অদ্ভুত প্রেমানুভুতি,part:5
Suraiya
❤
সাদাফ আরুশিকে কোলে করে নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তখনই আসাদের মা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন ৷
আরুশিকে এভাবে সাদাফ এর কোলে কেউ আশা করেনি তবে ওর যে জ্ঞান নেই সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছে তাই সাদাফ এর ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আরুশিকে নিয়ে সকলে ব্যস্ত হয়ে গেল…
সাদাফ আরূশিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তখন আসাদের মা সাদাফকে বলে উঠলো তুমি ওকে কোথায় পেলে বাবা?
আসলে ও এতক্ষণ আমার সঙ্গে ছিল, আমরা কফি সপে ছিলাম সেখানে বেশ অনেকক্ষণ ধরে মাথা নীচু করে ছিল , বলল কোমরে প্রচন্ড ব্যথা আর আজকেও নাকি আরেকবার পড়ে গেছে( আসাদের দিকে তাকিয়ে) তাই ব্যথাটা আরো বেড়েছে,সেরকমই কিছু বলল আমাকে, তারপরে বাড়ি আসার সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল তাই আমি ওকে সরাসরি বাড়িতে না এনে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম ৷ doctor আঙ্কেল কিছু ওষুধ দিয়েছেন সেগুলো গাড়িতে রয়েছে আপনারা কেউ একটু প্লিজ ওগুলো আনবেন! আর ওকে এক্ষুনি শোয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ৷ ওর বেডরুমে টা কোথায় একটু বলে দেবেন?
আসাদের মা : চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি, মেয়েটার শরীর খারাপ তাও মেয়েটা আমাদের কে বলল না ৷
আন্টি ও খুব চাপা স্বভাবের, ওর প্রবলেম গুলো কাউকে বলে না আপনি একটু ওর দিকে ভালো করে যত্ন রাখবেন , আমার মনে হয় না এই বাড়িতেওর খেয়াল রাখার মতো আপনি ছাড়া আর কেউ আছে আসাদ কে উদ্দেশ্য করে ৷ কারণ সবাই কষ্ট দিতে ব্যস্ত…..
আসাদের মা হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন তবুও একটা বাইরের লোকের সামনে পারিবারিক সমস্যা গুলোকে উনি তুলে ধরতে চাইছেন না তাই আর কথা না বাড়িয়ে আরুশিকে আসাদের ঘরে নিয়ে গেল…
আসাদ একটিবারের জন্যও বলল না যে ও আরুশিকে নিয়ে যাবে…
আরুশি কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর সমস্ত ওষুধগুলো আসাদের মায়ের হাতে ধরিয়ে দিল সাদাফ৷
আন্টি আপনি প্লিজ আর খেয়াল রাখবেন কোনরকম অবহেলা করবেন না ৷ ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা পায়নি তাই ও আপনাকেই নিজের মায়ের মত দেখে…
আসাদের মা চোখের জল মুছে: তুমি চিন্তা করো না বাবা আর তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই রকম কঠিন সময় পাশে থাকার জন্য….
তখনই রুমের মধ্যে আসাদ ঢুকলো ৷
আসাদকে এক পলক দেখে নিয়ে সাদাফ আসাদের মাকে বলল : আন্টি আমি তাহলে আজকে আসি আবার অন্য দিন দেখা হবে ৷
ঠিক আছে বাবা ৷
সাদাফ চলে যেতে আসাদের মা আসাদকে বলতে শুরু করল….
দেখ আজকে তোর জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা ৷তুই ওকে ফেলে দিয়েছিস না হলে ওর কোমরের ব্যথা টা যেখানে প্রায় ঠিকই হয়ে যাচ্ছিল কি করে আবার সেই ব্যথা বেড়ে যায়? আর কেমন স্বামী তুই যে নিজের বউয়ের খেয়াল রাখতে পারিস না , একটা অন্য পরপুরুষ তোর বেডরুমে ঢুকে যায় ৷ তুই কি পারতিস না ওকে নিয়ে আসতে ঘরে…
আমি মানছি তোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে তা বলে এতটা অমানবিক হয়ে যাবি সেটা আমি কখনোই ভাবিনি’ ৷ বলে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
অসাদ আঙুল গুলো মুঠিবদ্ধ করে নিলো ৷ এই মুহূর্তে আরূশির ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কারণ ও যদি অফিসে আসাদের কোলে না উঠত তাহলে আসাদ ওকে ফেলে দিত না, আর ওর মায়ের থেকে এত কথা শুনতে হতো ,আর না সাদাফ তার বেড রুমে প্রবেশ করতে পারত…
আসাদ এবার আরশির কাছে গেলে গিয়ে ঘুমন্ত আরুশিকে ঝাকিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলে দিল৷
আরুশি ভাঙ্গা কন্ঠে :আপনি কিছু বলবেন?
