প্রেমবিভ্রাট ২৪ তানভীর তুহিন

0
566

প্রেমবিভ্রাট
২৪
তানভীর তুহিন

তুহিন বার্সেলোনা এসেছে আজ দুদিন হলো। গত দুদিন দীপ্তির সাথে তেমন কথা হয়নি। তার মূখ্য কারন ছিলো তুহিনের সেমিনারের ব্যাস্ততা আর দীপ্তির ফোন প্রায় সময়ই ইঙ্গেজ থাকা। এখনও অনবরত তিন-চার বার দীপ্তিকে ফোন করে যাচ্ছে তুহিন। কিন্তু দীপ্তির ফোন ইঙ্গেজ। তুহিন বাধ্যহয়ে আয়েশার নাম্বারে ফোন দেয়। দুবার ফোন ফুল রিং হয়ে যায়। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন তোলে না। তিন বারের বার আয়েশা ফোন রিসিভ কিরে। জড়ানো ভারী গলায় বলে, ” হ্যালো ভাইয়া। ”
তুহিন বিস্মিত হয়ে যায় আয়েশার কন্ঠ শুনে। কারন আয়েশার কন্ঠ শুনে স্পষ্ট মনে হচ্ছে আয়েশা কাঁদছিলো। সহজে কাদার মেয়ে আয়েশা না। যথেষ্ট ম্যাচিউড আর চাপা স্বভাবের মেয়ে আয়েশা। তুহিন সঙ্গে সঙ্গে কাঠ গলায় জিজ্ঞেস করে, ” আয়েশা তোর কী হয়েছে? ”
– ” কই কিছু না তো। ” এবার আয়েশার কন্ঠে কোনো ভার ভাব খুজে পায় না তুহিন। মুহুর্তেই যেনো আয়েশা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। তুহিন আবার জিজ্ঞেস করে, ” কী হয়েছে তোর? কাঁদছিলি কেনো? ”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না। তুহিনের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। কী এমন হয়েছে আয়েশার যে তিনদিন ধরে আপসেট? আর আজ কাঁদছেই বা কেনো? কী এমন কথা যেটা আমাকেও বলতে পারছে না। তুহিন একপ্রকার চিৎকার দিয়ে বলে, ” হয়েছে টা কী? এভাবে ফ্যাচফ্যাচে কান্না আমার পছন্দ না। জানিস তো। ”

আয়েশা নিরবে চোখের জল ফেলছে। তুহিন এখন আয়েশার সামনে থাকলে রাগের চোটে আয়েশার গলার টুটিটা চেপে ধরতো এই নিরবতার অপরাধে। তুহিন আবার দাত খিটে রাগ আয়ত্তে এনে জিজ্ঞেস করে, ” ফর গড সেক বলবি কিছু? ”
আয়েশা স্যাঁতস্যাঁতে সর্দি নাকে টেনে নেওয়ার মত মত করে নাক টেনে বলে, ” তুই কেনো ফোন করেছিস? ”

তুহিন স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে আয়েশা সম্পুর্ন এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে তাকে। তুহিন মনে মনে ভাবে যা শোনার, যা জানার তা বাড়ি ফিরেই জানবে। এখন ফোনে চিল্লাচিল্লি করে লাভ নেই।

তুহিন শক্ত গলায় বলে, ” দীপ্তির ফোন ইঙ্গেজ আসছে। ওকে কলব্যাক করতে বল। ”

তুহিনের কথা শেষ না হতেই আয়েশা ফোনটা কেটে দেয়। তুহিনের রাগ যেনো শরীর ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। আয়েশা ফোন কেটে দেওয়ার দুমিনিট পরেই দীপ্তি তুহিনকে ফোন দেয়। তুহিন ফোন রিসিভ করেই হুংকার দিয়ে ওঠে, ” কার সাথে এতো কথা বলো যে ফোন সারাক্ষন ইঙ্গেজ থাকে? ”

দীপ্তি শান্ত গলায় বলে, ” ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম। ”
– ” কী এতো কথা ভাইয়ার সাথে সারাদিন? ”

দীপ্তি এড়িয়ে গিয়ে গাছাড়াভাব দেখিয়ে বলে, ” কী বলবে? বলো। ”
– ” কী বলবো মানে? ওদিকে কী কোনো সমস্যা হয়েছে? ”
দীপ্তি সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়, ” এখানে সব ঠিক আছে। তুমি বলো না, কী বলবে? ”

