অজানা_অনুভূতি
পর্বঃ৯
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat
আরহাম চারপাশ পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে। কোথাও হায়াত নেই। সে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো। ভাবছে সবাইকে কি জবাব দিবে। নিজের পরিবার ও হায়াতের পরিবারকেই বা কি জবাব দিবে। এমনটা না হলেও পারতো। হায়াত তুমি কোথায়।
আরহাম ভিজে একাকার হয়ে আছে। হাতে হায়াতের ছাতাটা নিলো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আরহামের।
আরহাম পকেটে থেকে ফোন বের করলো ফোন ভিজে গিয়েছে। যেকোনো সময় অফ হয়ে যেতে পারে। ফোনের স্ক্রিনে আদনান নাম ভেসে উঠছে। ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। আরহামের শরীর কাপছে। ফোন রিসিভ করলো।
আরহামঃ হ্যালো ভাই
আদনানঃ আরহাম কোথায় তুই।
আরহামঃ হ্যালো হ্যা ভাই শোনা যাচ্ছে না। হ্যালো
বৃষ্টির কারনে নেটওয়ার্ক সমস্যা তার উপর মেঘের আওয়াজে৷ শোনা যাচ্ছে না।
আদনানঃ হ্যা আরহাম তুই যলদি আমাদের এক্সট্রা বাড়িতে চলে আয়। যেখানে আমরা আগে এক সাথে থাকতাম।(জোরে বলল)
আরহামঃ ভাই আমি এখন আসতে পারবো না আমি ব্যস্ত।
আদনানঃ তুই যেই কাজে ব্যস্ত সেই কাজের সমাধান আমার কাছে চলে আয় যলদি। চলে… হ্যালো হ্যালো
ফোন কেটে গেলো।আরহামের ফোন অফ হয়ে আছে। আদনান ভাবছে আরহাম শুনেছে কি না।
১০ মিনিট পর
আরহাম গাড়ি নিয়ে আদনানের বাড়িতে এসেছে। এই বাড়িটা ফাকা থাকে ছোট বেলায় আরহাম, আরনাব ও আদনান এক সাথে এখানে থাকতো আড্ডা দিতো। আরহাম ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে এসেছে। বেশি দূরে না তাই তারাতারি এসে বাড়িটার ভেতরে গেলো। ১ তলা বাড়ি তেমন বড় নয়। ৩ টা রুম আছে।
কলিং বেল চাপার সাথে সাথেই দরজা খুলল আদনান। মনে হচ্ছে আরহামেরই অপেক্ষায়।
আদনানঃ একি আরহাম তুই তোহ একদম ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিস। চল যলদি।
আরহামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। আরহামের হাতে আদনানের টিশার্ট আর টাউজার দিলো।
আরহাম রুমে গিয়ে অবাক। কারন চাদরে মোড়ানো খাটে নিস্তেজ হয়ে আছে হায়াত। আরহাম তারাতারি হায়াতের কাছে গেলো।
আরহাম কয়েকবার হায়াতকে ডাকলো কোনো সাড়া শব্দ পেলো না। হায়াতের গা একদম গরম হয়ে আছে।
আরহাম যলদি বের হয়ে কিছু বলবে তার আগেই আদনান বলল
আদনানঃ একি তুই এখনো চেঞ্জ করিসনি।ঠান্ডা লাগবে তোহ যা যলদি।
আরহাম কিছু বলতে যাবে তার আগে।
“আদনান বাবা রান্না ঘরে তোহ কিছু নাই তোমরা খাইবা কি “(একজন মহিলা)
আরহামঃ রহিমা খালা।
আদনানঃ খালা সমস্যা নেই আমি দেখছি কি করা যায়।
