জলফড়িং #রোজা_ইসলাম #পার্ট ১২

0
479

#জলফড়িং
#রোজা_ইসলাম
#পার্ট ১২

ভালোবাসা! এই ছোট্ট শব্দটায় আছে সম্মোহনী এক মন্ত্র! যা একবার অনুভূত হতেই। বয়স, সময়, কাল, পাত্র, জাত, ধর্ম এগুলো কিছুই মাথায় থাকে না। মন মস্তিষ্ক মানতে চায়না শত, সহস্ররূপে বাঁধা। ভালোবাসা হচ্ছে আবেগ, তুখোড় যন্ত্রণাময় এক আবেগ। সেই আবেগ অনুভূতিতে সামান্য আঁচ তীক্ষ্ণ ব্যাথায় জর্জরিত হবে আপনার বক্ষঃস্থল, হৃদপিণ্ড। অথচ সেই যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত বক্ষঃস্থল জুড়ে থাকবে শুধু এক জনের বাস। তার জন্যেই ভালোবাসা, চিন্তা, উৎকাণ্ঠা! ভালোবাসার হাওয়ায় একবার গা ভাসালে শত যন্ত্রণাতেও মুক্তি মিলবেনা। মুক্তি দিবেন না আপনি নিজে-ই। কেননা এই যন্ত্রণাতেও লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, অদৃশ্য শেকল। সেই অদৃশ্য ভালোবাসা, মায়া শুধু ভালোবাসারাই উপলব্ধি করতে সক্ষম। অন্যকারো কাছে সেটা শুধু-ই ক্ষণিকের আবেগ, মোহ কিংবা নেশা মনে হতে-ই পারে।

তুখোড়, যন্ত্রণাময় ভালোবাসায় গা ডুবানো, স্বেচ্ছায় গা ভাসানো রাদ। প্রেয়সী ওর ইরানীর চিন্তায়, উৎকাণ্ঠিত হয়ে বাসায় গিয়ে ক্ষণকালের জন্য স্থীর থাকতে সক্ষম হয়নি। ও না-চাইতেও স্বাভাবিক থেকেও অস্বাভাবিক আচরণে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অস্থিরতায় ক্ষণে ক্ষণে ছন্নছাড়া আচরণ করছিলো। অফিস থেকে সেই সন্ধ্যায় ফিরলেও ফ্রেশ হয়নি। খাওয়া দাওয়া তো দূর-সাধ্য বিষয়৷ গায়ের কোর্ট খুলে ফেললেও অফিসের সাদা ধবধবে ঘামে ভেজা, আয়রন নষ্ট হয়ে যাওয়া শার্ট, প্যান্ট, জুতো সব এলোমেলো হয়ে গেলেও ওগুলো পড়েই রাদ রুমের বারান্দার দরজায় ঠায় বসে থাকে। কখনো বা উঠে ঘরময় পায়চারী করে। বিষাদে ওর মন তিক্ততায় ছেয়ে যায়! যা ওর আদলে স্পষ্ট ফুটে উঠে! এভাবে রাত দশ-টা পর্যন্ত চলার পর। জুহার চক্ষে বিঁধে ছেলের অস্বাভাবিক আচরণ। বিষণ্ণ, বিধ্বস্ত মুখ! তৎপরে জুহা ব্যাস্ত হয়ে পরলো ওকে এভাবে দেখে। অথচ মা’য়ের চিন্তায় রাদ আজ নিজের মন ভোলাতে পারছে না। জুহা বারবার প্রশ্ন করলেও উত্তরেও কোঠা বরাবরের মতোই শূন্য।

কাশিশ আজ কোনও কারণে তখনও বাসায় ফিরেনি। জুহা উপায় না পেয়ে কাশিশ’কে ফোন দিয়ে সব জানায়। কাশিশ তৎক্ষনাৎ কালবিলম্ব না করে আধঘন্টার মধ্যে বাসায় ফিরে। তন্মধ্যে রাদের কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য হয়নি। কাশিশ বাসায় ফিরে একবার প্রগাঢ়, তুখোড় চক্ষে বন্ধু কম ভাই’কে অবলোকন করে। ভ্রুঁদ্বয় কুঞ্চিত করে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে,

