অতএব_ভালবাসি_তোমায়,পর্ব : ৫

0
1864

অতএব_ভালবাসি_তোমায়,পর্ব : ৫
লেখিকা_আহিয়ানা_আহিরা

শপিং এ এসেছি অনেকক্ষন হলো। সবাই কেনাকাটা করছে । আমার করা শেষ। মাহিরা ভাবির জন্য শাড়ি কিনছে আমার দুই মা । সাথে দাড়িয়েছে আমার ভাই রাহুল । যাই হোক, শান্ত ভাইয়া কে অনেক সময় যাবত দেখছি না । ব্যাগ ধরে রাখতে রাখতে হাতের কব্জি খুলে যাচ্ছে।
আচমকা হাতে টান পরায় পেছনে তাকালাম।
–আরে কি করছো?
–আমার বৌ কে কষ্ট দিয়ে সবাই অন্যের বউ এর জন্য শাড়ি কিনছে তা কি আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবো নাকি?
–তোমার বউ মানে?
–মানে টানে কিছু না
বলেই হাত থেকে সবকটা ব্যাগ নিয়ে অন্য একটা সাদা কালার ব্যাগ দিয়ে বললো
–বাসায় গিয়ে খুলে দেখিস
বলতে দেরি চলে যেতে দেরি নাই।
সবার কেনা শেষ হলে শপিং মল থেকে বের হই । নিচে গিয়ে দেখি…, শান্ত ভাইয়া সবার জন্য দাড়িয়ে আছে।
–তো সবার কেনা শেষ?(শান্ত)
–হ্যাঁ (ফুপুমা)
–মামি মা…! তুমি যে ছেলের বিয়ে দিচ্ছো মেয়ের বিয়ে দেবে না?(শান্ত)
মা হাসতে হাসতে বললো..,
–দেব তো একজন এনে নেই আরেকজন পরে বিদায় করবো। আর এখব বিদায় করলে আমাকে হেল্প করবে কে?(মা)
মায়ের কথায় আমি তব্ধা খেয়ে গেলাম। বলে কি !
–শুনো পাত্র কিন্তু রেডি আছে , চাইলে এখনই রাজি।(শান্ত)
শান্ত ভাইয়ার আর আম্মুর কথায় সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে । রাগে দুঃখে শান্ত ভাইয়ের শার্টের কলার টেনে বললাম ..,
–আপনার পাত্র আমার লাগবে না। আমারটা আমি খুঁজে নিছি আর যাকে নিয়েছি তাকে আমার যে কোনো মূল্যেই লাগবে মানে লাগবে।
সবাই আমার এহেন কান্ডে ভেবেচেকা খেয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি কলার ছেড়ে শান্ত ভাইয়ার গাড়ির সামনের সিট এ বসেই ধরাম করে দরজাটা লাগালাম। আমার বসার কিছুক্ষন পরই শান্ত ভাইয়া এসে বসলেন । আসার সময় কায়া সামনের সিটে বসেছিলো এবার আমি বসায় কায়া গাল ফুলিয়ে রাহুল ভাইয়ার গাড়িতে সামনের সিটে বসলো আর মা , ফুপুমা ভাইয়ার গাড়িতেই বসলো আর শান্ত ভাইয়ার গাড়িতে দিলো সব ব্যাগ।
আমি চুপচাপ বসে আছি গাড়িতে। সবার উদ্দেশ্য ঘুরতে যাওয়া। শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি খুব শান্ত ভাবেই গাড়ি চালাচ্ছে । চুলগুলো বারবার সরিয়ে দিচ্ছে কপাল থেকে । কত্ত কিউট লাগছে । চোখ দুটো দিয়েই গিলে খাচ্ছি তাকে।
–আমি জানি তোর জামাই সুন্দর । এভাবে তাকিয়ে থাকলে ড্রাইভিং বাদ দিয়ে গাড়িতেই রোমান্স করা শুরু করে দেব।
ভাইয়ার এমন কথায় আমার চোখ দুটো গোলগোল হয়ে গেল। আর বলে কি! রোমান্স করবে। নিজেরে আবার আমার জামাই কয়। শ্লা সাদা ভাল্লুক । সব বুঝে ভালোবাসি যে এটা বুঝে না।
–কি বলো ভাইয়া! জামাই মানে?