রহিমাঃ তোমরা আইবা আমারে আগে কইবা না। তাইলে আমি রান্না কইরা তোমাগো খালুর সাথে সাথে তোমগো লিগাও নিয়ে আইতাম।
আদনানঃ আসলে হুট করে আসছি তো।
রহিমাঃ আইচ্ছা আমি আরহামের বউয়ের কাপর বদলায় দিছি৷ তোমরা খেয়াল রাইকো। আরহাম বাবা তোমার বউয়ের খেয়াল রাখোনা নাকি। আর তুমিও তোহ দেখি ভিজে গেছো যাও কাপর বদলাও। বউয়ের কাপরডি আমি ধুয়ে পাশের রুমে শুকাইতে দিছি। আইচ্ছা আমি যাই এইবার।
আদনানঃ খালা আপনি একা কিভাবে যাবেন।
রহিমাঃ চিন্তা কইরো না তোমার খালু আমারে দিয়ে আইবো নে।
আদনানঃ আচ্ছা।
আদনানের বাড়ি দেখাশোনার জন্য একজন লোককে রাখা হয়েছিলো উনার স্ত্রী হলো রহিমা। ভাগ্য ভালো যে ওনাকে আসার সময় পেয়ে গিয়েছিলো। উনি খাবার আর ছাতা দিতে আসছে ওনার স্বামীর জন্য। উনি চলে যাবে এমন সময় আদনানের সাথে দেখা।এরপর আদনান উনাকে একটা টিশার্ট ও টাউজার দিয়েছিলো। কারন এছাড়া মেয়েদের পোশাক নেই আদনানের কাছে রহিমা খালা চলে গেলো।আরহাম পোশাক বদলে হায়াতের পাশে বসলো।
হায়াতের গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। জ্বরে কাপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। এতো বৃষ্টিতে ডাক্তার আসবেও না। চারপাশ ঝড় শুরু। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। ফোনও নেই। গাড়িতে হায়াতের ফোন। বাসার সবাই চিন্তা করছে। হায়াতের অবস্থাও ভালো নয়। কি করবে আরহাম চিন্তায় পড়ে গেলো। নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছে।
মোম বাতি এক হাতে আরেক হাতে একটা বাটি নিয়ে এসে আরহামের পাশে টুল টেনে বসলো।
আদনানঃ এই নে ফোন করে সবাইকে বল আজকে বৃষ্টির কারনে তোরা বাসায় যেতে পারবি না(ফোন এগিয়ে দিলো)
আরহাম ফোন নিয়ে আরনাবকে জানিয়ে দিলো।
আরহাম হায়াতের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।
আরহামঃ আদনান ভাই হায়াতকে তুই কোথায় পেলি।
আরহামের কথার উত্তর না দিয়্ব পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আদনান,
আদনানঃ হায়াতের এই অবস্থা কিভাবে হলো। তুমি কোথায় ছিলে?
আরহাম আদনানের কথা আচ করতে পেড়েছে।
আরহামঃ নিশ্চুপ।
আদনানঃ মিটিং শেষ করে আসছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামালাম বৃষ্টির কারনে চেহারা দেখতে পারছিলাম না। পড়ে খেয়াল করে দেখলাম। হায়াত চুপচাপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে পাশেই খোলা ছাতা হয়তো হায়াতের সে বাতাসে হালকা দূরে চলে যাচ্ছে সেদিকে হায়াতের কোনো খেয়াল নেই। আমি বের হয়ে হায়াতকে ডাকলাম জিজ্ঞেস করলাম সে শুধু এক নজর আমার দিকে তাকালো আর তোর নাম নিয়ে পড়ে গেল। ওকে গাড়িতে করে নিয়ে আসি বুঝলাম অনেক্ষন ধরে বৃষ্টিতে ভিজতেছে। যার ফলে ঠান্ডায় বেহুশ হয়ে যায়।বৃষ্টির কারনে ডাক্তার ডাকতে পারিনি তাই তোকে বললাম। আর হ্যা মনে হয়না কারেন্ট আসবে। মোম বাতি আরো আছে আমি দিয়ে যাবো আর হ্যা তোদের জন্য কাপ নুডলস আছে এছাড়া আর কিছুই নেই গরম গরম নুডলস খাইয়ে দিস হায়াতকে।
