অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 18

0
2770

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 18
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
হঠাৎ মনে হলো টর্নেডো হচ্ছে! ঘুম ভেঙে নাফিসা দরফরিয়ে উঠে বসলো। এ তো টর্নেডো না! বাইরে থেকে কেউ দরজায় ঢোল বাজাচ্ছে! এতো রাতে ঢোল বাজায় কে! ডাকাত আসেনি তো আবার! নাফিসা আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলে জানালার দিকে চোখ পড়লো। এখন তো দিন! এবার বাইরে থেকে ইমরানের কণ্ঠ শোনা গেলো। ইমরান চেচিয়ে নাফিসাকে ডাকছে! নাফিসা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো। খোলামাত্রই ইমরান রুমে প্রবেশ করে থাপ্পড় দেয়ার ভঙ্গিতে হাত তুলে আবার নামিয়ে চেচিয়ে বলতে লাগলো,
ইমরান- এখন একটা লাগাতে মন চায়! এতোক্ষণ কি করছিলি! কখন থেকে ডাকছি! ছোট চাচি এসেও নাকি ডেকে গেছে কয়েকবার!
নাফিসা- (হাই তুলতে তুলতে) ঘুমাচ্ছিলাম।
ইমরান- দরজা লাগিয়ে কিসের ঘুম! কে আসবে এখানে! আর দু-এক মিনিট দেড়ি করলে তো দরজা ভেঙেই ফেলতাম!
নাফিসা- আহ! চেচাও কেন! আস্তে কথা বলতে পারো না!
ইমরান- রুমে একা থাকলে আর কখনো দরজা লাগিয়ে রাখবি না।
নাফিসা- আচ্ছা।
ইমরান ঘড়ি খুলতে খুলতে আলমারির দিকে এগোতে লাগলে আবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- তোকে না সকালেও এই পোশাকে দেখলাম! গোসল করছনি?
নাফিসা- না। তুমি এসময় বাসায় কেন!
ইমরান- এ সময় বাসায় মানে! কখন আসবো!
নাফিসা- সন্ধ্যায়।
ইমরান- আজ কি বার?
নাফিসা- আ….জ, দাড়াও বলছি।
নাফিসা ক্যালেন্ডারের দিকে এগিয়ে গেলো। ক্যালেন্ডারে হাত বুলিয়ে বললো,
নাফিসা- ভাইয়া আজ কত তারিখ যেনো?
ইমরান- অদ্ভুত মেয়ে! আজ কি বার সেটাও জানা নেই! আজ বৃহস্পতিবার।
নাফিসা- আমি জিজ্ঞেস করলাম তারিখ আর তুমি বললে বার! এটা তো আমিই বলতে পারতাম!
ইমরান- হাহাহা…. আমি তারিখ বলে দিলে তো বার বলতেই পারতি!
নাফিসা- আচ্ছা, যাই হোক। তবুও তো তুমি দুপুরে আসবে। এখন এসেছো কেন!
ইমরান- দুপুর হওয়া বাকি আছে এখনো! বিকেল হয়ে গেছে!
নাফিসা- কিইইই! বিকেল হয়ে গেছে! একটু আগে না ঘুমালাম!
নাফিসা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় তিনটা বেজে গেছে!
নাফিসা- আল্লাহ! এতোক্ষণ ঘুমালাম কিভাবে! গোসল করবো কখন! নামাজ পড়বো কখন! ভাইয়া সরো সরো..
ইমরানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর মনে মনে বললো, “হিহিহি… ভাইয়া মনে হয় সকালের ঘটনা ভুলে গেছে! ওফ্ফ! বাচা গেলো।”
ইমরান- বাব্বাহ! এতোক্ষণ ঘুমিয়ে এখন তাড়া কত!
