ্যে তুমি যে কোনো দুটো বই নিতে পারবে। আর গুলো ফেরত দিতে হবে। তোমার আউট বুকস পড়তে ভালো লাগলে আমি তোমার জন্য আলাদা বই এনেছি সে গুলো পড়তে পারো। এই বই গুলো পড়লে জ্ঞান বাড়বে। ওগুলো পড়লে কোনো লাভ হবে না।”

মুখের রাগে মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ও গল্পের বই নিতে চাচ্ছে আর আঁধার ওকে কতগুলো জ্ঞানী বাবার বই ধরিয়ে দিচ্ছে। লাগবে না কোনো বই। মুন কিছু না বলেই রেগে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেল। আঁধার দীর্ঘশ্বাস শ্বাস ছাড়লো। তারপর নিজেই মুনের আনা গল্পের বই গুলো থেকে দুটোর জায়গায় ভালো ভালো পাঁচটা বই বাছাই করে নিল। আর মুনের জন্য নিজের আনা বই গুলো ও নিলো। মুন গাড়ির ফ্রন্ট সিটে চুপচাপ বসে আছে। আঁধার বই গুলো এনে গাড়ির ডিকিতে রাখলো
তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কারো মুখে কোন কথা নেই। মুন চুপ চাপ জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। আঁধার একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ আঁধার সুপার সপের সামনে গাড়ি ব্রেক করলো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে সপের ভিতরে চলে গেল। মুনের অভিমান আরো বেড়ে গেল। আঁধার নিজ থেকে একবার কথাও বলল না। রাগ ও ভাঙ্গালো না। একবার কথা বললে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?
কিছুক্ষণ পর আঁধার দুটো থলি হাতে সপ থেকে বেরিয়ে এলো। একটা থলি মুনের কোলে রেখে অন্য টা ব্যাক সিটে রাখলো। মুন অবাক চোখে আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধার সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। মুন থলি খুলো‌ দেখলো ভিতরে অনেক গুলো চকলেট আর আইসক্রিম।মুন অবাক কন্ঠে’ই জিজ্ঞেস করল,

—“এগুলো আমার জন্য?”

আঁধার ড্রাইভ করতে করতে জবাব দিলো,

—“না আমার জন্য। তোমাকে শুধু রাখতে দিয়েছি।ভুলেও একটাতেও হাত লাগাবে না। তাহলে কিন্তু………”

আঁধার লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে চমকে গেল। মুন আঁধারের কথা না শুনেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। বাচ্চাদের মতো পুরো মুখ মাখিয়ে ফেলেছে। মুন খেতে বলল,

—“আপনি আমার। আর আপনার সব জিনিসই আমার অধিকার আছে। তাই এগুলো তে ও আমার অধিকার আছে।”

‘আপনি আমার’ মুনের এই কথাটা গিয়ে আঁধারের বুকে তীব্র ভাবে আঘাত হানে। মুন আবারো বলল,

—“আর সব থেকে বড় কথা আপনার এতো কষ্টের এই বলিষ্ঠ বডি এই তুচ্ছ চকলেট আর আইসক্রিম খেয়ে নষ্ট করবেন তা কি আমি হতে দিতে পারি বলেন? একদমই না। আর টাকার জিনিস ফেলে দিতেও তো পারি না। তাই আমিই খেয়ে ফেলি।”

মুন খিলখিল করে হাসলো। মুনের কথায় আঁধার ও মৃদু ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।

.

মুন আঁধারের পেন্ট, শার্ট পেটাচ্ছে থুরি ধুচ্ছে। আর বিরবির করে আঁধার কে গালিগালাজ দিচ্ছে। আঁধার একবালতি জামা কাপড় ভিজিয়ে মুন কে ধুতে দিয়েছে আর বলেছে ভালো সরে ধুয়ে পরিষ্কার করতে। কোথাও যেন একটু ময়লাও না থাকে। তাহলে এই জামা কাপড় আবার ধুতে হবে। মুন আঁধারের রাগ আঁধারের কাপড় গুলোর উপর দেখাচ্ছে। মুন এমন ভাবে একটা টিশার্ট কে টাইলস এর উপর বারি মারছে মনে হচ্ছে টিশার্ট টা ছিঁড়ে ফাতা ফাতা হয়ে যাবে। আঁধার ওয়াশ রুমে টোকা মেরে বলল,

—“তোমার যেভাবে ইচ্ছে সে ভাবে ধোও। কিন্তু একটা কথা মনে রেখ আমার জামাকাপড়ে যদি একটা আঁচড় ও লাগে তাহলে এর শাস্তি ভয়াবহ হবে।”

আঁধার কথাটা বলতে না বলতেই টিশার্ট টা ফেটে গেল। মুন টিশার্ট টা নিজের মুখের সামনে ধরতেই দেখলো খুব সুন্দর গোল হয়ে টিশার্ট টা ফেটে গেছে। রাগের ফল স্বরূপ এটা হয়েছে। মুন কাঁদো কাঁদো হয়ে নিজেই নিজেকে বলল,

—“তোকে এবার কে বাচাবে মুন?”

