অজানা_অনুভূতি পর্বঃ১২

0
5005

অজানা_অনুভূতি
পর্বঃ১২
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

হাসপাতালের একটি কেবিনে বসে আছে হায়াত। তার পাশেই বেডে বেহুস হয়ে পড়ে আছে আরহাম। হায়াত আরহামের এক হাত তার নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। আরহামের অপর হাতে স্যালাইন লাগানো।
এভাবে আরহামের বেহুস হওয়ায় হায়াত অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।

এইতোহ কিছুক্ষন আগের ঘটনা।
আরহাম দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।

” জোসনার মাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই না নীলবাবু ”

সেই পরিচিত কন্ঠ সেই পরিচিত নাম শুনেই এক জটকায় আরহাম পাশে তাকায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহাম মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সামনের ব্যক্তিটির চেহারা।

এ যে আর কেউ নয় তার প্রিয়তমা তার ভালোবাসার মানুষ হায়াত। হায়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। আদৌ কি এ হায়াত নাকি তার কল্পনা। আলতো হাতে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু সাহস হলো না। আরহাম প্রচন্ড বাতাসেও ঘামছে।

হায়াতঃ কেমন আছেন নীলবাবু।(আরহামের কিছুটা সামনে গেলো)

আরহামঃ হা..য়া..ত (বলেই দু কদম পিছিয়ে গেলো)

কি বলবে বুঝতে পারছে না। হায়াতের সামনে দাড়িয়ে থাকার সাহসটাও আরহামের নেই। কোন মুখে হায়াতের সাথে কথা বলবে এমনকি ক্ষমাই বা কিভাবে চাইবে। হায়াত আরহামকে পিছিয়ে যেতে দেখে। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আরহামের হার্ট বিট অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমন কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। চারপাশ ঝাপসা ঝাপসা লাগছে আরহামের কাছে। হায়াত আরহামের সামনে আসতেই আরহাম ঢলে পড়লো। হায়াত যলদি আরহামকে ধরলো আরহাম নিচে পড়ে আছে।

হায়ায়ঃ নীলবাবু ও নীলবাবু কি হলো আপনার।
আদনান ভাইয়া নৌশিন (জোড়ে ডাক দিলো)

অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো আদনান ও নৌশিন। হায়াতের ডাক শুনে দৌড়ে এসে দেখলো আরহাম অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ওকে তারাতারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো।
ডাক্তার বললো। অতিরিক্ত চাপ আর দূর্বলের কারনে এমন হয়েছে। খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।

হায়াত আরহামের হাত ধরে বসে আছে।
পাশেই নৌশিন ও আদনান দাঁড়ানো।

নৌশিনঃ দেখলেন ওদের মধ্যে কতো ভালোবাসা।

আদনানঃ না মিস কলিং বেল আমি কিভাবে দেখবো আমার কি চোখ আছে নাকি। চোখ তোহ আপনার একাই আছে।

নৌশিনঃ খবরদার আমায় কলিং বেল বলবেন না।

আদনানঃ একশোবার বলবো তুমিই সেই মেয়ে যে আমাদের বাসার কলিং বেল চেপে দৌড় দিতে।

নৌশিনঃ কি প্রমান আছে আপনার কাছে হুম বলেন।

আদনানঃ প্রমান আমার চোখ। আমি নিজে চোখে দেখেছি তোমাকে কলিং বেল চেপে দৌড় দিতে।

নৌশিনঃ সেটা যে আমি ছিলাম জানলেন কিভাবে।

আদনানঃ তোমায় কেনো বলবো।

নৌশিনঃ ঢং দেখে বাচি না।

আদনানঃ হুস আমায় জালাতন করো না তোহ। বেশি জ্বালালে তোমার বান্ধুবি হায়াতকে বলে দিবো যে তুমি প্ল্যান করে ওকে আনিয়েছো।

নৌশিনঃ আমিও আপনার ভাই আরহাম জিজুকে বলে দিবো আপনি আমায় সাহায্য করেছেন।

আদনানঃ অফ এত বাচাল কেন তুমি।

নৌশিনঃ বেশি বক বক করবেন না বলে দিলাম। ৪ বছর আগে একটু ফেসবুক থেকে গেলাম কি আর আপনি একেবারে হিরো হয়ে গিয়েছেন।

