অতিথি তুমি,পর্ব:০১

0
1219

অতিথি তুমি,পর্ব:০১
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
বৃষ্টিস্নাত সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙে আমার। একটু আগে মা এসে ডেকে গেছে। উনি এসে আমার ঘুম অর্ধেক ভেঙেছেন। বাকিটুকু আমি নিজ প্রচেষ্টায় ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আজ আমার কলেজের অফ ডে তাই এতো দেড়ি করে উঠলাম, না হলে মা সকাল পাঁচটায় আমার ঘুম ভাঙানোর ঘন্টা বাজিয়ে দিতো।
,,
আমার বাসার দোতালার একটা কর্ণার এর রুমে আমি থাকি। আসলে আমাদের বাসাটাই দোতলা। দার্জিলিং এর একটা পাহাড়ের মাঝখানটায় আমার বাসার অবস্থান হওয়ায় এখান থেকে অদ্ভুত সব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। পৃথিবীর এই একটা মাত্র পাহাড়ি এলাকায় এতো উঁচুতে স্টীম ইঞ্জিন এর ট্রেন চলে। আমি জানালা দিয়ে প্রায়ই সময়ই ট্রেনটা দেখি, তবে এখন পর্যন্ত সেটাতে উঠা হয়নি।
,,
স্টীম ইঞ্জিন এর ট্রেনের হর্ণ টাই বলে দেয় এখানকার পরিবেশ পৃথিবীর অন্য স্থানের তুলনায় একটু ভিন্ন।
আমি এই পরিবেশে একদমই নতুন। আমি এখানে এসেছি এখনো একবছর হয়নি। বাবা এখানে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করেন।
আমরা সবাই বাংলাদেশী। বাবার এই বিজনেস এর কারণে তিনি প্রায় সময় দার্জিলিং এ থাকতেন। আমি আর মা বাংলাদেশে থাকতাম।
,,
গত বছরের শেষ দিকে বাবার কথামতো আমি আর মা দার্জিলিং চলে আসি, আর বাবার জন্যই এখানে থাকার একটা স্থায়ী সমাধান হয়ে যায়। বাবা আসলে চাইছে আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি তার কাজে একটু সাহায্য করি। এই বিজনেস এর সবকিছু যেন তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে পারি।
,,
আমি ঘুমের ঘোর কাটিয়ে রুমের একটা মাত্র জানালা খুললাম। এখানে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টিস্নাত সকাল দেখা স্বাভাবিক ব্যাপার। আজকেও তার বিপরীত হয়নি, তার মধ্যে চলছে বর্ষাকাল।
,,
এদিকে মা একের পর এক ডেকেই চলেছে। উনি কিচেনে আছেন, আমি সেখানে যাওয়ার আগেই তার হরেকরকম রান্নার ঘ্রাণে আমার জিভে পানি চলে আসলো। আজ মা একটু বেশি বেশি রান্না করছে, মনে হয় বাসায় কেউ আসবে।
,,
কিচেনে যাওয়ার পর…
-এতো ডাকাডাকির পর তাহলে উঠলি (মা)
-আমি আগেই উঠেছি, এমনি শুয়েছিলাম (আমি)
-এখন আমাকে একটু হেল্প কর
-বাসায় মেহমান আসবে??
-হ্যাঁ বাংলাদেশ থেকে
-কে?
