অবন্তর_আসক্তি #পর্ব_২০,২১

0
1066

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২০,২১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
২০

সারাদিনের ক্লান্তি ভর করেছে, রাতে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে চারজনেই শুতে চলে যায়। স্নিগ্ধ সকালের স্নিগ্ধ আবেশ স্নিগ্ধ পরশে ঘুম ভাঙলো বর্ষার। কেউ একজন তার ঠান্ডা শীতল নরম হাত বর্ষার গালে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বর্ষা ঠান্ডা হাতের পরশে বারবার কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে এইমাত্র ফ্রিজ থেকে বের করে নিয়ে আসছে। অতিরিক্ত হাত ঠান্ডা হওয়ায় বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। সে ভেবেছিল এটা বোধহয় স্বপ্ন। কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো, কোনো কিছু দিয়ে খোঁচা লেগে, আঁখি জোড়া মেলে তাকাতেই দেখল সামনে অভ্র রয়েছে হাতে ঝুলছে তার পাঙ্গাস মাছ।

বর্ষা হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসল, এক দিয়ে গাল গষতে গষতে বিস্মিত স্বরে বলল,’ তার মানে সে এতক্ষণ আমার গালে পাঙ্গাশ মাছ গষতে ছিলি তুই? ‘

চিঠিবাজের দেওয়া নামটা এখন বর্ষার সাথে প্রচুর মানানসই রাগরাগিণী। বর্ষা এখন প্রচন্ড রেগে গেছে তাই ভুলবসত তুই মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে।

অভ্র এক দৌঁড়ে দরজার সামনে চলে গেছে। পাঙ্গাশ মাছ হাতে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে বলল, ‘ আবার জিংগায় ‘

বর্ষা বিছানার উপর থেকে নরম তুলতুলে একটা ছোট হার্ট শেপ বালিশ অভ্রর দিকে ছুঁড়ে ফেলল, অবশ্য বালিশটা কিছুদূর গিয়ে মেঝেতে পরে যায়। বর্ষা রাগে রাগ্বানিত হয়ে কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ বজ্জত আমার গাল কি মাছ গষার জিনিস? শয়তান ছেড়া তোর বিয়ে হবে না অসভ্য। ‘

‘ হবে হবে সময় হলে বিয়ে আন্ডা বাচ্চা সব হবে। শুধু বিয়েতে তোকে ইনভাইট করবো না। তুই একটা রাক্ষসী। ‘

‘ কুত্তাহহহহ ‘ বলে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে চিৎকার করলাম। আমার চিৎকার শুনে বাড়ির অর্ধেক লোক আমার রুমে চলে এসেছে। সকলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমি ইতস্তত হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। বিছানা থেকে নেমে মিনমিন করে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম। দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আল্লাহ বাচাইছে, আর একটু হলেই একেক জনের হাতের, চামচ, লাকুর, বাতিল, কড়াই, বেলুন দিয়ে মার খেতাম। এটা পরিস্কার চিৎকার শুনে রুমে উপস্থিত সকলে হাতের সামনে যে যা পেয়েছে তা নিয়েই ছুটে এসেছে। খানিকবাদ দরজা আলকা খুলে বাহিরে তাকালাম। সকলেই চলে গেছে দেখে একধাপ ফ্রেশ হয়ে সালওয়ার কামিজ পরে নিজে চলে যাই। ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আমি পাউরুটি চাবাচ্ছি উইথ জেলি। সামনে একটা সিদ্ধ ডিম, এক গ্লাস দুধ চার পিছ পাউরুটি দু’টো পিছ নরমাল আর দু’টো ডিম দিয়ে ভেজে দিয়েছে। পাশে ছোট বাটিতে আপেল কমলা ও আঙ্গুর ফল কলা, ও তরমুজ ফল কেটে রাখা হয়েছে।

খুব সুন্দর করেই টেবিল সাজিয়েছে আরও অনেক কিছুই রয়েছে তবে সেগুলোর মধ্যে আমার ইন্টারেস্ট নেই। তাই আমি দেখি ও নি। তরমুজ আমার না পছন্দের তালিকায় তাই সেগুলো আমি ছুঁয়েও দেখবো না। টেবিলের উপর রাখা আছে যার যেটা খেতে ইচ্ছে করবে সে সেটাই নিয়ে খাবে এটাই নিয়ম। ওদের ফাউ কথা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। কলেজে অনুষ্ঠান কে কি পরে যাবে আল্লাহ শুনতে শুনতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অভ্র ভাইয়া অবশ্য সকলের উদ্দেশ্য বলেছে তিনি কালো পাঞ্জাবি পরবে। আমার তাতে কোনো হেলদোল নেই বিকেল হতে এখনো বহুত দেরি যেকোনো একটা পরে চলে যাবো ব্যাস। আমার তো আর বয়ফ্রেন্ড নেই যে চুস করে দিবে বলবে,’ বাবু আজকে এইটা না ওইটা পরে আইসো এই কালার না ওই কালার পরে আইসো৷ চোখে কাজল দিয়ো হেনতন যতসব ন্যাকামি। ‘

