অতলস্পর্শ,পার্ট_১৬,১৭

0
3212

অতলস্পর্শ,পার্ট_১৬,১৭
জান্নাতুল বিথী

আমি কুশান ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।যা কিছু হলো সব কিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তাকে মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিতে থাকি।যখন সে নিজে মেয়েদের সাথে ঘষাঘষি করে তখন আর কিছু হয় না।আর আমি সামান্য কারো সাথে কথা বললেই আমার দোষ হয়ে যায়.?আমি আর না পেরে এবার কুশান ভাইয়াকে ধাক্বা দিয়ে সরিয়ে দেই।হঠাৎ এমন আক্রমনের জন্য কুশান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তাই সে একটু দুরে সরে যায়।ঘটনা বুঝতেই ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলি…

“নিজে যখন মেয়েদের সাথে ঘষাঘষি করেন তখন আমার কেমন লাগে একবার বুঝে দেখুন তাহলে।সব সময় আগে নিজের দিকে তাকাবেন।তারপর অন্য কাউকে শাসন করার চিন্তা মাথায় আনবেন বুঝবেন।”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া আমার দিকে প্রথমে রাগী লুকে তাকায়।তারপর শান্ত হয়ে আমার কাছে এসে আমার দু গালে হাত রেখে বলে..

“জিহু টিয়া একটা পাগল মেয়ে।আর ও আমাকে ভালোবাসে।ও চায় আমি সব সময় ওর পাশাপাশি থাকি।আর তাছাড়া ও একটা ডেন্জারাস মেয়ে।এখন আমি যদি ওকে ইগনোর করি তাহলে সব দোষ এসে তোমার ঘাড়ে পড়বে আর ও তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।তুমি কি কখনো দেখছো যে তোমার কুশানকে কোনো মেয়ের সাথে মিশতে।তাহলে এখন এমন করছো কেনো।প্লিজ ভুল বুঝবে না আমাকে।তুমি ছাড়া আমাকে আর কে ভালো বুঝবে বলো।??”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি হতভাগ হয়ে যাই।তার এই সামান্য কথা বলার পেছনে যে এতো বড় একটা কারন থাকবে তা আমার জানা ছিলো না।তারপরও আমি তার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলি..

“তারপরও আপনি তার সাথে বেশি মিশবেন না।সে আমার কোনো ক্ষতি করবে না বা করতে পারবে না।কুশান ভাইয়া কেউই চায় না যে তার ভালোবাসার মানুুষ টা অন্য কোনো মেয়ের সাথে বেশি সময় কাটানো।তার সাথে হেসে হেসে কথা বলা।আ-আমি আর যাই হোক এই মিস্টার বজ্জাটার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না।এ কথাটা সব সময় মাথায় রাখবেন।”

আমার শেষের কথাটা শুনে কুশান ভাইয়া ফিক করে হেসে দেয়।তারপর আমাকে দুই হাতে আগলে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে…

“তোমার মিস্টার বজ্জাত সব সময় তোমারই থাকবে।বুঝলে.??”

________________________________

খাটের মাঝখানে বসে বসে আমি চকলেট খাইতেছি আর ফেসবুকিং করতেছি।একটু আগেই কুশান ভাইয়া এসে আমাকে কতো গুলো চকলেট দিয়ে গেলো।চকলেট দেখে তো আমার খুশিতে আত্মহারা।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।তার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো আমার অনেক ভালো লাগে।অদ্ভুত মানুুষ তিনি সত্যিই।এসব ভাবছি আর মুচকি মুচকি হাসতেছি।হঠাৎ কোথা থেকে যেনো একটা পাঁচ বছরের পিচ্চি ছেলে এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলে..

“ছোট মা ও ছোট মা এদিকে আসো।তোমাকে সবাই ডাকছে।কত্তো কিউট তুমি। উপপপ আমার তো অনেক পছন্দ হইছে।এবার আসো তো দেখি।”

পিচ্চির কথা শুনে আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি আমি।আর তার বলা কথা গুলো আরেকবার মনে মনে পড়ে নিলাম।হঠাৎ এক জায়গায় এসে থেমে যাই।আর ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলি..

“ছোট মা.??ছোট মা মানে কি.??আর এই পিচ্চি তোমার ছোট মা টা আবার কে.??তোমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি তোমার ছোট মা হতে যাবো কেনো।তুমি ভুল জায়গায় চলে আসছো পিচ্চি।”

আমার কথা শুনে পিচ্চি খিলখিল করে হেসে দেয়।তারপর হাসতে হাসতেই বলে..

