অতলস্পর্শ,পার্ট ০৪
জান্নাতুল বিথী
আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া এভাবে না ফাসাঁলেও পারতো।কুশান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ভাইয়া আমাকে চোখ মারে।আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নেই।এখন শুধু ঝড় আসার অপেক্ষাই করছি। ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকায় তো আবার কুশান ভাইয়ার দিকে তাকায়।তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এই কথার মানেই বুঝে নাই এখনো।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“এইসবের মানে কি জিহু।?”
“আরেহ ওকে বলে কি লাভ ও কি সত্যি কথা বলবে কখনো.??”
এই কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি।আমি অবাক হই কুশান ভাইয়া কি করে এই কথা বলতে পারলো।আমি কোন দিন কোন সময় কিভাবে তাকে আবার মিথ্যা বললাম।কুশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলি..
“ভাইয়া আমি কখন কোন দিন আপনাকে মিথ্যা বলছি।কোনো দিন ভয়ে তো আপনার সাথে কথাই বলি নাই।তাহলে এখন এই কথা বলছেন কেনো।”
“আরে বাহ জিহু তোর মুখে আজ দেখছি খই ফুটছে।তা থামলি কেনো বল।তারপর যেনো কি হলো।??”
বলে থামলো কুশান ভাইয়া।সে থামতেই দেখি জিদান ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার পাশে বসতেই কুশান ভাইয়া আবার বলে উঠে..
“জিদান একটু কথা ছিলো তোর সাথে।চল বাহিরে যাই।আর তুই সব কিছুতেই এতো সিরিয়াস কেনো বল তো।আমি তো জাস্ট ওর সাথে মজা করছি।”
শেষের কথাটা কুশান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে।আমি চোখ নামিয়ে নেই।মনে মনে তাকে একশটা গালি দেই।সাথে সস্তির নিশ্বাস ফেলি।আমাকে সুন্দর করে অসস্তিকর পরিবেশে ফেলতেও পারে আবার সময় মতো তুলে নিতেও পারে।অসহ্যকর।
জিদান ভাই আর কুশান ভাইয়া দুজনেই উঠে বাহিরে চলে যায়।ওরা চলে যেতেই আমিও উঠে রেডি হয়ে নেই ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।
★
ভার্সিটিতে আসতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরে।সবাই বলতে মিতু ফাহিম আর নাঈমা।আমি ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই।..
“কিহুরে কিহু একটা সুযোগ করে দে না প্লিজ। তারপর আর তোর কাছে কিছু চাইবো না।”(নাঈমা)
“ওই কিরে তোর না বফ আছে তাহলে আবার লাইন মারার প্রস্তুতি নেছ কেনো.??”(মিতু)
“আরেহ কিহুর ভাই তো হলো আমার ক্রাশ।আর ক্রাশের সাথে লাইন মারা যেতেই পারে স্বাভাবিক।”(নাঈমা)
“সবার আগে তোরা আমার নামের উচ্চারন ঠিক কর।আজ পর্যন্ত কোনো দিনও তো আমার নামটা পর্যন্ত ঠিক মতো উচ্চারন করতে পারে না আবার বলে কিনা ক্রাশের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে হুহহহহহ।”
“শোন কিহু তোকে এই নামে আদর করে ডাকি আমি।এতো ভালোবেশে ডাকি তারপরো বলে কি না তার নাম ঠিক মতো উচ্চারন করতে পারি না।আল্লাহ উপরে নিয়ে যাওনি কেনো এই কথা শুনার আগে।”
নাঈমার কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দেই।মিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“আচ্ছা তুই এটা বল যে তোর ভাইয়া কি তোকে পরে এই বিষয়ে কিছু বলছে.??”(মিতু)
মিতুর কথা শুনে আমার রাগ হয় অনেক।রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বলি..
“কান খুলে শুনে রাখ তোরা।কুশান ভাইয়া আমার ভাই না কাজিন।কা-জি-ন শুনলি।??এই কথাটা মাথায় রেখে তবেই পরবর্তী কথা বলবি তোরা কেমন.??”
আমার কথা শুনে ওরা বোকা বনে যায়।আমি যে সামান্য এই কথাতে এভাবে রিয়েক্ট করবো তা হয়তো ওরা ভাবেই নাই।তাতে আমার কি সব তো ওদেরই দোষ।কাজিন কে ভাই বলবে কোন কথায়.??
,
জিদান..