ওদের কথা এক কান দিয়ে শুনছি আরেক কান দিয়ে বের করে দিচ্ছি। কোনো মতে খেয়ে রুমে চলে আসি। বিছানার উপর আরাম করে বসে ফোন টিপতে টিপতে দুপুর হয়ে যায়। মসজিদের আজান পরতে আলসেমি জেড়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে পরি। টাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচাতে পেঁচাত রুমে ঢুকি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝেড়ে পানি জড়িয়ে রুমে চলে যাই। রুমে এক কোণায় জায়নামাজ বিছিয়ে হিজাব বেঁধে নামাজ আদায় করি।

নামাজ শেষে আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দেই। কেমন কেমন জেনো অলসতা ভোর করছে আমাকে শুধু শুয়ে থাকতেই ইচ্ছা করছে। অনুষ্ঠান শুরু হবে তিনটায়। আর আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি দুইটা বেজে গেছে। নামাজের পর বিছানা থেকে একবার উঠে গিয়ে লাঞ্চ করে আসি। তারপর আবারও শুয়ে পরি। ওদিকে আমার ভাই ও বোনরা সকলে রেডি অর্ধেক হয়েও গেছে।

দুপুর ২:৪৫ pm বাজে, সকলে পুরোপুরি তৈরি হয়ে একসাথে আমার রুমে উপস্থিত। সকলের চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট, কারণ আমি বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছি। রেডি হওয়া তো দূর সময় আছে মাত্র ১৫মিনিট।

সকলে অনেক ডাকাডাকি করেও আমাকে তুলতে পারল না। তখন মিস্টার বজ্জাত অর্ধেক গ্লাস পানি আমার মুখে ছিটকে মারল। সঙ্গে সঙ্গে আমি লাফিয়ে উঠে বসলাম। মুন্নী আপু দাঁত কটমট করে বলল, ‘ উঠলি কেন ঘুমা আর একটু ‘

‘ তুই ভুলেগেছিস আজ যে তোর কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠান আর তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস? ‘ পুতুল আপু বলল।

‘ তুই জীবনেও সুধরাবি না ‘ তিন্নি আপু বলল।

বাকিরা সব চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওদের চুপ থাকতে দেখে আমি ওদের উদ্দেশ্য বললাম, ‘ তোরা চুপ করে আছিস কেন হুহহ? তোরাও বল ‘

লাইক সিরিয়াসলি ওরাও সবগুলো একসাথে চেচিয়ে বলল,’ রেডি হোস নাই কেন এখনো? ‘

করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,’ যাবো না আমি হইছে যা তোরা আমি ঘুমাবো। ‘

অভ্র ভাইয়া সকলের উদ্দেশ্য বলল,’ কেউ নিজে ইচ্ছে যেতে না চাইলে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। চল সবাই আমরা যাই কারো জন্য তো আর আমরা অনুষ্ঠান মিস করতে পারি না। ‘

বলে একে একে সবাই তার পেছন পেছন চলে গেলো। আমি ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ফেলফেল নয়নে তাকিয়ে রইলাম। দৌঁড়ে বেলকনি তে চলে যাই। গিয়ে দেখি গাড়ি গেইট দিয়ে বের হয়ে চলে গেছে। মনমরা হয়ে রুমে ফিরে আসি। মন কে বুঝাই আমি যাবোই না। ত্রিশ মিনিট ধরে বিছানার উপর গোড়াগুড়ি খাচ্ছি কিন্তু ভাল্লাগছে না। আমার ভাল্লাগছে না। বিছানায় শুয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে পরলাম পরক্ষণে নিজেই নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ দুইদিন ধরে গাধার খাটুনি খাটলাম এখন আমিই যাবো না। তা কি করে হয়? আমি যাবো তো যাবোই৷ বলে আলমারি দরজা খুললাম পরবো কি একটাও চয়েস হচ্ছে না। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম আবারও মনে হলো আমি আজ যেতেই পারবো না।

তখনই মাথায় আসলো চিঠিবাজের চিঠির মধ্যে বলা একখানা কথা, এশ কালারের শাড়ি বকুল ফুলের গাছ। শাড়ির কথা চিন্তায় আসতেই ছুটে গেলাম আম্মুর কাছে। আম্মু তখন ফুপু ও চাচিদের সাথে গল্প করছিল। আমাকে দেখে সকলে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রয়। আম্মু আমাকে দেখে বলল, ‘ কিরে তুই যাসনি শরীর খারাপ নাকি তোর? ‘

