অতিথি
পর্ব:০১
লেখা: মিশু মনি
মিশুর মনটা আজ খুব উতফুল্ল।আজ বাসায় অতিথি আসবেন।
অতিথি আসলে মিশুর অনেক ভালো লাগে।কিন্তু বাসায় তেমন কোনো অতিথি আসেন না বেড়াতে। আজ অনেকদিন পর অতিথি আসবেন বলে মিশুর আনন্দের সীমা নেই।
বাড়ির সামনে অটো এসে দারাল।তারমানে অতিথিরা এসে গেছেন।
মিশু নাচতে নাচতে বাইরে ছুটে আসলো।
অতিথিদের মধ্যে আংকেল আনটি,তাদের তিন ছেলে ও একটা কাজের মেয়ে।কাজের মেয়েকে কেউ বেড়াতে গেলে সাথে নিয়ে যায় এটা মিশুর জানা ছিল না।ও দেখেই খিলখিল করে হেসে উঠল।
মিশু সবেমাত্র এস.এস.সি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।কিন্তু স্বভাব একদম শিশুসুলভ। খুব চঞ্চল আর বাচাল একটা মেয়ে।
আংকেল আনটি মিশুর সাথে কথা বললেন।মিশু তাকিয়ে থেকে দেখছে ছেলে তিন জনকে।তিনটা ছেলেই বিড়ালের মত ফর্সা।কিন্তু তিনজন দেখতে তিন ধরনের।কারও সাথে কারও চেহারার মিল নেই।
মিশুর ইচ্ছে করছিল সকলের সাথে পরিচিত হতে কিন্তু ওরা ফ্রেশ হতে চলে গেল।কেউই ওর সাথে কথা বলল না।
মিশু কাজের মেয়ে টিকে গিয়ে বলল,এ্যাই জরিনা..
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকাচ্ছে! মিশুর হাসি পাচ্ছে।
ও বলল,আমি কি টিকটিকি না ইদুর? এভাবে দেখছ কেন?
– না।আপা আসলে আমার নাম জরিনা না।
– তাহলে রহিমা?
– না।রহিমাও না।
– তাহলে কি ছকিনা?
– না।এইগুলা হইবো ক্যান?
– তাহলে কি নুরি?
কাজের মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,জ্বে না আপা।আমার নাম হিমু।
মিশু চোখ উপরে তুলে বলল,হিমু? ফাজলামি করো?
– ফাজলামি করমু ক্যান? আমার নাম হিমু।সত্যি।
– তোমার আব্বু আম্মু এত স্মার্ট নাম রাখছে ক্যানো? আর হিমু হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র।হুমায়ুন কে চিনো?
– আমাগো এলাকার চেয়ারম্যান যিনি তার ব্যাটার নাম হুমায়ুন।
– চুপ করো।তুমি বুঝবা না।হুমায়ুন আহমেদ হচ্ছেন একজন বিখ্যাত লেখক। যাই হোক আমি ভাবছিলাম তোমার নাম নুরি টুরি কিংবা ছকিনা টকিনা হবে।কাজের মেয়েদের নাম তো এমনই হয়।
হিমু হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটির কথা শুনে ও মুগ্ধ”
.
আংকেল আনটির বড় ছেলে রুমে আসতেই মিশু গিয়ে বলল,আপনার সাথে আলাপ করতে আসলাম।
ছেলেটি মিশুর দিকে তাকিয়ে হাসল।
মিশু বলল,আপনার নাম কি?
ছেলেটি অবাক হয়ে তাকাচ্ছে।এই বাচ্চা মেয়েটা তার নাম জিজ্ঞেস করছে ব্যাপার টা অবাক হওয়ার মত।তার বয়স মিশুর চেয়ে ১২/১৩ বছর বেশি তো হবেই,তাছাড়া তার চাপ দাড়ি বয়স আরও বারিয়ে দেয়ার কথা।
ছেলেটি বলল,আমার নাম কাজি মৈত্রী।
– কাজি! আপনি কি বিয়ে পড়ান?