নাফিসা ওয়াশরুমে চলে যাওয়ায় ইমরান বাইরের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে এলো। নাফিসা নামাজ পড়ে নিলে দুজনে একসাথে নিচে খেতে গেলো। সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে ভাইবোনরা টিভি দেখছিলো আর মুড়ি খাচ্ছিলো সবাই। মামীরা রান্নায় ব্যস্ত। বড় মামা নিজের রুমে। আর বাকি মামারা বাইরে হয়তো। ইমরান বাইরে থেকে বাসায় এসে দেখে এক এক জন সোফায় টেবিলে পা তুলে আরাম করে বসে মুড়ি খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। রেহান ইমরানকে দেখে রিমোর্ট লুকানোর জন্য নিচে ফেলে সে রিমোর্টের উপর বসে আছে। ইমরান বোল থেকে এক মুঠো মুড়ি খেতে খেতে বললো,
ইমরান- বাহ! কি সুন্দর! এক এক জন হাত পা ছড়িয়ে মুড়ি খায় আর টিভি দেখে! পড়া কই?
নাফিসা- পড়া বইয়ে।
ইমরান- পড়া বইয়ে থাকলে চলবে না। মাথায় থাকতে হবে। টিভি অফ করে উপরে যা সব।
নাফিসা- ছি ভাইয়া। তুমি হাত ধোও নাই! বাইরে থেকে এলে হাত ধুয়ে খেতে হয় জানোনা! না হলে ডায়রিয়া হবে। যাও লাইফবয় দিয়ে হাত ধুয়ে এসো। হিহিহি….
ইমরান- লাইফবয় দিয়ে আমাকে হাত ধুতে হবে না। তোরা ধো। খাওয়া শেষে ভালো করে হাত ধুতে হয়।
কথাটা বলে খাওয়া শেষ না হতেই ইমরান বোল টেনে নিয়ে কিচেনের দিকে যেতে লাগলো। সবাই একজোটে চিৎকার করে বললো, ” ভাইয়া আমাদের শেষ খাওয়া হয়নি!” বুঝে আর না বুঝে ছোট দুইটাও (হিমেল আর রিয়াদ) তাদের সাথে চিৎকার করতে লাগলো।
ইমরান- অনেক খাওয়া হইছে। আর খেতে হবে না। মুড়ি খেলে তোদের আর ভাত খাওয়ানো যাবে না।
বাকি মুড়ি ইমরান শেষ করে কিচেন থেকে ফিরে এলো। সবাই মুখ গোমড়া করে বসে আছে!
ইমরান- এভাবে বসে আছো কেন বাচ্চারা! উপরে গিয়ে বই হাতে নাও। এখনো টিভি অফ করেনি!
কেউ কোন জবাব দিচ্ছে না। সবাই টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। ইমরান রেহানকে তুলে সোফা থেকে নামালো। রিমোর্ট হাতে নিয়ে টিভি অফ করে দিলো। রেহান বিড়বিড় করে বললো,
রেহান- আল্লাহ জানে কয়টা চোখ আছে! ড্রাগন একটা! সব দেখে ফেলে!
নাফিসা- ইমরাইন্নার বাচ্চা….!
ইমরান- উপরে যাবি কি যাবিনা?
হিমা- যাবো না!
ইমরান- এক মিনিট দাড়া।
ইমরান দৌড়ে দোতলায় উঠে হাতে জালি বেত নিয়ে নিচে নেমে এলো। সবাই বড় বড় চোখ করে তাকালো। পিচ্চি দুইটা ভয়ে নাফিসার কোলে বসে পড়েছে!
ইমরান- যাবি না কে কে?
নাফিসা- বড় মামার কাছে কিন্তু বিচার দিবো।
ইমরান- পড়াশোনার ক্ষেত্রে তোর বড় মামাও সাপোর্ট করবে না।
নাফিসা- দূর সর তারাতাড়ি…
ইমরান আরেকটু এগিয়ে আসতেই পিচ্চিদের কোল থেকে নামিয়ে নাফিসাসহ বাকি সবাই দৌড়ে উপরে চলে গেলো। জালি বেতের মাইর কে খেতে যাবে! একটা দিলেই আধা ইঞ্চি ফুলে উঠে। পিছু পিছু চিৎকার করতে করতে পিচ্চি দুইটাও দৌড়াতে লাগলো। ইমরান দুজনকেই ধরে কোলে নিলো।
ইমরান- আপনারা ওদিকে কোথায় যান!