দীপ্তি এমনভাবে কথা বলছে যেনো তার ফোন রাখার প্রচন্ড তাড়া। তুহিনের রাগ আর বাধ মানতেই চাচ্ছে না। সারাদিন পরে দীপ্তিকে ফোন দিয়েছে একটু কথা বলে তাজা হবার জন্য আর দীপ্তি কিনা এরকম অদ্ভুত আচরন করছে।

তুহিনও নিজেকে স্বাভাবিক করে, স্বাভাবিকভাবে বলে, ” কিছু বলবো না। এমনিই ওদিককার সব ঠিক আছে কিনা তা জানার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম। ”
– ” ওহ! কবে ফিরছো? ”
– ” পরশু। ”
– ” আচ্ছা রাখছি। ”

কথাটা শুনে তুহিন নিজেই ফোনটা কেটে দেয়। রাগের চোটে নিজের শরীরে নিজের আগুন ধরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তুহিনের।

গতকাল রাতের পরে সারাদিন কেটে গেছে দীপ্তি তুহিনকে ফোন দেয়নি। তুহিনও দীপ্তিকে ফোন দেয়নি। এমনকি বাড়ির কেউই তুহিনকে ফোন দেয়নি। দীপ্তি ছাড়া বাড়ির অন্যকারো ফোন দেবার কথাও না। কারন তুহিনই ফ্রি হয়ে আসাদ সাহেব আর শায়লা বেগমের সাথে কথা বলে নেয়। তাই তারা তুহিনকে ফোন দেয় না নিজ থেকে। কারন তারা জানে তুহিনই অবসরে ফোন দেবে। কিন্তু গতকাল রাতের ঘটনার পরে তুহিনের মারাত্মক মেজাজ চটে যায়। ফলে তুহিন বাড়ির কাউকেই ফোন করে না আর। তুহিনের গতকাল রাতের রাগটা নিস্তেজ হয়ে গেছে আজ সকালের সেমিনারে। সকালের সেমিনারটা বেশ ভালো হয়েছে। আর সেখানে তুহিন খুব ভালো ভাবে সবার সাথে বার্তালাপও করেছে। স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতে করতে কখন যে তুহিন নিজেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে তা সে জানে না।

বাংলাদেশ সময়ে এখন সন্ধ্যা ৩ টা বাজে আর বার্সেলোনার সময়ে এখন বিকাল ৭ টা। আজ সকালের সেমিনারটাই তুহিনের শেষ সেমিনার ছিলো বার্সেলোনাতে। ভেবেছিলো রাতটা বার্সেলোনায় ঘুরে ফিরে কাল বিকালের ফ্লাইটে দেশে ফিরবে কিন্তু এখন ঠিক করলো সে আজ রাতেই বাড়ি ফিরে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে। কারন সবাই জানে তুহিন কাল বিকালে রওনা হবে। সেখানে যদি তুহিন আজ বিকালে রওনা হয়ে আজ রাতেই বাড়ি ফেরে তাহলে সবাই বেশ সারপ্রাইজড হবে। আর সবচেয়ে বেশি সারপ্রাইজড হবে দীপ্তি।

