#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৮||
১৪.
তাহমিদ সারারাত বসে সন্দেশ বানিয়েছে। তাকে সাহায্য করেছে ইভান আর ইমন। আগামীকাল স্কুল ছুটি, তাই তারা সারাদিন ঘুমোতে পারবে। কিন্তু অরুণিকা জেগে থাকলে কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। সে ঘরে থাকলে পুরো ঘরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে সময় পার করে। আর এমন অবস্থায় মেঝেতে কিছু রাখলেই তা সে উলটে দেবে। তাই অরুণিকা উঠার আগেই তারা বেশিরভাগ কাজ করে ফেললো।
সকালে উঠেই আরাফ তাহমিদকে বলল,
“এতো তাড়াতাড়ি বানিয়ে ফেলেছিস?”
ইমন দাঁত কেলিয়ে বলল,
“আমার আর ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে সব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে।”
“ক’টা হয়েছে দেখি!”
আরাফ বাটির ঢাকনা উলটে দেখলো পঞ্চাশের বেশি সন্দেশ হয়েছে। আহনাফ তা দেখে বলল,
“প্রতিবেশিদের দিবি নাকি!”
ইভান বলল,
“অরুণিকা ক’টা খায় আগে দেখি। এসব তো ওর জন্যই।”
তাহমিদ বলল,
“ফ্রিজে না রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে হয়তো। আমি আসলে জানিনা নষ্ট হবে কিনা, কিন্তু যদি হয়ে যায়? এই প্রথম বানিয়েছি তো। তবে খারাপ হয় নি। আর দোকানের মতো ওতো ভালোও হয় নি। প্রতিবেশীদের পরে দেবো ভাবছি। সালেহ চাচার ওখানে এক বাটি রেখে আসবো। উনাদেরও কিছু দিয়ে আসবো। যদি খায় খাবে।”
হঠাৎ তূর্য বলে উঠলো,
“শতাব্দীদের দিবি না? ও কতো করে বলে গেলো।”
ইভান তূর্যের দিকে চোখ ছোট করে তাকালো। ইমন বলল,
“তূর্য, তোকে কিন্তু সুবিধার মনে হচ্ছে না।”
“আমি আবার কি করলাম?”
“শতাব্দীকে নিয়ে একটু বেশিই কথা বলিস। কি চলছে তোদের মধ্যে?”
তাহমিদ বুকে হাত গুঁজে তূর্যের দিকে তাকালো। বাকীরাও তূর্যের উত্তর শুনার আগ্রহে তার দিকেই তাকিয়ে রইলো। তূর্য সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“শতাব্দী আমাদের প্রতিবেশী।”
ইমন বলল,
“প্রতিবেশী তো আরো আছে!”
“ও মাঝে মাঝে এদিকে আসে। টুইংকেলের সাথেও খেলে।”
“এই মহল্লায় অনেকেই অরুণিকার সাথে খেলে।”
তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বলল, “যা তো। দিতে হবে না।”
ইমন বলল, “প্রেম-টেম নয়তো!”
তূর্য দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত গুঁজে বলল,
“আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি প্রেমে পড়বো?”
আরাফ ইমনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ইমন, বাচ্চাদের মতো কথা বলছিস কেন? ওর প্রেম করার বয়স হয়েছে নাকি? প্রেম করলে এই বাড়িতে জায়গা হবে না। ও প্রেম করে একটা পর একটা ঝামেলা করবে, এসব আমাদেরই সামাল দিতে হবে। ভুলে যাবি না আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য প্রেম করে সময় নষ্ট করা নয়। কিছু একটা করে, আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”
ইমন মলিন মুখে আরাফের দিকে তাকালো। ইভান ইমনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আরাফ, ও তো ফাজলামো করছিলো। এসব বারবার মনে করিয়ে দিস না। আমরা কিন্তু সবাই বাবা-মা হারিয়েছি, পরিবার হারিয়েছি। এসব মনে পড়লে দুর্বল হয়ে যাই।”
আহনাফ বলল,
“আরাফ এমনি বলেছে। কিছু মনে করিস না।”
তূর্য সবার গম্ভীরমুখের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দিয়ে বলল,
“বিষয় ছিল শতাব্দী আর তূর্যের প্রেম হচ্ছে কি না তা। আর বিষয় চলে গেছে গম্ভীর দিকে।”
এবার তাহমিদ বলল,
“তোদের মধ্যে সত্যিই কিছু চলছে কিনা তাই বল!”