যে মেয়ে কখনো নিজের জামাকাপড় ধুয়ে পরে দেখেনি। সে আজ আঁধারের কাপড় ধুচ্ছে। মুন অনেক কষ্টে অন্য জামাকাপড় গুলো ধুলো। তারপর সবার নিচে ছেড়া টিশার্ট টা রেখে তার উপরে অন্য সব জামা কাপড় গুলো রাখলো। তারপর ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে চোরের মতো আঁধারের সামনে দিয়ে বেলকনিতে গেলো
আঁধার সন্দিহান চোখে মুনকে দেখছিল। বেলকনিতে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মুন। তারপর একে একে সব গুলো কাপড় বেলকনিতে লেরে দিলো। শেষে বালতি থেকে ছেড়া টিশার্ট টা হাতে নিলো। আর দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলো কি করবে এখন। টিশার্ট টা নিয়ে পিছনে ঘুরতেই চমকে উঠলো মুন। কারণ আঁধার ওর সামনে কাঁটা ভ্রু টা উঁচু করে তাকিয়ে আছে। মুন টিশার্ট টা উঁচু করেই ধরে ছিল। টিশার্টের দিকে আঁধারের চোখ যেতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। মুন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

—“আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।”

আঁধার গম্ভীর স্বরে বলল,

—“এখন চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পরো। আর ভুলেও ভাববে না যে আমি তোমাকে ছেড়ে দিদো। তোমার পানিসমেন্ট সকালে দেওয়া হবে।”

মুন চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল আর ভাবতে লাগলো আঁধার ওকে কি পানিসমেনট দিবে। আঁধার বাঁকা হেসে নিজেও সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

.

ভোর ৫টা বাজে আঁধার বরফ ভেজানো ঠান্ডা পানি ঢেলে মুন কে ঘুম থেকে উঠালো। মুন যেন জমে গেছে সেরকম অবস্থা হয়েছে ওর। আঁধার একটা জগিং সুট এনে মুন কে দিয়ে বলল,

—“তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে এসো আমরা জগিং এ যাবো।”

মুন রেগে বলল,

—“আপনাকে যাওয়ার হলে আপনি যান। আমি কোথাও যাবো না। গো টু দি হেল।”

আঁধার মেকি হেসে বলল,

—“দুমিনিটের মধ্যে জগিং সুট পরে রেডি হয়ে এসো। নাহলে একটা নতুন শাস্তির জন্য তৈরি হও।”

মুন দমে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে জগিং সুট টা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে আঁধারের সাথে জগিং করতে গেল। আঁধার মুন কে একটা টাস্ক দিলো। এখন থেকে ৮টা পর্যন্ত মুন কে দৌড়াতে হবে। মানে তিন ঘণ্টা মুনকে দৌড়াতে হবে। আর প্রতি এক ঘন্টায় ব্রেক। মুন কোনো মতেই রাজি নাও আঁধার বাঁকা হেসে বলল,

—“তোতাপাখি তুমি যদি আমার কথা না‌ শুনো তাহলে ওই যে ওখানে একটা রিভার দেখছো না? ওই রিভারে তোমাকে তিন ঘণ্টা সুইমিং করতে হবে। তাও ব্রেক ছাড়া।”

মুন আঁতকে উঠলো। ও তো ভালো করে সুইমিং পরেও না। কোনো রকম ভেসে থাকতে পারে। সেখানে তিন ঘণ্টা ও এক টানা কি করে সুইমিং করবে? ও তো মরেই যাবে। আঁধার বলল,

—“বলো কোনটা করতে চাও তুমি?”

—“আমি দৌড়াবো।”

—“এই তো গুড গার্ল।”

—“কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?”

আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো।

—“প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ব্রেক?”

—“স্টার্ট ফাস্ট।”

মুন দৌড়ানো শুরু করলো। বিশ মিনিট হতে না হতেই দৌড়াতে দৌড়াতে মুনের করুন অবস্থা হয়ে যায়। মুন আগে কখনো এতো দৌড়েছে কিনা তাও
সন্দেহ। মুনের পা প্রচুর ব্যথা করছে। ধীরে ধীরে সূর্যের তাপ বাড়ছে। আঁধার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। মুনের মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের তাপের। মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মুন বেশিক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ওর সমস্যা হয়। মাথা ঘুরে আসে। শরীর ছেড়ে দেয়। এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পর্যন্ত ওর মধ্যে থাকে না। সেখানে তো আজ ও দুই ঘণ্টা ধরে দৌড়াচ্ছে। কিভাবে সম্ভব। ৮টা বাজতে আর মাত্র ৩০ মিনিট বাকি আছে। মুন দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত।

—“টাইম আপ।”

আঁধারের কথা টা কানে যাওয়া মাত্রই মুন যেখানে ছিল সেখানেই বসে পরে। আঁধার ছাতা নিয়ে মুনের সাথে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে। মুন হাঁপাতে হাঁপাতে অভিমানী সুরে বললো,

