অতঃপর_দুজনে_একা -০৪,০৫

0
680

#অতঃপর_দুজনে_একা -০৪,০৫
লাবিবা ওয়াহিদ
০৪

————————
উৎসবমুখর পরিবেশ। লাল, নীল, সবুজ ইত্যাদি রঙের মরিচবাতিতে বাড়িটা উজ্জ্বল হয়ে আছে। অসময়ের বৃষ্টিতে আবহাওয়া মুখোরিত। বৃষ্টি থেমেছে ঘন্টাখানেক হলো। অদূর থেকে সফট মিউজিকও শোনা যাচ্ছে। নানান মানুষের আনাগোনা চলছে আয়ন্তির বাড়িতে। আয়ন্তির বাবা নুরুল আলম এবং ওয়াসিফের বাবা মেহমানদের স্বাগতম জানাচ্ছে এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছে। আজ আয়ন্তি এবং ওয়াসিফের এঙ্গেজমেন্ট পার্টি। ওয়াসিফের বন্ধু এবং আয়ন্তির কাজিনরা অনুষ্ঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওয়াসিফ কিছুক্ষণ বাদেই আসলো মেহমানদের মাঝে। সে ফর্মাল সুট পরেছে। আয়ন্তি আশেপাশে নেই।

আয়ন্তি বেলকনি দিয়ে মাহবিনের রুমে উঁকিঝুঁকি মারছে। এখনো আয়ন্তি তৈরি হয়নি। মাহবিন জ্বরে কাত। আপাতত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মাহবিনের চিন্তায় আয়ন্তির ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে এলো। ইচ্ছা করছে মাহবিনের রুমে গিয়ে মাহবিনকে দেখে আসতে। মাহবিনের শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে। ছেলেটা যে এভাবে পরে আছে সেই খবর নেয়ার প্রয়োজন কারো নেই। আয়ন্তির মনে পরে যায় কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনাগুলো।

আয়ন্তি এবং ওর সকল কাজিনরা পার্লার গিয়েছিলো সাজতে। এর মাঝে নামে ধুম বৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি। আয়ন্তির পার্লারের থাই গ্লাসটা কিছুটা ফাঁক করে বৃষ্টি দেখছিলো। বাকি’রা ভেতরে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলো। আয়ন্তির কোনোরূপ তাড়া ছিলো না সাজ নিয়ে। তাই ওদের বসিয়ে সে নিজে এখানে আরাম করে বসেছিলো। হঠাৎ পার্লারের থাই গ্লাসটাতে কেউ জোরে জোরে থাবা বসালো। আয়ন্তি চমকে উঠলো। ভেতরে বেশ কড়া শব্দে গান বাজছে, সাউন্ড বক্সে। তাই ওরা সেই শব্দ উপলব্ধি করতে পারলো না। আবারও একই থাবার শব্দ। একবার, দুইবার, ঘনঘন। আয়ন্তি আতঙ্কের সাথে উঠে দাঁড়ায় এবং অল্প করে খোলা থাই গ্লাসটা আরেকটু ফাঁক করে শুধু মাথা বের করলো এবং দেখার চেষ্টা করলো মানুষটা কে? আয়ন্তি যেন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মাহবিন কাকভেঁজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ-মুখ তার অসম্ভব লাল হয়ে আছে! ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে আয়ন্তির দিকে তাকালো মাহবিন। আয়ন্তিকে চিনতে না পেরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে,
–“আয়ন্তিকে ডেকে দিবেন প্লিজ?”

আয়ন্তি চমকায়, ভিষণরকম। এবার আয়ন্তি বেরিয়ে আসলো পার্লার থেকে। মাহবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। উপরে ছাদ আছে দেখে মাথায় বৃষ্টি পানি লাগছে না। তবে পায়ের দিকে বৃষ্টির ঝাপটা লাগছে। আয়ন্তিকে এবার চিনলো মাহবিন।
–“ওহ তুমি ছিলে? তোমার গাড়িটা কোথায়?”
–“আপনার কী হয়েছে মাহবিন? এমন এলোমেলো লাগছে কেন?”
–“জানি না। তোমাদের গাড়ি করে আমায় বাসায় দিয়ে আসবে প্লিজ? আমার মাথা কেমন ভার হয়ে আছে। মানিব্যাগটাও বাসাতে ফেলে এসেছি আমি। দিক-নির্দেশনা না পেয়ে তোমার কাছে এসেছি। আশেপাশেই ছিলাম আমি!”
–“আমি পার্লারে তা আপনি জানলেন কী করে?”

