#বিনি সুতোর টান,পর্ব-১৯,২০
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৯
আমি দ্রূত সেদিকে নজর দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে কাঁপতে লাগলাম। এলিসন আমার লেখা ডায়রিটা কামড়াচ্ছে। তার মানে নীল জ্যোতিষি না, সে আমার লেখা ডায়রিটা পড়েছে। ডায়রিটা বাসা থেকে গতকালকেই নিরাকে দিয়ে আনিয়েছিলাম। তাই তো বলি ছোটো বেলার সে আবেগের কথা উনি কী করে জানলেন। কোনো এক ফাঁকে ডায়রিটা পড়ে আমার কাছেই হিরো সাজা হচ্ছিল। যদিও একদিকে ভালো হয়েছে কারণ উনাকে ঘিরে খন্ড আবেগের টুকরো গুলো আমি ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছিলাম। তিনি সেটা জানতে পেরেছে এটা মন্দ নয়। বরং উনার আচরণে বুঝতে পারব উনি আমায় চায় কি’না। তবে ডায়রি পড়ে জ্যোতিষি সাজার বাহাদূরিটা না নিলেও পারত। আচ্ছা নীল কী আমায় ভালোবাসে নাকি শুধুই তার ভালোবাসার সন্নিবেশ মিহিকে জড়িয়ে! তাকে নিয়ে আমার কল্পনার বিস্তর এতই গভীর হয়েছে যে আমি তাকে ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছি না। মিহি নীলের মতো মানুষকে ছেড়ে কী করে গেল আমি সেটাই ভাবছি। আর নীলের মনে আমি আসবই বা কী করে, মিহির প্রতি তার প্রবল টান কখনই হয়তো মৃদু হবে না। এদিকে বিড়ালটা আমার ডায়রিটা যেভাবে কামড়াচ্ছে মনে হচ্ছে ডায়রি আর আস্ত থাকবে না। কোন জন্মের শত্রুতা এ বিড়ালের সাথে ছিল আমার জানি না। ঘুরে ফিরে সেই আমার পিছেই লাগতে হয় এ মহাশয়ের। আবার দাবড়ানি দিতে গেলে তেড়ে এসে কামড়ে ধরবে। এমনিতেই কোমড়টা ব্যথায় টনটন করছে। তাই বিড়ালের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে হেসে বললাম
“এলিসন বাবা আমার ডায়রিটা কামড় দিও না। এলিসন লক্ষী সোনা আমার, আমার ডায়রি আমাকে দিয়ে দাও। তুমি তো আমার বাবাটা। কলিজার পাখিটা।”
কিন্তু এলিসনকে যতই আমি তেল দিচ্ছিলাম সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে তার আপন কর্মে ব্যস্ত। এদিকে পা টা ভালো না, নহয় তাকে আমি ঠিকেই শায়েস্তা করতাম। আমি আমার মতো এলিসনকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আমার কথায় হয়তো তিনি বেশ বিরক্ত। লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠল। আমি পুনরায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম। নীল পাশের রুম থেকে এসে এলিসনকে কোলে নিয়ে আমাকে বলল
“আপনি এত চিৎকার দেন কেন? সমস্যা কোথায় আপনার? কী হয়েছে বলুন তো। ও তো কোলে উঠেছে আর তো কিছু না। চিৎকার না দিয়ে আদর করলেই পারতেন।”
“হার বজ্জাত একটা বিড়াল। আমার ডায়রিটা কামড়ে ছিড়ে ফেলেছে। একে করব আমি আদর? পারলে বার্বিকিউ করে খেয়ে ফেলতাম। আর আপনি আমার অনুমতি ব্যাতীত আমার ডায়রি পড়েছেন তাই না? ডায়রি পড়ে এমন ভাব নিয়েছেন যেন আমার মন পড়তে পারেন। আপনি আসলেই একটা…. ”