—“আপনি খুব খারাপ Mr.Husband”

আঁধার মৃদু হেসে জবাব দিলো,

—“আই নো। ওই ছেলেটার হাত ধরার শাস্তি এটা। অন্য কোনো পুরুষের হাত ধরার আগে এই শাস্তির কথা মনে করবে। এবার ছেড়ে দিলাম দ্বিতীয় বার যদি দেখি তাহলে একদম জানে মেরে ফেলবো।”

শেষে কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল আঁধার। কথা গুলোর মাঝে হিংস্রতা ফুটে উঠছিল। আঁধার মুন কে ওখানে ফেলে রেখেই সামনের দিকে চলে গেল। আর মুন ওখানে ওভাবেই বেকুবের মত বসে রইল।

চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১২

মুন আর আঁধারের বিয়ের ছয় মাস পুর্ন হলো আজ। মুন কোনো ভুল করলেই আঁধারের নতুন নতুন পানিসমেন্ট আর আঁধার কে শায়েস্তা করতে মুনের নতুন নতুন টেকনিক। এরকম দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটিতে ছয়টি মাস পেরিয়ে গেল। ওদের সম্পর্ক টা এই ছয় মাসে অনেকটা নরমাল হয়েছে। এখন আর আঁধার মুনের সাথে রুড বিহেভ করে না। কিন্তু আঁধারের কথার অবাধ্য হলে আবার ছেড়েও দেয় না। ওদের বিয়ের ছয় মাস পুর্ন হয়েছে তাই মুন ঠিক করলো আজ আঁধারের জন্য নিজ হাতে ওর পছন্দের কিছু রান্না করবে। কিন্তু কথা হলো মুন রান্না করতেই পারে না। ডিম ভাজি আর টুকটাক কিছু ভাজাপোড়া ছাড়া মুন কিছুই পারে না। পারবে কি করে? মুনের কখনো রান্নাঘরে যাওয়ার প্রয়োজন’ই পরে নি। তাহমিনা খান যখন বিদেশে ছিলেন তখন কবির খান আর রুনু খান মানে মুনের দাদি মাথায় উঠিয়ে রেখেছেন মুন কে। ওকে কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। ওর পরনের জামাটা পর্যন্ত ধুয়ে দিতেন রুনু খান। যখন যেটা চাইত সেটাই এনে দিতেন। বহুত আদরের নাতনি তার। কবির খান আর রুনু খান খুব আদরে বড় করেছেন মুন কে। মুন যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন তাহমিনা খান বিদেশ থেকে ফিরেন। ফিরে এসে যখন মেয়ের এরকম বাঁধ ছাড়া অবস্থা দেখেন তখন খুব রেগে যান তিনি। তার মতে রুনু খান’ই আদরে আদরে বাঁদর বানিয়েছেন মুন কে। উনি অনেক চেষ্টা করেন মুন কে ঘরের কাজকর্ম, রান্নাবান্না শেখাতে কিন্তু মুনের এসবে কোনো ইনট্রেস নেই। তাহমিনা খান কিছু বলতে গেলেই ধমকে তাকে চুপ করিয়ে দিতেন রুনু খান আর কবির খান। মুনের এখন খুব আফসোস হচ্ছে রান্না না শেখার কারণে। হঠাৎ মুনের মনে পরে ইন্টারনেট আছে তো। এই ইন্টারনেটের যুগে ওর টেনশনের কি আছে। নেটে সার্চ দেওয়ার সাথে সাথে সব হাজির। কিন্তু এখন আরেক টা সমস্যা দেখা দেয় আর সেটা হলো আঁধারের পছন্দের খাবার কি তা তো মুন জানেই না। মুন মনে মনে ভাবে আরিফা রেজওয়ান জানে হয়তো। মুন এক মিনিট ও সময় ব্যায় না করে দৌড়ে রায় আরিফা রেজওয়ানের রুমে। আরিফা রেজওয়ান নিজের রুমে জামা কাপড় ভাঁজ করছিলেন। মুন উঁকি মারে মেটা আরিফা রেজওয়ানের চোখ এড়ায় না। আরিফা রেজওয়ান উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করে,

—“কে ওখানে?”

মুন ইতস্তত করতে করতে সামনে এসে মিনমিনে গলায় জবাব দিলো,

—“আমি”

আরিফা রেজওয়ান হেসে মুন কে কাছে ডাকলেন,

—“বিইরে দাঁড়িয়ে কেন ভিতরে এসো?

মুন পিঁপড়ের মতো হেঁটে আরিফা রেজওয়ানের রুমে ঢুকলো। আরিফা রেজওয়ান মুনকে বসতে বললেন। মুন বিনা বাক্য ব্যয়ে বসে পরলো। আরিফা রেজওয়ান কাপড় ভাঁজ করতে করতে আড়চোখে মুনের দিকে তাকালো। মুন কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু দ্বিধায় বলতে পারছে না। তাই আরিফা রেজওয়ান’ই জিজ্ঞেস করলেন,

—“কিছু বলবে?”