আসাদ আরশির দুই বাহূ চেপে ধরে: সব তোমার জন্য হয়েছে ৷ না তুমি আমার কোলে বসতে না আমি তোমাকে ফেলে দিতাম না তোমার জ্বর হত না আমাকে এত কথা শুনতে হতো….
আরূশির চোখের কোনে জল জমে এল, ও বলতে লাগল : আপনার মা আপনাকে বকেছে বলে আপনি আমাকে এত কথা শুনেছেন?
আসাদের বুকের ভিতর ধক করে উঠল কথাটা শুনে কারণ ওর আম্মু ওকে বকেছে সেটার জন্য ওর খারাপ লাগেনি, ওর খারাপ লাগলো যে অন্য একজন ওর বেডরুমে এসে নিজেকে মহান প্রমাণিত করে চলে গেল…
আমার বোঝা উচিত ছিল যে সকল মেয়েদের চরিত্র ভালো হয়না ঠিক তোমার মত ৷ এখন না জানে ওই ছেলেটার সাথে আর কি কি করেছে!
কিন্তু ততক্ষণে আরুশি আবার জ্ঞান হারিয়েছে ৷ আসাদের মুখ থেকে তার চরিত্রের খারাপ তকমা হয়তো তাকে শুনতে হলো না এই যাত্রায় বেঁচে গেল ৷ যদি ওর চরিত্র নিয়ে এমন খারাপ কথা কখনো শুনতে তাহলে হয়তো কখনো আসাদের সঙ্গে থাকত না কারণ মেয়েদের চরিত্রটা তার নিজের কাছে অনেক সম্মানের…..
আরুশির মুখটা অনেকটা মায়াবী লাগছে না চাইতেও আসাদ আরশির কপালে হাত দিয়ে দেখল যে জ্বর আছে কিনা ৷
গা টা এখনো গরম তারমানে জ্বর ছাড়ে নি তাই আসাদ দেরি না করে ওর মাথায় জলপট্টি দিতে শুরু করলো….
❤
রাত বারোটা ,,,,,
আরশির দেখভাল করার জন্য আসাদ আরুশির পাশেই ঘুমিয়েছে যদি ওর কোন দরকার পড়ে কিন্তু হঠাৎ ওর বুকের উপর বেশ ভার ভার অনুভব করল কিন্তু তার উৎস কি তা দেখার জন্য যখন চোখ খুলে দেখল তখন দেখল আরুশি তার বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে ৷
আরুশির জ্বর বলে আসাদ আর কিছু বলল না তাই আরূশি কে আবার নিজের জায়গায় শুইয়ে দিল৷
আরোশী ঘুমঘুম কন্ঠ বলে উঠল : আমাকে আপনি সরিয়ে দিলেন কেন সামী ? আপনি আমাকে একটু ভালোবাসে না কেন?
এই মেয়ে তুমি জেগে আছো এখনো? আর তোমার জন্য আমার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে, এখন বলছ তোমাকে আমি কেন ভালোবাসি না! মজা হচ্ছে এত রাতে৷
আরুশি এবার উঠে পড়ল, উঠে আসাদের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলতে লাগলো: আপনি আমাকে কেন ভালোবাসেন না বলুন ৷ আমি কি এতটাই খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায় না…
জামার কলার ছড়, আর এত রাত্রে আমি কোন সিন ক্রিয়েট করতে চাই না ঘুমিয়ে পড়ো…
কেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, আমাকে জানতেই হবে আপনি বলুন ৷
দেখো ভালই ভালই বলছি ঘুমিয়ে পড়ো না হলে কিন্তু ভালো হবে না ৷
আসাদ দেখল যে আরুশির গায়ে হালকা হালকা জ্বর আছে অর্থাৎ আরোশী যে জ্বরের ঘোরে এ সমস্ত বলছে তাও বেশ বুঝতে পারল তাই আর রাগ করলোনা, ও নিজেও সমস্যাটা আরুশি কে বলে দিতে চায় তাহলে ওর আর অনুশোচনা হবে না ৷ এটা মনে হবে না যে আরুশিকে জানায়নি ও সমস্ত কিছু….
