The_Addiction_Of_Love [ Action Time ? ],Part_21,22

0
1876

#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love [ Action Time ? ],Part_21,22
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_21
.
.
.
.

হোটেল থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিল আভি। হঠাৎ কেউ দৌড়ে এসে ওকে জাপটে ধরে।‌ আচমকা এমন হওয়ায় আভি কিছুটা পেছনের দিকে ঝুঁকে যায় পরক্ষনে নিজেকে সামলে নেয়। একটা মেয়ে ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে আছে মেয়েটি লাগাতার কাঁপছে যা আভি স্পষ্ট বুঝতে পারছে।

আভি কিছু বলতে নিলেই মেয়েটি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে শুরু করে,,, “‌ প প্লিজ হেল্প মি প্লিজজজজ”

মেয়েটির কথা আভি বুঝতে পারছে না কার থেকে বাঁচার জন্য হেল্প চাইছে ও। হঠাৎ কয়েকজন গুন্ডা টাইপের লোক আভির সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর ইংলিশে বলতে শুরু করে,,, “ ওকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে চুপচাপ কেটে পর এখান থেকে। ”

ছেলে গুলোর কথা শুনে মেয়েটি আরো জোরে জড়িয়ে ধরে আভিকে। আভি ছেলে গুলোর কথা শুনে বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,, “ কার সাথে পাঙ্গা নিচ্ছো জানলে আর সামনে দাঁড়ানোর সাহস করতে না।”

লোক গুলোর মধ্যে একজন আভির দিকে এগিয়ে এসে মেয়েটির দিকে হাত বাড়াতেই আভি ছেলেটার হাত ধরে ফেলে,,, ছেলেটি রাগি দৃষ্টিতে আভির দিকে তাকিয়ে বলে,, “ এসব হিরোগিরি আমাদের সামনে দেখাস না তাহলে আর জান নিয়ে বেঁচে ফিরতে পারবি না।‌”

আভি বাঁকা হেসে ছেলেটির হাত মুচরে ধরে বলে,,

আভিঃ এটাকে হিরোগিরি না মাফিয়াগিরি বলে ইউ বিচ্,,, ( বলেই ছেলেটির হাত মুচরে ছিটকে ফালায়)

ছেলেটি চিৎকার করে গোঙাতে থাকে। বাকি গুলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আভির দিকে।

আভি মেয়েটিকে সোজা করে ওর দিকে তাকালো। কান্না করতে করতে চোখ ফুলে গেছে আর গাল লাল হয়ে গেছে‌ মেয়েটির। এমন কান্না মাখা চেহারায় ও কাউকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে জানা ছিল আভির। ওর চোখই সরছে না মেয়েটির থেকে।

হঠাৎ ওই লোক গুলোর মধ্যে একজন একটা হকিস্টিক নিয়ে এগিয়ে আসে। আভি সাথে সাথে মেয়েটিকে সরিয়ে
হকি স্টিকটি ধরে ফেলে। এক হাত দিয়ে হকি স্টিক ধরে লোকটির বুকে জোরে লাথি বসিয়ে দিল আভি। লোকটি ছিটকে গিয়ে একটা পাইপের সাথে বারি খেল। আভি হকি স্টিক হাতে নিয়ে বাকিদের কাছে এগিয়ে যায়। ইচ্ছে মত মারছে আভি ছেলে গুলোকে। ওরা আভির সাথে পেরে উঠছে না। হঠাৎ পুলিশ সহ কয়েকজন মানুষ দ্রুত চলে আসে। তাদের দেখেই ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে যায়।

আভি হাঁপিয়ে উঠেছে। পুলিশের সাথে কয়েকটি সমবয়সী মেয়ে আরেকজন বয়স্ক মহিলা এসেছেন। মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরে,,,

