অচেনা এক সময় পর্ব – ৩

0
1111

অচেনা এক সময়
পর্ব – ৩
সিনথিয়া

সকাল সকাল বেবি খালাকে বাসায় দেখে মৌলি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার খালামনি এত সকালে তুমি !
কেন রে সকাল সকাল আসতে পারি না তোদের বাড়ি ?
মৌলি খালামনির পাশে বসতে বসতে বলল আমি কি সেই কথা বলছি তুমি যখন ইচ্ছা তখন আসবে এত সকালে তুমি বাসার বাহিরে আসবে এটা আমি ভাবিনি।
এসেছি তোকে ধরতে ।
আমাকে ধরতে ! অবাক হয়ে মৌলি বলল।
হ্যা তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস জানতে এসেছি।
ওমা এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য হচ্ছ কেন খালামনি ! আমার লাইফের ব্যাপার বুঝে শুনে আগাতে হবে আমাকে।
দুজন পাত্র তো দেখলি। একজন বড় চাকরি করে বিদেশী কম্পানিতে আর আরেক জন ডাক্তার । ডাক্তার ছেলেটাকে আমার পছন্দ হয়েছিল বেশি, অবিবাহিত ছিল বাচ্চা কাচ্চার কোন ঝামেলা নেই কিন্তু আপার মুখ থেকে শুনলাম ছেলের তো বিরাট ইতিহাস আছে । না না এই ছেলের কথা বাদ। আমি শাম্মীকে ফোন দিয়ে আজ‌ই না করে দিব ।
খালামনি তুমি শাম্মী আপুকে এখন‌ই কিছু বলো না প্লিজ। দেখো তোমরা যে কয়জন ছেলের সন্ধান এনে দিয়েছিলে তার মধ্যে আমি তিনজনের বায়োডাটা দেখে ঠিক করেছি সেই তিন জনের সঙ্গে দেখা করব। আগে তিনজনের সঙ্গে কথা বলি তারপর না হয় বলব, এদের মধ্যে থেকে কাউকে করব নাকি আরো দেখব !
আরো দেখবি ?
হুম এত অবাক হবার কি আছে তোমাদের ? নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমার আছে! এত বছর পর হুট করে আমি সিদ্ধান্ত নিব না।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমরা চাই তুই বিয়ে কর এবং সুখে থাক। সেই জন্য তুই যতক্ষন না পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হবি আমাদের কোন তাড়াহুড়া নেই।
আমি জানি।
তাহলে কবে দেখা করবি আরেক জনের সঙ্গে ?
আজকেই যাব অফিস থেকে ফিরার সময়।
সুন্দর করে সেজেগুজে যা ।
এত সাজগোজ করতে পারব না আমি যেমন তেমন ই ।

সবুজ রঙের একটা আড়ং এর হাতের কাজের সিল্কের থ্রি পিস পড়েছে আজ মৌলি। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চুল টা কে ছেড়ে আঁচড়ে নিয়েছে। হালকা একটু প্রসাধনী মেখেছে। ব্যাগে রাখা ছোট পারফিউম টা বের করে স্প্রে করে নিল আবার।
আজকে যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্চে সে, তার বায়োডাটা দেখে তার খুব মজা লাগছিল। কারণ তিনি একজন সেলিব্রিটি।
এই প্রস্তাবটা এনেছে তার বড় ভাইয়ের বউ মোনা।
ভাবির বোনের হাজব্যান্ড এর ছেলেবেলার বন্ধু এই সেলিব্রিটি।
লোকটা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ইদানিং আবার মেকাপ আর্টিস হিসেবে খুব নামডাক হয়েছে।
দেশের নামকরা মডেল, অভিনেত্রীদের সাজায়। তার কাছে ব‌উ সাজার জন্য দুই তিন মাস আগে থেকে নাকি বুকিং দিতে হয়।
ঢাকা শহরে তার তিন টা ফ্যাশন আউটলেট আছে। তার ডিজাইন করা ড্রেসের দাম মধ্যবিত্তের চিন্তা সীমার বাহিরে।
সেই মানুষ মৌলির মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেন ,মৌলি শুনে খুব অবাক হয়েছে !
ভাবির বোনের বাসায় এক দাওয়াতে তাকে নাকি দূর থেকে দেখিয়েছিল রুনা আপা। তখনই লোকটি মৌলি কে পছন্দ করেন। মৌলি সেটা জানেই না। এখন ভাবি বলল তাকে এই কথা । বায়োডাটা দেখে মৌলির মনে হলো দেখা করা যাক লোকটার সঙ্গে, কি আছে ভবিষ্যতে সেটা না হয় পরে দেখা যাবে।
অন্য দুই জন মানুষের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা করেছে মৌলি কিন্তু এই সেলিব্রিটি ফোনে তাকে বলল, মৌলির যদি খুব বেশি সমস্যা না থাকে তাহলে তার স্টুডিও তে আসতে পারবে কিনা?
আসলে লোকটা এমন ভাবে অনুরোধ করলো মৌলি না করতে পারলো না।

