অদৃশ্য স্পর্শ ( দশম পর্ব )

0
1544

গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( দশম পর্ব )

–“ এই যে হ্যালো, কফি কি খাবার জন্য অর্ডার করেছেন! নাকি সামনে রেখে পুজো করার জন্য?” আকাশের সামনে চেয়ার টেনে বসা মেয়েটি বললো।

আকাশ অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো,– আপনি আমাকে বললেন?!

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো,– তো আপনার কি মনে হয়, আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছি।

মেয়েটির কথা শুনে মন খারাপের মাঝেও হেসে ফেললো আকাশ। হাত বাড়িয়ে দিয়ে আকাশ বললো,– বাই দ্য ওয়ে, আমি আকাশ।

আকাশের হাতটা ছুয়ে দিয়ে মেয়েটি বললো,– আমি জান্নাত।

পাস দিয়ে ওয়েটার যাচ্ছিল, জান্নাতের মুখে “ আমি জান্নাত ” শুনে ওয়েটার থমকে দাড়িয়ে জান্নাতের দিকে চেয়ে রইলো।

জান্নাত অবাক হয়ে ওয়েটারকে বললো,– কি ব্যাপার?!

ওয়েটার বললো,– ম্যাম ব্যাপার তো ভিরমি খাবার।

জান্নাত অবাক হয়ে বললো,– এতকিছু থাকতে ব্যাপারটা ভিরমি খাবার কেন।

ওয়েটার বললো,– ম্যাম, আপনার জান্নাত নামের মধ্যে পরকালের একটা ব্যাপার স্যাপার বিদ্যমান! মানুষ জান্নাতে যেতে চায়, আর জান্নাত নিজে এসে আমাদের কফিশপে উপস্থিত!

ওয়েটারের কথায় জান্নাত এবং আকাশ হেসে ফেললো।

ওয়েটার চলে গেল, জান্নাত আকাশকে বললো,– আপনাকে ভীষণ আপসেট মনে হচ্ছে, কিন্তু কেন?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ বললো,– কিছু জিনিস আমরা খুব করে চেয়েও পাইনা, তাই।

জান্নাত বললো,– কিছু জিনিস ভাগ্যে থাকেনা বলেই আমরা পাইনা। এভাবে ভাবলে কষ্টটা কম হয় মিস্টার।

“বাহ! খুব সুন্দর কথা বলেন আপনি জান্নাত,” বলে মুগ্ধ হয়ে আকাশ তাকিয়ে আছে জান্নাতের দিকে।

জন্নাত ফু দিয়ে কানের পাশে পড়া চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বললো,– এই যে হ্যালো, চোখ দুটো রাজহাঁসের ডিমের মতো করে যেভাবে তাকিয়ে আছেন, আমার রূপের ঝলকে চোখের পলকে ভিরমি খেয়ে পড়ে যাবেন তো। সাবধান।

আকাশ চোখ সরিয়ে বললো,– আচ্ছা জান্নাত, কখনও কারো প্রেমে পড়েছেন?

জান্নাত বললো,– পড়ার আগেই তো প্রেম গায়েব, হুদা যায়গায় পড়ে হাত পা তাই আর ভাঙিনি।

: মানে?

: সে এক লম্বা ঘটনা মিস্টার আকাশ।

: একটু সর্ট করে বলা যায়না?

: আচ্ছা টেনেটুনে স্কিপ করে বলছি তাহলে।

: ওকে বলো।

: একজনের ওপর ক্রাশ খেয়েছিলাম, হাতে তার নামের প্রথম অক্ষরও লিখেছিলাম, পরে দেখি বানান ভুল! সেই থেকে আত্মগোপনে আছি। বিষয়টি বেদনার।

জন্নাতের কথা শুনে আকাশ হেসেই অস্থির। একেবারে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা।

জান্নাত মিষ্টি হেসে বললো,– এই হাসিটুকুই দেখার জন্য এতকিছু বলা মিস্টার আকাশ।

এদিকে রুমে আয়নার সামনে বসে সাজুগুজু করসে তৃষা। পেছনে আশিক দৃশ্যমান হয়ে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা চুমু খেয়ে বললো,– আমার পরিটাকে আজ সেই লাগছে।

তৃষা শুষ্ক হেসে বললো,– বাহ! তাই নাকি মিস্টার জ্বীন প্রেম কুমার?

