অতিথি তুমি Part : 2

0
648

অতিথি তুমি
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-হইছে হইছে আপনার চা খাওয়া লাগবে না৷ পানি খাবেন পানি?
আমি একটু জোর গলায় কথাটা বলাতেই উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি বুঝতে পারলাম বেশি বেশি কথা বলে ফেলেছি।
-সরি, আসলে কথা বলতে বলতে ব্রেক ফেইল করে ফেলেছি। (আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে চলুন তাহলে
-ইয়েএএ চলুন
,,
দরজায় আসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু।
ইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার নামটা যেন কি?(ইরা)
-শুভ (আমি)
-আসলে আপনি শুভ না অশুভ
,,
ইরা গিয়ে পূর্বের জায়গায় বসলো। আমি কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছিলাম বৃষ্টি যেন থেমে যায়। এখানকার যে বৃষ্টি একবার শুরু হলে শেষ হওয়ার নাম নেই।
,,
নিরাশ হয়ে তার কাছে ফিরলাম৷
-হুহহ আপনার কথামতো আর চা খাওয়া হলো না (ইরা)
-ওয়েট নিয়ে আসছি আমি (আমি)
-কিভাবে?
-মা কে গিয়ে বলি, চা বানিয়ে দিতে
-এতো কিছু থাকতে চায়ের পিছু নিয়েছেন কেনো?
-আসলে চা না অন্য একটা ব্যাপার আছে
-কি সেটা?
-আপনার সাথে চা খাওয়া
-মানে???
-হি হি হি কিছু না। একটু বসেন আমি চা নিয়ে আসি
,,
কিচেনে গিয়ে মায়ের রান্নার কাজে বিঘ্ন ঘটিয়ে আগে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম। চা খেতে খেতে দুজন আবার আড্ডায় মেতে উঠলাম..
-আপনি আন্টি কে খুব বিরক্ত করেন তাই না? (ইরা)
-আরে নাহহ আপনার আন্টি আমায় খুব বিরক্ত করে। কাজ নেই কাম নেই এমনি ডাকাডাকি করে(আমি)
-না না আপনিই বেশি বিরক্ত করেন
-আপনার আমার বিপক্ষে গেলেন কেনো?
-বিপক্ষে না, আপনাকে দেখলে তো এমনটাই মনে হয়
-ওহহহ বুঝেছি
-কি বুঝলেন?
-আপনাকেও অনেক বিরক্ত করে ফেলেছি
-বিরক্ত না, নতুন মানুষ হিসেবে হঠাৎ করে একটু বেশি ফ্রি হয়ে গেছেন
-আমি এমনই
-তা কয়টা মেয়ের সাথে এখন পর্যন্ত এমন ফ্রি?
-একটা
-কে সে?
-ঐ যে আপনার আন্টি
-কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর করেন।
-বাইরের কোনো মেয়ের সাথে আমি ফ্রি না
-গার্লফ্রেন্ড নেই
-এখানে গার্লফ্রেন্ড কই পাবো?
-কেনো এখানে মেয়ে নেই?
-বাঙালি তো নেই
-ওহহ, তা বিদেশিনী কাউকে পছন্দ করেননি?
-এখানকার মেয়েদের চেয়ে প্রকৃতি বেশি সুন্দর
-ওহহ
-আপনি তো রিলেশন করেন তাই না?
-….(ইরা মাথা নাড়িয়ে না উত্তর করলো)
-হে হে আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়, অবশ্যই রিলেশন করেন
-আরে নাহহ সেসব এর কি সময় আছে? আর আমার সময় তো শেষ এর মধ্যে
-মানে?
-কিছু না, আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি, আবার সময় নিয়ে কথা বলবোনি
-হুমম ঠিক আছে
,,
আমি আমার রুমে আসলাম। ইরার সাথে কথা বলতে প্রথমে যে ভয়টা করতো সেটা কেটে গেছে। এখন মুখ দিয়ে অনর্গল কথা বের হবে। মেয়েটা তো আমার চব্বিশ টা ঘন্টা এখন কেড়ে নিবে। তাকে ছাড়া কিছুই তো ভাবতে পারছি না৷
,,
রাতে আর উনার সাথে দেখা হলো।
দেখা হলো পরদিন সকালে কলেজে যেতে। সে দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আর আমি তখন দরজায় ছাতা ফুটাচ্ছি। আমি এদিকে ওদিক খেয়াল করতে তাকে দেখে ফেলি। আর তার চোখে চোখে পড়া মাত্রই সে মুচকি হাসলো। আর এক হাসিতেই আমাকে আহত করার মতো অবস্থা।
,,
এখন ছাতা ফুটানোর শক্তিও পাচ্ছি না। ইরা গুটিগুটি পায়ে কাছে এসে বলল…
-কলেজে যাচ্ছেন?? (ইরা)
-হুমমম (আমি)
-কখন ফিরবেন?
