অতলস্পর্শ,পার্ট_০৮,৯,১০
জান্নাতুল বিথী
পার্ট_০৮
কথাটা শুনেই কুশান ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি।হঠাৎ ভাইয়া আমার সামনে থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়।আমিও ছাড়ার পাত্রী নয় তাই আমি উঠে ভাইয়ার পেছনে পেছনে বেলকনিতে যাই।ভাইয়া দুই হাত বুকে গুজে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার পাশে দাড়াই।তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি…
“ভাইয়া আমার প্রশ্নটার উত্তর দেন প্লিজজজজ।”
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলি কুশান ভাইয়া কোনো কথা না বলে আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।আমার এবার অনেক বিরক্ত লাগছে।..
“আমি চলে যাই তাহলে.??”
“আসতে যেহেতু কোনো অনুমতি লাগে নাই তাহলে যেতে অনুমতি লাগার কথা না।”
অবশেষে তার মুখ থেকে কথা বের করতে পারলাম।..
“ওকে আমি চলে যাবো তার আগে একটা কথা বলেন।আমার মতো থার্ডক্লাশ… ”
আমি কথা পুরোটা শেষ না করতেই ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।তাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই।ভাইয়া আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।কুশান ভাইয়ার কাজে আমি পুরোই শকড।আপাত আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে কোনো কিছুতেই কাজ করছে না।ভাইয়া আমার কপাল থেকে ছোট ছোট চুল গুলো কানের কাছে গুজে দেয়।তার প্রতিটা স্পর্শে আমি কেপে উঠি।অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমাকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে..
“তোর মতো একটা থার্ডক্লাশ মেয়ের যদি বফ থাকে তাহলে আমার অনেক কিছু।ইভেন যদি তোর কোনো বফ থাকেও তাকলে তার কথা ভুলে যা।”
আমি এখনো ভাইয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।..
“কেনো.??”
“কজ আমি বলছি তাই।কেনো তার জন্য বুঝি আলাদা কোনো রিজন দেখাতে হবে।”
কথাটা বলেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দেয়।তারপর আবার আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলে..
“এখন গিয়ে সুন্দর করে খেয়ে নিস।আমি একটু পর ওই ফ্ল্যাটে আসছি। আর এসে যদি শুনি তুই এখনো খাওয়া দাওয়া করিস নাই তাহলে তখন কি হবে তা তখন দেখবি।এখন যা।”
★
রুমে বসে বসে মিতুর সাথে চেটিং করছি।রুমে এসে সবার আগে খাওয়া দাওয়া করে নেই।কারন কুশান ভাইয়াকে বিশ্বাস নেই।যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।তাই বাসায় এসেই আগে খেয়ে নেই।হঠাৎ আমার রুমে জিদান ভাইয়া আসে।ভাইয়া এসেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ ভাইয়ার আগমনে আমি কিছৃটা হকচকিয়ে যাই।ভাইয়া ছোট বাচ্ছাদের মতো চকলেট খেতে খেতে আমাকে বলে..
“কিরে মিসেস পেত্নি কি করিস।.??”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে ভাইয়ার চুল টেনে দেই।ভাইয়া আউচ বলে মৃদু চিৎকার করতেই আমি হেসে দেই।…
“ভাইয়া আমি মিসেস হলাম কখন?? কোন দিন?? কিভাবে..?”
আমার কথা শুনে ভাইয়া ফিক করে হেসে দেয়।তারপর আমার মাথায় টোকা দিয়ে বলে..
“খুব তাড়াতাড়ি তো বড় হয়ে গেছিস।এখন তো বিয়ে দিতে হবে। তা কবে বিয়ে করবি শুনি.??”
