অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 27

0
2731

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 27
Writer: #Nur_Nafisa
.
.

ইমরান খপ করে নাফিসার হাতসহ চিরুনি ধরে বললো,
ইমরান- কিইইইই!
নাফিসা- জ্বিইইইই….. এতোক্ষণ কি এমনি এমনি তোমার কাজ এগিয়ে দিচ্ছি! না আনলে একেবারে মেরে হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো! হাসব্যান্ড কথা না শুনলে মাইর দেওয়াও আমার কর্তব্য!
ইমরান- লাগবে না কাজ এগিয়ে দেওয়া। সবাই মতলব নিয়ে ঘুরে।
নাফিসা- তুমিও তো মতলব নিয়ে ঘুরো। হুহ্!
ইমরান বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবার বললো,
নাফিসা- আনবে কিন্তু।
ইমরান- পারবো না।
নাফিসা- না আনলে বাসায় জায়গা হবে না!
ইমরান নিচে চলে এলো নাফিসাও পিছু পিছু এসেছে। মামারাও এসে বসছে ডাইনিং টেবিলে। ছোট মামি খাবারের বাটি এনে রাখছে টেবিলে। নাফিসা এগিয়ে এসে আজ সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। ইমরান নাফিসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ইমরানের প্লেটে খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় নাফিসা তাকাতেই ইমরান চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো। নাফিসা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ইমরান আবার চোখের ইশারা করতেই নাফিসা বুঝতে পারলো ইমরান তাকে মাথায় ঘোমটা দিতে বলেছে। হাত থেকে বাটি টেবিলে রেখে ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলো। দুজনেই মুচকি হাসলো। নাফিসা তরকারি এগিয়ে দিলো। ছোট মামির দিকে তাকাতেই মামিও হাসলো। মামি হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো “দারুণ লাগছে!” পুরোটা সময় এখানে দাড়িয়ে থেকেই খাবার সার্ভ করলো নাফিসা। খাওয়া শেষে মামারা বেরিয়ে যাচ্ছে ইমরান নাফিসাকে বললো,
ইমরান- নাফিসা, আমার ফোনটা মনে হয় ড্রেসিং টেবিলের উপর। নিয়ে এসো তারাতাড়ি।
নাফিসা- এতো তারাতাড়ি পারবো না।
নাফিসা রুমে এসে কোন ফোন পেল না! খাটে দেখলো এখানেও নেই! বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই ইমরান রুমে এসে হাজির।
নাফিসা- ফোন পাই না, কোথায় রাখছো?
ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে নাফিসার সামনে দাড়ালো। নাফিসার মাথার ঘোমটা পড়ে গেছে। ইমরান আবার ঘোমটা মাথায় তুলতে তুলতে বললো,
ইমরান- ফোন আমার পকেটে।
নাফিসা- তাহলে আমাকে শুধু শুধু পাঠালে কেন!
ইমরান কিছু না বলে ঘোমটা সহ মাথার দুপাশে ধরে ঠোঁটে শীতল চুমু একে দিলো।
ইমরান- এজন্য পাঠিয়েছি।
নাফিসা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করতেই ইমরান আবার উঁচু করে কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
ইমরান- আল্লাহ হাফেজ।
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ।
ইমরান চলে যেতেই নাফিসা মুচকি হেসে জানালার পাশে এসে দাড়ালো। আজ ইমা আপুর বলা কথা মনে পড়ছে! ভার্সিটি যাওয়ার সময় মাহিন ভাইয়ার কথা বলতেই ইমা আপু বলেছিলো “ইম্পর্ট্যান্ট কাজে গেছে!” নাফিসা ইম্পর্টেন্ট কাজের মানে জিজ্ঞেস করতেই আপু বলেছিলো, “মানেটা বিয়ের পর বুঝে নিবেন!”