—” কিরে? কী হয়েছে? ইরা কী কিছু করেছে? ”

অত্যাধিক নিচু কাশিরের কন্ঠ! যেন বাহিরে থাকা, চিন্তিত মায়ের কানে না যায় কোনও শঙ্কা জড়িত বাক্য। রাদ শুধু ঘাড় উঁচিয়ে বন্ধুর দিকে নেত্র বিদ্ধ করে নির্মিমেষ, নির্লিপ্ত চাহুনি ছুড়ে দিলো! সময় নিয়ে ভারাক্রান্ত, খসখসে গলায় বলল,

—” আমাকে একটু ইরার বাসার সামনে নিয়ে যাবি? আমি বাইক দিয়ে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছি না।”

কাশিশ কখনো বন্ধুর এমন রূপ, অভিব্যক্তির মুখোমুখি হয়নি। রাদ বরাবরই শান্ত শক্ত মনের মানুষ ওর জীবনে কষ্ট বলতে ওর মায়ের অতীত। কিন্তু সেটা নিয়েও রাদ কখনো এতটা ভেঙে পড়েনি। আজ রাদ’কে সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে কাশিশের। প্রবল আত্মবিশ্বাসী রাদ’কে আজ মোটেও আত্মবিশ্বাসী লাগছে না। এ-র কারণ কী! কী এমন হলো কাশিশ বুঝতে পারলো না! শুধু ক্ষীণ, ফ্যাকাসে গলায় বলল,

—” চল!”

অতঃপর রাদের হাত ধরে উঠিয়ে দুই বন্ধ বাহিরে যেতে যেতেই জুহার উদ্দেশ্য কাশিশ শুধায়,

—” ওর ইরানী নাকি অসুস্থ বুঝলে, চিন্তা হচ্ছে ওর। তা-ই এমন করছে। তুমি একদম চিন্তা করো না। একটু দেখা করিয়ে আসি ভাবীর সাথে দেখবা তোমার পোলা আগুনের গোলা একদম ঠিক!”

জুহা ছেলের জন্য খাবার নিচ্ছিলো। কাশিশ এসেছে বলে কয়ে খাইয়ে দিবে। কিন্তু এভাবে দু’জনকে চলে যেতে দেখে এবং কাশিশের বুলিতে যতই দুষ্টুমি থাকুক উনি স্পষ্ট বুঝেছেন অবশ্যই জটিল কিছু হয়েছে ইরা সংক্রান্ত। না হলে গম্ভীর, বুঝদার, বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটা এভাবে ভেঙে পরতে পারেনা। এর থেকে-ও যে বড়বড় অসাধ্য সাধন করেছে রাদ। তবে আজ কী এমন হয়েছে এভাবে ভেঙে পরলো ছেলে’টা? ভালোবাসায় যে একবার ডুবলে হয় চিরকালের সুখ, না হয় চিরকালের দুঃখ এই দুঃখের কোনও সমাপ্তি নেই, মৃত্যুর আগে এর সমাপ্তি নেই। এটা জুহার থেকে ভালো’কে জানে? জুহা চান না অতিরিক্ত ভালোবাসা উনার মতো উনার ছেলের জীবনটাও বিষাদে বিষাক্ত হয়ে যাক! কিন্তু ভাগ্য যেন মা ছেলের জীবনটা এক সুতোয় বেঁধে ফেলছেন। ভয়ার্ত আতঙ্কিত জুহা তৎক্ষনাৎ আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে চাইলেন ছেলের জন্য শান্তি, স্বস্তি, সুখ৷ ইরা নামক সুখ। মায়ের দোয়া কবুল হয় নাকি! উনি চান আজ উনার দোয়া কবুল হোক। কবুল হোক রাদের সুখ!
_________

কাশিশ ড্রাইভে সম্পূর্ণ মনোযোগ রেখেও চিন্তিত, ভারী গলায় বলল,

—” কী হলো, এবার খুলে বলতো! তোকে এভাবে কখনো দেখিনি ভাই!”

বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাদ সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। অতঃপর গাম্ভীর্যের সাথে নিজের অভ্যন্তরে গর্জে উঠা একেকটা প্রশ্ন খুলে বলতে শুরু করলো, প্রান প্রিয় বন্ধুকে। ওর নিষ্প্রভ মলিন গলায়,

—” আমি ভয় পেতাম না কাশিশ, ইরানীর বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক হলেও আমি ম্যানেজ করতে পারতাম সবটা, বিয়ে ভেঙ্গে! কিন্তু আদি ইরার কাজিন। সম্পূর্ণ ফ্যামিলি মিলে সব মিটিয়ে নিলে আমার কিছু করার থাকবে না। আদিত্য আজ যেভাবে বলল ও সব জানে বাট ওর কিচ্ছু যায় আসেনা। তাছাড়া ইরা ওর মা’কে ছাড়া আমাদের কথা কাউ’কে বলতেও পারেনি। বলবেই বা কী করে। আন্টি ওর মন ভেঙে দিয়েছে। ভয় দেখিয়েছে। কাশিশ আ’ম টোটালি ব্রকেন!”

কাশিশ বন্ধু’কে শান্তনা দিবে কী। ও নিজে-ই রুদ্ধশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। মন মস্তিষ্কে সব কেমন কমপ্লিকেটেট হয়ে গেলো কয়েক মুহূর্তে! কাশিশ অবশেষে মুখ খুললো! বিবশ গলায় বলল,

—” কোনও ভাবে কী ইরার সাথে যোগাযোগ করার ওয়ে নেই? ”

এই প্রশ্নে রাদের গাঁ জ্বলে উঠে রাগে! উগ্রমেজাজী হয়ে উঠে ভীত, চিন্তিত মন! রাগান্বিত গলায় তেজ ঢেলে বলল,

—“মেয়েটা কাউকে আমাদের ব্যাপারে বলেনি। কী হতো বললে? কী এমন হতো! আমি ওর ফ্রেন্ড সার্কেল সম্পূর্ণ চিনি। কিন্তু এভাবে হুট করে কে হেল্প করবে আমাকে বলতো? মাঝেমধ্যে না আমার ইরা’কে…!”

রাগান্বিত রাদের কণ্ঠেনালী কাঁপছিলো৷ ফলস্বরূপ মুখনিঃসৃত হতো উলটা পালটা বাক্য। যা রাদ চায় না। ফলস্বরূপ থম মেরে বসে রইলো! কাশিশ নিজেও আর কথা বাড়ায়নি! কয়েক মুহূর্তে ওরা পৌঁছে গেলো ইরার বাসার সেই তিন-রাস্তার মোড়ে! কিন্তু এখন কী করবে? কিছু বলার ও নেই৷ রাদ কখনো বিশ্রী ভাষায় কাউকে গালি দেয়নি। কিন্তু আজ মনে মনে আদি’কে ও ভয়ংকর মাত্রায় কিছু গালি দিলো। এ-ই ছেলে’টার জন্য ইরা সর্বক্ষণ ভীতসন্ত্রস্ত থাকতো। আজ ইরার ভয় পরিপূর্ণ হলো। মেরে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ঐ ডিজাস্টার ছেলেটাকে! কিন্তু..! রাদ মাথা দু-হাতে চেপে ধরে। মুখনিঃসৃত হয় কিছু বিরক্তিকর শব্দ,” উফ!”

সে-ই থেকে দুই বন্ধু ইরার বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে বসে আছে। এবং কাশিশ ভাবছে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বের ভাবনা গুলো। ভালোবাসা নিয়ে ভাবনা গুলো। কী অদ্ভুত কত কঠিন মুহূর্ত পারি দিতে দেখেছে রাদ’কে জীবনে অথচ আজ’কের মতো অস্থির, উদ্ভ্রান্তের ন্যায় হতে কখনো দেখেনি! কখনো না। কে বলবে পাশের ছেলেটা বয়স ৩০-ছুইছুই! আবেগের বয়স নেই তার! অথচ কিন্ডারগার্টেন প্রেমিক’দের মতো তার অস্থিরতা। এ-ই যে দেখা হবে না জেনেও রাত সে-ই ১১টায় এসেছিলো। এখন দুই-টা বাজে এখনো প্রেয়সীর বাসার সামনে বসে আছে। একটি বার ফিরে যাওয়ার কথা ভুলেও উচ্চারণ করছে না। কাশিশ যদি ফিরে যাওয়ার কথা বলে ফেলে, সে-ই ভয়ে ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কাশিশ আচমকা ঠোঁট প্রশ্বস্ত করে একটু হাসলো নির্মল, নিঃশব্দ সেই হাসি। আকস্মিক মনে হলো। ভালোবাসা সুন্দর। এ-ই যে রাদের অস্থিরতা, ব্যাকুলতা, উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চঞ্চলতা দেখতে খারাপ লাগলেও। কেউ কাউ’কে এতটা ভালোবাসে সেটা ফিল করতেও ভালো লাগছে। অভ্যন্তরে কেমন শান্তি, শান্তি অনুভব হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে ভালোবাসা অনুভব করাও সুন্দর। দেখেও শান্তি!