নীল ভ্রূ জোড়া কুচকে বলল
“আমি কী জানতাম নাকি এটা আপনার ডায়রি। ডায়রিতে কোনো নাম নেই। ভাবলাম আমার বাসায় যেহেতু ডায়রিটা আছে আমাদেরেই হবে। তাই ডায়রি পড়ে বুঝার চেষ্টা করছিলাম ডায়রিটা কার। প্রথম দিকে পড়ে মনে হয়েছিল ডায়রিটা হয়তো আমার বড় আপু লিথির। তাই আরও আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম। পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম এটা আপনার ডায়রি। এখানে আমি কেবল নির্দোষ। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আর আমাকেই দোষ দেওয়া হচ্ছে? আর আমি একটা কী বলুন।”
আমি মুখটাকে বাঁকিয়ে বললাম
“আপনি আমার মাথা।”
নীল হেসে উত্তর দিল
“আমি আপনার মাথা হলে আপনার মাথায় এত গোবর থাকত না। আর আপনার গোবরও শুকিয়ে ঘুটে হয়ে গিয়েছে তাই কোনো বুদ্ধি নেই। যদি গোবরে একটু জল থাকত তাহলে হয়তো সেটা সারে পরিণত হতে পারত। তাই বলব আমি আপনার মাথা হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
আমি রেগে বললাম
“তাহলে আপনি আমার মুন্ডু।”
নীল হেসে জবাব দিল
“আমি আপনার স্বপ্নের হিরো। মাথা, মুন্ডু না। সকালের নাস্তা করে নিয়েন। আমাকে একটু অফিসের কাজে সকাল সকাল বের হতে হবে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি আপনার জ্বালায়।”
“আমি জ্বালিয়েছি মানে?”
“সেটা তো আপনিই ভালো জানেন কীভাবে জ্বালিয়েছেন। গেলাম আমি পরে কথা হবে। আর এলিসনের মন জয় করুন। এলিসনের মন জয় করতে পারলেই নীল সাহেবের মন জয়ের টিকেট পাবেন। ডায়রির শেষ পাতায় লিখেছিলেন না বুড়োর মন কীভাবে জয় করবেন। আমি আপনাকে বুড়োর মন জয় করার উপায় বলে দিলাম। তবে আপনি আমার বড্ড ছোটো। হয়তো খনিকের আবেগ থেকে একটু পাগলামি করছেন। এ আবেগ চলে গিয়ে বাস্তবতা যখন ফিরে আসবে তখন ঠিক মিহির মতোই আপনি চলে যাবেন। আপনার মুক্ত ডানা আছে আমি সেটাকে মুক্ত করেই দিলাম। আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন। আপনার জানার দরকার আছে আমি আপনাকে পছন্দ বা ভালোবাসি কি’না। উত্তরে বলব ভালোবাসা বিষয়টা একদম আপেক্ষিক হুট করেই আসে। তবে আপনাকে আমার ভালো লাগে। ছটফটে স্বভাবের জন্য। মিহির কিছু আচরণ আপনার মধ্যে আমি লক্ষ্য করেছি। তাই বলে মনে করবেন না আপনার মাঝে আমি মিহিকে আবিষ্কার করছি। মিহি মিহির জায়গায় আপনি আপনার জায়গায়। আপনার ভালোলাগাকে, পাগলামি গুলোকে আমি সম্মান করি,সহ্য করি। তবে আমি আপনাকে এখনও ভালোবাসতে পারিনি। ভালো যদি কখনও বাসতে পারি আমি আপনাকে বলব। বেশ গুছিয়ে উপস্থাপন করেই বলব। তবুও শেষ ধাপে গিয়ে আরেকটা বিষয় এলার্ট করব আপনার এটা আবেগ নাকি সম্পূর্ণই আপনার চাওয়া আগে আবিষ্কার করুন। আমার প্রতি জমে থাকা বিস্তরণ গুলো আপনার আবেগ থেকে কাজ করছে নাকি মস্তিষ্ক থেকে সেটা আগে ভাবুন। আমার সাথে যদি আপনার কিছু হয় ও সারাজীবন মানুষ আপনাকে বলবে বুড়োর বউ। বয়সের ফারাক অনেক, ১৮ বছরের মতো। তাই ভেবে চিন্তায় এগুবেন। আমি আপনার পাশে একজন বন্ধু হিসেবে ছিলাম আছি থাকব। বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে দিলাম এজন্য যে আপনি গোলক ধাঁধায় না থেকে যেন সুন্দর সময় বের করে ভাবতে পারেন। এবার আমি গেলাম।”