আরহাম মন দিয়ে আদনানের কথা শুনছে। আদনানের কথার উপর কখনো কথা বলেনি আদনান কিভাবে যেনো আরহামের সমস্যা আচ করতে পারে। হয় বড় ভাই বলে সে সব সময় আরহামকে সাহায্য করে। আজকের কথা গুলো আরহাম বুঝে গিয়েছে। তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
আদনানঃ মেয়েটা খুব ভালো। ওকে কষ্ট দিস না। আরহাম সব কিছুর সমাধান আছে। যতই সমস্যা হোক তা সুন্দর করে মোকাবিলা করা উচিত। একজনের ভালো করতে গিয়ে আরেকজনের খারাপ করাটা ঠিক হবে না। যাইহোক তোরা থাক আমি বাসায় যাচ্ছি।
আরহাম আদনানকে কে জড়িয়ে ধরলো। আদনান হাসলো।
আদনানঃ তুই আর হায়াত থাক এখানে বাসায় আম্মু আছে তাই যেতে হবে। জানিসই তোহ আমার অপেক্ষায় থাকে। বাবাও বাড়িতে নেই। ৫ বার কল করেছে। আর হ্যা নিজেদের খেয়াল রাখিস।
আরহামঃ ভাই ফুপ্পির খেয়াল রাখিস।আর ওনার সাথেই থাকিস। সাবধানে থাকিস।
আদনান চলে গেলো।আরহাম হায়াতের পাশে বসে আছে। মোমবাতির আলোয় হায়াতের চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে৷ কেমন যেনো মলিন হয়ে আছে। আরহাম রেস্তোরাঁতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৩০ মিনিট লেগেছে আর এই এরপর ওখানে থেকে আসতেও ৩০ মিনিট। আর আদনান ভাই ১০ মিনিট আগে পেয়েছে এরমানে ৪০ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজছিলো। এমনিতেই হায়াতের শরীর দূর্বল ছিলো তাই বেহুস হয়ে গিয়েছে।
আরহামের অনেক খারাপ লাগছে এভাবে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসলেও পারতো।
হায়াতকে উঠিয়ে জোর করে নুডলস খাইয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তা বমি করে বের করে ফেলে। আরহাম নিজে হাতে তা পরিষ্কার করেছে। হায়াত আরহামকে এক নজর দেখে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
রাত ১ বাজে আরহাম হায়াতের মাথায় পানি ঢেলে।চোখ মুখ হাত পা মুছে দিয়ে শুয়ে দিলো। গায়ের তাপমাত্রা একটু কমেছে।
আরহাম হায়াতের হাত শক্ত করে ধরে আছে। আজ আরহামের মনে পরলো অনেক দিন আগের কথা।
সে হায়াতকে নানান ভাবে অত্যাচার করেছে আর হায়াত চুপ করে কেনো সহ্য করেছে তাও ভালো করে বুঝেছে। নিজের জন্য যখন কাছের মানুষের ক্ষতি হয় তখন কেমন লাগে তা হারে হারে এই ৫ মাসে টের পেয়েছে আরহাম। নিজের কাছের মানুষকে বাচাতে হলে কতো কিছু করতে হয় তা বুঝলো। তাই তোহ একটু হাসি খুশি দুষ্টু মেয়ে কিভাবে যেনো ধৈর্যশীল হয়ে উঠেছিলো। চুপ থাকাটাকে আপন করে নিয়েছিলো।