আদনানঃ তোমাকে যেতে বলেছে কে। কোন অলক্ষূনির সময় যে তোমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছিলাম।

নৌশিনঃ চুপ থাকেন তোহ ঝগড়া ছাড়া কিছু তোহ পারেন না।

আদনানঃ আ……

হায়াতঃ তোমাদের ঝগড়া আর ফুসুরফাসুর শেষ হলে সবাইকে খবর দিন

আদনানঃ ইয়ে মানে সবাইকে কি বলবো যে…

হায়াতঃ সবাইকে বলেন Hayat is back.

আদনান কেবিনের বাহিরে চলে গেলো। আদনানের পিছু পিছু নৌশিনও চলে গেলো।
আদনান সবাইকে ফোন করে বলল সবাই নাকি আসছে আদনান জানালো হাসপাতালে আসার দরকার নেই আরহামদের বাসায় আসতে।
নৌশিন আদনানের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

আদনানঃ এইভাবে আমার পেছনে কেন পড়ে আছো বলো তোহ।

নৌশিনঃ তোহ কি করবো আমি কাবাবে হাড্ডি হবো। ওদের এখন একা থাকতে দেওয়া উচিত।

আদনান কিছু বলল না।

★★
হায়াত আরহামের হাত এখনো ধরে আছে। ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে করছেন না। আরহামের জন্য অজানা_অনুভূতি টা জেগে উঠছে এই এক মাসে আরহাম অনেকটা বদলে গিয়েছে চেহারাটাও মলিন হয়ে আছে। হায়াতের মনে আরহাম আছে একটা মানুষের সাথে ৬ মাস একই ছাদের নিচে ছিলো একজন নারী ও পুরুষ এক সাথে থাকলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য আর সেখানে এক সাথে একই রুমে থেকেছে। এই ৬ মাসে হায়াত বুঝতে পারেনি যে সে আরহামকে ভালোবাসে বিচ্ছেদের পর ভালো করে টের পেয়েছে। আরহামকে এমন কোনো মূহুর্ত নেই যে মিস করেনি হায়াত কিন্তু তা প্রকাশ করেনি। হায়াত কি মেনে নিবে আরহামকে তাও জানা নেই কারো।

★★
আরহামের জ্ঞ্যান ফিরেছে চোখ মেলে চোখের সামনে হায়াতের চেহারা ভেসে উঠছে। আরহাম আস্তে আস্তে উঠল হায়াত সাহায্য করলো উঠতে। আরহাম নিজের হাত দিয়ে আলতো করে হায়াতের গাল ছুয়ে দেখলো। না সে সপ্ন দেখছে না হায়াত সত্যি তার সামনে আছে।

আরহামঃ হায়াত তুমি..

হায়াতঃজিই আমি।

আরহামঃ কেমন আছো তুমি। আর এভাবে শুকিয়ে গেলে যে খাবার দাবার কি ঠিক মতো খাওনি নাকি।

হায়াতঃআমারও একই কথা। উত্তর আছে কি আপনার কাছে।

আরহাম চুপ হয়ে গেলো।
আদনান হায়াত ও আরহামের জন্য খাবার দিয়ে গিয়েছে। হায়াত আরহামকে খাইয়ে দিচ্ছে। আরহাম চুপচাপ খাচ্ছি আর হায়াতের দিকে চেয়ে আছে। এক হাতে হায়াতের শাড়ির আচল ধরে আছে। হয়তো ছেড়ে দিলে চলে যাবে সেই ভয়ে।
আরহাম হায়াতকে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলো হায়াত মানা করে দেয় সে কিছু খাবে না।আরহাম বারবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে হায়াত এতো দিন কোথায় ছিলো, কেমন ছিলো কিভাবে ছিলো কার কাছে ছিল। কিন্তু তা জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না এখনো নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছে।