“ছোট মা মানে বুঝো না.??হাইরে তুমি তো আমার থেকেও কত্তো বড়।তারপরও বুঝো না.??এক মিনিট বুঝিয়ে দিচ্ছি। তার আগে তুমি চলো আমার সাথে।”

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে শুধু পিচ্চির কথা গুলো শুনতেছি।সে এক প্রকার আমাকে টেনে লিভিং রুমে নিয়ে যায়।সেখানে যেতেই আমি আরো বেশি অবাক হয়ে যাই।কারন সেখানে আরো দুইটা মহিলা আর একজন পুরুষ আর একটা ছেলে বসে আছে।তারা বসে বাবার সাথে কথা বলছে।কারো আসার শব্দ পেয়ে সবাই আমার আর পিচ্চি টার দিকে তাকায়।তাদের দেখে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।আমাকে দেখতেই বাবা হাসি মুখে বলে…

“আরেহ জিহু মা।এদিকে আয় মা।”

বাবার কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যাই।গিয়ে সালাম দেই।একটা মেয়ে আমাকে তার পাশে টেনে বসিয়ে দেয়।আমি বসতেই মধ্য বয়স্ক একটা মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বলে..

“মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর তুমি মা।ভাইজান(বাবার দিকে তাকিয়ে)আপনার মেয়েকে আমাদের ভীষন পছন্দ হইছে।কি নাম তোমার মা.??”

মধ্য বয়স্ক মহিলাটা খুব সুন্দর পছন্দ হইছে কথাটা বলতেই আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠে।সব কিছু না বুঝলেও আমি কিছুটা হলে সন্দেহ করঝি।এটা ভাবতেই আমার প্রচুর রাগ লাগে।তারপরো ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে আমার নাম বলি।তারপর মহিলাটি হাসি মুখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে..

“আলহামদুল্লিলাহ ভাইজান সত্যিই আপনার মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হইছে। আমার ছেলের সম্পকে তো আপনাকে বললামই।তারপরও বলছি।এই আমার ছেলে(সামনে বসা ছেলেটাকে ইন্ডিকেট করে)রিমন।একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার।আর বাকী টা ও কেমন তা আপনারা খোজ নিলেই জানতে পারবেন।আর আপনার মেয়েকে আমাদের ভীষন পছন্দ হইছে।তাই আপনার মেয়ে….আই মিন আমি যা বুঝাতে চাইছি তা নিশ্চয় আপনি বুঝতে পেরেছেন।তাই আর বলছি না।”

মহিলাটার কথা শুনে আমি চমকে উঠি।ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখি সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখতে শুনতে ভালোই আছে।তবে আমি কেনো ওকে বিয়ে করবো।আমি তো অন্য একজনকে ভালো বাসি।ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনো দিনও সম্ভব না।আমি বাবার দিকে তাকাই।এখন বাবা কি বলে তাই দেখার বাকী।আমার খুব খারাপ লাগতেছে।বাবা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে বলে…

“দেখেন আমার মেয়ের বিরুদ্ধে আমি কখনোই যাবো না।আপনারা হঠাৎ এসেছেন এখন আমরা ভেবে দেখবো সবার মতামত নিবো তারপর আপনাদেরকে জানাবো।এখনই আমি কিছু জানাতে পারবো না। সরি।”

চলবে

অতলস্পর্শ
পার্ট_১৭
জান্নাতুল বিথী

পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে চারদিকে।লিভিংরুমে সবাই বসে আছে।সবাই বলতে আমি কুশান ভাইয়া জিদান ভাইয়া বাবা মা বড় বাবা আর বড় মা।সবাই আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।আমার বাবা কুশান ভাইয়ার বাবা মা কে ডেকে এনেছিলো এই বিষয়ে তাদের মতামত জানার জন্য।সব কিছু বড় বাবাকে বলে মাত্রই বাবা থামলো।বড় বাবা চোখ বন্ধ করে বসে আছে।কুশান ভাইয়া ও নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আর সব চেয়ে বেশি শান্ত ভাবে বসে আছে জিদান ভাইয়া।কথার মাঝে বাবা একটু থেমে বলে…

“আমি এখন চাইছি জিদানের বিয়ের কাজ আগে সম্পন্ন করি।তারপর না হয় জিহার কথা চিন্তা করবো।এখন তাদের অপেক্ষা করতে বলি।”

বাবার প্রথম কথাটা শুনে আমি কিছুটা হেসে দেই।কিন্তু শেষ কথাটা শুনতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।বুঝিনা তাদের অপেক্ষা করানোর কি দরকার আছে।তাদের সামনেই তো পাত্র পক্ষ বসে আছে।তাদের দিকে বুঝি বাবার চোখ যায় না.??হঠাৎ বড় বাবার কথা শুনে আমি চমকে উঠি।উনি বলেন…

“উমমম জিহা মাকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই ছিনি।তাই আগেই ভেবেছিলাম তাকে আমাদের থেকে দুরে সরানোর কি আছে। আমার ঘরে একটা ছেলে থাকতে।আমি অনেক আগে থেকেই জিহাকে পূত্র বধু করার কথা চিন্তা করছিলাম কিন্তু তোমাদের বলার সময় হয়ে উঠে নাই।বাট আজ এমন এক সময় বলতে হচ্ছে যেখানে.. কি বলবো আর.??”