সেদিন অল্প বুঝলেও আজ সম্পূর্ণ মানে বুঝে গেছে নাফিসা। নিচে তাকিয়ে দেখলো মাত্রই তাদের গাড়িটা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। ডান পাশের মিররে ইমরানকে দেখেছে। সুতরাং ইমরান ড্রাইভ করছে। এসময় বাড়িটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা লাগে! হিমা হিয়া ও রেহান আগেই স্কুলে চলে গেছে খেয়েদেয়ে ইমরান ও মামারাও বেরিয়ে গেছে। বাসায় এখন শুধু বাড়ির চারজন বউ আর দুইটা পিচ্চি। সময় কাটানোর জন্য তারাই নাফিসার সঙ্গী! মেঝ মামির ডাক শুনতেই নাফিসা নিচে চলে এলো। মামিদের সাথে ব্রেকফাস্ট সেড়ে ছোট মামি, রিয়াদ ও হিমেলের সাথে টিভি দেখলো কিছুক্ষণ। একটু পর বড় মামি এসে মামির ফোন দিয়ে গেলো। ইমরান কল করেছে!
নাফিসা- হ্যালো, নাফিসা স্পিকিং…
ইমরান- নাফিসা স্পিকিং! ফোন কই থাকে তোমার!
নাফিসা- আহ, চেচিয়ে বলতে হয়! আমি তোমার মতো কানে কালা না, আস্তে বললেও শুনি।
ইমরান- কতবার কল দিছি, হিসাব আছে!
নাফিসা- হিসাব করা তোমার কাজ। আর আমার ফোন তো তুমিই রাখছো, আমি কি জানি ফোনের খবর!
ইমরান- ফোন ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে। কি করছো এখন?
নাফিসা- টিভি দেখি।
ইমরান- সাথে কে?
নাফিসা- ছোট মামি, বড় মামি, হিমেল, রিয়াদ।
ইমরান- মা আর চাচির সামনে বসে আমার সাথে কথা বলছো! বুদ্ধিসুদ্ধি মাথায় নেই! এই মুহূর্তে চুপচাপ রুমে যাও আমি তোমার ফোনে কল করছি… হারি আপ..
ইমরান আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো। নাফিসা ড্রয়িং রুম থেকে উঠে এসে নিজের রুমে এলো। ড্রয়ার থেকে ফোন নিয়ে দেখলো ইমরান কল দিয়েই যাচ্ছে! রিসিভ করেই বলা শুরু করলো,
নাফিসা- মা চাচির সামনে কথা বলেছি তো কি হয়েছে! আমি কি বসে বসে প্রেমালাপ করছিলাম!
ইমরান জবাব না দিয়ে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে রইলো নাফিসার কথায়! হঠাৎ করেই হাহাহোহো করে হেসে উঠে বললো,
ইমরান- আচ্ছা, তাহলে এখন প্রেমালাপ করো একটু। এখন তো একা আছো!
নাফিসা- নট ইন্টারেস্টেড!
ইমরান- ওকে, আমি বাসায় ফিরে ইন্টারেস্টেড করে দিবো। এখন একটা কাজ করো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারেই ল্যাপটপটা রাখা আছে। আমি ফাইল নেম বলে দিচ্ছি, একটা এড্রেস আমাকে এখন মেইল করবা।
নাফিসা- ওয়েট…
নাফিসা ল্যাপটপ নিয়ে ইমরানের কথা অনুযায়ী কাজ করলো। কাজ শেষে আরও কিছুক্ষণ কথা বললো ইমরান। সেটা কথা নয়, প্রেমালাপই! ল্যাপটপে কিছুক্ষণ মুভি দেখলো। অত:পর একটু ঘুমিয়েছিলো। হিমেল আর রিয়াদ এসে ডেকে তুললো গোসল করিয়ে দেওয়ার জন্য! ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো প্রায় দুইটা বেজে গেছে! ভালো সময়ে ডেকেছে! নাফিসা চোখ খুলে তাকাতেই পন্ডিত দুইটা ইতিমধ্যে বাথরুমে ঢুকে কল ছেড়ে পন্ডিতি শুরু করে দিয়েছে! নাফিসা হেসে চুল খোপা করে বাথরুমে এলো। গোসল করে নামাজ ও লাঞ্চ সেড়ে টিভি দেখছিলো। মামিরা এসে বসলে লুডু বই নিয়ে তারা লুডু খেললো। মামিদের সাথে খেলে অন্যরকম মজা পেয়েছে! কারণ ছোট মামি ছাড়া কেউই দক্ষ না! হিমারা স্কুল থেকে এসে পড়েছে। হিয়া ধপাস করে সোফায় বসে পড়লো। হিমা পেট চেপে ধরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
হিমা- আম্মু গো, তারাতাড়ি খাবার দাও। আজ টিফিন খাইনি, পেটের ভেতর ইদুর দৌড়াদৌড়ি করতাছে!
