অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,part:1
suraiya Aayat
?
আজ আমার বিয়ে হল আর এখন বাসর ঘরে বসে আছি , তবে যার সঙ্গে বিয়েটা হচ্ছে সে আমার শত্রু পক্ষ ৷ শত্রু পক্ষের সঙ্গে কিভাবে জমিয়ে বাসরটা সারা যায় সেই কথাই ভাবছি এতক্ষণ ধরে ৷ মনে মনে হাজারো ফন্দি এঁটেছি যে তাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়…..
সবাই বলে বাসররাতে নাকি মেয়েরা একহাত ঘোমটা টেনে লজ্জা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে তাই আমাকেও সবাই তেমনি ভাবে বসিয়ে রেখে গেছে আর আমিও চুপচাপ তেমনটা ভাবেই বসে রয়েছি , খুবই ভদ্র ভাবে, দেখে কেউ কখনো বলবেনা যে কি করে মানুষটাকে শায়েস্তা করা যায় এতক্ষণ ধরে সেই শয়তানি বুদ্ধি গুলো মনে মনে আটছি….
যার সঙ্গে আমার বিয়ে হল তার নাম হলো আসাদ সাঈদ ৷ ঢাকার টপ বিজনেসম্যান আর তার সঙ্গে নানান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে তিনি যুক্ত, আর আমাকেই বা কম ভাবছেন কেন ? আমি হলাম আরুশি রহমান ওনার কম্পিটিটর বিজনেস এ….
তবে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কেন বিয়ে করেছি সেই কাহিনী টা পরে বোলবো ৷ এখন আসি বাসর রাতে….
সকলের মতো আমিও একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছি আর তখনই ঘরে প্রবেশ করলেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বামী ৷
অন্যান্য মেয়ে হলে তাদের মনে হয়তো এতক্ষণে একরাশ ভয় তৈরি হতো যে এরপর কিভাবে কি কিন্তু আমার মনে এখন লাড্ডু ফুটছে তার কারণ উনার লাইফটা যদি আমি তেজপাতা না করে দিয়েছি তো আমার নাম ও আরুশি নয়….
আরূশিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে আসাদ একটা শয়তানি হাসি দিল যার অর্থ হলো ওর হাত থেকে আজকে আরুশিকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা….
আসাদ ধীরে ধীরে আরূশির কাছে গেল , আরুশির কাছে যেতেই আরুশী বিছানা থেকে নেমে আসাদের পায়ে সালাম করল….
আসাদ আরুশিকে ধরে তুলল,তুলে আরুশির কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল….
অসাদ: আজ তুমি শেষ আরুশি রহমান৷ আসাদ সাঈদের বউ হয়ে কেমন লাগছে এখন? ওয়েলকাম টু দা ডেভিল কিংডম ৷
আসাদ ভেবেছিল আরুশি হয়তো তেজ দেখিয়ে এক্ষুনি ওকে ধাক্কা মারবে, কিন্তু আসাদকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে আরুশি আসাদের বুকে মাথা রাখল রেখে দাঁত বের করে হাসছে আরুশি ৷
আরূশির কাজকর্মে আসাদ তো অবাক এর চূড়ান্ত পর্যায়ে, তার কারণ এতদিন ধরে আরুশির সাথে ওর যতবার ঝামেলা হয়েছে ততবার দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে আর সেখানে নিজের শত্রুকে বিয়ে করে বাসর রাতে এভাবে জড়িয়ে ধরবে আসাদ সেটা ভাবেনি…
আসাদ এসমস্ত ভাবছে হঠাৎই ওর মনে হলো ওর দমটা যেন আটকে আসছে তার কারণ আরুশি শক্ত করে আসাদকে জড়িয়ে ধরেছে , আর এতটাই জোরে যে আসাদের দমবন্ধ হয়ে আসছে আর আসাটাই স্বাভাবিক….
আসাদ আরুশিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে…
আসাদ: এই মেয়ে ছাড়ো, কি করছো কি?