আমি দৌঁড়ে আম্মুর কাছে গেলাম পাশে বসে হাত ধরে মিনতি স্বরে বললাম, ‘ আম্মু তোমার একটা শাড়ি দাও না প্লিজ আম্মো। আমি পরার জন্য কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না আর যা পাচ্ছি তা ভালো লাগছে না। ‘

তখনই ছ্যাত করে বলে উঠল ছোট ফুপু (বৃষ্টির আম্মু), ‘ তোর না আলমারি ভর্তি জামাকাপড় এক সপ্তাহ আগে গিয়েও না একগাধা শপিং করে আসলি ওই গুলো কি হইছে? ‘

ছোটো ফুপুকে দমিয়ে দিয়ে বড় চাচি আম্মু বলল,’ মেয়ের শাড়ি পরার শখ জাগছে ‘

বড় ফুপু সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ যা তো সায়েদা মেয়েকে একটা শাড়ি দিয়ে আয়। ইচ্ছে করছে যখন পরুক ‘

বড় ফুপির কথা ফেলার সাধ্য আম্মু নেই। আমি ফুপির দুইগাল চেপে ধরে খুশিতে গদগদ করে বললাম, ‘ থ্যাংক ইউ ফুপি। ইউ আর বেস্ট। ‘

বলে আম্মুর পেছনে ছুটতে লাগলাম। ফুপি মৃদু হেঁসে বলল, ‘পাগলী ‘

আম্মু আলমারি থেকে ১০ থেকে ১৫টা শাড়ি বের করে দিলো। সবগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম কিন্তু আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। হুট করে চোখ গেলো আলমারির কাভার্ডে একটা শপিং ব্যাগের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলাম। খুলে দেখি একটা শুভ্র সাদা শাড়ি। শাড়ি এক নজর দেখতেই আমার পছন্দ হয়ে গেলো আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম,’ আমি এই শাড়িটাই পরবো। ‘

আম্মু পেছনে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। হাতের শাড়িটা ‘ছ’ মেরে নিয়ে নিল। আম্মুর এমন অদ্ভুত কান্ডে ‘থ’ রয়ে গেলাম আমি।
আম্মু শাড়িটা আগের মতো ব্যাগে ঢুকিয়ে আমার দিকে কষা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ একদম না এটা আমার ছোট ভাই আমাকে দিছে। এটা আমি তোকে কিছুতেই দিবো না। আগের বার একটা শাড়ি ছিঁড়া আনছিস এইটা ভুলেও দিবো না। অন্য একটা পছন্দ করে নে। ‘

আম্মুর ছেঁড়া শাড়ির কথা শুনে মনে পরে গেলো। সেদিন লাফ দিতে গিয়ে পরে গিয়ে ছিলাম। ব্লাউজের সাথে শাড়িও ছিঁড়ে গিয়েছিল। শাড়ি ছিঁড়েছে বাড়িতে এসে দেখতে পাই। আম্মুর অনেক পছন্দের ছিল শাড়িটা। আব্বু anniversary তে উপহার দিয়েছিল। আর আব্বুর মেয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে। এই নিয়ে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়। আমি সোজা হেঁটে আম্মুর সামনে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়াই। রাগী রাগী কন্ঠে বলি,’ দিবে না? ‘

আম্মু সাফসাফ বলে উঠে, ‘ বললাম তো না। ‘

আমি সঙ্গে সঙ্গে আম্মুর দুই পা ঝাপ্টে ধরি। পায়ে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করি। চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও জল বের হচ্ছে না। তা দেখে আম্মু আমার অগোচরে মুচকি হাসছে। আমি একশো একটা প্রমিস করি, ‘ নিজে শহীদ হয়ে যাবো তবুও শাড়ির গায়ে একটা দাগ ও লাগতে দেবো না। ‘

আমার সাথে আম্মু পারবে না। কারণ তার কাছে আমি ড্রামা কুইন, বাধ্য হয়ে শাড়িটা দিতেই হলো।
আমি আর আম্মু একদম সেম চিকনা তাই আম্মুর সব কিছুই আমার হয়। তবে আমি আমার ফ্যামিলির সব মহিলাদের থেকে বেশি লম্বা (ইহা বাস্তব।)

শাড়ি পেটিকোট ও ব্লাউজ হাতে নিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছি আম্মুর সামনে। পরিয়ে দিতে হবে তো?
আম্মু মাথা দু’দিকে দুইবার নাড়িয়ে ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,’ তুই বড় হবি কবে? আজ বিয়ে দিয়ে কাল বাচ্চার মা হয়ে যাবি। ‘

