অতলস্পর্শ,পার্ট_০৩
জান্নাতুল বিথী
চারদিকে শীতল হাওয়া বইছে।প্রচন্ড বাতাসের কারনে জানালার পর্দা গুলো বারবার এলোমেলো হয়ে দোল খাচ্ছে।ঝড় হওয়ার পূর্বাবাস।চারদিকে মনোরম দৃশ্য ফুটে উঠছে।সারাদিনের ভ্যাপসা গরমকে এই শীতল হাওয়া নিমিষেই দুর করে দিচ্ছে।চারদিকে এতো মনোরম দৃশ্য দেখে নিজেকে আর পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখতে পারিনি।আমি উঠে দাড়াতেই ফোন বেজে উঠে।কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোনটা হাতে নেই।দেখি ফাহিম ফোন করছে।দেখেই মুচকি হাসি।বেচারাকে অনেক শাস্থি দিছিলাম। রাগও করছে কিন্তু তারপরো ফোন দেখে অবাহ হই না।কারন আমি জানি এটাই আমাদের বন্ধুত্ব।রাগ অভিমান হাসি ঠাট্টা দিন শেষে আবার সবাই এক।ফোন ধরে কানে নিতেই ফাহিম বলে..
“ওই ক্যাবলা কি করছ।ফোন ধরতে এতক্ষন লাগে।??”
“হারামি দিলি তো মুডটা অফ করে।এতো সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদারটাই নষ্ট করে দিলি এই নামে ডেকে।”
আমার কথা শুনে ফাহিম ফিক করে হেসে দেয়।ওরা আমাকে নাম ধরে ডাকে কম।সব সময় অদ্ভুত ধরনের নামে ডাকে।যে নাম গুলো কেউ কোনো দিন শুনেও নাই।..
“গরুরে তোর বফ আছে নাকি যে এমন একটা রোমান্টিক ওয়েদারে তুই তার সাথে বসে বসে প্রেমালাপ করবি।”
“কুত্তাআআআআ তুই গরু।তোর চৌদ্দ গুষ্ঠী গরু।তোর ফিউচার পোলাইন গুলাও সব গরু।ফোন রাখ কুত্তা।”
বলেই কট করে ফোন কেটে দেই।এই গরু শব্দটা আমি একেবারে সহ্য করতে পারি না।
আর আমাকে কি না বলছে গরু.??ভাবা যায় এটা।শেষে বিরক্ত হয়ে ছাদে চলে আসি।
ছাদে আসতেই মনটা জুড়িয়ে যায়।কি সুন্দর স্নিগ্ধ বাতাস।আমি দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকি।পুরো ছাদ জুড়েই অন্ধকার।আমি আসার সময় লাইট বন্ধ করে দিয়ে আসছি।মাঝে মাঝে অন্ধকার কেই কেনো জানি অনেক ভালো লাগে।কিন্তু লাইট বন্ধ করেও লাভ হয় নাই।কুশান ভাইয়াদের লাইটের আলো তীর্যক ভাবে এসে হেলে পড়ছে আমাদের ছাদে।তাতে অবশ্যই আমি অনেকটা বিরক্ত।এভাবে ঠিক কতক্ষণ ছিলাম হিসেব নেই।ছোট ছোট পানির কনা মুখে পড়তেই আমার হুশ আসে।চারদিকে তাকিয়ে দেখি হালকা ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটা পড়ছে।এখন বৃষ্টিতে ভিজলে আমার কপালে শনি আছে।এটা ভেবে আমি চলে আসতে নেই।…
“জিহু.??”
চলে আসতে নিয়েও থেমে যাই আমি।কেউ একজন খুব মৃদু স্বরে ডাকছে আমাকে।ডাকটা শুনে আমার শরীরে কম্পন ছুটে যায়।একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায় আমার মধ্য দিয়ে।আমি কাপা কাপা পায়ে পিছন দিকে ফিরে দেখি কুশান ভাইয়া ডাকছে আমাকে।ভাইয়া তাদের ছাদে দাড়িয়ে আছে।আমি তার দিকে তাকাতেই সে তার ভ্রু যুগল কুচকে ফেলে।এটা দেখে আমার অবস্থা যায় যায়।ভাইয়ার সামনে এভাবে ধরা পড়ে যাবো কখনোই ভাবি নাই।কিন্তু পরক্ষনেই ভাবতে থাকি ভাইয়া যেহেতু বাড়িতে আসছে তাহলে তো অবশ্যই একদিন না একদিন দেখা করতেই হবে।এটা ভেবে নিজেকে শান্তনা দিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাই।দেখি ভাইয়া এখনো আগের মতোই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া বলে উঠে…
“হুসসসস কোনো কথা না।যেখানে যেভাবে দাড়িয়ে আছত ঠিক সেভাবেই দাড়িয়ে থাকবি।একটু নড়চড় করলে খবর আছে তোর।”
কথাটা বলেই ভাইয়া চলে যায় ওইখান থেকে।আমি অবাক দৃষ্টিতে ভাইয়ার যাওয়ার ফানে তাকিয়ে থাকি।আমি এতো বড় হইছি তার পরো ভাইয়া আমাকে ধমক দিচ্ছে??আল্লাহরে আল্লাহ ভাবা যায় এটা।হঠাৎ পিছনে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকাই।..
