অদৃশ্য স্পর্শ,০৮,০৯

0
1560

গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ,০৮,০৯
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী
( অষ্টম পর্ব )

আশিকের সামনে ঝলমলিয়ে চারদিক আলোকিত করে একটি মেয়ে দৃশ্যমান হলো, তার চেহারার সৌন্দর্যে চোখ ঝলসে যাবার মতো অবস্থা। আহি ভীষণ অবাক নুরাকে দেখে, মেয়ে হয়েও আহি ক্রাশ খেয়ে গেল নুরার ওপর। কিসলু চোখ বড়ো বড়ো করে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নুরার দিকে, সেটা দেখে আহি কিসলুকে বললো,– এ ছ্যারা এ, এই মেয়ের উপ্রে কেরাশ খাবার আগে নিচে যা কইলাম, নয়তো রাম প্যাদানী দিয়ে ছাঁদ থেকে সোজা চাঁদে পাঠিয়ে দেবো বদ।

কিসলু বললো,– থামতো বাল, এমন মেয়ে মোর চোদ্দ গোষ্ঠীর কেউ কোনদিন দেখছে কিনা সন্দেহ আছে, সুযোগ যখন পাইছি একটু দেইখা রাখি।

আহি দাঁত কটমট করে বললো,– এই মুহূর্তে ছাদ থেকে না গেলে সব বরবাদ হয়ে যাবে কিসলুর বচ্চা বলে দিলাম, এখন তোর যা ইচ্ছা।

কিসলু মুখ ভার করে চলে গেল চুপচাপ।

আহি নুরার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললো,– এম্মা আপু তুমি মেকাপ ছাড়াই এত্ত সুন্দর!

নুরা মিষ্টি হেসে বললো,– কেন সুন্দর হতে হলে মেকাপের দরকার হয় বুঝি?

: ইয়ে মানে আপু সুন্দরীরাও সৌন্দর্যের ওপর আবার হাল্কা মেকাপ ঘষে সৌন্দর্য ডোজ বাড়ায় তো, তাই বললাম আরকি।

: একদম নয় পিচ্চি কিউট মেয়ে, সৌন্দর্য মানুষের মনে হয়, চেহারায় নয়।

: বাহ! আপু, কত সুন্দর করে কথা বলো তুমি, তুমি তো অদৃশ্য ছিলে, আবার দৃশ্যমান হলে, তুমি কি আপু?

: আমি মেয়ে জ্বীন, মানে পরী।

নুরা পরী শুনে আহি হালকা করে ভিরমি খেয়ে পড়ে গেল।

নুরা অবাক হয়ে আশিককে বললো,– ও এরকম পড়ে গেল কেন?

আশিক বললো,– উত্তেজনায় ভিরমি খেয়ে, ওর নাম আহি, ভাতের চেয়ে ভিরমি খায় বেশী।

তৃষা ছাদে এসে আশিকের সামনে নুরাকে দেখে ভীষণ অবাক! তৃষাকে দেখিয়ে আশিক বললো,– ঐ যে, ওর নাম তৃষা, সে তোমার এক ধরনের ভাবী।

নুরা অবাক হয়ে বললো,– এক ধরনের ভাবী মানে, ভাবী কি দুই ধরনের হয় নাকি?!

আশিক হেসে ফেলে বললো,– হয়তো দুই ধরনের, বিয়ের আগে আশাতো ভাবী, মানে ভাই বিয়ে করার আশায় আছে। আর বিয়ের পরে ডাইরেক্ট ভাবী।

নুরা বললো,– কিন্তু ভাবীটা কি?

আশিক বললো,– ভাবী মানে ভাইয়ের বউ।

তৃষা সামনে এগিয়ে আসতেই নুরা মিষ্টি হেসে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,– ভাবীটা তো অনেক মিষ্টি, মাশা-আল্লাহ।

নুরার কথায় তৃষা ভীষণ অবাক, কত্ত সুইট মেয়েটির কথা! তৃষা মিষ্টি হেসে নুরাকে জিজ্ঞেস করলো,– কে তুমি?

“আমি নুরা” বলে নুরা তার মাথার একগাছা চুল ছিড়ে তৃষার হাতে দিতেই সেটা ফুলের তোড়ায় পরিনত হলো, ফুলগুলো যেমন সুন্দর তেমনই মন মাতানো সুগন্ধে ভরে গেল চারপাশ।

নুরা বললো,– অভিনন্দন ভাবী, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আশিকের মনের ইচ্ছা তাহলে পূর্ণ হতে চলেছে।

আহি উঠে দাড়িয়ে নুরাকে দেখিয়ে তৃষাকে বললো,– বল আপি! এমন মেয়ের সৌন্দর্যের কাছে ফেয়ার-এন্ড-লাভলিও হেরে গিয়ে লজ্জায় টিউবের ভেতর শুকিয়ে যাবে তাই না?!

তৃষা আহিকে বললো,– এবার একটু থাম তুই, নয়তো হুদা যায়গায় ভিরমি খেয়ে পড়ে থাক।

নুরা আহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই কয়েকটি সোনালী রঙের প্রজাপতি দৃশ্যমান হয়ে আহির চারপাশে উড়তে লাগলো, আহি তাদের নিয়ে ব্যস্ত।

আশিক তৃষাকে বললো,– তৃষা, নুরা আমার কাজিন এবং সবচেয়ে ভালো বন্ধু, আমি জানতাম আর কেউ না হোক, নুরা আমায় ঠিকই খুজে বের করবে। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওর আর আমার এই সম্পর্ক ছিন্ন হবার নয়।

নুরা বললো,– আশিক যে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়, সেটা কখনোই বন্ধুত্ব নয়। বন্ধু মানেই ভরসাস্থল, সবচেয়ে কাছের, হৃদয়ের একটা অংশ জুড়ে থাকা কেউ।

তৃষা বললো,– বাহ! তোমাদের বন্ধুত্ব অটুট থাক আজীবন।

রাতে তৃষার পাশে শুয়ে নুরা বললো,– আমার মনে হয় আশিক তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে তৃষা, সেই যে আসলো আর ফিরলো না জ্বীন রাজ্যে, হয়তো এতদিন তোমার কাছেই ছিল! তুমি ওকে ফিরিয়ে দিয়ো না।

তৃষা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– নুরা আমি একজনকে ভালোবাসি, কিন্তু এদিকে আশিক যেভাবে হোক আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা করে ফেলেছে। আমি একটা মেয়ে, আমার কাছে শরীরটাই সব থেকে বড়ো সম্পদ! আর সেটা ইতিমধ্যে আশিক লুট করেছে, আমি চাইনা জনে জনে দেহ বিলাতে, এতে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে জীবন ভর। এদিকে আশিকের সাথে শারীরিক মেলামেশা, ওদিকে আকাশের ভালোবাসা। আমি কোন পথে যাবো ভেবে পাইনা, হয়তো মৃত্যু আমার জন্য সঠিক সমাধান।

নুরা তৃষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,– সবকিছু এবার আমি ম্যানেজ করে নেবো, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো…

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( নবম পর্ব )

সকালে তৃষার রুমে এসে তৃষার পাশে লম্বা হয়ে একটি সাপ শুয়ে আছে দেখে তৃষার দাদী ভয়ে চেচিয়ে উঠলো, চোখ থেকে চশমা খুলে নিচে পড়ে গেল।

দাদীর চিল্লানী শুনে তৃষা হুড়মুড় করে উঠে বসলো।

আসলে নুরা ঘুমানোর সময় সাপের রূপ ধারণ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল, দাদী সাপরূপি নুরাকে দেখে ভয়ে চেচিয়ে উঠেছিল।

ঘুম জড়িত চোখে তৃষা বললো,– সকাল সকাল কি হলো দাদী?!

