অতিথি,পর্ব:১৮,১৯

0
845

অতিথি,পর্ব:১৮,১৯
লেখা: মিশু মনি
পর্ব:১৮

মিশুর খুব সাজতে ইচ্ছে করছে।
ও আয়নার সামনে বসে খুব করে সাজল।চোখে কাজল দিলো, মুখে মেকাপ করল,লিপস্টিক দিলো,চুল গুলো সুন্দর করে বাধলো।সাজগোজ শেষ করে গান গাইতে গাইতে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
.
মর্ম নিজের রুমে এসে দেখল বিছানার উপরে মোবাইল রাখা।ফোনটা হাতে নিয়েই ও কল ডিউরেশন চেক করলো। মিশু তীব্র’র সাথে চল্লিশ মিনিট কথা বলেছে।একজন অচেনা লোকের সাথে এত কিসের কথা!
মর্ম’র মেজাজ বিগড়ে গেল।প্রচণ্ড রাগ উঠল মিশুর উপর। শুধু গালি খেয়ে ওর শিক্ষা হয়নি,এবার মাইর ও দিতে হবে।
মর্ম প্রচণ্ড রেগে মিশুর ঘরের দিকে এগোলো।
.
দরজা খুলতেই মর্ম অবাক! মিশুকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে।এত সেজেছে কেন মেয়েটা? এত সাজগোজে মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স হঠাত ই বেড়ে গেছে।মর্ম’র সকল রাগ নিমেষেই কমে গেলো।
মিশু বলল, কিছু বলবা?
– তুমি তীব্র’র সাথে চল্লিশ মিনিট কথা বলেছ কেন?
– তোমাকে বিভ্রান্তি তে ফেলার জন্য।
– কিহ!
– হ্যা।তুমি জ্বলবে,সেজন্য।
– হুম।এত সেজেছ কেন?
– আমার বুঝি সাজতে নেই? আজ খুব সাজতে ইচ্ছে করলো। তাই।
– অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
মিশু লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে। আজ মিশুকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে কেন!
মর্ম এক পা এগিয়ে আসলো। মিশু দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,অনেক রাত হইছে।নিজের রুমে যাও।
– যাচ্ছি।আগে বলো আর কখনোই তীব্র’র সাথে কথা বলবা না।
– বলবো না।
– প্রমিস?
– হুম।কিন্তু আমি কথা বললেই বা কি? তুমি এত জ্বলছ কেন?
– তুমি জ্বালাচ্ছ তাই।
– এত পুড়ছ কেন? এত রাগ দেখাচ্ছ কেন?
– তুমি যে পুড়িয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানাচ্ছ।তাই।
– হুম।তারপর সেই কয়লা আমি বেচে দিবো।
মর্ম বলল,নাহ।সেই কয়লা ছাই হবে।তুমি সেই ছাই নিয়ে ও খেলবা।
– আমি সেই ছাই দিয়ে দাত মাজবো।
– হা হা হা।পাগলী মেয়ে।
মিশু হেসে বলল, এখন যাও।অনেক রাত হইছে,ঘুমাবো।
– যদি না যাই?
– সারমর্ম,যাও বলছি।
– নাহ যাবো না।তোমাকে বড় ভালো লাগছে দেখতে।
– চলে যাও,তোমার আম্মু দেখলে খারাপ ভাববে।
– সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
মিশু দরজার সামনে দারিয়ে বলল,তুমিও যাও।আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবো।রাত একটা বাজে।
মর্ম মিশুর কাছে এসে ওর চোখের দিকে তাকালো।মিশু দৃস্টি নামিয়ে নিলো। মৈত্রি ভাইয়া বলেছিল,কখনো কেউ চোখের দিকে তাকালে নিজেকে সংযত করে নিবা।মনে পড়তে ই মৈত্রির প্রতি শ্রদ্ধা জেগে উঠল। ওই মানুষ টা সত্যিই অনেক ভালো!
মর্ম একদৃস্টে চেয়ে আছে।মিশু বলল,চলে যাও মর্ম। ১ টা বাজে।
মর্ম মিশুর কথা না শুনে মিশুর হাত ধরে এক টানে মিশুকে কাছে টেনে নিলো। মিশু ভয়ে ভয়ে বলল,ছি কি করছ?
