অতিথি,পর্ব:১২,১৩
লেখা: মিশু মনি
পর্ব:১২
মর্ম বিস্ময়ের ঘোরে হা করে তাকিয়ে আছে।
মিশু বলল,মুখে মশা ঢুকে যাবে।মশা গিলে খেলে চিকুনগু জ্বর হবে।
– চিকুন গু?
– আজ্ঞে হ্যা।হা বন্ধ করো।
– মিশু তোমার জানা উচিৎ, আমাদের বাসায় কোনো মশা নেই।
– মশা নেই তাতে কি? মিশু তো আছে 😀
মর্ম হেসে বলল,মিশু মশা! বাহ দারুন তো! আজ থেকে তোমাকে আমি মশা বলে ডাকবো।
মিশু রাগ হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল।মর্ম বলল,অন্য কোথাও গিয়ে ঝগড়া করি? কারও দেয়ালে এভাবে কান পেতে রাখা যৌক্তিক নয়।
– আচ্ছা চলো।
ওরা মর্ম’র রুমে চলে আসল।
মর্ম বলল,মেয়বি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে সুজানা আপু ব্যাক করেছে।
– তোমাকে বলেছে? আপুকে ফিরিয়ে আনলাম তো আমি।
– তুমি!
– আজ্ঞে হা।এসব মিশুর কেরামতি।
– বাহ! মশার মাথায় বুদ্ধি আছে দেখছি।
– সারমর্ম,মশা বলবা না।
– আরে মিশু আর মশা এক ই কথা।
– মর্ম,ভাল হবেনা বলে দিচ্ছি।মুখ খারাপ করতে চাচ্ছি না।
– হা হা হা।পাগলী মেয়ে।আচ্ছা বলো এখন কি করা যায়?
– এখন, চলো নাচি।
– নাচি মানে? ডান্স করতে পারো?
– খুব পারি।চলো নাচি।কাজী সাহেবের বিয়ে এবার ফাইনাল করেই ছাড়ব। সেই আনন্দেই নাচা উচিৎ।
মর্ম মুখ বাকিয়ে বলল,মশা আবার নাচতে পারে নাকি? হুহ।
– মর্ম,আরেকবার মশা বললে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
– ওকে বাবা সরি।আর মশা বলবো না।এখন থেকে বলবো মিশা, মিশা সওদাগর।
মিশু রেগে যাচ্ছিল।মর্ম হেসে বলল,আচ্ছা চলো নাচবো।
– একসাথে?
– হ্যা।প্রব্লেম কোথায়? তুমি আর আমিই তো।
মিশু দাত কেলিয়ে বলল,আচ্ছা তাহলে জোরে গান ছেড়ে দাও।দারুন হবে মর্ম।পাশের রুমে নাটক হচ্ছে,আর এই রুমে গান।
.
মর্ম কম্পিউটারে গান বাছাই করতে লাগল।মিশুর একটা গান ও পছন্দ হচ্ছে না।
শেষে মিশু নিজেই উঠে এসে বলল,এসব কি গান শুনি? এসব গানের সাথে কি আর ডান্স করা যায়?
– তাহলে বলে দাও কি গান দিবো?
– মেরে পিছে হিন্দুস্থান হ্যায়..
মর্ম চোখ বড় বড় করে মিশুর দিকে তাকালো,সিরিয়াসলি?
– আজ্ঞে হা।দাও এই গানটা ছেড়ে দাও।
মর্ম একটু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলল,এইসব গান তুমি শুনো?
– হ্যা শুনি।তো?
মর্ম হেসে বলল,বেশ ভালো।তাহলে নাচার জন্য প্রস্তুত?
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,একদম রেডি।তুমি রেডি?
– হুম।তাহলে গান ছেড়ে দিই?
মিশু মেঝের মাঝখানে এসে দাড়ালো।মর্ম গান ছেড়ে দেয়া মাত্রই নাচ শুরু করে দিলো।
মর্ম হা করে তাকিয়ে আছে।মিশু এমন ভালো ডান্স করতে পারে সেটা দেখে বোঝা যায় না।মিশু নেচেই চলেছে।
মর্ম গানটা বদলে অন্য গান দিলো। মিশু নাচ থামিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় মর্ম এসে মিশুর হাত টেনে ধরে নাচতে লাগল।স্পিকারে গান বাজছে- kabhi joo badaal,baarse na dekhu tujhe akhe.. varkey tuu laage mujhe peheli… barish kii duaa…
.
মিশু মুখে হাসি ফুটিয়ে নাচতে লাগল।মর্ম ও খুব ভালো নাচছে।যে কেউ দেখলে বলবে এরা নিঃসন্দেহে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্যান্সার।
মর্ম’র খুব ভালো লাগছে।ও মিশুর হাত ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মিশুকে নাচাচ্ছে।
.
হিমু ও মাত্রা দরজায় দাড়িয়ে হা করে ওদের নাচ দেখছে! দুজনের চোখেই বিস্ময়!
হিমু ভাবছে,আজ এসব কি হচ্ছে বাসায়? একটা সুন্দরী মেয়ে এসে মৈত্রীর রুমে ঢুকেছে অনেক্ষন হলো।আর এদিকে মিশু আর মর্ম এভাবে নেচে চলেছে।কি হচ্ছে এসব?
.
হিমু মাত্রার মাকে গিয়ে সব বলতেই উনি মর্ম’র রুমে চলে আসলেন।
এভাবে দুজনকে নাচতে দেখে ওনার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে,মর্ম আর মিশুর মাঝে একটা সম্পর্ক আছে।ও জন্যই মিশু মৈত্রীকে বিয়ে করতে চায়না।
ওনাকে দেখে মিশু নাচ থামিয়ে দাড়িয়ে পড়ল।
মর্ম হাফাতে হাফাতে বলল,মা তুমি এ ঘরে!
– এসব কি হচ্ছে! বাড়ি টাকে এফ.ডিসি বানিয়ে ফেলছো।
– এফ.ডিসি মানে?
– মানেটা এখন শেখাতে হবে?
– সরি আম্মু।প্লিজ কিছু মনে করোনা।আসলে আমরা এম্নিতেই ডান্স প্রাকটিস করছিলাম।
– আচ্ছা।এবার বল মৈত্রীর রুমে কে?
– সুজানা আপু।
– সুজানা আপু কে?
– তোমার মেয়ে।তোমার একটা মেয়ে আছে না? সেই মেয়ে এসেছে।
মর্ম’র মা কাদো কাদো হয়ে বলল,তোর বাপের আরেকটা বউ আছে? তার আবার মেয়েও আছে?
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,সেরেছে রে।
– কি সেরেছে? কবে বিয়ে করছে তোর বাপ?
– আহা! আব্বু কেন বিয়ে করতে যাবে?
– তাহলে মেয়ে আসলো কই থেকে?
– মেয়ে বলতে তোমার ছেলের বউ।
মা আবারো কেদে কেদে বললেন,মৈত্রী আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলল?
– আরে আম্মু,তুমি তো দেখছি মিশুর চেয়েও অবুঝ।
মিশু বলল,আনটি অবুঝ নয়।আসলে তোমার ই কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা নাই।আমি বলছি।
মিশু এসে আনটিকে পাশে বসিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে বলল।তারপর আনটি হেসে বললেন, তুই তো ভারি দুষ্টু রে মিশু।
– হ্যা।আমি পাজির পা ঝারা।
– শোন না মিশু মা,আমার তোকে খুব ভালো লাগে।আমার তো মেয়ে নেই,তুই আমার মেয়ে।
মিশু আনটিকে জরিয়ে ধরে বলল,হ্যা।আমিই তোমার মেয়ে।এবার আসো, বড় ছেলের বউকে দেখবা।সুজানা আপু দেখতে এত্ত কিউট!
– মেয়েটার নাম সুজানা?
– হ্যা।আসো, দেখবা।আর এই আপুর সাথেই কিন্তু মৈত্রীর বিয়ে দিতে হবে।আমি কিন্তু বিয়ে খেয়েদেয়ে তারপর বাড়ি যাবো।
আনটি হেসে বললেন,আচ্ছা চল।মেয়েটাকে দেখি আগে।
.
সবাই মৈত্রীর দরজায় এসে দাড়ালো।কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,কাজী সাহেব, দরজা খুলুন।
.
মৈত্রী দরজা খুলে দেখে মা,মর্ম,মাত্রা,হিমু আর মিশু দাড়িয়ে।
মাকে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা।
মিশু ভিতরে ঢুকে সুজানার কাছে গিয়ে বলল,হাই ম্যাম।প্রেম করা হলো?
সুজানা মিশুর কান টেনে ধরে বলল,পাজি মেয়ে।তুমিই আমাকে কল দিয়েছিলে?
– আহা,কাজী সাহেব সব বলে দিয়েছে? যাই হোক,বাইরে আসুন আপু।শ্বাশুরি এসেছেন।
– হ্যা।আপনার শ্বাশুরি,আমার ও শ্বাশুরি।
বলেই দাত বের করে হাসল।
.
সুজানাকে দেখে মাত্রার মায়ের খুব পছন্দ হলো।মেয়েটি দেখতেও পরির মত,আচরনেও নম্র অনেক।
তিনি সুজানার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নাস্তা তৈরি করতে চলে গেলেন।
.
সকলে বসার ঘরে এসে বসল।মৈত্রী হাত মুখ ধুয়ে এসে মিশুর পাশে বসে পড়ল।
মিশু বলল,কাজী সাহেব। পাত্র পাত্রী,কাজী সবাই যখন আছে,বিয়েটা পড়িয়ে ফেলুন।
– সুজানা একা একা বিয়ে করবে না।
– আরে আমি তো আপনাদের বিয়ের কথা বলিনি।আমি বলেছি আমার আর মর্ম’র বিয়ের কথা।
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,আমি ওকে বিয়ে করবো না।বান্দর মাইয়া একটা।মিশা সওদাগর।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,সারমর্ম তোমারে গাইরালামু কিন্তু।
মৈত্রী ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,সুযোগ পেলেই দুটো ঝগড়ায় মেতে ওঠে।
মিশু বলল,ঝগড়া আমি করিনা।মর্ম করে।
মর্ম বলল,মশার কাজ ই তো হচ্ছে গুণগুণ করা।
মিশু ছড়ায় ছড়ায় বলে উঠল,
মর্ম’র বাচ্চা,এত্তুকোনা কাচ্চা..
দেখতে বড় সুন্দর, চিড়িয়াখানার বান্দর..
মর্ম হেরে গেল।মিশুর সাথে তো সে পারবেই না।
তারপর ও বলার চেষ্টা করলো,
মিশু পাগলী, ঠিক যেন ছাগলী..
রাস্তায় ঘুমায়,কুত্তারা চুমায়…
.
সবাই হেসে উঠল।মিশু রেগে উঠে চলে গেল।
রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তার প্লেট সাজিয়ে নিলো। মর্ম’র প্লেটে পেট খারাপের ওষুধ মিশিয়ে দিলো। তারপর খাবার গুলো নিজ হাতে পরিবেশন করলো।
সকলেই তৃপ্তির সাথে খেলো। মিশু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিচ্ছে।আজ তো রাতে মর্ম’র বারোটা বাজবে।
.
খাওয়ার পর সুজানা বিদায় নিয়ে চলে গেল।
মর্ম রুমে এসেই বাথরুমে ছুটে গেল।
মিশু এসে বলল,মর্ম চলো নাচি।
মর্ম দাত কিড়মিড় করে বলল,আমি বারবার টয়লেটে দৌড়াচ্ছি।আর নাচবো?
মিশু হেসে বলল,বারবার যাওয়ার চেয়ে টয়লেটে গিয়ে বসে থাকলেই পারো।
মর্ম প্রচণ্ড রেগে গেল।কিন্তু মিশু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
( চলবে…)
অতিথি
পর্ব: ১৩
লেখা: মিশু মনি
.
মর্ম প্রচণ্ড রেগে তাকালো।
মিশু হেসে বেড়িয়ে আসলো।
রাতের খাবার খাওয়ার পর যে যার রুমে চলে গেল।মর্ম’র শরীর কিছুটা ভালো হয়েছে।
.
মর্ম বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিশুর কথা ভাবছে।হঠাত মিশুর আইডি তে লগ ইন করে বসলো।
কিন্তু মিশুর আইডিতে অসংখ্য ছেলে মেসেজ পাঠিয়েছে।আর অনেক কমেন্ট, যেগুলোতে মিশুর প্রশংসা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মর্ম ইনবক্সে মেসেজ গুলা দেখতে লাগল।
প্রায় অনেক ছেলের ই মেসেজ এর রিপ্লে দেওয়া হয়েছে।মর্ম পুরো কনভারসেশন না দেখে শুধু মেসেজ গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলো। মর্ম’র খুব মেজাজ গরম হয়ে গেল।মিশু এত ছেলের সাথে চ্যাটিং করবে কেন? মেসেজ দিলেই কি রিপ্লে দিতে হবে? মেয়েদের আইডিতে মেসেজ তো আসবেই।তাই বলে সকলের মেসেজ উত্তর করার কি দরকার?
মিশু কারও সাথেই বিশেষ কথা বলেনি।কেউ দুয়েক টা প্রশ্ন করলে সেটার উত্তর দিয়েছে মাত্র।কিন্তু মর্ম সেসব ভালো ভাবে খেয়াল করলো না।মর্ম শুধু মাত্র মেসেজের রিপ্লে দেয়া দেখেই তিক্ত হয়ে উঠল। মিশুর প্রতি কেমন যেন অধিকার জন্মে গেছে।আর অন্যকারো সাথে কথা বলবে এটা মর্ম কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।মিশুর প্রতি রাগে মেজাজ বিগড়ে গেল মর্ম’র।
কমেন্ট গুলো দেখে আরও মন খারাপ হয়ে গেল।
মর্ম রাগে ফুঁসতে লাগলো।
.
বাইরে খুব জোরে বৃস্টি নেমেছে।অঝোর ধারায় বৃস্টি পড়ছে। মিশু জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃস্টি দেখছে।খুব ভালো লাগছে ওর বৃস্টি দেখতে।মনটা উদাস হয়ে উঠছে এই রিমঝিম ধারা দেখে।ভিজতে পারলে খুব ভালো লাগত।
ভাবামাত্রই মিশু মর্ম’র রুমের দিকে ছুটলো।
.
মিশুকে দেখে মর্ম আরও রেগে গেল।
মিশু বলল,সারমর্ম।পাতলা পায়খানা কমেছে তো?
বলেই হাসতে লাগল।মর্ম রেগে বলল,হাসবা না একদম।
– ওরে বাবা,এত রেগে আছো কেন? কি হইছে?
মর্ম অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
মিশু বলল,এই দেখো বাইরে খুব সুন্দর বৃস্টি হচ্ছে।চলোনা ভিজি।খুব ভালো লাগবে।ভিজবা?
মর্ম ভয়ানক রেগে গর্জন করে উঠল, চুপ করো ফালতু মেয়ে।
মিশু ভয় পেয়ে গেল।মর্ম এত রেগে আছে কেন?
মিশু হেসে বলল,আহা এত রাগ করেনা বাবু।
– মিশু,আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।
– আচ্ছা কথা বলতে হবেনা।চুপ করেই থেকো কিন্তু চলো ভিজবো। খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে।বৃস্টিতে নাচবো একসাথে।একদম সিনেম্যাটিক হবে ব্যাপার টা। চলো ভিজি।প্লিজ,
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,স্টপ।
মিশু অবাক হয়ে তাকাল।মর্ম সত্যিই অনেক রেগে আছে।
মিশু কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু মর্ম চেঁচিয়ে বলল,তোমার মত মেয়ের সাথে আমি কথা বলতে চাইনা।বেড়িয়ে যাও আমার ঘর থেকে।
– এত রাগ করেছ? আহা বাবু এত রাগ করেনা।
– ন্যাকামি ছারো।তোমার ন্যাকামিতে মর্ম ভুলবে না।আমি ভেবেছিলাম তুমি অবুঝ মেয়ে।পাগলী পাগলী। কিন্তু আমার কনসেপ্ট রঙ।তুমি একটা ঢপবাজ মেয়ে।সবার চোখে টুপি পড়াও।সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকো। আই হেট দিস হ্যাবিট।
মিশু হতভম্ব হয়ে তাকাল।মর্ম এভাবে কথা বলছে কেন? খুব খারাপ লাগছে শুনতে।
মর্ম আবারো বলতে আরম্ভ করলো, সবকিছুর লিমিট থাকে মিশু।তুমি নিজেকে কি ভাবো? তুমি যা বলবা আর যা করবা সবাই সেটাই মেনে নিবে? সবাই কি বোকা? আসলে তুমি একটা বোকা মেয়ে।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে।কিন্তু তুমি একটা দুমুখো সাপ।ঢং আর ন্যাকামি করা টাই তোমার স্বভাব। এমন ভাব করো যেন কিচ্ছু বুঝোনা।আবার সানির গান ও মুখস্থ! মেরা পিছে হিন্দুস্থান। যত্তসব ফালতু মেয়ে কোথাকার।
মিশুর চোখে পানি এসে গেছে।এই ধরনের কথা শুনতে হবে কখনো তা মিশু দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।
মিশুর চোখ থেকে পানি ঝরে পড়ল।
মর্ম বলল,মেয়েদের এই একটা স্বভাব অসহ্য লাগে।কথায় কথায় চোখ দিয়ে লেবুর রস বের হয়।ন্যাকা কান্না আমার সামনে করবা না মিশু।আমি তোমাকে চিনে গেছি।হাজার টা ছেলে ফ্রেন্ড লাগবে তাই না? একসাথে অগণিত ছেলে লাগে তোমার? আমাদের দুভাই কে জব্দ করছ,আমার সাথে রীতিমত প্রেম শুরু করে দিয়েছ তবুও শখ মিটছে না? অসংখ্য ছেলের সাথে চ্যাটিং করতে হবে? প্রেমালাপে মত্ত হয়ে গেছে একেবারে।
মিশু কাঁদছে আর ভাবছে মর্ম অযথা বকছে কেন? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মর্ম বলল,আর কান্না করতে হবেনা।বের হও আর নিজের ঘরে যাও।ফেসবুকে অসংখ্য ছেলে ফ্রেন্ড পাইছো না,তাদের সাথে টাইম পাস করো গিয়ে যাও।আমাকে তো আর তোমার প্রয়োজন নাই।
মিশু কাঁদতে কাদতে বের হয়ে যাচ্ছিলো।মর্ম বলল,এসব আবার কাউকে বলে বলে বিচার দিতে যেও না।তোমার তো অভ্যাস ই হচ্ছে ঢোল পিটিয়ে বেড়ানো।কিছুই তো পেটে রাখতে পারো না।বিয়ের পরদিন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, বাসর রাতে কি কি হলো? আমার মনে হয় তুমি সেই ইতিহাস ও প্রকাশ করে দিবে।
মিশু আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না।বুক ফেটে কান্না আসছে।ও নিজের রুমে চলে আসলো।
রুমে এসেই মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখল তার ভুল টা কোথায়?
মেসেঞ্জার চেক করে মিশু নিজেই অবাক হয়ে গেল।অনেক ছেলের সাথে চ্যাটিং করা হয়েছে বলে মর্ম বাজে মেয়ে ভেবেছে।কিন্তু মিশু খুব সরল মনেই সকলের সাথে কথা বলেছে।মর্ম তবুও খারাপ মেয়ে ভাবল।ফালতু মেয়ে বলে গালি দিলো!
মিশুর খুব কষ্ট হতে লাগল।ও নিজের মোবাইল টা দেয়ালে ছুরে মাড়ল। ফোনটা কয়েক টুকরা হয়ে মেঝেতে পড়ল। মিশু আবারো মোবাইল টা তুলে একটা আছাড় দিলো। এবার একেবারেই ভেঙে গেছে।
মিশুর চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।মর্ম”র জন্যই এ বাড়িতে এসেছে ও।মর্মকে ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবে।আর মর্ম ই বাজে মেয়ে ভাবলো!
.
বাইরে রিমঝিম বৃস্টি হচ্ছে।
মিশু মেঝেতে শুয়ে কাঁদছে।
কাঁদতে কাঁদতে উঠে এক ছুটে বাইরে এলো মিশু।আজ প্রথম কেউ তাকে বকা দিয়েছে ফালতু, বেয়াদব মেয়ে বলে।মিশুর খুব কষ্ট হচ্ছে।
মিশু বাইরে দাড়িয়ে বৃস্টিতে ভিজতে লাগলো। জোরে বর্ষণ হচ্ছে।মিশুর দুঃখে আকাশ ও কাঁদছে।
মিশুকে কেউ কখনো বকা দেয়নি।বাবা মা, আত্মীয়,প্রতিবেশী সকলেই খুব ভালবাসে মিশুকে,মিশুর সরলতাকে।আর মর্ম আজ এভাবে বকা দিলো। মিশু কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।অন্ধকারে বৃস্টিতে দাড়িয়ে ভিজতে লাগলো।
.
মৈত্রীর বাবা মা নিজেদের রুমে খোশগল্পে ব্যস্ত।
মৈত্রী সুজানার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত।
মর্ম ঘুমিয়ে পড়েছে।
কারোরই মিশুর দিকে খেয়াল নেই।
.
প্রায় এক ঘণ্টা তীব্র বর্ষণে ভেজার পর মিশু রুমে আসলো।
পোশাক বদলে শুয়ে পড়ল।
মিশুর আর কান্না পাচ্ছে না।ও বিছানায় শুয়ে ভাবছে,আমার জন্য কেউ ভাবছে না।আজ যদি আমার আব্বু আম্মু এখানে থাকত, মর্মকে খুব বকা দিতো।আমাকে কেউ কষ্ট দিলে আব্বু সহ্য করতে পারেনা।আজ যে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।খুব কেঁদেছি। কখনো এতবেশি কাদিনি আমি।আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু মর্ম আজ আমাকে অপমান করেছে,গালি দিয়েছে।আব্বুও সহ্য করতে পারতো না।
মিশুর খুব ইচ্ছে করছে আম্মু,আব্বুর সাথে কথা বলতে।কিন্তু মোবাইল টা তো ভেঙে মেঝেতে পড়ে আছে।
কেউই বাবা মায়ের মত হয়না।আম্মু থাকলে এখন মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতো। কারন আজ মিশু খুব কেঁদেছে। মাত্রার মা তো বলেছিল তিনি মিশুর মা।কিন্তু মিশুর এত টা কষ্ট হচ্ছে তিনি তো একবার খোজ নিতেও আসলেন না।সবাই যে যার মত ব্যস্ত।আগে মৈত্রী মিশুর খেয়াল রাখত,এখন সে ও নিজের গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে ব্যস্ত।
মিশুর নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।এ বাড়িতে কেউ নেই তার।
প্রচুর জ্বর এসে গেল মিশুর।মিশু কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।চোখ জ্বালা করছে ভীষণ।
.
রাত যত বাড়তে লাগল,মিশুর জ্বর ও তত বেড়েই চলেছে।গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা আর জ্বরের প্রভাবে একরকম অচেতন অবস্থায় পড়ে রইলো মিশু।দেখার মত কেউ নেই।
( চলবে…)