পুলিশ ইন্সপেক্টর আমির সামনে এসে ওকে থ্যাংক ইউ বলে বলতে শুরু করে,,,

ইন্সপেক্টরঃ থ্যাংক ইউ সো মাচ্‌ মি. আভি রায়জাদা। আসলে ওনারা বাংলাদেশ থেকে ট্যুরে এসেছিলেন। হঠাৎ মেয়েটি তার টিম থেকে গায়েব হয়ে যায় এবং মিসেস আমেনা ( মহিলাটি) আমাদের কাছে রিপোর্ট করেন। দুই ঘন্টা ধরে খোঁজার পর দেখতে পেলাম সে এখানেই আর আপনি তার জন্য মারপিট করছেন।

আভি দাঁড়িয়ে দেখছে শুধু। মহিলাটি মেয়েটিকে শান্ত করছেন। আর বার বার ওহি বলে ডাকছেন। আভি বুঝতে পারছে যে হয়তো মেয়েটির নাম ওহি। ওহি মহিলাটিকে সব খুলে বলল কিভাবে আভি ওর হেল্প করেছে।

ইন্সপেক্টর এর কথা শুনে এখন আভির কাছে সব ক্লিয়ার হলো। আমেনা ওহির হাত ধরে আভির সামনে আসেন।

আমেনাঃ থ্যাংক ইউ সো মাচ্‌ সান। তুমি আজকে না থাকলে আমাদের ওহির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।

আভিঃ এটা আমার কর্তব্য ছিল ম্যাম। ( ওহির দিকে তাকিয়ে)আর নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবেন এটা বাংলাদেশ না একটা অপরিচিত দেশ।

ওহি কিছু বলছে না শুধু মাথা নিচু করে আছে। হয়তো ভয় পেয়েছে তাই কিছু বলতে পারছে না।

আভির খেয়াল হয় ওতো অন্য কোথাও যাচ্ছিল। ওহির জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল ওর।

আভিঃ আই হ্যাভ টু গো এক্সকিউজ মি,,( তাড়া করে)

আভি আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়। ওহি দাঁড়িয়ে আমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার ছিল হয়তো কিন্তু কেন জানি আভির সামনে গলা দিয়ে কথা নামলো না।

? In Loch Ness Lake ?

ইডিনবার্গ ক্যাসেল থেকে লেক দেখার জন্য রওশন সুবহাকে নিয়ে এসেছে। বিশাল নীল রঙের জলরাশি। উঁচু উঁচু টিলা আর ঠান্ডা হাওয়ার বেগ। গাড়ি থেকে নেমেই সুবহা দৌড় দেয় লেকের পাড়ে। রওশন মুচকি হেসে সুবহার পিছু পিছু হাঁটছে। আশেপাশে অনেক কাপল দেখতে পারছে ওরা। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।

সুবহা একটা টিলার উপর দাঁড়িয়ে লেকের বিশালতা দেখছে। সুবহা চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা হাওয়ার মিষ্টি ঘ্রান নিচ্ছে। রওশন মুগ্ধ চোখে দেখছে সুবহাকে। সুবহার পরনে সাদা লং ড্রেস যেটা বাতাসে উড়ছে। সুবহার খোলা চুল গুলোও এলোমেলো ভাবে উড়ছে।

সুবহার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রওশন। ওর ঠোঁটের এই হাসির জন্য সব করতে রাজী ও। রওশন সুবহার কাছে গিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে লেকের দিকে তাকায়। আচমকা এমন হওয়ায় সুবহা ভয় পেয়ে গেলেও পরক্ষনে বুঝতে পারে এটা কে। রওশনের গায়ের পারফিউম সুবহার খুব পরিচিত। অন্ধকারের মাঝেও রওশনের পারফিউমের ঘ্রানে ওকে চিনতে পারবে সুবহা।

রওশনের হাত সুবহার কোমড় জড়িয়ে আছে। সুবহার শরীর কাঁপছে রওশনের স্পর্শে। হার্ট বিট যেন দ্বিগুন বেড়ে গেছে ওর মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট অ্যাটাক করবে।

রওশন বুঝতে পারছে যে সুবহা কাঁপছে। রওশন বাঁকা হেঁসে সুবহার কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় সুবহার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