★★★
আদনান ও নৌশিন, হায়াত ও আরহাম বাসায় গেল।

সবার সামনে বসে আছে হায়াত সবার নজর হায়াতের দিকে। আয়াত, অর্পা,প্রিসা,আনিশা হায়াতএর পাশে বসে আছে। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনেক অনেক প্রশ্ন আছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। সবাই হায়াতের কাছে অপরাধ বোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরহামকে তার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরহামও রুমে চুপটি মেরে বসে আছে।

হায়াতঃ আমি সাতক্ষীরা নৌশিনদের বাসায় ছিলাম। নৌশিন আর আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ওর বাবার বদলি হওয়ায় চলে গিয়েছিলো। ওদের ওখানেই আমি এতোদিন ছিলাম।

আয়াতঃ তোহ আজ কি মনে করে ফিরে এলে।

হায়াতঃ কোনো এক কারনে আসতে হলো হালকা হেসে নৌশিনের দিকে তাকালো।

ইভানের চোখ ছলছল করছে। কি বলে ক্ষমা চাইবে তার বোনের কাছে তাই ভাবছে।

হায়াতঃ অনেক রাত হয়েছে। এভাবে বসে না থেকে যাওয়া উচিত। বড় ভাই আমি আপনাদের বাসায় কিছুদিন থাকতে চাই।

ইভানঃ সেটা তোমারও বাসা হায়াত। আর তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।

হায়াতঃ আচ্ছা তাহলে আমি আসি। আর হ্যা সুন্দরী রেশমি চুড়ি ধন্যবাদ আমার কথা রেখে আপনার মেয়েকে মেনে নেওয়ার জন্য।

রেশমিঃ তুমি কোথাও যাবে না। এটা এখনো তোমার শ্বশুরবাড়ি। আর আজ যদি চলে যাও তাহলে একেবারের জন্য চলে যাও। তোমার কারনে আমার আরহাম অনেক কষ্ট পেয়েছে( বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো)

আরহামের দাদীর কথায় সবাই অবাক। হায়াত হালকা হাসলো তারপর তার রুমাল বের করে আরহামের দাদীর হাতে দিয়ে চলে গেলো।
আরহাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে হায়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও হায়াতকে আটকাতে পারছে না আরহাম।

নৌশিনও হায়াতদের সাথে ওর বাসায় গেলো। আদনান আরহামের পাশে এসে দাড়ালো। সাথে আরনাবও আছে।

আরনাবঃ ভাই ভাবিকে আটকালি না কেনো।

আরহামঃ হায়াতকে আমি সময় দিচ্ছি স্বাভাবিক হওয়ার ওর যখন ইচ্ছে হবে তখন আসবে তোরা কেউ ওকে জোর করবি না।

বলেই রুমে চলে গেলো। আরনাব ও আদনান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চলে গেলো। ওইদিকে আদনানের মা হায়াত ফিরেছে শুনে অনেক খুশি। আদনান কি মনে করে যেনো নৌশিনের কথাটাও বলল।

নৌশিন আদনানদের প্রতিবেশি ছিলো। আদনান নৌশিনকে খুব কমই চিনতো। একদিন হঠাৎ করে ঠিক দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠলো আর দরজা খুলে অবাক কেউ নেই৷ এরপর থেকে প্রায়ই কে জেনো কলিং বেল চেপে চলে যেতো। একদিন আদনান দেখে ফেলে এরপর খোজ নিয়ে জানতে পারে তার নাম নৌশিন।

এরপর একদিন নৌশিন নামের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে আর আদনান তা এক্সেপ্ট করে কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো ওর আইডিতে কোনো ছবি ছিলো। এরপর নৌশিন নিজ থেকে মেসেজ দিতো আদনান ওর সাথে কথা বলা শুরু করেছে। এক প্রকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল আদনানের ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাটিং করতো। কথা কম ঝগড়া বেশি করতো।