আমি টিটকারি মেরে আম্মু কে বললাম,’ আম্মো বাচ্চা বিয়ের একদিন পর কাল হয় না। বাচ্চা হতে ১০মাস ১০দিন সময় লাগে। ‘

বলেই মত্ত হাসিতে মেতে উঠলাম। আমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’ মারবো টেনে এক চড় মায়ের সাথে টিটকারি মারা একদম ভুলে যাবি। ‘

আমি আহ্লাদী কন্ঠে বললাম,’ আম্মো। ‘

শুভ্র সাদা শাড়ি ও নীল রঙের ব্লাউজ পরেছি। আম্মু নিজের হাতে সাজিয়ে দিলো। তেমন কিছুটা ফেসের জন্য ফেস ক্রিম ও ঠোঁটে লাল লিপস্টিক চোখে গাঢ় করে কাজল পরিয়ে দিলো। একদম ছোটো বেলার মতো, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আম্মুর সাজের জিনিসগুলো দিয়ে সাজতে চাইলে আম্মু আমাকে তার কোলের উপর বসিয়ে নিজ হাতে সাজিয়ে দিতো। আজকেও ঠিক তাই হলো, আনন্দপ চোখের কার্নিশ ভারী হলো। আম্মুকে জরিয়ে ধরে আহ্লাদীত হয়ে বললাম,’ আই লাভ ইউ আম্মু। ‘

আম্মু প্রত্যত্তরে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলল, ‘ আমিও তোমাকে অধিক ভালোবাসি। আমার তিনটা সন্তানের মধ্যে তুমিই হচ্ছো সবার বড়। তোমাকপ মাঝেমধ্যে বকাঝকা করি তাই বলে তুমি এটা মনে করো না আম্মু তোমাকে ভালোবাসি না। খুব ভালোবাসি মা হওয়ার আনন্দ উল্লাস সুখ দুঃখ কষ্ট মা কি জিনিস মায়ের অনুভূতি কেমন। সবটাই আমি অনুভব করেছি তোমার ধারা কারণ তুমিই আমার প্রথম সন্তান তাই তোমার প্রতি ভালোবাসা টাও আমি বেশি। শুধু প্রকাশ করি না। বাবা মায়ের ভালোবাসা এমনই হয় তারা নিজেদের থেকেও বেশি নিজেদের সন্তানকে ভালোবাসে। নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছা কে প্রাধান্য না দিয়ে সবার আগে শুধু নিজেদের সন্তানের ভালোলাগা ভালো থাকা নিয়ে চিন্তা করে। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য দিন-রাত এক করে খাটে দিনশেষে সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তার আবদার করা জিনিসটা সে সঙ্গে নিয়ে আসে। অথচ তখন বাবা বা সন্তান কেউই কাউকে ভালোবাসি বলে না। কারণ আমরা সকলে জানি, বাবা-মা কে ভালোবাসি শব্দ টা না বললেও আমরা তাকে ভালোবাসি। বাবা-মা আমাদের কে ভালোবাসে না বললেও আমরা জানি তারা আমাদের অনেক ভালোবাসে। যে ভালোবাসা মনের গহীনে লুক্কায়িত থাকে। বাবা মা’য়ের ভালোবাসায় হারিয়ে ফেলার কোনো ভয় থাকে না। কারণ তাদের ভালোবাসা চিরকাল থাকবে। প্রকাশিত হোক বা অপ্রকাশিত তাদের ভালো বাসা চিরসত্য। ‘

বর্ষার চোখ বেয়ে অশ্রুপাত ঘটে, তা দেখে শাড়ির আঁচল দিয়ে গালের জল মুছে দিয়ে বলে, ‘ আমরা আমাদের মেয়েকে অধিক ভালোবাসি শুধু সময়ে সময়ে বলা হয়ে উঠে না। ‘

বর্ষা তার মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, ‘ আমি এতকিছু জানতাম না আম্মু। সত্যি তোমাকে আর আব্বুকে আমি অনেক ভালোবাসি। ‘

‘ হয়েছে হয়েছে। তুমি রেডি হয়েছো কলেজ যাওয়ার জন্য। বিদায় নিয়ে শশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য না। তো কান্না কাটি না করে যাও দেরি হয়ে যাবে আর সাবধানে থেকো আমার শাড়ির জেনো কিছু না হয়। ‘

সিরিয়াস মোমেন্টে হাসি চলে আসল। আল্লাহ এই শাড়িটা কে আমি কি যে করবো? নাহহ কিছুই করা যাবে না উল্টো সাবধানে রাখতে হবে অতি সাবধানে। আম্মুকে বিদায় দিয়ে বের হয়ে পরলাম। রাস্তায় একটা রিক্সা ও নাই, অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটতে লাগলাম। তখনই পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসল সে বলল,’ হেই মিস! লিফট লাগবে? ‘

