অদৃশ্য স্পর্শ ( চতুর্থ পর্ব )

0
1835

গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( চতুর্থ পর্ব )

তৃষা আয়না স্পর্শ করতেই আয়নার ভেতর থেকে দুটো হাত বের হয়ে তৃষার হাত শক্ত করে ধরলো। ভয়ে তৃষা চিৎকার দিতেই আহি ছুটে আসলো, এবং আহি আসা মাত্র সবকিছু স্বাভাবিক।

তৃষাকে আতঙ্কিত দেখে আহি বললো,– কি হইছে আপু?

আহি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,– তেলাপোকা উড়ে এসে গায়ে পড়ছিল রে!

আহি হা হা করে হেসে বললো,– তাতেই এমন ভয় পাইছো যেন ইন্ডিয়ার পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ছোড়া কামান তোর গায়ে এসে পড়ছে, হা হা হা হা হা।

তৃষা আবার বললো,– শুরু হইছে পাকনামী!

আহি বললো,– তো কি, তেলাপোকার ভয়ে তোর যে অবস্থা, মনে হচ্ছে চেপে ধরে তোরে কেউ হিরো আলমের গান শুনাইছে, হা হা হা, শুধু ফিগারে না আপু, জিগারে বড়ো হ, সাহস বাড়াও। ফিডার খাওয়া বাচ্চাদের মতো বিহেভ করিসনা।

কথা শেষে আহি হাসতে হাসতে চলে গেল।

আহি যাবার পরেই তৃষা আয়নায় দেখা সেই আকাশের উদ্দেশ্যে বললো,– আপনি কে, কেন আমার সর্বনাশ করছেন, কি চাই আপনার?

অদৃশ্য কিন্তু মিষ্টি একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো,– আমি আশিক।

তৃষা বললো,– কিন্তু আপনাকে দেখা যাচ্ছেনা কেন?

: কারণ আমি তোমাদের মতো মানুষ নই!

: তাইলে কি আপনি অমানুষ?

: না ইয়ে মানে অমানুষ কেন হবো! আমি তোমাদের মতো মনুষ্যজাতি নই, আমি জ্বিন জাতি।

এই কথা শুনে তৃষা আরও ঘাবড়ে গেল, ভয়ে ভয়ে বললো,– আপনি আমার সামনে আসুন, আমি দেখতে চাই।

আশিক আকাশের রূপ ধারণ করে পেছন থেকে দৃশ্যমান হয়ে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,– এই যে আমি।

তৃষা ঘুরে দাড়িয়ে বললো,– আপনি আকাশের রূপ ধারণ করেছেন কেন?

: কারণ আকাশ তোমার প্রিয়জন, তাই ওর রূপ ধারণ করলাম যাতে একটু হলেও তোমার ভয় কমে।

: আপনি কি চান?

: চাই পরীমনির চুমু, তুমি দিতে পারবে?

আশিকের কথা শুনে তৃষা ভয় ভুলে হেসে ফেলে বললো,– পরীমনিকেও চেনেন?

: চিনবো না কেন, সে-ও তো জ্বীনের বিপরীত পরী, সমস্যা হলো সে ডানাকাটা পরী!

তৃষা আবারও হেসে ফেলে বললো,– বাহ! বাহ! মনুষ্যজাতি ছাড়িয়ে পরীমনি দেখছি জ্বীনজাতির কাছেও ফেমাস!

আশিক বললো,– এসব তোমার ভয় কাটানোর জন্য বলেছি তৃষা।

তৃষা বললো,– আপনি আমার কাছে কি চান তবে?

: আমি তোমার কাছে তোমাকে চাই!

: মানে?

: মানে তোমাকে আমার ভালো লেগেছে।

: ক্যান জ্বীনের দেশে কি পরীর অভাব পড়ছে?!

: একটা পরীর অভাব, যেটা জ্বীনের দেশে নেই, সেটা তুমি। জানো তোমাকে দেখার পরে থেকেই এখানে আছি তোমার আসেপাশে সবসময়।

: তাহলে সেদিন আকাশের রূপ ধরে আপনি আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা কেন করলেন, এটা কোনো ভালো উদ্দেশ্য হতে পারেনা!

: তৃষা তোমাকে পেতে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা থেকে ভুলটা হয়ে গেছে, কিন্তু সত্যটা হলো আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই।

: বাহ! শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা তাই তো, বিয়ে করার কি দরকার, আপনি তো আমাকে বশে এনে যখন যা খুশি করতে পারেন, আমার বাঁধা দেবার মতো শক্তিটুকুও থাকেনা। ইচ্ছেমতো লুটেপুটে নিতে পারেন, জ্বীনরাও এত খারাপ হয় জানতাম না!