অনেক দিন আগে আরহাম বাহির থেকে এসেই খাটে শুয়ে পড়ে। হায়াত তখন কাজ করছিলো। আরহাম চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ নিজের কপালে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে দেখলো হায়াত আরহামের কপাল গলায় হাত দিয়ে দেখছে।
হায়াতঃ একি আপনার গায়ে তোহ প্রচুর জ্বর। সারাদিন এই জ্বর নিয়ে কোথায় ছিলেন বলেন তোহ।
আরহামঃ যেখানেই ছিলাম তোমার কি আমার ঘিম পাচ্ছে তাই বিরক্ত করো না। আরহাম শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর হায়াত হাতে একটা বোল নিয়ে আসলো সাথে বালতি। আরহামকে টেনে উঠিয়ে শার্ট খুলে দিলো। এরপর শুয়ে মাথায় পানি ঢালছে আর বকবক করছে।
হায়াতঃ আমার যখন জ্বর হতো তখন আম্মু নয়তো ভাইয়ারা আমার মাথায় পানি ঢেলে দিতো আর যাদুর মতো আমার জ্বর কমে যেতো। এরপর আম্মু না থাকায় আয়াত আমার মাথায় পানি ঢালতো। জানেন আমার জ্বরের সময় আয়াত কতো কিছু যে রান্না করতো। হাহাহা তখন ওর হাতের রান্না খেতে হতো। এটা সেটা বানিয়ে নিয়ে আসতো আর ওর হাতে যাদু আছে ওর হাতের রান্না খেলে জ্বর কমে যায়। একদিন বলবো নে আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে। আরে বলার দরকার কি ও তোহ এবাড়িতেই থাকবে তাই না।
আরহাম চুপচাপ হায়াতের কথা শুনছে। শরীরটা দূর্বল লাগছে।এরপর হায়াত আরহামের শরীর মুছে দিলো হাত পা ধুয়ে শুইয়ে দিলো।
আরহাম ঘুমিয়ে ছিলো ওকে টেনে উঠিয়ে সুপ খাইয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপছে। সারারাত হায়াত আরহামের পাশে বসা ছিলো। সকালে আরহামের ঘুম ভেঙে যায় আর হায়াতকে নিজের কাছে দেখে অবাক কারন হায়াত মেঝেতে বসে খাটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আরহাম তা দেখে ভাবলো ডাক দিয়ে খাটে শুতে বলবে।
তার আগেই আরহামে ফোন বেজে উঠলো। আর হায়াতের ঘুম ভেঙে গেলো।
আরহামঃ হ্যালো জেসিকা বলো।
জেসিকাঃ কোথায় তুমি এখনো আসোনি কেন।
আরহামঃআসলে একটু জ্বর হয়েছে তোহ।
জেসিকাঃ তোমার ওসব বাহানা শোনার সময় আমার নেই যলদি চলে আসো।
আরহামঃ আমি আসছি ১০ মিনিট…
হায়াত আরহামের কাছ থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিলো।
ফোন নিয়ে বারান্দায় গেল আরহামকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলল।
হায়াতঃ হ্যালো মিস জেসিকা কোনো কি কমন সেন্স নেই। আচ্ছা কেমন ভালোবাসা এটা হ্যা। যেখানে ভালোবাসার মানুষটা অসুস্থ কোথায় জিজ্ঞেস করবে খেয়েছো কি না ঔষধ খেয়েছো কি না তা না করে যলদি চলে আসো।
জেসিকাঃ এই মেয়ে তুমি আরহামের ফোন ধরেছো কেন।আরহামকে ফোন দেও তোমার লেকচার তোমার কাছেই রাখো।