-তোর বাবার বন্ধু
-ওহহহ
,,
ঘন্টা খানেক মায়ের কাজে হেল্প করলাম। সকালের খাবার খেয়ে আবার কম্বল এর নিচে ঢুকলাম। আজ অফ ডে তে বৃষ্টি না থাকলে বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আসা যেত।
মনে হয়না এই বর্ষাকালে অফ ডে তে আমার বাইরে যাওয়া হবে।
,,
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল এর আওয়াজ। মা কিচেন থেকে বলল…
-শুভ নিচে যা, দেখতো কে এলো (মা)
আমি জোর আওয়াজ করে বললাম হ্যাঁ যাচ্ছি। নিচে নামার আগে আমার জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। আমার রুমের জানালা থেকে বাসার সদর গেট দেখা যায়৷
আমি দেখলাম এক ভদ্রলোক ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই দাঁড় করানো একটা কার। মনে হয় সেটাতে করেই এসেছেন৷
,,
আমি ভাবলাম উনিই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন৷ তড়িঘড়ি করে নামলাম নিচে। বাসার গেট টা খুলেই বললাম…
-আংকেল আসসালামু আলাইকুম
,,
সালাম টা ঠিকই ছিলো তবে আংকেল টা বলে ভুল করে ফেলেছি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে বয়স ১৭ কি ১৮ হবে, মেয়েটি দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে দিয়েছে। আমি তো দেখে এলাম একটা আংকেল এখন দেখছি এক সুন্দরী মেয়ে।
,,
আমার চোখ তার হাসিতে আটকে গেছে। আমি একবার তার চোখ দেখছিলাম আর একবার তার ঠোঁট এর হাসি। হঠাৎ চোখে পড়লো সেই আংকেল কে, যাকে প্রথমে দেখেছিলাম। উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন…
-এভাবে আমাদের বৃষ্টিতে ভেজাবে? (আংকেল)
-সরি সরি, আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? (আমি)
-হ্যাঁ
-আসুন আসুন ভেতরে আসুন
,,
আমি উনাদের ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে মাকে ডাকলাম আর বললাম কাঙ্খিত মেহমান এসেছে। মা তো এসে আমাকে সেই বকা বকলো কারন তাদের ভেজা অবস্থায় ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছিলাম। আমার খেয়াল ছিলো না তাদের জন্য আলাদা আলাদা রুম ঠিক করা আছে।
,,
সুন্দরী একটা মেয়ের সামনে এতো বকা খেলাম, নিজেকে তখন পৃথিবীর সবথেকে বোকা মানুষ মনে হচ্ছে।
মেয়েটার মুচকি হাসি তে আরও অপমানিত হয়েছি৷
,,
মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। এখন আমার মাথায় অপমানিত হওয়ার আর মেয়েটার হাসি দুটোই ঘুরপাক খাচ্ছে।
,,
ঘন্টা খানেক নিজের রুমে বসেই পূর্বের ঘটনা গুলো রিপিট হচ্ছিল মাথার মধ্যে। হঠাৎ মা ডাকলো।
উনার ডাক বেশিরভাগ কিচেন রুম থেকেই আসে। আমি সোজা কিচেনেই গেলাম।
,,
-উনাদের টেবিলে ডেকে নিয়ে সব খাবার পরিবেশন তুই করবি(মা)
-তুমি করো (আমি)
-আমি পারলে তোরে ডেকেছি? আমার কাজ আছে তুই এখন এই হেল্প টা কর
-আচ্ছা আচ্ছা করতেছি। তবে একটা কথা আছে আমার
-কি কথা?
-উনাদের সামনে আমাকে বকবা না
-কেনো?
-আমার মান সম্মান আছে না?
-ওরে ওরে তুই গেলি এখান থেকে
,,
মা লাঠিপেটা করার আগেই রুম থেকে বের হয়ে এলাম। খাবার রুমে মেহমান দুজনকে ডেকে নিলাম। তাদের প্লেটে খাবার দিচ্ছিলাম আর আংকেল তখন প্রশ্ন করে আমার সম্পর্কে জেনে নিচ্ছিলো৷ আমি শুধু হ্যাঁ না করেই চলেছি।
,,
-তুমি খেতে বসো (আংকেল)
-না আংকেল আপনারা খেয়ে নেন, আমি খেয়েছি (আমি)
-তোমার মা কোথায়?
-এখনো উনার কাজ শেষ হয়নি৷
-ওহহহ
-আচ্ছা তুমি তো ভালোই মেহমানদারী করতে পারো
-এটা আমার মা শিখিয়েছে,বলতে পারেন আমাকে মারধর করেই শিখিয়েছে
-হা হা হা এতটা জোর করার কারণ?
