The_Magic_Of_Love #পর্বঃ১৬,১৭,১৮,১৯,২০

0
1071

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৬,১৭,১৮,১৯,২০
#writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১৬

সূর্য অস্ত গিয়েছে। চারিদিকে মানুষের আসা যাওয়া। কেউ কেউ একা আনমনে সময় কাটাচ্ছে আর কেউ কেউ ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে। প্রাপ্তি বাসায় ফিরতেই তাড়াতাড়ি নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। আচমকা এমন করাতে নম্রতা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আর ফাতেমা বেগম, আলেয়া বেগম একে অপরের দিকে একটু তাকিয়ে নম্রতাকে বললো, কি হয়েছেরে নম্রু?

প্রাপ্তির সারা শরীর কাঁপছে। একটু আগের ঘটনা ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার। একটু আগে…..

আচ্ছা প্রাপ্তি আমিতো আপনার হবু বর আমার তো আপনার উপর পুরো অধিকার আছে। আমি আপনাকে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়? রিত্তিকের বেহায়াপনা কথায় প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে বললো, এই আপনার কি মুখে কিছু আটকায়না? রিত্তিক ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, ওমা আটকাবে কেনো? নিজের হবু বউকেইতো একটু…এইটা বলেই রিত্তিক একটু বাকা হাসে। সবাই বাসায় চলে যাও। আমি শালিকাকে আর আমার বউকে বাড়ি দিয়ে আসি। এমন বউ বলাতে সবার সামনে প্রাপ্তির অনেক লজ্জা লাগলো। আর মনে মনে বললো, এই লোকটাতো লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছে। তো রিত্তিক নম্রতা আর প্রাপ্তিকে নিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসলো। প্রাপ্তিদের গেইটে আসতেই গাড়ি থামায় সে। নম্রতা আগেই নেমে পড়ে। প্রাপ্তি যখনি নামতে যাবে তখনি প্রাপ্তির হাত টান দিয়ে কপালে একটা চুমু খায় রিত্তিক। প্রাপ্তি চোখ বড় বড় করে তাকায়। “কিরে আপু তাড়াতাড়ি আয়না..নম্রতার কথায় তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ে। এইগুলো ভাবতেই প্রাপ্তির রাগ হচ্ছে।

পরী কাল আমরা আসছি…রিত্তিক ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা…ফোনের ওপাশ থেকে অস্তিত্ব আসবে শুনে…আয়মান খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে। অস্তিত্ব বললো, কিরে পরী? এমন বাঁদরের মতো লাফাচ্ছিস কেনো? আয়মান রাগি কন্ঠ নিয়ে বললো, কি বললে তুমি? আমি বাঁদর? অস্তিত্ব আমতা আমতা করে বললো, না না আমার পরীতো আকাশের কিউট পরী বাঁদর হতে যাবে কোন দুঃখে?

রওনক শপিংমলে তুমি ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেনো? রওনক অবাক হয়ে বললো কখন? ওমা বেবি তুমিতো আমার সাথেই ছিলে। ফোনের ওপাশ থেকে নম্রতা রাগী গলায় বললো, দাঁড়াও একবার আপুর বিয়েটা হোক তারপর তোমার মজা বুঝাচ্ছি। রওনক অসহায় ফেইস নিয়ে বললো,যাক বাবা না তাকালেও দোষ!

” সিঙ্গেল আছি ভালোই আছি বিন্দাস জীবন ভাই,
ভালোবাসা নামক প্যারা এই জীবনে নাই”