লিভিংরুমে বসে ল্যাপটবে কিছু কাজ করছে জিদান।তার বাবা অফিসে মা কুশানদের বাসায় আর জিহা মাত্রই ঝগড়া করে গেলো তার সাথে।এই মেয়েটার আবার প্রতি বেলা তার সাথে একবার করে ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয় না।জিহার কি দোষ দিবে তার নিজেরই তো ভাত হজম হয় না ওর সাথে ঝগড়া না করলে।প্রতিটা ভাই বোনের সম্পকই হয়তোবা এমন।সব ভাই তার বোনে সাথে ঝগড়া করে আর সব বোনই তার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে।তাদের এই ঝগড়ার মাঝেই লুকিয়ে থাকে তাদের হাজারো ভালোবাসা।
হঠাৎ ডোর বেল বাজার শব্দে আমার হুশ আসে।এই সময় কে আসতে পারে তাই ভাবছি আমি।আম্মু তো এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা না।তারা দুই ঝাঁ এক সাথে হলে গল্পের আসর জমে।সেখানে এতো তাড়াতাড়ি তার আম্মু আসতেই পারে না।বাবা নয় তো.??কিন্তু বাবাও তো এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফেরার কথা নয়।এমন হাজারো চিন্তা নিয়ে আমি দরজার খুলতেই অবাক হয়ে যাই।আমার সামনেই একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না।আর এমন মেয়েও হয়তো কোনো দিন দেখি নাই আমি।মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।মেয়েটা কালো কুর্তি সাদা জিন্স সাথে সাদা পালের কালো ওড়না।মুখে কোনো মেকাপ নেই।মেয়েটা শ্যামবর্নের।চোখে সানগ্লাস। এইটুকু দেখেই আমি ফিদা হয়ে যাই।হা করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।..
“মিতুউউউউউ তুই।”
চিৎকার শুনে আমার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়।একটু ভালো করে দেখতেও দিলো না। আমি দরজার পাশ থেকে সরে দাড়াতেই মিতু গিয়ে জিহাকে জড়িয়ে ধরে।বুঝতেই পারছি এটা জিহুর ফ্রেন্ড।ওর মুখে নামও শুনছি।মনে মনে মিতু নামটা দুইবার উচ্চারন করে ওইদিকে তাকাতেই দেখি কেউ নেই।ভালো করে তাকিয়ে দেখি নাহ আমি সত্যিই দেখছি আমার সামনে কেউ নেই।তাহলে কি আমি স্বপ্নে দেখছি।কিন্তু এমন স্বপ্ন কেউ দেখে নাকি।জিহুর চিৎকার শুনেই তো স্বপ্ন থেকে বাস্তবে চলে আসার কথা।তাহলে..??
,
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আমি রুম থেকে বের হই কুশানের সাথে দেখা করতে।ও নিজেই ফোন করে আমাকে ওদের বাসায় যেতে বলছে।তাই বের হইছে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য।হঠাৎ আমার সামনে তখন কার ওই মেয়েটা মানে মিতু আর জিহু আসে।মেয়েটাকে দেখে অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে।..
“ভাইয়া আম্মু কই.???”
জিহুর কথায় আমার হুশ আসে।ওর দিকে তাকিয়ে বলি..
“বড় বাবাদের বাসায়।”
“চলো না আমাদের সাথে প্লিজজ।”
আমি ওর সাথে যাই।পুরোটা রাস্তা ধরে শুধু মিতুকেই দেখতে দেখতে যাই।মিতুও মাঝে মাঝে আমার দিকে আড় চোখে তাকায়।বড় বাবা দের বাসায় গিয়ে দেখি কুশান বসে আছে সোফায়। বড় মা আর আম্মু মনে হয় রুমে।আমি গিয়ে কুশানের পাশে বসতেই ওর হুশ আসে।
আমি আর মিতু কুশান ভাইয়াদের বাসায় আসতেই ভাইয়াকে সামনে বসে থাকতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যাই।কেনো জানি না ভাইয়ার সামনে আসছে আমার কেমন জানি লাগে।হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“তারপর বল জিদান আজ কয়টা মেয়েকে প্রোপোজ করলি.??”
এবার কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমার অনেকটা বিরক্ত লাগে।আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি কুশান ভাইয়া আমাকে ইন্ডিকেট করেই কথাটা বলছে।
আল্লাহই জানে কতোদিন ধরে আমাকে এই কথা বলে বলে খোটা দেয়।
চলবে