বেশ অবাক হয়ে বললো আয়ন্তি। মাহবিন রুদ্ধশ্বাস ফেলে বলে,
–“তোমায় দেখেছি পার্লারের ভেতরে।”

মাহবিন যেন আরও কিছু বলতে নিচ্ছিলো। ঠিক তখনই তার চোখ বুজে এলো। ঢুলতে ঢুলতে আয়ন্তির উপর গিয়ে পরলো। আয়ন্তি মাহবিনের ভার সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলো। মাহবিনের হাত ধরতেই আয়ন্তি আঁতকে উঠলো। মাহবিনের শরীর অসম্ভব গরম। এই অসময়ের বৃষ্টির কারণে মাহবিনকে জ্বর কাবু করে ফেলেছে। আয়ন্তি কোনো দিকে না তাকিয়ে দ্রুত মাহবিনকে ধরে ধরে তাদের গাড়ির কাছে চলে গেলো। গাড়ির ভেতরে ড্রাইভার ছিলো। আয়ন্তিকে ওই অবস্থায় আসতে দেখে হাতে ছাতা নিয়ে ড্রাইভার বেরিয়ে আসলো। দ্রুত আয়ন্তির মাথার উপর ছাতা মেলে দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
–“কী হয়েছে স্যারের?”
–“এতকিছু বলার সময় নেই চাচা। দ্রুত ওনাকে ধরে গাড়িতে বসান এবং বাসায় চলেন!”

ড্রাইভার ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। মাহবিনকে দুইজন ধরে পিছের সিটে বসিয়ে দেয় এবং আয়ন্তিও উঠে বসে। ড্রাইভার উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দেয়া হয়। আয়ন্তি সারা রাস্তায় নিজের ওড়না দিয়ে মাহবিনের মাথা, কপাল, গাল মুখ মুছে দিয়েছে। মাহবিন এখন জ্ঞানহীন। ঘোরের মাঝে উল্টো পাল্টা বকছে। আয়ন্তি বেশ ঘাবড়ে আছে মাহবিনকে নিয়ে। আল্লাহ জানে কীভাবে সুস্থ হবে সে। আয়ন্তি বারংবার ড্রাইভারকে তাড়া দিয়ে বলছে,
–“জলদি চাচা!”

ড্রাইভার স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাই রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। আয়ন্তি মনে মনে আল্লাহ্ কে স্মরণ করছে এবং এই বিপদে সাহায্য চাইছে। গাড়ির বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ড্রাইভার মাহবিনকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। সকলে বাড়ির পেছনদিকে ছিলো বিধায় কেউ ওদের দুজনকে দেখেনি। আয়ন্তি ড্রাইভারকে মাহবিনের রুমের অবস্থান জানিয়ে ফোনে মেসেজ করে দিলো নিলাকে। বলে দিলো আয়ন্তি কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলো তাই সে চলে এসেছে। আয়ন্তি মাহবিনের রুমে আসতেই দেখলো ড্রাইভার মাহবিনকে শুয়ে দিচ্ছে। আয়ন্তি আটকালো তাকে।
–“চাচা আগে ওনার ড্রেস চেঞ্জ করে দিন আপনি। এভাবে ভেঁজা কাপড়ে বিছানায় শুইয়ে দিলে আরও অসুস্থ হয়ে পরবে। এছাড়া বিছানাও ভিঁজে যাবে।”

ড্রাইভার মাথা নাড়ায়। মাহবিনকে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিতেই আয়ন্তি মাহবিনের জন্যে টিশার্ট এবং টাউজার দিলো। ড্রাইভার সেগুলো নিতেই আয়ন্তি রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অতঃপর নিজেও চেঞ্জ হয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আয়ন্তি। ততক্ষণে ড্রাইভার মাহবিনের ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে।
–“ড্রাইভার চাচা, আপনি এক কাজ করেন। আবারও পার্লারে চলে যান। ওরাও তো আসবে তাই না!”
–“তুমি চিন্তা করো না মা, আমি যাচ্ছি!”
–“আর হ্যাঁ চাচা। ওনার কথা কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ!”

ড্রাউভার হাসলো। হাসি-মুখে জবাব দিলো,
–“কোনো ব্যাপার না!”