বাংলাদেশ, মধ্যরাত আড়াইটা। মাত্র ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে তুহিনের। এয়ারপোর্টের বাইরে এসে উবারে ট্যাক্সি বুকিং দিয়ে দেয় তুহিন। তারপর বাসার সার্ভেন্টকে ফোন দিয়ে বললো চুপিচুপি সদর দড়জা খুলে দিতে। আর ভুলেও যাতে ড্রয়িংরুমের আলো না জ্বালায়। বলেই তুহিন ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে। এয়ারপোর্ট থেকে তুহিনের বাসায় যেতে প্রায় আধাঘন্টা মতো সময় লাগে। কিন্তু মধ্যরাত হওয়ায় আর রাস্তা যানজটহীন শুনশান হওয়ায় বিশ মিনিটেই বাসার সামনে চলে আসে তুহিন। ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সিওয়ালাকে বিদায় দিয়ে গেট পেড়িয়ে সোজা বাড়ি ঢুকে যায় তুহিন। গেট দিয়ে ঢোকার সময় তুহিন লক্ষ্য করে, ওর রুমের জানালা বরাবর একটা মই দাড় করানো। আর জানালার কপাট দুটোও খোলা। দীপ্তি তো জানালা খুলে ঘুমায় না। আর জানালার বাইরে মই’ই বা দাড় করানো কেনো? এসব ভাবতে ভাবতেই তুহিন মেইনডোরের কাছে চলে যায়। মেইনডোর খুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সার্ভেন্ট। তুহিন বাসায় ঢুকতেই সার্ভেন্ট মেইনডোর লাগিয়ে দেয়। তুহিন সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমের দড়জাটাও খোলা? দীপ্তি তো দড়জা খুলে ঘুমায় না। খানিক আবছা সন্দেহ নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় তুহিন। খোলা দড়জা দিয়ে ডিম লাইটের খানিক আলো করিডোরে পড়েছে। তুহিন হাটতে হাটতে নিজের রুমের দড়জা অবধি গিয়েই থমকে যায়। একদম পাথরের মুর্তি হয়ে গেছে তুহিন। তার শ্বাস-প্রশ্বাসও যেনো কিছুতে আটকে গেছে নিষ্ঠুরভাবে। এ কী দেখছে তুহিন? দীপ্তি একটা ছেলেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে হাসছে? ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট দীপ্তির মুখটা। আর সে মুখে স্পষ্ট হাসির ছাপ। তুহিন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আকস্মিক ভাবেই যেনো বোবা হয়ে গেছে তুহিন। কী দেখছে এসব? দীপ্তি এই মধ্যরাতে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাসছে? এ তুহিনের ভ্রম নয়তো? তুহিন আঙুল দিয়ে চোখ দুটোকে প্রবলভাবে চাপ দেয় তারপর আবার তাকায় সামনে। না এ তার ভ্রম নয়। সামনের ভয়াবহ নির্মম দৃশ্য এখনও পাল্টায়নি। দীপ্তি জড়িয়ে ধরে আছে ছেলেটাকে। তুহিনের বুকটা কেমন যেনো ছিড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড ব্যাথা, অসহনীয় ব্যাথা অনুভব করছে তুহিন। সে অদৃশ্য, অসহনীয় ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তুহিনের। দীপ্তিকে জড়িয়ে থাকা ছেলেটা দীপ্তিকে ছেড়ে হেটে জানালার কাছে যায়। তারপর জানালা গলে নিচে নেমে যায়। যাবার সময় হাত নাড়িয়ে দীপ্তিকে বিদায়ও জানায়। দীপ্তিও হাসিমুখে বিদায় দেয় ছেলেটিকে। তুহিন দাঁড়িয়ে ভাবছে ছেলেটা জানালা দিয়ে নামলো কীভাবে? তখনই তুহিনের মনে পড়ে বাইরে তার জানালা বরাবর দাড় করানো মইটার কথা। তুহিন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রানহীন স্তব্ধ হয়ে। নিঃশ্বাস ও যেনো পড়ছে না তার। শুধু চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।
দীপ্তি দড়জার দিকে তাকাতেই তুহিনকে দেখতে পায়। তুহিনকে দেখেই চরম চমকে যায় দীপ্তি। তার বিস্ময়ের সীমা থাকেনা। দীপ্তি প্রথমে ভাবে, ভুল দেখছে বোধহয়। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দীপ্তি রুমের আলো জ্বালিয়ে দেয়। তুহিন দড়জায় দাঁড়িয়ে আছে, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। পাথর হয়ে গেছে সে।

দীপ্তির বুকটা কেপে ওঠে তুহিনকে দেখে। তুহিনের এমন চেহারা দেখে ভয় পেয়ে যায় দীপ্তি। এক অজানা কালভয় গ্রাস করে নেয় দীপ্তিকে। দীপ্তি তুহিনের সামনে গিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে, ” তুমি কখন এলে? তোমার তো কাল রাতে আসার কথা ছিলো। ”

দীপ্তির কথা বলার শব্দে তুহিনের থমকে যাওয়া ভাবটা কেটে যায়। তুহিন নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজে নিজেকে বলে, ” জীবনে আরেকবার আরেক নারীর কাছে বাজে ভাবে ঠকে গেলি তুহিন। তোর কপালে নারীদের কাছ থেকে ঠকে যাওয়াই লেখা আছে। নারীদের জয় করা লেখা নেই। ”

দীপ্তির অজানা ভয়টা মরন কামড় দেয় দীপ্তিকে। তুহিন দীপ্তিকে ভেতরে ঠেলে রুমের দড়জা বন্ধ করে দেয়। তারপর নিজেকে শান্ত করে, পাথর গলায় বলে, ” কদিন ধরে চলছে এসব? ” তুহিনের কথা বলার এই শান্তভাব, যেকোনো মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিতে পারে মৃত্যুভয়। এতোটাই ভয়ংকর তুহিনের এই শান্তকন্ঠ।