আমি কন্ঠস্বর চিনে ফেলি কারণ এই কন্ঠ আবার চেনা। ডান পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। বাইকে উনাকে দেখে আমি চমকালাম। সে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে মুখে ল্যাপ্টে আছে তার অমায়িক হাসি। আমি মৃদুস্বরে বললাম, ‘ কেনো নয়? লিফট দিলে নেওয়াই যায়। ‘

আমি বাইকের পেছনে উঠ বসতে সে বলল,’ আজ এতদিন পর তোর সাথে আমার দেখা হলো। তাও আবার আজ তুই শাড়ি পরেছিস ‘

‘ তুই হঠাৎ কোণ্থেকে উদয় হইলি? তুই না চার মাস আগেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলি। এখন হঠাৎ ‘

‘ কি করবো বল? তুই ভালোবাসার সুতো ধরে টান মেরেছিস আর আমি সে টানে ছুটে এসেছি। ‘

‘ নিভ যত্তসব? ‘ বলেই ওর পিঠে কিল বসালাম। নিভ বেঁকে বলল,

‘শাঁকচুন্নি তোর কথায় কথায় কিল মারার অভ্যোস যায়নি না? ‘

‘ নাহ যায়নি আর যাবেও না। জানিস আমরা তোকে কত মিস করেছি। তোকে ছাড়া একদন্ড ও ভালো লাগতো না। ‘ মলিন কন্ঠে বললাম। নিভ প্রত্যত্তরে সশব্দে হেসে উঠল।

আমি অভিমানী স্বরে বললাম, ‘ নিভ বারাবাড়ি হচ্ছে কিন্তু? আমি নেমে যাবো বললাম। ‘

‘ চলন্ত বাইক থেকে নেমে তো দেখা। ‘

‘ অসহ্য ‘

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২১
#শারমিন_আক্তার_পর্ব
_______
হুট করে বর্ষা আবদার করে বসল, তার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে সবগুলো বেলুন চাই। নিভ আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কতক্ষণ চাহিয়া রইল। বর্ষার ইনোসেন্ট ফেস এর দিকে। চোখ দু’টো ডেবডেবে করে গোল বানিয়ে রেখেছে ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে এতে বর্ষাকে পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। মুচকি হেসে আদুরে কন্ঠে নিভ বলল,’ আচ্ছা বস আমি নিয়ে আসছি। ‘

একশো টাকা দিয়ে দশটা বেলুন কিনলো। এক পিছ দশ টাকা করে হুহহ। বেলুনগুলো বর্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’ আসতে না আসতেই একশো টাকা খেয়ে দিলি। ‘

বর্ষার নিভের পিঠে আবার কনুই দিয়ে কিল মেরে বলল,’ তোর কপাল ভালো আমি মাত্র একশো টাকা খেয়েছি। কলেজে তো একবার যা দেখিস তোর আন্ডা বাচ্চারা কত শেষ করে। ‘

বলে সশব্দে হেসে উঠল বর্ষা। অভিমানী স্বরে নিভ বলল, ‘ আমি যামুই না। ‘

বর্ষার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। বর্ষা নিভের করুণ চাহনি দেখে আরও হাসতে লাগল। বর্ষার হাসিমাখা মুখটার দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে নিভ!

নিভ মায়া ভরা চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বুকে অজস্র প্রশান্তি বয়ে যচ্ছে। ভালোবাসি তোকে, খুব বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি আমি তোর হাসিকে, ভালোবাসি আমি তোর মায়াবী আঁখি জোড়া কে। ভালোবাসি আমি তোকে বর্ষা।
ভালোবাসি কথাটা হয়তো বলা হয় নি কভু। সিগ্ধ অনুভূতিগুলো কখনো প্রকাশও করিনি। তুই ও কখনো বুঝিসনি, আমার মনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা খুঁজিসওনি। তুই কি এতটাই নির্বোধ? যে একটা ছেলের চোখে ভালোবাসা দেখতে পাসনি। সে তোকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ভালোবাসে। এতবছরের যত্ন করে গড়া আমার ভালোবাসাকে তুই কি একটুও পরক্ষ করতে পারিসন
এভাবে হেলা করিস না মানতে পারি না। বুকে অসহ্য যন্ত্রনা হয়। মুখে বলি নি বিধায় শাস্তি? শাস্তিটা আমার শান্তি কেড়ে নিচ্ছে, একটু সদয় হো, একটু আমাকে বোঝার চেষ্টা কর আমার অনাকাঙ্ক্ষিত অনূভুতি টাকে গায়ে মেখে নে৷ তোর শাড়ির আঁচলে বেধে নে। ব্যাপক কষ্টে দগ্ধ হয়েছি চার মাসের প্রতিটা রাত। বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা হতো। চোখের তৃষ্ণা আর মনের খোরাক মিটাতে বেহায়া হয়ে ছুটে এসেছি। একনজর তোকে দেখতে, তোরও কি এমন হয়েছে বল?
নিভ মনে মনে এসব বললেও মুখে বাকশূন্য টু শব্দ টাও করেনি।