মুন আমতা আমতা করে বলল,

—“ইয়ে! না মানে হ্যা।”

আরিফা রেজওয়ান কাপড় রেখে মুনের পাশে বসলেন। মুন মিনমিনে গলায় বলল,

—“শাশুমা আমি কিছু জানতে চাই?”

—“বলো?”

মুন ইতস্তত করে বলল,

—“আসলে…..উনার পছন্দের খাবার কি? মানে উনি কি খেতে বেশি ভালোবাসে?”

আরিফা রেজওয়ান কিছুটা অবাক হলেন। তারপর বলেন,

—“চিকেন বিরিয়ানি। কিন্তু তুমি জানতে চাচ্ছো কেনো?”

সন্দিহান চোখে মুনকে জিজ্ঞেস করলেন। মুন জোড় পূর্বক হেসে বলল,

—“এমনি”

তারপর আরিফা রেজওয়ান কে কিছু বলতে না দিয়েই মুন দৌড়ে চলে গেল। মুনের কান্ডে আরিফা রেজওয়ান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রুলেন মুনের যাওয়ার দিকে। তারপর আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। মুন নিজের রুমে এসে ইউটিউব এ চিকেন বিরিয়ানির রেসিপি সার্চ দিলো। তারপর কিছুক্ষণ ভিডিও টা ভালো করে দেখলো। মুন আগে কখনো রান্না করেনি তাই ওর জন্য কিছুটা কঠিন। কিন্তু বলে না কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। মুন মোবাইল টা নিয়ে ছুটে রান্না ঘরে যায়। রান্নাঘরে চুমকি নামের কাজের মেয়েটা রান্নার জন্য সবজি কাটছিল। মুন কে দেখে কিছুটা অবাক হলো। চুমকির বয়স বেশি না। ছোট থেকেই এই বাড়িতে বড় হয়েছে। খুব ভালো ও বাধ্য মেয়ে। চুমকি কে কেউ কাজের মেয়ের মতো দেখে না। নিজেদের পরিবারের একজন সদস্য বলেই সবাই মনে করে। চুমকি আঁধার কে যমের মতো ভয় পায়। আঁধার প্রথম দিনেই বলে দিয়ে ছিল মুন যেন ভুলেও কিচেনে পা না দেয়। চুমকি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—“আপামনি আপনে এহানে কিছু লাগবো?”

—“না তুই সর?”

—“কেন?”

—“এতো কথা করিস কেন তুই? সরতে বলছি সরবি। এই কোনো জিনিস কোথায় আছে রে?”

—“কেন আপনে কি করবেন?”

—“রান্না করবো। এখন প্রশ্ন না করে আমি যা যা বলবো তা তা বের করে দিবি।”

চুমকি যেন হার্ট অ্যাটাক করবে এমন অবস্থা। রান্না করতে গিয়ে যদি মুনের সামান্য তিল পরিমাণ ও কিছু হয় তাহলে আঁধার এসে বাড়ি মাথায় তুলবে। আর ওর অবস্থা তো বারো টা বাজাবে। চুমকি জোরে জোরে চিৎকার করে আরিফা রেজওয়ান কে ডাকতে লাগলো,

—-“বড়মা, ও বড়মা, বড় মা গো?”

চুমকির চিৎকার শুনে আরিফা রেজওয়ান একপ্রকার ছুটে কিচেনে এলেন। আরিফা রেজওয়ান চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

—“কি হয়েছে তোর? এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”

চুমকি ভীত গলায় জবাব দিলো,

—“আপামনি না কি রান্না করবো।”

আরিফা রেজওয়ান অবাক হয়ে বললেন,

—“তুমি রান্না করতে যাবে কেন? তোমার যদি কিছু খেতে ইচ্ছে হয় তাহলে চুমকি কে বলো ও বানিয়ে দিবে। নাহয় আমি বানিয়ে দিবো।”

মুন ফটাক করে জবাব দিলো,

—“না, না আমি নিজের খাওয়ার জন্য রান্না করছি না।”

—“তাহলে?”

—“আজ আমাদের বিয়ের ছয় মাস পুর্ন হয়েছে। তাই আমি ভাবলাম নিজ হাতে উনার জন্য উনার পছন্দের কিছু রান্না করতে।”

আরিফা রেজওয়ান নাকচ করে বললেন,

—“না মামনি। তুমি পারবে না। আর আঁধার ও নিষেধ করে দিয়েছে তোমাকে যেন রান্না ঘরে ঢুকতেই না দেই। সেখানে রান্না করা তো দূরের কথা।”

মুন অনেক বার করে বলল। কিন্তু আরিফা রেজওয়ান মানতে নারাজ। সে কোনো মতেই মুনকে রান্না করতে দিবে না। মুন এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে বলল,

—“নিজের মেয়ে মনে করো না তো তাই এরকম করছ। যদি নিজের মেয়ে মনে করতে তাহলে আর এরকম করতে না।”

