অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,part:8
Suraiya Aayat
এমনিতেই ক’দিন ধরে আরূশির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তার ওপরে আসাদ বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে গেছে ৷ এখন হেলপ্লেস আরুশি ৷ আসাদ যা করেছে তার আগে নিশ্চয়ই ভালোভাবে ব্যবস্থা করেছে যাতে আরুশি সেখান থেকে বের না হতে পারে সে ধারণাটুকু ওর মাথায় চলে এসেছে ৷ অনেকক্ষণ ধরে মনের ভিতর রাগটা চেপে ধরল ওর আসাদের প্রতি কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? একঘন্টা! দুঘন্টা!
সময় কেটেই চলেছে তবে ওর কেউ খোঁজ নিতে আসছে না আর না দরজাটা খুলছে….
ভিজে জামা কাপড় পরে থাকায় জলটা আস্তে আস্তে ওর শরীরটা সম্পূর্ণরূপে শুষে নিয়েছে, শরীরের তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে কমছে , নিজেকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে ওর ৷ ওয়াশ রুমের ফ্লোরে বসে রয়েছে ও, মাথার চুলগুলোও ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে , গলাটাও বেশ ধরে আসছে , খিদেও পেয়েছে খুব ৷
হঠাৎ করে কানে ফোনের রিংটোনের টুংটাং আওয়াজ ভেসে আসতেই আরোশী এবার নড়েচড়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি করে যেই ফোন টা আনার জন্য উঠতে গেল তখনই মনে পড়লো যে দরজাটা বাইরে থেকে লক করা , এতটাও শক্তিশালী ও নয় যে দরজাটা চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দেবে ৷
ফোনটা বাজতে বাজতে কিছুক্ষণ পর আবার থেমে গেল ,তারপর আবার ফোনটা বেজে উঠলো ৷
চেয়েও পারছে না ফোনটা আনতে , আসাদের ওপর এই মুহূর্তে প্রচন্ডরকম রাগ হচ্ছে ওর , এবার না পেরে কেদেই ফেলল আরুশি ৷ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আওয়াজটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ৷
__”আমাকে ভালোবাসে না সেটা ঠিক আছে তবে এভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এভাবে আটকে রাখা টা একদমই ঠিক না ৷”
আরুশি কেঁদেই চলেছে ,আর একটা সময়ে ও জ্ঞান হারালো ৷
কত সময় যে ও ওয়াশরুমে পড়ে ছিল তা ওর মনে নেই ৷
তারপর যখন আরুশির জ্ঞান ফিরে এলো তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই হুড়মুড় করে উঠে পড়ল ৷ ওতো এখানে ছিল না তাহলে কি করে সব কি হলো ? এদিক ওদিক তাকিয়ে আসাদ কে চোখে পড়ল ওর ৷ আসাদকে দেখতেই পুরনো সব কথা মনে পড়ে গেল ,আজ আসাদ ওকে আটকে না রাখলে হয়তো এমনটা হতো না……
চোখ থেকে আপনা আপনিই নোনা জল গুলো গড়িয়ে পড়ল অজান্তেই, হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে ও ৷ শাস্তিটা অন্যভাবেও দেয়া যেত , এভাবে নয়….
সামান্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠতেই সেখানে আর এক মুহুর্ত দাড়ালোনা আরুশি, তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে দৌড়ে চলে গেল ছাদে…
চারিদিক অন্ধকার , শীতের আগমনে বেশ কুয়াশাও জমেছে চারিদিকে,ঠান্ডায় সারা শরীরের লোম শিউরে উঠেছে, আকাশে আজকে কোন তারা নেই যে তাদের উজ্জ্বলতায় আরু নিজেকে দেখতে পাবে ৷ তাহলে এটাই কি ওর কান্না করার মত পরিবেশ ? এখানেই কি মন খুলে কাঁদতে পারবে , সমস্ত দুঃখ জানাতে পারবে এই মধ্যরাতকে…?
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে বসেই হাউমাউ করে কাঁদছে ও ৷ কি কারণে এখনো ও আসাদের কাছে পড়ে আছে যেখানে সাদাফ ওর জন্য পাগল প্রায় ,সাদাফ কোনদিনও মুখে প্রকাশ না করলেও বারবার ওর কাজকর্মে বুঝিয়ে দেয় আরূকে….