“আমি কখনোই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না।সবার আগে তোমার বিয়ে হবে। তারপর তুমি ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত আমার মাথা থেকে যতো গুলো চুল চিড়লে ঠিক ততোগুল চুল তোমার বউয়ের মাথা থেকে চিড়বো।তারপর চিন্তা করে দেখবো বিয়ে করবো কি করবো না।”
তারপর শুরু হয়ে যায় আমাদের দুই ভাই বোনের খুন শুটির ঝগড়া।ভাইয়ার সাথে অনেক্ষন হাসি ঠাট্টা মারামারি করে ক্লান্ত হয়ে দুজনেই বসে পড়ি।ভাইয়া লস্বা হয়ে খাটের উপর শুয়ে পড়ে।হঠাৎ ভাইয়া কল আসায় ভাইয়া মোবাইল নিয়ে উঠে চলে যায়।আমি ফ্রেস হয়ে এসে পড়তে বসি।প্রায় অনেক্ষন পড়ার পর হঠাৎ গিটারের টুংটাং শব্দে আমি চমকে উঠি।কিছুটা অবাক হয়ে আমি উঠে দাড়াই।গিটারের শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে যাই।বেলকনিতে গিয়ে দেখি কুশান ভাইয়া তার বেলকনিতে দোলনায় বসে গিটারে সুর তুলছে।হঠাৎ ভাইয়ার আজকে করা কাজ গুলো আমার মনে পড়ে যায়।আনমনেই হেসে উঠি।মনে মনে ভাবছি সত্যিই ভাইয়া একটা আজব ধরনের প্রানী।যে প্রানী সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি অনেক বুঝি তাকে কিন্তু তাও মনে হয় কে সে আমি তো তাকে ছিনি না।তাকে বুঝিই না।আচ্ছা সে কি আমার জীবনের বিশেষ কেউ.??কথাটা একবার মনে আসতেই নিজেকে নিজে গালী দিতে থাকি।
“ছিহহহহ জিহা তোর ভাবনার কোন দিন থেকে এতোটা নিচে নেমে গেলো।ও তোর ভাই শুধুই ভাই আর কিছুই না।এর চাইতেও বেশি কিছু ভাবা টা তোর ঠিক না।কোথায় তোর কুশান ভাইয়া আর কোথায় তুই।এই দিকটা অন্তত্য একবার চিন্তা করবি।”
এসব বলে নিজেকে সান্তনা দিতে থাকি।হঠাৎ কুশান ভাইয়া গান গেয়ে উঠে…
“যদি এমন হতো তোমায় নিয়ে;
স্বপ্ন গুলো সত্যি হতো;
যদি এমন হতো তোমার সাথে;
সময় টুকু অসীম হতো;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;
ওওও আর সইছে না যে দুরে থাকা;
একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;
এই সুরে রেশ ধরে যাবো হারিয়ে;
সুখ পাখিটার ডানায় চড়ে যাবো উড়ে উড়ে;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;
ওওও আর সইছে না যে;
দুরে থাকা একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;
গৌধুলির লঘ্নে তোমার হাত ধরে;
বলবো কথা চুপিসারে অচিনপ্রান্তরে;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;
ওওও আর সইছে না যে;
দুরে থাকা একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;
চলবে
অতলস্পর্শ
পার্ট_০৯
জান্নাতুল বিথী
কেটে যায় প্রায় ২ মাস।এই দুই মাসে অনেক কিছু ঘটে যায়।সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায়।শ্রাবন মাসের মাঝামাঝি সময়।রাত প্রায় ২ টা বাজে।বাহিরে প্রচুর ঝড় উঠছে।সন্ধ্যা থেকে এক টানা বৃষ্টি লেগেই ছিলো।অবশ্যই বর্ষা কাল বলে কথা।আমি রুমে কাথা মুড়ি দিয়ে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছি।হালকা শীত শীত লাগছে।চোখ বন্ধ করতেই কুশান ভাইয়ার হাস্যজ্জ্বল মুখ খানা ভেসে উঠে চোখের সামনে।এই দুই মাসে কুশান ভাইয়া আমাকে অনেক ভাবে জ্বালিয়েছে।দুই মাসে ভালো করে দুইটা দিন ও ঠিক মতো শান্তিতে থাকতে দেয় নাই তিনি আমাকে।