হৃদ আয়নার সামনে ভেজা চুলগুলো ঠিক করছে আর এই গান গাচ্ছে। সদ্য গোসল করেছে সে। হঠাৎ রওনক এসে বললো,হো ভাই সিঙ্গেল ওই ভালো৷ এতো প্যারারে ভাই কি যে কমু…হৃদ রওনকের বলার ধরণ দেখে হোহো করে হেসে দেয়। হঠাৎ হৃদের ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে “বাবা” লিখাটা ঝলমল করছে। মুহুর্তেই মুখ চুপসে যায়। কল ধরতেই ওপাশ থেকে তার বাবার গাম্ভীর্য প্রশ্ন “কখন আসবে তুমি? নাকি ওইখানেই সারাজীবন কাটিয়ে নেওয়ার পণ করেছে। নিজের বাবার মুখের কথায় আলাদা একটা তেজ দেখতে পেয়েছে হৃদ। তাই আমতা আমতা করে বললো, বাবা আপনাকেতো বললাম রিত্তিকের বিয়েটার পরই চলে আসবো। ওপাশ থেকে আবার বললো, দেখো হৃদ তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো। আমি আর ব্যবসা দেখাশুনা করতে পারবোনা এই বয়সে। তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আমি অবসর নিতে চায়। আর তাছাড়া তোমার মা বাসায় একা থাকে নতুন একজন কে ঘরে তোলার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি চেষ্টা করছি। আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো? হৃদের কন্ঠ আগের মতোই শান্ত তাই সে বললো,জ্বি বাবা বুঝতে পেরেছি।

হৃদ শুয়ে শুয়ে ভাবছে তার বাবার বলা শেষ কথাটা। তার বাবা কি হৃদের বিয়ের কথা বললো! কিন্তু সেতো এখন কোনোভাবেই বিয়ে করতে চায়না।

বাসার কলিংবেল বাজতেই মিসেস ইয়ামিনি খান্না দরজা খুলে দিলেন। সামনের মানুষটাকে দেখে চমকে উঠেন তিনি।

চলবে……

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

আকাশে মেঘ কিছুটা উঁকি দিয়েছে। চারিদিকে বইছে ঝড়ো হাওয়া। মিসেস ইয়াসমিনি খান্না অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তার স্বামী আর্জিব রাইদিকে। ইয়ামিনি খান্না কি বলবে তা এখন মাথায় আসছেনা। এতো বছর পর নিজের স্বামীকে দেখবে তা তিনি আশা করেননি। আর্জিব রাইদি বললেন, আমি এইখানে থাকতে কিংবা দেখতে আসেনি আমি আমার সন্তানদেরকে দেখতে এসেছি। মিসেস ইয়াসমিনি খান্না হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললো, আমি কোনো খুনিকে আমার সন্তানদের সাথে দেখা করাতে চায়না। আর কোন সাহসে এতো বছর পর আমার সন্তানদেরকে দেখতে এসেছো? আর্জিব রাইদি এখন হুংকার ছেড়ে বললেন, তোমার নয় ওরা আমার সন্তান। আর তুমি কাকে খুনি বলছো? আমি কতোবার বলবো আমি খুন করিনি। মিসেস ইয়াসমিনি খান্না আর কিছু না বলে মুখের উপর দরজা দোম করে লাগিয়ে দেন।

আয়মানের মুখে এক গ্লাস পানি ডালতেই..ক কে বলে লাফিয়ে উঠলো সে। সামনে থাকা অস্তিত্বকে দেখে ভূত দেখার মতো চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় অস্তিত্ব আয়মানের মুখ চেপে ধরে বলে, পরী চুপ পাশের রুমে মা ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। আয়মান চোখ বড় বড় করে বললো, এই এই তুমি কখন এলে? অস্তিত্ব বিছানায় শুয়ে ভাব নিয়ে বললো,কখন আবার একটু আগে। এসে তোকে কোথাও পাচ্ছিলাম না…তাই ভাবলাম তুই হয়তো তোর রুমে কিন্তু কে জানতো? ঘুমের রাণী ঘুমোচ্ছে।

মা কিছু খেয়ে নে…ফাতেমা বেগম প্রাপ্তির মাথায় হাত রেখে কথাটা বললো। প্রাপ্তি গুটিসুটি হয়ে শুয়ে বললো,দুইদিন পরতো বিদায়ই করে দিচ্ছো কি দরকার এমন আদরের? ঘর থেকে বের হও মা আমি ঘুমোবো। ফাতেমা বেগম আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। রিত্তিক কল দিয়েছে প্রাপ্তিকে। কিন্তু প্রাপ্তি ইচ্ছে করে ধরছেনা৷ অনেকগুলো কল দেওয়ায় প্রাপ্তি বিরক্ত নিয়ে ধরলো।

রিত্তিকঃ হুর পরী আপনি কল ধরছিলেন না ইচ্ছে করে তাইনা?
প্রাপ্তিঃ কেনো কল দিয়েছেন ওইটা বলেন।
রিত্তিকঃ আপনার ঠোঁটের তিলটা অনেক সুন্দর দেখায় আপনি হাসলে শুভ্রা রাণী।

