অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 19

0
2644

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 19
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
আযানের শব্দে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে ইমরানের উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করলো নাফিসা। চোখ খুলে তাকিয়ে একটু হকচকিয়ে গিয়ে উঠতে চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো ইমরান তাকে দুহাতের বন্ধনে বেধে রেখেছে খুব শক্ত করে। তার নিজের একটা হাতও ইমরানকে ঝাপটে ধরে আছে। মাথাটা হালকা উঠিয়ে ইমরানের মুখের দিকে তাকাতেই ইমরানের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পেল। “ভাইয়া কাছে এলো কখন! ঘুমন্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছে একদম ভোলাভালা! কিচ্ছু বুঝে না, অবুঝ একটা ছেলে। অথচ শয়তানের হাড্ডি!” মনে মনে নাফিসা নিজের সাথে কথা বলেই মুচকি হাসলো। এখন কি উঠে পড়বে! উঠতে গেলেই ঘুমটা ভেঙে যাবে! ভালোই তো লাগছিলো তার উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। আরেকটু ঘুমাক।
নাফিসা আবার আগের ন্যায় ইমরানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে পড়লো। মাথা রাখতেই ইমরানের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে নাফিসা! কাছ ঘেঁষে আরো জড়ো হয়ে গভীরভাবে অনুভব করতে লাগলো সেই স্পন্দন! ইমরানের বুকে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে আর সাথে তার নিজের হৃদয়েও কম্পন বাড়িয়ে দিচ্ছে! এতো ভালো লাগছে কেন এখানে থাকতে! এ কেমন অনুভূতি! ঘুমের মধ্যে ইমরানও যেন তাকে আরো গভীরভাবে আঁকড়ে ধরেছে! আস্তে আস্তে নাফিসার চোখে আবার ঘুম এসে যাচ্ছে।
একটু পর ইমরানের ডাকে সেই ঘুমটা ধাক্কা খেলো। নাফিসা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। ইমরান আধশোয়া অবস্থায় তাকে ডাকছে,
ইমরান- নাফিসা, নামাজ পড়বি না? উঠ…
নাফিসা- হুমমম…
নাফিসাকে ছাড়িয়ে ইমরান উঠে পড়লো। হাই তুলতে তুলতে নাফিসাও দু’হাত মেলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। ইমরান ওয়াশরুমে চলে গেলো।
নাফিসা- ফাজিল একটা! এতো সুন্দর ঘুমটা ভেঙে দিলো!
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৫টার বেশি বেজে গেছে! সূর্য উঠার সময় হয়ে যাচ্ছে! নাফিসা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো। ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কিয়ে,
নাফিসা- ভাইয়া, তারাতাড়ি বের হও। দূর!
নাফিসা বাইরের ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে রুমে ইমরানকে দেখতে পেল না। মসজিদে চলে গেছে হয়তো। নাফিসা নামাজ আদায় করে কুরআন শরীফ পড়লো। প্রতিদিন নামাজ পড়ে তারাতাড়ি করেই বাসায় ফিরে। কিন্তু আজ নাফিসা কুরআন পড়ার পর এসেছে ইমরান। নাফিসা জায়নামাজ রাখছে, ইমরান ধপাস করে খাটে শুয়ে পড়লো।
নাফিসা- আজ এতো দেড়ি করে ফিরলে যে?
ইমরান- এমনি। দশটার আগে ঘুম থেকে ডাকবি না আমাকে।
নাফিসা- আহ! ছুটির দিন হওয়ায় নবাব হয়ে গেছে একেবারে!
ইমরান- হুম।
ইমরান চোখের পাতা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। নাফিসা দুই জানালারই পর্দা সরিয়ে গ্লাস খুলে দিলো। পূর্ব দিকের জানালা দিয়ে সূর্যের আলো রুমে এসে ছড়িয়ে পড়লো। ইমরানের চোখে আলো পড়তেই চোখ কুচকে বললো,
ইমরান- নাফিসা…. পর্দা লাগা।
নাফিসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো ইমরান চোখ কুচকে রেখেছে। সে হেসে জানালার দিকে চেপে ইমরানের চোখে পড়া আলো আড়াল করলো। নাফিসার ছায়া পড়ছে ইমরানের উপর। ইমরান এবার স্বাভাবিকভাবে চোখের পাতা একত্র করে রেখেছে। নাফিসা আবার সরে গেলে ইমরানের চোখে আলো পড়লো। ইমরান কিছু বলার আগেই নাফিসা আবার আলো আড়াল করলো। একটা খেলা পেয়েছে সে। তাই আবার সরে গেলো। ইমরান এবার চোখ খুলে তাকালো। নাফিসা আবার আলো আড়াল করে খিলখিল করে হেসে উঠলো।
ইমরান- তোকে দাড়িয়ে থাকতে বলি নাই। পর্দা টেনে দিতে বলছি।
নাফিসা- হিহিহি…. আলো নাই তো। ঘুমাও।
ইমরান- মাইর দিবো কিন্তু এখন।
খেলাটা খেলতে ভালোই লাগছে। তাই নাফিসা কিছু না বলে আবার সরে গেলো। ইমরান এবার বিছানা থেকে উঠে এলো নাফিসার দিকে। না জানি মাইর লাগায়! নাফিসা ভয়ে চোখ বন্ধ করে গ্রিলের সাথে মিশে দাড়িয়ে রইলো। ইমরান কাছে এসে নাফিসাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো। সামনে দাড়িয়ে হাতটা আস্তে আস্তে পেটের একপাশ দিয়ে স্পর্শ করে নাফিসার পেছনে নিয়ে গেলো। নাফিসা চোখ বন্ধ রেখেই সাথে সাথে কেপে উঠলো। গ্রিল থেকে সরানোর জন্য পেছনে হাত রেখে ইমরান এক টানে নাফিসাকে তার বুকে ফেললো। নাফিসার হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। ইমরান অন্যহাতে পর্দা টেনে দিলো। তারপর নাফিসার পেছন থেকে হাত সরিয়ে নিলো। ইমরানের দুরত্ব অনুভব করতে পেরে নাফিসা চোখ খুলে তাকালো। ইমরানের মুখে এখনো মুচকি হাসিটা লেগে আছে।
ইমরান- এবার পর্দা সরালে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না।
ইমরান বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। নাফিসা কিছুটা লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নানুর রুমে এসে ঝাড়ু নিয়ে রুমটা ঝাড়ু দিলো। তারপর তাদের রুমটাও ঝাড়ু দিলো। ঝাড়ু হাতে নিয়েই হিমাদের রুমের দিকে গেলো। কাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত মুভি দেখে তিনজনই এখনো ঘুমাচ্ছে। নামাজের খবর নেই একটারও! ছুটির দিন হওয়ায় মামামামী কেউ উপরে আসেনি ডাকতে। নাফিসা জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে তাদের ডাকতে লাগলো। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে সকাল সকাল নাফিসার হাতে ঝাড়ু দেখে সবাই চমকে উঠে বসলো। নাফিসা বুঝতে পেরে হিহিহি করে হেসে উঠলো।
হিমা- ঝাড়ু কেন তোমার হাতে!
নাফিসা- পিটুনি দিবো না, ঘর ঝাড়ু দিবো। উঠ তারাতাড়ি। এখন শুয়ে পড়লে কিন্তু ঝাড়ুর পিটুনিই খাবি। হিয়া কাথা ভাজ করতে লাগলো। হিমা আর রেহান দুজনেই ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলো। হিমা রেহানকে পেছনে টেনে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। রেহান রেগে দরজায় লাথি দেয়া শুরু করলো। নাফিসা ধমক দিয়ে বাইরের ওয়াশরুমে যেতে বললো। ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় পিচ্ছি দুইটা হাত ধরাধরি করে সিড়ি দিয়ে উঠে রুমে ঢুকতে নিলে নাফিসা নিষেধ করলো। নাফিসার কথা মত আবার বাইরে দাড়িয়ে রইলো। সারাদিন দুজন একসাথেই থাকে। আবার ঝগড়া লাগলে ইচ্ছে মতো মারামারি করে। রিয়াদ ছোট হওয়ায় হিমেলের সাথে পারে না। তবুও ছাড়ে না আবার! উপরের কিচেনসহ সবগুলো রুম ঝাড়ু দিয়ে নিচে না গিয়ে পিচ্চিদের সাথে নিয়ে ছাদে এলো নাফিসা। হালকা হালকা বাতাস বইছে ভালোই লাগছে। ছাদ থেকে পশ্চিম দিকে ফসলের মাঠ দেখা যাচ্ছে। সবুজ ধানগাছ বাতাসে হেলছে। পুকুরের একদিকে কাশফুল গুলোও হেলেদুলে নাচছে। একটু পর নাফিসাকে খুজতে খুজতে হিয়া আর রেহানও ছাদে এলো।
হিয়া- তুমি এখানে! আমরা নিচে খুজছি।
নাফিসা- হিমা কই?