: তৃষা আমি তোমায় বিয়ে করবো এটাই ফাইনাল, মানুষের মতো প্রেমে ফেলে ভুলিয়ে ভালিয়ে শরীর লুটে ব্রেকআপ করে চলে যাবার মতো বদ আমি নই। ইহকাল পরকাল, আমি যেন তোমার হই।

: বাহ! বাহ! কথা ভালোই জানেন দেখছি।

: হুম তোমার মন পাবার জন্য জ্বীনটিউবে কথা শেখার ভিডিও দেখি রোজ।

: হা হা হা, জ্বীনটিউব মানে?

: মানে তোমাদের যেমন ইউটিউব, জ্বীনদের তেমন জ্বীনটিউব।

: হা হা হা, মজার তো!

আশিক এবং তৃষা খাটের উপর বসে কথা বলছে এমন সময় হঠাৎ করে আহি রুমে ঢুকে পড়লো, আশিক আর গায়েব হবার সুযোগ পেলনা, আকাশের রূপেই বসে রইলো। আহি আকাশ রূপী আশিককে দেখে তৃষাকে বললো,– ওবাবা! তলে তলে এতদূর, রোমিওকে রুমে ডেকে প্রেমের রিমিক্স কাওয়ালী হচ্ছে বুঝি তৃষাপু, বাহ! ভালোই।

তারপর আহি আশিকের সামনে গিয়ে আশিকের কান টেনে ধরে বললো,– দুলাভাই, আপ্নেও তো দেখতাছি বদ প্রো ম্যাক্স, বিয়ের আগেই হবু বউয়ের রুমে এসে চাকুমচুকুম।

আশিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে “ ইয়ে মানে, ইয়ে মানে ” বলতে বলতে তৃষার দিকে তাকালো। তৃষা হেসেই অস্থির।

আহিকে দেখিয়ে আশিক তৃষাকে বললো,– ইহাকে বলে পাকনা।

আশিক আহিকে বললো,– এই পাকনা কান ছাড়ো আমার।

আশিকের মুখে পাকনা শব্দটা শুনে আহি আরও ক্ষেপে গিয়ে আশিকের দুই কান টেনে ধরে বললো, আমি পাকনা তাই না? দেখাচ্ছি মজা, আমাকে চকলেট ঘুষ না দিয়ে প্রেম!

আশিক দিকবিদিকশুন্য হয়ে আকাশের রূপ ছেড়ে নিজের রূপ ধারণ করলো। এদিকে আকাশের চেহারা চোখের সামনে পাল্টে যাওয়ায় আহি হাল্কার উপ্রে ভিরমি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।

আশিকের চেহারা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তৃষা আশিকের দিকে, এর আগে এত সুন্দর কাউকে দেখেনি তৃষা এই জীবনে।

তৃষাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশিক বললো,– আমাকে পরে দেখলেও চলবে, আগে পাকনাকে দ্যাখো।

তৃষা হেসে ফেলে বললো,– ওর নাম পাকনা নয় আশিক, ওর নাম আহি, পাকা পাকা কথা বলে তাই পাকনা ডাকি।

তৃষা আহির মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই আহির হুঁশ ফিরলো। আহি উঠে আশিকের দিকে তাকিয়ে তৃষাকে বললো,– আপারে, খাবারদাবার বাদ দিয়ে এমন পোলার উপ্রে ক্রাশ খাইয়া জীবন কাটানো সম্ভব, কে এই বহুরূপী বালক?

তৃষা বললো,– এই বালক মানুষ নহে, ও জ্বীন, ওর নাম আশিক।

এই কথা শুনে আহি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,– তাইলে আপা তোমরা কথা বলো, আমি আর একবার ভিরমি খাই। কথা শেষে আহি আবার অজ্ঞান।

আশিক অবাক হয়ে বললো,– কিছু না খেয়েই আহি আবার অজ্ঞান হয়ে গেল তৃষা! ও তো বললো ভিরমি খাবে, সেটা না খেয়েই অজ্ঞান হলো যে!

আশিকের কথা শুনে তৃষা হাসতে হাসতে বললো,– ভিরমি এক ধরনের অদৃশ্য খাবার আশিক, অতিরিক্ত ভয় পেলে, সারপ্রাইজড হলে মানুষ ভিরমি খায়, হা হা হা।

আশিক বললো,– অদ্ভুত খাবার তো।

তৃষা হেসেই অস্থির। হাসি কন্ট্রোল করে তৃষা বললো,– আশিক এবার আমার কিছু সিরিয়াস কথা শোনো, এবং অবশ্যই বোঝার চেষ্টা করবে…

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here