-দুটোয়
-ওহহ আচ্ছা সাবধানে যাবেন। আর তাড়াতড়ি ফিরবেন। বিকেলে আপনার সাথে একটু ঘুরতে বের হবো
-বিকেলে যে কোচিং আছে
-মিস দেওয়া যায় না একদিন?
-হুমম যায়
-হুমমম
,,
আমি ছাতা নিয়ে বাইরে বের হলাম। সে দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছিলো। আমি হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বাসার আড়াল হলাম। হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম কলেজে গিয়ে মন একদমই টিকবে না৷ কখন দুইটা বাজবে কখন বাসায় ফিরবো, কখন তার সাথে ঘুরতে বের হবো এমন উত্তেজনা কাজ করছিলো।
,,
কলেজ দুপুর দুটায় ছুটি হয়ে গেলো।
আজ খুব দ্রুত বাসায় ফিরলাম। মাথায় সেই একটাই চিন্তা একটা সময় অপেক্ষা করছে। কখন তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো।
,,
বাসায় ফিরে তার দেখা পেলাম না। হয়তো তার রুমে। আমি কলেজের ড্রেস ছেড়ে মা মা করে ডাক ছাড়লাম আমার রুম থেকেই৷ মা না এসে ইরা আসলো। এসেই বলল..
-আন্টি একটু পাশের বাসায় গেছে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন টেবিলে আমি খেতে দিচ্ছি (ইরা)
-আংকেল কোথায়?(আমি)
-উনি তো আপনার বাবার সাথে বের হয়েছে সেই সকালে। মনে হয় রাতে ফিরবে
-হুমমম
,,
খাবার টেবিলে বসলাম। ইরা আমাকে খেতে দিলো।
-আপনি খেয়েছেন? (আমি)
-হুমম খেয়েছি (ইরা)
-আমাকে ছাড়া আগেই খেলেন কেনো?
-আপনি তো বলে যাননি যে একসাথে খাবো
-আমি তো বলেছিলাম এই সময় আসবো, আপনি বুঝে নিতে পারেননি
-আন্টির সাথে খেয়ে নিয়েছে। আর খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে হয়না খেয়ে নিন
-এখন থেকে আমায় ছাড়া কোনো বেলাই খাবেন না
-আপনি আমায় এতো জোর করেন কেনো?
-আছে একটা ব্যাপার আছে
-কি ব্যাপার?
-সময় হলেই বুঝবেন৷ যাই হোক ঘুরতে যাবেন না?
-নাহ
-কেনো কেনো?
-বাবা যেতে মানা করেছে
-ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে
-মন খারাপ করলেন?
-না না মন খারাপ হবে কেনো? আচ্ছা তাহলে আমি কোচিং এ যাই। কোচিং মিস দিয়ে তো লাভ নেই
-নাহহ বাসায় থাকেন
-না বাসায় থেকে কি করবো?
-আমরা আড্ডা দেই
-না না
,,
খাবার অর্ধেক প্লেটে রেখেই উঠে আসলাম৷ রুমে এসে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিলো। ইরার উপর শুধু শুধু রাগ দেখানো টা ঠিক হয়নি৷
আসলে আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম তাকে নিয়ে ঘুরবো বলে। আমার আশার আলোয় পানি পড়ায় আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
,,
কিছুক্ষণ পর ইরা আমার রুমে এসে বলল…
-আমি বাবাকে রাজি করিয়ে কাল বের হবো (ইরা)
-না, সরি আমি আসলে একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি। আপনি এখানে এসে বসেন৷
,,
ইরা বিছানায় বসলো। আমি জানালার ধারে চেয়ার পেতে বসে খাটের উপর পা তুলে রেখেছি।
-আচ্ছা আপনি কি শারিরীক ভাবে অসুস্থ? (আমি)
-আমি জানি না, বাবা জানে (ইরা)
-আপনারা এখানে কেনো আসছেন?