————————-
আয়ন্তি বেশ সুন্দর করে রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। সকল গেস্ট আপাতত আয়ন্তির দিকে তাকিয়ে। আয়ন্তির তার বাবার দিকে তাকিয়ে একটি শক্ত হাসি দিলো। সেই হাসির মানে কেউ বুঝলো না, কেউ না। আয়ন্তি নামতেই ওয়াসিফ আসলো, আয়ন্তির সম্মুখে। আয়ন্তিকে চোখ জুড়িয়ে দেখে নিলো। আয়ন্তি একবারের জন্যেও ওয়াসিফকে দেখার প্রয়োজন বোধ করলো না। তার নজর আশেপাশে যাচ্ছে। মুখে বরাবরের মতোই জোরপূর্বক হাসি। আয়ন্তি একটি সুন্দর গাউন পরেছে। সাদা রঙের। মাথায় সাদা দোপাট্টা। আয়ন্তির জন্যে ওয়াসিফের হাতে রিং দেয়া হলো। অর্থাৎ এখনই ওদের এঙ্গেজমেন্ট হিয়ে যাবে। ওয়াসিফের মা ছেলেকে ইশারা করলেন যাতে আয়ন্তিকে পরিয়ে দেয়। আয়ন্তির এবার অস্বস্তি হতে শুরু করলো। যদু সত্যি সত্যি এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায়? তখন? ভয়ে একপ্রকার ঘামতে শুরু করলো সে। ওয়াসিফ রিং নিয়ে এগোচ্ছে। ধীরে ধীরে আয়ন্তির খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। সকলে হাসি-মুখে হাত তালি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেন এই শুভক্ষণে-ই শুভ কাজটি হয়ে যাবে। আয়ন্তির মা আয়েশা পাশ থেকে মেয়ের বাম হাতটা এগিয়ে দিলো।

কিন্তু ঘটনা ঘটলো একদম ব্যতিক্রম। ওয়াসিফ আয়ন্তিকে পাশ কাটিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে জয়ার হাতে রিং পরালো। রিং পরিয়ে জয়ার হাতে একটি চুমু খেয়ে ওয়াসিফ বললো,
–“উইল ইউ ম্যারি মি সুইটি?”

জয়া অমায়িক হাসি দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
–“ইয়েস!”

পরিবেশ মুহূর্তে-ই স্তব্ধ হয়ে গেলো। সকলে যেন নড়তে, শব্দ করতে, কথা বলতে ভুলে গেলো। হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেললো তারা। শূণ্য চোখে তাকিয়ে রয় সকলে ওদের দিকে। তার চেয়েও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালো ওরা। ওয়াসিফ জনসম্মুখে জয়াকে কি’স করে বসলো। দু’জন যেন পরম খুশির সাগরে ভাসছে। এরকম একটি দৃশ্য দেখে আয়ন্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো তার বাবার পানে। একটু বুঝতে চেষ্টা করলো তার বাবার মুখ-ভঙ্গি! ভিষণ হাসি পাচ্ছে আয়ন্তির, ভিষণ। ওয়াসিফ যে এরকম হবে সেটা জানারই ছিলো। চাইলে গতকালই সে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারতো কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গতে গেলে তার বাবা তাকে ভুল বুঝতো। তার চোখে সত্যতা তুলে ধরতে না পারলে কখনোই মানতেন না, বিশ্বাস করতেন না তিনি। তাইতো চুপ থেকেছে আয়ন্তি। নিরবতা অনেককিছু মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে প্রকাশ করে।

ওয়াসিফ জয়ার কোমড় জড়িয়ে আয়ন্তির সামনে এসে দাঁড়ালো। ওয়াসিফ শ’য়’তানি হাসি দিয়ে বলে,
–“এই হচ্ছে আমার রিভেঞ্জ। খুব না তোমার নিজেকে নিয়ে বড়াই? নাও?”

ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে ওয়াসিফ। নুরুল আলমের এবার ধ্যান ভাঙ্গে। চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আসে তার। ওয়াসিফ এত গুলো মানুষের সামনে তার মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো। নুরুল আলম ওয়াসিফকে কঠিন গলায় ডেকে ওয়াসিফের কলার গিয়ে ধরলো,
–“তোর এত বড়ো সাহস! তুই আমার মেয়েকে নিয়ে খেললি? নিজের এই রূপ দেখালি? জা’ নো’ য়া’রের বাচ্চা! তোকে তো আজ আমি খুন করে ফেলবো!”