রাত তিন-টা বাজতেই রাদ গাঢ়, রাশভারি গলায় বলল,

—” আচ্ছা মেডিসিন শোন তুই বস! আমি একটু ওদের গেইট’টা ঘুরে দেখে আসি!”

ভালোবাসা অনুভব করে হাওয়ায় দুলতে থাকা কাশিশ এপর্যায়ে আৎকে উঠে রাদের পাগলামি দেখে৷ ওর বিমুগ্ধ ভাবনা দৌড় চিত্তে পাকিয়ে গেলো। বলে কী এই পোলা? শেষে অতিরিক্ত চাওয়ার বিপরীতে কপালে জুটে লাঠির ঘা! এ-ই রাতে কেউ দেখলে চোর ছাড়া আর কিচ্ছুটি ভাববে না। মাইরও একটা মাটিতে পরবে না! রাদ বেরুতে উদ্বেগ হতেই কাশিশ হকচকিয়ে গেলো উত্তেজিত গলায় তড়বড় করে বলল,

—” বন্ধু প্রেমে অন্ধ, মাথা গেছে সব বুঝলাম। তা-ই বলে রাত করে সেধে সেধে পিটানি খাইতে যাবি তুই? মাথা গেছে তোর? আর, আর গেইট কী ঘুরে ঘুরে দেখবি তুই? জীবনে গেইট দেখোস নাই তুই! বাসায় চল আজ সারা রাত গেইট দেখাবো তোরে ভাই মাইর খাওয়াস না তবুও!”

রাদ নিজেও ভয় পেয়ে গেলো আসলেই যদি কেউ দেখে ফেলে! তাছাড়া আদি আজ ঠাণ্ডা গলায় ওকে থ্রেট শুদ্ধ দিয়ে দিলো৷ ভেতরটা গর্জে উঠে ক্ষণকালেই যাই হয় হোক! রাদ ভীতু প্রেমিক নয়। ভালোবাসি চিল্লিয়ে বলার মতো বুকের পাটা, সাহস ওর আছে। দেখে ফেললে আরও ভালো! চিল্লিয়ে বলে আসবে ও এ-ই বাসার মেয়ের প্রেমিক। কাঙ্গাল প্রেমিক। বেয়াদব, অসভ্য ভাববে ভাবুক! অসভ্য বেয়াদব হয়ে যদি ঐ খবিশ ছেলের থেকে প্রেয়সী’কে বাঁচানো যায়! উদ্ধার করা যায়, বিয়ে ভাঙ্গা যায় তবে বেয়াদব, অসভ্যাতাই অন্নেক ভালো!

—” ভাই কই হারায় গেলি! দেখ ভাই কাল যা করার করমু আজ হাত-পা অক্ষত থাকতে বাড়ি ফিরে যা-ই তা-ই ভালো৷ হাত-পা না থাকলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার! এখনো বিয়ে করি নাই ভাই! দোয়া কর!”