মর্ম দুহাতে শক্ত করে ধরল মিশুকে।মিশু অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারল না।মিশু কখনো ই এই পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করেনি।মর্ম’র কাছ থেকে এমন আচরণ সে আশা করেনি।মিশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ল।মিশু যতই ছাড়া তে চেষ্টা করল, মর্ম ততই শক্ত করে ধরে ফেলল মিশুকে।
মিশুর বুক ফেটে কান্না আসছে।মর্ম মিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু,তার জন্যই মিশু এ বাড়ি তে এসেছে।কিন্তু আজ মর্ম এমন করছে কেন!
মিশু কেঁদে ফেললো।মর্ম আরও জোরে মিশুকে জড়িয়ে ধরলো।
.
পরদিন অনেক দেড়িতে মর্ম’র ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙার পর একে একে রাতের ঘটনা টা মনে পড়ে যাচ্ছে।মর্ম আপন মনেই হাসল।তারপর ভাবল, মিশু কি রাগ করেছে আমার উপর? রাতে পাগলের মত কিসব করে ফেলেছি! মিশু তো এসব পছন্দ করেনা।ও কি রাগ করেছে!
ভাবতে ভাবতে মর্ম উঠে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে উঠে মর্ম নাস্তার টেবিলে আসলো। সবাই আছে,মিশু নেই।মর্ম ভাবল,মিশু হয়ত ঘুম থেকেই উঠেনি।
.
ধীরে ধীরে দুপুর গড়িয়ে আসলো। দুপুরের খাবার খেতে বসে মর্ম জিজ্ঞেস করল,মিশু কোথায়?
মা বললেন, জানিনা তো। সকাল থেকে ওকে দেখিনি।আমিতো ভেবেছি তুই ওকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিস।
মর্ম’র বুকে ধাক্কা লাগল এসে।মিশু গেল কোথায়? আবার জ্বরে রুমে পড়ে আছে নাকি?
মর্ম ছুটে মিশুর ঘরে চলে আসলো। ঘরে মিশু নেই!
এরপর বাড়ির ছাদ,বাগান,সব জায়গা খুঁজে খুঁজে দেখা হলো,মিশু কোথাও নেই!
মর্ম চিন্তায় পড়ে গেল।মিশু কোথাও নেই! তারমানে মিশু খুব আঘাত পেয়েছে।কিন্তু রাতে মর্ম’র কি হয়েছিল সে নিজেও জানেনা।মিশুকে জরিয়ে ধরে…….. ছিঃ ছিঃ
মর্ম নিজেই নিজেকে গালি দিতে লাগলো। কেন রাতে ওর সাথে এমন আচরণ করলাম! মিশুর চিন্তাভাবনা বিশুদ্ধ,খুব সহজ সরল,সাদা মনের একটা মেয়ে।অনেক পবিত্র মন মেয়েটার।আর আমি ওর সাথে এমন করতে পারলাম!
ভাবতে ভাবতে মর্ম’র কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
.
মর্ম নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। বিকেল হয়ে গেছে মিশুর কোনো খোজ নেই।সবাই এখন তাকেই দোষারোপ করবে।সবাই দোষারোপ করুক,আপত্তি নেই।কিন্তু মিশু যেন ক্ষমা করে দেয়।রাতে ভুল হয়ে গেছে।মিশু যেন মাফ করে আমায়।
মৈত্রি এসে মর্মকে বলল,কি হইছে?
মর্ম স্বাভাবিক ভাবে বলল,কি হবে?
– মিশু কোথায়?
– জানিনা।আমিও ওকে ই খুজছি।
মৈত্রি রেগে বলল,মেয়ে টা কোথায় আছে আমরা কেউ জানিনা।ওর কাছে ফোন ও নেই।এখন মিশুর আব্বু কল দিলে আমরা কি বলবো?
মর্ম চুপ করে আছে।
মৈত্রি বলল,তুই রাতে মিশুকে গালি দিয়েছিস?
– না।
– চড় থাপ্পড় দিয়েছিস?
– না।
– তাহলে? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে? আমার চোখের দিকে তাকা।
মর্ম মাথা নিচু করেই আছে।মৈত্রী বলল,কি করেছিস বল?
মর্ম অপরাধীর মত বলল,ওকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু..
মৈত্রী কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মর্ম’র গালে।পরপর তিন টা থাপ্পড় দিয়ে নিজের চোখেই পানি এসে গেল।
মর্ম কাঁদছে।
মৈত্রি বলল,কখনো তোর গায়ে হাত তুলিনি।মিশুর মত একটা মেয়ে খুঁজে দেখাতে পারবি? তুই এত অপমান করার পর ও মিশু হেসে হেসে তোর সাথে ঘুরতে গেল।আমার ভাঙা সম্পর্ক টাকে জোড়া লাগিয়ে দিলো। কি পবিত্র একটা মেয়ে।আর তুই কিভাবে ওর সাথে এটা করতে পারলি?
– আমি জানিনা।অজান্তেই ভুল হয়ে গেছে।
– এ জন্যই আব্বু ওকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিল।তোকে পাঠায় নি।মিশুকে এখন খুঁজে বের কর।মিশু খুব আঘাত পেয়েছে,সহ্য করতে পারেনি।
.
অনেক খুঁজে ও মিশুকে কোথাও পাওয়া গেল না।দিনে দুইবার মিশুর আম্মু কল দিয়েছিল।বলা হয়েছে মিশু মর্ম’র সাথে বেড়াতে গেছে।
.
রাত ৮:৩০.
মিশুর বাবা মিশুর মাকে বললেন, তুমি মিশুকে কল দিয়েছিলা আজ?
– হ্যা।কথা হয়নি।ঘুরতে গিয়েছে নাকি।
– আমরা কবে যাবো ঢাকায়?
মা হেসে বললেন,দুদিন পরেই যাই চলো।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলেই মা থমকে গেলেন। মিশু দারিয়ে!
মিশু মাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।মা ও কেঁদে ফেললেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কার সাথে আসলি? সারপ্রাইজ দিলি তাই না? মর্ম এসেছে?
মিশু চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।মা অবাক হয়ে বললেন, কাদছিস কেন বলবি তো?
– আমি একা এসেছি!
মিশুর বাবা মা দুজনেই থ!!
মিশু নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। অনেক চেষ্টা করেও কেউ মিশুর মুখ থেকে কিছু বের করতে পারেনি।
কাজী বাড়ি তে কল দিয়ে জানালে তারা ও কিছু বলতে পারলেন না।শুধু মৈত্রি বলল,আনটি মিশুর দিকে খেয়াল রাখবেন। আমি আপনাদের বাসায় আসবো কাল কে।
.
মিশুর বাবা মা বুঝতে পারলেন মিশু ওদের কারও উপর মন খারাপ করে চলে এসেছে।মিশু অনেক অভিমানী। কিন্তু তাই বলে ঢাকা থেকে চলে আসা টা একদম উচিৎ হয়নি।
.
মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মা জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে ও বলবি না কি হইছে?
মিশু শুধু জবাব দিলো, ছেলেরা খুব খারাপ!
মা মিশুর বাবার দিকে তাকালেন। মৈত্রি না আসা পর্যন্ত কিছু বুঝা যাবে না।
মিশু মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।
( চলবে…)

অতিথি
পর্ব:১৯ – (শিক্ষনীয় পর্ব)
লেখা: মিশু মনি
.
মিশু ঘুমিয়ে আছে।
চোখ মেলে তাকিয়েই দেখে কাজী মৈত্রী তার সামনে দারিয়ে!
মৈত্রি বলল,মিশু ওঠো।আর কত ঘুমাবে? সেই কখন এসেছি আমি।
মিশু তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেল।
মৈত্রি বুঝতে পারল মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো নেই,চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে,চুল গুলো এলোমেলো।খুব আঘাত পেয়েছে মেয়েটা।
মিশু উঠে বলল,কখন এসেছেন?
– অনেক্ষন হলো।
– এত কষ্ট করে আসার কি দরকার ছিল?
– কষ্ট হয়নি,প্লেনে এসেছি।তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো তো। অনেক কথা আছে।
.
মিশু ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,খেয়েছেন আপনি?
– হ্যা।তুমি রেডি হও,কোথাও ঘুরে আসলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।
– যেতে ইচ্ছে করছে না।
– মিশু,আর কেউ না বুঝুক,মৈত্রী তোমাকে বুঝে।অনেক কথা আছে।বের হয়ে আসো।
.
মিশু মৈত্রিকে খুব বিশ্বাস করে,আর অনেক পছন্দ ও করে।মৈত্রীর কথা ফেলতে পারল না।তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে এসে বলল,চলুন।
– কোথায় যাবো বলোতো?
– ঘাঘট সেনানিবাস। নদী আছে।যাবেন?
– আচ্ছা চলো।
.
মিশু ও মৈত্রি নদীর ধারে ঘাসের উপরে এসে বসলো। খুব মিষ্টি হাওয়া বইছে।জায়গা টা অনেক সুন্দর! মন ভালো হয়ে যায় দেখলে।
মৈত্রি বলল,এটা ঘাঘট নদী?
– হ্যা।থ্যাংকস কাজী সাহেব।এখানে এসে প্রান ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি।
– হুম,কেমন আছো?
মিশু অবাক হয়ে বলল,আমাকে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনা তুমি কেমন আছো?
– সে জন্যই আমি জিজ্ঞেস করলাম। কেমন আছো মিশু?
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,খারাপ না।
– আমি বুঝি তোমায়।ফোনে বললে কিছুই হবেনা ভেবে নিজেই চলে আসলাম। তোমার মনটা ভেঙে চুরে যাচ্ছে,এই অবস্থায় মানসিক শক্তি জাগিয়ে তোলার জন্য কাউকে প্রয়োজন।
মিশু মাথা নিচু করে চেয়ে আছে পানির দিকে।
মৈত্রী বলতে আরম্ভ করলো,তোমার বয়স সতের,এই বয়সে একটা মেয়ের মাঝে যত টা পরিপক্কতা চলে আসে,তোমার মাঝে সেটা আসেনি।তুমি এখনো অবুঝ।কিন্তু মিশু,বড় হচ্ছ যখন, তখন সবকিছু জানা এবং বোঝা তোমার দরকার।
মিশু একদৃস্টে পানির দিকে চেয়ে আছে।
মৈত্রী বলল,তুমি অনেক আঘাত পেয়েছ মর্ম’র আচরনে,আমি জানি।কিন্তু আমি মনে করি এই আঘাত পাওয়া টা তোমার জন্য খুব প্রয়োজন ছিল।কারণ, মানুষ বই পড়ে কিংবা কারও মুখে শুনে যত টা শেখে,তার চেয়ে বেশি শিখতে পারে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।তুমি এত টাই কষ্ট পেয়েছ যে,ঢাকা থেকে একা বাসায় চলে এসেছ।এটা নেগেটিভ দিক,কিন্তু এই ঘটনার পসিটিভ দিক টা তুমি ভেবে দেখো তো। কি শিখলে তুমি এটা থেকে?
মিশুর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।বড় কঠিন প্রশ্ন!
মিশু কিছুক্ষণ ভেবে বলল,আমি ছেলেদের সাথে যেভাবে কথা বলি,মিশি সেটা ঠিক না।আমি বড় হচ্ছি,তাই ছেলেদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলা উচিৎ। আর কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা ঠিক না।সুযোগ পেলে শিয়াল ও বাঘের মত হিংস্র হয়ে উঠতে পারে।
মৈত্রী বলল,কতকিছু শিখে ফেলেছ এটা থেকে।অথচ সামান্য একটা ঘটনা।যেখানে তোমার মত অসংখ্য মেয়ে দিনের পর দিন বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে। আর তুমি সামান্য একটা ঘটনা তেই আঘাত পেয়ে কতকিছু শিখে ফেলেছ।তাহলে বলোতো,এই ঘটনা টার প্রয়োজন ছিল কি না?
মিশু মাথা নিচু করে বলল,আমার জন্য এর দরকার ছিল।এখন থেকে সাবধানে সবার সাথে মিশবো।
– গুড।এই না হলে মিশু,কত সহজেই সবকিছু বুঝতে পারে।তাহলে এবার বলোতো,তুমি যে একা একা ঢাকা থেকে এসেছ,এটা কি ঠিক হয়েছে?
– না।
– কেন ঠিক হয়নি?
– আমার বড় বিপদ ঘটতে পারত।
– আরে বাহ,মিশুর কত বুদ্ধি! বিপদ ঘটলে কি করতে তুমি?
মিশু কিছুক্ষণ ভেবে কেঁদে ফেললো, কিচ্ছু করতে পারতাম না।সত্যিই আমার একা একা ফেরা টা ভুল হয়ে গেছে।
– এই ভুল থেকে কি শিক্ষা পেলে?
মিশু বলল,রিস্ক নিয়ে কোথাও যাবো না।একা একা কোথাও চলে যাওয়া ঠিক না।মেয়েদের জন্য বড় বিপদ হতে পারে।
মৈত্রী হেসে বলল,এ জন্যই তোমাকে খুব ভালো লাগে আমার।অনেক বুদ্ধিমতী তুমি।কিন্তু মিশু,বুদ্ধি গুলাকে তো সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে।এই যে তুমি নুহাশ পল্লী তে তীব্র’র সাথে নির্জনে বসে গল্প করেছ।যদি তীব্র খারাপ ছেলে হত,সেখানে তো তোমার বিপদ হতে পারত।এখন একটু ভেবে বলোতো এই কথা টা আমি কেন বললাম?
মিশু ভেবে বলল,আমি সবসময় ই পরিচিত, অপরিচিত সবার সাথেই ফ্রি ভাবে মিশি।কিন্তু তাদের মধ্যে খারাপ মানুষ ও থাকতে পারে।আমার এভাবে মেশা টা ঠিক না।
– হুম।ঠিক বুঝেছ।তুমি মানুষের সাথে অবশ্যই মিশবে,কিন্তু সাবধানে।সাথে যেন কেউ থাকে।একা একা অপরিচিত কারও সাথে আডডা দেয়ার সাহস কি করে পাও?
– হ্যা।এখন বুঝেছি।মিশুর আর ভুল হবেনা।
– এবার আসি আরেক কথায়।ফেসবুকে সব ছেলের মেসেজ রিপ্লে করেছ তুমি।প্রতিদিন ই যদি অসংখ্য ছেলের সাথে চ্যাট করো,তাহলে তোমার মানসিকতা কোনদিকে যেতে পারে একবার ভাবো?
মিশু ভেবে বলল,এটা আমি বুঝতে পারছি না।আপনি বলুন।
মৈত্রি বলল,সৌজন্যতার খাতিরে দু একটা কথা বলা যেতেই পারে।কিন্তু তুমি যদি সবার সাথেই বেশ আডডা জমাও,ব্যাপার টা ভালো হবেনা।কারন একটা সময় আসবে,যখন তুমি খুব বিরক্ত হয়ে পড়বে।আর তোমার আব্বু যদি জানতে পারেন তুমি এত মানুষ দের সাথে আডডা দিয়ে সময় নষ্ট করো,তাহলে তো তিনি কষ্ট পাবেন।
– হ্যা।আর এতে অনেক সময় ও ব্যয় হবে।ঠিক না?
– হুম।তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে মিশু।শুধু মাত্র অবুঝ হওয়ার কারনে অনেকেই তোমায় খারাপ ভাবতে পারে।তুমি যেটা না বুঝে করছ,সেটা অন্যের চোখে খারাপ হতে পারে।যেমন, আমার আব্বুর সামনে অনায়াসে বিয়ের কথা বলেছ।একটা মেয়ের এইভাবে ব্যক্তিগত কথা অন্যের কাছে বলা ঠিক না।আমার আব্বু কিছু মনে করেনি।কিন্তু অন্যকেউ হলে নিশ্চয় ই তোমাকে বেহায়া মেয়ে বলত।যেকোনো কথা বলার আগে ভেবে বলবা।লিমিটেশন বজায় রেখে চলবা।মনে যা আসে,তা বলা পাগল দের কাজ।একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ সবসময় ভেবে কথা বলেন।
মিশু চুপ করে শুনছে আর ভাবছে কথাগুলি অনেক ভালো। আমার মাঝে এত কমতি ছিল,আমি কখনো বুঝিনি।
মৈত্রী বলল,নিজের সম্মান কিসে বাড়বে, সেটা ভেবে কাজ করবা।এমন কিছু বলা বা করা থেকে বিরত থাকবা,যেটা করলে নিম্ন মানসিকতার পরিচয় দেয়া হয়।বুঝেছ কি বলছি?
– বড় কঠিন সব কথা।কিন্তু সুন্দর!
– বাস্তবতা অনেক কঠিন মিশু।এবার অন্য কথায় আসি।বড় হচ্ছ,ভালবাসা কি বুঝো?
মিশু উত্তর দিলো,ভালোলাগা থেকে ভালবাসা।
– ভালোলাগা আর ভালোবাসা আলাদা জিনিস।ভালবাসা মানে বিশ্বাস, পাশে থাকা,অনুপ্রেরণা, আরও অনেক কিছুর সমন্বয়। কিন্তু আজকাল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রেম করছে।আমি মনে করি,একজন মানুষের যতদিন মনের দিক থেকে পুর্নতা আসবে না, ততদিন তার রিলেশনে জরানো উচিৎ নয়।কারন একটা অল্পবয়স্ক মেয়ে বা ছেলের বিয়ে হলে সে হিমশিম খেয়ে যায়।তেমনি অল্পবয়সে রিলেশনে জড়ালে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হতে পারে।ভুলভাল মানুষের সাথে জীবন জড়িয়ে ফেললে ধোকা তো খেতেই হবে।কাজেই মনের পুর্নতা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবা।যেদিন আবেগ কমে যাবে,যেদিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখবা সেদিন প্রেম করবা।তার আগে নয়।ভুল মানুষকে বেছে নিলে আজীবন পস্তাতে হবে।আর কারও সাথে গভীর বন্ধুত্ব করোনা,কারন ছেলে আর মেতের বন্ধুত্ব মানেই প্রেম হয়ে যাবে।আগে নিজেকে গড়ে তোলো,তারপর এসব।
মিশু মাথা নেড়ে বলল,ঠিক আছে।আপনি অনেক ভালো কাজী সাহেব। আমি এসব বুঝতাম না।
– সে জন্যই এসেছি মিশু।নিজেকে গড়ে তুলতে অবিরাম চেষ্টা করো।পৃথিবী তে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের বড় অভাব।যোগ্য মানুষ হতে না পারলে জীবন টাই তো বৃথা।
মিশু বলল,আমি মানুষ হবো।মানুষের মত মানুষ। আর কোনো ভুল করবো না।ভেবে চিন্তে কাজ করবো।
– হুম,পড়াশুনার কি অবস্থা?
– পনেরোষোলো দিন থেকে পড়তে বসিনা।
– তুমি না ডাক্তার হবা? এভাবে পড়লে কি হবে?
– এখন তো পড়ার চাপ কম।
– এখন ই পড়ার সময়।সিলেবাস টা সম্পুর্ন করার চেষ্টা করো।সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর থেকেই মেডিকেলে ভর্তির জন্য বই পড়া শুরু করবা।তাহলে পরবর্তিতে পরিশ্রম কম হবে।আর প্রস্তুতি যত ভালো হবে,আত্মবিশ্বাস তত বেশি থাকবে।নিজেকে গড়ে তুলতেই সময় ব্যয় করো।অযথা কাজকর্ম বাদ দাও আজ থেকে।
মিশু অনেক্ষন আকাশের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর বলল,আপনি এসে অনেক ভালো হলো আমার জন্য।আমি খুব গ্লানিতে ভেঙে পরেছিলাম, মানসিক ভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আপনার সাথে মন খুলে কথা বলে খুব ভালো লাগছে।
– হুম।আমি তোমার কষ্ট টা সহ্য করতে পারিনা।আর আমি চাই,তুমি অনেক বড় হও।
মিশু হেসে বলল,আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করতে ইচ্ছে করছে।আমার ভুল গুলা ধরিয়ে দিলেন। সঠিক পথ দেখিয়ে দিলেন। আপনি আমার গুরু।
– হা হা হা।
মিশু ও হেসে উঠল। এখন খুব ভালো লাগছে মিশুর।জীবন টা সুন্দর কিছু স্বপ্ন দিয়ে সাজাতে ইচ্ছে করছে।
মিশু বলল,ইচ্ছে করছে এখুনি গল্প লিখে ফেলি।আমার এই গুরু অতিথি কে নিয়ে।
– লিখে ফেলো, আমি পড়ব।
– আচ্ছা।
.
অনেকক্ষন গল্প করে গোধুলি বিকেল টা কাটিয়ে দিয়ে সন্ধায় ওরা বাসায় ফিরলো।
খাওয়াদাওয়া করে রাতের বাসেই মৈত্রী ঢাকায় ফিরে গেল।
.
মৈত্রীর প্রতি টা বাক্যই মিশুর জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিলো।
মিশু পড়াশুনায় অনেক মনোযোগী হয়ে উঠল।
দুষ্টু মেয়েটার সকল চঞ্চলতা এখন পড়াশুনা আর নিজেকে গড়ে তুলার জন্য।মিশুকে যে মানুষ হতে হবে।পৃথিবীতে এখন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের বড় ই অভাব।
( চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here