কয়েকজন দ্রুত নুরুল আলমকে টেনে ওয়াসিফের কাছ থেকে সরালো। ওয়াসিফ হাসতে হাসতে তার কলার ঠিক করলো। নুরুল আলম আবার তেড়ে যেতে চাইলে বাকিরা তাকে আবার আটকালো। আয়েশা চোখেতে পানি জমেছে সেই কখনই। আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছে সে। এজন্যই বুঝি মেয়েটা তার সবসময় মনমরা হয়ে থাকতো? এর মাঝে হাই তুলতে তুলতে মাহবিন উপস্থিত হলো। ওয়াসিফ ততক্ষণে তার বাবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
–“ও পাপা! ড্রামা তো শেষ। চলো আমরা যাই, এখন এ বাড়িতে থেকে কাজ কী?”

ওয়াসিফের বাবা লজ্জিত ভঙ্গিতে নুরুল আলমের দিকে তাকালো। ছেলের বেহায়াপনা কর্মকান্ডে তিনি ভিষণরকম লজ্জিত। নুরুল আলম অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেই চলেছে ওয়াসিফকে। জয়ার মা এসে জয়াকে থাপ্পড় দিতে চাইলে ওয়াসিফ জয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর জয়ার মায়ের মুখে আঙুল তুলে একপ্রকার হুমকি দিয়ে বলে,
–“ভুল করেও এই স্পর্ধা দেখাবেন না। বেইবি, চলো! আমাদের এখানে থেকে কাজ নেই!”

জয়া ওয়াসিফের সাথে যেতে যেতে একবার ঘুরে আয়ন্তির দিকে তাকালো। আয়ন্তির চোখে-মুখে দেখতে চেয়েছিলো একরাশ দুঃখ। ভেঙ্গে যাওয়া আয়ন্তির মুখখানা দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ঘটনা উল্টো। আয়ন্তির চোখে-মুখে একরাশ প্রফুল্লতা। টাস্কি খেলো জয়া। একসময় ওরা চলে গেলো। সব ঘটনা মাহবিন সিঁড়ির রেলিঙ এ ভর দিয়ে দায় সাড়া ভাব নিয়ে দেখছিলো। ওরা চলে যেতেই মাহবিন পুণরায় হাই তুললো। যেন আগে থেকেই ইঙ্গিত পেয়েছিলো এই ঘটনার। মাহবিনের জ্বরটা এখনো পুরোপুরি ভাবে সারেনি। মাহবিন বর্তমানে আয়ন্তির ভাব-ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলো। নাহ! মেয়েটা স্বাভাবিক হয়ে আছে।

—————————-
~চলবে, ইনশা আল্লাহ।

#অতঃপর_দুজনে_একা – [০৫]
লাবিবা ওয়াহিদ

————————-
উৎসবমুখর পরিবেশটি হঠাৎ-ই থমথমে, স্তব্ধ হয়ে গেলো। হাসিতে ঝলমল করা সকলের মুখমন্ডল মুহূর্তেই বিমূঢ়, ভার হয়ে রইলো। নুরুল আলম সিঙ্গেল সোফায় শক্ত হয়ে বসে আছে। তার কাঁধ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে নীলার বাবা অর্থাৎ লুৎফর সাহেব। আয়েশা গিয়েছে জয়ার মায়ের সাথে ভেতরে। জয়ার মা অর্থাৎ আয়েশার মেজো বোন হঠাৎ-ই অসুস্থ হয়ে পরেন। বিপি হাই তার। ওয়াসিফের বাবা-মা সহ তাদের সকল গেস্ট অলরেডি চলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে যারা আছে তারা সবাই আয়ন্তির আপনজন। মাহবিন সেই অবস্থাতেই রেলিঙ এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে৷ ঘাড়, দেহ কেমন উষ্ণতায় ছেয়ে আছে তার। সে দাঁড়িয়ে আছে আয়ন্তির কিছু বলার অপেক্ষায়। আয়ন্তি কিছু বলছে না দেখে কিছুটা বিরক্তিবোধও হলো বটে। আয়েশা হঠাৎ বের হলেন, মেয়ের কাছে এলেন। মেয়েরও তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। জয়ার মায়ের কাছে তানজিলা, মুনিয়া ওরা আপাতত জয়ার মায়ের কাছে বসেছে৷ জয়ার বড়ো ভাই রিয়ন চোখ-মুখ শক্ত করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেন আ’ গুনের লাভা বের হচ্ছে তার। ঘটনাস্থলে সে ছিলো না। নুরুল আলমের আদেশে বাড়ির পেছনের দিকে কিছু অপূর্ণ কাজ সামলাতে গেছিলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে যে এতকিছু ঘটে যাবে কে জানতো?

