অতলস্পর্শ,পার্ট ১৯ অন্তিম পর্ব
জান্নাতুল বিথী
সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।মানুষের হাসি কান্নার মাঝেই কেটে যায় সময়।তেমনি ভাবে কেটে যায় প্রায় তিন দিন।শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে আমরা এক সুতোয় বাধা পড়ি।অনেক আশা আকাক্ষার পর আমরা একে অপরের কাছে আসতে পারি।আজ এবং এই মুহূর্ত থেকে থেকে আমি কুশান ভাইয়ার বউ,অর্ধাঙ্গিনী। অবশেষে যখন নিজের ভালোবাসার মানুুষ টাকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পাই তাহলে তার থেকেও সুখের আর কিই বা হতে পারে।
এর মধ্যে গতকাল ইমন ভাইয়া এসে আমার কাছে অনেক আকুতি মিনতি করেছিলো বিয়েটা না করার জন্য।প্রথমে সুন্দর ভাবে আমাকে বলেছিলো কিন্তু যখন আমি শুনি নাই তখন আমাকে থ্রেট দিয়ে বলেছিলো বিয়ে যদি করি তাহলে আমার ক্ষতি করবে ব্লা ব্লা ব্লা।আমি ভয় পেয়ে কুশান ভাইয়াকে বলেছিলাম।তারপর আর ইমন ভাইয়ার নাম্বার থেকে ফোন আসে নাই।পরে জানতে পারি ইমন ভাইয়া নাকি হাসপাতালে আছে আপাত। ব্যস আমাকে কুশান ভাইয়া এতোটুকুই জানতে দিয়েছিলো তারপর কি হলো তা আর আমাকে জানায় নাই।আমিও তাকে আর জোর করি নাই কিছু জানার।কারন সেই ইচ্ছাও আমার নেই।
আমি এখন কুশান ভাইয়ার রুমে বিছানার মাঝ খানে বসে আসি।একটু একটু ভয় করছে + আলাদা এক অনুভুতি কাজ করছে আমার মনে।একবার পুরো রুমের চারদিকে তাকিয়ে দেখে নেই।আগে কতো এসেছি এই রুমটাতে।কতো সৃত্মি জড়িয়ে আছে এখানে।কিন্তু তারপরও আমার মনে হচ্ছে আমি এই পরিবেশে পুরোই নতুন।কিভাবে খাপ খাইয়ে চলবো আমি এই পরিবেশে।এখন তো এই মানুুষ গুলোকেই আমার বড্ড অচেনা লাগছে।যদিও আমাকে বড় মা আর বড় বাবা সাহস দিয়েছিলো।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে আমি কেপে উঠি।শাড়ির আচল শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাড়াই।কাপা কাপা পায়ে কুশান ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে সালাম দেই।ভাইয়াও মুচকি হেসে সালামের জবাব নিয়ে আমাকে এক হাতে তার বুকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায় ভালোবাসার পরশ একে দেয়।আমি চোখ বন্ধ করে তার স্পর্শ গুলো অনুভব করতে থাকি।আজ কোনো বাধা না দিয়ে বরং তাকে তার বুকে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেই।আমার মনে হচ্ছে পৃথীবির সব থেকে নিরাপদ জায়গায় আমার আশ্রয় হয়ে গেছে।এখন শুধু তা আগলে ধরে রাখার বাকী।
“বউ এভাবেই সারা রাত জগিয়ে ধরে রাখবে নাকি আমাকে.??আমাকে ছেড়ে দ্রুত ফ্রেস হয়ে নাও।”
হঠাৎ কুশান ভাইয়ার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে।মাথা তুলে একবার তার দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ দিয়ে ইসশারা করে ফ্রেস হয়ে নিতে।আমি কি করবো বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেস হতে চলে যাই।প্রায় ১০ মিনিট পর আমি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি কুশান ভাইয়া খাটে হেলান দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে আছে।উনাতে এভাবে দেখে আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।তাই সিউর হওয়ার জন্য তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে কিছুটা নিচু স্বরে বলি..
“কুশান ভা…..”