নাফিসা- হায় হায়! কি বলছ! এক মিনিট দাড়া…
হঠাৎ নাফিসার এমন আচরণে সবাই উৎফুল্ল হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো! নাফিসা একমিনিটের মধ্যে আবার ড্রয়িং রুমে হাজির হলো। এক হাতে পানির গ্লাস আরেক হাতে ইঁদুরের ওষুধ! ওষুধের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
নাফিসা- নে ধর। তারাতাড়ি খেয়ে নে। এখনি সব ইদুর মরে যাবে!
হিমা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে! বাকিরা প্রথমে স্তব্ধ হয়ে এখন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো!
নাফিসা- এভাবে আছিস কেন! নে ধর! দেড়ি করলে আবার বাড়িতে ইদুর ছড়িয়ে পড়বে। তারাতাড়ি বিনাশ কর।
হিমা- ইদুর মারতে এসেছো নাকি আমাকে মারতে!
নাফিসা- কই, প্যাকেটে তো লেখা নেই হিমাকে মারার ওষুধ! এখানে তো লেখা আছে ইদুর মারার ওষুধ!
হিমা- ধ্যাত! লাগবে না খাবার, ক্ষুধা মিটে গেছে আমার!
নাফিসা- মামি একজনের খাবার বাচিয়ে দিলাম।
সবাই হেসে উঠলো। হিয়া এসে নাফিসার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে নিলো। ব্যাগ নিয়ে আবার সবাই উপরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে এলো।
সন্ধ্যায় ইমরান এলো শুধু ছয়টা ক্রেকার্স চিপস নিয়ে। হিমেল রিয়াদ দেখেই লাফানো শুরু করেছে। তিনটা তিনটা করে দুজনের কাছে দিয়ে নাফিসার কাছে পাঠালো। পিচ্চিদের সাথে ইমরানও দোতলায় এলো। নাফিসা হিমাদের সাথে পড়তে বসেছে। পিচ্চিদের কাছে চিপস দেখেই বুঝতে পারলো ইমরান এসেছে। নাফিসা উঠে নিজের রুমে এলো। ইমরান ঘড়ি আর ফোন ড্রেসিং টেবিলে রেখে শার্ট খুলছে।
নাফিসা- আইস্ক্রিম আর কিটক্যাট কই?
ইমরান- দোকানে।
নাফিসা- আনোনি কেন?
ইমরান- মনে ছিলো না। এগুলো বাসার পাশের দোকান থেকে কিনেছি।
নাফিসা- মনে ছিলো না, নাকি ইচ্ছে করে আনোনি!
ইমরান- কাজ করতে করতে আমার দিন শেষ আরেকজন খাওয়ার জন্য পড়ে আছে!
নাফিসা- হুহ্, কাজ করতে করতে দিন শেষ! কি কাজের মানুষটা!
নাফিসা বিড়বিড় করতে করতে আলমারির কাছে গেলো। ইমরান তার বিড়বিড় শুনে বললো,
ইমরান- আমাকে দেখে কি ক্লান্ত মনে হচ্ছে না! নিজের কাছে তো পাগল পাগল মনে হচ্ছে!
নাফিসা- তুমি তো পাগল ই। গোসল করবে এখন?
ইমরান- না, হাতমুখ ধুবো।
নাফিসা- নাও, ধরো।
নাফিসা ইমরানের হাতে তোয়ালে দিয়ে হিমাদের রুমে চলে এলো বাচ্চাদের চেচামেচি শুনে। চিপস নিয়ে যুদ্ধ লেগেছে! নাফিসা সবার হাতে একটা করে দিয়ে পিচ্চিদের প্যাকেট ছিড়ে তার নিজেরটা খেতে খেতে পিচ্চিদের নিয়ে আবার রুমে এলো। ইমরান হাতমুখ ধুয়ে রুমে এলো।
নাফিসা- খাবে তুমি?