আয়ন্তি এবার মুখ খুললো। মায়ের দিকে তাকিয়ে এক চমৎকার হাসি দিলো। হাসতে হাসতে বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
–“কী চমৎকার ঘটনা ঘটে গেলো তাই না আব্বু? ঠিক যেমনটা তুমি চেয়েছিলে ঠিক তেমন। তুমি তো কোনো ভুল করতেই পারো না তাই না আব্বু? যত ভুল, দোষ করে বসে আছি আমি আর আমার ভাইয়া। আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেলো আব্বু, ভুল ছোট’রাই করে বেড়ায় না। বড়ো’রাও করে। ইভেন, তারা আরও বেশি বেশি করে। নিজের দাম্ভিকতা প্রমাণ করতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তারা।”

আয়েশা মেয়েকে ধমক দিয়ে উঠলেন।
–“এটা কী ধরণের অ’ভদ্রতা আয়ন্তি? বাবার সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?”
–“সুন্দর করেই তো বললাম আম্মু। কথায় কথায় ধমকিয়ে কী লাভ? এই ঘটনা না ঘটলে কখনো তোমরা আমায় বুঝতে? আমি তো আব্বুকে আগেও বলেছিলাম, ওয়াসিফ ক্যারেক্টারলেস একটি ছেলে। আমার কথায় আব্বু কী বলেছিলো জানো? আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি দেখে ওয়াসিফকে ‘না’ করছি। ওয়াসিফের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি। আব্বুজান আমার এতই ওয়াসিফের ভক্ত হয়ে ওঠে যে নিজের ঘরের মেয়েকে এক নিমিষেই অবিশ্বাস করে ফেলে। ভালো চাকরি, ভালো স্ট্যাটাস দিয়ে কী মানুষকে বিচার করা যায় আম্মু? এজন্যই আমি আজকের দিনের জন্যে চুপ ছিলাম, যেন সবটা নিজের চোখে দেখো।”

নুরুল আলম নিরব। আয়েশাও নিরব হয়ে গেলেন। মেয়ের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে তা মেয়ের কথাবার্তাতেই সব বোঝা যাচ্ছে। আয়ন্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবারও বলতে শুরু করলো,

–“আমার বড়ো ভাইয়ের কাঁধেও তো আব্বু এরকম এক ঘটনা চাপিয়ে দিয়েছিলো। একমাত্র কারণ ছিলো ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসতো। ভালোবাসা কী দোষের ছিলো আব্বু? জানো, সেদিন যদি আমি ভাইয়াকে পালাতে সাহায্য না করতাম তাহলে ওই আপুটা সুইসাইড করতো। নিজের দাম্ভিকতার জন্যে কী আরেক মেয়ের মৃ’ত্যুর দায়ভার তুমি নিতে আব্বু? বলো? চুপ কেন? সবসময় তো চুপ থেকে গেলাম, আর তুমি বলে গেলে। তাহলে আজ আমি মুখ খুললে তুমি কেন কিছু বলছো না?”

অন্যমনস্ক হয়ে নুরুল আলম সবটা শুনে গেলো নিরবে। আয়ন্তির ভাই নিলয়ের কথা শুনে আয়েশা মুখে আঁচল গুঁজে পুণরায় কাঁদছে। কতদিন হলো বড়ো ছেলেটার সাথে যোগাযোগ হয় না। কী করছে, কেমন আছে কিছুই জানা নেই!
–“যে নিজে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসে তার জন্যে আজকের দিনটাই যথেষ্ট। বুঝে নাও, অপমানগুলাও লুফে নাও। আমার গায়ে কোনো দাগ লাগেনি আব্বু, আর লাগলেও তার দায়ভার তোমার কারণ তুমি অন্ধ হয়ে এসব করেছো। কাল থেকে তুমি তোমার প্রাসাদ নিয়ে থেকো। আমি এ বাড়িতে আর থাকছি না!”

বলেই আয়ন্তি চোখ মুছতে মুছতে উপরে চলে গেলো। আয়েশা দেখলো মাহবিনকে। বেশ চমকালোও বটে। মাহবিন এখানে কী করছে? আয়েশা নাক টেনে চোখ মুছলো। এগিয়ে গেলো মাহবিনের দিকে। আয়েশার খুব ইচ্ছে হলো চোখে-মুখে একরাশ রাগ ফুটিয়ে তুলতে। কিন্তু মাহবিনকে দেখলে কেন যেন নিলয়ের কথা মনে পরে যায়। আয়েশা মাহবিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
–“তোমার বন্ধুরা তো বেরিয়ে গেলো কখনই? তুমি এখনো যাওনি? চোখ-মুখ এমন লাগছে কেন?”