বর্ষা নিভের সামনে তড়ি বাজালো। এতে নিভ বাস্তবে ফিরে এলো৷ বর্ষা প্রশ্ন সূচন ভাবে তাকিয়ে রইল,

‘ সরি সরি একটু অন্য মনস্ক হয়ে পরেছিলাম। চল, সাবধানে বস। ‘

বলে বাইকে উঠে বসল। কলেজের গেইট দিয়ে বাইক ঢুকলেই মেয়েরা ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে নিভ এর দিকে। দুই হাত উপরনিচ করে লাফাচ্ছে কলেজের চকোলেট বয় সবার ক্রাশ কলেজে আগমন করেছে।

বর্ষা আর নিভকে একসাথে আরও চারটি চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে। নিভ ও বর্ষা আপন মনে কথা বলছে ও হাসতে হাসতে সকলের সামনে চলে আসে। নিভকে দেখে মুরাদ এগিয়ে এসে বলে,’ কি অবস্থা ব্রো? অনেকদিন পর। ‘ জড়িয়ে ধরে পিঠে চাপর বসিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।

‘ আস্তে, মরি যাই মরি যাই। ‘ ন্যাকা কন্ঠে বলল নিভ৷

তার কথা শুনে সকলে সশব্দে হেঁসে উঠল। পাশ থেকে একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ কি ব্যাপার বিধবাদের মতো সাদা শাড়ি পরে কেন আসছিস? ‘

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। শেষমেশ বিধবা অপাধি দিলো What the ফাউ কথা।

‘ ইচ্ছে হয়েছে তাই পরেছি। আর সাদা বিধবা দের রং নাহ। সাদা হচ্ছে. ‘

‘ হইছে হইছে লাগতাছে তো পেত্নীর মতো যা ফোট চোখের সামনে থেকে। দেখ ওদের দেখে শিখ ওরা কি পরে আসছে আর তুই কি পরে আসছিস অসহ্য। ‘

অভ্রর বলা কথাগুলো বর্ষার হৃদয়ে তীরের মতো আঘাত হানল। চোখের কার্নিশে জমজমাট হলো অশ্রুকণা। মুখের হাসি মূহুর্তেই মলিন হয়ে যায়। অভ্র চলে গেলে আদ্রিক এসে বর্ষার সামনে দাঁড়াল বর্ষাকে খুশি করার জন্য বলল,’ তোমাকে শুভ্র রাঙা শাড়িতে পুরো শুভ্র পরীর মতো লাগছে। বর্ষা তার হয়তো চোখ নেই সেজন্য তোমাকে যা অপূর্ব লাগছে সে অপলক করতে পারেনি। ‘

পাশ থেকে ভ্রু কুঞ্চিত করে অপূর্ব ভাইয়া বলল,’ আমাকে কিভাবে লাগছে? ‘

অপূর্ব ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো আদ্রিক। আমি সহ সকলে জোরে হেসে দিলাম। আদ্রিক অস্ফুটস্বরে আমতা আমতা করে বলল,’ মানে? ঠিক বুঝলাম না। ‘

অপূর্ব ভাইয়া হেসে বলল,’ মানে আমার নাম অপূর্ব। তো আমি কিভাবে বর্ষা তে হলাম? ‘

আদ্রিক চোখ জোড়া ছোটছোট করে নেয়। অপূর্ব আদ্রিককে আর অপদস্ত করতে চায় না বলে সে বলল,’ চিল ব্রো। জাস্ট কিডিং ‘

আমার মিড কিছুটা ভালো হলো। তবে দূর দূরান্তে অভ্র ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পেলাম না। সে জেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

এদিকে বারবার আমাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে আদ্রিক আর নিভ এত প্রশংসা করার কি আছে আল্লাহ জানে। সকলেই অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হয়েছি শুধু একজন বাদে। কিন্তু জানি না কেনো আমি চোখ জোড়া এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে সে কোথায় আছে দেখার জন্য কিন্তু কোথাও দেখতে পারছি না। মনে মনে ভাবতে লাগলাম সে হয়তো বাড়ি ফিরে গেছে।