আরিফা রেজওয়ান এবার আর না বলতে পারলেন না। কিন্তু উনার খুব ভয় করছে। উনি বললেন,

—“ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোমার পাশে থেকে তোমাকে হেল্প করবো।”

মুন খুশি হয়ে আরিফা রেজওয়ান কে জরিয়ে ধরলো। তারপর রান্না শুরু করলো। আরিফা রেজওয়ান মুন কে বেশি কিছু করতে দিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু মুন তো মুন’ই। মুন আরো আরিফা রেজওয়ান কে কিছু করতে দিচ্ছে না। চুমকি পিঁয়াজ মরিচ কেট ছিল। মুন ছো মেরে চুমকির হাত থেকে চপার টা নিয়ে নিল তারপর ওকে সরিয়ে নিজেই পিঁয়াজ কাটতে লাগলো। চুমকি দিতে চায়নি। কিন্তু মুন চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই চুমকি চুপ মেরে গেল। মুন পিঁয়াজ কাটতে কাটতে পিঁয়াজের সাথে সাথে নিজের আঙ্গুলেও কেটে ফেলে। মুন ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে মৃদু চিৎকার করে। আঙ্গুল থেকে গড়গড় করে রক্ত পরছে। চুমকি দেখে ভয় পেয়ে যায়। আরিফা রেজওয়ান রান্না ঘরে উপস্থিত নেই। আরমান রেজওয়ান ফোন করেছেন তার সাথেই কথা বলতে গেছেন। চুমকি চিৎকার করে আরিফা রেজওয়ান কে ডাকতে যাবে মুন তার আগেই ওর মুখ চেপে ধরে। আর শাসিয়ে বলে,

—“হুসসস। একদম চিৎকার করবি না। তাহলে এই চাকু দিয়ে তোর পেট ফুটো করে দিবো।”

মুখ চেপে ধরার কারণে চুমকি মুখ দিয়ে উম উম শব্দ করছে। মুন বলল,

—“ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু চিৎকার করবি না। আর ভুলেও শাশুমা কে কিছু বলবি না।”

চুমকি মাথা নাড়ে। মুন ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। তারপর বলে,

—“শাশুমা আসার আগে তাড়াতাড়ি ফ্লোর টা পরিষ্কার করে ফেল। আমি পোলাওর চাল টা ধুয়ে নিচ্ছি।”

—“কিন্তু আপামনি আপনের আঙ্গুল তো কেটে গেছে। পানি লাগালে তো আরো জ্বলবে।”

—‘ও কিছু হবে না। তুই নিজের কাজ কর।”

চুমকি মাথা কাত করে কাজে লেগে পরে। মুন পোলাওর চাল ধুয়ে নেয়। কাঁটা জায়গায় পানি লাগার কারণে কিছুটা জ্বলছে। কিন্তু মুন তা পাত্তা দিলো না। এর’ই মধ্যে আরিফা রেজওয়ান কথা শেষ করে রান্না ঘরে এলেন। উনি চুমকি কে বললেন ফ্রিজ থেকে চিকেন বের করে ভেজাতে। চুমকি বাধ্যের মতো ফ্রিজ থেকে চিকেন বের করে ভেজালো। তারপর রান্না শুরু করলো।[আমি মুনের মতোই রান্না করতে পারি না। আর চিকেন বিরিয়ানির রেসিপি ও আমার জানা নেই। তাই ডিটেলসে কিছু বলতে পারলাম না] মুন বলল,

—“শাশুমা রান্না তো প্রায় শেষ’ই। আপনি বরং রুমে গিয়ে রেস্ট করুন। আমি আর চুমকি মিলে বাকি রান্না টুকু করতে পারবো।”

আরিফা রেজওয়ান কিছুতেই রাজি হতে চাইলেন না। কিন্তু মুন জোর করে তাকে পাঠিয়ে দিলো। মুন রান্না করছিল হঠাৎ বেখেয়ালি হয়ে কিভাবে যেন হাত পুড়িয়ে ফেলল। মুনের চিৎকারে পুরো বাড়ি যেন কেঁপে উঠলো। আরিফা রেজওয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। মুনের হাতের অবস্থা দেখে উনার যেন মাথা ঘুরে এলেন। খুব বাজে ভাবে অনেক খানি পুড়ে গেছে। উনি জলদি করে মুন কে ধরেলেন। চুমকি আর আরিফা রেজওয়ান মিলে ধরে মুন কে ড্রইং রুমে নিয়ে গেলেন। ভয়ে চুমকির জান বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। মুন কান্না ভুলে চুমকির উপর রাগ দেখিয়ে বলল,

—“গ্যাসের উপর বিরিয়ানি পুড়ে যাবে। তাড়াতাড়ি গিয়ে নামা।”