রিত্তিকের কথায় প্রাপ্তি অবাক হয়ে বললো, এই এই আপনি আমার ঠোঁটের তিল ও দেখেছেন? রিত্তিক হেসে বললো, ওমা হবু বউয়ের ঠোঁটের তিল না দেখার কি আছে? যদিও যে কেউ তা দেখেও বুঝতে পারবেনা যে আপনার ঠোঁটে একটা সুন্দর তিল আছে। প্রাপ্তি বললো, এতো নাম আপনি কোথথেকে পান বলুনতো? রিত্তিক হেসে বলে, আপনি হাসলে আমার শুভ্রা পরী। আপনি নীল শাড়ীতে আমার নীল পরী। আপনি সাদা সিধাতে আমার হুর পরী।

আহহহহহহহ…হঠাৎ একটা অজানা মেয়ে চিৎকারে তাড়াতাড়ি তার মুখ চেপে ধরে হৃদ। হৃদ চেপে ধরে বলছে..এই মেয়ে চুপ সবাই শুনতে পাবে।
অজানাঃ হাতের ইশারায় হৃদকে তার টাওয়াল পড়ানো দেখাচ্ছে। হৃদ এতোক্ষণে নিজের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি মেয়েটিকে ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে আসে।

আসলে হয়েছিলো কি…

সদ্য গোসল করা হৃদ বের হয়েছিলো টাওয়াল পরে। হঠাৎ ওই মেয়েটি দেখতে মেয়ে চিৎকার করে ফেলেছে।

হৃদঃ এই মেয়ে কে তুমি? আমার রুমে কি করছো?
অজানাঃ চুপ করুন। কেউ এমনভাবে দরজা লক না করে রুমে টাওয়াল পড়ে ঘুরে বেড়ায়।
হৃদঃ আমার রুম আমি যা ইচ্ছে তা করবো কে তুমি হুম?
অজানাঃ আমি কে তা জেনে আপনার কি? যত্তসব পাগল ছাগল.. এইটা বলেই মেয়েটি চলে গেলো। আর হৃদ এইদিকে অবাক হয়ে বলছে, এই মেয়েটা আমাকে পাগল ছাগল বললো!

অস্তিত্ব কখন এলি? হৃদ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো। অস্তিত্ব হেসে বললো, আরে হৃদ ভাই কেমন আছো? একটু আগেই আসলাম। হৃদের চোখ পড়ে আয়মানের পাশে থাকা অজানা মেয়েটির দিকে। হৃদ কাশি দিয়ে গলাটা ঝেড়ে বললো, ওই মেয়েটা কেরে? অস্তিত্ব একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, ওহ এই মেয়েটি আমার বেষ্টু নিরান্বিতা।

চলবে….

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৮
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

নিরান্বিতা ওনি হচ্ছে হৃদ ভাই। রিত্তিক ভাইয়ার বেষ্ট ফ্রেন্ড। হাতের ইশারায় হৃদকে দেখিয়ে কথাটা বললো অস্তিত্ব। ভদ্রতার মনোবেশে নম্রতাও আগে দেখেনি কিংবা একটু আগে যে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটলো তা বুঝতেই দেয়নি।

নিরান্বিতা হৃদের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, “হাই আমি নিরান্বিতা মেডিকেলে পড়াশোনা করছি। হৃদ ও নিরান্বিতার দিকে তাকিয়ে একটু বাকা হেসে বললো, হাই আমি হৃদ সিনহা। বর্তমানে কিছুই করছিনা পড়াশোনা শেষ। বাবার Business এ জয়েন করবো ভাবছি।

