Mr_Husband,পর্ব_৫,৬

0
4365

#Mr_Husband,পর্ব_৫,৬
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫

রাত ১টা বেজে গেছে কিন্তু আঁধারের আসার কোনো খবর নেই। মুন অপেক্ষা করতে করতেই বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মুখটা শুকনো লাগছে। মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খায়নি। চোখের কোণিশে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। নাকের ডগা ও লাল হয়ে আছে। গালে হালকা গোলাপী আভা ফুটে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে। আর কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেছে। দেয়াল ঘড়ি যখন জানান দেয় এখন রাত ১:৩০ বাজে তখন আঁধার বাড়িতে আসে। আরিফা রেজওয়ান পানি নিতে কিচেনের দিকে যাচ্ছিলেন আঁধার কে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। আরিফা রেজওয়ান কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

—“কোথায় ছিলি এতো রাত অবধি?”

মায়ের মুখে তুই শুনে আঁধার বুঝতে পারে আরিফা রেজওয়ান খুব রেগে আছে তার উপর। কারণ আরিফা রেজওয়ান যখন রেগে যান তখনই আঁধার কে তুই করে বলে। আঁধার সাধারণ ভাবেই জবাব দিলো,

—“কাজ ছিলো।”

—“তোর রাত ১টা পর্যন্ত কিসের কাজ? আর তোর ফোন কোথায় ছিল? কতবার ফোন করেছি ফোন ধরিসনি কেন?”

—“ফোন কাছে ছিল না। তাই ধরতে পারিনি।”

—“মুন তোকে ফোন করেছিল? ওর সাথে কথা হয়েছে তোর?”

—“হ্যাঁ।”

—“আজ ওদের বাড়ি যেতে হবে এই জন্য ও তোকে বাড়িতে আসতে বলেছিল?”

—“হ্যা বলেছিল।”

আরিফা রেজওয়ান তেজী গলায় বললেন?

—“তাহলে আসিস নি কেন? মেয়েটা সারাদিন কিছু খায়নি আর রুমের দরজা ও খোলেনি। তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে। তোর জন্য মেয়েটা মনে আঘাত পেয়েছে। আমি তোকে ভালো করে চিনি তুই হয়তো ওর সাথে ভালো করে কথা ও বলিস না। দেখ আঁধার মেয়েটা এখনো ছোট। ওর বয়স কিন্তু বেশি না। আর এ বয়সে বিয়ে, আপন জনদের ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। তার মধ্যে আমরা যদি ওকে সময় না দেই ওর সাথে বন্ধু্র মতো না মিশি। তাহলে ও ও আমাদের আপন করে নিতে পারবে না। আমাদের কথা বাদই দিলাম কিন্তু তুমি তো ওর স্বামী তোমার উচিত ওকে বেশী বেশী সময় দেওয়া। ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। ওকে বন্ধুর মতো ট্রিট করা। কারণ বিয়ের পরে মেয়েদের সব থেকে আপন হলো স্বামী। সব থেকে ভালো বন্ধু হলো স্বামী। সুখ দুঃখের সাথী হলো স্বামী। এখন তুমিই যদি ওকে না বুঝো তাহলে কে বুঝবে বলো। এমন চলতে থাকলে তো ও ড্রিপ্রেশনে চলে যাবে। আঁধার তুমি একজন ডক্টর আর আমার জানা মতে বুদ্ধিমান ও। অতীত কে আঁকড়ে ধরে বাঁচা বোকামি। যা হয়েছে ভুলে যাও। যে গেছে সে আর কখনো ফিরে আসবে না। আর যে এসেছে তাকে যেতে দিওনা। সে ছিল তোমার অতীত আর মুন তোমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এখন তুমি ভেবে দেখ কি সিদ্ধান্ত নিবে? আমি জানি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত ও নিবে।”