মাহবিন বেশ কিছুক্ষণ আয়েশার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“একচুয়ালি, আমি সিক!”
–“এমা? কী হয়েছে?”

মাহবিনের হাত ধরতেই চমকে গেলো। জ্বরে হাত গরম হয়ে আছে। আয়েশা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
–“রুমে গিয়ে রেস্ট করো। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি!”
–“কিন্তু আন্টি.. আমি কীভাবে এই বাড়িতে থাকবো? সার্ভেন্ট তো আমার লাগেজ গুছিয়ে দিচ্ছে। আমি জাস্ট রেডি হয়ে চলে যাবো। আসছি!”

মাহবিন উপরে চলে গেলো। রুমে আসতেই দেখলো সার্ভেন্টের লাগেজ গোছানো শেষ। সার্ভেন্টকে কিছু বকশিশ দিয়ে বিদায় করলো মাহবিন। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে কয়েক মিনিটেই রেডি হয়ে গেলো। ফুল রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই আয়ন্তির মুখোমুখি পরলো। আয়ন্তির চোখ-মুখ অসম্ভব লাল। আয়ন্তিও এঙ্গেজমেন্টের ড্রেস চেঞ্জ করে নরমাল সেলোয়ার-কামিজ পরেছে। মাহবিনকে ফর্মাল সুটে দেখে কিছুড়া চমকালো সে। হাতের লাগেজটাও নজরে এলো। আয়ন্তি আমতা আমতা করে বললো,
–“চলে যাচ্ছেন? জ্বর কমেছে?”

মাহবিন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
–“এত মেহমানদারীর জন্যে ধন্যবাদ। যদিও আমি মেহমানদারিটা এক্সেপ্ট করি না!”
আয়ন্তি মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
–“কেন?”
–“ওয়াসিফ!”

মাহবিন পুণরায় হাসলো। আয়ন্তি নিরবে চেয়ে রইলো মাহবিনের পানে। মাহবিন ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাতঘড়ি দেখতে দেখতে বলে,
–“লেট হচ্ছে, আসছি। ভালো থেকো। পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো!”

মাহবিন চলে যেতে লাগলো। আয়ন্তি পিছু ডাক দিলো। মাহবিন থেমে যায়। পিছে ফিরে তাকায় আয়ন্তির পানে। আয়ন্তি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শুধায়,
–“আর কী কখনো হবে না দেখা আমাদের?”

মাহবিন শীতল চাহনি নিক্ষেপ করলো। হাসার চেষ্টা করে বলে,
–“ইচ্ছে এবং সঠিক নিয়্যত থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব না।”

মাহবিন যেন মিলিয়ে গেলো কিছু মুহূর্তের মাঝে। আয়ন্তির চোখ পুণরায় ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের কোণ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়াতে লাগলো। মাহবিন যেন তার থেকে হারিয়ে গেলো, বহুদূর। আয়ন্তি কাঁদতে কাঁদতে পাশের দেয়াল লেপ্টে ধপ করে বসে পরে। মাঝ রাস্তায় মাহবিন যেন তাকে ছিন্ন করে চলে গেলো, চূর্ণ-বিচূর্ণ করে চলে গেলো।

মিনিটখানেকের মাঝে কাঁধে কারো স্পর্শ উপলব্ধি করলো। আয়ন্তি ক্ষণে ক্ষণে নাক টেনে উপরে তাকালো। রিয়ন মলিন চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে আয়ন্তির মুখপানে তাকিয়ে। আয়ন্তির ক্রন্দনরত মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে বলে,
–“এভাবে কাঁদছিস কেন তুই?”

হাঁটু ভেঙ্গে আয়ন্তির পাশে বসলো রিয়ন। আয়ন্তি রিয়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রিয়ন আয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। আয়ন্তির কান্না এবার থেমে থেমে আসছে। রিয়ন মলিন কন্ঠে বললো,
–“থামার ইচ্ছে নেই তোর? এত কাঁদে কেউ? জয়াকে আমার বোন বলতেও লজ্জা লাগে। ওর জন্যে তোর চোখের পানি সহ্য করতে হচ্ছে আমায়!”