নীল কথা গুলো বলে বাইরে চলে গেল। নীলের এ কথাগুলো শুনার পর থেকে কেমন জানি লাগছে। সত্যিই কী এটা আমার আবেগ থেকে হচ্ছে নাকি না। এ বয়সে আবেগী হওয়া অস্বাভাবিক না। তবে নীলের বয়স বেশি হলেও তাকে আমার ভালো লাগে। তার কথা তার চালচলন তার প্রতিটা বিষয় আমার মনকে নাড়া দেয়। বলুক না বুড়োর বউ। আমি যদি বুড়োকে নিয়ে সুখী হতে পারি তাহলে তো সমস্যা নেই। আগের যুগে এরচেয়ে বেশি পার্থক্য নিয়ে বিয়ে হত। তাদের বৈবাহিক জীবনও সুখের। আমি নীলকে সত্যিই ভালোবাসি আর সেটা নীলকে বুঝাতে হবে যে করেই হোক। নীলের মধ্য থেকে সকল সংশয় আমি দূর করব। আমিও প্রমাণ করব এটা আমার আবেগ না এক রাশ বাস্তবতার রঙিন ছোয়া।
বেলা বাড়তে লাগল। মাজেদা খালার গলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আন্টিও কী নিয়ে যেন মাজেদা খালাকে থামতে বলছেন তবে খালা থামার পাত্রী না তিনি তার মতো কথা বলেই যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটা কথা কানে আসলো তিনি আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন
“আঁচল আম্মারে আপনার পোলার বউ বানাইয়া ফেলেন। মাইয়া খারাপ না। ছোডো থেইকা কাজ করি বাসায়। মাইয়া ভালোই। তবে বাবাজির অনেক ছোটো হইব। কিন্তু বয়স কিছুই না। আমার বুইড়ার বয়সও আমার থেকে ২০ বছর বেশি। তাতে কী বুইড়ারে লইয়া তো আমি ভালাই আছি। আফা দেহেন না কী করা যায়।”
মাজেদা খালার কথা শুনে আন্টি জবাব দিলেন
“আরে মাজেদা বলো না…আমি তো মেয়েটাকে প্রথম দেখেই চেয়েছিলাম আমার ছেলের বউ হোক। কিন্তু আমার হতচ্ছাড়া ছেলেকে বলার পর রাজি হয়নি। এ বাসায় কেন রেখেছি আঁচলকে বুঝতেছিস না নাকি? এ বাসায় রেখেছি মেয়েটাকে দেখে নীলের মনে যেন একটু ভালোবাসা জন্মে তাই। কাল রাত থেকে দেখলাম দুজন বেশ কথা বলছে। আমি একটু পর পর আড়ি পাততেছিলামি। সকাল পর্যন্ত কথা বলেছে। দোয়া কর ছেলেটা যেন আঁচলকে পছন্দ করতে শুরু করে। ”
আন্টির কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল এক লাফে আকাশে উঠে যাই। আমার আবেগ কে দেখে। এমন শ্বাশুড়ি পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। আমার খুশি ধরে রাখার কোনো ইয়াত্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মানুষ মদের নেশায় মাতাল হয় আমি হয়েছি খুশির নেশায়। আর মাতাল হলে যা হয় তাল হারায়। আমি তাল হারিয়ে এমন কান্ড করে বসেছি যা করার পর নিজেই লজ্জায় মাটির নীচে চলে যেতে মন চাচ্ছিল।
চলবে?