গুলশান এভিনিউ এর সুউচ্চ বিল্ডিং এ খুব সুন্দর একটা অফিসে সে বসে আছে এই মুহূর্তে। ফ্লোরটার অর্ধেক টা জুড়ে বাগান করা। এত উপরে এত সুন্দর একটা বাগান দেখতে খুব ভালো লাগছে মৌলির।
পাশেই একটা বড় কনফারেন্স রুম। কর্পোরেট অফিস গুলোতে যেমন হয়।
কিন্তু ও বসে আছে একটা ছোট রুমে। এটাকে অফিস না বলে লিভিং রুম বলা যায়। বাসা বাড়ির লিভিং রুম যেমন থাকে।
মৌলিকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে রিসিপশনিস্ট মেয়েটা।
তারপর খুব বিনয়ী গলায় বলল, স্যার খুব সরি ফিল করেছেন দশ মিনিট লাগবে স্যারের আসতে আপনাকে ততক্ষণ একটু বসতে হবে।
মৌলি শুধু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ও বসার সঙ্গে সঙ্গে এক ওয়েটার মেয়ে এসে এক গ্লাস জুস দিয়ে গেছে। সঙ্গে রোস্টেড কাজুবাদাম।
খুব সুন্দর আফ্রিকান এভোনি কাঠের একটা সোফা তার পাশে আবার বড় বড় কুসন রাখা কার্পেটের উপর।
কার্পেট টা যে খুব দামি টার্কিস কার্পেট দেখে ই বোঝা যাচ্ছে।
ঘরের একটা সাইডে কফি কর্নার করা। কফি বিন, মিক্সার, মগ দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।
তার মানে বোঝাই যায় কফি খেতে খুব পছন্দ করে মানুষটা।
ঘরটার প্রতিটি জিনিস দেখেই বোঝা যাচ্ছে, যে সাজিয়েছে তার রুচিবোধ অনেক উঁচু পর্যায়ের।
মৌলি মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব কিছু।
আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে দশ মিনিট হয়ে গেলে হঠাৎ কাঁচের দরজা ঠেলে বায়োডাটার সঙ্গে দেয়া ছবির মানুষ টা ঢুকে বলল, হ্যালো !
মৌলি একটু চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে ডিজাইনার মাসফিক নাবিল হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটার পড়নে একটা সাদা টি শার্ট। এবং ব্লু জিন্স।
একদম সাদামাটা পোশাক।
মাসফিক ভেতরে ঢুকে হাসি মুখে বলল, সরি সরি মৌলি আপনাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম। কি কান্ড দেখুন।
মৌলি বলল, ইটস ওকে।
আপনি দাঁড়িয়ে কেন মৌলি প্লিজ বসুন। ওরা আপনাকে কিছু দেয়নি ! খালি মুখে বসিয়ে রেখেছে! মাসফিক পাশে রাখা কলিং বেল এ চাপ দিল।
আপনি ব্যস্ত হবেন না আমাকে জুস দিয়ে গেছে।
মৌলি সোফায় বসলো।
মাসফিক সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসলো। আমি আবারও দুঃখিত আপনাকে কষ্ট করে এখানে ডেকে আনার জন্য। আসলে আমি পাবলিক স্পেসে খুব একটা কমফোর্টেবল ন‌ই।
আর আপনার সঙ্গে ভিড়ের মধ্যে কথা বলতে চাইছিলাম না। বলে মুচকি হাসলো মাসফিক।

