প্রেমবিভ্রাট
৩০
তানভীর তুহিন
দেড় মাস পর।
রাত প্রায় ১০ টা বাজে। নেহাল আর আশিক ডিভোর্স পেপার নিয়ে এসেছে। তুহিন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে পেপারটার দিকে তাকিয়ে আছে। আশিক আহত কন্ঠে তুহিনকে বলে, ” আরেকবার ভেবে দেখ না। কী এমন ঝামেলা হলো যে সোজা ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছিস? ছেড়ে দিলেই তো সব শেষ। সবসময় ছাড়াছাড়িটাই সমাধান হয় না তুহিন। ভাই তুই ভালো নেই। দেখ, নিজের হাল দেখ। আঙ্কেলের সাথে সম্পর্কের ঠিক নেই তোর, ক্যারিয়ারের মা-বইন এক করে রেখে দিছিস, এভাবে যাযাবরের মতো একা একা থাকিস। কীভাবে বাচবি তুই? ভাই এভাবে বাঁচতে পারবি না তুই। ”
তুহিন অট্রহাসে। তাচ্ছিল্যের সুরে আশিককে উদ্দেশ্য করে বলে, ” দার্শনিক হয়ে গেছো তুমি? হুহ? আশিক দ্যা ফিলোসফার? ” কথাটা শেষ করতে করতেই তুহিন পেপারটায় সাইন করে দেয়।
আশিক কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। কীসের জন্য বলবে? যেটা আটকানোর জন্য এতসব বলা সেটা তুহিন ঠিকই করে দিয়েছে। আশিক পেপারটা হাতে নিয়ে বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর একটু যান্ত্রিক আর অভিমানি স্বরে বলে, ” যা ভালোবুঝিছেস তাই করেছিস। কাল সকাল ৯-১০ টার মধ্যেই পেপার দীপ্তির কাছে পৌছে যাবে। আমি আসছি তাহলে। ”
তুহিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ” হুম আয়। পেপার দীপ্তির কাছে যাবার সাথে সাথেই দীপ্তি সাইন করে দেবে। ও এটাই চাচ্ছিলো। ও পেপার সাইন করার পর তুই পেপারের যা করার করে নিস। আমার আর এসব দিয়ে কাজ নেই। ”
– ” আচ্ছা সমস্যা নেই। ” বলেই দড়জার দিকে হাটা ধরে আশিক।
তুহিন বলে, ” কাল দুপুর বারোটায় ফ্লাইট। বার্সেলোনা চলে যাচ্ছি। ভালো থাকিস। ”
আশিক থমকে যায় কয়েকমুহূর্তের জন্য। শাসনের স্বরে তুহিনকে বলে, ” ডিভোর্স দিচ্ছিস বলে চলে যাচ্ছিস? ভাই তোর ব্যাপার-স্যাপার কিছু বুঝছি না। নিজের ইচ্ছায় ডিভোর্স দিচ্ছিস এখন আবার নিজেই চলে যাচ্ছিস দেশ ছেড়ে? কেনো? হয়েছে কী তোর? ”
তুহিন অট্রহেসে বলে, ” তুই এতো চেঁচামেচি কেনো করছিস? আমি ডিভোর্সের জন্য যাচ্ছি না। ডিভোর্সের পরে বাবা ক্যাচাল শুরু করবে। মিডিয়ায় কন্ট্রোভার্সি শুরু হবে। যা আমার মোটেই ভালো লাগবে না। এমনিতেই মন-মেজাজ ভালো থাকেনা ইদানিং। তারপর ওসব দেখে আরো বেশি ফ্রাস্টেটেড হয়ে যাবো। তাই কিছুদিন এস ছেড়েছুড়ে বহুদুর ডুব দিতে চাই। নিরুদ্দেশ হতে চাই কিছু সময়ের জন্য।”
– ” কর যা ভালো লাগে। ”
তুহিন উঠে গিয়ে আশিককে জড়িয়ে ধরে বলে, ” থ্যাংকস শালা। চটজলদি ডিভোর্স পেপারটার জন্য। বউ-মেয়ে নিয়ে ভালো থাকিস। আবার দেখা হবে! ”
আশিক বলে, ” তুইও ভালো থাকিস। দেখা হবে আবার। ”
বেড়িয়ে যায় আশিক। একটু বাদে নেহালও বেড়িয়ে যায়।
সকাল ৮ টা বাজে। তুহিন আয়েশাকে ফোন করে। বার্সেলোনা যাবার আগে বাড়ির কাউকে জানিয়ে যাওয়া উচিৎ। সেকারনেই আয়েশাকে ফোন করা।
আয়েশা ফোন তুলতেই তুহিন বলে, ” হ্যালো আয়েশা। আজ দুপুরের ফ্লাইটে বার্সেলোনা চলে যাচ্ছি। আব্বু-আম্মুকে কিছু বলিস না। আমি বার্সেলোনা গিয়ে ফোন করে নেবো। ”
আয়েশা আর এসব নিতে পারছে না। কী এমন হয়েছে যে এসব হচ্ছে? আয়েশা চেঁচিয়ে ওঠে, ” কী হয়েছে ভাইয়া? কেনো করছিস এমন? আমায় অন্তত বল প্লিজ। ”
তুহিন বলে, ” কিচ্ছু হয়নি। ”