সুবহাঃ র রওশন আমি ওইদিকে যাব ( পালানোর জন্য)

রওশন বুঝতে পারছে যে সুবহা পালাতে চাইছে তাই নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় রওশন। হাতের বাঁধন আলগা হতেই সুবহা দৌড়ে নেমে যায়। রওশনের প্রচুর হাঁসি পাচ্ছে। নিজের হাসি কন্ট্রোল করে সুবহার পেছনে যায় ও। কয়েকজন ফেরিওয়ালা অনেক ধরনের জিনিস নিয়ে বসে আছে‌। রঙিন কাঁচের ছোট ছোট শিশি, ছোট ছোট পুতুল, আইডল, কি রিং।

সুবহা তাদের কাছে গিয়ে জিনিস গুলো দেখছে।

সুবহাঃ রওশন আমার এগুলো চাই,,( বায়না ধরে)

রওশনঃ যেটা পছন্দ নিয়ে নাও,,

সুবহা খুশি হয়ে অনেক গুলো কাঁচের শিশি আর একটা কিউট ছোট পুতুল নিল। সুবহার চোখে একটা কি রিং পরলো যেটাতে দু’টো ছোট পুতুল লাগানো। একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে। সুবহা কি রিং টাও নিল।

কেনা কাটা শেষ করে রওশন সুবহাকে নিয়ে লেকের পাশে একটা ছোট দোকানে যায়। এখানে সবার খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড বিক্রি করা হয়।

ওরা টেবিলে বসতেই একজন এসে অর্ডার নিয়ে যায়। খাওয়া শেষ করে রওশন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

রওশনঃ সুবহা কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর এখান দিয়ে সূর্যাস্ত অনেক সুন্দর দেখা যায়। তুমি দেখতে চাও?

সুবহাঃ অফকর্স রওশন আই ওয়ান্ট টু সি,,( খুশি হয়ে)

রওশনঃ ওকে কাম উইথ মি,,,

রওশন সুবহার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে সূর্যাস্ত উপভোগ করে সবাই।

রওশন সুবহাকে লেকের সবচেয়ে দূরবর্তী টিলায় নিয়ে উঠে। ঘড়ির দিকে একবার আর আকাশের দিকে একবার তাকাচ্ছে ও। এখনি সূর্যাস্ত হবে।

সুবহা গভীর আগ্রহ নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর রওশন সুবহার দিকে।

মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে সূর্য লেকের নীল পানিতে ডুবে যাচ্ছে। সূর্যের আলো লেকের নীল পানিতে রক্তিম আভা ফুটিয়ে তুলছে। মুহূর্তটা খুব অসাধারণ লাগছে সুবহার কাছে।

নিজের অজান্তেই রওশনের হাত ধরে ফেলে সুবহা। রওশন সূর্যের দিকে না তাকিয়ে সুবহার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন ওর সব চাওয়া পাওয়া সুবহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। সুবহার হাত নিজের হাতে সারাজীবন আবদ্ধ রাখতে চায় ও।

সুবহা রওশনের দিকে ফিরতেই দেখে রওশন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রওশনের চোখের দৃষ্টিতে আটকে পরেছে সুবহা। ওর চোখও সরছে না রওশনের থেকে। আবছা সূর্যের কিরন ওদের মুখের উপর পরছে।

রওশন সুবহার হাত আরো শক্ত করে ধরে ধীরে নিজের কাছে টেনে আনে ওকে। সুবহার চুলের ফাঁকে নিজের হাত ডুবিয়ে ওর দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যায় ও। সুবহা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।

নিজের কপালে রওশনের ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করছে ও। সুবহার কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে রওশন।

সুবহার হাতও অটোমেটিক্যালি রওশনের পিঠে চলে যায়। আজ প্রথমবার সুবহা রওশনকে জড়িয়ে ধরেছে। রওশন মুচকি হাসছে। ও বুঝতে পারছে যে সুবহার মনে ওর জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে।

রওশন সুবহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,,

রওশনঃ তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেলে সুবহা?( লো ভয়েজে)

সুবহা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো রওশনের প্রশ্নে। নিজেকে রওশনের থেকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে ফেলে ও।

রওশনঃ হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। যখন উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে করবে তখন দিও। আমি অপেক্ষায় থাকবো।

সুবহা অবাক চোখে তাকায় রওশনের দিকে। রওশন আসলেই অদ্ভুত। কখনো ওকে কোন কিছুর জন্য ফোর্স করে না বরং যথাসম্ভব ওকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করে।

রওশনঃ চলো‌ অন্ধকার হয়ে এসেছে হোটেলে ফিরতে হবে।( সামনে তাকিয়ে)

সুবহা রওশনের পাশাপাশি হাঁটছে আর আড়চোখে বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে।

গাড়িতে উঠতে নিলেই সুবহার মনে পরে ও কি রিং টা দোকানের টেবিলেই ফেলে এসেছে।

সুবহাঃ ওহহ নো রওশন আমার কি রিং তো ওই টেবিলেই ফেলে এসেছি।( কাঁদো কাঁদো ভাবে) চলেন না নিয়ে আসি।

রওশনঃ ওয়েট তোমার যেতে হবে না আমি গিয়ে দেখছি। তুমি গাড়িতে বসো আমি নিয়ে আসছি,,,

রওশন সুবহাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয় তারপর দরজা আঁটকে দিয়ে বলে,,,

রওশনঃ ভিতর থেকে লক করে নাও আমি না আসা পর্যন্ত বের হবে না ওকে।

সুবহা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল। রওশন আবার লেকের পাড় চলে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রওশন কি রিং নিয়ে চলে আসে। দূর থেকে রওশনকে আসতে দেখে সুবহা গাড়ি থেকে নেমে আসে। রওশন এগিয়ে আসছে ওর দিকে। রওশন কি রিং টা উঁচু করে সুবহাকে দেখালো আর ইশারায় বলল পেয়ে গেছে। সুবহার চোখে খুশির ঝিলিক।

হঠাৎ একটা কালো রঙের বড় গাড়ি এসে থামলো সুবহার সামনে। সুবহা ঘাবড়ে যায়। গাড়ি থেকে কয়েকজন লোক নেমে সুবহার সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরে ফেলে। সুবহা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না এরা কারা।

রওশনঃ সুবহাআআ হেয়য়য় লেট হার গোওও( চিৎকার করে)

রওশন লোক গুলোকে দেখেই দৌড় দেয় সুবহার কাছে আসার জন্য।

সুবহাঃ হু আর ইউ লিভ মি,,, রওশনননন,,

লোক গুলো সুবহাকে টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। সুবহা ছুটাছুটি করছে তাও ছাড়া পাচ্ছে না। ও কান্না করছে ছোটার জন্য। রওশন আসতে আসতে তারা গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।

রওশন নিজের গান বের করে গাড়িতে গুলি করছে কিন্তু ভেইন কোন কাজ হলো না। গাড়ি নাগালের বাইরে চলে গেছে।

রওশন হাঁপিয়ে গেছে ওর নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর বুকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও। ইচ্ছে করছে নিজেকে এখন গুলি করে শেষ করে দিতে। রওশন রেগে চিৎকার করে উঠে।

রওশনঃ শানননননন আই উইল কিললল ইউ ব্লাডি বিচচচচচ,,,( চিৎকার করে)

???

সুবহা‌ নিজের চোখ খুলতেই অচেনা কোথায় নিজেকে আবিষ্কার করে। লোক গুলো ওকে ক্লোরোফোম শুকিয়ে দিয়েছিল তাই ও ফেইন্ট হয়ে গিয়েছিল।

সুবহা ধরফরিয়ে উঠে বসতেই দেখলো ওর বরাবর সোফায় আভি বসে আছে।

আভিঃ হ্যালো বেবি ঘুম কেমন হলো। ( হেঁসে)

সুবহাঃ তুমি এখানে কেন? আর ওই লোক গুলো কারা ছিল আভি?