-তার তো মেয়ে নেই, মেহমান আসলে আমাকে দিয়েই সব করিয়ে নেয়।
-ভালো একটা কাজ শিখে ফেলেছেন(মেয়েটি)
,,
এই প্রথম মেয়েটার কন্ঠ শুনলাম৷ কেনো যেম একটু বেশি ভাল লেগে গেলো। উনাদের খাওয়া শেষে তারা তাদের রুমে চলে গেলো। এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না তারা এখানে কি জন্য এসেছে। বাবা আসলে জানতে পারবো, মা কে এই কথা জিজ্ঞেস করলে তো উল্টো বকা দিবে।
যাক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
,,
বিকেলের দিকে বৃষ্টি থেমে রোদ উঠলো। এবার একটু বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এদিকে ওদিকে উঁকিঝুঁকি মারছিলাম মেয়েটাকে দেখার জন্য। কিন্তু নাহহ নিরাশ হয়ে বাইরে আসলাম।
,,
ফিরলাম একদম সন্ধ্যায়।
বাসায় এসে দেখি মায়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে মেয়েটি। আমাকে দেখে মা বলল..
-এই তুই কই গিয়েছিলি? ফোনেও তো পেলাম না (মা)
-ফোন তো রুমে (আমি)
– যাওয়ার সময় বলে যাবি না? আচ্ছা মেয়েটা একা একা বসে আছে। তুই একটু কথা
বল আমি রাতের রান্নাটা করে ফেলি।
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
মা চলে যাওয়ার সাথে সাথে।
-বাইরে কোথায় গিয়েছিলেন? (মেয়েটি)
-এই একটু হাঁটতে (আমি)
-বন্ধুদের সাথে?
-না, আমার এখানে বন্ধু নেই আমি একাই
-ওহহহ
-হুমম
-আমি ইরা
-শুভ, আমি শুভ
-আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
-কই না তো
-দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। আর আপনার ভয় পাওয়ার সাথে অঙ্গভঙ্গি গুলো দারুণ মানায়। আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার দেখেছি। অনেক হাসি পাচ্ছিলো আমার…
-….(আবার অপমানিত হলাম। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের উপরেই রাগ দেখালাম)
-সরি, মজা করলাম
-না না ঠিক আছে
-আপনাদের বাসাটা অনেক সুন্দর
-থ্যাংকস। আসলে এই জায়গাটাই অনেক বেশি সুন্দর
-হ্যাঁ আসার পথে তো দেখলাম
-দিন ভালো থাকলে আমার রুমের জানালা দিয়ে দূর পাহাড়ের ঝর্ণা দেখা যায়
-তাই?
-হ্যাঁ, আবার এখানে কিছু কিছু প্লেস আছে যেখানে গেলে মনে হবে আপনি পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ
-বাহহ তাহলে তো সেইসব জায়গায় যেতেই হয়
-অবশ্যই যাবেন
-হুমমম
-চা খাবেন
-আচ্ছা নিয়ে আসেন
-এখানে না বাইরে
-এখন বাইরে?
-ভয় নেই আমি আছি
-না মানে আন্টি যদি কিছু বলে
-আরে রাখুন তো, দার্জিলিং এর চায়ের আলাদা একটা ফিল আছে। চলুন চলুন
-আন্টিকে বলে যাই
-উনি ডাকার আগেই চলে আসবো
-থাক না যাই নতুন জায়গায় এসেছি
-ভয় পাচ্ছেন কেনো?
-একটু আগে নতুন মানুষ দেখে আপনিই তো ভয় পাচ্ছিলেন আর আমি তো নতুন জায়গায় এসেছি। আপনার সাথে বাইরে যেতে ভয় তো লাগবেই
-হইছে হইছে আপনার চা খাওয়া লাগবে না। পানি খাবেন পানি?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here