–কিছু না ! চলে এসেছি । নাম।
সামনে তাকিয়ে দেখি একটা রিসোর্ট এর মত যায়গায় এসেছি। রেস্টুরেন্ট প্লাস সাথেই লেক। জায়গাটা অনেক সুন্দর। আসে পাশে গাছপালা। নেমেই আমরা সবাই খেতে চলে গেলাম ।‌ খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা লেকের সামনে দাড়ালাম। রাহুল ভাইয়া আর কায়া একসাথে দাড়িয়ে আছে। মা আর ফুপু মা কি যেন নিয়ে হাসাহাসি খাচ্ছে আমি এখানে একা দাড়িয়ে আছি।
–সুহা পাখির কি মন খারাপ?
শান্ত ভাইয়ার কথায় তাকিয়ে দেখি সে একনজরে শুধু আমাকেই দেখছে। আমি মাথা দুলিয়ে না বললাম।
–বল কি হয়েছে!
–কিছু না!
এখনি মন ভালো হয়ে যাবে বলেই আমার মাথা টেনে বাচ্চাদের মত করে আমার গাল দুটোয় চুমু দিয়ে দিলো। ভাইয়ার এই কাজে অবাকের চরম পর্যায় চলে গেলাম। সাথে সাথেই মনে ভালোলাগা ছুয়ে দিলো। নেচে উঠে মুখে একগাল হাসি টেনে বলে উঠলাম…,
–কি করলেন এটা…?
–এইত্তো বউয়ের মন ভালো হয়ে গেছে।
–আরে বলেন কি? ধুর! বলেই লজ্জায় মাথাটা নুয়ে দিলাম।
–থাক আর লজ্জা পেতে হবে না সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাড়ি চল!
বলেই কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। গাড়িতে বসেই ভাইয়ার দাওয়া ব্যাগের কথা মনে পরতেই ব্যাগটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম । তাকিয়ে দেখি..,
সাদা শাড়িতে কালো পার এর মধ্যে ডিজাইন করা একটা কাপড় রাখা। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা ব্লাউজের কাপড়। আর সাথে আছে এক জোড়া ঝুমকা। আর আছে হাতের জন্য ২ডজন চুরি শুধু সাদা আর কালো..। সবদেখে মনে উথালপাথল শুরু হয়ে গেল । তাকিয়ে দেখি ভাইয়া বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছে।
–এগুলো সব আমার?
–হ্যাঁ । কিন্তু …..
ধমক সুরে আমাকে কিছু বলার আগেই আমি ভাইয়ার গলা টানে জরিয়ে গালে একটা চুমু দিলাম । আর থ্যাংকস বলেই আরাকটা চুমু দিলাম । আমার হাতের জিনিস গুলো ব্যাগে রেখে ব্যাগ টাও পেছনে রেখে ভাইয়ার কাধে মাথা দিলাম । তাকিয়ে দেখি ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে।
–তাকিয়ে থেক না। কাল থেকে একএর পর এক চুমু দিয়েই যাচ্ছ। আমিও দিলে কি ক্ষতি?
আমার কথায় ভাইয়া আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুচকি হেসে আমার নাক টেনে বললেন
–কোন ক্ষতি নেই প্রেয়সি। যত ইচ্ছা দাও।
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো । আমিও একরাশ ভালোলাগা নিয়ে ভাইয়ার কাঁধে মাথা দিলাম। সেও আমাকে আগলে নিলো।
.
.
.
