গল্পঃ অদৃশ্য স্পর্শ ( সপ্তম পর্ব )
তৃষার হাত ধরে একটা চুমু খেয়ে আকাশ বললো,– যে মানুষটার হাতের রান্না এত সুস্বাদু, সে না যেন কত সুস্বাদু,” বলেই তৃষাকে টান মেরে আকাশ বুকে এনে আবার বললো,– খিচুড়ী তো টেস্ট করা হলোই, এবার হবু বউটাকে নাহয় একটু টেস্ট করে দেখি।
কথা শেষ করে আকাশ তৃষার ঘাড়ে ঠোঁটের স্পর্শ করতেই তৃষা আকাশকে ধাক্কা দিয়ে একটু পেছনে সরে এসে বললো,– এসব তুমি কি করছো, কি বলছো আকাশ! তুমি তো এমন ছিলেনা!
আকাশ আবার তৃষার সামনে এগিয়ে এসে তৃষার দু’হাত শক্ত করে ধরে বললো,– আসলেই এসব আমার মনে ছিলনা তৃষা, কিন্তু সেদিন তুমি ওসব বলার পরে থেকে কেমন যেন তোমাকে খুব একান্তে কাছে পাবার ইচ্ছা হচ্ছে মনে ক্ষণে ক্ষণে, এতদিন ঐভাবে কোনো ভাবনা আসেনি, কিন্তু সেদিনের তোমার স্বপ্নের কথা শুনে কেমন একটা আকাঙ্খা জন্ম নিয়েছে মনে তৃষা, এবং সেটা তোমাকে মন ভরে আদর করার, তোমার শরীরে এমন ভাবে আমার ঠোঁটের চিহ্ন একে দিতে মন চাইছে যেন তোমার শরীরের একটা তিল পরিমাণ অংশও বাদ না থাকে। এবং সেটা আজ হবেই, তুমি বাধা দিলেও আজ আমি মানবো না, মানতে পারবো না।
তৃষা আতঙ্কিত! ভীষণ অসস্তি নিয়ে তৃষা বললো,– আকাশ কিছু জিনিস যতদিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে ততদিন ঐ জিনিসের প্রতি আরও আগ্রহ থাকে, আকর্ষণ বাড়ে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা একবার হাসিল করা হয়ে গেলে তখন আর অতটা আকর্ষণ থাকেনা। আমার প্রতি তোমার এই আকর্ষণটা থাকনা বিয়ে অব্দি। বিয়ের পরে আমার যাকিছু সবই তো তোমার। আমি জানি ভালোবাসার একটা অংশ শরীরও, কিন্তু এটা আপাতত বাদ থাক।
আকাশ তৃষার বুকের ওড়না টেনে সরিয়ে দু’হাতে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে তৃষার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,– আজ কোন কথা শুনতে চায়না মন, না কোনো বারণ। আজ তোমার শরীর টানছে আমায় খুব করে তৃষা।
কথা শেষে তৃষাকে আরও শক্ত করে বুকে চেপে ধরে আকাশ বললো,– আমার হার্টবিট অনুভব করার চেষ্টা করো তৃষা। সে শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় তোমায় খুব কাছে পাবার উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তোমার নরম বুকের স্পর্শ সেই উত্তেজনা আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আজ চাইলেও নিজেকে ফেরাতে পারবো না।
আকাশ দুই হাতে তৃষার মুখটা ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে পাজাকোলা করে তৃষাকে এনে বিছানায় শুইয়ে তৃষার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলোতে লাগলো। তৃষ্ণার হাতের আঙ্গুলে, গলায়, কপালে বিভিন্ন স্থানে চুমু খেতে খেতে আকাশ বললো,– তোমার এই গুপ্ত সৌন্দর্য আগে কেন চোখে পড়লো না তৃষা, অন্যরকম এক নেশা জড়িয়ে আছে তোমার শরীরে। আজ সব রহস্য আমি ভেদ করতে চাই।
তৃষার কোনরকম উত্তেজনা না হয়ে আরও অস্বস্তি হচ্ছে, আসিকের স্পর্শের সেই অনুভূতি আকাশের স্পর্শে মৃত। তৃষার বারবার আশিকের কথা মনে হচ্ছে। একই শরীর দুজনের স্পর্শ, এটা হতে পারেনা। নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হবে তৃষার আজীবন।
আকাশ তৃষার ওপর হামলে পড়তেই রুমের দরজা হাল্কা শব্দ করে খুলে গেল। আকাশ উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে আবার তৃষাকে স্পর্শ করতেই রুমের দরজা আবার খুলে গেল। ভীষণ রেগে গিয়ে আকাশ উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করার জন্য দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো আহি দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
আহি বললো,– কি আকাশ ভাইয়া, একা একা খেতে চাও তাই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছো!