তুহিনের প্রশ্নটায় দীপ্তির সে অজানা ভয়টা এবার আঘাত হেনেই দেয় দীপ্তির ওপর। দীপ্তির সারা শরীরে কাঁপন উঠে গেছে। দীপ্তি ভয় পেয়ে; কাঁদো গলায় বলে, ” তুমি কীসের কথা বলছো তুহিন? ”

তুহিনের চোখে পানি জমে আছে। মুখটা লাল হয়ে গেছে। মুহুর্তেই তুহিনের শরীর কাপা শুরু করে দেয়। রাগে থরথরিয়ে কাপছে তুহিন। চোখদুটো থেকে অশ্রু নয় বরং গড়িয়ে পড়ছে হিংস্রতা। তুহিন হুংকার দিয়ে ওঠে, ” কুত্তারবাচ্চা কী বলছি বুঝতে পারছিস না? ”

দীপ্তির হৃদস্পন্দন স্পন্দন ভুলে থমকে যায়। দীপ্তি ভালো করেই বুঝে যায় তুহিন কী বলছে, আর কেনো বলছে। দীপ্তি তুহিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তুহিনের বাহু ধরে বলে, ” তুহিন আমি তোমায় সব বলছি। প্লিজ ঠান্ডা হয়ে বসো। ”

তুহিন দীপ্তিকে সজোরে ধাক্কা মেরে বলে, ” কী বলবি আমায়? সারারাত কীভাবে নিজের নাগরের সাথে ইঞ্জয় করলি সেটা বলবি? নাকি কীভাবে আমার অন্ধবিশ্বাসের ফায়দা তুলে আমার সাথে বেইমানি করলি সেটা বলবি? কী বলবি আমায়? ” মারাত্মক চিৎকারে বাক্য মিশিয়ে কথাগুলো শেষ করে তুহিন। তুহিনের রাগে দীপ্তির বুক শুকিয়ে গেছে। দীপ্তি এর আগে তুহিনকে কখনও রাগতেই দেখেনি। তুহিনের এরুপ হিংস্রতা তো চিরঅচেনা দীপ্তির কাছে। এ তুহিন ঠিক কে তা ঠাহর’ই করতে পারছে না দীপ্তি। দীপ্তি তুহিনকে একনাগারে শুধু বলছে, ” আমার কথাটা শোনো প্লিজ। ”

তুহিনের রাগে ঘৃনায় নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তুহিন প্রচন্ড রাগে গলা টিপে ধরে দীপ্তির। তুহিন গর্জে ওঠে, ” কীসের অভাব ছিলো? কীসের অভাব ছিলো? বলনা? কীসের অভাব ছিলো যে তোর আরেকটা পুরুষের দরকার পড়লো? ” কয়েক মুহুর্ত বাদে তুহিন দীপ্তির গলা ছেড়ে দেয়। দীপ্তি শ্বাস নিচ্ছে। শ্বাসই টেনে তুলতে পারছে না সে। সে শরীরের জোর হারিয়ে ফেলেছে। বেশ জোরে আর শক্ত করে দীপ্তির গলা টিপে ধরেছিলো তুহিন।

তুহিন দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করে, ” ছেলেটার নাম কী? ”
দীপ্তি হাপাতে হাপাতে বলে, ” একবার আমার কথাটা শুনো প্লিজ। পায়ে পড়ছি তোমার, একবার অন্তত আমায় বলতে দাও। ”

তুহিন শরীরে সমস্ত শক্তি কব্জিতে টেনে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় দীপ্তির গালে। দীপ্তি ছিটকে গিয়ে খাটের পায়ে পড়ে। দীপ্তির কপাল আর ঠোট গভীরভাবে কেটে যায়। গালে তুহিনের হিংস্র পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে যায়। দীপ্তির দেহ আর মস্তিষ্ক দুটোই চাচ্ছে এই থাপ্পড় খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে কিন্তু দীপ্তি তা হতে দিচ্ছে না। দীপ্তি কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ায়। দীপ্তির পা দুটো অসম্ভব কাঁপছে। চোখ দিয়ে অঝোরে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। দীপ্তি এখনও অস্পষ্ট কাঁপাস্বরে বলছে, ” একটাবার আমার কথা শোনো প্লিজ। কথা বলার সময়টুকু অন্তত ভিক্ষে দাও আমায়। ”

দীপ্তির এ কথা তুহিনের রাগের মাত্রাকে আরো শতগুন বাড়িয়ে দেয়। তুহিন দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠো করে নেয়। খাটে একটা লাথি মেরে বলে, ” শুয়োরেরবাচ্চা ছেলেটার নাম কী? নাম বল। তোর সাফাই শোনার রুচি নেই আমার। আমি চাইনা তোর মিথ্যে আত্মসাফাই শুনতে। কোনো সাফাই তোকে গাইতে হবে না। ”

