অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 15

0
2808

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 15
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাফিসা নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে রুমে এসে দেখলো মাত্রই ইমরানের ঘুম ভেঙেছে। মুখ মুছতে মুছতে বললো,
নাফিসা- ঘুমের মধ্যে যে নড়াচড়া করো তার প্রমাণ পেয়েছো! এই যে এক কোল বালিশ মেঝেতে ফেলছো, আর ওইগুলোও আমার দিকে ঠেলে দিছো! উঠে নামাজ পড়ো।
ইমরান দুহাত মেলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। নাফিসা জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলো।
নামাজ শেষ করে নাফিসা দরজা খুলে রুম থেকে বের হতেই দেখলো নানুর রুম থেকে ইমা আপু বের হয়েছে। ইমা আপু তার কাছে এসেই বললো,
ইমা- গোসল করছ নাই?
নাফিসা- এতো সকালে গোসল!
কথাটা বলেই নাফিসা নিচে যাওয়ার জন্য সিড়ির দিকে যেতেই ইমা আপু বললো,
ইমা- ওদিকে কোথায় যাস?
নাফিসা- নিচে যাবো।
ইমা- এদিকে আয়। ইমরান কোথায়?
নাফিসা- নামাজ পড়ে।
ইমা- রুমে যা। গোসল করে নিচে যাবি।
নাফিসা- এতো সকালে গোসল করতে যাবো কেন!
ইমা- একটু পর পার্লারের লোক আসবে। রেডি হতে হবে।
নাফিসা- এতো তারাতাড়ি!
ইমা- হ্যাঁ। আগেই গোসল করে বসে থাক। এমনও হতে পারে পরে সিরিয়াল পাবি না। যা…
ইমা আপুর কথায় গোসল করেই নিচে এলো নাফিসা। ক্ষুধায় পেটের ভেতর ঘুরঘুর করছে! হিয়াকে দিয়ে কিচেন থেকে বিস্কুট আনিয়ে রিয়াদকে সাথে নিয়ে সোফায় বসে খেতে লাগলো আর টিভি অন করে চ্যানেল পাল্টাতে লাগলো। পাশের বাসার মামাতো ভাইয়ের বউ এসে পাশে বসলে,
নাফিসা- কেমন আছো ভাবি?
ভাবি- আমি তো আছি ভালোই। নতুন বউয়ের গহনা কই! এক টুকরোও দেখি নাই গায়ে! রাতে সব হারায় ফেলছো নাকি!
নাফিসা- হারাবে কেন! রেখে দিছি।
ভাবি- হাহাহা….. বাসর রাত কেমন কাটলো তোমার?
নাফিসা- মানে! রাত আবার কেমন কাটে!
ভাবি- আহা! জানো না বুঝি! সকাল সকাল গোসল করে বসে আছো, অথচ এমন ভাব দেখাচ্ছো কিছুই বুঝো না! লজ্জা পাচ্ছো নাকি! এমন দিন আমাদেরও গেছে!
ইমা আপু কিছুটা শুনে ভাবিকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
ইমা- খেয়ে দেয়ে তোমার কাজ নেই! সকাল বেলা নতুন বউয়ের পেছনে লেগে আছো! চলো আমার সাথে!
ভাবি কি বলে গেলো সব নাফিসার মাথার উপর দিয়ে গেলো! একটু পর ইমরান দোতলা থেকে নেমে এসে নাফিসার সামনে থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে খেতে খেতে বেরিয়ে যেতে গেলে সামনে তার বন্ধুরা এসে পড়লো।
– দোস্ত কেমন কাটলো রাত?
ইমরান- হরর স্পেশাল!
– হাহাহা….. হরর স্পেশাল রাতের গল্প আমাদেরও শোনা একটু।
ইমরান- জুতার তলা দিয়ে পিটাবো। চল…
তারা হাসাহাসি করতে করতে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা অবাক হয়ে বসে রইলো! একটু আগে ভাবি বলে গেলো! এখন আবার ভাইয়ার বন্ধুরা! ইমা আপু ড্রয়িং রুমে এলে নাফিসা আপুকে ডেকে বললো,
নাফিসা- আপু ভাবি একটু আগে কি বলে গেলো! এখন ভাইয়ার বন্ধুরাও ভাইয়াকে বললো!