আরুশি আসাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল: এরকম বলবেন না স্বামী আমার লজ্জা লাগে, আর আপনিও যখন আমাকে জড়িয়ে ধরলেন তার বেলা!
আসাদ যেন এবার আকাশ থেকে পড়ল কারণ ও যে আরুশিকে চেনে সেই আরুশির থেকেই এই আরুশি স সম্পূর্ণ আলাদা ,যার মধ্যে নেই কোনো তেজ নেই , নেই কোন জেদ , কেমন একটা বাচ্চা মনোভাব রয়েছে ওর মধ্যে ৷ কিন্তু আরূশির এই রূপটা আসাদ দেখতে চায় না ৷ তাই আরুশিকে আসাদ ধাক্কা মারলো….
আসাদ: বের হয়ে যাও আমার রুম থেকে৷
আরুশি :এই কে থাকতে চাই আপনার সাথে? আমি আমি কেন আমার আত্তাও থাকবেনা আপনার সাথে….
আসাদ এবার শয়তানি হাসি দিয়ে বলল : এইতো চলে এলে নিজের আসল রূপে ৷ আসলে কি বলতো সমান সমান না হলে ঠিক যুদ্ধ টা জমে না…
আরুশি সঙ্গে সঙ্গে আসাদ এর কাছে গিয়ে আসাদের ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিল…
আসাদের চোখগুলো যেন বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা কারণ আরুশির হঠাৎ করে আবার নিজের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করে নেবে সেটা আসাদ ভাবেনি….
আসাদ যেন অন্যরকম একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে যেখান থেকে ওকে বার করে আনাটা খুবই কঠিন….
আসাদ সবকিছু ভুলে গিয়ে আরুশিকে কোলে তুলে নিল,নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল…
আরুশির এবার জান যায় যায় অবস্থা কারণ ও ঠিক করেছিল আসাদকে জালিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে কিন্তু এখন যে আসাদ সত্যি সত্যিই বাসর করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ৷
আরুশি ভাবছে এটা কি আসাদের নতুন কোন চাল নাকি অন্যকিছু কিছুই বুঝতে পারছে না তবে যতক্ষণ কিছু বুঝে উঠল ততক্ষণে আসাদ ওকে নিয়ে ডুবে গেছে ভালোবাসার সাগরে….
সকালবেলা আরূশির ঘুম ভাঙতেই ও নিজেকে আসাদের রুমে আবিষ্কার করল , তার পর মনে পড়ল যে কালকে কি কি হয়েছে….
এই মুহূর্তে আসাদকে সামনে পেলে হয়ত আরূশী ওকে খুন করে দিত এই রকম অবস্থা….
পরমুহূর্তে আরুশি শুনতে পেল বাথরুম থেকে গুনগুন করে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে ৷ ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসাদ শাওয়ার নিচ্ছে৷
আরুশি যেই আসাদকে গণধোলাই দেওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামতে যাবে তখন নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল তার কারণ গায়ে কোনো পোশাক নেই কেবলমাত্র ব্ল্যাঙ্কেট টা কোন রকম ভাবে জড়ানো….
আরুশি সেখান থেকে না পারছে উঠতে আয না পারছে কিছু করতে ৷ তারপরে অনেকটা সাহস নিয়ে যেই লাগেজের দিকে এগোতে লাগলো জামা কাপড় নেওয়ার জন্য তখনই আসাদ বেরিয়ে আসল শাওয়ার নিয়ে…
আসাদ বেরিয়ে এসে এমন একটা ভাব করলো যেন ও কিছুই জানে না আর কিছুই হয়নি….
আরুশি ভেবেই নিয়েছে আসাদকে শায়েস্তা করতে হলে একমাত্র বাড়িতেই ওর সুযোগ তাছাড়া ওর নিজের রূপটাও তো তার আসাদকে দেখাতে হবে যে আরুশি কোনো রকম কোনো চেঞ্জ হয়নি ৷ না হলে আরুশিকে আসাদকে দুর্বল ভেবে ওকে সহজে হারানোর চেষ্টা করবে আর সেটা আরূশি কখনোই হতে দেবে না…
আরূশি এবার সুরেলা কন্ঠে বলে উঠলো : স্বামীর আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?