আভিঃ আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি আগে বাড়ি ফিরে যাই চলো?

আভি উঠে সুবহার হাত ধরে বাইরে চলে আসে। সুবহা অনেক প্রশ্ন করছে আভিকে কিন্তু আভি কোন উত্তর দিচ্ছে না। মেইন ডোরের সামনে আসতেই কয়েকজন গার্ড আভির পথ আঁটকে ধরে। আভি ভ্রু কুঁচকে তাকায় তাদের দিকে।

আভিঃ হোয়াট? এভাবে পথ আটকানোর মানে কী?

পেছন থেকে শান বলে উঠে,,,“ এতো তাড়া কিসের মি. আভি রায়জাদা”

আভি পেছন ঘুরে দাঁড়ালো। সুবহা ভয়ে আমির পেছনে চলে গেল।

আভিঃ শর্ত অনুযায়ী সুবহাকে আমি নিয়ে যাব আর রওশনের সাথে যা করার তুমি করবে ভূলে গেছে?( কড়া গলায়)

সুবহা অবাক চোখে তাকায় আভির দিকে।

শানঃ যদি বলি আমি শর্ত ভাঙতে চাই?

আভিঃ তুমি কি বলতে চাচ্ছো?( দাঁতে দাঁত চেপে)

শানঃ এটাই; যে এখন আমার রওশনের মৃত্যু ও চাই আর এই মেয়েকেও চাই,,,( সুবহার দিকে তাকিয়ে)

সুবহা ভয় পেয়ে যায়। আভি সুবহার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।

আভিঃ নর্দমার কীটের কাছ থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তুমি কি ভাবো তুমি আমাকে আঁটকে রাখতে পারবে?( শানের পায়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে)

[ শানের এক পা কাঠের যার জন্য ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। অবশ্যই এটা রওশন করেছে যার জন্য শান রওশনকে এতোটা ঘৃনা করে]

শান চেহারায় রাগি ভাব এনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গিয়ে সোফায় বসল তারপর বলল,,

শানঃ তোমার জন্য আমার চেলাপেলাই যথেষ্ট,,,( গার্ডদের ইশারা করে)

শানের ইশারা পেয়ে গার্ড গুলো আভির দিকে এগিয়ে আসে। আভি সুবহাকে সাইডে দাঁড় করিয়ে দেয় তারপর ওর গালে হাত রেখে বলে,,,

আভিঃ আই’ম স্যরি সুবহা বাট ডোন্ট ওয়ারি,, আমি তোমাকে এই বিপদে ফেলেছি আর আমিই তোমাকে প্রটেক্ট করবো। নিজের জান দিয়ে হলেও তোমাকে কিছু হতে দিব না।

সুবহা কাঁদছে প্রচুর ভয় করছে ওর। মনে মনে শুধু রওশনকে ডাকছে ও।

আভি পেছন ঘুরে ওদের সাথে ফাইট করতে শুরু করে।

আভির সাথে পেরে উঠছে না ওরা। শানের কপালে হালকা ঘাম ছুটছে। হঠাৎ শানের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপলো। ও একজনকে ইশারায় কিছু বলল,,,

একটা গার্ড বড় রড নিয়ে পেছন থেকে আভির মাথায় বারি দিল। আভি মাথায় হাত রেগে পেছনে ঘুরলো সাথে ওর কপালে জোরে বারি মেরে দিল।

সুবহাঃ আভিইইইইই,,,

আভি ধপ করে ফ্লোরে পরে গেল। ওর রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে। সুবহা আভির কাছে আসতে নিলেই একটা গার্ড ওকে ধরে ফেলে।

শান উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আভির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,

শানঃ গুড বাই আভি রায়জাদা। হয়তো তোমাদের রায়জাদা বংশের সবার মরন আমার হাতেই লিখা। প্রথম তুমি তোমার পরে ওই রওশন রায়জাদা। ( মুখ শক্ত করে)

নিয়ে আসো রওশনের প্রান পাখিকে। এই পাখির মধ্যেই রওশনের জান আঁটকে আছে।( সুবহার দিকে তাকিয়ে)

শান বেড়িয়ে যায় আর ওর পেছনে গার্ডরা সুবহাকে টেনে নিয়ে যায়।

To be continued….