আরিফা রেজওয়ান অবাক চোখে মুন কে দেখছে। যেখানে হাত পুড়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে সেখানে হাতের চিন্তা না করে এখনো বিরিয়ানির চিন্তা করছে। চুমকি দৌড়ে কিচেনে গেল। গ্যাসের উপর থেকে বিরিয়ানি টা নামিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে নিয়ে আবার দৌড়ে ড্রইং রুমে গেলো। মুনের হাতে প্রচুর পরিমাণে জ্বালা করছে। মুন তা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদছে ওর বাবা কে ডাকছে। এদিকে কবির খান মনটা কেমন জানি করছে। মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য হঠাৎ করে চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে।তার কেন জানি মনে হচ্ছে তার মেয়ের কাজু হয়েছে। তাকে খুব করে ডাকছে। কবির খান আর দেরি করে না বেরিয়ে পরে। একবার নিজের চোখে মেয়েকে দেখলেই মনটা শান্ত হবে। আরিফা রেজওয়ান চুমকি কে তাড়া দিয়ে বলল,

—“জলদি বরফ টা দে।”

আরিফা রেজওয়ান মুনের হাতে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছেন আর মুন ব্যথায় আরো কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ, মুখ ফুলে গেছে। নাকের ডগা ও গালের দুপাশ লাল হয়ে গেছে। চোখের বড় বড় পাপড়ি গুলো পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আরিফা রেজওয়ান বুঝতে পারছেন না এখন কি করবেন। উনি তাড়াতাড়ি আঁধার কে ফোন দিলেন। উনার খুব ভয় করছে। আঁধার শুনলে কি করবে তা শুধু আল্লাহ্’ই ভালো জানেন। আঁধার ফোন সুইচ অফ বলছে। আরিফা রেজওয়ান এবার ওনাদের পরিচিত একজন ডক্টর কে ফোন করলেন। আধা ঘন্টা পর ডক্টর আসলেন। ততক্ষণ কোনো উপায় না পেয়ে ঠান্ডা পানিতে হাত ভিজিয়ে রেখে ছিলেন। ডক্টর হাত ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে যান। মুন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। মুন ঘুমিয়ে যাওয়ার দেড় ঘণ্টা পর কবির খান রেজওয়ান মেনশনে আসেন। আরিফা রেজওয়ান কবির খান কে দেখে অবাক হন।

—“আরে ভাইয়া আপনি? আসেন আসেন ভেতরে আসেন।”

কবির খান বাড়ির ভেতরে যায়। আরিফা রেজওয়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

—“মুন কোথায়? ওকে তো দেখছি না।”

—“রুমে। ঘুমাচ্ছে।”

—“ওওও। আমি ওর সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম।”

—“ডেকে দিবো?”

—“না থাক। এমনি এক নজর দেখেই চলে যাবো।”

আরিফা রেজওয়ান জোর পূর্বক হেসে বলল,

—“ঠিক আছে।”

কবির খান মুনের সাথে দেখা করতে যায়। উনি দূর থেকে মুন কে দেখে। মুনের ডান হাত পুড়েছে। আর ডান হাতটা ওই পাশে থাকায় কবির খান দেখতে পায় না। আরিফা রেজওয়ান কবির খানকে নাস্তা দেন। কবির খান খেতে চায় না। কিন্তু আরিফা রেজওয়ান বেশী জোড় করার কারণে খায়। তারপর কিছুক্ষণ পর চলে যায় কবির খান। আরিফা রেজওয়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

.

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। মুনের ঘুম ভেঙ্গে যায় আযানের ধ্বনিতে। মুন হাত নাড়াতে গেলে হাতে ব্যথা অনুভব করে। মুন আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। তারপর ধীর পায়ে হেঁটে আরিফা রেজওয়ানের রুমে গেল। আরিফা রেজওয়ান শুয়ে ছিল। দেখে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত। মুন কে দেখে আরিফা রেজওয়ান শোয়া থেকে উঠে বসলো। মুন গিয়ে আরিফা রেজওয়ানের পাশে বসলো। আরিফা রেজওয়ান নরম গলায় প্রশ্ন করলো,

—“এখন কেমন লাগছে?”

—“ভালো”

—“ব্যথা করছে?”

—“একটু একটু।”

মুন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—“উনি এখনো আসেনি?”

—“না। এলে তো দেখতেই পেতে।”

আনমনে কথাটা বলে হঠাৎ করেই আরিফা রেজওয়ান রেগে গেলেন। তারপর তখন কার ঘটনা নিয়ে বকাঝকা করতে লাগলেন মুন কে। বকা গুলো কিছুটা এরকম ছিলো,

—“কত বার বারন করে ছিলাম? শুনো নি আমার কথা। এখন দেখো কত টা কষ্ট হচ্ছে। কত টা পুড়ে গেছে। আমি ভাবছি যখন আঁধার এসে দেখবে তখন কি হবে।”

মুন মাথা নিচু করে কান ধরে ঠোঁট উল্টে বলল,

—“অ্যাম সরি। আর কখনো হবে না। আমি আর কখনো জেদ করবো না।”

আরিফা রেজওয়ান কিছু বললেন না। মুন আরিফা রেজওয়ানের কোলে শুয়ে পড়ল। তারপর আদুরে গলায় বলল,