আসাদের প্রতি ওর কোন অনুভূতি আছে না নেই সেটাও নিজেও কখনো বুঝতে পারে না আরূশি , হয়তোবা নেই এই বলে নিজেকে বারবার সান্তনা দেয় এভাবেই ৷
মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ওর শরীর ছুঁয়ে যেতেই বারবার কেঁপে উঠছে আরুশি…..
|
|
|
রকিং চেয়ারে বসে দুলছে সাদাফ, চোখের ঘুমটাও আজ উড়ে গেছে প্রিয় মানুষের চিন্তায় ৷ সেই সন্ধ্যে বেলা থেকে আরুশিকে ফোন করার চেষ্টা করছে ও , প্রথমবার ফোনটা গেলেও দ্বিতীয়বার থেকে বারবার বিজি বলছে, এরকম তো কখনো হওয়ার কথা নয় ৷ হুট করেআরুশির শ্বশুরবাড়িতেও যাওয়া যায় না তাই বাড়িতে বসেই আরূশির কলের অপেক্ষা করছে ও ৷
হাতে থাকা ফোনটা অন করে অন্য একটা নাম্বার থেকে আরুশিকে মেসেজ পাঠাতেই মুহূর্তের মধ্যে তা পৌঁছে গেল তবে বিপরীতে থাকা মানুষটার কাছেই মেসেজটা পৌঁছেছে কি সেটা সাদাফের কাছে অজানা ৷
ঘড়ির কাঁটা দুটোর ঘরে,থেকে থেকে টং টং করে দুইবার বেল বাজতেই আসাদের ঘুমটা ভেঙে গেল , ঘুমটা ভেঙে যেতেই বিছানার দিকে নজর গেল ওর ৷ আরুশিকে কোথাও দেখতে পেল না ৷ আসাদের হঠাৎ মনে পড়ল যে আরূশির প্রচন্ড জ্বর ছিল, জ্বর অবস্থায় মেয়েটা কোথায় গেছে সেটা আসাদ জানেনা , এতক্ষণ ধরে আরু ঘুমাচ্ছিল বলে ওউ চোখের পাতা দুটো একটু এক করেছিল , তবে এখন ওকে দেখতে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ওকে খোঁজার জন্য ৷
বাড়ির প্রত্যেকটা গেস্টরুমে খুঁজেছে সেখানে পায়নি , তারপরে মাথায় আসলো হয়তো বাড়ি থেকে চলে গেছে , তবুও এত রাত্রে হয়তো যাবে না কথাটা মাথায় আসতেই গুরুত্ব দেয়নি আসাদ কথাটার তাই তাড়াতাড়ি করে বাড়ির গেটের কাছে গেল, সেখানে গিয়ে দেখল দারোয়ান বসে বসে ঝিমোচ্ছে ৷ তার কাছে খোঁজ নিলে উনি জানালেন যে উনি আরুশিকে আজকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেননি, তবুও যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না আসাদের ৷
বাড়ির ভিতরে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ছাদে যাওয়ার সিঁড়িটার দরজা খোলা দেখে আসাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে হয়তো ছাদেই আছে আরুশি , তাই আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ছাদে গিয়ে দেখল ছাদের মাঝখানে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর মাঝে মাঝে শিউরে উঠে আরুশি ৷
আরুশিকে এখন এই অবস্থায় এখানে দেখে মেজাজটাই ওর এখন গরম হয়ে গেল, তারপর নিজেকে কোনরকম সংযত করে নিয়ে ওর কাছে গেল ৷
__”কি করছো তুমি এখানে এত রাতে?”
আসাদের গলার আওয়াজ পেয়ে আরুশি সামনে তাকিয়ে দেখল আসাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে,,,,
তাড়াতাড়ি করে উঠে পিছনদিকে ঘুরে সিড়ি দিয়ে নিচের দিকে যেতে গেলেই আসাদ ওর হাতটা ধরে নিল ৷
দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,
__” আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি তোমায়, এত রাতে তুমি এখানে কি করছ?”
আরুষি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তবে আসাদ খুব শক্ত করে হাতটা ধরে থাকার জন্য ছাড়াতে পারছে না, উল্টে ওর হাতে আরো আঘাত লাগছে বেশি ৷
__”সবকিছু কি এখন থেকে আপনাকে বলে করতে হবে?”
__”আমি যদি চাই তাহলে হবে ,আমাকেই বলে করতে হবে সব ৷”
আরুশি ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল,,,,,
__” কোন প্রয়োজন নেই….আমি মনে করি আপনার সাথে আমার কোন দরকার থাকতে পারে না তাই যেচে অধিকার ফলাতে আসবেন না , আর আমার এরকম সুসম্পর্ক আপনার সাথে নেই ৷”
বলে চলে যেতে গেলেই আসাদ ওর হাত ধরে ওর কাছে টেনে নিল আরুশিকে ৷ আরুশি এখন আসাদের সাথে মিশে গেছে প্রায়…..
আশাদ ধীর কন্ঠে বলল ,,,,,,,
__”তুমি এখন অসুস্থ জ্বরের ঘোরে অনেক কিছুই বলছ , তা ছাড়া অন্য সময় তুমি নিজে অধিকার ফলাও আর সামান্য কিছু সময়ের জন্য আমি অধিকার ফলালেই দোষ !”
” সামান্য সময় “কথাটা শুনতেই আরো মেজাজটা গরম হয়ে গেল, রেগে গিয়ে আসাদের গলায় জোরে একটা কামড় বসালো আরুশি ৷
আরোশী কামড়ে দিয়েও আসাদের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না, উল্টে আসাদ আগের থেকেও আরো শক্ত করে ধরে রেখেছে ওকে ৷
__”যতই তুমি কামড়ে দাও, আর রক্তারক্তি করো আমি ছাড়ছি না ৷”
বলেই আসাদ আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷
আরুশি তো অবাক , এরপর আবার আসাদের থেকে এরকম ব্যবহার পেয়ে ওর ভাবনা বেড়ে গেল ৷ তাহলে এর পিছনেও নতুন করে কি আবার উদ্দেশ্য আছে কোন?
আরুশিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আসাদ টেবিলের উপর থেকে খাবারটা নিয়ে আসলো….
হঠাৎ দেখল আরুশির ফোনটা জ্বলে উঠলো , ফোনে মেসেজ এসেছে ৷ আরুশি ফোনটা হাতে ধরতেই আসাদ ফট করে ফোনটা কেড়ে নিল নিয়ে ওর পকেটে রেখে দিল ৷
__”এটা কোন ধরণের অভদ্রতামি, আমার ফোনটা নিলেন কেন?”
__”অনেক কাজ বাকি আছে তারপরে ফোন দেব ,আগে কাজগুলো সেরে নিই ৷ খাবারটা খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি ৷”
__”আমি খাব না আপনি আমার ফোনটা দিন ৷”
__”না খেলে আমিও ফোনটা দেবনা , আর তুমি তো জানো আমি যা বলি তাই করি ৷”
আরোশী চুপচাপ বসে আছে দেখে আসাদ বলল,,,
__”খাবার টা কি আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে নাকি আপনি নিজে খাবেন?”
আরুশি আসাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করে দিল….
আরুশির খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আসাদ ওকে ঘুমাতে বললেই আরুশি বললো,,,,
__”আমার ফোনটা দিন, আমার কল করার আছে ৷”
__”এত রাত্রে তুমি আবার কাকে কল করবে?”
__”আমার বয়ফ্রেন্ডকে কোন সমস্যা !”
কথাটা শুনে আসাদ ধমক দিল,,,,,
__” আর এক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ো না হয় এক আছাড়ে ফোনটা গুড়ো গুড়ো করে দেব ৷”
আসাদের ধমক আর ফোন ভেঙে দেওয়ার কথা শুনে আরুশি চুপচাপ করে গুটিগুটি হয়ে শুয়ে পরলো ৷ আসাদ ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷
ফোনের প্রত্যেকটা মেসেজ আসাদ পড়ছে আর মাথার ভেতর যেন আগুন জ্বলছে, তবে কিছুক্ষণ পরে আগুনটা নিভে গেল যখন একটা একটা করে প্রত্যেকটা মেসেজ ডিলিট করে দিল ৷ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷
চলবে,,,,,