ওদের কথার মাঝখানে ওয়েটার মেয়ে টা আরেক গ্লাস জুস নিয়ে ঢুকলো।
টেবিলে গ্লাস টা নামিয়ে রাখার সময় মাসফিক নিচু গলায় কিছু একটা বলছে মেয়েটাকে।
মৌলি মাসফিকের দিকে তাকিয়ে আছে, মাঝারি সাইজের একজন মানুষ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কোঁকড়া চুল।
দেখে মনেই হয় না ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে জড়িত। মনে হচ্ছে ভার্সিটিতে পড়া স্টুডেন্ট। বয়স কিন্তু পঁয়তাল্লিশ। ছিপছিপে শরীর।
ছবিতে আরেকটু বয়স্ক লেগেছে।
মেয়েটা বের হয়ে যেতেই মৌলির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি জুসটা খান মৌলি ভালো লাগবে আপনার। খেয়ে বলুন এটার কিসের জুস ?

মৌলি জুসের গ্লাসটা হাতে নিল কিন্তু চুমুক দিল না। হাতে নিয়ে বসে রইল।
আসলে আজকে আপনার সঙ্গে দেখা হবে তাই কোন কাজ রাখতে চাইনি এই সময় । কিন্তু খুব ক্লোজ একজনের হঠাৎ করেই বিয়ে। সে অনেক আগে থেকেই বলেছিল সে আমার হাতেই ব‌উ সাজবে। অগত্যা তাকে আর না করতে পারিনি। ঝটপট তাকে সাজিয়ে আসলাম।

জ্বি।
মৌলি কেন যেন কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না বলার মতো।

হঠাৎ মাসফিক বলা শুরু করলো , মৌলি আপনি আমার বায়োডাটা দেখেছেন?
জ্বি !
মাসফিক উঠে গিয়ে সেলফের পাশ থেকে একটা ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে শান্ত গলায় বলল,
তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন আমার স্ত্রী একটা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন।
বায়োডাটা তে পড়েছি।
ঐ এক্সিডেন্ট এ আমিও খুব বাজে ভাবে ইনজুরড হয়েছিলাম। আমরা লাদাখ গিয়েছিলাম ঘুরতে।
পড়াশোনা শেষ করে আমি বিখ্যাত ডিনাইনার রিতু কুমারের এসিস্ট্যান্ট ছিলাম মুম্বাই তে। অমৃতা ছিল মডেল।
রিতু ম্যাম এর বিভিন্ন ইভেন্টে ও কাজ করতো। অমৃতা আমার স্ত্রী । অমৃতা কৌর । লুধিয়ানার শিখ পরিবারের মেয়ে অমৃতা। কাজ করতে করতেই আমাদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এবং একসময় প্রেম। খুব ভালোবাসাতো আমাকে নিজের ক্যারিয়ারের চিন্তা না করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল।
গ্লাসের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে মাসফিক বলল, পরিবারের অমতে গিয়ে ভীনদেশী অন্য ধর্মের আমাকে বিয়ে করার জন্য অমৃতাকে ওর পরিবার ত্যাগ করেছিল। এমনকি প্রথম প্রথম তো ও খুব ভয়ে থাকতো ওর ভাইয়েরা আমার না কোন ক্ষতি করে।
আমরা খুব সুখী ছিলাম আমাদের ম্যারেড লাইফে। মাত্র তিন বছরের ছোট্ট একটা সময়। মনে হয় চোখের পলকে শেষ হয়ে গেছে।
সুন্দর সময় গুলো খুব তাড়াতাড়িই চলে যায় তাই না মৌলি ? দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মাসফিক।