—“তুমি চিন্তা করো না। কিছু হবে না। উনি কিছু বলবেন না। শুধু একটু বকাঝকা করবে।”

আরিফা রেজওয়ান টেনশনে মরে যাচ্ছেন।। আজ বাড়িতে যে একটা ঝড় শুরু হবে তার আশংকা সে এখন থেকেই পাচ্ছে। আলিয়া’ই এসে মুনের হাতের এই অবস্থা দেখে কতক্ষন চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলেছে। শেষে মেয়েটা প্রায় কেঁদেই দিয়ে ছিল। দু’জনের মধ্যে অনেক ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যাকে বলে ভালোবাসার বন্ধন। আলিয়া দেখেই এতোটা হাইপার হয়ে গেছে সেখানে আঁধার দেখলেতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে। অন্য দিকে মুনের এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর’ই নেই। মুন শুধু চায় আঁধার কে খুশি করতে। মুন নিজের মনের আবেগ মিশিয়ে আঁধারের জন্য ভালোবেসে রান্না করেছে। এই ভালোবাসা আবার প্রেম ভালোবাসা না কিন্তু। এ ভালোবাসা তো একজন গুরুর প্রতি তার শিষ্যের ভালোবাসা। হ্যা মুন আঁধার কে নিজের গুরু নিজের শিক্ষক বলেই মানে। হসপিটাল থেকে আসার পর আঁধারের প্রথম দায়িত্ব হলো মুন কে জোড় করে ধরে বেঁধে পড়াতে বসানো। মুন এতো বিরক্ত করে আঁধার কে কিন্তু আঁধার কখনো বিরক্ত হয় না। মুন যদি কোনো ভুল করে তাহলে আঁধার তা শুধরে দেয়া। সব সময় ওর খেয়াল রাখে। ওর গায়ে কখনো ফুলের টোকাও লাগতে দেয় না। হ্যা শাস্তি দেয় কিন্তু সেই শাস্তি গুলো এমন হয় যাতে মুনের একটু কষ্ট হয় কিন্তু কোনো ক্ষতি না হয়। আঁধার মুনকে সবসময় ছোট বাচ্চাদের মতো আগলে রাখে। হসপিটালে থাকলে টাইম টু টাইম ফোন করে খোঁজ নিবে ও খেয়েছে কি না। আর বাসায় থাকলে তো নিজের সামনে বসিয়ে খাওয়াবে। এতটা কেয়ার কজন করে? মুনের সত্যি’ই নিজেকে অনেক সময় লাকি মনে হয়। কবির খান যেমন করে মুনের খেয়াল রাখতো ঠিক তেমন ভাবে আঁধার ওর খেয়াল রাখে। কবির খানের পর আঁধার’ই মনে হচ্ছে ওকে সব থেকে বেশি ভালোবাসে। এই ভালোবাসা টা অন্য রকম। যেটা বোঝার সাধ্য কারো নেই। মুন মনটা আজ অনেক শাড়ি শাড়ি করছে। একবার মুন আর আঁধার শপিং এ গেছিলো। সেখানে শুভ্র রং এর একটা শাড়ি মুনের খুব পছন্দ হয়। মুন সেটা নিতে চাইলে আঁধার সাম নিষেধ করে দেয়। আর বলে এসব শাড়ি টাড়ি যদি মুন কে পরতে দেখে তাহলে রুমের লাইট অফ করে মুন কে রুমে লক করে দিবে। তাই মুন ভয়ে ও কখনো শাড়ি পরে নি। কিন্তু আজ পরবে। কিন্তু সমস্যা হলো মুন শাড়ি পড়তে পারে না। আগে তো তাহমিনা খান পরিয়ে দিতেন। তখন মুন শাড়ি পরে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু বাইরে বের হতো না। মুন আরিফা রেজওয়ানের দিকে তাকাতেই তাকে শাড়ি পরা দেখে। আরিফা রেজওয়ান খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে। তার শাড়ি পরাটা মুনের খুব পছন্দ। মুন আরিফা রেজওয়ান কে ডাকলো,

—“শাশুমা?”

—“হুম বলো?”

—“আমারং না খুব শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। পরিয়ে দিবে?”

—“আগে সুস্থ হও তারপর। এখন এই হাত নিয়ে তুমি শাড়ি সামলাতে পারবে না।”

—“প্লিজ প্লিজ না করো না। আমি পারবো।

আবারো জেদ করতে শুরু করলো মুন। আরিফা রেজওয়ান আবারো মুনের জেদের কাছে হেরে গেলেন। তারপর রাজি হলেন মুন কে শাড়ি পরিয়ে দিতে। হঠাৎ মুন মন খারাপ করে বলল,

—“কিন্তু আমার তো কোনো শাড়ি’ই নেই। এখন কি করবো?”