“আরেহ না, কিভাবে সম্ভব? প্রথমত ও অন্য ধর্মের। ওর বাবা-মা কখনোই এটা মানবে না। দ্বিতীয়ত আমি রকস্টার হবো। সবাই আমাকে চিনবে ‘রিকি দা স্টার’ নামে। আমি গিটার হাতে স্টেজে উঠে গাইবো, ‘আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি, তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই।’ এমন গান তখন আসবে যখন আমার মধ্যে একাকীত্ব থাকবে, শূণ্যতা থাকবে। আর যদি প্রেম করে বসে থাকি, তখন আমার এই স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। সিরিয়াস প্রেমিকার পেছনে সময় নষ্ট করার মতো কোনো ইচ্ছে আমার নেই।”
এরপর তূর্য অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তবে টুইংকেল থাকলে…”
আরাফ আর আহনাফ তূর্যের কথা আটকে দিয়ে একসাথে বলে উঠলো, “অসম্ভব!”
আরাফ বলল,
“অরু অনেক ছোট। এসব উল্টোপাল্টা কথা বলবি না।”
“ছোট হয়েছে তো কি হয়েছে। সারাজীবন ছোট থাকবে নাকি!”
“না, আমি তোর হাতে অরুকে কখনোই দেবো না।”
তূর্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সমস্যা নেই। টুইংকেল আমাকেই বেশি পছন্দ করে। ওকে আমি পটিয়ে ফেলবো।”
ইভান একটু গম্ভীরমুখে বলল,
“তূর্য তুই ফাজলামো করলে ঠিক আছে। কিন্তু সত্যিই যদি তোর এমন পরিকল্পনা থাকে, তাহলে এটা বাদ দে।”
“কেন তোর কি সমস্যা?”
“ও অনেক ছোট। ওর এসব বোঝার বয়স হয় নি। আর জুবাইয়ের আংকেল কিন্তু আমাদের হাতেই ওর দায়িত্ব দিয়েছেন।”
তূর্য হাসতে হাসতে অরুণিকার পাশে বসে পড়ল। তখনই অরুণিকার ঘুম ভাঙলো। তূর্য মিষ্টি হেসে বলল,
“টুইংকেল তাড়াতাড়ি উঠো। দেখো, সবাই তোমার রকস্টারের সাথে ঝগড়া করছে। তুমি ওদের বকে দাও।”
অরুণিকা আরাফের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলো। আরাফ এগিয়ে আসতেই সে কোলে উঠে মাথা হেলিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। আরাফ তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অরু আমাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। আর আমি ওর জীবনে যেমন সিদ্ধান্ত দেবো, তা-ই হবে।”
এবার ইমন বলল,
“যদি বড় হলে ও নিজেই একটা পছন্দ করে ফেলে?”
আরাফ বলল,
“আশা করি এমন সুযোগ ও পাবে না। তবে যদি হয়েও যায়, তাহলে অবশ্যই আমরা চিন্তাভাবনা করে একটা সিদ্ধান্ত দেবো।”
তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“বাহ! তারপরও আমাকে দিবি না। থাক সমস্যা নেই। আমি আমার গিটারকেই বিয়ে করে নেবো।”
১৫.
লোহার গ্রিলে শব্দ হতেই তাহমিদ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। শতাব্দী মুখে হাসি টেনে বলল,
“তা মিষ্টি মশাই কি আজ সন্দেশ বানিয়েছে?”
তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তুমি সন্দেশ খেতে এসেছো?”
শতাব্দী হেসে বলল,
“সকালে উঠে একটু মিষ্টিমুখ না করলে আমার হয় না। ভাবছি তোমার হাতে বানানো মিষ্টি খেয়েই আজ দিনটা শুরু করি।”
তাহমিদ ভেতরে গিয়ে একটা সন্দেশ নিয়ে এলো। তারপর গ্রিলের ফাঁক দিয়ে শতাব্দীর হাতে দিয়ে বলল,
“অরুণিকা এখনো খায় নি।”
“থাক, আমার একটাতেই চলবে।”
শতাব্দী মুখে দিয়েই তাহমিদের দিকে তাকালো। তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। শতাব্দী বলল,
“আমি যদি তোমাদের অরুণিকা হতে পারতাম! ভীষণ স্বাদ হয়েছে বলতে হবে। তুমি কি আজ প্রথম বানিয়েছ?”