তারপর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে বলল, আপনাকে কথা গুলো বলে বিব্রত করছি হয়তো । কিন্তু আপনাকে তো কথা গুলো বলতে হবে আমার বুঝতেই পারছেন কেন ।
আপনি বলুন আমি শুনছি।
আমরা একটা সামার কালেকশনের ফটোশ্যুট করতে কাশ্মীর গিয়েছিলাম। অমৃতা ছিল সেই শ্যুট এর একজন মডেল। আরো মডেল ছিল সঙ্গে।
কাজ শেষে আসার আগে ঠিক হলো লাদাখ ঘুরতে যাব।
লাদাখ ঘুরে বেড়ালাম আমরা দল বেঁধে।
আসার সময় আমাদের গাড়িটা একটা মিলিটারি কনভয় কে সাইড দিতে গিয়ে খাদে পড়ে যায়। আমি আর অমৃতা মারাত্মক ভাবে আহত হলাম।
আমাদের উদ্ধার করলো সেই মিলিটারি কনভয়ের লোকজন। অমৃতাকে হসপিটালে নেয়ার আগেই সে চলে যায়! কথাটা বলে মাসফিক একটু থামলো। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে র‌ইলো কয়েক সেকেন্ড।
আমি প্রায় দেড় মাসের কোন সৃত্মি মনে করতে পারি না। আমার শুধু মনে আছে এক্সিডেন্ট হ‌ওয়ার আগে আগে অমৃতা আমার হাত টা ধরে বসে ছিল আমার ঘাড়ে ওর মাথা রাখা ছিল। আর কিছুই বলতে পারি না।

এরপর আমি মুম্বাই থাকতে পারলাম না। অমৃতার সৃত্মি গুলো এত আঁকড়ে ধরে ছিল, আমি এক রকম ছুটে পালিয়ে এলাম ঢাকায়। তারপর আস্তে আস্তে এখানে কাজ শুরু করি। দশবছর পার হলো সেই ঘটনার।
মৌলি সেই এক্সিডেন্ট আমার জীবন থেকে শুধু অমৃতাকে কেড়ে নেয়নি , আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বাবা হবার ক্ষমতা।
মৌলি একটু অপ্রস্তুত হল কথাটা শুনে।
আমার স্পাইনাল কর্ড এর এমন একটা জটিল জায়গায় আঘাত ছিল যার ফলাফল আমি কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারব না।
বিষয় টা আমি আপনার কাছে গোপন করতে চাই না । আপনি এখন যে সিদ্ধান্ত‌ই নিবেন আমি কিছুই মনে করব না।
আসলে আমার বাবা মা এই কথাটা জানেন না। আমি বলিনি তাদের। বয়স হয়ে গেছে আর আঘাত দিতে চাইনি। ইনফেক্ট আপনার আগে এই কথা আমিই কাউকে বলিনি।
মৌলির কাছে এই গোপন করা বিষয় টা একটু অন্য রকম লাগছে।