ইমা- কিছু না! ফাজলামো করে! কারো কথায় কান দিবি না। রুমে যা, আমি খাবার নিয়ে আসি।
নাফিসা- বিস্কুট খেয়েছি। এখন কিছু খাবো না।
ইমা- এটুকুতে হবে না। পার্লারের লোক এলে আর খেতে পারবি না। না খেয়ে থাকলে মাথা ঘুরে আবার পড়বি। উপরে যা…
নাফিসা রিয়াদকে সাথে নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে গেলে হিমেলও এলো দৌড়ে। দুই পিচ্ছিকে সাথে নিয়েই রুমে এলো। বিছানায় উঠে দুজনেই ফুল ছিড়তে লাগলো। নাফিসা তাদের নামিয়ে ফুলের সম্পূর্ণ ঝার খুলে বিছানাসহ সম্পূর্ণ রুম গুছিয়ে ফেললো। ইমা আপু রুমে এসে টেবিলে খাবার রেখে বললো,
ইমা- এতো তাড়া!
নাফিসা- শুধু শুধু রেখে কি করবো! জংগলের মতো লাগছে!
ইমা- এদিকে আয়। খেয়ে জামাকাপড় গহনা রেডি কর।
ইমা আপু ইফাজকে ডেকে তিন বাচ্চাকে খায়িয়ে দিলো। খাওয়া শেষ হলে আপু প্লেট সহ বাচ্চাদের নিচে নিয়ে গেলো। নাফিসা লাগেজ থেকে নীল শাড়িটা বের করলো। লাগেজে আরো কয়েকটা জামা আছে। সেগুলো তো আর এখন পড়বে না, তাই আলমারি খুলে রাখতে গেল। আলমারিতে ৪টা প্যাকেট দেখলো। প্যাকেটগুলো খাটে রেখে আগে তার জামাগুলো রাখলো। পরে আবার প্যাকেট গুলো রাখার জন্য নিতে গেলে ভাবলো এর ভেতর কি আছে দেখে নেওয়া যাক! প্রথমটা খুলে দেখলো, কালো রঙের কিছু একটা! শাড়ি নাকি! থাকুক, কার না কার! ভাজ খুললে আবার ভাজ নষ্ট হয়ে যাবে! ওটা রেখে আরেকটা খুলে দেখলো, সাদা স্যুট সেট! ইমরান ভাইয়ার নিশ্চয়ই! এটা কি রিসিপশনের জন্য নাকি! আরেকটা খুলে দেখলো ব্লু স্যুট সেট! দুটাই একদম নতুন ভাজ! নাফিসা আরেক প্যাকেট খুলে দেখলো ওই সাদা ড্রেসটা! ভাইয়া কেমন, ফেরত নাকি দিয়ে দিছে! না পাঠানোর জন্য মিথ্যে বলেছে! সেদিন তো খুলে দেখেনি। আজ দেখবে, তাই দরজা টা আগে ভেতর থেকে লক করলো। ড্রেসের প্যাকেটটাই অনেক সুন্দর! নাফিসা প্যাকেট খুলে ড্রেসটা বের করে হা হয়ে আছে! আনকমন ড্রেস! অসম্ভব সুন্দর! এমন ড্রেস পাইলো কই ভাইয়া! নাফিসা পড়নের জামার উপর দিয়েই ড্রেসটা পড়লো। তাকে তো একদম রানীর মতো দেখাচ্ছে! এতো সুন্দর গাউন পড়ে এখনতো নাচতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু নাচা তো দূরে থাক, এটা পড়ে হাটা যাবে কিনা সন্দেহ! আরো দুইজন লাগবে ধরে রাখার জন্য! যাইহোক আজ শাড়ি না পড়ে এটাই পড়বে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো। ইমরানের গলা শুনা যাচ্ছে! এখন কি করবে নাফিসা! ইমরান তো এটা পড়তে দিবে না তাকে! সেদিন কথা শুনানোর জন্য যে রাগ করছে!
নাফিসা তারাতাড়ি ড্রেসটা খুলে আলমারিতে ঢুকানোর চেষ্টা করছে। এলোমেলো হওয়ায় ঢুকছে না সেটা। তাই খালি লাগেজের ভেতর মুড়ে রেখে লাগেজ বন্ধ করে দিলো। নীল শাড়িটা খাটে রেখে বাকি সব দ্রুত সুন্দর করে আলমারিতে রেখে দরজা খুললো। ইমরান রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,
ইমরান- এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?