দীপ্তি চোখ বন্ধ করে। তারপর ভয়ার্ত কাপা কন্ঠে বলে, ” অনন্ত! ”

তুহিন বা হাত দিয়ে কপালের বা পাশটা ডলতে থাকে। খানিক বাদে ডলা থামিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পেছনের দিকে জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে মারতে দীপ্তিকে বলে, ” শোন তোর সুখে আমি কাটা হবো না। ডিভোর্স পেয়ে যাবি তুই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় তত তাড়াতাড়ি তোকে মুক্ত করে দেবো। ডিভোর্স না দেওয়া অবধি তুই এখানে থাক তোর বাপের বাড়ি থাক সম্পুর্ন তোর ব্যাপার। ”

কথাটা শুনে ধুপ করে বসে পড়ে দীপ্তি। তুহিন মুক্তির কথা বলছে? কে চাইছে ওর কাছ থেকে মুক্তি? কী বলছে তুহিন এসব? আমি কীভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া? বসে অঝোরে চোখের পানি ফেলছে আর এসব ভাবছে দীপ্তি। তুহিন রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার জন্য দড়জার দিকে পা বাড়ায়। তুহিন পা বাড়াতেই দীপ্তি তুহিনের একটা পা জড়িয়ে ধরে বলে, ” একটাবার অন্তত আমার কথাটা শোনো প্লিজ। একটা বার ব্যাখ্যার সুযোগও কী দেবে না আমায়? ”

তুহিন পা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে। দীপ্তি ছাড়ছে না। তুহিন দাঁত চেপে বলে, ” দেখ তোর এসব ভালোমানুষির নাটকটা বন্ধ কর। তুই অনেক স্কিলড এক্ট্রেস সেটা আজ ভালোভাবেই বুঝে গেছি। তোর সাথে এতোদিন এতোবার শারিরীক সম্পর্ক করলাম কই কোনোদিন তো বাধা দিলি না। পুরুষদের শরীর খুব ভালো লাগে না? ”

এই কথাগুলো না বলে তুহিন যদি দীপ্তিকে গলা টিপে মেরে ফেলতো তাহলেও বোধহয় দীপ্তির এতো কষ্ট হতো না। দীপ্তি আর বলার মতো কিছু খুজে পাচ্ছে না। তার মুখের ভাষাই যেনো কেড়ে নিয়েছে তুহিনের এই মারাত্মক কথাটা।

তুহিন একটানে পা সড়িয়ে নেয়। দীপ্তি মুখ থুবড়ে পড়ে মেঝেতে। ঠোটের কাটা যায়গাটা আরো খানিকটা কেটে যায়। তুহিন দীপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুই নাকি আমায় কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসতি? ওসব কথা কী শুধুই আমায় দুর্বল করার জন্য ছিলো? আমি তোকে অগ্রাহ্য করছিলাম, এড়িয়ে যাচ্ছিলাম, তোকে স্পর্ষ করছিলাম না তা সহ্য হচ্ছিলো না তোর। তাই না? তাই নিজের রূপ আর নিকৃষ্টতম মিথ্যা অভিনয় দেখিয়ে আমায় দুর্বল করে নিলি নাকি? এতো পাকা অভিনয় শিখেছিস কোথায় রে? কে শিখিয়েছে? আমায়ও বল। আমিও শিখি…। ” তুহিন আর কথা এগোতে পারে না। কান্না তার কন্ঠস্বর ছাপিয়ে উপরে উঠে যায়।

দীপ্তি ফ্লোর থেকে মুখ তুলে করুন দৃষ্টিতে তাকায় তুহিনের দিকে। তুহিন আর কিছু বলতে পারে না। তার গলা আটকে আসে তার। কিছুক্ষন কেঁদে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যায় তুহিন।

দীপ্তি ফ্লোরে বসে কাঁদছে। উঠে পাশের রুমে তুহিনের কাছে যাবার শক্তিটুকু অবধি পাচ্ছে না সে। সারা শরীর প্রচন্ডভাবে কাঁপছে দীপ্তির। তুহিনের কথাগুলো যেনো দুমড়ে-মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে দীপ্তির বুকটাকে। কী বলে গেলো তুহিন এসব? আমার কোনো কথা না শুনেই এভাবে আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে দিলো? ও কী করে এভাবে অবিশ্বাস করতে পারে আমায়? আর এভাবেই বা বিচার করতে পারে কীভাবে?

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here