মায়ার জীবনী #Nadia Afrin পর্ব:১

0
1540

স্বামীর সামনে দিয়ে আমি যখন আমার প্রাক্তনের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না আমার স্বামীর।

দীর্ঘ চার বছর সংসার জীবন পার করে বিচ্ছেদ ঘটে আমাদের।
নিঃসন্তান আমি,প্রেমিক পুরুষের হাত ধরে পারি দেই নতুন জীবনে।
—-
সাল তখন ২০১০।মাস জৈষ্ঠ।কাঠফাটা রোদে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখি অনেক লোকের সমাগম আমার বাড়িতে।
বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই দুজন মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে কী যেন বলতে লাগলো।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম।

মধ‍্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আমি মায়া।
লোকে বলতো,নাম মায়ার পাশাপাশি আমার মুখশ্রিতেও ছিল অসীম মায়া।
সে মায়াতেই ডুবেছিল আমার প্রাক্তন প্রেমিক রায়ান।
দীর্ঘ তিন বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের।
এরপর,,,,,,

এরপর মা-বাবার ইচ্ছেতে উচ্চবিত্ত ঘরে বিয়ে হলো আমার।
সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধু মাত্র মার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজী হই আমি।
আমার বাবা ছিলেন ভীষণ রাগী।তার কথার অবাধ‍্য হওয়া মানে মায়ের জীবনে অশান্তি ডেকে আনা।
আমি হয়ত পারতাম রায়ানের হাত ধরে সুখের জীবনের খোঁজে পাড়ি দিতে কিন্তু সেই রাগ গিয়ে পরতো আমার মায়ের ওপর।
তাই একান্তই মায়ের কথা ভেবে তিনবছরের ভালোবাসা প্রত‍‍্যাখান করে নসিবকে মেনে নেই।
রায়ানকে যেদিন ছেড়েছিলাম,ছেলেটি ফোন দিয়ে অনেক অনুরোধ করেছিল তাকে না ছাড়তে।কিন্তু শুনি নি আমি।পরিশেষে একটা কথাই বলেছিল রায়ান,কোনোদিনও সুখি হতে পারবে না তুমি।কাউকে কাদিয়ে কেউ সুখি হতে পারে না।
তার কথার মানে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি আমি এই চার বছরে।

____
বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে সম্পন্ন হয় আমার।
বরযাত্রী হিসেবে ছিলেন ১৫০ জন।
বড়োলোক পরিবারের সব বড়োবড়ো কারবারি।
প্রাইভেট কারে স্বামীর তিনজন ভাগনী সহ আমি ও আমার স্বামী বসলাম।
মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম ভেবে কান্না করছিলাম খুবই।ভাগ‍্যকে মেনে নিতে ভীষণই কষ্ট হচ্ছিল।

এমন সময় স্বামী সারহান আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,”আসার সময় তোমার বাবা তোমার ব‍্যাগে কী গুজে দিচ্ছিলো?”

সদ‍্য বিবাহিত স্বামীর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা বিচলিত হলাম।পরক্ষণে স্বাভাবিক ব‍্যাপার ভেবে মেনেও নিলাম।
সে সময় উত্তর দেওয়ার মতো মনোবল ছিল না আমার মাঝে।তাই তো নিজের হ‍্যান্ড ব‍্যাগটি স্বামীর হাতে তুলে দিলাম।
সে তড়িঘড়ি চেক করে দেখলো হাজার পাচেক টাকা।
টাকাটি দুবার গুণে আবারো আমার ব‍্যাগে ঢোকালো।
বললো,”ব‍্যাগটি আমার কাছেই থাক।তুমি নতুন বউ,সবাই টানাহেচরা করবে দেখাদেখি করবে,টাকাগুলো হারিয়ে ফেলতে পারো।