হিয়া- নিচে।
নাফিসা- হিয়া, মামারা ধান গাছ লাগায়নি?
হিয়া- জানি না তো!
নাফিসা- কি জানোছ তুই!
রেহান- হ্যাঁ আপু। লাগাইছে দুই ক্ষেতেই।
নাফিসা- চিনোছ?
রেহান- চিনবো না তাহলে! আমি তো প্রায়ই আব্বু আর চাচ্চুর সাথে দেখতে যাই।
নাফিসা- আয়, আজ ঘুরতে যাই।
রেহান- কখন যাইবা?
নাফিসা- এখনই যাবো। চল…
হিয়া- যেতে দিবে না একা একা।
নাফিসা- মামারা কই?
রেহান- সবাই ঘুমায়। কার সাথে যাইবা!
নাফিসা- ইমরান ভাইয়াকে নিয়ে যাবো সাথে।
হিয়া- ভাইয়া! জীবনেও নিবে না।
নাফিসা- বড় মামি কই?
হিয়া- কিচেনে।
নাফিসা- মামি একটু বললেই হবে।
রেহান- ভাইয়াও তো ঘুমায়!
নাফিসা- চল আমার সাথে, ভাইয়ার ঘুম হারাম করি। হিহিহি….
তারা ছাদ থেকে দোতলায় নেমে এলো। হিমাদের রুমে এসে আগে জালি বেতটা লুকালো। নিজের রুমে এসে ইমরানের মোবাইলটা নিয়ে সাইলেন্ট করে নাফিসার মোবাইলসহ পার্সে রেখে দিলো। টুলের উপর দাঁড়িয়ে দেয়াল ঘড়িটা নামিয়ে টাইমটা দশটা পাচ মিনিট বানিয়ে দিলো। হিমেল আর রিয়াদকে খাটের উপর বসিয়ে বাকিদের বের করে দিলো রুম থেকে। পূর্বের জানালার পর্দাটা সরালো না। সূর্য দেখলে বুঝে যাবে দশটা বাজেনি!
সবকিছু ঠিকঠাক করে ইমরানকে ডাকতে এলো। রিয়াদ খেলতে খেলতে ইমরানের পেটের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।
নাফিসা- ভালোই হয়েছে, ভাইয়া বিরক্ত হয়ে আরও তারাতাড়ি উঠে পড়বে। হিহিহি….
নাফিসা হাসি থামিয়ে তারপর ইমরানকে ডাকতে লাগলো। ইমরান ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- কি হয়েছে?
নাফিসা- উঠো না! আর কত ঘুমাবা! দশটা বেজে গেছে। তারাতাড়ি উঠো।
ইমরান- এখন না মাত্র শুইলাম!
নাফিসা- হ্যাঁ, ঘুমিয়ে থাকলে এমনই মনে হয়। উঠো তারাতাড়ি। আমি বিছানা গুছিয়ে নাস্তা করতে যাবো।
ইমরান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দশটা সাত মিনিট বাজে। ইমরান রিয়াদকে পেটের উপর বসিয়ে খেলতে লাগলো। হিমেল দাঁড়িয়ে ইমরানের বালিশ নিয়ে টানাটানি করছে।
ইমরান- তুই যা, আমি আসছি।
নাফিসা- না তুমি আগে যাও।
হিমেল- ভাইয়া। উঠো… ওফ, ভাইয়া ভারি!
নাফিসা- হিহিহি….. ভাইয়া ভারি! ভাইয়া উঠো তো। হিমেল বেচারা বালিশ টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।
ইমরান- ওই ব্যাটা, বালিশ টানলে আমি উঠবো! নাকি আমাকে টানবি!
রিয়াদকে নামিয়ে ইমরান উঠে পড়লো। ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে হিমেল আর রিয়াদকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে এলো। কিচেনে ঢুকে দেখলো মা চাচিরা এখনো রান্না ঘরে।
ইমরান- দশটা বাজে, এখনো তোমাদের রান্না শেষ হয়নি!
বড় মামি- কেন তোর ক্ষুধা লেগে গেছে? খাবার তো আছেই।
ছোট মামি- কিসের দশটা বাজে! এখনো আটটা বাজেনি আর তুমি বলছো দশটা বাজে!
মেঝ মামি- ইমরান কি ঘুমের ঘোরে হাটছে নাকি!