আয়ন্তি নাক টেনে বলে,
–“আমার জয়ার উপর কোনো অভিযোগ নেই ভাইয়া।”
–“তাহলে এত কিসের কান্না? মা অসুস্থ, খালাও কেমন করছে। তুই অশান্ত থাকলে চলে?”
–“তুমি বুঝবে না ভাইয়া। এই কান্নাটা আমার ভেতরটাকে হালকা করার কান্না।”
–“হুম বুঝেছি। খুব বড়ো হয়ে গেছিস। রুমে যা, আমি খাবার আনছি।”

আয়ন্তি রিয়নকে ছাড়তে ছাড়তে বলে,
–“কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না!”
–“দেবো এক চ’ড়! যা রুমে। আমি তোর থেকে জানতে চেয়েছি?”

আয়ন্তি মুখটা থমথমে করে রুমের দিকে চলে যায়। মিনমিন করে বলতে লাগে,
–“রিয়ন ভাই সারাদিন শুধু ধমকানোর তালেই থাকে।”

———————
রাত যখন গভীর, তখন একপ্রকার দৌড়ে নিলা আয়ন্তির রুমে আসে। আয়ন্তি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাহবিনকে অনুভব করছে। বারংবার পাশের বারান্দায় নজর বুলাচ্ছে। মাহবিন সেদিন যখন বিয়ে ভাঙ্গার কথা বলেছিলো তখন আয়ন্তি জানতে চেয়েছিলো কারণ। মাহবিন আয়ন্তির দিকে শীতল চাহনি বুলিয়ে বলেছিলো,
–“হঠাৎ ইচ্ছে হলো তোমার জন্যে ভালো কিছু করার। সেই ভালো কিছু করার ইচ্ছে থেকেই বলছি ওয়াসিফের সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দাও, তোমার জন্যে ও পার্ফেক্ট না।”

নিলার দেয়া ধাক্কাতে আয়ন্তি বাস্তবে ফিরে আসে। ঘনঘন চোখে পাঁপড়ি ফেলে বলে,
–“কী হলো?”
–“জয়াপি ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছে, ওয়াসিফ ভাইয়ার সাথে।”
–“তো?”
–“তো মানে? দেখবি না? ও তো চরম খা’ চ্চর!”

আয়ন্তি হাসে। নিঃশব্দময় হাসি।
–“দেখতে ইচ্ছে করছে না!”
–“আচ্ছা। দেখা লাগবে না। ওর চেহারা তো সা’ পের মতোন। দেখে কী কাজ?”

পুণরায় হাসে আয়ন্তি।
–“আচ্ছা, এখন আয়। দুজনে পা মেলে বসি!”
–“শীত করছে তো এখানে!”
–“কম্বলটা নিয়ে আয়, তুই আর আমি আড্ডা দিবো আজ!”
–“বাকিরা?”
–“ওরা ক্লান্ত। জ্বালিয়ে কাজ নেই!”

নিলা দেরী না করে দুটো কম্বল আনলো। কম্বল গায়ে জড়িয়ে দু’জনেই ফ্লোরে পা ছড়িতে বসলো। আয়ন্তি চোখ বুজে বুক ভরে নিঃশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ। নিলা হঠাৎ বলে ওঠে,
–“জানিস আয়ন্তি। তখন রিয়ন ভাই মাহবিন ভাইয়ের সাথে ঝামেলা করেছিলো!”

চট করে চোখ খুলে যায় আয়ন্তির। তড়িৎ নিলার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ন্তি। ভ্রু কুচকে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলে,
–“মানে? কী হয়েছিলো? আমি কেন জানলাম না?”
–“তুই তো বাড়ির ভেতরে ছিলি। জানবি কী করে? মাহবিন ভাইয়াকে অনেক কথা শুনিয়েছে রিয়ন ভাই৷ আমার তো মাহবিন ভাইয়াকে মোটেও ওয়াসিফের মতোন লাগে না। তাহলে কেন রিয়ন ভাই মাহবিন ভাইয়াকে ধমকালো বলো তো? আজব! সবসময় বেশি বেশি।

আয়ন্তি চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রয়। থম মেরে, নিস্তেজ ভঙ্গিতে। ঘনঘন পলক ফেলে মিনমিন স্বরে বলে ওঠে,
–“এ তুমি কী করলে রিয়ন ভাই!”
–“কিছু বললি?”