হায়াতঃ আমি মিসেস আরহাম চৌধুরী যেখানে আমার বর অসুস্থ সেখানে আমি তাকে এই শরীর নিয়ে যেতে দিবো ভাবলে কি করে। শোনো জেসিকা। আর একবার যদি আরহামকে কল দিয়ে বলেছো যে আসো তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। অর্পার বার্থডের কথা তোহ মনে আছে নাকি।
বলেই ফোন কেটে আরহামকে দিয়ে দিলো।
এই কথা গুলো আরহামের ফোনে রেকর্ড ছিলো তাই মাঝে মাঝে হায়াতের আড়ালে শুনতো আরহাম।
আজ সেইদিনের কথা মনে পরে গেলো। না চাওয়া স্বত্বেও হায়াতকে কিছু বলতে পারতো না আরহাম।
আরহাম হায়াতের পাশে বসে এইসব ভাবছে কতো কি না করেনি হায়াতের সাথে সে। নিজে ধুয়ে রাখা কাপর ভিজিয়ে তা হায়াতকে দিয়ে ধুয়েছে। সবার সামনে নিজেদের সুখী দেখালেও রুমে চলতো মানসিক অত্যাচার। কখনো শ্যাম্পু ফেলে দিতো তোহ কখনো শাড়ি কেটে ফেলতো।
এইতোহ আরহাম হায়াতের একটা সুন্দর শাড়ি ✂ কাচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। হায়াতও আরহামকে নিয়ে শপিংমল এ গিয়ে সবার সামনে মাটিতে বসে পড়েছে। কারন ওর ওই সেম শাড়িই চাই। অনেক খুজে খুজে শাড়িটা কিন্তু হয়েছিলো। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছিলাম। শাড়ির জন্য আম্মু কাছ থেকে কিনা বকা খাইয়েছে হায়াত।
এই ৫ মাসে জেসিকা হায়াতের সাথে কি না করেনি কখনো গরম কফি হাতে ঢেলে দিয়েছে তোহ কখনো চুইংগাম চুলে দিয়ে দিয়েছে সব কিছুর মাঝে হায়াত চুপ করেছিল। আমিও যে নিরুপায় ছিলাম। নিজের বোনের ক্ষতি কে চাইবে তাই তোহ সব অত্যাচার সহ্য করেছিলো। আরহাম ভাবলো হায়াতকে সব সত্যি বলে নিজের সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবে। এই ৫ মাসে হায়াতকে ভালো করে বুঝে গিয়েছে আরহাম। আরহামের মনেও হায়াতকে নিয়ে এক অজানা_ অনুভূতি আছে সেটা বুঝতে পারছে না সে।
পরেরদিন হায়াত ঘুম থেকে উঠে দেখলো আরহাম মেঝেতে শুয়ে আছে। গায়ের জ্বর নেই বললেই চলে সারারাত আরহাম হায়াতের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। জ্বর একদম কমে গিয়েছে। হায়াত উঠে আরহামের গায়ে চাদর দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো । ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো। নিজের ড্রেস শুকিয়ে গিয়েছে তা পড়ে আদনানের ড্রেস ধুয়ে রোদে দিলো। বাহিরে অনেক রোদ। বুঝবেই না যে কাল এতো বড় ঝড় গিয়েছে।
আরহামকে ঢেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো হায়াত।
বাসায় পৌঁছে সবাইকে একটা বানোয়াট কাহিনি বলে দিলো। আরহাম অবাক হয়েছিলো সে ভাবলো বাসায় এসে সবাইকে বলে দিবে। আরহামও বলবে কিন্তু হায়াত না বলায় আরহামও বলল না।হায়াতকে স্বাভাবিক দেখে আরহামের অবাক লেগেছিলো।এরমাঝে জেসিকা হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো। কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।আরহাম মনে মনে খুশি হলো তারপর একটা টেনশন হঠাৎ কোথায় গেলো।