নিরান্বিতা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো,ভাবছেন? কেনো আপনি চান না জয়েন হতে? আর পড়াশোনা শেষ কোনো জবের ট্রাই কেনো করছেন না? ” কানাডা থেকে ডাকা হয়েছিলো হৃদকে ইচ্ছে করে রিজেক্ট করেছে তার নাকি মাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে” কথাটা বলতে বলতে পায়ের মুজো খুলছে রিত্তিক। সবাই এক পলক দরজার সামনে তাকিয়ে নিরান্বিতা বললো, ব্যাপারটা অনেক ইন্টারেস্টিংতো। রিত্তিক হেসে হাত বাড়িয়ে বললো আমি রিত্তিক। তুমি নিরান্বিতা রাইট?
নিরান্বিতা হেসে বললো, হুম ভাইয়া আমি নিরান্বিতা। রিত্তিক অস্তিত্বের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার কথা অস্তিত্ব অনেক বলেছে। আসলে কি বলোতো..হৃদ ছোট থেকেই আন্টিকে ছাড়া কোথাও থাকেনি। তবে একটা ব্যাপার খুব মজার শুনবে? সবার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে কথাটা বললো রিত্তিক। সবাই একসাথে আগ্রহী হয়ে বললো…কি? রিত্তিক হৃদের পাশে দাড়িয়ে বললো, হৃদ ছোট সময় যদি আমাকে পাশে পেতো তাহলে আন্টিকে ছাড়া থাকতে পারতো। হৃদ এইটা শুনে আনমনে হাসে। আর সবাই চিৎকার করে বললো কিইই! এইটা আবার কেমন ব্যাপার ছিলো? রিত্তিক বললো, হুম ব্যাপারটা আজও বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে আমার কাছে।

মা আমি যাচ্ছি…। নম্রতা অবাক হয়ে প্রাপ্তিকে বললো,যাচ্ছি মানে? কোথায় যাচ্ছিস তুই? প্রাপ্তি কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে বললো, “দোকানে যাচ্ছি। না বিয়ের আগ অব্দি কোথাও যেতে পারবিনা তুই..আলেয়া বেগম কথাটা বলতে বলতে সোফায় বসলেন। প্রাপ্তি নম্রতার পাশ এড়িয়ে আলেয়া বেগমের দিকে বিরক্ত নিয়ে বললো, ” মা..বিয়েটাতো যাইহোক আমি করছি..কিন্তু তোমরা এইভাবে আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিলে..আমি এই বাড়ি থেকে একেবারের জন্য কোথাও চলে যাবো। প্রাপ্তির এই কথা শুনেও আলেয়া বেগমের কোনো হেলদোল নেই৷ তিনি টিভি দেখছে আর চা খাচ্ছে। আর এইদিকে প্রাপ্তি প্রলাপ করেই যাচ্ছে। মাআআআআআআ তুমি শুনছোনা আমি কি বলছি? প্রাপ্তির চিৎকারে নম্রতা কানে হাত দিয়ে বললো, ওফ আপুই এইভাবে কেউ চিৎকার দেয়? কান ফোটে রক্ত এসে পড়বেতো…নম্রতার কথা শুনে প্রাপ্তি নম্রতার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকাতেই সে চুপসে যায়।

হঠাৎ প্রাপ্তির সামনে রিত্তিককে দেখে প্রাপ্তি ঘাবরে যায়। মনে মনে বললো,ওফ কোথাও শান্তি নেয় ওনার জন্য। রিত্তিক ফোঁড়ন কেটে বললো, ওমা হুর পরী আজ বাদে কাল বিয়ে তুমি বাইরে কি করছো? প্রাপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, তা কোন জায়গায় লিখা আছে যে বিয়ে ঠিক হলে বাইরে বের হতে নেই। রিত্তিক বললো, না তাতো কোথাও লেখা নেই। বাট,আমাকে একটা কল করলেই পারতে আমি না হয় সাথে আসতাম। প্রাপ্তি বললো, এই শুনুন আপনি এতো কৈফিয়ত চাচ্ছেন কেনো বলুনতো? আজব। আর আমার দোকানেওকি আপনাকে নিয়ে আসতে হবে নাকি যত্তসব। রিত্তিক এর মনটা কিছুটা খারাপ হলো প্রাপ্তির এমন রোড বিহেভিয়ারে তবে তা প্রকাশ না করে বললো, চলুন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি। প্রাপ্তি রিত্তিকের পাশ এড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো, না আমি রিকশা নিয়ে নিবো। রিত্তিক প্রাপ্তির পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললো, দেখুন রাত মুটামুটি কম হয়নি চলুন আমি দিয়ে আসি। রাস্তায় বখাটে ছেলের অভাব নেই। প্রাপ্তি এরপর কি যেনো ভাবলো তারপর ডিরেক্ট গাড়িতে উঠে পড়লো। আর রিত্তিক একটু হেসে গাড়িতে উঠে।