কাশিশ ভয়ে উল্টাপাল্টা আওড়াচ্ছে। দাঁতে দাঁত নিষ্পেষণ করে নিজেকে ধাতস্থ করে রাদ। ও যে মনে মনে ভয়ংকর সব ভাবনা ভাবছে, এগুলো কিচ্ছুতেই কাশিশ’কে বলা যাবেনা। তাহলে ধরে বেঁধে এক্ষুণি তুলে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু রাদের মন মানছে না। ওর মনে হচ্ছে ইরা কাঁদছে, কষ্টে আছে। আদি ফোন দিয়ে এসব বলল নিশ্চয়ই ইরা’কেও কিছু বলেছে, করেছে! কে জানে এই ছেলের দ্বারা সব সম্ভব! রাদের মন মস্তিষ্কে ভুরভুর করে অন্য চক্রান্ত চললেও। কাশিশ’কে নির্ভেজাল, গা ছাড়া ভাব করে নির্মল গলায় বলল,

—” আরে না ভাই, এমন কিছু হবে না। আমি কিছুদিন আগেও ওর সাথে বাসায় দেখা করে এসেছি!”

কাশিশ বিস্ফোরিত চক্ষুদ্বয় অক্ষিকোট উঁপচে বেরিয়ে আসতে চায়৷ হতভম্ব, অবিশ্বাস্য গলায় শুধায়,

—” রাদেলের বাচ্চা। তোলে তোলে ট্যাম্পু বাড়ি পর্যন্ত আইসা পড়ছে! এতবড় কলিজা! তুই তো দেখি জাতে মাতাল তালে ঠিক। এত্ত প্রেম যে মাইর খাওয়ারো ভয় নাই!”

রাদ নিজেও গম্ভীরমুখে ভাবে। ঐদিন কিভাবে কী হয়ে গেলো অবিশ্বাস্য। ঐদিন ওর ইরানীর অনেকটা কাছেও চলে গিয়েছিলো ও! সেই রাতে একেকটা মুহূর্ত চক্ষে ভেসে উঠতেই, রাদের মন, মস্তিষ্ক আবারও বেসামাল হয়ে যায়! গাঢ় শ্বাস ফেলে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় শুধু বলে,

—” মেডিসিন তুই বস প্লিজ। পড়ে বলছি সব। এখন একটু দেখে আসি। আমি এভাবে ফিরে যেতে আসিনি।”

কাশিশ রাদের হাত পর্যন্ত টেনে ধরে রাখে ভয়ে। কিন্তু রাদ’কে আঁটকে রাখতে ছেলেটা সম্পূর্ণ ব্যার্থ!
__________

রাত প্রায় তখন ৩-টার উপরে৷ ইরা’কে খাইয়ে বেশক্ষণ হয়েছে আদি নিজের ঘরে চলে গিয়েছে! ইরার রুমের দরজা এখন সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। ওকে রুমবন্দী করে যায়নি আদি! তখন আদির মুখের বুলি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও ইরা মন খচখচ করছে! ঘুম পাচ্ছে না! মনে হচ্ছে একটি বার রাদের সঙ্গে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি! ও বারবার দরজায় তাকাচ্ছে! কিছু ভাবছে, আকস্মিক সাহসা উঠেও দাঁড়ায়, উচাটন মনে বিড়াল পায়ে রুম থেকে বের হয়। উদ্দেশ্য বড় মার বাটন ফোনটা কিচেনের থাকে, সেটা চুরি করা! কিন্তু বাহিরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কাউ’কে নজরে না পড়লেও কিচেনে যেতে হলে মীতি আদি দু’জনের রুম পাস করে যেতে হবে। সাহসা বুকটা ধ্বক করে উঠে, অত্যন্ত ভীত হয় মন আদি যদি কোনও ভাবে একবার টের পায়। আজ হয়তো মেরে ফেলতেও দ্বিতীয় বার ভাববেনা! তাছাড়া এখনো বড়বাবা, বাবা কোনও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনি ওরা কী করবে কে জানে! রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা লক করে দেয় ও। আজ অনেক বড় ঝড় গিয়েছে সবার উপর। আবারও কোনও অঘটন ঘটাতে চায় না ইরা। এমনিতেই বাবা-মা আজ ওকে ভুল বুঝেছে হয়তো। রাহুল ভাইয়ার মতো হয়তো ওকে ও আর ভালোবাসাবে না আগের মতো! কিন্তু ইরা কী করবে কেমন করে যেন সব হয়ে গেলো। ভালোবাসাটাও মনের অজান্তেই এতটা গাঢ়তর হয়ে গেলো! যে এখন পিছু ফিরে কাউ’কে প্রশ্নবিদ্ধ করার উপায় নেই। শুধু জানে ও ভালোবাসে! খুব ভালোবাসে রাদ’কে! আবার ঠিক ততটাই মা-বাবা’কেও ভালোবাসে৷ এবং ওদের জন্যেও! ওদের দিকটা ভেবেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! মা-বাবার দিকটা ইরা সর্বদা আগে ভেবেছে তা-ই তো এসব জানাতে চায়নি বাসায়! কিন্তু ও নিরুপায় ঐযে পিছনে ফিরে তাকানোর কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উপায় নেই ইরা এই গল্পে সব থেকে বেশী দোষী! তা-ই সবার মন ওকে ঠিক রেখে চলতে হচ্ছে। না বাবা-মা’কে কষ্ট দিতে পারছে, না রাদ’কে!

