গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( তৃতীয় পর্ব )
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নগ্ন প্রতিচ্ছবি দেখে আবারও ভীষণ চমকে গেল তৃষা, অথচ তৃষার গায়ে জামা আছে ঠিকই! আয়নায় দেখা যাচ্ছে তৃষার বুকে ও গলার কাছে লাল হয়ে থাকা লম্বালম্বি চিকন সরু আঁচড়ের দাগ।
তৃষা আবারও আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে ওড়নাটা আরও ভালো করে জড়িয়ে পুনরায় আবার আয়নার সামনে এসে দাড়াতেই আবার সেই একই দৃশ্য। আয়নায় যে তৃষাকে দেখা যাচ্ছে সে পুরোপুরি নগ্ন। তৃষা ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েও কৌতূহল মেটাতে আয়নায় হাত দিয়ে স্পর্শ করবে এমন সময় মনে হলো পেছন থেকে কেউ ফু দিয়ে তৃষার ঘাড়ের কাছের চুলগুলো উড়িয়ে সামনে ফেললো!
তারপর মনে হলো তৃষার পিঠ থেকে হাত বুলোতে বুলোতে কেউ তার বুক স্পর্শ করলো, কিন্তু কে সে? কেউ নেই অথচ কেন অনুভব হচ্ছে এই অদৃশ্য স্পর্শ?!
তৃষার শিরদাঁড়া বেয়ে যেন ভয়ের শীতল স্রোত নেমে গেল! নড়াচড়া করার শক্তি যেন বিন্দুমাত্র নেই তার শরীরে! মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে চেয়ে ব্যর্থ তৃষা।
এবার মনে হচ্ছে সেই অদৃশ্য কেউ তৃষাকে হাওয়াও ভাসিয়ে এনে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। শরীর ভীষণ ভারী লাগছে তৃষার, সেই অদৃশ্য স্পর্শ এখন তৃষার শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গে অনুভব হচ্ছে, অথচ বাধা দেবার মতো কোনো শক্তি তৃষার নেই। ভয়ে গলা শুকিয়ে ফেটে চৌচির হবার উপক্রম।
হঠাৎ দরজা খুলে আহি রুমে প্রবেশ করতেই সেই অদৃশ্য শক্তি গায়েব, তৃষার শরীর হাল্কা হয়ে গেল মুহূর্তেই, সবকিছু স্বাভাবিক। তৃষা উঠে বসলো। আহি দাঁত কটমট করে বললো,– সারাদিন শুয়েই থাকেন মহারানী ভিক্টোরিয়া, আমি বরং ব্লেন্ডারে ভাত তরকারির জুস করে এনে পাইপ দিয়ে আপনাকে গিলাবো, দিনরাত এমন ভাবে শুয়ে কাটাচ্ছে যেন ওনার বিয়ের বছর।
তৃষা হেসে ফেলে হাত ধরে টান দিয়ে আহিকে টেনে এনে পাশে বসিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো,– তোর আমার বড়োবোন হওয়া উচিৎ ছিল পাকনা বুড়ী।
আহি ভেংচি কেটে বললো,– বয়সে বড়ো হলেই হয়না তৃষুপা, ভার বার্তিক হওয়া লাগে।
তৃষা আবারও হেসে ফেলে বললো,– আচ্ছা আচ্ছা, তুই বেশি ভার বার্তিক বলেই সেদিন ঘাট ভেঙে পড়ছিলি এবার বুঝলাম।
: তৃষাপু, ফাও কথা বাদ দাও, কাজের কথা শোনো।
: আচ্ছা বলো।
: তৃষাপু!
: হুম।
: আমি মনে হয় কেরাশ খাইসি!
: এ্যাঁ!