কথা গুলো বলে আরিফা রেজওয়ান তার রুমে চলে গেলেন। আঁধার এতোক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ সব শুনছিল। আরিফা রেজওয়ান চলে যেতেই আঁধার মাথা তুলে তাকালো। তার চোখ দুটি ছলছল করছে। নীল চোখে পানি গুলো মুক্তার মতো চিকচিক করছে। আঁধার কাঁদছে? হ্যা আঁধার কাঁদছে। অতীত তাকে কাঁদাচ্ছে। নাহলে কারো সাদ্ধ্য নেই আঁধার রেজওয়ান কে কাঁদানোর। আঁধার রুমের লক খুলে রুমে ঢুকলো। আর সাথে সাথেই তার চোখে পরল মুনের ঘুমন্ত মুখটায়। মুনের এমন অবস্থা দেখে আঁধারের নিজের প্রতি কিছুটা অপরাধ বোধ কাজ করছে। আঁধার সোজা বেলকনিতে চলে গেল তারপর একটা সিগারেট বের করো লাল আভার ঠোঁটের মাঝে রাখলো। সব কিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে আঁধারের। কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ আঁধার সিগারেট টা ফেলে রুমে চলে গেল তারপর একবার মুনের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো হাতে প্লেট নিয়ে। আঁধার প্লেট টা ল্যাম্প টেবিলের উপর রেখে। মুন কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু মুন ঘুমে এতোটাই বিভোর যে আঁধারের ডাকে তার মস্তিষ্ক সারা দিতে চাইছে না। আঁধার কিছুটা ইতস্তত করে মুনের বাহুতে হাত দিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো। মুন আধো আধো চোখে আঁধারের দিকে তাকালো তারপর অভিমানী সুরে বলল,

—“আপনি খুব পচা Mr.Husband খুব। আপনার একটুও দয়া মায়া নেই। জানেন আপনি আসতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেওয়ার পরও আমি আপনার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। মনের কোনো এক কোণে এতটুকু আশা ছিল যে আপনি আসবেন। কিন্তু আপনি আসেন নি। আমার আব্বুর কথা অনেক মনে পরছিল। ইচ্ছে করছিল ছুটে আব্বুর কাছে চলে যাই। আমি জানি আব্বু ও আমাকে অনেক মিস করছিল। আমি আব্বুর প্রতিটা নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনেক বেশি ভালোবাসি যে তাকে। আমরা যাকে সব থেকে ভালোবাসি, মানে নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসি তার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমরা সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থেকেও অনুভব করতে পারি। কিন্তু আপনি তা বুঝবেন না। আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন তখন বুঝবেন। কিন্তু আপনি তো হার্ট লেস পার্সন আপনি কি করে কাউকে ভালোবাসবেন?”

এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে কথা গুলো বলছিল মুন। বলা শেষ হতেই মুন আবার ঘুমিয়ে গেল। আঁধার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

—“তুমি ঠিকই বলেছ মুন আমি হার্ট লেস পার্সন। কিন্তু এর জন্য দায়ী………..”

আঁধার থেমে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে মুনের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিল। মুন পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো। আঁধার কে নিজের সামনে দেখেই মুনের মাথা গরম হয়ে গেল। আঁধার শীতল কন্ঠে বলল,

—“সারাদিন কিছু খাওনি কেনো?”

মুন নিশ্চুপ বসে আছে। আঁধার বেড টেবিল থেকে প্লেট টা নিয়ে মুনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

—“খাবারটা খেয়ে নেও। নাহলে শরীর দূর্বল হয়ে পরবে। তারপর অসুস্থ হয়ে যাবে।”

মুন তেজী গলায় জবাব দিলো,”

—“আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি।”

মুনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আঁধার আবারো বলল,

—“মুন বাচ্চাদের মতো জেদ করো না। খাও বলছি।”

মুনের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আঁধার নিজেই প্লেটটা নিয়ে ভাত মেখে মুনের মুখের সামনে ধরে নরম গলায় বলল,

—“হা করো।”

মুন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আঁধারের ধৈর্য্যের সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। আঁধার চোয়াল শক্ত করে একটু জোরে বলল,

—“মুন হা করো।”

মুন তবুও মুখ খুললো না। আঁধার এবার জোড়ে ধমক দিয়ে বলল,

—“হা করতে বলেছি না তোমাকে?”