আয়েশার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। আয়েশা রেগে ফোন কেটে দেয়। তারপর সঙ্গে সঙ্গে ফোন দেয় দীপ্তিকে।
দীপ্তি ফোন তুলতেই আয়েশা বলে, ” জানু প্লিজ। অনেক হয়েছে। আর না। আমায় আজ অন্তত সবটা বল। কী হয়েছে তোর আর ভাইয়ার মধ্যে? খুব বেশি দেড়ি হয়ে যাবার আগে আমায় বল। প্লিয। ”
– ” আমি পারবো না। ”
– ” উফ! উফ! আল্লাহর দোহাই লাগে প্লিজ। আমার কসম লাগে আজ অন্তত বলে দে সবটা। ভাইয়ার অসম্মান হলে হোক। আমার কাছেই তো হচ্ছে অসম্মান। আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না। প্লিজ বল, প্লিজ। ”
দীপ্তি আর কিছু আটকে রাখে না। সবটা বলা শুরু করে আয়েশার কাছে। দীপ্তি বলা শুরু করে, ” তোর আর অনন্ত ভাইয়ার কিছুদিন আগে তুমুল ঝগড়া হয়েছিলো মনে আছে? যখন তুহিন বার্সেলোনা গিয়েছিলো সেমিনারে। আর ঝগড়াটা এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে তুই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলি, এমনকি কান্নাকাটিও করেছিলি। ”
– ” হ্যা মনে আছে কিন্তু আমার আর অনন্ত’র সাথে তোর আর ভাইয়ার ঝামেলার কী সম্পর্ক? ”
– ” যেদিন রাতে তুহিন বার্সেলোনা থেকে ফিরেছিল সেদিন রাতে অনন্ত ভাইয়া তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো। লুকিয়ে মই দিয়ে আমার রুমে চড়ে, আমার রুম থেকে তোর রুমে গিয়েছিলো মনে আছে? ”
– ” হুম মনে আছে। তো? ”
– ” ভাইয়া যখন যাচ্ছিলো তখনই তুহিন চলে আসে। আর ভাইয়া তোদের মধ্যকার ঝগড়া মিটিয়ে দেবার জন্য আমায় থ্যাংকস বলে জড়িয়ে ধরেছিলো। তুহিন ঐ অবস্থায় আমাকে আর অনন্ত ভাইয়াকে দেখে নেয়। আমায় কিছু বলার সুযোগ দেয়নি তুহিন। আজে-বাজে কথা বলেছে, বিশ্রি নোংরা অপবাদ দিয়েছে। হাজারবার বলেছি কথাটা একবার শোনো। ও শোনেনি। মেরেছেও। আমি কীভাবে বলতাম তোকে কথাটা? তোর ভাই তোর প্রেমিককে আমায় জড়িয়ে ধরতে দেখে আমায় বাজারি মেয়ে বলেছে, আমায় মেরেছে, নানাধরনের নোংরা অপবাদ দিয়েছে, যেখানে অনন্ত ভাইয়া আমার ভাইয়ার বন্ধু। আমার প্রতিবেশি যাকে আমি নিজের ভাই মনে করি। আসলে তুহিনেরও দোষ নেই। ওর যায়গায় আমি দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো আমিও করতাম এমন। ”
রাগে আয়েশার গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। ওর জন্য এতসব। অথচ কেউই এই কথাটা ওকেই বলেনি। আয়েশা দাত খিটে চিৎকার দিয়ে বলে, ” সামান্য একটা কথা নিয়ে তোরা কী করে ফেললি? আমায় অন্তত একবার বলতে পারতি। ”
– ” কীভাবে বলতাম, চাচ্ছিলাম না ওর অসম্মান হোক। আর আজও বলতাম না। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি তুহিনকে ছাড়া। আর পারছি না ওকে ছাড়া থাকতে। গত পরশু দিন জানতে পেরেছি আমি প্রেগন্যান্ট অথচ তোদের কাউকে জানাতেই ইচ্ছে করেনি। আর জানিয়েই বা কী লাভ? যার জানার কথা সে নিজেই এসব জানতে চায় না। আর জানলেও হয়তো ভেবে নেবে, এটা আমার আর আমার অন্য প্রেমিকের ফষ্টিনষ্টির ফসল। ”
কথাগুলো বলেই চাপাকষ্টের দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দীপ্তি।
আয়েশা চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। একটা মেয়ের কাছে যে এই পরিস্থিতিটা ঠিক কতটা যন্ত্রণাদায়ক। তা একটা মেয়ে হয়ে খুব কড়া ভাবে অনুভব করছে আয়েশা।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “