অতিথি,পর্ব:০২,০৩

0
1121

অতিথি,পর্ব:০২,০৩
লেখা:মিশু মনি
পর্ব:০২

হঠাত মিশুর খুব নাচতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছেটা কোথ থেকে উদয় হলো ও বুঝতে পারছে না।ইচ্ছে যখন হয়েছে তখন তো নাচা উচিৎ। কিন্তু বাসায় তো অতিথিরা এসেছেন। জোরে গান ছেড়ে দিলে তারা বিরক্ত হবেন হয়ত।
কিন্তু নাচতেই হবে।মিশু হিমুকে ওর রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। আস্তে গান ছেড়ে দিয়ে হিমুকে বলল,তুমি আমার ডান্স দেখো। ওকে?
হিমু মাথা নেড়ে হ্যা বলল।
অতঃপর মিশু নাচতে শুরু করে দিলো। উথাল পাথাল ডান্স। হিমু হা করে তাকিয়ে আছে।ও কস্মিনকালেও এমন নাচ দেখেনি।ওর বেশ মজাই লাগছে।
মিশুরও খুব মজা লাগছিল। কিন্তু হঠাত ও মুর্তির মত স্থির হয়ে গেল।তারপর অগ্নিমুর্তি ধারন করে বলল,এই যে আপনি এখানে কেন?
আংকেল আনটির মেজ ছেলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য মিশুর রুমের বাথরুমে ঢুকেছিল।বের হয়েই মিশুকে নাচতে দেখে কিছু না বলে চুপচাপ বিনামুল্যে সার্কাস দেখার মত মিশুর নাচ দেখছিল। কিন্তু মিশুর এমন প্রশ্ন শুনে সে চমকে উঠল।
মিশু আবারো হুংকার দিলো, how dare you?
ছেলেটি বলল,আমিতো ওয়াশরুমে গেছিলাম। বের হয়ে দেখলাম তুমি ডান্স করছ তাই disturb করিনি।
– আপনি আমার পারসোনাল ওয়াশরুমে কেন? এ বাড়ি তে তো আরও বাথরুম ছিল।
– তোমার আম্মু বলল তাই।
– ওকে।কিছু বললাম না।কিন্তু নেক্সট টাইম যেতে হলে আমাকে বলবেন। আমি দেখিয়ে দেবো।
– তোমার কাজ বুঝি সবাইকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া?
মিশু রেগে হিমুকে বলল,তুমি বাইরে যাও।এই লোকটাকে এখন আমি বানাবো।
– কি বানাইবেন আপা?
– শুটকি বানাব।
– শুটকি তো রোইদে দিয়া বানাইতে হয়।
– চুপ করো।যেতে বলছি যাও।এক্ষুনি যাও।
হিমু বেড়িয়ে গেলে মিশু রাগে গজরাতে লাগল।
ছেলেটি বলল,এত রাগ করতে হবেনা।কিভাবে রাগ কমাতে পারি বলো?
মিশু বলল,আমি যা বলব তাই করবেন?
– অবশ্যই।তোমার রাগ কমানোটা এখন আমার নৈতিক দায়িত্ব। তুমি যদি বলো তোমার ওয়াশরুমে যা যা ত্যাগ করেছি সব তুলে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে তবে তাই করবো।
মিশু মজা পেল কথাটি শুনে।ওর রাগ কমে গেল।
দাত কেলিয়ে বলল,কি কি ত্যাগ করেছেন?
– মলমুত্র আর থু থু।
– এগুলা ফেলে দিবেন কিভাবে? হা হা হা…
– সেটাই তো। মলমুত্রের স্তুপ থেকে আমার মল তো খুজেই পাবো না।কাজেই পুরা বাথরুম টাই তুলে বাইরে ফেলে দিয়ে আসবো।
মিশু হো হো করে হেসে বলল,এত পচা কথা বলেন কেন?
– তুমি পচা কথা শুনতে ভালোবাসো তাই।
– কে বলেছে?
– পচা কথা শুনেই তো তখন থেকে হাসছ।
মিশু হাসি থামিয়ে বলল,হুম প্রচুর হেসেছি।রাগ শেষ।
– ধন্য হলাম।তা রাজকন্যার নাম কি?
– মিশু। আর আপনার?
– কাজী মর্ম।
– এমা! আপ্নিও কাজী?
– হ্যা।আমরা সবাই কাজী।
– সবাই বিয়ে পরাণ?
মর্ম হেসে বলল, বিয়ে পরাবো কেন? তোমার দাদুর নাম তো রিয়াজুদ্দিন ফকির। তিনি কি ভিক্ষা করেন?
মিশু কিছুক্ষণ ভেবে বলল,এটা তাহলে বিশেষন! এইবার বুঝলাম। কিন্তু আপনার ভাই তো বলেছে উনি বিয়ে পড়ান।
– হা হা হা।কোন ভাই?
– কাজী বিড়াল মৈত্রী।
– কি বললা! বিড়াল মৈত্রী? ভাইয়ার কিন্তু খুব রাগ। যদি জানতে পারে তাহলে কিন্তু খবর আছে মিশু।
– আপনার ভাই কিচ্ছু করতে পারবে না।বিদেশ ফেরত ডিগ্রী ধারী হয়েছে তাতে কি? আমি ভয় পাইনা।উনার সামনেই বলেছি আপনারা তিন ভাই বিড়ালের মত ফর্সা আর বিড়ালচোখী।
– তাই বলে নামের সাথে বিড়াল যোগ করবা?
– হ্যা করবো। আপনি কাজী বিড়াল মর্ম।
মর্ম হেসে বলল,বাবাগো! কি দস্যি মেয়ে! আমারা এত সুন্দর তিন টা ভাই আর বলে কিনা বিড়াল!
– জ্বি বিড়াল। বড় টা হুলো বিড়াল , আপনি মেনি বিড়াল, আর পিচ্চি টা পুষি বিড়াল।
মর্ম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটির তো ভয়াবহ সাহস! মর্ম ওর কয়েক বছরের বড়, তার সাথে এভাবে কথা বলছে! তার বড় ভাইকেও নাকি এভাবে বলেছে!
মিশু বলল,আপনার ছোট ভাইয়ের নাম কি?
– কাজী মাত্রা.
– বাহ! দারুণ তো!! আপনাদের আর নাম নেই?
– আছে।
এমন সময় হিমু এসে বলল সবাইকে নাস্তা খেতে ডাকছে।যেতে যেতে মিশু ওদের তিন ভাইয়ের পুর্ন নাম জেনে নিলো।
খাবার টেবিলে বসে মিশু মাত্রার সাথে কথা বলল।কিন্তু মাত্রা খুবই শান্ত স্বভাবের।মিশু ভেবেছিল এই বাচ্চা টার সাথে হয়ত তার খুব ভাব হবে কিন্তু বাচ্চা টা তো কথাই বলে খুব কম।মিশু একাই বকবক করে চলেছে।
বাবা বললেন,মিশু তুমি থামলে আমরা একটু কথা বলতে পারি।
মিশু চুপ করে গেল।বাবা বললেন,কাল আমরা সকাল বেলাতেই ঘুরতে বের হচ্ছি।কাল তাজহাট জমিদার বাড়ি আর বেগম রোকেয়ার বাড়ি ঘুরে আসা যাক।
অতিথি আংকেল বললেন, আমার ছেলেরা আগে কখনো রংপুর আসেনি।আমি চাইছি এইবারই ওদের কে উত্তরবংগ ঘুরে দেখাতে।
মিশু লাফিয়ে উঠে বলল, আংকেল খুব ভালো হবে।আমি সব জায়গা দেখেছি।কাল রংপুরের সব উল্লেখযোগ্য জায়গা গুলা দেখে আমরা পরশু দিনাজপুর যেতে পারি।তিস্তা নদীতেও যাবো কিন্তু।তিস্তায় নৌকায় ঘুরবো।আব্বু আমাকে সব জায়গা দেখিয়েছে।আবার ঘুরতে যাবো! কি মজা!!
মিশুর আনন্দ দেখে সবাই খাওয়া বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মৈত্রী ও মর্ম একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল।এমন মেয়ে ওরা কখনো দেখেনি।
ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মিশু চুপ করল।
মৈত্রী বলল,আব্বু মিশু কথাটা খারাপ বলেনি।আমরা দিনাজপুর যাবো পরশুদিন। কয়লাখনি টা কিন্তু দেখতে হবে।
মিশু বলল,ভেবে বলছেন তো? কয়লাখনি তে সাদা বিড়াল ঢুকলে কিন্তু কালো বিড়াল হয়ে বের হয়।আপনি ও হতে পারেন। আপনার এমনিই অনেক বয়স হয়েছে,তারউপর যদি স্কিন ব্ল্যাক হয়ে যায় আপনার কিন্তু আর বিয়েই হবেনা।
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিলো। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবাহ! মৈত্রী ভাইয়ার সামনে এভাবে কথা বলার সাহস কারো নেই।আর এই মেয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে! ও মৈত্রীর দিকে তাকাল।
কেউ কিছু বলছে না।
মিশু বলল,সরি বিদেশ ফেরত ডিগ্রীধারী কাজী সাহেব।
এবার কেউ না হেসে পারল না।কাজী মৈত্রীও মেয়েটির উদ্ভট কথা শুনে হেসে উঠল।

( চলবে….)

অতিথি
৩য় পর্ব
লেখক : মিশু মনি
.
রাতে তিনভাই একসাথে বসে আডডা দিচ্ছিল ।মিশু এসে হাজির!
মিশুকে দেখেই মর্ম বলল,ওই যে রানী এলিজাবেথ এসে গেছেন।
মিশু কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে সোফায় বসে পড়ল।
তিনভাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে।মিশু তো এত চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে নয়।কি হলো মেয়েটার?
মিশু মুখ কালো করে বসে আছে।
মর্ম বলল,what’s up mishu?
– up নয়,down…
– what’s down mishu?
বলেই মর্ম দাত বের করে হাসতে লাগল।
মিশু বলল,তোমাদের কাজের মেয়ে হিমু আমাকে বান্দর বলেছে।শুধু বান্দর নয়,মহিলা বান্দর!
তিন জনেই হেসে উঠল।
মর্ম বলল,ঠিক ই বলেছে।তুমি তো খুব চঞ্চল, তাই বলেছে।রাগ করছ কেন?
– খরগোশ বলতে পারত,হরিনী বলতে পারত।কিন্তু মহিলা বান্দর বলবে?
– আচ্ছা আমি ওকে বকে দিবো। এবার মন ভালো করো।
মিশু কিছু বলল না।মর্ম আবারো বলল,মিশু মনি,তুমি চুপচাপ থাকলে ভালো দেখায় না।বাচাল রা চুপ করে থাকলে ভয় লাগে।
মিশু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,আমি বাচাল?
– হুম।এইবার ঠিক আছে।
– আপনি খুব পচা লোক।
– ১০০%
– আপনি একটা রামছাগল।
– অতি উত্তম কথা।
-চুপ করুন।বেশি কথা বললে আমার ওয়াশরুমে যা যা ত্যাগ করেছেন, তুলে ফেলে দিয়ে আসতে বলব।
মৈত্রী এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল।এবার ও বলল,তুই ওর ওয়াশরুমে কি করেছিস?
– মলমুত্র ত্যাগ করেছি ভাইয়া।
– ওর ওয়াশরুমে করেছিস কেন? আমি হলে তো ওর বিছানায় করতাম।
বলেই ওরা হাসতে লাগল।মিশু রাগে ফুসছে।এদের সাথে তো কথায় পারা যায়না।নাহ আর ঝগড়া করা যাবেনা।এখন সমঝোতায় আসতে হবে।ওরা আমার বন্ধু হয়ে গেলে তখন কথার প্যাচে ফেলাটা সহজ হবে।আর খুব সহজেই বোকা বানানোও যাবে।
কথাগুলো ভেবে মিশু শান্ত হয়ে গেল।
মিষ্টি স্বরে বলল,আচ্ছা মৈত্রী ভাইয়া একটা কথা বলি?
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,ভুতের মুখে রাম নাম!! আমাকে ভাইয়া বলছ ব্যাপার টা অবিশ্বাস্য।
মর্ম বলল,নিশ্চয় ই রানী এলিজাবেথ মনে মনে কোনো ষড়যন্ত্র করছে।
মিশুর খুব রাগ হচ্ছিল।কিন্তু রাগ প্রকাশ করল না।
বলল,আমি যাই এখন। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।
বলেই মিশু বেড়িয়ে গেল।
.
মর্ম ও মৈত্রী একে অপরকে বলল,ব্যাপার টা কি? কি যেন ভেবে মিশু হঠাত শান্ত হয়ে গেল।
মর্ম বলল,হয়ত মহিলা বান্দর কথা টা মনে পড়ে গেছে।
দুভাই হেসে উঠল।
মৈত্রি বলল,তবে যাই বল,মেয়েটা পাগলী কিন্তু।
– হুম।খুব সহজ সরল।বাচাল কিন্তু সুন্দর একটা মন আছে।
– হুম।সিম্পল ডেঞ্জারাস মাইয়া।
দুজনে আবারো হেসে উঠল।
.
মিশু রুমে এসে ভাবতে লাগল কিভাবে ওদের সাথে সন্ধিতে আসা যায়?
ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দারিয়ে দাত কেলিয়ে বলল,আমার দাত গুলা তরমুজের বিচির মত।হা হা হা…
.
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই মিশু সাজগোজ শুরু করে দিলো। আজ স্পেশাল দেখানো চাই।
কিন্তু চোখের কাজল এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেল,লিপস্টিক ঠোটের বাইরে চলে আসল।মিশু রেগে মুখ ধুয়ে এসে আবারো সাজতে লাগল।এবার মেকাপ টা বেশি হয়ে গেল।মনে হচ্ছে গালে শেওলার মত আস্তরণ পড়েছে।
মিশু আবারো ভালভাবে মুখ ধুয়ে এসে বসে রইল।আর সাজুগুজু করবে না।সাজলেই পেত্নী পেত্নী দেখাচ্ছে।তারচেয়ে না সাজাই ভালো।
.
মিশু বাইরে আসতেই মর্ম বলল,ওহ মিশু,আই লাইক দিছু।
– থাংকু।
– মিশু একদম Angel baby লাগছে!
– আপনাকে খাটাশের বাচ্চার মত লাগছে।
– কিহ!
– আপনি আমাকে angel baby বললেন কেন?
– সুন্দর দেখাচ্ছে তাই….
– আর আপনাকে গিরগিটির মত দেখাচ্ছে।বহুব্রীহি….
কথা টা বলেই মিশু জিহ্বায় কামড় দিলো। ওদের সাথে তো সন্ধিতে আসার কথা কিন্তু সন্ধি বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।
মিশু বলল,আসলে আপনাকে রাগাচ্ছিলাম। সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে।handsome handsome. আমার বান্ধবী রা দেখলে লাইন লাগবে আপনার পিছনে।
মর্ম হাসল।মিশু মনে মনে ভাবল,যাক প্রশংসায় কাজ হয়েছে।
তারপর থেকে আর ঝগড়া না করে মর্ম’র সাথে ঘুরতে লাগল।
.
সারাদিন একসাথে ঘোরাফেরা,খাওয়া দাওয়া,গল্প সবমিলিয়ে দিন টা বেশ ভালো কাটল।
পরদিন আবারো সবাই মিলে ঘুরতে গেল।সারাদিন আনন্দে মেতে রইলো ওদের সবার সাথে।মিশুর কেবলই মনে হচ্ছিল,দিনগুলো এত ভালো কাটছে কেন?
.
ধীরে ধীরে ছয়দিন হয়ে গেল।
আজ অতিথিরা চলে যাবেন। মিশুর খুব মন খারাপ। কারও সাথেই কোনো কথা বলছে না।
মৈত্রী এসে মিশুর পাশে বসে বলল,ছোট আপুনি আমরা চলে যাচ্ছি।বিদায় দাও।
মিশু চোখ তুলে তাকাল।ওর কিছুই ভালো লাগছে না।
বলল,আপ্নারা আসলেন আবার চলে যাচ্ছেন কেন?
– হা হা।যেতেই তো হবে আপু।কয়দিন থাকবো বলো?
– অনেকদিন। যতদিন পর গেলে আমার কান্না পাবে না।
– সে কি! তোমার কান্না পাচ্ছে?
– হুম।খুউউব কান্না পাচ্ছে।মায়া হয়ে গেছে একটা।এভাবে হুট করে এসে মায়া বাড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
– পাগলী মেয়ে,যেতেই তো হবে।আসো বিদায় দাও সবাইকে।তুমিও বেড়াতে যেও।
– যাবই তো। আমিও আপনাদের মায়া বারিয়ে দিয়ে চলে আসবো।
– হা হা হা।তোমাকে আমরা রেখে দিবো।
মিশু কিছু বলল না।
মর্ম এসে পাশে বসল- কি হইছে মিশু ম্যাম?
মিশুকে অনেক চেষ্টা করেও কেউ কথা বলাতে পারল না।
অবশেষে অতিথি রা চলে গেল।
.
মিশু বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। কারও কি খারাপ লাগছে না? অতিথি রা এসেই চলে গেল।রেখে গেল শুধু কিছু স্মৃতি আর মায়া!
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here