মুন আঁধারের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠলো। তারপর ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আঁধার নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। একটু কিছু হলেই রাগ মাথা চড়ে উঠে। অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যায় তার। ছোট থেকেই এই রোগ। আঁধার নিজেও জানেনা এরকম কেনো হয়। সে নিজের রাগ কে একটুও কন্ট্রোল করতে পারে না। আঁধার কন্ঠ নরম করে বুঝিয়ে বলল,

—“জানো মুন আজ আমি একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের সার্জারি করেছি। ওতো টুকু বাচ্চা মেয়েটার হার্টে ছোট্ট একটা ছিদ্র হয়েছে। যার জন্য অপারেশন করতে হয়েছে। মেয়েটার বাঁচার চান্স খুব কম ছিল। মেয়েটা দেখতে খুবই কিউট। অনেকটা তোমার’ই মতো।”

মুন চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—“অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে তো? মেয়েটা এখন কেমন আছে?”

আঁধার হালকা হাসলো যা মুনের চোখে পরলো না। আঁধার গম্ভীর কন্ঠে বলল,

–“আগে তুমি বলো ওই বাচ্চা মেয়েটাকে অপারেশন থিয়েটারে ফেলে তোমাকে নিয়ে তোমার বাড়িতে ঘুরতে না যাওয়াটা অপরাধ? নাকি তোমাকে নিয়ে তোমার বাবার বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটার অপারেশন করাটা আমার অপরাধ?”

মুন ভেবে দেখলো। আঁধারের কথা গুলো ঠিক। মুন নিজের ভুল বুঝতে পারে তাই মাথা নিচু করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

—“সরি। কিন্তু আপনি তো আমাকে কথা গুলো তখনই বলতে পারতেন।”

—“বলার সুযোগ কোথায় দিলে? তার আগেই তো তুমি আমার মাথা গরম করে দিলে।”

মুন ক্ষিপ্ত গলায় বলল,

—“আমি আপনার মাথা গরম করেছিলাম না আপনি আমার মাথা গরম করেছিলেন?”

আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,

—“আমি কি করেছি?”

—“নাম ধেরে ডেকেছি তাতে দোষ হয়েছে। ভাইয়া বলে ডেকেছি তাতে ও দোষ হয়েছে। আঙ্কেল বলেছি তাতেও রেগে গেছেন। এখন বলেন মাথা কে গরম করেছিল?”

—“আমি তোমার ভাইয়া, আঙ্কেল, বাবা হই? যে আমাকে এগুলো বলে ডাকবে?”

—“তাহলে কি বলে ডাকবো?”

—“কিছু বলার’ই দরকার নেই।”

মুন আঁধারের কথায় পাত্তা না দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর হঠাৎ চেঁচিয়ে বলল,

—“পেয়েছি। আমি আপনাকে Mr.Husband বলে ডাকবো।”

আঁধার অবাক হয়ে বলল,

—“Mr.Husband একটা আবার কেমন নাম?”

—“যেমন’ই হোক আমি এটা বলেই ডাকবো। এতে কিন্তু আপনার কোনো প্রবলেম হওয়ার কথা না। কারণ আপনি Mister আর আমার husband ও। সব মিলিয়ে আপনি আমার Mr.Husband. হিহি।”

বলেই মুন খিল খিল করে হেসে উঠলো। যা ইচ্ছে বলে ডাক সমস্যা নেই কিন্তু আগে হা করো। মুন হা করলো। আঁধার মুনকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আর মুন চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মতো খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই মুন বলল,

—“আপনি খাবেন না Mr.Husband?”

—“আমি খেয়ে এসেছি।”

বলেই আঁধার প্লেটটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। মুন শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর আঁধার এসে সোফায় শুয়ে পরলো। মুন গলা উঁচিয়ে ডাকলো,

—“Mr.Husband আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন।”

আঁধার বিরক্তির সুরে বলল “না”। মুন আবার বলো,

—“আপনার তো সোফায় শুতে কষ্ট হয় আপনি কিন্তু চাইলে বেডে এসে শুতে পারেন।”

আঁধার ভারি কন্ঠে বলল,

—“প্রয়োজন নেই।”

মুন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,

—“ঠিক আছে। কিন্তু আপনি তো বললেন’ই না যে ওই বাচ্চা মেয়েটার কি হলো? মেয়েটার কিছু হয়নি তো? মেয়েটা সুস্থ আছে তো?”