মৈত্রি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,হ্যা পরাই।
– ওহ আচ্ছা।কিন্তু আম্মু তো বলেছে আপনি বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। তাও বিয়ে পড়ান কেন?
– নিজের পেশার পাশাপাশি বিয়ে পড়ালে ক্ষতি তো নেই।তাই।
মিশু অবাক হয়ে বলল,নিজের লোকদের বিয়ে পড়ান? ফ্রিতে তাইনা?
– হুম।
– আপনি আমার আব্বু আম্মুর বিয়ে পড়িয়েছিলেন?
মৈত্রী হেসে বলল,জ্বি না।তখন আমার জন্মই হয়নি।এনিওয়ে,তোমার নাম কি?
– আমার নাম মিশু,
মিশু এখনো শিশু,
ইউ লাইক দিছু?
মৈত্রী শব্দ করে হেসে বলল,হ্যা।লাইক দিছি।
– আচ্ছা আপনাদের কাজের মেয়ের নাম হিমু?
– হুম।কেন?
– ওহ।আমিতো বিশ্বাস ই করতে পারিনি।হিমু কি যার তার নাম হয় নাকি?
– হিমু কার নাম হয়?
– যারা হিমুর মত,তাদের নাম হয়।
– তুমি কি সবাইকে নাম জিজ্ঞেস করো?
– নাহ।সবাইকে করিনা।তবে আপনাদের তিন ভাইয়ের নাম জিজ্ঞেস করবো।
– কেন?
– নাম জানা থাকলে বান্ধবী দের কাছে গল্প করতে সুবিধা হবে।নয়ত বলতে হবে,বড় বিড়াল, মেজ বিড়াল আর ছোট বিড়াল।
– কিহ! বিড়াল মানে?
– কারন আপ্নারা বিড়ালের মত ফর্সা।
– এটা কেমন কম্পেয়ার? বিড়াল কি ফর্সা হয়? কালোও তো হয়।
– আমি কালো বিড়াল দেখিনি।ফর্সা বিড়াল দেখছি।আর আপনাদের চোখ গুলাও বিড়ালের মত।
মৈত্রি অবাক হয়ে দেখছে মেয়েটিকে।অচেনা অতিথির সাথে এভাবে কথা বলা যায়! মেয়েটা একদম বাচ্চা!
মিশু বলল,কাজি সাহেব আপনার আর ভালো নাম নেই?
– আছে।বলতে চাচ্ছিনা।
– ভয়ংকর নাম?
– জ্বি ভয়ংকর।
– ভুতের মত ভয়ংকর?
কাজি সাহেব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।মেয়েটা এমন সব জিনিসের সাথে তুলনা করে যা হাস্যকর!
মিশু বলল,আপনার মৈত্রী নামটা শুনে হাসি পাচ্ছিল।
– কেন?
– মৈত্রী,নামটা কেমন মুত্র মুত্র লাগে!
বলেই মিশু হাসতে লাগল।মৈত্রি পাল্টা জবাব দিলো, তোমার মিশু নামটা শুনে আমারও হাসি পাচ্ছিল।মিশু,কেমন হিসু হিসু লাগে!
মিশুর রাগ উঠল। এই কাজি সাহেবের কাছে কথায় হেরে গেল।এটা শুনলে বান্ধবীরাও ওকে হিসু হিসু বলে ডাকবে।
রেগে বলল,কাজি সাহেব, আপনি কাজি মানুষ কাজির মতই থাকবেন।
– হিসু মনি,তুমি বাচ্চা মানুষ বাচ্চাদের মতই থাকবা।
– কিহ! আমি বাচ্চা! আমি কলেজে পড়ি।
– আমি পড়াই।
– ও আপনি তো আবার বিদেশ ফেরত ডিগ্রি ধারী মানুষ। respect show করতে হবে।ওকে এখন থেকে স্যার বলে ডাকবো।
– হা হা হা।স্যার বলতে হবেনা।কাজি সাহেব বলেই ডেকো।
মিশু মুখ বাকিয়ে চলে গেল।
( চলবে….)