জেসিকার নানী থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করে আসছে। জেসিকার বাবা মা বলেছে এমন অনেকবার জেসিকা করে বেরায় হটাৎ করেই গায়েব হয়ে যায় সে আসলে ঘুরে বেরায় কাউকে কিছু না বলে তাই তারা
নিশ্চিন্তে আছে।
একটা অন্ধকার রুমে বেধে রেখেছে জেসিকাকে মুখে টেপ লাগানো। দুইজন ব্যক্তি আসলো আর জেসিকার সামনে বসলো।
জেসিকা অবাক হয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
গরম গরম ৫ কাপ কফির গ্লাস সামনে রাখা আছে।
একটি মেয়ে অনেক গুলো প্রশ্ন করছে আর হাতে গরম কফি ঢালছে।
জেসিকার চিৎকারে রুম কেপে উঠছে। ওর এই চিৎকার বাহিরে কারো কানে পৌছাবে না।
★★
হায়াতরা কলেজ করে ফুসকার দোকানে বসলো।
হায়াতঃ বান্ধুবিরা চলনা আজকে ব্রিজের উপর ঘুরে আসি।
আয়াতঃ হ্যা অনেক দিন ধরে যাই না।
প্রিসাঃ তোর ভাই জানলে আমাকে পিটাবে।
আনিশাঃ ধ্যাত কেমন বর তোর হ্যা।
প্রিসাঃ তোর ভাসুর হয় রেস্পেক্ট দে।
আনিশাঃ আমার আর ভাসুর হাহাহাহা
অর্পাঃ এভাবে পাগলের মতো হাসতেছিস কেনো।
আনিশাঃ হাসবো না তোহ কি করবো বল।
হায়াতঃ হাওয়াই মিঠাই।
আনিশাঃ হাওয়াই মিঠাই দিয়ে কি করবো।
হায়াতঃ ওই যে হাওয়াই মিঠাইওলা যাচ্ছে চল। অনেক দিন ধরে খাইনা খেয়ে আসি।
হায়াত দিলো এক দৌড়।
অর্পাঃ আজকে হায়াতকে কেমন যেনো লাগছে। এতোদিন তোহ চুপচাপ ছিলো।
আয়াতঃ জেসিকা ডাইনি নাই তোহ তাই ভালো আছে।
প্রিসাঃ তাই হবে চল আমি গেলাম হাওয়াই মিঠাই খেতে।
হায়াতরা হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে। হায়াত হেসে হেসে কথা বলছে। আজকে ইভান ইশান ইফাতকে হায়াত আসতে বলেছে। ওদের টাকা দিয়ে শপিং করবে। আরহাম ও আরনাব ক্লাস শেষ করে চলে এসেছে।
হায়াতরা শপিংমল ঘুরছে।
ইভানঃ আর কতো এতো ঘুরো কেনো তোমরা বলো তোহ কিছু তোহ কিনলা না।এক জিনিস ৫ টা দোকানে ঘুরে ঘুরে কিনো।
অর্পাঃ তুমি বুঝবা না। চুপচাপ চলো।
হায়াত একটা চুড়ির দোকানে গেলো। অনেকগুলো চুড়ি কিনলো আর বিল দিলো ইভান। কানের দুল কিনলো তার বিল দিলো ইশান। দুইটা শাড়ি কিনলো তার বিল দিলো আরনাব। দুই জোড়া জুতা কিনলো তার বিল ইফাত দিয়েছে। আসলে হায়াত জোর করে সবাইকে একে একে বিল দিতে বলেছে।
ইফাতঃ অনেক কষ্টে পকেট মানি থেকে টাকা বাচিয়েছিলাম। আর তা শেষ করে দিলি তুই।
হায়াতঃ হুউহ এখনই এমন করিস বিয়ের পর কি করবি কিপটা।
ইফাতঃ অফ এই এক কথা শুনতে শুনতে আমার কান শেষ।
হায়াতঃ হ্যা হ্যা এখন তোহ আমার কথা ভালো লাগে না।একদিন বুঝবি।
সবাই হেসে দিলো। হায়াতও হাসছে অনেক হাসছে।