তখনই উদয় হলেন মহাশয় সকলের সাথে বসে পরলেন। সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে আমি বাদে। মুড অফ করে নিচে ফ্লোরের দিকে তাকালাম। তখন আবারও কপালে ঠান্ডা জাতীয় কিছুর স্পর্শ পেলাম। চটপট মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি অভ্র ভাইয়া একটা কোণ আইসক্রিম আমার কপালের সাথে ছুঁয়ে রেখেছে। আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল, ‘ সরি তখন প্রাঙ্ক করার জন্য। সত্যি বলতে আজ তোকে অমায়িক সুন্দর লাগছে। আর এই কথা সবার সামনে বললে তুই আসমানে উড়তি তাঔ বলিনি আর এখন কেউ দেখছে বা শুনছে না তাই টুক করে বলে দিলাম। এখন নে তোর জন্য এই আইসক্রিম টা এনেছি কাউকে বলবি না যে আমি আনছি তাহলে আমার মানিব্যাগ ফাঁকা করে দিবে। বোন আল্লাহ রসতে কাউকে বলিস না। ‘

আমি হেসে দিলাম জানি না কেনো? তবে তাকে দেখে ও তার এমন শান্ত ব্যবহারে আমার মন হয়েছে শীতল। সে থেকেই মুখে ঠোঁটে স্বচ্ছতা ভেসে উঠল। অভ্রর হাত থেকে বর্ষা আইসক্রিম টা নিয়ে নেয়। স্বাভাবিক ভাবে দু’জনে পাশাপাশি বসে রয়। বর্ষার দৃষ্টি স্টেজের দিকে আর বর্ষার উপর দৃষ্টি সঞ্চয় করে রেখেছে। তিন তিনটা মানব দেহ। তাদের তিনজনের মনেই বিষাদ ভয়ংকর বিষাদ।

অনুষ্ঠান শেষে সকলে একসাথে কলেজ থেকে বের হয়। কলেজ গেইটে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। বাড়িতে আসতে আসতে কিছুটা সময় লেগে যায়। কারণ গাড়ির টায়ার পামচার হয়ে যায়। সে জন্য টায়ার চেঞ্জ করে টায়ার লাগাতে একটু সময় লাগে। অভ্র, অপূর্ব দু’জনেরই করুণ দষা। তা দেখে সকলে হাসতে হাসতে বেহাল।

অভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়িতে উঠতে ইশারা করল। বর্ষা চুপচাপ গাড়িতে বাকিদের সাথে পেছনে বসলো।

বাড়িতে পৌঁছে সকলের সাথে কথা বলে রুমে চলে যায়।

রুমের বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কানের বড় বড় ঝুমকো দুল গুলো খুলছিল। আয়নাতে দৃষ্টি সংযত রেখে অতি সাবধানে বর্ষা কানের দুলের হুক খুলছিল। পেছন থেকে রুমের সাদা লাইটের আলো তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। বর্ষার পেছন দিকে চুলের আড়াল থেকে নীল রঙের কিছু একটা বার বার উঁকি দিয়ে উঠছে৷ ফ্যানের বাতাসে আবারও ঘন চুলের অতলে ডুবে যাচ্ছে। জিনিসটা রিমা ও রিয়া দুজনেই খেয়াল করে। বৃষ্টি সে তো আসার সাথে সাথে ফোন নিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরেছে।

রিয়া উচ্চ স্বরে বলে উঠল,’ স্টপ বর্ষ্যু যেভাবে আছিস সেভাবেই থাক। ‘

বর্ষা পেছনে না ঘুরেই আকস্মিক প্রশ্ন ছুঁড়ল,’ কেনো? ‘

‘ তোর পিঠে কিছু একটা আছে? ‘ রিমা বলল।

‘ আল্লাহ গো। কি আছে তেলাপোকা নয়তো? ‘

‘ আরেহ নাহ। তুই দাঁড়া আমি দেখছি। ‘

রিয়া বিছানা থেকে নেমে বর্ষার পেছনে দাঁড়ালো। পিঠের উপর থেকে বাঁধনহারা খোলা চুলগুলো গুলো দুই হাত দিয়ে সরিয়ে সামনের দিকে ফেলে দিলো। পিঠে ব্লাউজের উপরে চুইঙ্গাম দিয়ে একটা চিরকুট লাগানো। রিয়া সশব্দে হেসে উঠল। সকলে তার হাসি শুনে বলল, ‘ কি হয়েছে রাত বিরাতে ভূত পেত্নীর মতো হাসছিস কেন? ‘

রিয়া পিঠের উপরে আলতো চাপ দিয়ে ধরল। ব্লাউজ থেকে চুইঙ্গাম সহ চিরকুট টা খুলে নিয়ে বর্ষার সামনে ধরে বলল, ‘ ম্যাম তোর চিঠিবাজ আজও তোর নামে চিঠি পাঠিয়েছে আর দেখ তার কি মারাত্মক লেভেলের বুদ্ধি চিরকুট চিপকিয়েছে তো চুইঙ্গাম দিয়ে। ‘