মা…আয়মানের কথায় তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নেন মিসেস ইয়ামিনি খান্না। আয়মান মিসেস ইয়ামিনি খান্নাকে একটু গুটিয়ে দেখে বললো, কি হয়েছে মা? মন খারাপ? মিসেস ইয়ামিনি খান্না জোরপূর্বক হেসে বললো, কই নাতো। আয়মান মিসেস ইয়ামিনি খান্নাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মা চা করে দাওনা..ইয়ামিনি হেসে বললো, তুই যা মা আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি। আয়মান চলে যেতেই মিসেস ইয়ামিনি মনে মনে বললো, “এতো বছর পর কোন অতীতের সামনে এনে ফেললে আমাকে আল্লাহ.

চলবে…

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

গোধূলির গগন বড্ড আনন্দমূখর আজ। গায়ে হলুদে শাড়ী পড়তে চেয়েছিলো প্রাপ্তি। এতো সুন্দর একটা দিনেও আজ বড্ড বেশি তিশানকে মনে পড়ছে প্রাপ্তির। প্রাপ্তির চোখে পানি দেখে গোপনে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নম্রতা। আপুই দেখ তোকে এই হলুদ লেহেঙ্গাতে…পুরা পুতুল বউ লাগছে। নম্রতার কথায় প্রাপ্তি আয়নাতে নিজেকে এক পলক গুটিয়ে দেখলো। সত্যিই যেনো আজ তাকে একটু অন্যরকম লাগছে। “যাই বলনা কোনো জিজুর চুজ পুরো ক্রাশ খাওয়ার মতো” কথাটা বলে নম্রতা মুচকি হাসলো।

হলুদ রঙা পান্জাবীতে রিত্তিককে দেখে যে কেউ ক্রাশ খাবে। হাতে বেল্টের ঘড়ি৷ “কিরে তোকেতো দেখে যে কোনো মেয়ে বিয়ের আসর থেকে উঠে আসবে” হৃদের কথায় রিত্তিক আর রওনক একসাথে হেসে উঠে। রিত্তিক তখন আনমনে বললো, যে পাগল হওয়ার সে পাগল হলেই চলবে.. অন্য কাউকে আমার দরকার নেই।

বরপক্ষের ছেলেরা হলুদ পান্জাবী পড়েছে। আর মেয়েরা হলুদ শাড়ী। সবার সেইম। মিসেস ইয়ামিনি খান্না নিজের চোখের কোনা থেকে একটু কাজল নিয়ে রিত্তিকের ঘাড়ে লাগিয়ে দিয়ে বললো, “মাশাল্লাহ। আমার ছেলের প্রতি যেনো কারো নজর না লাগে”। রিত্তিক মিসেস ইয়ামিনিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে জড়িয়ে ধরে।

কিগো তোমরা কখন আসছো? নম্রতা ফোনে বার বার একই কথা বলে যাচ্ছে রওনক কে। রওকন বলে, বেবি এইতো এক্ষুনি আসবো বলে। এই জানু..একটু ভিডিও কলে আসোনা প্লিজ। নম্রতা বললো, ওরে ন্যাকা এতো ভিডিও কলে দেখতে হবেনা৷ আসলেই দেখতে পাবে।

আয়মান আর নিরান্বিতাকে হলুদ শাড়ীতে সাক্ষাৎ বাঙালি নারীর চরিত্র কপিরাইট মনে হচ্ছে। নিরান্বিতা আয়মানের সাথে হেসে হেসে কথা বলে সিড়ি দিয়ে নামছে আর হৃদ একমনে তাকিয়ে আছে। হৃদ নিরান্বিতার কাছে গিয়ে বললো, এই যে মিস এতো আটা ময়দা দিয়েছেন কেনো? পুরাইতো ক্রিম আফা লাগতাছে। হৃদের কথা শুনে নিরান্বিতা রাগে কটমট করতে করতে বললো, তাতে আপনার কি হুম? আপনি কি হুম? ছেলে হয়েওতো..ঠোঁট যেনো লাল দেখায় তাই লিপস্টিক দিয়েছেন..এইটা বলেই মুখ বেংচি কেটে নিরান্বিতা চলে যায়। আর এইদিকে হৃদ হোহো করে হেসে দেয়।