নানা ভাবে বিরক্ত করতো আমাকে।কখনো এসে আমার কোলে মাথা রেখে বলতো তার মাথায় আলতো করে বিলি কেটে দিতে তার নাকি মাথা ব্যাথা করে।আমিও বাধ্য মেয়ের মতো তার মাথায় বিলি কেটে দিতাম।কখনো কখনো তাদের ফ্ল্যাটে গেলে বলতো তাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য তার নাকি হাতে ব্যাথা করে।কাজ গুলো করতে আমার প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন বেশ ভালো লাগে।আলাদা একটা অনুভুতি কাজ করে তার প্রতি।আমি জানি না এই অনুভুতির নাম কি দেওয়া যায় তবে বলবো যে আমার এই অনুভুতি সবার থেকে আলাদা।এখন তাকে নিয়ে ভাবতে অনেক ভালো লাগে।মাঝে মাঝে তার করা কাজ গুলো দেখে সত্যিই অবাক হয়ে যাই।কুশান ভাইয়া প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য কখনো আইসক্রিম, ফুসকা,বিরিয়ানি নিয়ে আসতো।কখনো বা আসার সময় হাতে এক গাদা করে চুড়ি নিয়ে আসতো।চুড়ি বরাবরই আমার পছন্দের।
কিন্তু আজ আমার মনটা ভীষন খারাপ লাগছে।আজ সারা দিনে একবারের জন্যও কুশান ভাইয়া আমাদের ফ্ল্যাটে আসে নাই।ভাইয়া এখন ধরতে গেলে আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।তাকে একটা বার না দেখলে কেনো জানি না নিজের থেকে অনেক খারাপ লাগে।হঠাৎ ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই আমি উঠে বসি।পাশ ফিরে ফোনটা হাতে নেই ভাইয়া কে একটা বার ফোন করার জন্য।কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ে এখন তো রাত অনেক হয়েছে ভাইয়া হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে।কথাটা মনে পড়তেই মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।আমি জানালা দিয়ে ভাইয়ার রুমের দিকে উকি দিয়ে দেখি ভাইয়ার রুমে এখনো আলো জ্বলে।তার মানে ভাইয়া এখনো ঘুমায় নাই।কথাটা মনে পড়তেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।ফোনটা পুনরায় হাতে নিয়ে আমি ভাইয়ার ফোনে ডায়াল করি।
,
কুশান বসে অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।আজ দুই দিন ধরে তার আবার অফিসে কাজের চাপ বেশি।তাই রাত জেগেই প্রায় তাকে কাজ করতে হয়।সে যে কাজ করছে তার এতো দিকে হুশ নেই যে রাত প্রায় কতোটা হইছে।অনেকটা ক্লান্ত শরীর নিয়ে খাটে হেলান দিতেই।হঠাৎ ফোন বেজে উঠে তার।সাথে সাথে কিছুটা চমকে উঠে সে।এতো রাতে কে ফোন করবে তা ভেবে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ফোনের স্কিনে “নীলপরী” নামটা জ্বলজ্বল করছে।মুহূর্তেই তার সব ক্লান্তি মুচে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু তা আবার সাথে সাথেই মিলিয়ে যায়।এই ভেবে যে এতো রাতে ফোন করছে যেহেতু তার মানে কোনো বিপদ হয় নাই তো.??কথাটা ভেবেই কুশান তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করে।ফোন ধরে কানের কাছে নিতেই ওই পাশ থেকে বলে উঠে..
“কুশান ভাইয়া আপনি এতো পচা কেনো।আজ আমাদের ফ্ল্যাটে একবারের জন্যও আসেন নাই আবার আমার চকলেটও দিয়ে যান নাই।কেনো বলুন তো।??”
কথাটা শুনে কুশান নিঃশব্দে হাসে।এতো দিন পর তার মনে হচ্ছে সে অনেক বড় একটা কথা শুনেছে।তার নীলপরী তাকে মিস করছে।এতো দিন পর সে নিজেকে স্বার্থক মনে করছে।..