: হ্যাঁ।
আহির কথা শুনে তৃষা হেসেই অস্থির। তাই দেখে আহি বললো,– প্রেম পিরিতি কোনো হাসাহাসির বিষয় নয় বদ, বি সিরিয়াস। কেরাশ খাবার পরে থেকে আমার অন্যান্য খাবারের প্রতি রুচি কমে গেসে আপু।আমার মনে হয় আয়াম ইন লাভ। মুঝে প্যার হোগিয়া।
“ আমার মনে হয় কেরাশ খেয়ে তোর বদ হজম হইছে, এখন ওরস্যালাইন খা আহি,” বলে তৃষা আবার হেসে গড়াগড়ি খাবার উপক্রম।
গম্ভীর ভাব ধরে আহি বললো,– রোমিও, মজনু, ফরহাদ, অথবা সম্রাট শাহজাহানের সামনে প্রেম নিয়ে এমন হাসাহাসি করলে নির্ঘাত তোরে শূলে চড়াইতো, ভাগ্য ভালো আমার সামনে হেসে পাড় পেয়ে গেলি।
তৃষা আবারও হেসে ফেলে বললো,– ফিডার খাওয়া ভালো করে ছাড়তে পারলি না, তার আগেই ক্রাশ খাওয়া শুরু! তোর পেটে এত কথা থাকে কোথায় আহি? আর ইমপোর্ট করসিস কোথা থেকে?
আহি মেজাজ খারাপ করে বললো,– মায়ের পেটের বড়ো বোন না হলে এতক্ষণে সম্পর্ক ছিন্ন করে আহি তার প্রেম নিয়ে ভিন্ন হয়ে যাইতো, বাইচা গেলি আপু।
তৃষা বললো,– প্রেমের জন্য বোন বিসর্জন! কে তোর মনের গলির ক্রাশ খাওয়া সাহরুখ খান বলতো শুনি।
লজ্জামাখা মুখে আহি বললো,– পাশের বাসার কিসলু ভায়া, আমার হৃদয় করেছে চুরি, সে আমার রোমিও, আমি জুলিয়েট হইয়া তাহার পেছনে পাঙ্খার মতো ঘুরি।
“তোর কথা শুনে আমি শিহরিত আহি বুড়ী,” বলে আবারও তৃষা হেসে অস্থির।
হাসি কন্ট্রোল করে তৃষা আবারও বললো,– সব শেষে কিসলু কানা তোর মনের মহল্লার সাহরুখ খান হা হা হা!
আহি কটমট করে বললো,– হাসতে থাক, কিসলুর দেয়া পিংক কালারের লিপস্টিক ঠোঁটে মেখে বারান্দায় দাড়াতে হবে, সে বলছে ইলেকশনে মার্কা যদি হয় আমার ঠোঁট, সে নিজেই দেবে লক্ষ কোটি ভোট।
কথা শেষে আহি উঠে তৃষার রুমের আয়নার দিকে এগিয়ে যেতেই তৃষা পেছন থেকে আহিকে টেনে ধরে বললো, তোর রুমের আয়নার সামনে গিয়ে সাজুগুজু কর যা, আমার আয়নায় না।
আসলে আয়নার সেই রহস্যের জন্যই তৃষা এমন বলেছে। আহি বললো,– ক্যান, আমি তোমার আয়নার সামনে সাজুগুজু করলে কি আয়না ঝাপসা হয়ে যাবে নাকি! যত্তসব।
কথা শেষ করে আহি আয়নার সামনে দাঁড়ানোর আগেই আয়না ঝাপসা হয়ে গেল। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঝাপসা দেখে আহি বললো,– আয়নায় চেহারাই তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না! লিপস্টিক ঠোঁটের বদলে নাকে মেখে ফেললে কিসলু কানা আমারেই কানা ভেবে সম্পর্ক ছিন্ন করে ভিন্ন মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে গেলে সমস্যা, আমি আমার রুমেই যাই।
আহি হনহন করে হেটে চলে গেল। তৃষা আয়নার সামনে এসে দাড়াতেই আয়না আবার পরিষ্কার!
প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে তৃষা আয়নায় হাত দিয়ে স্পর্শ করবে এমন সময় হঠাৎ আয়নায় তৃষার পেছনে কেউ দাড়িয়ে আছে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল তৃষা। ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। আবার আয়নায় তাকিয়ে দেখলো তৃষার পেছনে হুবহু আকাশের মতো কেউ দাড়িয়ে আছে তৃষার পেছনে!
ভয়ে থরথর করে কাঁপছে তৃষার শরীর, কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে আয়না স্পর্শ করতেই…
চলবে…
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।