আর কিছু বলার আগেই হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমার হাত টেনে তার কোলে বসিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ এমন আক্রমনে আমি বোকা বনে যাই।ভাইয়া আমার ঘাড়ে থুতনি রেখে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে…
“সাত বছর তিন মাস সাতদিন চার ঘন্টা ভালোবাসার পর আজ বিয়ে করলাম নিজের ভালোবাসার মানুুষ টাকে।আজ যখন তাকে নিজের সবটা উজার করে নিজের করে নিবো তখনো যদি সে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকে তখন কেমন লাগে বলোতো।বউ আজো কি তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে।একটা বার শুধু নাম ধরে ডাকো না প্লিজ।”
“ছ-ছা-ড়ুন প্লিজজজ।”
“আগে কুশান বলে ডাকো তাহলেই ছেড়ে দেবো।”
“প-পা-র-বো না। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।সহজে ছাড়তে পারবো না।”
“ওকে তাহলে এভাবেই থাকো।”
কুশান ভাইয়ার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।অন্যদিকে তার এই স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।তাই চোখ খিছে বন্ধ করে বলি..
“ক-কুশান প্লিজ ছাড়ুন আমাকে…..”
“বাহরে বউ এতো মিষ্টি করে ডাকলে কি ছাড়তে ইচ্ছে করে.??”
“এটা কিন্তু চিট হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে।”
কথাটা বলতেই কুশান ভাইয়া আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে আমার অধর যুগল দখল করে নেয়।তারপর কয়েক সেকেন্ড পরই ছেড়ে দেয়।তার হঠাৎ এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তারপর আমাকে পেলেই বেলকনিতে চলে যায়।আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকি।তারপর মনে পড়ে সে তো আমার স্বামী।তাহলে তোর এতো সমস্যা কি জিহা।কথাটা ভেবেই আমি মুচকি হেসে উঠে দাড়াই।উঠে গিটার হাতে নিয়ে বেলকনিতে যাই।দেখি কুশান ভাইয়া উল্টা দিকে ফিরে দাড়িয়ে আছে।আমি যেতেই একবার আমার দিকে বাকা হেসে আমাকে নিয়েই দোলনায় বসে পড়ে।তারপর আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে হাতে একটা আংটি নিয়ে আমাকে পরিয়ে দেয়।হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে…
“একটা ছোট্ট উপহার বউ।”
আমি তার বুকে মাথা রেখে হাতে গিটার দিয়ে বলি..
“আপনার ভালোবাসার কাছে এসব কিছুই তুচ্ছ। একটা গান শুনাবে প্লিজ কুশান.??”
আমার কথা শুনে সে মুচকি হেসে গিটারে টুংটাং শব্দ করে সুর তুলে।..
“তোর বর্ষা চোখে ঝরতে দিবো না বৃষ্টি;
তুই জাগবি সারারাত আমিই আসবো হঠাৎ
তোর বর্ষা চোখে ঝরতে দিবো না বৃষ্টি;
তুই জাগবি সারারাত আমিই আসবো হঠাৎ
তোর শুকনো ঠোটে ফোটাবো প্রেমের হাসি;
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি;
তোর বুকের গভীরে দেবো আজ আলতো ছোয়া;
ভালোবাসবি জনমোধর হৃদয়ে অনেক মায়া
তোর শুকনো ঠোটে ফোটাবো প্রেমের হাসি;
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি;
ভুলে যাস না আমায় তুই ছাড়া বাছি না;
ওওও যতনে রাখবো তোকে ফুলেরো বিছানায়
তোর শুকনো ঠোটে ফোটাবো প্রেমের হাসি;
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি
তোকে প্রানের ছেয়ে বড় বেশিই ভালোবাসি;
পুরো গান সে আমার দিকে তাকিয়ে শেষ করে।আমি মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি।এতো সুন্দর করে এতো আবেগ ঢেলে দিয়ে কিভাবে এতো সুন্দর গান গাইতে পারে কেউ।হঠাৎ সে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে আমার দুই হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে…
“তোকে অনেক ভালোবাসি বউ।আমার এই প্রতিটা অতলে শুধু তোর স্পর্শে ভরিয়ে দিতে চাই।আমার একমাত্র #অতলস্পর্শী যে শুধু তুই।তোকে ছাড়া আর কাকে এই অধিকার দিবো বউ।অনেক ভালোবাসি তোকে।যতোটা ভালোবাসলে অন্য কাউকে ভালোবাসার ইচ্ছাটা মরে যায় ঠিক ততোটা।”
The End