আঁধার গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,

—“আমি আজ পর্যন্ত যত গুলো সার্জারি করছ সব গুলোই সাকসেসফুল হয়েছে।”

—“তার মানে ওই বাচ্চা মেয়েটার অপারেশন ও সাকসেসফুল হয়েছে। থ্যাঙ্ক ইউ আল্লাহ। ইউ আর দি বেস্ট। আচ্ছা আরেকটা কথা। বলতে পারেন একটা আবদার।”

—“বলো?”

মুন খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

—“আপনি আমার ফ্রেন্ড হবেন?”

—“না। অনেক রাত হয়েছে চুপচাপ ঘুমাও। আমি আর একটাও কথা শুনতে চাই না।”

মুন আহত হলো। মন খারাপ করে চুপচাপ শুয়ে পরলো। ওভাবেই এক সময় ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৬

আলিয়া আঁধারের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে আর জোরে জোরে ডাকছে,

—“মিষ্টি। ও মিষ্টি। মিষ্টি দরজা খোলো।

আঁধার ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনতে পেল। আঁধার দরজা খুলে দেখলো আলিয়া আঁধার কাটা ভ্রুটা উপরে তুলে জিজ্ঞেস করলো,

—“তুই এতো সকালে আমার রুমের সামনে এসে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন?”

—“মিষ্টি কোথায়?”

আঁধার কিছুটা ধমকের সুরে বলল,

—“মিষ্টি কি আমার রুমে থাকে নাকি? যা ফ্রিজে গিয়ে দেখ।”

আলিয়া মেকি হেসে বলল,

—“হ্যাঁ ভাই মিষ্টি তোমার ঘরেই থাকে।”

বলেই আলিয়া রুমে ঢুকে গেল। তারপর ঘুমে বিভোর মুনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,

—“ওই যে মিষ্টি।”

আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,

—“ও মিষ্টি?”

—“হ্যাঁ তো ও খুব মিষ্টি।”

—“ওর কি নাম নেই? তুই মিষ্টি বলে থাকিস কেন?”

—“আছে। কিন্তু ওকে দেখতে পুরোই মিষ্টির মতো। তাই আমি ওকে মিষ্টি বলেই ডাকি।”

আলিয়া মুনের কাছে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো কিন্তু মুন উঠছেই না। তাই আলিয়া ক্লান্ত হয়ে আঁধার কে বলল,

—“ভাই তুমি মিষ্টি কে উঠিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিও। পাপা ও কে ডাকছে। আর তুমি ও তাড়াতাড়ি চলে এসো।”

আলিয়া চলে গেল। আঁধার মুনের কাছে এগিয়ে গিয়ে ও কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু মুন কিছুতেই উঠতে চাইছে না। ব্লাংকেট টেনে মুড়িয়ে আছে। আঁধার ব্লাংকেট টা এক টানে মুনের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। তারপর আবার ডাকতে লাগলো। মুন বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

—“আম্মু প্লিজ বিরক্ত করো না তো। আরেকটু ঘুমাতে দেও।”

বলেই মুন আবার ঘুম। আঁধার ধমকের সুরে বলল,

—“ইডিয়েট আমি তোমার আম্মু?”

আধার এক গ্লাস পানি নিয়ে পুরোটাই মুনের মুখের উপরে ছুঁড়ে মারলো। সঙ্গে সঙ্গে মুন ধরফরিয়ে উঠে বসলো। মুন চোখ খুলে পিট পিট করে আঁধারের দিকে তাকালো। আর দেখলো আঁধার গ্লাস থাকতে রেগে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুন আলসেমি ভেঙ্গে আঁধারের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির কন্ঠে বলল,

—“আপনি কি পানি ছুরে মারা ছাড়া এমনি ভালো ভাবে ডাকতে পারেন না।”

—“তুমি ভালো কথার মানুষ না।”

—“আচ্ছা আপনি সবসময় এভাবে কথা বলেন কেন? কেন একটু মিষ্টি করে কথা বলা যায় না? সব সময় শুধু খ্যাকখ্যাক করতেই থাকেন। মুখ দিয়ে যেন করলার জুস ঝরছে। শাশুমা মনে হয় জন্মের পর আপনার মুখে মদু দেয়নি। থাক সমস্যা নেই এখন থেকে আমি আপনাকে রোজ দু’চামচ করে মধু খাইয়ে দিবো। তারপর থেকে দেখবেন আপনার মুখ থেকে করলার জুসের বদলে মধু ঝরতে শুরু করবে।”