ইমরান- ঘড়িতে দেখে আসো কয়টা বাজে।
ছোট মামি- তুমিই আবার ভালো করে দেখে আসো।
ইমরান পিচ্চিদের কোলে নিয়েই ড্রয়িং রুমে এলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সাতটা চল্লিশ বাজে! হিমা বসে বসে টিভি দেখছিলো। পিচ্চিদের নামিয়ে হিমার হাত থেকে রিমোর্ট নিয়ে চ্যানেল পাল্টে দেখলো টিভিতেও সাতটা চল্লিশ বাজে!
ইমরান- নাফিসা এখন নিচে আসেনি?
হিমা- না তো!
এদিকে নাফিসা মাত্রই উপরের রুম লক করে হিয়া ও রেহানের সাথে হাসতে হাসতে ড্রয়িং রুমে পা রাখলো। ইমরান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- দশটা বেজে গেছে, না?
নাফিসা- আল্লাহ গো…. বাচাও! মামিইইই…
হিমা ছাড়া সবাই দৌড়ে কিচেনে চলে গেলো। ইমরান তাদের এখন কিছু না বলে দোতলায় এলো। রুম লক করা থাকায় আবার নিচে কিচেনে এলো।
ইমরান- চাবি কই?
মামির পেছনে থেকে নাফিসা বললো,
নাফিসা- ভাইয়া, আজ তো ছুটির দিন। ধান ক্ষেত দেখতে নিয়ে যাবে?
ইমরান- ধান ক্ষেতে তোদের পুতে রাখবো। চাবি দে….
বড় মামি- ইমরান কি বলছ এগুলো!
ইমরান- তুমি জানো এই শয়তানের দল কি করছে! ঘড়ির টাইম পাল্টে আমাকে ডেকে তুলছে। এখন কি সুন্দর আবদার! ভাইয়া ধান ক্ষেত দেখতে নিয়ে যাবে!
রেহান- আপু, দেখছো! আগেই তো বলেছিলাম ভাইয়া নিয়ে যাবে না। আমি চিনি, আমার সাথে চলো।
ইমরান- একটায় বাড়ির বাইরে পা রাখবি তো পা কেটে ফেলবো। মেয়ে মানুষ এতো কিসের ঘুরাঘুরি!
নাফিসা- মেয়ে হয়েছি বলে হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবো!
ইমরান- হ্যাঁ বসে থাকবি। ধান ক্ষেতে গিয়ে তুই কি করবি!
নাফিসা- ঘুরতে যাবো।
ইমরান- ঘুরতে যেতে হবে না। বাড়ির বউ, চুপচাপ বাড়িতেই বসে থাক। লোকে দেখলে খারাপ ভাববে।
নাফিসা- এজন্যই তোমাকে সাথে যেতে বলছি। মামি বলো না একটু ভাইয়াকে। বেশিক্ষণ থাকবো না। একটু হাটাহাটি করে চলে আসবো।
বড় মামি- ইমরান নিয়ে যা। একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। সারাদিন তো ঘরেই বসে থাকে।
ইমরান- আমি পারবো না।
বড় মামি- না পারলে আর কি। ওরা একাই যাবে।
নাফিসা- ইয়েএএ! হিয়া রেহান আয়।
মামি বলায় নাফিসার সাহস বেড়ে গেছে।কিন্তু ইমরান তো একা যেতে দিবে না।নাফিসা ইমরানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে হিয়া আর রেহানকে নিয়ে কিচেন থেকে বের হতে গেলে ইমরান বললো,
ইমরান- নাস্তা করে নে। আমি নিয়ে যাবো।
নাফিসা- লাগবে না আর তোমাকে।
ইমরান- নাস্তা করতে বলছি না!
সবাই দ্রুত হালকা নাস্তা করে ইমরানের সাথে বেরিয়ে পড়লো। মেইন রাস্তা দিয়ে না নিয়ে ইমরান পাশের বাসার চাচাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে ফসলের মাঠের দিকে নামলো। প্রথম দুই তিনটা ক্ষেত ফাকা। ছেলেরা ক্রিকেট খেলার মাঠ বানিয়ে রেখেছে। জনশূন্য জায়গা, সবুজ ধানগাছ, মৃদু বাতাস ভালোই লাগছে এই পরিবেশটা। খোলা মাঠে দু একটা গরুও দেখা যাচ্ছে। ইমরান তাদের ক্ষেতের কাছাকাছি এসে সরু আইলে হেটে ক্ষেত দেখতে লাগলো আর তাদের বললো মোটা আইলে হাটতে। নাফিসা বললো,
নাফিসা- আমিও এদিকে হাটবো।
ইমরান- পারবি না। পড়ে যাবি…
নাফিসা- পড়বো না।
ইমরান- তুই এই আইলে হাটতে পারলে তোকে একটা আইস্ক্রিম খাওয়াবো।
নাফিসা- স্ট্রবেরি ফ্লেবার বক্স আইস্ক্রিম?