#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_22
.
.
.
.
রওশন নিজের গার্ডদের নিয়ে চলে আসে শানের ডেরায়। ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে দেখেই মনে হচ্ছে হয়তো এবার যে ওর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তার রেহাই নেই।

রওশনঃ শাননন হয়ার আর ইউউ ব্লাডি বিচচচচচ (চিৎকার করে ডাকছে)

রওশন ভিতরে ঢুকেই স্তব্ধ হয়ে যায়। আভি ফ্লোরে পরে আছে আর ওর রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। রওশন দ্রুত আভির পাশে গিয়ে বসে ওকে তুলে।

রওশনঃ আভিই ত তুই এখানে আর তোর এই অবস্থা কিভাবে? কে করল? আভিইই ওপেন ইউর আইসসস,,,

আভি আধো আধো চোখ খুলছে। রওশনকে দেখেই থেমে থেমে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল,,

আভিঃ আ আই’ম স স্যরি ভাই,,, আ মার ভুলের জন্য স সু্বহা,,,

আভি আর কিছু বলতেও পারল না চোখ বন্ধ হয়ে গেল ওর,,,

? After Some Time ?

আভি এখন আউট অফ ডেঞ্জার আছে। রওশন আভির পাশে বসে আছে। অপেক্ষা করছে ও‌ আভির জ্ঞান ফিরার। অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়া হয়েছে আভির। বেডটা একটু উঁচু করে দিয়ে ওকে হেলান দেওয়া অবস্থার মত শুইয়ে রাখা হয়েছে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর আভির জ্ঞান ফিরল। নিজের চোখ খুলতেই পাশে রওশনকে বসা দেখল ও। রওশনের চেহারা দেখেই ভয়ে ঢোক গিলল আভি। মাথা ব্যথা করছে প্রচুর বেচারার। রওশন এখনো গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ওর দিকে।

আভিঃ ভ ভাই আমি আসলে,,,

আর কিছু বলার আগেই আভির হাত ওর গালে অটোমেটিক্যালি চলে যায়। কারন রওশন এই মাত্র ওর গালে চর বসিয়েছে।

নিজের গালে হাত রেখে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে আভি রওশনের দিকে।

রওশনঃ স্টুপিড ডাফফর ইডিয়ট কখনো বুদ্ধি হবে না তোর তাইনা? প্রত্যেক বার এমন কিছু করিস যার জন্য তুইও বিপদে পরিস আর নিজের আশেপাশের লোকজন দেরও বিপদে ফালাস। প্রতিশোধ নিবি ভালো কথা সেটাও নিজের যোগ্যতায় নিতে পারলি না। এটার জন্যও শানের হেল্প লাগল তোর?

চার বছর আগের ঘটনা এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছিস তুই রিডিউকিলাসস,,, একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে নিজের ভাইকেও নিজের শত্রু বানিয়ে ফেলেছিস। এতোটা অবুঝ তো তুই ছিলি না তাহলে?

আভিঃ ভূল তোমার ছিল সেদিন আমার না,,( গালে হাত দিয়েই )

রওশনঃ আরেকটা চর খাওয়ার খুব ইচ্ছে তাইনা?( রেগে)

আভিঃ সেদিনও এমনি করেছিলে তুমি ভাই,, আমার দোষ না হওয়া সত্ত্বেও সবার সামনে আমাকে চর বসিয়েছিলে। কারন একটাই কি জানো? আমি তোমার আপন ভাই না। যদি আপন ভাই হতাম তাহলে অবশ্যই আমার কথাটাও শুনতে। ইউ নো হোয়াট আগে সবচেয়ে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করতাম তোমাকে ভালোবাসায় বাট নাও সবচেয়ে বেশি তোমাকে ঘৃনা করি আই জাস্ট হেইটট ইউউ,,( রাগি কন্ঠে)