ইরা অশ্রুসিক্ত চক্ষে রুমের লাইট’স অফ করে উন্মনা পায়ে গিয়ে বেডে বসে। জানালার দিকে বেখেয়ালি দৃষ্টি মেলে রাখে। এবং হঠাৎ উপলব্ধি করে সামনে একটি পুরুষ অবয়ব! পরমুহূর্তেই চিরচেনা ভরাট গম্ভীর গলা ভেসে আসে শ্রবণেন্দ্রিয়ে,

—” চিৎকার করো না! ইট’স মি রাদ। জাস্ট হুঁশ! কিপ কাম!”

রাদ অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠেও রিলাক্সে বাক্যগুলো উচ্চারণ করছিলো। আকস্মিক ইরা ভয় পেয়ে যেন চিৎকার চেঁচামেচি না করে উঠে। ইরা ভয়ে চিৎকার করবে কী! কয়েক মুহূর্তের জন্য মূর্তির মতো তাকিয়ে থাকে রাদের আঁধারে আবৃত অবয়ব’টির দিকে। তৎপরে তড়বড় করে উঠে রাদের জানালার গ্রিলে রাখা হাতের উপর হাত রাখে শক্ত করে। প্রাণপুরুষের সান্নিধ্যে কষ্টে দ্বিগুণ উদ্বেগে নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। রাদ নিজেও ইরার হাতটা শক্ত করে ধরে অপর হাতে! কিন্তু মুখে একটি শব্দ উচ্চারণ করে না। শুধু ঘামের নহর মুখে নিয়ে চিন্তিত, ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত চক্ষে কিয়ৎপলক ইরার ক্রন্দনরত, ফ্যাকাসে, মলিন মুখশ্রীতে চেয়ে থাকে নির্মিমেষ নিষ্পলক! ইরা ফিসফিস করে কিছু বলতে চাইলে আঙুল তুলে ঠোঁটে রেখে চুপ থাকার নির্দেশ দেয় রাদ। অতঃপর নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় প্রেয়সীর হাত থেকে। পকেট হাতড়ে একটা ফোন বের করে এগিয়ে দেয় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ইরার সম্মুখে। ইরা সেটা হাতে তুলে নিতেই। গ্রিল দিয়ে হাত গড়িয়ে ইরার চোখ মুছে দেয় যত্নের সাথে। এবং অত্যন্ত ধীর, নিচু কণ্ঠে সান্ত্বনা সরূপ শুধায়,

—” লিসেন এই ফোনের লক। ‘ইরারাণী’ লক খুলে কাশিশের ফোনে কল দাও। ফোনে কথা বলছি ওকে। কাঁদবে না, কিচ্ছু হবে না। আমি আছি না! এভ্রিথিং উইল বি ফাইন! আই লাভ ইউ!”

ইরা মাথা দুলায়। রাদ আবারও ফোনের দিকে ইশারা করে এক মুহূর্ত সময় ব্যায় না করে স্থান ত্যাগ করে। ইরা জানালায় মাথা সেঁটে রাদের যাওয়া দেখে মনে মনেই শুধায়,” আই লাভ ইউ টু!”