আরুশির এরকম সুরেলা কন্ঠে শুনে আসাদ আরুশির দিকে আড়চোখে দেখে বলল :আমাকে কিছু বললেন মিস আরুশি রহমান ৷
আরুশি: আপনি ছাড়া কি এখানে আর কে আছে স্বামী?
বারবার আরুশির বলার স্বামী স্বামী ওয়ার্ডটা আসাদকে যেন কাঁটার মতো বিঁধছে তাই রেগে গিয়ে আরূশির কাছে গেল গিয়ে বলল :কি বারবার স্বামী স্বামী বলছ ? আর আমি তোমার স্বামী না ওকে ৷আমি তোমার শত্রু আর কিছুই না….
আরুশি : তাহলে কালকে রাত্রে আপনি ওই কাজ গুলো করলেন কোন অধিকারে?
আরুশির কথায় আসাদ ভরকে গেল….
আরুশি : তাহলে আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি আমার স্বামীর না তাইতো?
আসাদ : না আমি তোমার স্বামী না ৷
আরূশি : আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমি নিচে গিয়ে সবাইকে বলে দেব…
আসাদ চোখ বাঁকা করে আরুশিকে বলল: কি বলবে?
আরশি : এটাই বলব যে আপনি আমার স্বামী না হওয়ার শর্ত আপনি আমার সাথে খারাপ কাজ করেছেন ৷ বলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরূমে চলে গেল ৷
আসাদ জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো : এই মেয়ে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি যে তুমি সবাইকে এরকম বলবে…
আরূশি : আপনার কিছু করার সময় মনে ছিল না! বলে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল….
?
আরুশি শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো আর আসাদ তখন সবে পারফিউমটা দিচ্ছিল….
হঠাৎ ওর চোখ পরল আরূশির দিকে, দেখেই চমকে উঠল তার কারণ এতদিনে ও আরুশিকে কেবল শার্টে, জিন্সে, স্কার্ট এসব পরতে দেখেছে ৷ আরুশিকে শাড়ি পরা অবস্থায় কোনদিন ও দেখেনি তাই আরূশিকে দেখে যেন আসাদ চোখ ফেরাতে পারছেনা ৷ আরুশি নিত্যান্তই সুন্দরী তবে শাড়িতে আরো বেশী রূপের প্রকাশ পেয়েছে….
আরুশী এবার গলা খাঁকরে বলতে লাগলো :কি চোখ ফেরাতে পারছেন না বুঝী স্বামী ?আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে…
আসাদ এ বার আরুশির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷
আসাদ :স্টুপিড কোথাকার, বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল….
আরূশিতো হেসে হেসে শেষ কারণ আসাদের রাগি ফেসটা ওকে দারুণভাবে সুট করে…
আরুশী ঘরের মধ্যে বসে আছে কারণ যতক্ষণ না ওকে কেউ ডাকছে ততক্ষণ ও নিচে নামতে পারছে না৷ নতুন বউ বলে কথা, তবে ওর অপেক্ষা ভাঙিয়ে একটা মেয়ে এলো ঘরের মধ্যে…
তোহা : ভাবি চলো সবাই তোমাকে ডাকছে নিচে খেতে ৷ আর আমার আহাম্মক ভাইটাকে দেখেছ তো কেমন, তোমাকে না নিয়ে চলে গেল….
তোহার কথা শুনে আরুশি বেশ ভালই বুঝতে পারল যে ওটা হল আসাদের বোন….
আরূশী মুচকি হেসে তোহাকে বললো : তাহলে তুমিই কি আমার সেই ননদিনী?
তোহা :হ্যাঁ (হেসে)৷
আরুশি : আচ্ছা চলো তারপরে দুজনে জমিয়ে গল্প করবো ওকে….
তোহা আরুশিকে জড়িয়ে ধরে : ওকে ভাবি ৷
এরপর ওরা চলে গেল ব্রেকফাস্ট করতে…
চলবে,,,,