আভির কথার প্রেক্ষিতে রওশন আর কোন কথা পেলো না। ওর অনেক কিছু বলার আছে অনেক কিছু বোঝানোর আছে কিন্তু এখন ওর কাছে সেই সময় টুকু নেই।

হঠাৎ রওশনের ফোনে ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজ টা দেখেই বাঁকা হাসলো রওশন।

রওশনঃ তোকে কিছু বলে লাভ নেই। তখনও তুই আমার কথা বুঝার চেষ্টা করিসনি এখনো করবি না আমি জানি। আগে শানের চ্যাপ্টার শেষ করি তারপর তোকে এসে বুঝাচ্ছি।

রওশন আভিকে কিছু না বলে বেড়িয়ে আসল কেবিন থেকে আর যেতে যেতে বলে যায় হসপিটাল থেকে যেন
ওর পারমিশন ছাড়া যেন না বের হয়।

???

সুবহাকে একটা রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছে।‌ পুরো রুমে অন্ধকার। অন্ধকার আর বন্ধ জায়গায় ওর‌ দম আঁটকে আসছে।

সুবহা লাগাতার দরজা বারি দিচ্ছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে ওর।

সুবহা দরজার পাশেই হাঁটু ভাঁজ করে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর চোখ বন্ধ করে শুধু রওশনকে ডাকছে।

সুবহাঃ কারা এরা কেন করছে আমার সাথে এমন? কি এমন শত্রুতা আছে রওশনের সাথে এই লোকের? আমার রওশন কখনো কারো ক্ষতি করে না আমি জানি তাহলে এই লোকটার সাথে ওর কিসের শত্রুতা?( ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে) রওশন প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে জান আমার অনেক ভয় করছে।

শান ওর গোপন ডেরায় আছে। ও নিশ্চিত যে রওশন এই জায়গাটা খুঁজে বের করতে পারবেনা। শান বসে ওর বাকি পার্টনার দের সাথে ড্রিঙ্ক করছে। ওদের প্লানিং যে আজকে রাতে ওরা শিপ দিয়ে চাইল্ড স্মাগলিং করবে।

হঠাৎ বাইরে বিস্ফোরণ এর আওয়াজে ঘাবড়ে যায় ওরা। ধরফরিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে ওরা। অন্য দলের গার্ডরা ওদের গার্ডদের আটকিয়ে ফেলেছে আর তারা ভিতরেই আসছে। শানের বুঝতে বাকি রইল না যে এরা রওশনের গার্ড।

শানঃ একটাও যেন বেঁচে ফিরতে না পারে,,(সবাইকে উদ্দেশ্য করে)

শান সবার আড়ালে সরে আসে। হাতে গান নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছে রওশন ওর পিছনে সব গার্ডরা। সামনে যে আসছে তাকেই গুলি করে উপরে ট্রান্সফার করে দিচ্ছে।

শান ওর এমার্জেন্সি চপার ( প্রাইভেট হেলিকপ্টার)
বাড়ির বাইরে ল্যান্ড করিয়ে রেখেছে। পাইলটকে কল করে ‌চপার স্টার্ট দিতে বলে সুবহাকে যেখানে আটকে রেখেছে সেখানে যাচ্ছে ও।

দরজা খোলার শব্দে সুবহা ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সুবহা ভাবছে হয়তো ‌রওশন এসেছে কিন্তু দরজার বাইরের মানুষটিকে দেখেই ভয়ে ঢোক গিলল ও।

শানঃ চলো রওশনের প্রান পাখি তোমাকে দুবাই শহর ডাকছে,,,( শয়তানি হেসে)

সুবহাঃ ম মানে?