কখনো সরাসরি দেখা করেনি। মাঝে মাঝে দেখা হতো কিন্তু কেউ কথা বলতো না। এক সময় নৌশিনের আইডি থেকে মেসেজ আসা অফ হয়ে যায় আদনান নিজের মেসেজ পাঠায় কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি। পরে জানতে পারে নৌশিনরা চলে গিয়েছে এরপর থেকে আর কেউ কলিং বেল বাজিয়ে চলে যায়নি। আদনান নৌশিনকে মিস করতে শুরু করতো যে কেউ কলিং বেল বাজালেই ও দৌড়ে দরজা খুলতো কিন্তু কোনো খোজ পাওয়া যায়নি নৌশিনের।
ঠিল চার বছর পর আজ দেখা তাও হায়াতের কারনে।
এতো বছর পর নৌশিন ফেসবুকে এসে আদনানকে টেক্সট পাঠায়। এরপর ফোনে কথা বলে হায়াতের ব্যাপারে সব বলে এরপর আদনানের কাছ থেকে আরহামের ব্যাপারে জেনে। ওরা প্ল্যান করে হায়াতকে নিয়ে আসে ঢাকায় এরপর ব্রিজের কাছে গিয়ে ওদের দুজনের দেখা করিয়ে দেয় আদনান ও নৌশিন।

*★★
হায়াতকে ফিরে পেয়ে সবাই খুশি। সকালে ইভানদের বাড়িতে ধুম পড়েছে ইভান বাজার করে নিয়ে আসছে। ইশান হায়াতের পছন্দের রুই মাছ কিনে কাটতে বসে গেলো। ইফাত সবজি কাটতে অর্পাদের সাহায্য করছে বাকি তিন বান্ধুবি মিলে রান্না করছে। হায়াত, আয়াত ও নৌশিন মিলে এলাকাটা ঘুরে আসে। হায়াতকে দেখে পারা প্রতিবেশি নানা কথা বলছে সমালোচনা আলোচনা করছে সেদিকে হায়াত ধ্যান না দিয়ে নিজের মতো আছে।

এখন আর হায়াত নিজের ঘরে খাবার খায়না ইভান নিজেই হায়াতকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে নিজ হাতে খাইউএ দিয়েছিলো। আরহামদের সাথেও কথা হয়।
আরহাম হায়তের সাথে কথা কম বলে কিন্তু চেয়ে থাকে সব সময়। নৌশিন তার বাসায় চলে যায়। নৌশিনের চলে যাওয়ায় আদনান অনেকটা কষ্ট পায়।
হায়াত নিজ থেকে আরহামকে কল দিয়ে কথা বলে।
হায়াতকে বারবার সবাই জিজ্ঞেস করছে আরহামকে মেনে নিয়েছে তোহ ওর সাথে থাকছে না কেনো। হায়াত চুপ করে ছিলো আর বলেছিলো সময় হলে বলবে।

এভাবে কেটে যায় কয়েকটা মাস। সবাই আরহামকে বলে হায়াতকে নিয়ে আসার জন্য আরহাম হায়াতকে বলেছিলো। হায়াত তার জবাবে বলে

হায়াতঃ আপনি এখন আমায় নিতে এসেছেন তার কারন হলো আপনি অনুতপ্ত তাই আপনি আমায় মেনে নিচ্ছেন। যেদিন আপনি আমায় ভালোবেসে নিজের মন থেকে নিতে আসবেন তখন আমি আসবো।

আরহাম হায়াতের কথার মানে বুঝতে পারেনি। অনেক চিন্তা করে তারপর বুঝলো।

হায়াতদের এক্সাম শুরু হয়ে যায়।পরিক্ষা দিয়ে হায়াত বের হয়ে দেখলো। আরহাম দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে হায়াত ভ্রু কুচকে তাকালো। কারন আরহাম বাসায় না গিয়ে এখানে কি করছে।

আরনাব আয়াতকে নিয়ে গিয়েছে আজ নাকি ওরা ঘুরে বেরাবে। অর্পারা বাসায় চলে গিয়েছে।
হায়াত হাটছে ওর পেছনে আরহাম হাটছে।

হায়াতঃ কিছু বলবেন।

আরহাম মাথা ঝাকালো। হায়াত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার হেটে সামনে একটা রিক্সায় উঠে গেলো আরহামও লাফ দিয়ে উঠে গেলো রিকশায়। হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরহাম হালকা হেসে হায়াতের হাত শক্ত করে ধরলো। হায়াত কিছু বলল না। আরহামও চুপ হয়ে আছে। হায়াতদের বাসার সামনে রিকশা থামানো হলো। হায়াত নেমে হেটে চলে গেলো এক বার পেছন ফিরে তাকিয়েছিলো আরহামও চলে গেলো।

