অতিথি তুমি
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-আরেকটু থাকি? (আমি)
-না না আরেকটু থাকলে মাথা ঘুরে পরে যাবো। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷ বাসায় যাবো আমি (ইরা)
,,
ইরার অবস্থা দেখে আর দেড়ি করলাম না। তাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। উনি বাসায় এসে উনার রুমে গেলো। তারপর কি হয়েছে আমি সেটা জানি না৷
,,
মা বাসায় আসার পর মাকে বললাম আমাদের বাইরে যাওয়ার কথা, আর সেখানে ইরার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা। মা আমাকে যা শোনালো তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
মা বলল ইরা মাত্র কয়েকটা মাস পৃথিবীতে আছে, তারপর আর থাকবে না৷ মা আরও বলল ইরা ঘুরতে খুব ভালোবাসে তাই নাকি এখানে ঘুরতে নিয়ে আসছে৷
-আচ্ছা মা ভালো কোনো চিকিৎসা করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে না? (আমি)
-না রে সেসময় পার হয়ে গেছে (মা)
-তাকে দেখে তো অসুস্থ মনে হয় না
-হুমমম, এখন সবটুকু আল্লাহ ভরসা। হায়াত থাকলে ক্যান্সার ভালো হয়ে যাবে, না হলে মারা যাবে।
-কিন্তু ওর তো বয়স কম, এতো তাড়াতাড়ি মারা যাবে কেনো?
-মৃত্যুর কোনো বয়স নেই, সময় নেই
-হুমমম
-তুই ওকে নিয়ে যেন বের হস না, দেখিস না ও একদম আস্তে ধীরে কথা বলে।
-হুমমম
,,
আমি আমার রুমে এসে থ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মেয়েটাকে যে ভাবতে ভাবতে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি সেটা এখন বুঝতে পারছি। আমার তো এখন হারানোর ভয় করছে।
,,
হার্টবিট আগের চেয়ে বেড়েছে। স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে থাকতে পারছি না৷ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর উঠে বাইরে চলে যাবো তখনই রুমে ইরার প্রবেশ..
-কোথাও যাচ্ছেন? (ইরা)
-…(কিভাবে তাকে বলব যে তার জন্য আমার মন এখন এলোমেলো হয়ে গেছে)
-কি হলো?
-না না কোথাও যাচ্ছিলাম না
-আসলে সরি, হুট করে বাইরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম
-সমস্যা নেই, আগেই বাসায় এসেছি এটাই ভালো হয়েছে। আপনি এখন কেমন আছেন?
-এখন ভালো লাগছে। আর জানেন বাবা কল করেছিলো
-কি বলল?
-আজ আংকেল এর সাথে কোথায় যেন গেছে, কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
ফিরতে ফিরতে কাল সন্ধ্যায়। আমি বললাম আমরা তো ঘুরতে আসছি, আর তুমি আংকেল এর সাথে ঘুরে সময় নষ্ট করছো
-পরে কি বলল?
-সরি বলল। আর আমি বলেছি আমি কাল আপনার সাথে ঘুরতে যাবো
-রাজি হয়েছে?
-হুমমম
-আমার কলেজ?
-আবার ছুটি যাক
-হুমমম
-কাল সকালে তাহলে বের হবেন হ্যাঁ?
-আচ্ছা, আপনি এখন ভেতরে এসে বসুন
-না, সমস্যা নেই
-না আসুন
-আপনি মনে হয় বাহিরে যাচ্ছিলেন,
-বললাম তো না
-হুমমম
,,
ইরা ভেতরে এসে বসলো।
তাকে পাশে বসিয়েও আমি স্বাভাবিক থাকতে পারছিলাম না৷ তার কথা ভেবে বার বার চোখে পানি চলে আসছিলো। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে বললাম..
-চা খাবেন? (আমি)
-আবার চা? আপনি কি খুব চা পছন্দ করেন? (ইরা)
-নাহহ
-তাহলে এতো চা চা করেন কেনো?
-আপনার সঙ্গে খেতে ভালো লাগে
-এখন আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে না
-তাহলে কি খাবেন?
-খাওয়ার চ্যাপ্টার বাদ, আপনার সাথে একটু গল্প করি
-হুমমম
-আমার দিকে ঘুরে বসুন, উল্টো পাশে বসে থাকলে কথা বলে মজা পাবো না
,,
তার কথামতো ঘুরে বসলাম। সে আমাকে দেখে বলল…
-আপনার কোনো কারণে মন খারাপ? (ইরা)
-কই না তো (আমি)
-আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে এখনি কান্না করে দিবেন
-আরে না না এমনি
-এখানে আসার পর আপনার এমন ফেস আমি দেখিনি, সবসময় হাসি মুখেই দেখেছি
-এখনো তো হাসিমুখেই আছি (আমি একটু হাসার চেষ্টা করে)
-হয়েছে জোর করে হাসতে হবে না। নিশ্চয়ই জি এফ এর সাথে ঝগড়া হয়েছে
-এহহহ জি এফ পাবো কই?
-আমার থেকে লুকোতে হবে না৷ আমার সাথে এতো তাড়াতাড়ি মিশে গেছেন, না জানি কতো মেয়ের সাথে মিশেছেন কে জানে
-না না আমি এমন না
-হে হে আমি জানি কেমন
-আপনাকে দেখেই আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি
,,
আমার কথাটা শুনেই ইরার হাসিমাখা মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আমি আরও বললাম..