সে সময় সারহানের কথাটিই উপযুক্ত মনে হলো আমার কাছে।

শশুর বাড়িতে পৌঁছালাম।গাড়ি থেকে নামতেই স্বামী চলে গেল তার বন্ধুদের সঙ্গে।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম একা।মধ‍্য বয়স্ক এক মহিলা এগিয়ে এলো আমার নিকট।
চামচ নিয়ে মুখে চিনি ও পানি দিয়ে বরণ করে নিল আমায়।ভীষণই আশ্চর্যবোধ করলাম।শুনেছি নতুন বউদের নানা রকম মিষ্টি সহ সরবত ও দিয়ে বরণ করে নেন শাশুড়িরা।কিন্তু আমার বেলা চিনি আর পানি দেখে কিছুটা মনক্ষুন্ন হলো।ভাবলাম সময়স্বল্পতার জন্য হয়ত আয়োজন করতে পারি নি।
সামান্য বিষয় নিয়ে মন খারাপ করা অযুক্তিকর বলে মনে করলাম।

এরপর বাড়িতে প্রবেশ করলাম।
নিজের কোনো দেবর নেই আমার।স্বামীর একজন বড়ো বোন,দুজন ছোট বোন ও আমার স্বামী।
এলাকার দেবরেরা বাসর ঘর ধরেছে।
টাকা দাবি করছে তারা।ঘরে যেতে দিচ্ছে না কাউকেই।

কোথা থেকে যেন তেড়ে এলো শাশুড়ি।কড়াকড়া কথা শোনাতে লাগলো ছেলেগুলোকে।
আমার একজন চাচাতো জা শাশুড়িকে বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে গেল।বললো,ছোটদের বিষয় ছোটরাই বুঝুক।
শাশুড়ির একটাই কথা,আমার বাড়ির টাকা কেন পর ছেলেরা নেবে।

এদিকে স্বামী ও নাছড় বান্ধা একটা টাকাও দেবে না।নতুন বউ আমি এতোক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে থাকা যায়।
এরমধ্যে আমার ননদেরা এসে হাজির।তারাও এবার টাকার জন্য বায়না ধরেছে।
সারহানের মন যেন নরম হলো।বোনদের উদ্দেশ্য করে বললো,”কতো টাকা চাই তোদের “?

ননদ সায়মা বললো,”তিনহাজার টাকা দাও”।

সারহান আমার ব‍্যাগ উচু করে চকচকে তিনটি এক হাজার টাকার নোট বের করে বোনের হাতে ধরিয়ে দিল।
বেচারা দেবররা সারহানের টাকা দেওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।কষ্ট করে ঘর সাজালো তারা অথচ টাকা নিল অন‍্যকেউ।
সায়মা ও সাইরা দুবোন।
সায়মা এইটি এক হাজার টাকার নোট ছেলেগুলার দিকে ছুড়ে মেরে বললো,”টাকা পেয়ে গেছো এবার চলে যাও সবাই”।

টাকাটি কেউ না নিয়েই থমথমে মুখে ঘর ছেড়ে চলে গেল সকলে।

ধীরে ধীরে ঘর খালি হলো।পড়ে থাকা টাকাটি সায়মা তুলে নিল।
আমি আমার ব‍্যাগটি চাইলাম সারহানের কাছে।আসলে ব‍্যাগে আমার ফোনটি ছিল।মা-বাবা বলেছিল পৌঁছে যেন কল দেই তাদের।
এতোক্ষণ ভীরভাট্টায় কল দিতে পারি নি।এখন যেহেতু ঘর খালী হয়েছে তাই ভাবলাম কথা বলে নেই।

সারহান কপট রাগ দেখিয়ে বললো,”তোমার ব‍্যাগ আমি খাচ্ছি না।এই ধরো বলে হাতের ওপর আচড়ে দিল ব‍্যাগটি।

তার এমন রাগ করার কারণ মাথায় ঢুকলো না আমার।

ফোন বের করে মাকে কল দিয়ে কথা বলছিলাম।

ননদ সাইরা খাবার হাতে প্রবেশ করলো আমার ঘরে।মার থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দিলাম আমি।
টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে সাইরা বললো,”প্রথম দিন এসেই মায়ের কাছে আমাদের নিন্দে করছো বুঝি”।