রাতে
ইভানঃ হায়াত চলো বাহির থেকে ঘুরে আসি।

হায়াতঃ এতো রাতে। অর্পা তোর বর তোকে রেখে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।

অর্পাঃ যাবে তাতে কি তুই যা তোহ।

হায়াতঃ আরে এতো রাতে আমি কই যাবো বড় ভাই।

ইশানঃ আরে যা না এতো কথা বলার কি আছে।

ইফাতঃ হ্যা যা তোহ বড় ভাই এর সাথে ঘুরে আয়।

আয়াতঃ রাতে বাইকে ঘুরার মজাই আলাদা।

হায়াতঃ আচ্ছা তুই তোহ খুব ঘুরেছিস মনে হয়।

আনিশাঃ দূর তোমার পেচাল পারিস না তোহ।

আনিশা এক প্রকার ঠেলে ঠুলে পাঠালো হায়াতকে।ইভান হায়াতকে নিয়ে ঘুরছে। ঘুরে ফিরে ব্রিজের উপরে গেলো। সেখানে গিয়ে বাইক থামালো।

হায়াত নেমে দাড়ালো
হায়াতঃ বড় ভাই এখানে নিয়ে আসলা যে।

ইভান হায়াতের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো হায়াত বেশ কয়েকবার ডাকলো। হায়াত বোঝার চেষ্টা করছে এরা কি করতে যাচ্ছে। হায়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এইদিকে গাড়ি একটু কম আসে।

কিছুক্ষণ পর
কোথা থেকে জেনো বেলি ফুলের স্ম্যাল আসছে। মাতাল করা গন্ধ।হঠাৎ হায়াত টের পেলো কেউ ওর দিকেই দৌড়ে আসছে। অন্ধকার এর কারনে বুঝতে পারছে না। যখন্নহায়াতের সামনে এসে দাড়ালো। হায়াত মুচকি হাসলো। সেই চিরচেনা পারফিউমের স্মেল যেটা হায়াত লুকিয়ে লুকিয়ে স্মেলটা শুকতো।আরহাম এসে দাড়িয়ে আছে হায়াতের সামনে আর হাপাচ্ছে দৌড়ে আসার ফলে।

হায়াতঃনীলবাবু এভাবে দৌড়ে আসলেন যে।।

আরহাম দম নিয়ে বলল
আরহামঃস্যরি আসতে দেরি হয়ে গেলো তোমার বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসতে দেরি হয়েছে আর তুমি একা তাই এক প্রকার দৌড়ে চলে এসেছি।

আরহাম হায়াতের কাছে গিয়ে হায়াতের চুলের কাটাটা খুলে ফেলল মূহুর্তের মাঝেই হায়াতের চুল গুলো পুড়ো পিঠ ছড়িয়ে পড়েছে। আরহাম হায়াতের মুখে ফু দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো।

হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না।এরপর আরহাম বলা শুরু করলো
আরহামঃ কলেজের প্রথম দিন একটা মেয়ের সাথে আমার দেখা।বসে না বুঝে আমায় বকে দিয়ে ছিলো আমি চুপচাপ তার কথা শুনছিলাম প্রচুর হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু কিছু বলিনি। এরপর থেকে নিজের অজান্তেই তার সাথেই ঝগড়া করে ফেলতাম এরপর আস্তে আস্তে তাকে বুঝা শুরু করলাম। অর্পার বার্থডের দিন তার সাহস দেখে অবাক হয়েছিলাম। তার কাছে যেটা ভুল সেটা ভুলই সে বিনা কারনে অত্যাচার সহ্য করার মানুষ নন। যখন আমার মুখের উপর জুস ফেলে প্রচুর রাগ লেগেছিলো। যখন সে আদনান ভাই এর সাথে কথা বলছিলো আমি বারান্দায় ছিলাম তখন কেনো যেনো অনেকটা খারাপ লাগছিলো। তা হিংসাও বলা চলে। এরপর থেকে তার সব কিছুই কেনো যেনো ভালো লাগে কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি যখন তার সাথে আমার বিয়ে হয় আর ফুলসজ্জার রাতে তার ড্রামা দেখে অনেক হাসি পেয়েছিলো। আস্তে আস্তে তার সাথে থাকতে থাকত্ব তার উপত দূর্বল হয়ে পড়ি কিন্তু তখনো বুঝতে পারিনি তার জন্য আমার মনের অজানা_অনুভূতি টা কি ছিলো। যখন তার সাথে আমার বিচ্ছেদ হয় তখন বুঝেছিলাম সে আমার জন্য কি। তখন বুঝেছিলাম তার জন্যে আমার অজানা অনুভূতি টাই বা কি। হ্যা আজ আমি তাকে আমার মনের অনুভূতি টা বলতে এসেছি। হায়াত ভালোবাসি তোমায়। অনেক বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমার বলা এক একটা শব্দকে। ভালোবাসি তোমার রাগটাকে।, ভালোবাসি তোমার মুখের মিস্টি হাসিকে ভালোবাসি তোমার নীলবাবুর প্রিয়তমাকে। ভালোবাসি তোমায় মোহিনি। তুমি আমার মোহিনী। আমি তোমার নীলবাবু থেকে বরবাবুতে রুপান্তরিত হতে চাই। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই। দিবে কি আমায় একটি সুযোগ তোমার নীলবাবু থেকে বরবাবু হওয়ার সুযোগ।

হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ সে খুব খুশি আরহাম তার বলা কথাটা বুঝতে পেরেছে। আরহাম তাকে ভালোবেসে আপন করতে চাচ্ছে। এটাই টহ সে চেয়ে ছিলো। দেরি হোক তাতে কি অবশেষে সে সফল হলো। হায়াত দেরি না করে বলল

হায়াতঃহ্যা আমি রাজি আপনাকে নীলবাবু থেকে বরবাবুতে ট্রান্সফার করতে। এবার জোর করে নয় ভালোবেসে আপনার সাথে থাকতে চাই। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই। আমিও তোমায় ভালোবাসি আরহাম চৌধুরী। (বলেই মিস্টি হাসি দিলো)
হায়াতের মাথায় বেলু ফুলের মালাটা পড়িয়ে কপালে গভীর ভাবে চুমু দিলো।

★★ আরহামের কাদের মাথা রেখে আছে হায়াত। আরো বেশ কিছুক্ষণ থেকে হায়াতকে বাসায় পৌঁছে দেয় আরহাম।

হায়াতদের বাসার গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে দুজন।
হায়াতের হাত শক্ত করে ধরে আছে আরহাম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না এই হাতটি। কিন্তু না চাওয়া স্বত্বেও হাতটা ছেড়ে দিলো আরহাম। হায়াত হালকা হেসে আলতো করে আরহামকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে চলে গেলো। আরহাম ৫ মিনিট স্তব্ধ হয়ে ছিলো এরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে গেলো।

পরেরদিন সকালে হায়াত রেশমি চৌধুরীকে কল দিয়ে কথা বলে ফোন রেখে দিলো।

★★
হায়াতদের বাসায় আরহামের পুরো পরিবার আসলো। হায়াত ও আয়াতের বিয়ে ঠিক করা হলো এবার অনেকটা বড় করেই করবে দুই ভাই এর বিয়ের অনুষ্ঠান।

সবাই অনেক খুশি। হায়াত এক পলক আদনানের দিকে তাকিয়ে রেশমি চৌধুরী ও আদনানের মায়ের সাথে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে গেলো তাদের।

তারা কথা বলে বের হলো।
আরহাম ❤️হায়াত, আরনাব♥ হায়াতের বিয়ে ঠিক করলো। যেদিন আরহামের বিয়ে হয়েছে হায়াত ওইদিন বিয়ের ডেট দিলো। হায়াতদের বিয়ের এক বছর হবে ওইদিন আর ওইদিনই হবে হায়াত ও আরহামের আবার বিয়ে। হয়ে যাবে তারা এক।
হায়াত সবার দিকে একবার চোখ ভুলিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here