#বিনি সুতোর টান
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২০
আমি তাল হারিয়ে এমন কান্ড করে বসেছি যা করার পর নিজেই লজ্জায় মাটির নীচে চলে যেতে মন চাচ্ছিল। আবেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম
“আন্টি আমি নীলকে অনেক পছন্দ করি। আপনি শুধু আমাকে বলে দিন আমি কীভাবে নীলের মন জয় করব। নীলকে নিয়ে আমার স্বপ্ন বুনতেছি। এ স্বপ্ন আমি ভাঙতে দিব না। আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেন একটু।”
কথাগুলো মনে মনে বলতে চেয়েছিলাম তবে কথাগুলো বেশ জোরালো হয়ে গেল। এতই জোরে হয়ে গেল যে মাজেদা খালা আর আন্টির কান পর্যন্ত চলে গেল। মাজেদা খালা আর আন্টি দৌড়ে আমার রুমে আসলেন। মাজেদা খালা এসেই বলতে লাগলেন
“হুরো বেডি একটু তো লজ্জা সরম রাখবা। ভালোবাসার কথা কী কেউ এত জোরে বলে। তোমার আর আক্কেল হলো না৷ মেয়ে মানুষ একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চলতে হয়। বুদ্ধিই নেই তোমার। এভাবে কেউ চিল্লায়?”,
মাজেদা খালার কথা শুনে লজ্জায় আমি নুইয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে মাটির নীচে চলে যাই। এত বোকামি করলে কী হয়? কেনই যে এত বোকামি করলাম এখন বেশ আফসোস হচ্ছে। তবে আফসোসটা কেটে গেছে আন্টির কথায়। আন্টি বলে উঠল
” মাজেদা চুপ কর তো। তুই ও তো কম যাস না।এসেই কথা শুনানো শুরু করছিস। ভুলে যাবি না এ আমার পুত্রবধু। কিছুদিন পর নীলের সাথে ওকেই বিয়ে দিব। তুই তোর কাজে যা। ”
মাজেদা খালা আন্টির কথায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। কাজে যাওয়ার কোনোরকম ইয়ত্তা তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না৷ তিনি ঘটনাস্থলে আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাচ্ছেন এটা বেশ ভালোই বুঝা যাচ্ছে। তবে তার ইচ্ছাকে ক্ষীণ করে আন্টি আবারও বলে উঠলেন
“কী রে মাজেদা এখনও দাঁড়িয়ে আছিস যে? কাজ নিয়ে হেলাপ্যালা একদম ভালো লাগছে না। তোকে তো বললাম গিয়ে কাজ করতে। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কুটনামি করতে হবে না।”
মাজেদা খালা এবার আর দাঁড়ানোর সাহস পেলেন না। রুম থেকে দ্রূত বেগে বের হলেন। কী যেন বিড়বিড় করছিলেন। হয়তো মনে মনে আন্টিকে গালমন্দ করছিলেন। তবে এদিকে এবার আন্টির সম্মুখীন হয়ে আমার বেশ লজ্জা লাগছে। নিজেকে অনেকটা সামলেও আন্টির চোখের দিকে তাকাতে পারলাম না। লজ্জায় শুধু ধর অবনতই হচ্ছিল। আন্টি আমার পাশে বসে আমার থুতুনিটাতে হাত দিয়ে উপরে তুলল। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আন্টি হাসতে হাসতে বলল
“প্রেমিকের মন জয় করতে হলে এত লজ্জা পেলে চলবে না৷ নিজেকে সামলাও। আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি নীলকে ভালোবাসো কথাটা শুনে। তোমার বয়সী মেয়েদের জন্য নীলের বিয়ের কথা বললে অনেক কথা শুনতে হত বয়স নিয়ে। যদিও আমি চেয়েছিলাম নীল যাকেই বিয়ে করুক একটা বিয়ে সে করুক। তার বউ হোক, সংসার হোক। পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন কিছুকে আঁকড়ে ধরুক। তবে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। আমি লক্ষ্য করেছি নীল তোমাকে নিয়ে বেশ ভাবে। তোমার প্রতি বেশ যত্নশীল। ঐ যে তোমাকে টেক কেয়ার করার জন্য একটা মেয়ে নিয়ে আসলো। তোমার সাথে গতকাল সারারাত কথা বলল। তোমার খেয়াল রাখছে। এ কাজগুলো নীল অনেকদিন পর করছে। আমার মনে হয় নীল তোমাকে পছন্দ করে তবে অনুভব করতে পারছে না। তুমি একটু নীলের পছন্দ মতো চলো দেখবে তুমি ওর মন জয় করতে পারবে। আর শুনো আমি তোমার ভালো শ্বাশুড়ি হব ডাইনি শ্বাশুড়ি না। তোমার যা সাহায্য লাগে আমি করব।”