সাইরার কথা শুনে কপালে ভাজের রেখা উঠলো আমার।কিছু বলতে যাবো তার আগেই সাইরা বললো,”মজা করেছি আমি ভাবি”।

মনে মনে ভাবলাম এ আবার কেমন মজা।

খাবার রেখে চলে গেল সে।
আমি বসে রইলাম ঘরে।একা একা খেতে ইতস্তত বোধ করছিলাম।
ঘরের চারপাশে দেখতে লাগলাম।
স্বামীর ছবির দুটি ফ্রেম সহ তার বড়ো বোনের মেয়েদের একটি ছবি।
বাচ্চাগুলো বেশ কিউট।

আমার স্বামী সারহান পেশায় ছিলেন একজন ব‍্যবসায়ী।তার বাবাও বড়ো ব‍্যবসায়ী।দুজনেই ছিলেন সফল।
সারহান দেখতেও বেশ সুন্দর ছিল।
ফর্সা শরীরের সিল্কি চুলগুলো ছিল দেখার মতো।

আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।ভারী শাড়ি পরে নড়তে চড়তে অসুবিধা হচ্ছিলো।
প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকায় শোয়া মাত্রই ঘুম চলে এলো।

ঠাস করে দরজা বন্ধ করার শব্দে ঘুম ভাঙলো।সদ‍্য ঘুম থেকে উঠে কোথায় আছি বুঝতে সময় লাগলো কিছুক্ষণ।
সারহানকে দেখে মনে পড়ে গেল আমার জীবনের নতুন অধ‍্যায়ের কথা।
শুনেছি বাসর ঘরে স্বামীকে সালাম করতে হয়।

আমি উঠে গিয়ে তাকে সালাম করতে গেলাম ।সারহান দূরে সরে গিয়ে বললো,”এতোক্ষণ তো ঘুমাচ্ছিলে,ওঠার কী প্রয়োজন ছিল”।

ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত দুটো বেজে আট মিনিট।
এতো সময় একা একা ঘরে বসে কী করতাম আমি?ঘুমিয়েছি তো দোষের কী?
নিজের মনে মনে আওড়ালাম কথাগুলো।

:,,,,,,,”আপনি তো মাত্র এলেন।একা একা বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই”।

সারহান পোশাক বদলাতে বদলাতে বললো,”থাক হয়েছে হয়েছে “।

ঢেকে রাখা খাবার গুলো খেতে শুরু করলো সে।একবারো প্রশ্ন করলো না আমি খেয়েছি কিনা।বা খাবার গুলো কার জন্য।

ক্ষুদা পেটে শুয়ে পরলাম।
সারহান লাইট অফ করে আমার পাশে এসে শুয়ে পরলো।
ভেবেছিলাম বাসর রাত কতো রঙিন হবে আমার জীবনে।একে ওপরকে ভালো রাখার প্রতিশ্রুতি দেবো।
খুব ভালো সময় পার করবো নিজেদের মধ্যে।

রায়ানের কথা খুব মনে পরছিল।সময় মতো আমাকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতো সে।আমি না খেলে নিজেও খেতো না।

এসব ভাবতে ভাবতে সবে মাত্র চোখ লেগেছে তখন অনুভব করলাম সারহান আমার কাছে আসছে ধিরে ধিরে।আমি ঝিম মেরে ওপাশ ফিরে শুয়ে রইলাম।তীব্র অভিমান গ্রাস করেছে আমাকে।

সারহান এবার আমার খুবই কাছে এলো।
আমাকে নিজের করে নিল।দু-চোখ অশ্রুতে ভিজে এলো কিছুটা যন্ত্রণায় আর কিছুটা নিজের দুঃখী কপালের জন্যে।

চলবে,,,,,,,

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১

(নতুন গল্প,সবাই বেশি বেশি রেসপন্স করুন।আপনাদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করে আসবে দ্বিতীয় পর্ব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here