-আপনার অসুস্থতার কথা আমি জানি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনি এভাবে আমার জীবনে আসবেন, আবার হুট করেই….(পুরে কথা বলার আগেই ইরা রুম চলে গেলো)
,,
আমি ছুটলাম তার পিছু, এমনকি তার রুম অব্দি চলে গেলাম।
-আপনি এসব কথা আমাকে কেনো বলছেন? আপনি আপনার মতো থাকেন(ইরা)
-আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করেন(আমি)
-দেখেন আমি এখানে আসছি কিছুদিন এর জন্য৷ আর আমি অসুস্থ আমার কি হবে আমি জানি না। এর মধ্যে আপনি এসব কি বলছেন??
-আমি কথাটা না বলে থাকতে পারছিলাম না
-আপনি এসব কথা বলবেন না আপনি চলে যান
-আচ্ছা বলব না। চলেন আড্ডা দিবো
-এখন কিছুই ভালো লাগছে না, আপনি যান এখান থেকে
-না আমি যাবো না
,,
ইরা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলো।
আমি তেড়ি ধরে রুমেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর পর সে বলছিলো “আপনি যাচ্ছেন না কেনো ”
তার কথার প্রত্যেক বারেই আমার উত্তর ছিলো “আপনায় ছেড়ে কোথাও যাবো না”
-আমার এমন অবস্থা যেনেও আমার সম্পর্কে এসব আপনার মনে ধারণ করলেন কিভাবে? (ইরা)
-যখন আপনি আমার মনের মধ্যে এসেছেন, তখন এসব আমি জানতাম না
-এখন তো জেনেছেন। এখন আপনার উচিত এগুলো থেকে দূরে সড়ে যাওয়া
এতে আপনারই ভালো হবে
-নাহহহ
-আপনি এমন করলে আমি কিন্তু খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হবো
-করেন খারাপ ব্যবহার তবুও যাবো না
-এমন শুরু করলেন কেনো?
-ভালোবাসি
-আবার!
-হুমমম
-আমাকে আরও অসুস্থ করে দিবেন আপনি
-….(আমি একটু থামলাম)
-আপনি এমন করলে আমরা কালই চলে যেতে বাধ্য হবো
-যেতে দিবোই না, আমি আটকে রাখবো
-আন্টি জানলে ধরে মাইর শুরু করবে
-কিছু হবে না
-আমাকে যে ভালোবাসেন এটা আন্টিকে গিয়ে বলেন দেখেন আপনার অবস্থা কি করে। আপনি বলারই সাহস পাবেন না
-আচ্ছা আমি বলব। তবে শর্ত আছে
-কি শর্ত?
-আমি যা বলব তাই করতে হবে
-ওকে ওকে, আন্টি কে বলে দেখান
-হুমম যাচ্ছি
,,
আমি মায়ের কাছে যাচ্ছিলাম সে পেছন থেকে ডাকছিলো এই ছেলে এই। কে শোনে কার কথা। আমি যাচ্ছিলাম মায়ের কাছে। আমি জানি এসব কথা এই সময়ে গুরুজনদের বলা কেমন যেন দেখায়। তবে কিসের টানে, কি এক অদ্ভুত কারণে এসব পাগলামো করছিলাম, তার সঠিক কারণ বের করতে পারছিলাম না৷
,,
-একটা কথা ছিলে (মায়ের কাছে গিয়ে বললাম)
-কি বলবি বল (মা)
-আমি ইরাকে ভালোবেসে ফেলেছি
,,
মা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। উনার হাতে একটা চামচ ছিলো সেটা এখন আমার দিকে ছুঁড়বে কি না আমি সেই ভয়ে ছিলাম।
অবাক করা বিষয় হলো উনি কিছু ছুঁড়লেন না৷ আমার চোখে সিরিয়াসনেস দেখে হয়তো উনিও সিরিয়াস ভাবে নিয়েছেন।
মা এগিয়ে এসে বলল..
-কি সব বলতেছিস? এসব বিষয় নিয়ে মজা করবি না (মা)
-মা আমি সত্যি বলছি, তুমি আমার কথা শুনে বুঝতে পারছো না?
-তোর বাবা শুনলে কি হবে বুঝতে পারছিস?
-আমি বাবাকে বলব
-আরে শোন শোন তোর বাবা শুনলে সে যাই করুক। ইরার বাবা শুনলে কি ভাববে? এমনিতে ওরা একটা বড় বিপদের মধ্যে আছে৷ মেয়েটা আসছে এখানে ঘুরতে তুই এসব কথা তোর বাবাকে বলিস না
,,
মায়ের কথা শুনে আমি অবাক৷ এর আগে যাই বলেছি উনি আমাকে তেড়ে মারতে আসছেন। আর আজ কত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছেন সব। মায়ের সব কথা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। বাবাকে কথাটা বললে পরবর্তী ফলাফল কি হবে সেটা উনি বলেই যাচ্ছিলো। আমি শুনে না শোনার ভান ধরলাম। কিছুক্ষণ বক্তব্য শুনে আবার ইরার কাছে চলে গেলাম।
-আমি মা কে সব কথা বলেছি(আমি)
-আড়াল থেকে আমি সব শুনেছি (ইরা)
-এখন আমার কথা শুনতে হবে
-তার আগে বলেন, এভাবে কেউ কিছু করে? এতো উতালা কেউ হয় না
-আমি আপনার থেকে কোনো জ্ঞানমূলক কথা শুনতে চাই না
-তাহলে কি চান?
-ভালোবাসতে দিবেন???
চলবে