দাদী ভয় জড়ানো কন্ঠে বললো,– তোর পাশে সাপ শুয়ে আছে একটা।

নুরা জলদি করে সাপ থেকে কোলবালিশে পরিনত হলো।

আহি এসে দাড়িয়ে বললো,– কি সমেস্যা কি, চিল্লাচিল্লি করে শব্দ দূষণের মানে কী দাদী?!

তৃষা দাদীকে বললো,– দাদী চশমা চোখে দিয়ে ভালো করে একবার দ্যাখো।

দাদী চশমা তুলে চোখে দিয়ে আবার তাকিয়ে দেখলো যেখানে সাপ ছিল সেখানে কোলবালিশ। দাদী অবাক হয়ে বললো,– একি! বিষয়টা কি?

আহি বললো,– বিষয়টা বেদনার দাদী, সকাল সকাল হুদাই চিল্লায়া ঘুম ভাঙ্গাইলা, সাপকে কোলবালিশ দ্যাখো তুমি, কোনদিন আবার কোলবালিশকে পুরুষ লোক মনে করে বলো তৃষা জামাইরে জড়াইয়া ধইরা শুয়ে আছে! তারপর কেলেংকারী।

দাদী আহিকে বললো,– থাম তো, খালি বেশি কথা, কল্লা ধরে জামাই বাড়ি ট্রান্সফার করে দিমু একদম।

আহি দাদীর গাল টেনে দিয়ে বললো,– শুভ কাজে দেরি করতে নাই দাদী, আমি রেডি।

দাদী হেসে ফেলে বললো,– লজ্জা শরম বিক্রি করে মনে হয় ফুচকা খাইছে, বান্দর মাইয়া একটা।

দাদী যেতে যেতে তৃষাকে বললো,– জলদি হাতমুখ ধুয়ে আয়, নাস্তা খাবি।

আহি বললো,– দাদী, তার নাস্তা খাবার দরকার নেই, সে ক্রাশ খাইছে।

দাদী অবাক হয়ে বললো,– ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ না ধুয়েই ক্রাশ খাইছে, ক্রাশ কি এমন অমৃত আমারে একটু দে-তো খাই।

আহি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললো,– এই বয়সে তোমার পেটে ক্রাশ হজম হইবে না দাদী, শেষে অকালে অক্কা পাবা, তুমি বরং নাস্তা খাও।

আহি ও দাদী চলে যেতেই নুরা কোলবালিশ থেকে আবার নিজের রুপ ধারণ করলো।

আশিক দৃশ্যমান হয়ে নুরাকে বললো,– চলো নুরা, দেরী হয়ে যাচ্ছে।

তৃষা অবাক হয়ে বললো,– কোথায় যাচ্ছ তোমরা?

আশিক বললো,– পরে বলবো তোমায়।

তারপর আশিক ও নুরা অদৃশ্য হয়ে গেল।

কফিশপে বসে আনমনা হয়ে কফির কাপে চুমুক দিয়ে কিছু একটা ভাবছে আকাশ, এমন সময় তৃষা এসে উপস্থিত।

চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসে তৃষা বললো,– আকাশ অপ্রাপ্তিতেও অনেক সময় এক ধরনের সুখ থাকে।

তৃষার কথা শুনে আকাশ ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– হঠাৎ এসব কি বলছো তৃষা।

: হ্যাঁ আকাশ, আমার মনে হয় আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হওয়া বেটার।

: মানে! এসব কি বলছো তৃষা?

: হ্যাঁ আকাশ, যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে ঠকানো যায়না।

: তৃষা সেদিন তোমার শরীর পেতে জোড়াজুড়ি করেছি তাই হয়তো তুমি রাগ করে এসব বলছো!

: একদম না আকাশ।

: তাহলে কী?

: আমার অন্য কারো সাথে শারীরিক মেলামেশা হয়েছে আকাশ, তা-ও অনেকবার। অন্যের ভোগ করা দেহটা তোমায় দিয়ে আমি নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে চাইনা। তোমার প্রতি নাহয় ভালোবাসাটুকু অক্ষত থাক।

তৃষার কথা শুনে আকাশ ভীষণ অবাক হয়ে থমকে গেল। তৃষা কি বলছে এসব!

কিছুক্ষণ নীরব থেকে আকাশ বললো,– তার মানে আমার সাথে প্রেমের নাটক আর ফিজিক্যাল রিলেশন অন্যের সাথে। এতই যখন এলার্জি আমায় বললেই পারতে, আমি তোমার খায়েশ মিটিয়ে দিতাম, দেহ তো একটাই, কজন নিতে চাও তৃষা বলো। নাকি একজনে হবেনা তোমার?

তৃষা বললো,– একটু ভেবেচিন্তে কথা বলো আকাশ।

আকাশ কড়া মেজাজে বললো,– ভেবে বলার আর কি আছে, কতবড় জঘন্য কাজ! আমি কী পারতাম না তোমার শারীরিক চাহিদা মেটাতে, নাকি আমাকে পুরুষ মনে হয়না? ভালোবাসো আমাকে, শরীর বিলাচ্ছো অন্যকে, বাহ! ভালো তো। তোমার প্রতি সমস্ত ভালোবাসা এখন থেকে ঘৃনায় পরিনত হলো, কিছু নেই আর, তুমি চলে গেলে খুসি হবো।

তৃষা চুপচাপ উঠে দাড়িয়ে,“ ভালো থেকো আকাশ,” বলে কফি-শপের বাইরে এসে এক নির্জন রাস্তায় এসে দাড়ালো, আশিক দৃশ্যমান হলো তৃষার সামনে।

তৃষার চেহারা পাল্টে নুরার চেহারা হয়ে গেল।

আসলে এতক্ষণ তৃষার রূপ ধরে নুরাই কথা বলছিল আকাশের সাথে।

নুরা আশিককে বললো,– আশিক আমাকে তৃষা সাজিয়ে আকাশকে এসব বলানোর মানে কী?

আশিক বললো,– শোন নুরা, এই কথাগুলোই তৃষা আশিককে বলতে চেয়েও পারছে না, তাই তোকে তৃষা সাজিয়ে কথাগুলো বলালাম। কথাগুলো শোনার পরে আকাশ যে কথাগুলো বলেছে, সেগুলো শুনলে তৃষা ভীষণ কষ্ট পেয়ে ভেঙে পড়তো নুরা। আমি চাইনি তৃষা এমন কষ্ট পাক, তাইতো তোকে তৃষা সাজিয়ে এই আয়োজন।

নুরা বললো,– বাব্বাহ! জ্বীন রাজ্যের নবাগত রোমিওর উদয়।

আশিক হেসে ফেলে বললো,– হা হা, চুপ কর নুরা, ভালোবাসার মানুষকে এভাবে আগলে রাখতে হয়, তাকে যেন কষ্টরা স্পর্শ না করতে পারে, হতাশারা গ্রাস করতে না পারে। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও ভালোবাসার মানুষটার মুখে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টার নামই ভালোবাসা।

নুরা অবাক হয়ে বললো,– বাহ! আশিক, তুই যে প্রেমে পিএইচডি করছিস জানা ছিলনা। জ্বীন হয়েও তুই প্রেমে পড়ে আজ মানুষ হয়ে গেলি, আর মানুষরা আজকাল অমানুষ হয়ে যায়। কিএক্টা অবস্থা!

আকাশ কফি শপে আরও একটা কফি অর্ডার করে কফি কাপ সামনে নিয়ে বসে ঝিমাচ্ছে। একটা মেয়ে এসে কফি-শপে ঢুকে সোজা আকাশের টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসে বললো…

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here