“সরি জিহু আসলে আজ অনেকটা কাজের চাপ থাকার কারনে যেতে পারি নাই।আর অফিস থেকে আসতে আসতে অনেক লেট হয়ে গেছে তাই কিছু আনতে পারি নাই।সরিইইইইই কানে ধরছি আর এখন হবে না।”
ওই পাশ থেকে জিহা ঠোট টিপে হাসে।তারপর কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে..
“ঠিকাছে ঠিকাছে এবারের মতো ক্ষমা করলাম।বাট পরের বার যদি এমন হয় তবে খবর আছে কিন্তু।”
“ঠিক আছে ম্যাডাম।”
মুচকি হেসে বলে কুশান। তারপর কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে…
“কাল সকালে রেডি থাকবি আমি তোকে কলেজে ড্রভ করে দিবো।”
“ঠিক আছে ভাইয়া.”
তারপর ভাইয়ার সাথে টুকটাক আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দেই আমি।
★
ভার্সিটিতে বড় একটা গাছের নিচে বসে আমি নাঈমা মিতু আর ফাহিম বসে আড্ডা দিতেছি।কুশান ভাইয়া একটু আগে আমাকে দিয়ে গেছে।হঠাৎ আমার সামনে আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ে এসে বসে।মেয়েটার নাম নেহা।কিছুটা ন্যাকা টাইপের মেয়ে।এসে আমার সামনে বসে বলে..
“হাই জিহা কেমন আছো তুমি.??”
“ভালো।”
“আচ্ছা আজ তোমার সাথে যে কালো গেন্জি পরা একটা ছেলে আসছে ছেলেটা কে বলবে।??”
কালো গেন্জি তার মানে কুশান ভাইয়া।আমি ওর দিকে কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলি..
“কেনো.???”
“আসলে ছেলেটাকে অনেক পছন্দ হইছে তাই।”
নেহার কথাটা শুনেই আমার মাথায় দফ করে আগুন জ্বলে উঠে।ওর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলি..
“উনি যেই হোন না কেনো তার বিয়ে হয়ে গেছে এক বছর আগে।এবং তার দুইটা বাচ্ছাও আছে।সো তার দিকে চোখ তুলে তাকালেও লাভ নেই বুঝলে.??”
আমার কথা শুনে নেহা কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।এবং কি উপস্থিত সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ফাহিম আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“এক বছরে বিয়ে।তার উপর দুইটা বাচ্ছা কিভাবে সম্ভব কিহু.???”
ফাহিমের কথা শুনে আমি থতমত খেয়ে যাই।তারপরো আমতা আমতা করে বলি..
“টুইন বেবি হইছে বুঝলি মূর্খ্য.??”
বলেই আমি উঠে ক্লাসের দিকে হাটা শুরু করি।শেষে উপায়ান্তর না পেয়ে ওরা তিনজনও আমার পেছনে পেছনে আসে।
,
ভার্সিটি ছুটি হতেই আমি বের হয়ে গেটের সামনে এসে দাড়াতেই আমার সামনে ইমন নামের একটা ছেলে এসে দাড়ায়।ছেলেটাকে ছিনি আমি আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই।মাঝে মধ্যেই আমার সামনে এসে দাড়ায় আর বলে..
“জিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ আমার ভালোবাসা টা এক্সেপ্ট করো।আমি তোমাকে অনেক ভালো রাখবো।প্লিজ এস্কেপ্ট মি.ব্লা ব্লা ব্লা।”
কিন্তু প্রতিদিনই আমার কথা একটাই থাকে।তাই ফিরে চলে যায়।আজ আবারো আসছে।এসেই আমার সামনে পুরোনো ডাইলগ গুলো দিতে থাকে।আমি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসি!পেছন থেকে ভাইয়াটা কিছু একটা বলছে আমি ভালো করে শুনি নাই।
চলবে
অতলস্পর্শ
পার্ট_১০
জান্নাতুল বিথী
কুশান ভাইয়া আর আমি গাড়িতে বসে আছি।ভাইয়া ড্রাইভ করছে।আমি বসে বসে ভাইয়ার সাথে বকবক করছি আর ভাইয়া চুপচাপ ড্রাইভ করছে।আমার সাথে এক বারের জন্যও কথা বলে নাই।ভাইয়ার সাথে বকবক করতে করতে আমি খেয়ালই করি নাই যে আমরা বাড়ির ঠিক উল্টো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।এটা দেখেই আমি আৎকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকাই।তার দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।..
“ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি.??”
ভাইয়া কোনো কথা না বলে ড্রাইভ করতে থাকে মনোযোগ দিয়ে।এবার আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি ভাইয়ার দিকে মন খারাপ করে তাকাই। ভাইয়ার এক হাত ধরে হালকা টান দিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে বলি..
“ভাইয়া আমি কি কোনো ভুল করছি যার কারনে আপনি আমার উপর রেগে আছেন.??”
কুশান ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে..
“কই না তো।আমি কি তোকে বলছি যে আমি রাগ করছি বা অন্য কিছু.??
“নাহ কিন্তু আপনি তাহলে আমার সাথে কথা বলেন না কেনো।আমি তো সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছি কিন্তু আপনি মনে হচ্ছে কিছুই শুনেন না।কি হলো আপনার.??”
“তোর প্রতিটা কথা সব সময় আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনি।সো কখনোই এই ধরনের কথা মুখেও আনবি না।আর বাকী রইলো কথা না বলা।ওইটা এমনিই আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপ করে আছি।তোর কথা শুনতে ভালো লাগছে।”
কুশান ভাইয়ার কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি গাল ফুলিয়ে বলি..
“তার মানে আমি আপনাকে বিরক্ত করছি।আর আপনি আমার কথায় বিরক্ত বোধ করছেন বলেই চুপ করে আছেন ভালো লাগছে না আপনার।তো সেই কথাটা আগে বললেই পারতেন এতো অভিনয় করার কি ছিলো??”
আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক কষে। সিটবেল্ট থাকায় এই যাত্রায় বেচে গেলাম।আমি একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখি আমরা একটা জন মানবশূন্য গ্রাম সাইড এলাকায় আছি।বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।আমার কথায় ভাইয়া হয়তো রেগে গেছে।কিন্তু আমি এখানে রেগে যাওয়ার মতো কোনো রিজনই খুজে পাই নাই।তাই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি..
“ভাইয়া আমি যা বলছি সত্যি বলছি এখানে রেগে যাওয়ার…”
“জাস্ট সাট আপ জিহা।যে সব কথার কোনো মানে বুঝিস না তা নিয়ে এতো গবেষনা করতে কে বলছে তোকে।??”
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ভাইয়া জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠে ভাইয়া।আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বারের মতো দেখলাম কুশান ভাইয়া আমাকে পুরো নামে ডাকছে।নয়তো সব সময় আমাকে সে জিহু বলেই ডাকতো।ভাইয়া কতো টা না রেগে গেলে তার রাগ কন্ট্রোলে থাকে না।আমার এবার অনেক ভয় করছে।ভাইয়া বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে আমার দিকে তাকায়।তারপর বলে…
“জিহা তুই নিজেও জানিস না আমার কাছে তোর মুল্য ঠিক কতোটুকু।কি বলবো আমি তোকে.?? কথার বলার কোনো অবস্থাতেই নেই এখন আমি।যে মানুষটার একটু কথা শুনার জন্য দিশেহারা হয়ে যেতাম। যাকে একটা মুহূর্ত দেখার জন্য মন চাইতো সে যখন আমার পাশে থাকে কিংবা কথা বলে তখন কেনো আমার বিরক্ত লাগবে জিহু।কেনো.??এন্সার মি.”