আকাশ থতমত খেয়ে বললো,– ইয়ে মানে একা একা খেতে চাই মানে! কি বলছো আহি।
আহি ফিক করে হেসে ফেলে বললো,– কি আবার! খিচুড়ি।
আহির কথা শুনে তৃষা জলদি করে বুকের ওড়না টেনে বাইরে এসে বললো,– কিরে ঘুম ভাঙলো তোর, চল খিচুড়ি খেয়ে জলদি যেতে হবে, সন্ধ্যা হয়ে এলো।
তৃষা বসে আছে, আহি খিচুড়ি খেতে খেতে বললো,– আপু ঘটনা কি, দু’জন একরুমে, খিচুড়ির পরে আবার বিরিয়ানি খাবার বায়না ধরছিল নাকি আকাশ ভাইয়া?!
তৃষা বললো,– আহি একটা চড় মারবো পাকনা, জলদি খা।
আহি চোখে টিপ মেরে আবার বললো,– আপু দুইজনে চিপায় গিয়ে আবার চিপস খাবার পরিকল্পনা করিসনাই তো!
তৃষা হেসে ফেলে বললো,– তুই এত কথা পাস কই আহি, কে দেয় তোরে এসব কথাবার্তার ডেলিভারি?
আহি বললো,– আপু কচি করে কচি মনে কথা কথা আসে, ইহা আমার মতো কচিরাই বুঝবে, তুমি বুঝবা না।
আহির খাওয়া শেষে আকাশের বাসা থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলো তৃষা ও আহি।
রাতে তৃষা লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো, হঠাৎ পাসে কাউকে অনুভব করে বললো,– আশিক এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না, তোমার মনে নিশ্চয়ই বদ মতলব আছে, আর তোমাকে তো ফেরানোও যাবেনা, তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।
আশিক মিষ্টি হেসে বললো,– তৃষা তোমার মন ভালো নেই আজ, আকাশের ব্যবহারে ভীষণ চমকে গিয়েছো, এসব বিষয় নিয়ে হয়তো তোলপাড় তোমার মনে, তুমি ক্লান্ত। ভাবলাম তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারবে। এসব ভেবেই আসা। সবার আগে ভালোবাসার মানুষটার ভালোথাকাটা জরুরী, তারপর অন্য কিছু।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তৃষা।
এই দীর্ঘশ্বাসে জড়িয়ে আছে কত কথা তার হিসাব নেই, আশিকের সাথে শারীরিক মেলামেশা হবার পরে থেকে সব হিসাব বদলে গেছে তৃষার। একজনকে মন দিয়ে বসে আছে, অন্য একজনের সাথে শারীরিক মেলামেশা হয়ে গেল যেভাবে হোক। এবার আকাশ ও আশিককে নিয়ে মনের সাথে যুদ্ধ তৃষার সারাক্ষণ।
আশিক তৃষার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো, তৃষা ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে আশিক তৃষাদের বাসার ছাদে দাড়িয়ে আছে, পাশের বাসার ছাঁদ থেকে একটা ছেলে ডাক দিয়ে বললো,– এই যে হ্যালো, কচি করে আহিদের ছাদে উদয় হইলেন কোথা থেকে?
আশিক অবাক হয়ে বললো,– কেন! আপনার কোনো সমস্যা?
: সমস্যা মানে, মারাত্মক সমস্যা, এত সুন্দর চেহারা নিয়ে আপনার এই এলাকায় আসাটাই কচি করে একটা সমস্যা, মেয়েরা মহল্লার রোমিওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আপনার ওপর ক্রাশ খাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়ার সম্ভাবনা আছে।
: হা হা হা, তাই নাকি? কি নাম তোমার?
: কচি করে কিসলু নামের অধিকারী আমি।
: হা হা হা, কিন্তু কচি করে কেন?