আঁধার বিরক্তির ভঙ্গিতে বলল,

—“তুমি এক সাথে এতো কথা বলো কি করে? মুখ ব্যথা হয় না তোমার?সব সময় শুধু ফালতু কথা।”

—“সত্যি কথা বললেই দোষ হুহ।”

—“তুমি সত্যি কথা বলো না। শুধু ফালতু কথাই বলো।”

মুন বেড থেকে নামতে নামতে বলল,

—“আপনি না মেয়েদের মতো সব সময় ঝগড়া করার জন্য রেডি হয়ে থাকেন।”

আঁধার চেঁচিয়ে বলল,

—“হোয়াট?”

—“নাথিং।”

—“তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে যাও। ড্যাড তোমাকে ডাকছে।”

—“আপনি যাবেন না? এখানে একা বসে কি করবেন?”

—“আমার কাজ আছে।”
_________________

মুন নিচে নামতেই দেখে আরমান রেজওয়ান সোফায় বসে বসে নিউজ দেখছেন। মুনকে দেখেই সে একটা সুন্দর হাসি উপহার দিয়ে মুনকে কাছে ডাকলেন। মুন গিয়ে আরমান রেজওয়ানের পাশে বসলো। মুন কথা বলতে একটু ইতস্তত বোধ করছে। আরমান রেজওয়ান হেসে বললেন,

—“কেমন আছো মামনী?”

—“ভালো। আপনি?”

—“মামনী আমাদের কি এখনো আপন ভাবতে পারো নি?”

মুন অবুঝ ভঙ্গিতে বলল,

—“কেন আঙ্কেল?”

—“বোকা মেয়ে আমি কি এখনো তোমার আঙ্কেল হই?”

—“সরি। আসলে……..”

আরমান রেজওয়ান আবারো হেসে বললেন,

—“সমস্যা নেই। প্রথম প্রথম একটু প্রবলেম হবে। শোনো মামনী তুমি যেমন তোমার বাবাকে নিজের মনের সব কথা শেয়ার করতে তেমনি আমাকেও করতে পারো। এখন তো তুমি শুধু কবিরের মেয়ে না। এখন তুমি আমারো মেয়ে। তাই তুমি নির্দ্বিধায় আমার সাথে ফ্রিলি কথা বলতে পারো। আমাকে সব সময় নিজের বন্ধ ভাববে।”

আরমান রেজওয়ান এমন ভাবে ফ্রিলি কথা বলায় মুন কিছুটা অবাক হলো। এ বাড়ির সবাইকে দেখেই মুন খুব অবাক হয়েছে। কারণ ও জানা মতে শশুর শাশুড়িরা বউদের সাথে এতো ফ্রেন্ডি হয় না। তারা সবসময় রাজারানীদের মতো ভাব নিয়ে থাকে। আর সবসময় হুকুম করতে থাকে। এটা করো‍, ওটা করো, এটা করো না, ওটা করো না। কিন্তু এরা, এরা একদমই আলাদা। মুন খুব ভাগ্যবতী তাই তো এরকম শশুর শাশুড়ি পেয়েছে। জামাইকা একটু বাকা কিন্তু কোনো ব্যাপার না মুন ঠিক সোজা করে নিবে। মুন মন খুলে হেসে বলল,

—“ওকে শশুর বাবা।”

আরমান রেজওয়ান হেসে দিলেন। মুন শুধু চেয়ে চেয়ে আরমান রেজওয়ানের হাসি দেখছে। উনি কথায় কথায় হাসে। সব সময় ঠোঁটে হাঁসি ঝুলে থাকে। মুন ভাবছে তাহলে Mr.Husband এরকম গোমড়া মুখো হলো কি করে? যেখানে মা বাবা দুজনেই সবসময় হাসি খুশি থাকে সেখানে ওই রাক্ষস টা সব সময় নিজেকে রাক্ষসদের রাজা প্রমাণ করার জন্য মুখটাকে ভুতুম পেঁচার মতো ফুলিয়েই রাখে। মুন এসব ভাবতে ভাবতে টিভির দিকে তাকালো আর সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকার শুনে আরিফা রেজওয়ান কিচেন থেকে ছুটে আসলেন। মুনকে ভয় পেতে দেখে আরামন রেজওয়ান ওকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

—“কিছু হয়নি মামনী ভয় পেও না। আমি আছিতো।”

আলিফা রেজওয়ান ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন,

—“কি হয়েছে ওর ও এভাবে কাঁপছে কেনো?”