কিচেনে তো তাদের মায়েরা কাজ করছে। তাই বাবার রুমে উকি দিয়ে দেখলো রুমে আছে কিনা! পিচ্চিদের খেলনা দিয়ে বাবার কাছে বসিয়ে রেখে এলো। উপরে পড়ার জন্য তিনটা চেয়ার রাখা আছে। তাই, বেত হাতে নিয়ে সাথে একটা চেয়ার নিয়ে উপরে চলে এলো। হিমা হিয়াদের রুমে এসে দেখলো সবাই খাটে বসে আছে বই নিয়ে।
ইমরান- চেয়ার টেবিল ছেড়ে খাটে কেন! নেমে আয় সব।
ইমরানের কথায় সবাই টেবিলে চলে এলো।
ইমরান- নাফিসা কোথায়?
হিয়া- বই আনতে গেছে।
ইমরান তার রুমে এসে দেখলো নাফিসা ফোন নিয়ে রুমে পায়চারি করছে। ইমরানকে দেখে ফোন খাটে ঢিল মেরে বইয়ের কাছে গেলো।
নাফিসা- ভাইয়া, আমার বুক সেলফ লাগবে। হিমা হিয়ার সেলফে জায়গা নেই।
ইমরান- মায়ের রুমে আমার বুক সেলফ আছে। কাল উপরে এনে দিবো।
নাফিসা- রাখবা কই? জায়গা আছে এই রুমে?
ইমরান- দাদুর রুমে জায়গা আছে অনেক।
নাফিসা বই নিয়ে হিমার রুমে এলো। ইমরানও তার ল্যাপটপ নিয়ে এ রুমে এসে খাটে পা ছড়িয়ে বসে কাজ করতে লাগলো। নাফিসা প্রথমে চেয়ারেই বসেছিলো পরে আবার খাটে ইমরানের পাশে ইমরানের মতো খাটে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে বই খুলতে লাগলো।
ইমরান- এখানে কি?
নাফিসা- এখানে তো কত কিছুই! তুমি, আমি, বই, ল্যাপটপ, খাট, কাথা, বালি…
ইমরান- তুই এখানে কেন! চেয়ারে যা!
নাফিসা- উফফ! চেয়ারে বসতে বসতে পা ঝিম ধরে গেছে!
ইমরান- দু মিনিট হয় নাই, এখনি পা ধরে গেছে! পড়া নিয়ে ভণ্ডামি! যা চেয়ারে যা!
নাফিসা- খাটে আর চেয়ারে কি! পড়া হলেই হয়!
ইমরান- খাটে বসলে শয়তানে খোচায়! আর একটু পর দেখবো নাফিসা ঘুম! তারাতাড়ি চেয়ারে যা, সকালের মাইর কিন্তু পাওনা আছে এখনো।
নাফিসা ভেংচি কেটে নেমে গেলো খাট থেকে। আর বিড়বিড় করে বললো, গিরগিটি একটা! সকালের কথা ভুলেনি এখনো! চেয়ারে বসে আবার ইমরানকে বললো,
নাফিসা- ভাইয়া, চেয়ারে পড়লে কি সকালের পাওনা নিষ্পত্তি হবে?
ইমরান নাফিসার দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে আবার নিজের কাজে মনযোগ দিলো।
নাফিসা- বলো না কেন?
ইমরান- ওকে।
সবাই পড়তে শুরু করলো। ইশার আযানের পর ইমরান মসজিদে গেলে তাদের পড়ার ব্রেক দিয়ে ইমরানের ল্যাপটপটা নিয়ে খাটে বসলো সবাই। কেউ নাটকের কথা বলছে নাফিসাকে, কেউ মুভি আর কেউ কার্টুন! ইউটিউবে ঢুকতেই একটা ভুতের মুভি সামনে পড়লো। নামটা ভালো করে দেখে নিলো। পড়া শেষ করে ড্রয়িং রুমে টিভি না দেখে আজ ল্যাপটপে ভুতের মুভি দেখবে তারা, এই প্ল্যান করে নিলো। আগে নাফিসা বেড়াতে এলেও সবাই প্রায়ই ভাইয়ার ল্যাপটপ নিয়ে ভুতের মুভি দেখতো। ইমরান এখন বাসায় ফিরতে পারে তাই ল্যাপটপ অফ করে আবার পড়তে বসলো। পড়া শেষে ইশার নামাজ পড়ে একসাথে ডিনার করলো সবাই। তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে নাফিসা ইমরানের কাছ থেকে জোরাজুরি করে ল্যাপটপ নিয়ে হিমার রুমে চলে এলো। দরজা চাপিয়ে লাইট অফ করে নাফিসা, হিমা, হিয়া ও রেহান ল্যাপটপে মুভি অন করে দেখতে লাগলো। অন্ধকারে ভুতের মুভি দেখার মজাই আলাদা! অন্যদিনের চেয়ে আজকের এই মুভিটা বেশি ভয়ঙ্কর! এক এক জন ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে!