শানঃ ব্রিং হারর,,( একজনকে উদ্দেশ্য করে)

একজন বডিবিল্ডার গার্ড এসে সুবহার হাত ধরে নেয়। সুবহা ছুটাছুটি করতেই লোকটা ওর গালে জোরে চর বসিয়ে দেয়। সুবহার ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। সুবহা ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়। শান পেছনের দরজা দিয়ে সুবহাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

পাইলট চপার স্টার্ট দিয়েছে। ওরা চপারের সামনে যেতেই কোথা থেকে গুলি এসে পাইলটের মাথা ছুঁইয়ে যায় আর পাইলট নিচে পরে যায়।

সুবহা শান আর গার্ড পিছনে ফিরতেই রওশনকে দেখতে পেল। রওশনের গান থেকে এখনো ধোঁয়া ছুটছে। সুবহা রওশনের এই রুপ প্রথমবার দেখছে। পরনে লং কোট কলার উঠানো আর হাতে গান চোখে হিংস্রতা। রওশনকে দেখেই মাফিয়াদের মত দেখা যাচ্ছে। রওশনের এই রুপ প্রথমবার দেখছে সুবহা। ওর‌ রওশনকে দেখে খুশি হওয়া দরকার কিন্তু তাও ওর ঠোঁটে হাসি না চোখে ভয় দেখা যাচ্ছে।

রওশন হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে গার্ডের হাতের দিকে যে হাত দিয়ে ও সুবহার হাত ধরেছে।

রওশনকে পিছন থেকে এসে অনেক গুলো গার্ড ঘিরে ধরে। রওশনের চোখ এখনো ওই হাতের দিকেই। একটা গার্ড রওশনের দিকে এগিয়ে আসতেই তার হাত মুচরে ধরে ছিটকে ফালায় রওশন। একে একে সব গুলোকে মারছে ও।

রওশন ওদের মারতে মারতে এগিয়ে আসছে। শান গার্ডটাকে ইশারা করে বলে সুবহাকে ছেড়ে রওশনকে আ্যটেক করতে।

গার্ডটা সুবহাকে ছেড়ে রওশনের কাছে যায়। গার্ডটা মার্শাল আর্ট স্পেশিলিস্ট। ও বিভিন্ন ভাবে রওশনকে হিট করার চেষ্টা করছে কিন্তু রওশন ওর প্রতি উত্তরে ওকে হিট করছে।

এক পর্যায়ে গার্ডটা রওশনের ঘাড়ে নিজের হাত নিয়ে ওকে অবস করতে নিলেই রওশন ওর হাত মুচরে উল্টিয়ে দেয় তারপর ওকে ফ্লোরে ফেলে ওর বুকে গুলি করে দেয়।

সুবহা এখনো পাথরের মত দেখছে। ওর নরার শক্তি টুকু বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে।

রওশন সুবহার কাছে এসে দাঁড়ায়। সুবহার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ও। এখন আর রওশনের চোখে হিংস্রতা নেই আছে শুধু আবেগ আর সুবহার জন্য গভীর ভালোবাসা। সুবহা একই ভাবে তাকিয়ে আছে রওশনের দিকে। হাজারো প্রশ্ন দেখতে পারছে রওশন সুবহার চোখে।

রওশন নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে সুবহার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা রক্ত টুকু মুছে নেয়। এক টানে সুবহাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রওশন। রওশন সমস্ত শক্তি দিয়ে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে আছে। রওশনের হার্টবিট শুনতে পারছে সুবহা। রওশন সুবহার মাথায় চুমু দিয়ে ওর মাথা উঠিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আবারো জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে অনেক মূল্যবান জিনিস হাড়িয়ে আবার খুঁজে পেয়েছে।

শান সুযোগ বুঝে চপারে উঠে চপার স্টার্ট দিতেই রওশন হিংস্র চোখে ওর দিকে তাকায় তারপর গান তুলে সোজা ওর মাথার মাঝ বরাবর শুট করে।

গুলির শব্দে আরো ভয় পেয়ে যায় সুবহা। ধীরে ধীরে ওর চোখ বন্ধ হয়ে যায়। রওশনের বুকে ঢলে পরে ও।

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here