“হ্যাঁ।”
“বাহ, তুমি তো দারুণ। তোমার নাম এখন থেকে মিষ্টি মশাই রাখলাম। এতো মিষ্টি তোমার হাতে, মুখেও সেই মিষ্টিটা রাখলে ভালোই হতো।”
তাহমিদ চোখ ছোট করে বলল,
“প্রশংসা করছো নাকি!”
“ওই যা বলো না। প্রশংসা করলেই তো কম হবে। তবে আমি প্রশংসা নয়, তোমাকেই ব্যাখ্যা করছি। তুমি আসলেই খুব ভালো রন্ধনশিল্পী। আমার তো অরুণিকাকে দেখেই জ্বলছে। কি সৌভাগ্য তার!”
আহনাফ পেছন থেকে তাহমিদের কাঁধে হাত রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। শতাব্দীকে দেখে বলল,
“তো তুমি সকালে উঠেই সন্দেশ খেতে চলে এসেছো!”
শতাব্দী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“বাইরের কেউ যদি খাবারের প্রশংসা না করে, তাহলে রন্ধনশিল্পের মান বাড়ে না। তাই খেয়ে তোমার বন্ধুর আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছি। তোমার তো আমাকেই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আচ্ছা এখন চলি। বিকেলে আবার আসবো কিন্তু।”
এরপর সে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার জন্য আরো কয়েকটা রেখো দেবে কিন্তু। আমার সন্দেশ ভীষণ ভালো লাগে। তবে এখন আসি, মিষ্টি মশাই।”
তাহমিদ মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। আহনাফ তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিষ্টিমশাই, রন্ধনশিল্প, বেশ ভারী ভারী শব্দ ব্যবহার হচ্ছে দেখছি।”
তাহমিদ হেসে বলল,
“মেয়েটা যেমনই হোক, তার মনটা আসলেই ভালো। অনেক মিশুক মেয়ে। ওর মধ্যে জড়তা নেই। যেটা ভালো লাগে তাই বলে। মিথ্যে বলে না।”
অরুণিকার পুরোপুরি ঘুম ভেঙেছে দুপুর বারোটায়। ঘুম থেকে উঠেই সে নিজে গিয়েই প্রাকৃতিক কাজ সেরে এলো। এখন সে নিজেই এই কাজটা করতে পারে। তবে আলেয়া আপা এখনো তাকে গোসল করিয়ে দেন। আজ তার চুলে শ্যাম্পু করাতে হবে। এ হলো এক গুরুতর কাজ। শ্যাম্পু করতে গেলেই অরুণিকার কান্না শুরু। তাকে চেপে ধরে বসিয়ে রাখতে গিয়ে কতোবার যে আলেয়া আপা ওয়াশরুমেই পিছলে পড়েছেন তার হিসেব নেই। তবে তিনি কখনো অরুণিকার গায়ে হাত তুলেন নি। তিনি প্রচন্ড ধৈর্যশীল নারী। এদিকে ইভান পানি গরম করে রেখেছে। আলেয়া আপা এসেই তাড়া দিয়ে বললেন,
“আজ আমার একটা কাজ আছে। তাই একটু তাড়া দিচ্ছি।”
ইভান বলল, “গরম পানি রেখেছি।”
আলেয়া আপা অরুণিকার হাত ধরতেই সে হাত ফসকে বেরিয়ে এলো। তারপর আরাফের পেছনে লুকিয়ে গেলো। আলেয়া আপা বললেন,
“এ-ই টুকুন মেয়েটার এতো শক্তি! হাত ফসকে বেরিয়ে গেলো?”
অরুণিকা আরাফের পা দু’টো ঝাপটে ধরে রেখেছে। সে কোনোভাবেই চুলে শ্যাম্পু দেবে না। তাহমিদ চেঁচিয়ে বলল,
“চুল পরিষ্কার না করলে একদম সব কেঁটে দেবো। তখন দেখতে পেত্নীর মতো লাগবে!”
অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরাফ বলল,
“তুমি না লক্ষী একটা মেয়ে। যাও, চুল ধুয়ে এসো।”
অরুণিকা কাঁদোকাঁদো মুখে বলল,
“আমার চোখ ব্যথা করে। আমাকে তিতুন করিয়ে দিতো, তখন একদম ব্যথা পাই নি।”
অরুণিকা হঠাৎ তিতুনের কথা বলায় আলেয়া আপা বললেন, “তিতুন কে?”
আহনাফ বলল,
“আমাদের বাসায় কাজ করতো।”
তখনই ইভান একটা বালতি ঘরে এনে বলল,
“আরাফ তুই করিয়ে দে। মাথাটা তুই ধুয়ে দে। গোসল খালা করিয়ে দেবেন।”
এরপর আরাফ করিয়ে দেবে শুনে অরুণিকা চুপচাপ বিছানায় উঠে বসলো। আরাফ অরুণিকাকে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় পানি ঢেলে দিলো। তারপর ধীরে ধীরে শ্যাম্পু মাখতে লাগলো। অরুণিকা চোখে হাত দিয়ে শুইয়ে আছে। আলেয়া আপা তা দেখে বললেন,
“এখন দেখছি একদম চুপ করে আছে। আমি করিয়ে দিলে পুরো গোসলখানা দৌঁড়াতে থাকে।”
আরাফ এরপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে শ্যাম্পুগুলো ধুয়ে দিলো। ইভান অরুণিকার মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে দিয়ে বলল,
“খালা, এভাবেই চুল ধুইয়ে দিতে হয়। ও তো এখনো ছোট। চোখে শ্যাম্পু চলে যায়, তাই হয়তো ওমন করে।”
আলেয়া আপা বললেন,
“আমি কি এতোকিছু জানি, বাবা? ডুমুর, খোকা, বাঁধন ওদেরকেও আমি মাথা ধুইয়ে দেই। কখনো লাফালাফি করে নি।”
এরপর আলেয়া আপা অরুণিকাকে গোসল করিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। অরুণিকা জামা পরে চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। তার পাশে একটা প্লাস্টিকের উপর টিয়া পাখির খাঁচাটা রাখা আছে। তাহমিদ ভাত মেখে অরুণিকার সামনে বসে পড়লো।
অরুণিকা বলল,
“আমি ভাত খাবো না। সন্দেশ খাবো।”
“আগে ভাত খেয়ে নাও। তোমাকে ওষুধ খেতে হবে। খালি পেটে মিষ্টি খাওয়া ভালো না।”
অরুণিকা মুখ ছোট করে বলল,
“আমি চকোলেট খাবো।”
“আচ্ছা, আগে ভাতটা খেয়ে নাও।”
তারপর সে নিজের জামাটা দেখিয়ে বলল,
“আমি নতুন জামা কিনবো। এটা পরবো না। এটা ভালো লাগে না। আমার সাদা জামাটা বাসা থেকে নিয়ে আসো নি কেন?”
ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে এই মেয়ে। খেতে বলছে, খাও।”
তাহমিদ জোর করেই মুখে এক দলা ভাত ঢুকিয়ে দিলো। সেটা খেতেই তার অর্ধেক সময় পার হয়ে গেলো। অরুণিকা মুখে ভাত নিয়েই বলল,
“আমার সাদা জামাটা নিয়ে আসবে?”
আহনাফ তার পাশে বসে বলল,
“সাদা জামা কোথায় দেখেছো!”
“আরাফের ফোনে ছবি আছে। ওখানে দেখেছি।”
অরুণিকা মাঝে মাঝেই আরাফের ফোনে থাকা ছবিগুলো দেখতে থাকে। গতকালই আরাফ ছবিগুলো পরিষ্কার করিয়ে এনে এলবামে রেখে দিয়েছে। এখন থেকে এলবামেই দেখবে। আরাফ এলবামটি বের করে অরুণিকার সামনে রাখলো। অরুণিকা ছবি দেখতে দেখতে বাকী খাবার শেষ করে ফেললো। খাওয়া শেষ হওয়ার পর অরুণিকা আহনাফের কাছে এসে বলল,
“আমার জন্য সাদা জামা এনে দেবে? আমি এটা পরবো না।”
আহনাফ বলল,
“আচ্ছা, এনে দেবো। তুমিসহ যাবে, ঠিক আছে?”