নাফিসা- বাথরুমে ছিলাম।
ইমরান- ওড়না রেখে বাথরুমে যায়?
নাফিসা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার গায়ে ওড়না নেই! গাউন পড়ার সময় খুলে রেখেছিলো! দ্রুত খাটের কোনায় রাখা ওড়না নিয়ে পড়ে নিলো। ইশ! কি লজ্জাটাই না পেল! ইমরান ফোনটা চার্জে লাগিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো, নাফিসা বললো,
নাফিসা- ভাইয়া আজকে কি কালার ড্রেস পড়বা তুমি?
ইমরান- ব্লু।
নাফিসা- সাদা পড়লে তোমাকে বেশি মানাবে। ব্লু না এনে সাদা ড্রেস আনলেই পারতে!
ইমরান কিছু না বলে দরজাটা ঠাস করে চাপিয়ে চলে গেলো।
নাফিসা- আহ! জেদ কত! ব্লু পড়বা না! দাড়াও পড়াচ্ছি তোমাকে ব্লু!
নাফিসা ব্লু স্যুট সেট এর প্যাকেটটা সাদা ড্রেসের সাথে লাগেজে রেখে লাগেজটা টেনে নানুর রুমে এক কোনায় রেখে এলো। মেহমান এলে যেন এই রুমে না ঢুকতে পারে সেজন্য রুমটা লক করে চাবি নিয়ে ইমরানের রুমে চলে এলো। সাদা স্যুট সেট টা আলমারিতে সামনেই রাখলো। এখন ব্লু স্যুট সেট আর সাদা ড্রেসটা ভাইয়া না খুজলেই হয়!
একটু পর পার্লারের লোক এলে ব্লু শাড়ি ও গহনা নিয়ে নানুর রুমে চলে এলো নাফিসা। ইমরানের রুম লক করে ইমা আপুর কাছে চাবি দিয়ে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ইমরান রুমে এসে গোসল করে রেডি হওয়ার জন্য আলমারি খুললো। আলমারিতে জামা কাপড় অন্যরকম ভাবে গুছানো! ভাজে ভাজে একের পর এক নামিয়েও ব্লু স্যুট সেট খুজে পাচ্ছে না! অথচ সাদাটা সামনেই! হঠাৎ মনে হলো সাদা ড্রেসটাও তো এখানে রাখা ছিলো! সেটাও নেই! নিশ্চয়ই নাফিসা নিয়েছে! ও তো সাজুগুজু নিয়ে ব্যস্ত, জিজ্ঞেস করবে কিভাবে এখন! নিচে গিয়ে ইমা আপুকে ডেকে এনে নাফিসার কাছে পাঠালো।
নাফিসা আপুর কাছে বলে দিলো সে জানে না আর আপুকে এটাও বলে দিলো, ইমরান তার ড্রেসের কথা জিজ্ঞেস করলে যেন বলে ব্লু শাড়ি পড়েছে।
আপু এসে বললো ঠিকই কিন্তু ইমরান তার একটুও বিশ্বাস করলো না। নাফিসা ছাড়া আলমারি কেউ ধরেনি। সে ইচ্ছে করেই লুকিয়েছে। তাই ইমা আপুকে বললো আপুর ফোন নাফিসার কাছে রেখে আসতে। ইমা আপু ফোন দিয়ে চলে গেলো। ইমরান ফোন দিতেই নাফিসা রিসিভ করলো।
নাফিসা- হ্যাঁ বলো।
ইমরান- আমার ব্লু স্যুট কোথায়?
নাফিসা- আমি তো শাড়ি পড়েছি, তোমার স্যুট সেট পড়িনি!
ইমরান- কি পড়েছিস ওটা জিজ্ঞেস করিনি, আমারটা তুই লুকাইছোস। কোথায় রাখছস তাড়াতাড়ি বল।
নাফিসা- জানি না।
ইমরান- নাফিসা, সময় কিন্তু যাচ্ছে। আমি রেডি হবো।
নাফিসা- সাদা টা রাখা আছে আলমারিতে। ওটা পড়।
ইমরান- ওটা পড়বো না। সাদা ড্রেসটাও নিয়েছিস না?
নাফিসা- বিশ্বাস করছো না কেন! আমি কি অর্ধেক সাজ রেখে তোমাকে দেখাতে বেরিয়ে আসবো এখন?
ইমরান- ব্লু টা না পেলে আমি রেডি হবো না।
নাফিসা- না হলে নাই। আমার কি!