বাসায় এসে সবার আগে রুমে গিয়ে ফ্রেস হলাম। ব্যাগ গুলো গুছিয়ে রেখে টেবিল এর সামনে এসেই ফাইলটা চোখে পরলো। সাথে সাথে তখনকার কথা মনে পরলো। ফাইলটা হাতে নিয়ে পরতে নিলেই কেও দরজায় কড়া নারে । দরজা খুলে শান্ত ভাইয়া কে দেখলাম। সে ভিতরে এসেই খাটে বসলো । আমি কাছে গিয়ে দাড়াতেই আমাকে টেনে বসিয়ে বললো ,
–তোর সাথে একটু কথা ছিলো!
–হুম বলো?
–আজ তো তেমন ঘুরতে পারলাম না! কাল তোর ভার্সিটির পর তোরে নিয়ে ঘুরতে যাবো। যাবি?
–আমি একটা হাসি দিয়ে সম্মতি জানাই।
কিরে তোর হাতে এটা কি? বলেই ফাইলটা টেনে নিলো ।
–এটা ফুপুমার শাড়ি থেকে পেয়েছি। আপনি এটা দিয়ে দিয়েন।
–আচ্ছা।
ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষন গল্প করলাম এর মাঝে ভাইয়া চলে যেতেই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ৮টার দিকে। উঠেই ফ্রেস হয়ে খেতে চলে গেলাম। খেয়েদেয়ে উপরে আসলাম উদ্দেশ্য শান্ত ভাইয়ার রুমে যাওয়া। যেই ভাবা সেই কাজ ।রুমে যেতেই দেখলাম রুমের দরজা খোলা আমি নির্দিধায় রুমে ঢুকে গেলাম।আর ঝড়ের গতিতে ভাইয়া দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমি চমকে উঠে কিছু বলার আগেই ভাইয়া আমায় জরিয়ে কাদতে লাগলেন। আমি আচমকা এমন কাজে ভয় পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে থাকি..,
–কি হয়েছে তোমার। কি হলো বল…?
ভাইয়া কান্না থামিয়ে বললেন,
–কিছু হয়নি। তুই কাওকে কিছু বলিস না আমার ব্যপারে । বলেই আমার গালে চুমু দিলেন।
আমি এরকম উত্তেজিত হয়ে কাদতে দেখে তাকে জরিয়ে ধরলাম যাতে আর না কাঁদে উনি। আর বললাম,
–আমাকে আপনি নির্দিধায় বলতে পারেন আপনার মনের কথা।
–বললাম না কিছু হয়নি। খেয়েছিস?
–হ্যাঁ তুমি?
–না এখনো খাইনি ।
–আমি খাবার নিয়ে আসবো?
–কেন খাইয়ে দিতে চাইছিস নাকি? দিলে কিন্তু আমি মাইন্ড করবো নাহ্।
–ধুর আমি খাওয়ায় দেব কেন? আপনার হাত নেই?
–আছে তবুও বউ যদি খাইয়ে দেয় ক্ষতি কিসে?
–এহ আইছে…! যে নিজেই খাইতে পারে না সে আবার আরেকজন রে খাওয়ায় দেবে। হুহ
–আচ্ছা থাক। আমিই যাই। এমনে মন ভেঙে দেওয়াটা আমি শুধে আসলে মিটিয়ে নেব।
–হুহ ঢং। যান তো।
এরকম করতে করতে দুজন রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে এসে কায়া খবর দিলো কাল আমরা নিজেরা কেনাকাটা করেছি । আজ সম্পূর্ণ বিয়ের কেনাকাটা হবে। তাই মাহিরা ভাবি, তার বাবা-মা আর ভাইয়া , আম্মু-বাবা, ফুপুমা , কায়া যাবে শপিং এ আর আমি , শান্ত ভাই দুজনের বাসায় থাকতে হবে। রেখে যাওয়ার কথা শুনে কিছু বলতে যাব তার আগেই শান্ত ভাইয়া আরালে আমার হাত চেপে বললেন..,
–সুহা এখন কিছু বলিস না আমারা ঘুরতে যাব তোর মনে নেই?