রিত্তিকের গায়ে হলুদ শেষে মেয়ের বাড়িতে বরপক্ষ যাচ্ছে কনের বাড়িতে। টুইস্ট হিসেবে বরকেও নিয়ে যাচ্ছে। একটা মোমেন্ট ধরে রাখতে।

“দেখো ইয়ামিনি আমার ছেলে মেয়েদেরকে দাও আমি কথা বলবো” ফোনে এমন কথা শুনে মিসেস ইয়ামিনি চটে গিয়ে বললেন…ছেলে মেয়ে! আপনি সন্তানদের মর্ম বুঝেন নাকি মিস্টার আর্জিব রাইদি? অপর পাশ থেকে আর্জিব রাইদি বললেন, সেইটা অন্তত তোমার মতো একজন দুশ্চরিত্রার মুখ থেকে আমি শুনতে চায়না।

“মিস্টার আর্জিব রাইদি”….

চিৎকার করিওনা ইয়ামিনি। আমি যেইটা সত্যি সেইটাই বললাম। আগে নিজেকে ঠিক করো তারপর আমাকে বলতে এসো।

বরপক্ষের সাথে গায়ে হলুদে বরকে দেখেও অবাক হয়ে গেছে কনে পক্ষ। পুরো বাড়ি সাড়া পরে গেছে। ” স্টেজে বসে থাকা প্রাপ্তিকে দেখে নিজের অজান্তেই রিত্তিকের মুখে ফোটে উঠলো”মাশাল্লাহ”। হৃদ রিত্তিকের কাঁধে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,, কিরে এখনি হাবুডুবু খাচ্ছিস? হাহাহা।

হুর পরী আজ তোমাকে বড্ড মায়াবী লাগছে৷ “হঠাৎ নিজের পাশে পুরুষনালী কন্ঠ শুনে চমকে উঠে প্রাপ্তি। চেয়ে দেখে রিত্তিক। প্রাপ্তি মনে মনে বললো, এইখানে এতো মানুষ আর ওনি বর হয়ে আমার পাশে! আজব লজ্জাহীন পুরুষতো। এরপর রিত্তিক যা করলো তা দেখেতো প্রাপ্তি অবাকের চরম সীমানায়। রিত্তিক নিজের গালের হলুদ প্রাপ্তির গালের সাথে গাল মিলিয়ে লাগিয়ে দিলো। সবাই অবাক। সাড়া হলুদ বাড়ি দেখছে। ক্যামেরা ম্যান এই মোমেন্ট ক্যামেরায় বন্দী করলো৷ কনে পক্ষের সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আর বরপক্ষের সবাই হাততালি দিচ্ছে আর মুখে শিষ দিচ্ছে। নম্রতার দিকে তাকিয়ে রওনক শিষ দিচ্ছে আর চোখ টিপ মারছে।

চলবে..

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ২০
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

আজ রিত্তিক আর প্রাপ্তির বিয়ে। প্রাপ্তিকে বধূরুপে সাজিয়েছে নম্রতা ও আয়মান। আয়মান নিরান্বিতা বর পক্ষের সাথে না এসে আগে আগেই চলে এসেছে। বরের বাড়ির গহনা শাড়ী দিয়ে বউ সাজাতে হবে তাই। ওমা..ভাবী আপনাকে দেখেন কতো সুন্দর লাগছে..আয়মানের কথায় প্রাপ্তি কিঞ্চিৎ হাসলো। আয়মান বললো ভাবী একটু তাকানতো একটা ছবি তুলি..

রিত্তিক প্রাপ্তিকে বউরুপে দেখে একটু হাসলো। আর মনে মনে বললো,”আসলেই আপনি শুভ্রা রাণী প্রিয়তমা।

আয়মান প্রাপ্তির পিক তুলেছে শুধুমাত্র তার ভাইয়াকে দেখানোর জন্য। তাইতো পিক তোলার সাথে সাথে রিত্তিককে পাঠিয়ে দিয়েছে সে।