ইমরান কল কেটে দিলো। নাফিসার সাজ পুরো শেষ পর্যায়। শুধু মাথার কাজটা বাকি আছে। একটু পর ইমা আপু এসে বললো,
ইমা- মাশাল্লাহ! কতো সুন্দরী লাগছে!
নাফিসা- তোমাকেও সুন্দরী লাগছে। দেখেছো, নোলক টানা পড়ায় নাক ফুলের কোন প্রয়োজনই নেই।
ইমা- এটা তো আর সবসময় পড়বি না!
নাফিসা- সবসময় পড়তেও হবে না।
ইমা- ইমরানের স্যুট সেট কোথায়? দেস না কেন? ইমরান রেডি হবে তো!
নাফিসা- এখনো রেডি হয়নি?
ইমা- না।
নাফিসা- তুমি যাও। আমি আসছি। আমার হয়ে গেছে।
নাফিসা গহনাগুলো তারাতাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো। ইমরান দু’হাতে নিজের মাথা চেপে নিচের দিকে তাকিয়ে খাটে বসে আছে। নাফিসা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলে মাথা তুলে তাকালো।
এ তো তার রানী সামনে দাড়িয়ে আছে! ড্রেসটা পড়াতে নাফিসাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কিন্তু এতো সুন্দর লাগার পরেও ইমরান তাকে দেখে খুশি হতে পারছে না। সেই খুশিটা মরে গেছে।
নাফিসা- রেডি হও নি কেন?
ইমরান- এই ড্রেস কেন পড়েছিস?
নাফিসা- পড়ার জন্য এনেছো, তো ফেলে দিবো?
কথাটা বলতে বলতে নাফিসা আলমারি থেকে সাদা স্যুট নামালো। ইমরান উঠে এসে নাফিসার কাছে দাড়িয়ে বললো,
ইমরান- আমি কাউকে…
নাফিসা ইমরানের মুখ চেপে ধরলো।
নাফিসা- চুপ! একদম চুপ! একটা কথাও বলবা না। চুপচাপ এটা পড়ে রেডি হও।
নাফিসা ইমরানের হাতে স্যুট সেট দিলে ইমরান ঢিল মেরে খাটে ফেলে দিলো।
ইমরান- পড়বো না আমি।
নাফিসা- পড়বে না?
ইমরান- না না না! বারবার বলতে হয় কেন! বলেছি না, পড়বো না আমি!
নাফিসা ইমরানের কলার টেনে ধরে বললো,
নাফিসা- এতো জেদ কেন, হ্যাঁ? কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে শুনি?
নাফিসার চোখে পানি টলমল করছে! ইমরান কিছু না বলে নাফিসার হাত ছাড়িয়ে খাটে বসে পড়লো। বিরক্ত লাগছে সবকিছু! ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেও পারছে না!
নাফিসা- আমি কি এখন এই ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলবো?
ইমরান- যা ইচ্ছে তাই কর।
নাফিসা- নীল শাড়িটাও কিন্তু পড়বো না। সাজগোজ সব নষ্ট করে ফেলবো।
ইমরান- বলেছি না, যা ইচ্ছে তাই কর!