এরপর সবাই কেনা কাটা করে একটা রেস্তোরাঁতে গেলো।
প্রিসাঃ কি খাবা সবাই।
হায়াতঃআইসক্রিম খাবো।
আয়াতঃএখন আইসক্রিম খাওয়ার সময় না অন্য কিছু অর্ডার কর।
সবাই অর্ডার করছে। হায়াত খাচ্ছে আর খাবের মাঝে মাঝে ম্যাংগোবার খাচ্ছে।
অর্পাঃ এই তুই কোন স্টাইলের খাওয়া খাচ্ছিস বলতোহ।
হায়াতঃ হায়াতের স্টাইলে। তুই খাবি।
অর্পাঃ সম্মান দিয়ে কথা বল আমি তোর ভাবি হই।
হায়াতঃ তুইও সম্মান দিয়ে কথা বল আমিও তোর ভাবি হই।
সবাই হেসে দিলো। আরহাম হায়াতের আগের রুপ দেখে খুব খুশি হলো।হায়াতের সাথে সব কিছু ঠিক করার প্ল্যান করছে। খাবারের বিল হায়াত দিয়েছে।
হায়াতঃ আমার নজরানার টাকা দিয়ে খাইয়েছি তোদের।হু
ইফাতঃ খুব ভালো আমাকে কিছু টাকা দিয়ে দে।
হায়াতঃ এহ আসছে আমার টাকা নিতে দিবো না।
ইশানঃ ঠিক আছে দিস না সেই টাকা দিয়ে আমাকে কিছু কিনে দে।
হায়াত্নঃ দিবো নে পড়ে ওকে।
আরহাম ও হায়াতের বিয়ের আর ৬ মাস হতে মাত্র ৭ দিন বাকি।
আরহাম বসে বসে টিভি দেখছিলো হায়াত আসলো।
হায়াতঃ শুনুন নীলবাবু থেকে ট্রান্সফার হওয়া বরবাবু।
আরহাম ভ্রু কুচকে তাকালো।
হায়াতঃ আপনার জন্য পাস্তা রান্না করেছি এই নিন(বাটি এগিয়ে দিলো)
আরহামঃ তুমি রান্না করেছো।
হায়াতঃ হ্যা আমি (ভাব নিয়ে) সবাইকে দিয়েছি ইউটিউব থেকে নতুন রেসিপি দেখেছি।
আরহাম খাচ্ছে।হায়াত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
হায়াতঃ আব বরবাবু বলছিলাম কি আপনি যদি কলেজ থেকে ছুটি নিতেন তোহ ভালো হতো।
আরহামঃ কেনো।
হায়াতঃ আমি কিছুদিন আপনার সাথে সময় কাটাতে চাই। একটু ঘুরবো। অনেক জায়গায়ই তোহ ঘুরা হয়নি তাই। বাসায় আর ভালো লাগছে না।প্লিজ।
আরহাম একটু ভেবে রাজি হয়ে গেলো।
আরহামঃ ঠিক আছে।
হায়াতঃ খুশি হয়ে ধন্যবাদ।
এরপর হায়াত ও আরহাম ঘুরতে গেলো ড্রিম হলিডে পার্ক। সেখানে একদিন ঘুরে। আরো অনেক জায়গা ঘুরলো। আরহাম হায়াতকে প্রথম মন থেকে শপিং করিয়ে দিলো। এরপর সারা রাত লং ড্রাইবে যেতো। রাতে হায়াত ও আরহাম ব্রিজের উপর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতো। আরহামের কাছে দিনগুলো খুব ভালো লাগছিলো। হায়াতকে নিয়ে তার মনের অনুভূতিটাকে বুঝতে শুরু করছিলো।
হায়াত ওর একটা আংটি ছিলো তা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে সবার জন্য গিফট কিনে গিফট দিলো। সবাইকে মজার মজার নতুন নতুন রান্না করে খাওয়াচ্ছিলো। শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির সবাই অনেক খুশি ছিলো।
আর মাত্র ২৪ ঘন্টা বাকি আছে ৬ মাস হতে। হায়াত বাবার বাড়ি গিয়ে সবার সাথে কথাবার্তা বলে সময় কাটালো। আরহাম হায়াতকে নিজের মনের অনুভূতিটা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)