আন্টির কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এত ভালো মানুষ দুনিয়ায় এখনও আছে ভাবতেই অবাক লাগে। কী সুন্দর করে নিজের ছেলেকে পটানোর বুদ্ধি দিচ্ছে। এ তো মেঘ না চাইতেই জল। আমি লাজুক কণ্ঠে বললাম
“আন্টি…”
তিনি আমার কথায় ব্যাগরা দিয়ে বলে উঠলেন
“আন্টি না মা ডাকো। আন্টি ডাকলে কোনো সাহায্য পাবে না। মা ডাকলে সর্বাত্মক সাহায্য পাবে। এবার বলো কী বলতে চেয়েছিলে?”
আমি আবেগী হয়ে গেলাম উনার কথা শুনে। বসেই উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। কতদিন মায়ের আদর আমি পাই না। মাকে হারানোর পর কাউকে এভাবে জড়িয়ে ধরার সুযোগও পাইনি। আজকে নীলের মাকে জড়িয়ে ধরে যেন আমার বেশ প্রশান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে আমি নতুন মা পেয়েছি। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। উনাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম
“আমি আপনাকে মা বলেই ডাকব। আমার তো মা নেই। মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগও হয়নি এত। কতদিন মায়ের ভালোবাসা না পেয়ে আমার মনটা তপ্ত হয়ে আছে। আমার কলিজাটা এখন আপনাকে জড়িয়ে ধরে শান্তি লাগছে। নীলকে পাই আর না পাই আপনাকে আমি হারাতে চাই না। আপনি যেন সবসময় আমার মায়ের জায়গায় থাকেন। ”
নীলের মা আমাকে আরও জোরে চেপে ধরে বলল
“মেয়েটা আমার বিদেশ থাকে। পাঁচ বছর হয়ে গেল দেশে আসে না। মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে না পারার কষ্টটা এখন অনেকটা কমে গেছে। আমি তোমার মা সবসময় থেকে যাব। আর নীলকে পাবে না মানে? আলবাদ পাবে। আমি যা বলব সে অনুযায়ী কাজ করবে। নীলের মন আস্তে আস্তে গলে যাবে। মা মেয়ে মিলে একটা বুড়ো ছেলেকে পটাতে পারব না তা কী হয় নাকি।”
আমি নীলের মায়ের কথা শুনে হালকা হেসে বললাম
“আমার নীলকে বুড়ো বলবেন না মা। ও যথেষ্ঠ ইয়াং। আপনি ওকে শুধু শুধু বুড়ো বলছেন। এবার আমাকে বলেন কী করতে হবে। ”
নীলের মা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“নাগরের প্রেমে এতই মগ্ন যে এখন তাকে কিছু বললেই গা জ্বলে তাই না? নাগরকে পেয়ে আমাকে না ভুললেই হবে।”
“কী যে বলেন না মা। ”
“শুনো নুরা তো আসে তোমার পরিচর্যা করতে। ও আজকে বিকেলে আসবে বলল। বিকেলে আসলে আমি তোমাকে একটা নীল শাড়ি দিব। ওকে বলবে কোনোরকম পরিয়ে দিয়ে তোমাকে সাজিয়ে দিতে। আর চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে দিতে বলবে। নীলের গাঢ় কাজল পছন্দ। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ওর সামনে পরিপাটি হয়ে থাকবে৷ ও পরিপাটি পছন্দ করে। এটুকু শুধু মাথায় রাখো। এখন আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি। তুমি আরাম করে নাস্তা করো। আর আমাদের পরিকল্পনা কেবল আমাদের মধ্যেই থাকবে আর কেউ যেন না জানে। ”
আমি মাকে আশ্বস্ত করে বললাম
“একদম চিল থাকুন কেউ জানবে না।”
মা আমাকে চোখ টিপে দিয়ে রুম থেকে বের হলেন। মা বের হওয়ার পর আমার কেমন যেন লাগতেছিল। এত ভালো একজন মানুষের ছেলের বউ হব ভাবতেই যেন বুকটায় শীতলতা ছুয়ে যায়। প্রচন্ডরকম এক অনুভূতি এসে আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।
সূর্যটা হেলে পড়ে বিকেলের সূচণা হলো। নুরা এসে আমার সাথে গল্প জুড়ে দিল। মেয়েটা বেশ ভালো। কাজও বেশ ভালো করে আর গল্পও বেশ ভালো করে। ওর সাথে কাটানো সময়টা বরিং লাগে না। আজকে নুরা আসতেই মা ওকে শাড়ি দিয়ে গেল। মাকে শাড়ি দিতে দেখে নুরা হেসে বলল
“আজকে কী কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান ম্যাম?”