পেছন থেকে আহি এসে উপস্থিত। আহিকে দেখে কিসলু বললো,– স্বাগতম ঝানেমন, এই ছাদে আমি, ঐ ছাদে তুমি, মাঝখানে কে ঐ নবাগত যুবক তোমার ছাদে, তোমার ছাদে অন্যকেউ দেখে এ হৃদয় কাঁদে।
আহি থতমত খেয়ে কিসলুকে বললো,– হইছে এবার থামেন।
কিসলু বললো,– থামবো মানে! কে ঐ সুদর্শন যুবক, কিবা পরিচয়! তুমি তার উপ্রে কেরাশ যদি খাও, মনে লাগে ভয়।
আহি দাঁত কটমট করে বললো,– কিসলু কানের উপ্রে একটা দিমু।
কিসলু চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,– ও আচ্ছা, তারপর?
: দুইডা অনুভব করবি।
: তারপর আহি?!
: তিন দিন কোমায় থাকবি।
: ওমাগো, তারপর!
: চার দিনের দিন কোমা থেকে ফিরে ভাবতে থাকবি বিগত তিন দিন কই ছিলি।
: বিষয়টি বেদনার আহি, তবুও- তারপর?
: তারপর পাঁচ দিনের দিন বিগত চারদিনে ঘটে যাওয়া সবকিছু ক্লিয়ার হবে তোর কাছে।
আহির কথা শুনে আশিক হেসে অস্থির।
কিসলু বললো,– আহি ঐ যুবকের থেকে বাড়িয়ে দূরত্ব, বুঝতে চেষ্টা করো কিসলুর গুরুত্ব। কিসলুর “লু” বাদ দিলে বাকি থাকে কিস, একটা রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার।
আহি বিরক্ত হয়ে বললো,– আবার শুরু হইলো, মনে চাইতাসে তোর দুই কানের পর্দায় চারটা নাপা এক্সট্রা মেরে অতিরিক্ত প্রেমের জ্বর কোয়ারান্টাইনে পাঠাই। পাশে লোকজন দেখে ওনার প্রেম একেবারে উতলে উঠছে।
“ হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা কচি করে তুমি কি বুঝবে আহি,” বলে কিসলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আহি ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– তার মানে, হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা তুই কেমনে বুঝস, নিশ্চই আগে কেউ তোর হৃদয় ভাঙছে, কার সাথে প্রেম করে ছ্যাঁকা খাইছিস সত্যি করে বল।
কিসলু ভ্যাবাচেকা খেয়ে আশিককে বললো,– এ ভাই আপনি একটু আহিকে বোঝান, হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা বিভিন্ন গল্প পড়েও জানা যায়, ছ্যাঁকা খাবার দরকার হয়না। হৃদয়ের হাহাকার প্রকাশ করতে গিয়ে এখন বাঁশ খাবার উপক্রম।
আশিক আহিকে বললো,– আহি কিসলুর কথা কিঞ্চিৎ সত্য, বিভিন্ন গল্পে লেখকরা হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা সুন্দর করে লিখে প্রকাশ করে থাকেন।
কিসলু আশিককে বললো,– এ ভাই, কিঞ্চিৎ সত্য বলে তো বাঁশ খাবার প্রবনতা ফিফটি পার্সেন্টে ঝুলিয়ে রাখলে। পুরোপুরি সত্য বলতে সমস্যা ছিল কি?!
আহি আশিককে বললো,– কিন্তু ভাইয়া কিসলু যেভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তাতে মনে হয় ইতিপূর্বে সে ছ্যাঁকা খাইছে।
পাশের ছাদ থেকে কিসলু চেচিয়ে বললো,– না না, বিশ্বাস করো আহি, কিসলুর ছুড়ে মারা তোমার প্রতি ফ্লাইং কিস এর কসম, কিসলু একদম পিওর, তুমি থাকতে পারো শিওর। কচি করে তুমিই আমার একমাত্র ভালোবাসা ঝানু, এ জীবন তোমাকে দিলাম, আয়লাভিউ।
কিসলু ও আহির কথাবার্তা শুনে আশিক হেসেই অস্থির।
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ার মতো কিছু ছুটে এসে আহিদের ছাদে থেমে গেল। আশিক ভীষণ অবাক হয়ে কাউকে বললো,– নুরা, তুমি এখানে?
আহি এবং কিসলু অবাক, তারা তিনজন ছাড়া কেউ তো নেই আশেপাশে, তাহলে আশিক কার সাথে কথা বলছে?…
চলবে…
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।