আসাদ আর কিছু না বলে আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল সেখানে থাকা মাদুর পেতে রেলিঙে হেলান দিয়ে আরুশিকে পাশে নিয়ে বলতে লাগলো…
আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আমি একজনকে খুব ভালবাসতাম তার নাম হলো রুশা ৷ কিন্তু রুশা আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি, সবসময় আমার সঙ্গে ভালোবাসার নাটক করেছে ,প্রতারণা করেছে আমার সঙ্গে ৷
সবে আমি কলেজ শেষ করে অফিসে জয়েন করেছি হঠাৎ একদিন অফিসে জব এর জন্য আসল রূশা , তারপরের দিন যত যায় শুরু হতে লাগল আমার ওর প্রতি ভালো লাগা তারপর তা ভালবাসায় পরিনত হয়, মনের কথা জানায় ওকে ৷ হঠাৎ একদিন আমাদের বিয়ের কথা জানায় রূশা, আর আমি যেহেতু ওকে ভালবাসতাম তাই আমার তাতে কোন সমস্যা ছিল না আমিও রাজি হয়ে যায় ৷ কিন্তু বিয়ের দিন আমার বাড়ি থেকে যত গয়না ওকে পাঠানো হয়েছিল তার সঙ্গে যা সমস্ত কিছু জিনিস সব নিয়ে ও ওর আমেরিকায় থাকা বয়ফ্রেন্ডের কাছে পালিয়ে যায়৷ তারপর থেকে শুরু হয় আমার এই পরিবর্তন, কোন কিছুতেই আমার মন নেই ৷ ভালোবাসা জিনিসটাকে ঘৃণা করি , আজও আমি ওকেই ভালোবাসি আর সারা জীবন বেঁসে যাব ৷
❤
সকালবেলা,,,,
আরুশিরর এখন আর জ্বর নেই ৷ তাই আজকে অফিসে যেতে সমস্যা নেই….
আসাদের ঘুম ভাঙতেই দেখল আরুশি হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ওর চুলগুলো শুকাচ্ছে, সবে গোসল করে এলো আরুশি ৷
এই হেয়ার ড্রায়ার জিনিসটা বড্ড বিচ্ছিরি লাগে আসাদের ৷ও মনে করে এতে গোসল করার পরে যে সৌন্দর্যটা থাকে মেয়েদের তা নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাই না পেরে আরুশিকে বলল :
কখনো আর হাতে হেয়ার ড্রায়ার দেখলে আমি এটা ফেলে দিয়ে আসব বলে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল…
আসাদের কথা শুনে আরুশি মুচকি মুচকি হাসতে লাগল….
❤
অফিসে এসেছে দুজনে , আজকে ওদের একটা বড় ডিল সাইন করার আছে….
কোম্পানির মালিকদের সামনে বসে আছে আরুশি আর আসাদ ৷ তবে আজকে কোন শাড়িতে নয় ফর্মাল গেটাপে নিজেকে রেডি করেছে আরোশী ৷কোনভাবেই কেউ থেকে যেন চোখ সরাতে পারছে না এমন……
আসাদ: I wait to invest 400 crore.
আরুশি:But i want to invest 600 crore.
আসাদ: I think it is too high.
আরুশি ততক্ষণে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দিয়েছে শুধু আসাদ এর সাইন করা বাকি ৷
আসাদ দেখল আরোশী কন্ট্রাক্টে সাইন করে দিয়েছে, তাই রেগে গিয়ে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে আরুশির কাণে কানে বলল: তুমি আমাকে না বলে সিগনেচার করলে কেন?
আরোশী :বেশি কথা না বাড়িয়ে সাইন করুন৷
আসাদ : আমি এটা ক্যানসেল করতে চাই৷
আরুশি: তা এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তাই বেশি আর কথা না বাড়িয়ে নিন সাইন করুন না হলে কাজটা আপনার জন্য ভালো হবে না ৷
আসাদের এই মুহূর্তে আরুশের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তবুও আরুশির কথা শুনে ও সাইন করে দিল ৷
সকলে চলে যেতেই আরুশিকে ঝেঁকেমেকে ধরলো আশাদ ৷
তুমি আমাকে না বলে কি করে সাইন করে দিলে ৷
শুনুন মিস্টার আসাদ , আই থিঙ্ক বিজনেসটা আমি আপনার থেকে বেশ ভালোই বুঝি তাই ট্রাস্ট মি কোন লোকসান হবে না, আর যদি হয় তো তার দায়ভার আমার , আই উইল পে ফর দ্যাট ,ডোন্ট ওয়ারী ৷
আসাদ: আচ্ছা দেখা যাক, যদি কোম্পানির কোন ক্ষতি হয় তো তুমি শেষ আরুশি রহমান ৷ তোমাকে আমি ছাড়বো না…..
চলবে,,,,