হাসতে হাসতে রিয়ার মাটিতে গোড়াগুড়ি খাওয়ার মতো অবসু। একটানে ওর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলাম। যে লাগিয়েছে সে খুব সাবধানেই লাগিয়েছে। আমার একটা চুলও চুইঙ্গামে লেগে ছেড়ে যায়নি৷ কিন্তু এই চিঠিবাজ টা এটা কখন করল আর আমি ভ্রুনাক্ষে টের ও পেলাম না স্ট্রেঞ্জ। ‘

বৃষ্টি মোবাইল ছেড়ে বিছানার উপর বসে পরল। ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিনজনে চিঠিতে কি লেখা আছে তা শোনার জন্য আমার ও অধিক আগ্রহ জন্মাচ্ছে হিহিহি পড়বার জন্য। ওদেরকে সাইড দিতে বলে তিনজনের মাঝখানে বসে পরলাম। তার আগে টিমটিম (রিমা কে) বললাম দরজা আটকিয়ে দিয়ে আসতে। আবার যদি কালকের মতো অভ্র ভাইয়া চলে আসে তখন কোনো রিস্ক নেওয়া চলবে না। গলা এদিকে সেদিক করে কেশে নিলাম কেমন জেনো এক অনূভুতি হচ্ছে। অবশেষে পড়তে শুরু করলাম।

?

‘ পড়েছো যখন সাদা শাড়ি
মুগধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছি আমি।
সাদা শাড়িতে ছড়িয়ে রেখেছো মুগ্ধতা
আবার বিস্ময়ে ছড়িয়ে রেখেছো সৌন্দর্যটা।
পরনে তোমার সাদা শাড়ি
রাগরাগিণী তোমার রূপে ভারী।
সাদা শাড়িতে তোমার রূপ মুদ্গ হয়ে উঠে দ্বিগুন।
আজই সাদা শাড়িতে তোমাকে দেখতে লাগছিল ভারী।
পরেছো সাদা শাড়ি মন চেয়েছে আবারও প্রেমে পড়ি।
যদি আবারও চায় মন পড়তে শাড়ি
বার বার বেঁছে নিও সাদা শাড়ি।
সাদা শাড়ি পরনে তোমার রূপ ফুটে উঠে দ্বিগুন

আজ দেখিছি তোমায় সাদা শাড়িতে মন চাইছে তোমার কাছে বার বার ফিরে যেতে।

সাদা যেমন শুভ্রতার রং
ঠিক তেমনি সাদা শাড়িতে তোমার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে দ্বিগুন।
আজও মুগ্ধ আমি তোমার রূপে
পরনে তোমার সাদা শাড়ি ইচ্ছে হয়েছে আনার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।

জানো প্রিয়্য, মাঝে মধ্যে শাড়ি পরা ভালো। শাড়ির যে ক্ষমতা আছে তা অন্য কোনো পোশাকের এই ক্ষমতা নেই। শাড়িই পারে একটি মেয়ের পার্সোনালিটি পাল্টে দিতে তা যদি হয় শুভ্র রাঙা সাদা শাড়ি আমি বলবো পাগল হতে প্রস্তুত আমি। দেখেছি তোমারে শুভ্র রাঙা সাদা শাড়ি তে অযথা অবন্তর আসক্তিতে মরিয়া হয়ে উঠেছি আমি।
এই মেয়ে এই বলবে তুমি আমায় এত কিউট কেন তুমি? ইচ্ছে করে গাল দু’টো ধরে টেনে দেই। ‘

চিঠির অন্তিমের লেখাটা পরে বর্ষা আকস্মিক গালে হাত দিয়ে বসে অস্ফুটস্বরে বলল,’ আমার গাল। ‘

বর্ষার এমন কান্ড দেখে রিমা উচ্চ স্বরে হেসে ফেলল। বর্ষা হয়তো বাস্তবতা আর চিঠি দু’টোর মাঝে নিজেকে গুলিয়ে ফেলছে। বৃষ্টি বর্ষার হাতে চিমটি কেটে বলল, ‘ কিরে চিঠিবাজের প্রেমে পরে গেলি নাকি? ‘

বর্ষা তেজি কন্ঠে বলল, ‘ ধুর চিনিই তো না, সে কে? ‘

পাশ থেকে রিমা বলে উঠল, ‘ ও একবার চিনলে পরে পরবি। ‘

রিমার কথায় হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছে আমার রুমে আমি করুণ দৃষ্টিতে একবার ওদের তিনজনকে দেখছি আরেকবার চিঠিটা কে দেখছি। মনে মনে বলছি, ‘ কে তুমি চিঠিবাজ? আসবে না নাকি আমার সামনে কখনো? আমি যে দেখতে চাই তোমাকে। ‘

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here