ইরা মনে মনে বাক্যটি সম্পূর্ণ করতেই৷ আৎকে উঠে। কেউ ভয়ানক থাবা ফেলে দরজায় শব্দ করে নক করছে! আদি কী টের পেলো রাদ এসেছে? ভীতসন্ত্রস্ত ইরা তৎপর হয়ে হাতের ফোনটা লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে! বুকটা অসম্ভব গতিতে ধড়ফড় করছে। ভূপৃষ্ঠ কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে না ওর শরীরে বুঝতে পারছে না। থরথর কাঁপতে কাঁপতেই দ্রুত ফোন লুকানোর একটি সঠিক জায়গা খুঁজে চলেছে তড়িঘড়ি করে। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক স্থান খুঁজে পাওয়া বড্ড মুশকিল!

রাত তীব্র হওয়ায় ইরার রুমের দরজায় করা এক-এক’টা আঘাতের ঠক ঠক রাদ ইরাদের গেইট দিয়ে বেরুবার ঠিক আগ মুহূর্তে শুনতে পায় স্পষ্ট। কিন্তু দাঁড়ানোর অবকাশ নেই! জোড়ালো পায়ে রাদ গলি দিয়ে বেরিয়ে যায়। অভ্যন্তরে গর্জে উঠে প্রশ্ন কেউ দেখে ফেলল! এভাবে হুটহাট ভেতরে ঢুকে যাওয়া বুঝি উচিৎ হয়নি! নিজের কষ্ট কমাতে গিয়ে না প্রেয়সীর কষ্ট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ফলল!

এদিকে কাশিশ নিজের গাড়িতে নিজেই মুখে লুকিয়ে বসে ও হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। এক্ষুণি একদল দানবীয় আকারের লোক রাদ’কে পিটাতে পিটাতে রাস্তায় নিয়ে আসবে। এবং গাড়ি নিয়ে অপেক্ষারত, মালমশলা নিয়ে পালানোর দোষে ও নিজেও দূষিত হবে। এবং জব্বর কেলানি খাবে দুই বন্ধু মিলেমিশে! ইতিহাসের পাতায় দু-বন্ধু পাকাপোক্ত ভাবে নতুন করে নাম লিখাবে। প্রেমিকার বাসায় চুড়ি করতে এসে ধরা খেলো চোর এবং তার সহপাঠী! নাইস!

চলবে!

[পাঠকের কাছে আমার আকাঙ্খা একদম শূন্যের কোঠায়! কিন্তু আপনাদের অনেক আকাঙ্খা আছে লেখিকার উপর আমি জানি! তবে লেট করে গল্প দেওয়ার কথা এলে আমি বলবো আমি দুঃখীত। আমি এখন নিজের মানসিক শান্তির জন্যেই লিখালিখিটা করি। প্রায়োরিটি দেই। লাইক, কমেন্টের নেশা একদম নেই। থাকলে হাজার হাজার পাঠক শুধু মাত্র লেট করে গল্প দিয়ে হারিয়ে ফেলতাম না। আমি মনে করি আমার লিখা কাউকে টানলে যত লেট করেই গল্প দেই না কেন পাঠক পড়বে! একজন হলেও পড়বে! আমি তার জন্যেই লিখবো। তাই এসব কথা আমি গায়ে মাখিনা আপু লেট করে গল্প দিলে গল্প পড়ার উৎসাহ পাইনা! তাছাড়া এখন আমি ধীরে-সুস্থে গল্প লিখে শান্তি পাই। বুঝেসুঝে আগাই। আমি কিন্তু এটা বলছিনা আমি লেট করেই গল্প দিবো পড়লে পড়ুন অথবা এড়িয়ে জান। আপনাদের কাছে আমার একটা রিকুয়েষ্ট একটু সেক্রিফাইজ করে মানিয়ে নিয়ে পড়ে নিবেন! যারাই আমার গল্পগুলো পড়ছেন। সব শেষে আমার মানসিক শান্তিগুলো কিন্তু আপনারাই পরিপূর্ণ করেন, এতো অপেক্ষা করে গল্প পড়েন তার জন্য আমি ধন্যবাদ দিয়ে ছোট্ট করবো না। শুধু বলবো ভালোবাসা অফুরন্ত 🖤 ভুল বলে থাকলে অথবা কেউ কষ্ট পেলে আমার কথায়, ক্ষমা করে দিবেন! মানুষ মাত্রই ভুল। ক্ষমা করা মহৎগুণ!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here