বড় বাবার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাই।উনি বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি চোখ নামিয়ে কুশান ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেও বড় বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে এই কথা শুনে সে নিজেও অনেকটা অবাক হইছে।বড় বাবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেও আমার দিকে তাকাতেই আমাকে চোখ মারে।আমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে পেলি।বাবা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে…

“আরে বাহ ভাইজান আমার সামনে ছেলে থাকতে আমি ওর জন্য ছেলে খুজতে যাচ্ছি কেনো।এটাতো খুব খুশির সংবাদ।আমার কোনো আপত্তি নেই এতে।কিরে জিহা তোর কোনো আপত্তি আছে এতে.??”

বাবার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।লজ্জায় ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে।লজ্জায় আমি মায়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি।হঠাৎ জিদান ভাইয়া বলে উঠে..

“উপপপ বাবা তুমি ওকে জিজ্ঞেস করছো কেনো এতো জনন মানুষের সামনে।আর তাছাড়া ওর কি আপত্তি থাকবে।কুশানের মতো ছেলে খুজে পাওয়া যায় নাকি.???”

যাহ বাবা ভাইয়া আমার মনের কথাটা বলে দিরো।এখন তো ইচ্ছে করছে তাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে।বড় বাবা বলে..

“আমি চাইছি জিদান আর কুশানের বিয়ে টা একই দিনে দিতে।তাতে আনন্দটাও দ্বিগুণ হবে।ঝামেলাটাও কম হবে।কি বলো.??? ”

ব্যস এতো টুকু শুনেই আমি উঠে চলে আসি।রুমে এসেই খাটে ছিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি।চোখ বন্ধ করতেই কুশান ভাইয়ার?? হাস্যজ্জ্বল মুখ খানা চোখের উপর ভেসে উঠে।আমি ধড়পড়িয়ে উঠে বসি।জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকি।হঠাৎ কুশান ভাইয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।তাকে দেখেই আমি লজ্জায় মিইয়ে যাই।আমার গাল গুলো রক্তিম আভা ধারন করে।আমি নিচের দিকে তাকানো অবস্থাতেই উনি আমার সামনে এসে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।কিন্তু তারপরও আমার তার দিকে তাকানোর সাহস টুকু হয় নাই।ভাইয়া একহাত দিয়ে আমার মুখ খানিকটা উপরে তুলে বলে..

“বউ এভাবে লজ্জা পাবে না প্লিজ।একদম নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না তোমার রক্তিম চেহারা দেখলে।উপপপ ইচ্ছে করছে…”

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হঠাৎ আমি উঠে দাড়িয়ে যাই।..

“আ-আপনি এখানে কি করছেন।সবাই লিভিংরুমে বসে আছে আর আ-আপনি কি না এখানে.??”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া দাড়িয়ে যায়।এক হাত দিয়ে আমাকে সোজা করে তার দিকে ফিরে দাড় করিয়ে বলে..

“তোর কি মনে হয় আমি তাদের কে ভয় পাই.??তারা কি ভাবলো না ভাবলো তা নিয়ে ভাববার সময় আমার নেই।আমার সবটা সময় শুধু মাত্র আমার বউকে উজাড় করে দিতে চাই।”

“ওই একদম বউ বউ করবেন না।কিসের বউ হুমম এখনো বিয়ে হয় নাই তাহলে আবার কিসের বউ.??”

“বাহ রে তুই শুনলি না বাহিরে বাবা কি বললো চাচ্চু কে.??আর মাত্র দশ দিন পর তুই শুধু আমার হয়ে যাবি।আমার এই সারা হৃদয় জুড়ে শুধু তুই থাকবি।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।এদিক থেকে ওদিকে তাকাতে থাকি।কেমন অস্ততি লাগছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি..

“বড় বাবা হঠাৎ এই সিদ্বান্ত নিলো কেনো.??আপনি কি তাকে কিছু বলছেন.??”

“না তো আমি বাবা কে কি বলবো।বরং আমি যখন শুনলাম তোর কোথাকার রিমন না পিমনের সাথে বিয়ের কথা চলকে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ছিলাম।কি থেকে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।ঠিক তখনই বাবা চাচ্চু কে এই কথাটা বলে দিলো।জানিস কতো খুশি হয়ে ছিলাম আমি তখন।??”

কথাটা বলতে বলতে ভাইয়ার চোখের কোনে পানি জমা হয়।কাদছে সে।এটা দেখে আমি চমকে উঠি।ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পায়ের উপর ভর দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দেই আমি।আমার কাজে কুশান ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।..

“এভাবে কাদছেন কেনো আজিব.??আজ কি কান্না করার মতো কিছু ঘটছে.??”

কথাটা বলতে বলতে আমি পিছিয়ে আসতে নিলে ভাইয়া আমার কোমড় জড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।তারপর কানে কানে ফিসফিস করে বলে..

“আরে পাগলী এটা হলো খুশির কান্না।আমার নীল পরী আমার ব্যস্তকুমারী কে কাছে পাওয়া খুশিতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চোখের পানি গুলোও না বড্ড অবাধ্য হয়ে গেছে।সে নিজের জন্য না কেদে অন্যের জন্য কাদে।”

তার কথা শুনে আমি লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকাই।সেও দুই হাতে আমাকে আগলে নেয়।কিন্তু পরক্ষনে আমার কিছু একটা মনে পড়তেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই।আর তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here