আয়ন্তি চুপ করে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ নিরবফা চললো ওদের মাঝে। আয়ন্তির মাথায় হঠাৎ-ই অনেক ভাবনা চলে আসে। এক কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। আয়ন্তি নিরবতা ভাঙলো,
–“খালা কেমন আছে?”
–“ভালো আছে। তখন তো দেখে আসলাম ঘুমোচ্ছে।”
–“তুই ভার্সিটির জন্যে বাসা ভাড়া নিয়েছিস না নিলা?”
–“হ্যাঁ।”
–“তোর সাথে আমি থাকতে পারবো? তোর ফ্ল্যাট থেকে ভার্সিটি আমার কাছাকাছি হবে।”

নিলা চমকে তাকালো আয়ন্তির পানে। কী স’র্বনাশা কথাবার্তা। নুরুল আলম তো মরে গেলেও আয়ন্তিকে দূরে থাকতে দিবে না, তাহলে নিলার সাথে ফ্ল্যাটে কেমনে থাকবে? তবে নিলার নিজের দিকটা ভাবতে গেলে ভালোই হবে। নিলা বাসাটায় একা থাকে। কোনো বান্ধুবীও তার সাথে থাকে না। বলা তো যায় না কখন কী বিপদ হয়? তাই আয়ন্তি আসলে তার জন্যে ভালোই হবে। ভিষণ ভালো। নিলা হাসিমুখে বললো,
–“আচ্ছা, আমার জন্যে তো ভালোই হবে। একা, একা আর কতদিন? আমারই তো কেমন একা ভয় লাগে!”
–“কালই চলে যাবো, আমি। ব্যাপার না।”
–“খালু রাজি হবে?”
–“তোর খালুর মতামত নিয়ে তো আমি সিদ্ধান্ত নেইনি? খালুর কথা জানার ইচ্ছে হলে খালুকে নিয়ে থাক, আমি অন্যকোথাও দেখবো!”
–“এমন করে বলিস কেন?”

আয়ন্তি কিছু বললো না। পেছনের থাই গ্লাসে চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিলো।

——————————
ভোরের আলোয় আকাশ আলোকিত। সূর্যের দেখা এখনো মেলেনি ওই আকাশ রাজ্যে। রাতের অন্ধকার গ্রাস করে আলোরা তাদের উৎপত্তি ঘটাচ্ছে। একসময় আঁধারকে পুরোপুরি গ্রাস করে আলোকিত হতে শুরু করে ধরনী। চারিপাশে পাখিদের মৃদু কিচিরমিচিরের ধ্বনি। চোখে আলোর ঝাপটা পরতেই আয়ন্তির ভ্রু-দ্বয় কুচকে এলো। গভীর ঘুমটাও হালকা হয়ে এলো। বেশ কিছু সময় বাদে বারান্দার রেলিঙে এক নাম না জানা পাখি এসে বসলো। বিরক্তিকর শব্দে সে ডেকেই চলেছে। এবার আয়ন্তির হালকা ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলো। কপালে পরলো বিরক্তির ভাঁজ। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আয়ন্তি। রাতে যেভাবে বসেছিলো সেভাবেই ঘুমিয়ে পরেছিলো সে। চোখ কচলে আড়মোড়া ভাঙ্গে আয়ন্তি। পাশে তাকিয়ে দেখে নিলা নেই। হাই তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়ায় আয়ন্তি। নাকটা কেমন খচখচ করছে। ঠান্ডা লাগার আগাম বার্তা। আয়ন্তি রুমে আসতেই দেখলো নিলা তার বিছানায় বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আয়ন্তি দেয়াল ঘড়িতে নজর বুলিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে এসে চেয়ারে উঠে আলমারির উপর থেকে বড়ো লাগেজটা নামালো সে। লাগেজ খুলে জামা-কাপড়, সমস্ত দরকারি জিনিস ঢুকালো। অতঃপর বই রাখলো আরেক মাঝারো সাইজের লাগেজে। নিলাকেও জাগিয়ে তুললো আয়ন্তি। তার তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। এমনিতেই বেলা গড়াবে নুরুল আলম এবং আয়েশাকে বোঝাতে বোঝাতে।

নিলা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
–“ঘুমালাম-ই তো কয়েক ঘন্টা।”
–“নিজ ফ্ল্যাটে ফিরে শান্তির ঘুম দিশ। এখন নিজের জামা-কাপড় গুছিয়ে জলদি তৈরি হয়ে নে!”

নিলা হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো। আয়ন্তি নিজ চুলে চিরুনি বুলিয়ে চুল খোপা করে ফেলে এবং মাথা ওড়নায় আবৃত করে। নিলা আসতেই জামা-কাপড় গোছানোর কাজে লাগিয়ে দেয় আয়ন্তি। অতঃপর আয়ন্তি রুম থেকে বেরিয়ে পরলো, বাবার রুমের উদ্দেশ্যে।

~চলবে, ইনশাল্লাহ।
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here