নাফিসা গাউন টা গুটিয়ে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইমরান ভাবছে, সত্যিই কি সাজগোজ নষ্ট করতে চলে গেলো! ইমরানও উঠে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে যেতেই নাফিসা হোচট খেয়ে পড়তে গেলে ইমরান ধরে ফেললো! পড়বেই তো! এই ড্রেস পড়ে আবার লাগেজ টানছে! নাফিসা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে লাগেজ নিয়ে ভেতরে এলো। লাগেজ থেকে ব্লু স্যুট সেট বের করে ইমরানের হাতে দিয়ে জানালার পাশে এসে দাড়িয়ে রইলো। চোখ থেকে নিরবে টুপটাপ পানি পড়ছে! সবসময় জেদ ধরে জিতে যেতে চায় কেন! যা খুশি করুক! আর কিছু বলতে যাবে না নাফিসা।
ইমরান নাফিসার দিক থেকে চোখ সরিয়ে হাতে থাকা পোশাকের দিকে তাকালো একবার আবার নাফিসার দিকে তাকালো। তারপর ব্লু টা রেখে খাটে থাকা সাদা স্যুট সেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো,
ইমরান- একটু কিছু হলেই চোখে বন্যা বয়ে যায়! ওটা তুলে আলমারিতে রাখ।
নাফিসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো ইমরান সাদা টা-ই পড়েছে। অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ব্লু টা আলমারিতে রেখে ইমরানের জুতো বের করে দিলো। তারপর ছোট আয়না নিয়ে জানালার পাশে এসে নিজেই চোখের পানি মুছে মেকাপ ঠিক করে নিলো। আবার ইমরানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইমরান জুতো পড়ছে। সাদা রঙটা মানিয়েছে বেশ! সবদিক থেকেই পারফেক্ট লাগছে শুধু মুখে হাসিটা মিশে নেই! ইমরান উঠে মোবাইল প্যান্টের পকেটে রেখে ঘড়ি পড়তে নিলে নাফিসা গাউন গুটিয়ে ইমরানের পাশে এসে দাড়ালো। পকেট থেকে মোবাইলটা নিয়ে বললো,
নাফিসা- পড়েছো ই যখন, মুখ এমন পেচার মতো করে রাখছো কেন! হাসো একটু! তাকাও এদিকে…
নাফিসা এক হাত ইমরানের কাধে রেখে অন্য হাতে মোবাইলে দুজনের সেলফি তুলছে! ছবিতে নাফিসা ক্যামেরায় তাকিয়ে আছে আর ইমরান চোখমুখ কুচকে নাফিসার দিকে তাকিয়ে আছে! এমন সেলফি দেখে নাফিসা হাসলো! কাধ থেকে হাত সরিয়ে ইমরানের মুখটা ঘুরিয়ে বললো,
নাফিসা- আমার দিকে না, ক্যামেরায় তাকাও।
এবারও মুখ মলিন! নাফিসা বিরক্ত হয়ে বললো,
নাফিসা- আশ্চর্য! হাসি কই মুখের! হাসতে জানো না? নাও তুমি তোল। অন্যের বিয়ের ফটোগ্রাফি তো ঠিকই করো, নিজের বিয়েরটা করো না কেন?
ইমরান নাফিসার হাত সরিয়ে, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ক্যামেরা বের করে নাফিসার হাত থেকে ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো। হঠাৎ নাফিসার একদম কাছে এসে এক হাত নাফিসার পেছনে রাখলো! মুহূর্তে নাফিসার হাসি উড়ে গিয়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে ইমরানের দিকে তাকিয়ে রইলো, আর কেমন যেন একটা অনুভূতি সৃষ্টি হলো! ইমরান এই অবস্থায়ই ছবি তুলে নিলো। আবার ক্যামেরায় টাইমার অন করে ড্রেসিং টেবিলে রেখে নাফিসার পেছনে দাঁড়িয়ে দুহাতে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরলো! আবার পাশে দাড়িয়ে এক হাতে ধরলো! ক্যামেরা একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে আর নাফিসা অবাক হয়ে ইমরানের কান্ড দেখছে! প্রত্যেকটা স্পর্শ কেমন যেন শিউরে দিচ্ছে! ইমরান আবার সামনে এসে নাফিসার এক হাত তার কাধে রাখলো অন্য হাত বুকের বামপাশে রেখে ওর হাত নাফিসার কোমড়ে রাখলো! নাফিসা শুধু ইমরানের দিকে তাকিয়ে আছে! ইমরান মুচকি হেসে ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
ইমরান- এবার মুখের হাসি কই গেলো?
নাফিসা লজ্জা পেয়ে হেসে মাথা নিচু করে ফেললো! ইমরান এবার ক্যামেরা অফ করে নাফিসার মাথা সোজা করে মোবাইলে সেলফি তুললো। এবার দুজনের মুখেই হাসি আছে! হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে শব্দ এলো,
ইমা- এহেম! আমি তুলে দেবো?
নাফিসা ইমরানের থেকে হাত সরিয়ে নিলো। ইমরানও সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,
ইমরান- আসো। তুলে দিলে তো ভালোই হয়!
ইমা- হিহিহি…. থাক, স্টেজে তোর ফটোগ্রাফার দোস্ত বসে অপেক্ষা করছে তোদের জন্য। চল এখন…
নাফিসা- না, তোমার সাথেও সেলফি তুলবো। আসো এদিকে..
অত:পর ইমরানের মোবাইলে তিনজন একসাথে অনেকগুলো সেলফি তুলে স্টেজে গেলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here