হঠাৎ দরজা খুলে ঘর আলো করে ঢুকলো একটা নতুন ব‌উ। পুরো ঘরটা তার সৌন্দর্যে ঝলমল করে উঠল।
তার সঙ্গে মিঃ মাসফিকের এসিস্ট্যান্ট দুজন।
একজন অভিনেত্রী। মৌলি টিভিতে দেখেছে মেয়েটাকে। কিন্তু আজকে কি অপূর্ব লাগছে ! নাহ আজকে বুঝলাম কেন এই মাসফিকের কাছে বৌ সাজার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে। কি সুন্দর করে সাজিয়েছে লোকটা মেয়েটাকে!
অভিনেত্রীকে দেখে মাসফিক বলে উঠলো, ওয়াও তোমাকে একদম পরীর মতো লাগছে তামান্না!
সব তোমার হাতের ছোঁয়ায় মাসফিক ,বলে মাসফিককে জড়িয়ে ধরল অভিনেত্রী।
মৌলি তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
মাসফিক তামান্নার ঘোমটা ঠিক করে দিতে দিতে বলল, ফটোশ্যুট হয়েছে তোমার?
না সেই জন্য নিতে এলাম তোমাকে মাসফিক ।
আহ্লাদ করে বলল, অভিনেত্রী তামান্না।
ঠিক আছে তুমি যাও শুরু করো আমি একটা জরুরী মিটিং এ আছি , শেষ হলে আসছি।
তামান্না রুম থেকে বের হয়ে গেল।
মাসফিক মৌলির দিকে তাকিয়ে বলল, উনাকে চিনেন ?
মৌলি মাথা নেড়ে হ্যা বলল।
আজকে ওর বিয়ে। জুসটা আপনার ভালো লাগে নি মৌলি খাচ্ছেন না যে ?
আমি খেয়েছি কিন্তু বলতে পারছি না কিসের জুস সরি!
এত আহামরি কিছুর নয় জাম্বুরার জুস। একটু অন্যরকম ভাবে বানানো তাই বোঝা যায় না।
মৌলি তাঁর ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো, আজ তাহলে আসি ।
সেকি আমি তো আপনার জন্য খাবার আনতে বলেছি।
না প্লিজ অফিসের পরে ফ্রেশ না হয়ে কিছু খেতে পারি না আমি।
ঠিক আছে অন্তত কফি তো খাওয়া যায় , আমি কিন্তু খুব ভালো কফি বানাই মৌলি।
সে আমি আপনার কফি কর্নারের আয়োজন দেখেই বুঝতে পারছি। কিন্তু দুঃখিত আজকে খেতে পারছি না।
ইটস ওকে।

মাসফিক উঠতে উঠতে বলল, আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হলে আপনাকে ব‌উ আমি সাজাব যদি আপনার আপত্তি না থাকে ?
মৌলি হাসলো শুধু। এরকম কথায় কি রিয়েকশন দিবে সে বুঝতে পারছে না।
লিফটের দিকে আসতে আসতে মাসফিক বলল, ব্যাপারটা দারুন ইন্টারেস্টিং হবে নিজের ব‌উকে সাজানো কি বলেন, বলে হেসে দিল ।
লিফটে উঠে বলল, একটা কথা বলি মৌলি আপনার যদি আমার সাথে বিয়ে নাও হয় কারো না কারো সঙ্গে তো হবেই তখনও যদি আপনাকে সাজাতে চাই আসবেন আপনি ?
মৌলি এই প্রশ্নের ও উত্তর না দিয়ে হাসলো শুধু।
লিফট ততক্ষণে নিচ তলায় নেমে এলো। মাসফিক তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলো।
আই উইস টু মিট ইউ এগেইন মৌলি।
মৌলি হেসে বলল, আপনার ব‌উ হ‌ই কিংবা অন্য কারো, সাজার জন্য আসা ই যায় আপনার কাছে কি বলেন ?
শিওর । খুব খুশি হব।

মৌলি গাড়িতে যখন উঠতে যাবে তখন মাসফিক গলা নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বলল, আর একটা কথা বলতে আমার একটু লজ্জাই লাগছে কিছু মনে করবেন না মৌলি ।
মৌলি ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, জ্বি বলুন।
আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম কিন্তু যৌনতায় ন‌ই। আই এম নট ইমপোটেন্ট।
মৌলি একটু অপ্রস্তুত হলো তাকিয়ে দেখে বিখ্যাত ডিজাইনার , মেকআপ আর্টিস্ট মাফসিক নাবিলের ফর্সা মুখেও রক্তিম আভা।
মৌলির গাড়ির পিছনে অন্য গাড়ি এসে হর্ন বাজাচ্ছে মৌলি গাড়িতে উঠে বসলো।
গ্লাস নামিয়ে বলল, আসি ।
মাসফিক মুচকি হেসে হাত তুলে নাড়ল ।
গাড়িটা র‌ওনা হবার পর একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে মৌলি মাসফিক তখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here