: হ্যাঁ একদম তৃষা! কিন্তু লিপস্টিক মাখার দরকার নেই ঠোঁটে!

: এম্মা! কেন আশিক?

: তৃষা তোমার লিপস্টিক আমার পেট খারাপের কারণ!

: মানে!

: মানে তোমার ঠোঁটে সেদিন লিপ কিস খাবার সময় চুমুর চেয়ে বেশি তোমার ঠোঁটের লিপস্টিক খেয়েছি বোধহয়। সেই থেকে পেট খারাপ, এস-এম-সি ওরস্যালাইনেও কাজ হচ্ছে না। চুমুর চেয়ে লিপস্টিক বেশী খেলে যা হয় আরকি।

আশিকের কথা শুনে তৃষা হেসে অস্থির। আশিক হঠাৎ করেই তৃষার হাসিমাখা ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,– এই হাসির জন্য ফাঁসিত চড়তেও রাজি তৃষা।

তৃষা বললো,– যখন তখন এসব কি আশিক!

আশিক বললো,– ভালোবাসায় যখন তখন থাকেনা তৃষা, ইচ্ছার ওপর নির্ভর সব। এই যে ইচ্ছে হলো চুমু খেলাম। তুমি যে আমার অস্তিত্বে মিশে আছো তৃষা। আমি বাঁচতে চাই, তুমি আছো বলে, আমি মৃত্যু চাইনা, তোমাকে একা ফেলে। শেষ নিঃস্বাস পর্যন্ত আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই তৃষা, তোমায় ভালো বাসতে চাই।

তৃষা আশিকের কথায় মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে উঠে দাড়িয়ে আশিকের চোখে চোখ রেখে অনড় দাড়িয়ে আছে। আশিক টান দিয়ে তৃষাকে বুকে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তৃষার কামিজের ভেতর হাত ঢুকিয়ে পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললো,– তোমায় ছুয়ে দেবার ইচ্ছে হলো তাই কামিজের ভেতর থেকে হাত ঢুকিয়ে ছুয়ে দিলাম। এসব কাপড়ের আবরণ আমার ভাল্লাগেনা।

আশিকের হাতে কি এক যাদু আছে তৃষা নিজেও জানেনা! আশিক ছুয়ে দিলেই তৃষা পাগল হয়ে যায়।

আশিক তৃষার ঠোঁটে চুমু খাবে এমন সময় আহি রুমে ঢুকে তৃষা ও আশিক জড়িয়ে ধরে আছে দেখে বললো,– এর জন্যই তো ভাবি এসি চলার পরেও ঘরের আবহাওয়া এত হট কেন! তোগো প্রেমের উঞ্চতায় ঘরে থাকা দায়।

আশিক তৃষাকে ছেড়ে দিয়ে আহিকে বললো,– ইয়ে মানে আহি আমরা উচ্চতা মাপছিলাম, কে কত লম্বা।

আহি ভেংচি কেটে বললো,– কোলাকুলি করেও যে উচ্চতা মাপা যায় তা না জানা আমার কচি মন, কচি করে উচ্চতা মাপার ভং ধরে আবার গভীরতা মাপার ধান্দা কিনা কে জানে!

তৃষা হেসে ফেলে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে আহিকে ধমক দিয়ে বললো,– আহি, পকনামি না করে যা এখান থেকে।

আহি ভেংচি কেটে বললো,– তোদের ভালোবাসা এভাবে গরম ছড়ালে আমাদের মত কচিদের কচি করে না পেকে উপায় আছে!

কথা শেষে আহি চলে গেল।

এদিকে কফিশপে জান্নাতের কথাবার্তায় ভীষণ মুগ্ধ আকাশ। আকাশ বললো,– জান্নাত অনেক কথা হলো, বলো কি খাবে।

জান্নাত বললো,– একটা চুমু দাও খাই!

আকাশ অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে জান্নাতের দিকে।

জান্নাত উঠে আকাশের পাশে এসে…

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here