—“নিউজ দেখে।”

আরিফা রেজওয়ান টিভির দিকে তাকিয়ে নিজেও শিউরে উঠলেন। মুন ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ওর হৃদপিন্ডটা জোরে জোরে লাথাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসতে চাইছে। আরমান রেজওয়ান বললেন,

—“তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আসো যাও।”

আরিফা রেজওয়ান নিজেও ভয়ে কাঁপছে। উনি কাঁপতে কাঁপতেই পানি নিয়ে আসলেন। আরামান রেজওয়ান মুন কে পানি খাওয়ালো। পানি খেয়ে মুন কিছুটা শান্ত হলো। আরিফা রেজওয়ান আরমান রেজওয়ানের পাশে বসে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

—“কত ভয়ানক ভাবেই না মেরেছে। যে বা যারা মেরেছে তাদের কি একটুও দয়া মায়া নেই? এরকম নির্দয় ও মানুষ হয়?”

—“এদের মতো মানুষের রুপি জানোয়ারদের এরকম মৃত্যুই প্রাপ্য। আর যারা এদের মেরছে তারা একদম ঠিক কাজ করেছে।”

আসলে তখন নিউজে এরকম কিছু বলছিল ‘নারী পাচার কারি একটা গ্যাং কে পুলিশ রেসকিউ করেছে। যারা আজ মেয়েগুলো কে বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আননোন নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ আসে যেখানে ওই জায়গার ঠিকানা দেওয়া ছিল। পুলিশ সেখানে যায় আর মেয়ে গুলো সহ পুরো গ্যাং কে রেসকিউ করে। কিন্তু ওই গ্যাং এর একটা সদস্য ও বেঁচে নেই। সবাই কে নিসংসো ভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এখনো এই ব্যাপারে তল্লাশি চালাচ্ছে। তাদের ধারণা যে ব্যাক্তি মেসেজ পাঠিয়েছে সেই ওই লোক গুলো কে হত্যা করেছে।’ লোকগুলো কে এতো নিসংসো ভাবে মারা হয়েছে যে, যে কারো আত্মা দেখলেই কেঁপে উঠবে।
________________

আঁধার মুন কে কোথাও নিয়ে যাবে বলেছে কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবে তা বলে নি। মুন সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। কিন্তু আঁধার মুনের প্রশ্নের কোনো উত্তর’ই দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে আঁধার মুনের কথা শুনতেই পাচ্ছে না। এক মনে ড্রাইভ করছে। মুন বিরক্ত হয়ে মুখ ভার করে বসে রইল। দেখতে দেখতে আঁধার নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেল। তারপর মুনকে বলল,

—“নামো।”

—“কেনো আমরা কি পৌঁছে গেছি?”

—“হ্যাঁ।”

মুন কাড় থেকে নেমে দাঁড়ালো। আঁধার কাড় পার্ক করতে চলে গেল। মুন বুঝলো এটা হসপিটাল। কিন্তু আঁধার ওকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছে? ও তো অসুস্থ ও না। মুন ভালো করে জায়গাটা ঘুরে দেখলো। খুব সুন্দর পরিবেশ। চারদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বিভিন্ন ধরনের গাছ। নানা রকমের রং বেরঙের ফুল গাছ। সবকিছু মুনের অনেক ভালো লেগেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার এসলো। মুন আর আঁধার দু’জনেই ভিতরে ঢুকলো। আঁধার মুনকে একটা কেবিনে নিয়ে গেল। কেবিনের দরজা খুলতেই একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের হাসি মাখা মুখ দেখতে পেলো মুন। মুন অবুঝ চোখে আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধার বলল,

—“ওর নাম ওলি। কাল যেই বাচ্চা মেয়েটার কথা বলছিলাম ও’ই সেই মেয়েটা।”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here