প্রাপ্তি এইমাত্র কিছুটা একা হলো। চোখে পানি টলমল করছে। একদিন এমনভাবে সেজেই তিন কবুলে আবদ্ধিত হয়েছিলো তিশানের সাথে। এখন সে কিনা আবার!..এইসব ভাবতেই প্রাপ্তির ভেতরের চাপা কষ্ট উদ্ধিত হচ্ছে।

বর এসেছে বর এসেছে গুন্জন ছাড়ছে সবাই। রিত্তিকের পাশে হৃদ অস্তিত্ব আর রওনক। রওনক নম্রতাকে বার বার খুঁজছে পাচ্ছেইনা।

কিরে আপু কবুল বল…প্রাপ্তি কান্না করেই যাচ্ছে কিছুতেই কবুল বলতে চাইছেনা। অবশেষে প্রাপ্তি কবুল বলবে এমন সময়…”আমার পেটে তোমার সন্তান রেখে কিভাবে তুমি বিয়ে করতে পারছো রিত্তিক? আচমকা এমন কথা শুনাতে রিত্তিক পিছু তাকায়। আর প্রাপ্তি থমকে যায়। প্রাপ্তি কোনো কিছু না জেনেই বললো,মানে? ওলফা তখন হাতের কয়েকটা রিপোর্ট দেখিয়ে বললো,এই যে দেখো। আমার পেটে ১ মাসের একটা বেবি আর যার বাবা রিত্তিক। প্রাপ্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিত্তিক ওলফার গালে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মারলো।

পুলিশ স্টেশনে রিত্তিক। তাকে ছাড়ানোর জন্য হৃদ আর রওনক এসেছে। রিত্তিক আসার সময় বলে এসেছে তার জন্য অপেক্ষা করতে সে চলে আসবে। রিত্তিককে পুলিশ এরেস্ট করেছে মানহানি মামলার জন্য।

জেল থেকে বের হয়েই রিত্তিক ওলফাকে কল দিয়ে বললো, কেনো এমন মিথ্যে অপবাদ দিলে আমায়?
ওলফাঃ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো, তুমি কি করে ভাবলে বেবি যে আমি তোমাকে অন্যের হতে দিবে। হঠাৎ ওলফা পাগলের মতো বলতে লাগলো “এই তুমি ফোনে রেকর্ড করছো তাইনা.এই এই বলো…রিত্তিক হেসে বলে,Thank You।

বাবা..আমি রিত্তিককে ছাড়া বাঁচবোনা। ওলফাকে জড়িয়ে ধরে মিস্টার শেখ বললো, বিয়েটা হতে দাও সুইটহার্ট তবে ওই মেয়েকে আমি বাঁচতে দিবোনা।

রিত্তিক ফোনের রেকর্ড সবাইকে শুনিয়েছে তারপর আবার কাজী নতুনভাবে বিয়ে পড়াচ্ছে।

নম্রতাকে এক টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দেয় রওনক। খুব তাড়াতাড়ি তোমাকেও আমার ঘরে নিয়ে যাবো জানু..এইটা বলেই রওনক নম্রতাকে জড়িয়ে ধরে।

বাসর রাতে চুপচাপ বসে আছে প্রাপ্তি। কান্নায় অস্থির। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে গুটিসুটি হয়ে বসে প্রাপ্তি। “হুর পরী” রিত্তিকের ডাকে কোনো সাড়া না দিয়ে একই ভাবে বসে আছে প্রাপ্তি। হঠাৎ রিত্তিক প্রাপ্তির হাত ধরে একটা রিং পড়িয়ে দেয়। প্রাপ্তি ভয়ার্ত চোখে তাকায় তার দিকে। রিত্তিক হেসে বললো, না…আমি তোমাকে তোমার অনুমতি ছাড়া টাচ ও করবোনা। বিশ্বাস রাখতে পারো। যাও গহনা শাড়ী চেন্জ করে নাও কাভার্ডে শাড়ী রাখা আছে৷ প্রাপ্তি কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

এই বিয়ের রাতটা নিয়ে মানুষের কতো স্বপ্ন থাকে আর আমি! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথাটা ভাবছে রিত্তিক। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে পেছনে তাকায়। ভেজা চুলের পানি টুপটুপ করে পড়ছে। শাড়ীটা জরজেট হওয়ায় পেট কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ওফ রিত্তিক তুই তো পুরা পাগল হয়ে যাবি…মনে মনে বললো রিত্তিক।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here