ভাইয়ার চিৎকারে আমি কেপে উঠি।নিচের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমি ভাবতে থাকি।ভাইয়া কেনো এই কথা গুলো বলছে।আমাকে দেখতে তার ইচ্ছে করে।আমার কথা শুনতে সব সময় মন চায়। কেনো.??তার মানে কি ভাইয়া আমাকে.??
আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে।তার চোখ মুখ পুরোটাই লাল হয়ে আছে।বেশি রেগে গেলে যা হয় আর কি।ভাইয়া গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বাড়ির পথে যেতে থাকে।আমার একবার ইচ্ছে করছিলো তাকে জিজ্ঞেস করি যে আমরা কোথায় যাচ্ছিলাম।কিন্তু সাহসে হয় নাই তার সাথে দ্বিতীয় বারের মতো কথা বলার।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
★
কেটে যায় আরও তিনদিন।এই তিনদিনে প্রতিটা দিন আবার আমাকে ইমন ডিস্টার্ব করে গেছে।সিনিয়র ভাই কারনে আমি কিছু বলতে পারি নাই।এই তিনদিনের মধ্যে কুশান ভাইয়া একবারের জন্যও আমাদের ফ্ল্যাটে আসে নাই।ধরতে গেলে এই তিনদিনের একদিনও আমি ভাইয়াকে দেখি নাই।আমি তো ভেবেছিলাম কুশান ভাইয়া হয়তো বাড়িতে নেই।কিন্তু বড়মা কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলছে ভাইয়া নাকি বাড়িতেই আছে।অফিসে কাজের চাপ হয়তো একটু বেশিই যার কারনে ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে ইগনোর করছে।আমার সাথে ইচ্ছে করেই দেখা করছে না।আমার কিচ্ছু ভাল্লাগে না।সব সময় ইচ্ছে করে একবার কুশান ভাইয়ার সাথে কথা বলি।ভাইয়াকে একবারের জন্য একটু দেখতে ইচ্ছে করে।আমার অনেক কান্না আসছে।সহ্য করতে পারছি না কিছুই।
এখন রাত প্রায় ৯ টা বাজতে চলেছে।আমি বেলকনিতে রেলিয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি।চোখ দিয়ে এক ফোটা জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।আমি জানি না ভাইয়ার জন্য আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো।শুধু জানি তাকে ছাড়া আমার সময় কাটে না।তাকে ছাড়া আমি একেবারেই অচল।হঠাৎ আমার চোখ যায় ভাইয়ার রুমের দিকে।আলো জ্বলছে।তার মানে ভাইয়া এখন বাড়িতে আছে।আমি এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে যাই কুষান ভাইয়াদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য।লিভিংরুমে এখন কেউ নেই।জিদান ভাইয়া এখনো অফিস থেকে ফিরে নাই।বাবাও অফিসে আর মা হয়তো রুমে আছে।যার কারনে আমি আসার সময় কারো চোখেই পড়ে নাই।
,
আমি ভাইয়ার রুমে আসতেই দেখি কুশান ভাইয়া সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হইছে।কালো ট্রাউজার আর খালি গায়ে গলায় টাওয়াল জুলানো।আমি ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেই।ভাইয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইয়া আমাকে এখানে মোটেই আশা করে নাই।আমাকে এভাবে হঠাৎ তার রুমে আসতে দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে বলে..
“কি চাই এখানে.??”
“ভাইয়া আপনি আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন কেনো.??”
“আমি তোকে ইগনোর করতে যাবো কেনো।আমি তোকে ইগনোর করার কে হুমম??নিজেকে এতো ইম্পরট্যান্ট ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখানে কি তোর.??যা না ভার্সিটিতে যা।ওইখানে তো তোর জন্য কতো জন অপেক্ষা করছে তাহলে আমার কাছে কি তোর।বিরক্ত লাগছে আমার জিহু প্লিজ রুম থেকে বের হয়ে যা।একা থাকতে দে আমাকে একটু প্লিজ।”
কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার সামনে থেকে সরে বেলকনিতে চলে যায়।
চলবে