মুনের কথা‌ শুনে আরিফা রেজওয়ান হাসলেন। তারপর নিজের কাবার্ড থেকে অনেক গুলো শাড়ি বের করে মুনের সামনে রাখলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শাড়ি গুলো অনেক দামি। আরিফা রেজওয়ান হেসে বললেন,

—“এগুলোর মধ্যে থেকে যেটা পছন্দ হয় সেটা’ই পরো।”

মুন খুশি হয়ে শাড়ি গুলো দেখতে লাগলো। বলতে হবে আরিফা রেজওয়ানের চয়েজ খুব ভালো। সব গুলো শাড়িই দেখতে খুব সুন্দর। কিন্তু হঠাৎ কালো রঙ্গের কারুকাজ করা একটা শাড়ি মুনের চোখে’র দৃষ্টি কারেন। শাড়িটা বেশি ভারি না। বলতে গেলে পাতলাই। দেখতে খুব সুন্দর। মুনের খুব পছন্দ হয়। আর আঁধারের ও কালো রং টা খুব পছন্দ। তাই মুন ঠিক করলো এটাই পরবে।

.

আরিফা রেজওয়ান খুব সুন্দর করে শাড়ি টা মুনকে পরিয়ে দিচ্ছে। মুন সচরাচর কালো পরে না। ওর মনে হয় কালো পরলে ওকে পেত্নির মতো লাগবে। কিন্তু তা সত্যি নয়। এই কালো শাড়িতে মুনকে বেশ ভালোই মানিয়েছে। আরিফা রেজওয়ান মুন কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসালো। তারপর ওর মুখে হালকা মেকআপ করে দিলো। ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক। হরিনী চোখে গাড় করে টানাটানা কাজল। কোমর অবধি ঘন কিচকিচে চুল গুলো এক সাইডে নিয়ে বেনী করে দিলেন। তারপর কাবার্ড থেকে খুবই সাধারণ কিছু অরনামেন্টস বের করে নিয়ে এলেন। মুনের গলায় পাতলা ব্লাক ডায়মন্ডের একটা নেকলেস পরিয়ে দিলেন। কানে ম্যাচিং ঝুমকা। এই হালকা পাতলা সাজেই মুন কে অসম্ভব সুন্দরী মনে হচ্ছে। আলিয়া একটা কাজে মায়ের রুমে এসে ছিল। মুনকে দেখে আলিয়া হা করে তাকিয়ে আছে। আর মুন মুখ টিপে হাসছে। আরিফা রেজওয়ান আলিয়া কে ধমক মেরে বলে,

—“ও ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? নজর লেগে যাবে তো।”

আরিফা রেজওয়ান কাজল নিয়ে মুনের কানের পিছনে নজর টিকা দিয়ে দিলেন। আলিয়া মুখ বন্ধ করে মুনের কাছে এসে মুগ্ধ হয়ে বলল,

—“ওয়াও মিষ্টি তোমাকে কি সুন্দর লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। একদম কালো জামের মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।”

আলিয়ার কথায় মুন খিলখিল করে হেসে উঠে।

.

মুন না খেয়ে সারাদিন আঁধারের জন্য অপেক্ষা করে। ধীরে ধীরে অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে থাকে। এই অপেক্ষা রাত ১২ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কিন্তু আঁধার আসে না। মুন বেডের সাথে হেলান দিয়ে ব্যান্ডেজ করা হাতটা কোলের উপরে রেখে ঘুমিয়ে পরে। ১২:৩০ এ আঁধার বাসায় ফেরে। আরিফা রেজওয়ান ড্রইং এ’ই বসে ছিলেন। আঁধার বাড়িতে ঢুকতেই আরিফা রেজওয়ান কে সোফায় বসা দেখে। আঁধার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

—“তুমি এখনো ঘুমাওনি মম?”

—“তোমার জন্য’ই অপেক্ষা করছিলাম।”

—“কিছু বলবে?”

—“হ্যা।”

আঁধার মায়ের দিকে তাকায়। আরিফা রেজওয়ান কে দেখে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। আরিফা রেজওয়ান শক্ত হয়ে বলল,

—“আগে আমার পুরো কথা শুনবে তার পরে রিয়েক্ট করবে।”

আরিফা রেজওয়ান সাহস করে বলল,

—“মুনের হাত পুড়ে গেছে।”

আঁধার কিভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না।এক প্রকার চিৎকার করেই বলল,

—“হোয়াট? কিভাবে?”

আরিফা রেজওয়ান শান্ত স্বরে বলল,

—“রান্না করতে গিয়ে।”

—“আমি বারবার বলেছিলাম না ওকে যেন কিচেনের আশে পাশেও কেউ যেতে না দেয়। তাহলে ও রান্না করতে গেল কিভাবে?”

—“জেদ করছিল প্রচুর তাই শেষে না পেরে রাজি হতে হয়।”

—“মম ও জেদ করলো আর তুমিও তা মেনে নিলে?”

আরিফা রেজওয়ান নিশ্চুপ। আঁধার জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো। রাগে ওর চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে। আঁধার নিজেকে শান্ত করে তারপর বলল,

—“এখন কোথায় ও?”

—“রুমে। তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে।”

আঁধার বড় বড় পা ফেলে রুমে গেল। তারপর দরজা টা খুলেই যা দেখলো তাতে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here