আমি হেসে বললাম
“গুরুত্বপূর্ণ মিশন আছে আজকে। আমাকে একটু সুন্দর করে সাজিয়ে দিও আর শাড়িটা পরিয়ে দিও। তুমি করে বললাম কিছু মনে করো না৷ ”
নুরা হেসে জবাব দিল
” আরে না ম্যাম কী মনে করব৷ আমি সবকিছু গুছিয়ে করব। আপনি নিশ্চিন্তায় থাকুন। নীল সাহেব কোথায়?”
“অফিসে।”
টুকটাক নুরার সাথে কথা হচ্ছে। এর মধ্যে নুরা আমাকে সাজিয়ে দিল, শাড়ি পরিয়ে দিল। সব কাজ শেষে নিজেকে আয়নায় দেখলাম। জীবনের প্রথম আমি এত সেজেছি। নিজেকে দেখে অন্যরকম লাগছিল। নুরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“মাশআল্লাহ ম্যাম অনেক সুন্দর লাগছে। স্যার আজকে চোখ ফেরাতে পারবে না।”
নুরার কথায় আমি মুচকি হাসলাম। নুরা তার কাজ শেষে চলে গেল। মা এসে আমাকে দেখে হা করে বলল
“এত সুন্দর মেয়ে আমার আর সেই মেয়ে কি’না পাগলের মতো থাকত। শুনো একটু পরেই তোমার উনি আসবে প্রস্তুত থাকো। এসেই চা চাইবে। তোমার তো পা ভালো না, নাহয় তোমাকে দিয়েই চা পাঠাতাম। তবে সমস্যা নেই আমি চা পাঠিয়ে দিব তুমি তারপর ওর রুমে যাবে। এরপর কী করবে তোমার কাজ। আমি এতকিছু শিখাতে পারব না। ”
আমি মায়ের কথা শুনে হাসলাম শুধু।
কলিং বেলের আওয়াজ আসলো কানে। আওয়াজটা আসতেই বুকটা ধুক করে উঠল। নীল এসেছে। নীল এসে ফ্রেশ হলো। মায়ের কাছে চা চাইলো। মা চা টা দিয়ে আমাকে এসে বলল
“যাও এবার ওর ঘরে যাও।”
আমি মায়ের কথায় হুইল চেয়ার নিয়ে ওর ঘরের দিকে এগুতে লাগলাম। যতই এগুচ্ছিলাম ততই আমার শরীর কাঁপতে লাগল আর বুক ধুকধুকানি শুরু হলো৷ অবশেষে সমস্ত সাহসের সন্নিবেশ ঘটিয়ে আমি ওর ঘরে প্রবেশ করলাম।
চলবে?
21 22 part koi kobe diben , taratari dien plzz
Please next part gula taratari den ???
Next part gulo please taratari den
Thik thak golpo na dite parle kno den bolun to