তাই আর কিছু বললাম না চুপ হয়ে গেলাম। সবাই তোরজোর করছে ১:৩০ এ বাসা থেকে বের হবে। এখন ১০:৩০ বাজে । হাতে অনেক সময় থাকলেও তারা হুরতুর করছে কারণ , তাদের কাজ শেষে তারাও ঘুরতে যাবে। পাত্রি পক্ষ আর পাত্র পক্ষ একসাথে প্রথম ঘুরবে তাই সময় নিয়ে সবাই রেডি হবে। আমি শুধু শুধু বসে না থেকে উপরে চলে গেলাম। নিজের রুমে বসে ফোন গুতিয়ে কখন ১২টা বেজে গেল খেয়াল নেই।
নিচে যেয়ে দেখি কোথাও কেও নেই। সবাই যে যার রুমে। কেও গোসল করে তো কেও রেডি হতে ব্যস্ত । আমিও গোসল করে চুপচাপ ছাদে চলে এলাম। সবাই শপিং এ যাচ্ছে আমাকে রেখে আমার কিছুতেই ভালো লাগছে না। যতই ভাইয়া ঘুরতে নিয়ে যাক আমার বিয়ের শপিং করতে খুব ভালোলাগে আর তো সেটা আমার নিজের ভাইয়ের বিয়ে আর আমাকে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।
আমার ভাবনার মাঝেই সবাইকে গাড়িতে উঠতে দেখলাম। আর সাথে চলেও গেল। আমি তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎই আমার কর্ণপাত হলো কেও বলছে আমাকে‌;
–লক্ষী বউ এর মন খারাপ?
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কে বললো। পেছন না ফিরেই বললাম;
–কিছু ভালোলাগছে না। সবাই কেমন আমাকে রেখে চলে গেল। একবার জিজ্ঞেস করলো না আমার কিছু লাগবে কিনা বা আমি যাব কিনা! এত্ত সার্থপর এরা।
–কে বললো সবাই চলে গেছে । আমি আছি তো।
বলেই আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে থুতনি আমার কাঁধে রাখলেন। আমার ভেতরে অজানা অনুভূতি বয়ে গেল।
–তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে রেডি হ। আমরাও বের হবো। বাহিরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে ।
–চলো। বলে দুজন নিচে চলে এলাম।
.
.
.
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত আমি। কালকের ভাইয়ার দেওয়া শাড়ি ঝুমকা এগুলোই পরেছি খোপা করে নিয়েছি সাথে আইলাইনার আর লিপস্টিক । সাজতে চেয়েছিলাম। ভাইয়ার বারনে আর সাজি নি তবে ভাইয়া আমাকে বলেন নি তার দেওয়া শাড়ি পরতে। চুপচাপ ভাইয়ার রুমে আসলাম। দরজাটা খোলা পেয়েই ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই আমার কমরে আচমকা টানে বেলেন্স রাখতে না পেরে ভাইয়ার বুকে আছরে পরলাম। সাথেই আমার খোপা করা চুল গুলো ছড়িয়ে গেল হাটু অব্দধি ।
–এখন তো আরও সুন্দর লাগছে।
–সুন্দর মানে? কি করলেন এটা ? এত কষ্ট করে খোপা বাধলাম। ধুর…!
–এভাবেই ভালো লাগছে মেডাম।
–হয়েছে চাপা মেরেন না । বলে উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে এসে পায়ে হিল পরছি। এর মধ্যে ভাইয়া নিচে চলে এলেন। সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে উনাকে আমি হা করে তাকিয়ে আছি।
–কি হলো কি এত দেখিস ? এবাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পরে যাবি তো।
আমি আনমনে বলে উঠলাম;
–সে তো প্রতিদিনই পরছি, প্রতিক্ষনে।
–কি বললি???
–কিছু না। চলো তো । বলে হাত টেনে বাহিরে এলাম।
গাড়িতে বসে আছি। নিরবতা ভেঙে ভাইয়া বললেন
.
.
.
(চলবে…,)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here