অরুণিকা হেসে বলল,
“টুন আর ঝুনকেও নিয়ে যাবো, ঠিক আছে?”
টুন আর ঝুন হলো অরুণিকার টিয়া পাখি। এই নাম দু’টো তূর্যই রেখেছে। এরপর থেকেই অরুণিকা তাদের টুন-ঝুন বলেই ডাকে।
বিকেলে অরুণিকার আবদার রাখতে আরাফ, আহনাফ আর ইমন অরুণিকাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। টুন-ঝুনকে আনতে পারে নি তাই অরুণিকার মন খারাপ। সে বলল,
“আমি তোমাদের সাথে রাগ করেছি। টুন-ঝুনকে আমি বলেছি তাদের ঘুরতে নিয়ে যাবো। কিন্তু তোমরা খুব পঁচা। ওদের নাও নি।”
আহনাফ বলল,
“ওরা এতো ছোট বের হলেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তুমি কি চাও ওরা অসুস্থ হয়ে যাক?”
“আচ্ছা, ওরা আমার মতো বড় হলে বের হতে পারবে?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই পারবে।”
এরপর তারা একটার পর একটা দোকানে গিয়ে অরুণিকার জন্য জামা পছন্দ করতে লাগলো। কিন্তু এই মেয়ের তো কিছুই পছন্দ হয় না। সাদা জামা পেলেও তার সাইজের পাওয়া যাচ্ছে না। শেষমেশ অনেক রাজী করিয়ে একটার পরিবর্তে চারটা জামা কিনে নিলো। অরুণিকা জামাগুলো পেয়ে ভীষণ খুশি। বাসায় এসে বাকীদের বের করে দেখাতে লাগলো। তাকে হাসতে দেখেই ছ’জনের মন হালকা হলো। এরপর তূর্য একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা তোমার জন্য এনেছি।”
অরুণিকা প্যাকেট খুলে দেখলো অনেকগুলো চকোলেট আর একটা ছোট মেকাপ বক্স। সেটা খুলে বলল,
“এটা দিয়ে কি খেলে?”
তূর্য হেসে বলল,
“না মুখে লাগাবে। তারপর তোমাকে দেখতে টুইংকেল প্রিন্সেস লাগবে।”
তাহমিদ মেকাপ বক্সটা নিয়ে বলল,
“ছোটদের মেকাপ করা উচিত না। ও এমনিতেই সুন্দর। তারপর দেখা যাবে এগুলো লাগিয়ে ওর সুন্দর মুখটাই নষ্ট হয়ে গেছে।”
“ভাই, আমি টুইংকেলের ক্ষতি করবো না। এসব তো মাঝে মাঝেই লাগাবে। প্রতিদিন তো আর লাগাবে না। যখন কোনো অনুষ্ঠান হবে তখনও লাগাতে পারে। আগামী সপ্তাহে পাশের বাড়ির সিনথিয়া আপুর বিয়ে। টুইংকেল এভাবে যাবে নাকি? একটু সাজবে, তারপরই তো ভালো লাগবে দেখতে। আর আমি টাকা জমিয়ে ভালো দোকান থেকেই এটা কিনে এনেছি। আর শতাব্দী আমাকে বলেছে সেই দোকানের জিনিসপত্র ভালো।”
অরুণিকাকে নিয়ে একেক জনের একেক চিন্তা, এক এক শখ। তবে এসবের কিছুই এখনো অরুণিকা বুঝে না। যেদিন বুঝবে, সেদিন মেনে নেবে, সে অনাথ হয়েও হয় নি। কারণ সে সব হারিয়েও অনেক কিছুই পেয়েছে। এর চেয়েও বেশি কিছু পাওয়া গেলে সে নিশ্চিত সৌভাগ্যবতী।
(💥কাল রাতে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি কোনো কারণবশত গল্পটা সম্পূর্ণ করতে পারে নি। তাই আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।)
চলবে-