-আমি সেটাও জানি না
-তাহলে কি জানেন?
-আমি কিছু জানি না বাবা জানে
-আমি আপনার উপর যে রাগ দেখাই আপনার তো বিরক্ত হওয়ার কথা। বা আমার থেকে দূরে থাকার কথা আপনি সেটা করেন না কেনে?
-আমি জানি আপনি এইরকমই
-কে বলেছে??
-আন্টি
-ওহহ
,,
দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের আঙুল দেখছিলো। আমি একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই আরেকবার তার দিকে তাকাই। সে কি করে সেটা দেখার
চেষ্টা করি। আমার বার বার আড় চোখে তাকানো সে টের পেয়ে যায়৷
তবে ইরা এটা নিয়ে কিছু বলে না৷
কিছুসময় চুপ থাকার পর বলল…
-কোচিং এ যাবেন না? (ইরা)
-উহুমমম (আমি)
-কেনো?
-আমি কোচিং এ গেলে আপনাকে সময় দিবে কে?
-বাসায় তো আন্টি আছে
-আমি বাসায় থাকলে আপনার কাছে বেশি ভালো লাগবে, এটা বুঝি। আন্টি আপনার কাছে থাকা আর না থাকা একই কথা
-এহহহ এমনি একটা বললেই হলো
-যেটা বাস্তব সেটাই বলেছি
-আপনি একটু বেশি বেশি বলেন
-হুমম সত্যি কথা বললেই তো দোষ
-হয়েছে হয়েছে
-এই দেখেন রোদ ডুবে গেলো, আকাশে আবার মেঘ করেছে। আবার সেই বোরিং বৃষ্টি
-বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে
-আমার যে খারাপ লাগে তা না। ভালো লাগে, কিন্তু এখানে বৃষ্টি একটু বেশি হচ্ছে
-বৃষ্টি ছাড়া পাহাড় তার আসল রূপ পায় না৷
-তা ঠিক। আচ্ছা আপনি একটু বসেন আমি পাশের রুমে থেকে আসছি
-আমার একা একটা রুমে থাকতে ভয় করে
-আমি এখনই আসবো
-আচ্ছা
,,
আমি পাশের রুম থেকে দুটো ছাতা নিয়ে তার সামনে এসে বললাম।
-রাস্তায় চলুন বৃষ্টি দেখবো (আমি)
-এখান থেকেই তো দেখা যাচ্ছে (ইরা)
-বাইরে চলুন অসাধারণ একটা জিনিস দেখাবো। দেখলেই আপনার ভালো লাগবে
-বাবা যে বাইরে যেতে মানা করেছে
-বেশি দূর না৷ এখান থেকে যাস্ট এক মিনিট। রাস্তার মোড় ঘুরলেই হবে
-আচ্ছা
,,
দুজন ছাতা নিয়ে বের হলাম। আমার উদ্দেশ্য হলে তাকে একটা ঝর্ণা দেখানো যেটা রাস্তার পাশেই। কাছেই একটা বড় পাহাড় থেকে বৃষ্টির সময় প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়। এই ঝর্না টা শুধু বৃষ্টির সময়েই দেখা যায়।
,,
ইরা আমার পাশেই হাঁটছে। তাকে নিয়ে বৃষ্টির সময় হাঁটতে কি যে ভালোলাগা কাজ করছিলো নিজের মধ্যে সেটা লিখে বোঝানো যাবে না৷
আমি তাকে নিয়ে সেই স্থানে যখন পৌঁছে গেলাম তখন সে ঝর্ণার দৃশ্য টা দেখে খুব অবাক। মুখে খুব প্রশংসা করলো। সাথে আমাকেও ধন্যবাদ জানালো।
,,
কিছুক্ষণ সেখানে দুজন দাঁড়িয়ে থাকার পর…
-আমার ভালো লাগছে তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন (ইরা)
-আরেকটু থাকি (আমি)
-না না আরেকটু থাকলে মাথা ঘুরে পরে যাবো। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷ বাসায় যাবো আমি….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here