ইমরান- ওকে।
নাফিসা জুতা খুলে খুব সাবধানে হেটে হেটে প্রায় অর্ধেকের মাঝামাঝি এসে ধপাস করে ক্ষেতে কাদায় পড়ে গেলো। তা দেখে ইমরানসহ বাকিরা সবাই হাহাহোহো করে হাসতে লাগলো।
ইমরান- খুব শখ না, ধান ক্ষেতে ঘুরবা! আইস্ক্রিম খাবা! খাও, কাদা খাও! হাহাহা…..
নাফিসা রেগে কাদায় বসেই ইমরানের দিকে কাদা ছুড়লো কিন্তু ইমরান পর্যন্ত কাদা পৌছায় নি! এবার হিমাদের দিকে কাদা ছুড়লো। হিমা হিয়া সরে যাওয়ায় কাদা গিয়ে লাগলো রেহানের উপর। এবার রেহান আবার নাফিসাকে দিলো। তারপর হিমা হিয়ার হাসি দেখে নাফিসা ও রেহান হিমা হিয়ার দিকে কাদা ছুড়তে লাগলো ইচ্ছেমতো। নাফিসা আর রেহান দৌড়ে হিমা হিয়াকে টেনে কাদায় ফেলে দিলো। ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে ইমরান প্যান্ট ফোল্ড করে জুতা হাতে নিয়ে আগেই এক মাইল দূরে চলে গেছে। ইচ্ছেমতো প্রান ভরে হাসছে সেখানে দাড়িয়ে। সবারই এখন কান্না করতে ইচ্ছে করছে! আসছিলো একটু ভালোভাবে ঘুরতে, আর কি থেকে কি হয়ে গেলো! চারজনই এবার দু হাতে কাদা নিয়ে ইমরানের দিকে দৌড়াতে লাগলো। ইমরান হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে ফাকা মাঠে এসে হঠাৎ পিছলে পড়ে গেলো! তারা কাদা নিয়ে দৌড়ে কাছে এসে দেখলো ইমরান গোবরে পিছলে খেয়ে পড়েছে! এবার ইমরান বাদে বাকিরা সবাই প্রান ভরে হাসছে! এক একজন ইমরানের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে!
নাফিসা- হিমা, বর্তমান যুগের একটা জনপ্রিয় ডায়ালগ শুনবি?
হিমা- হিহিহি…. কি?
নাফিসা- ★তাকে বলে দিও, ইমরান গোবরে পড়ে গেছে!★ হিহিহি….
নাফিসা তার হাতের কাদা ইমরানের মাথায় মেখে দিয়ে বললো,
নাফিসা- উঠো ভাই, উঠো। মন খারাপ করতে নেই! হিহিহিহি…
মাথায় কাদা মাখায় ইমরানকে এখন পুরাই মুক্তিযোদ্ধা লাগছে। ইমরান যখনি উঠতে লাগলো, সবাই হাতের কাদা ফেলে বাড়ির দিকে এক দৌড়! নাজমুল মামাদের বাড়িতে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখলো ইমরান তাদের পিছু না নিয়ে খেলার মাঠের পাশের পুকুরের দিকে যাচ্ছে। তারা দৌড়ে হাপিয়ে গেছে, তাই হাসতে হাসতে সেখানে মাটিতে বসে একমিনিট জিরিয়ে নিলো। হাসির শব্দ শুনে মামাতো ভাইয়ের বউ মিতু ভাবি এসে দেখে হা হয়ে গেছে!
ভাবি- এসব কি অবস্থা তোমাদের!
নাফিসা- ভাবি আর বলো না গো! ভয়াবহ অবস্থা! তোমাদের উঠুনে কেউ আছে?
ভাবি- কেন? আম্মা আছে।
নাফিসা- একটা হেল্প করো। মামিকে এক মিনিটের জন্য ঘরে নিয়ে যাও না, একটা দৌড় দিবো। প্লিজ তারাতাড়ি…
ভাবি- আচ্ছা আসো।
নাফিসাসহ সবাই এক দৌড়ে তাদের বাসায় চলে এলো। ভাগ্যিস! বাসার সামনে রাস্তায় কেউ ছিলো না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here