ইমরান নিজের রুমে খাটে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। প্রায় এগারোটা বাজতে শুরু করেছে! এখনো নাফিসা রুমে আসেনি! ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো সেখানেই। ইমরান উঠে হিমাদের রুমের দিকে গেলো। দরজাটা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে খুললো। ল্যাপটপের আলোতে চারজনের মুখ দেখা যাচ্ছে শুধু আর পুরো রুম অন্ধকার। ল্যাপটপে ভয়ঙ্কর শব্দও শুনতে পাচ্ছে ইমরান। এক এক জনের চেহারা দেখে বুঝতে পারছে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যাচ্ছে! ভুতের মুভি দেখছে! ইমরান লাইট জ্বালালো। হঠাৎ লাইট জ্বলে ওঠায় সবাই ভয় পেয়ে গেলো। ইমরানকে দেখে বুকে থু থু দিতে লাগলো সবাই।
ইমরান- এতো রাত পর্যন্ত বসে বসে ভুতের মুভি দেখোছ! সাহস কত বড়ো! এজন্যই তো তোদের কিছু দেই না! ল্যাপটপ দে!
ইমরান ল্যাপটপ কেড়ে নিলে সবাই বলতে লাগলো, ” ভাইয়া আরেকটু বাকি আছে। প্লিজ দাও!” এতো বলার পরও ইমরান দিলো না। নাফিসাকে টেনে রুমে নিয়ে চলে এলো। রেহান নিজের রুমের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আবার হিমাদের রুমে ঢুকে বললো আজ তাদের সাথেই ঘুমাবে। লাইট জ্বালিয়ে তিনজন এ রুমে শুয়ে পড়লো। এদিকে নাফিসা মাঝখানে কোলবালিশটা রেখে শুয়ে পড়লো। মুভি দেখার পর ভয় করছে খুব। ইমরান লাইটটা অফ করতে গেলে নাফিসা বার বার নিষেধ করলো। তাই লাইট অফ করলো না ইমরান। গরম লাগছে খুব তাই ইমরান টিশার্ট খুলে ফ্যানটা স্লো স্পিডে ছেড়ে শুয়ে পড়লো।
মাঝরাতে কারো শব্দ শুনে ইমরানের ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা কি যেন আবোল তাবোল বলে যাচ্ছে! আর ভয়ে হাত পা কুকড়ে নিচ্ছে। ইমরান ডাকলো দুই বার। নাফিসা আরো বেশি আবোল তাবোল বলা শুরু করেছে। এক প্রকার কান্নাই শুরু করেছে! ইমরান আধশোয়া অবস্থায় মাঝখান থেকে কোল বালিশ সরিয়ে নাফিসাকে ঝাকিয়ে ডাকতে লাগলো। নাফিসা ঘুমের মাঝেই ইমরানকে ঝাপটে ধরে বিড়বিড় করতে লাগলো।
ইমরান- ভুতের মুভি দেখা! এখন তো ইচ্ছামতো মাইর লাগাতে মন চাচ্ছে!
ইমরানও একহাতে ঝাপটে ধরে আছে। আস্তে আস্তে নাফিসা চুপ হয়ে গেছে। ইমরান আবার তাকে শুয়িয়ে দিতে গেলো কিন্তু নাফিসা ছাড়লো না। আবার ভয় পেতে পারে সেই ভেবে নিজের বালিশটা এদিকে টেনে নাফিসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েই শুয়ে পড়লো ইমরান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here