“ককুশান ভভাইয়া আপনি.???”
নিজের সামনে কুশান ভাইয়াকে দেখে আমার প্রান যায় যায় অবস্থা।ভাইয়া সুন্দর করে পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কালকের কথা মনে পড়তেই আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।আমাকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া বলে..
“কিরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছত কেনো।আমার চেহারা বুঝি এতোই খারাপ যে তাকানো পর্যন্ত যায় না।??”
“আপনার দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে তো আমার নিজেরই হার্টফেল হয়ে যাবে।আবার বলে কিনা তাকানো যায় না।??”(বিরবির করে বলি আমি)
“কিরে কি বিরবির করছ.??”
আমি ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলি..
“আপনি কি ক-কিছু ব-বলবেন.???”
“এটা আমার চাচ্ছুর বাসা আমি যখন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারি।তাই বলে কি তুই…..”
ভাইয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে আমি বলি…
“আপনার চাচ্ছুর বাসা আপনি যখন ইচ্ছা তখন আসতে পারেন তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।কিন্তু আমাকে কেনো ডাকছেন তা তো বলবেন।”
কথাটা বলতেই ভাইয়া আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসে।আমি কিছুটা পিছিয়ে যেতে নিলেই ভাইয়া আমাকে এক হাত ধরে টেনে আবার তার সামনে দাড় করিয়ে দেয়।আমার কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বলে..
“অনেক বড় হয়ে গেলি তুই।আমি তো ভুলেই গেলাম এটা আমার পুচকি জিহু না।সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।সেও এখন মুখে মুখে তর্ক করতে পারে।কি করে তা ভুলে গেলাম বল তো।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই।ভাইয়া যে বিষয় টাকে এভাবে নিবে আমি কখনোই ভাবি নাই।আমি ভাইয়াকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে।তারপর সে নিজেই বলে..
“তবে কি জানছ তো আমি এখনো ঠিক আগের মতোই আছি একটুও পরিবর্তন হই নাই।এখনো তোর আগের কুশান ভাইয়াই আছি।তাই এখন তুই আমার সাথে তর্ক করার কারনে শাস্থি পাবি।আর তোর শাস্থি হলো তুই এখন এখানেই দাড়িয়ে থাকবি আমি যতক্ষণ না যেতে বলবো ঠিক ততক্ষণ।”
শাস্থির কথা শুনে আমি দম মেরে যাই।ভাইয়ার দিকে কাদো কাদো ফেস করে বলি..
“কুশান ভাইয়া আকাশের অবস্থা ভালো না যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে।দেখেন না ছোট ছোট ফোটা এখনই পড়ে।আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে ভাইয়া।”
“নো অজুহাত জিহু এখানেই দাড়িয়ে থাকবি তুই।বৃষ্টি আসবে না আর যদিও আসে তাহলে আমি দেখে নেবো।”
“ভাইয়া আ……”
“জিহু…”
ভাইয়ার শান্ত গলায় ধমক শুনে থেমে যাই।তবে আমি এটাতেই বেশি অবাক হচ্ছি কারন ভাইয়া এখনো কালকের ব্যাপারে কিছুই বলে নাই।অবাক + খুশিও হই।যাক ভাইয়া তাহলে কালকের সব কিছুই ভুলে গেলো।কথাটা মনে করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দেই।ভাইয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবং আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে..
“জিহু একদম হাসবি না।হাসলে তোর খবর আছে।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।সে বুঝলো কি করে যে আমি হাসি….
“জিহু আকাশের দিকে তাকা।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি আকাশের দিকে তাকাই।পুরো আকাশের মেঘ কেটে গেছে।তার জায়গায় এখন হাজার হাজার তারার মেলা বইছে।মাথার উপরে চাদ। মুহূর্তেই চারদিকে চাদের আলো ছড়িয়ে পড়ে।আমি মুগ্ধ নয়নে চারপাশটা দেখছি।এতো সুন্দর দৃশ্য কখনো দেখেছি বলে আমার মনে হয় না।হঠাৎ আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকাই।ভাইয়া ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মুহূর্তেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি..
“ভাইয়া আপনি জানলেন কি করে এখন বৃষ্টি আসবে না।???”
“পাগলী কখন বৃষ্টি হবে না হবে তা শুধু একজনই জানে।আমিও মাত্র অনুমান করে বলছি।”
আমি কিছু বলি না।মুখে হাসি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।..
“এখন রুমে যা..”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ঠোট উল্টে বলি..
“এখন যাবো না আমি।আমার কাছে পরিবেশটা অনেক ভালো লাগছে।আর এতক্ষন তো দাড় করিয়ে রাখছেন এখন কেনো এই কথা বলছেন.???”
ভাইয়া আর কোনো কথা বলে নাই।চুপ করেই আমার পাশে দাড়িয়ে থাকে।
★
লিভিংরুমে ভাইয়া আর কুশান ভাইয়া দুজনেই বসে আছে।আমি গুটিগুটি পায়ে সেদিকে এগিয়ে যেতেই কুশান ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে বলে…
“জিদান তোর বোন তো দেখছি আজ কাল ছেলেদেরকে প্রোপোজ ও করতে জানে।”
চলবে