ইমরান- না।
না বলেছ ঠিকই কিন্তু নাফিসা তার মুখের সামনে ধরায় হা করে মুখে নিয়েই নিলো। কাছে এসে নাফিসার গালে গাল স্পর্শ করে বললো,
ইমরান- সত্যিই মনে ছিলো না। মনে থাকলে কাল এনে দিবো কিটক্যাট আর আইস্ক্রিম।
নাফিসা- থাক, আর লাগবে না।
ইমরান- সিরিয়াসলি?
নাফিসা- হুম।
ইমরান হিমেলের সামনে হা করে বসলে হিমেল একটা চিপস মুখে তুলে দিলো। হিমেলকে দেখে রিয়াদও ইমরানের মুখে দিলো।
নাফিসা- আহ! কি মহব্বত! এতোক্ষণ ওইগুলারে মাইর দিয়া এখন আবার চিপস দেয়!
ইমরান- সবাই মতলব বুঝে! ওরা তো খেতে আসে আর আমি তো এনে দেই!
ইমরান পিচ্চিদের কপালে একটা করে চুমু দিলো, পিচ্চিরাও রিপিট করলো। দাড়িয়ে নাফিসার কপালেও একটা চুমু দিলো নাফিসা হাসতে হাসতে দরজার কাছে এসে বললো,
নাফিসা- খাওয়ার সময় অন্য কাজ করতে নেই। সুতরাং আমি রিপিট করতে পারবো না।
ইমরান মুচকি হেসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো। নাফিসা সেখান থেকেই বললো,
নাফিসা- খাবার উপরে নিয়ে আসবো?
ইমরান- এখন খাবো না। ইশার নামাজ পড়ে খাবো। পড়তে বসো, যাও।
নাফিসা চলে এলো। ইমরান পিচ্চিদের নিচে নিয়ে গেলো। আযান দিলে নামাজ পড়তে গেলো। সবাই একসাথে ডিনার করে নিলো। উপরে আসতেই হিমা বললো,
হিমা- ভাইয়া, ক্লাসে তিনটা অংক দিছে। একটা করেছি আর দুইটা পারি না।
ইমরান- রুমে যা। আমি আসছি।
নাফিসা- অংক পারোছ না, আমাকে বললেই হয়! আমি অংকের জাহাজ না, কিন্তু নৌকা। তোদের বই মনে কর পুরোটাই আমার মগজে আছে।
ইমরান- এসএসসি তে কতো জানি পাইছেন?
নাফিসা- নম্বর তো দেখায়নি তবে A+ আসছে।
ইমরান- বাব্বাহ! এখন অনার্সের চিন্তা করেন। বেশি দিন নাই পরীক্ষার।
নাফিসা- এখন আর পড়বো না। আজকের মতো পড়া শেষ।
ইমরান- নাফিসায়ায়ায়া…
নাফিসা দৌড়ে রুমে চলে এলো। ইমরান হিমা হিয়াকে অংক বুঝিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের আলমারিতে জায়গা না থাকায় নাফিসা নানুর রুমে ছোট কাঠের আলমারিটা খুলে ধুয়ে দেওয়া বিছানার চাদর ভাজ করে রাখলো। হঠাৎই চোখ পড়লো নানুর কাপড়ের উপর! সাদা কাপড়টা নিয়ে তার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো! দাতে দাত চেপে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে কাপড়টা হাতে নিলো। আলমারি লাগিয়ে রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমে এলো। পাউডার আর লাল লিপস্টিক নিয়ে এ রুমের লাইটও অফ করে রেহানের রুমে এলো। সিড়ির ধারের লাইটও অফ করে দিয়েছে। জামার উপর দিয়েই কোন মতো শাড়িটা পেচিয়ে পড়ে নিলো। আর মুখে ইচ্ছে মতো পাউডার দিয়ে সাদা ভুত সাজলো। ঠোঁটের চারপাশে ছ্যাচড়াব্যচড়া করে লাল লিপস্টিক লাগালো। রেহানের রুমের লাইটও অফ করে বসে আছে। দোতলায় এখন শুধু হিমাদের রুমেই লাইট জ্বালানো আর সব অন্ধকার। পড়া শেষ হতেই ইমরান রুমে চলে এলো। লাইট নেভানো যে নাফিসার কাজ সেটা বুঝতে বাকি নেই। নিজের রুমের লাইট জ্বালিয়ে নাফিসাকে দেখতে পেল না। ভেবেছে নিচে গেছে তাই আর ডাকলো না। রেহান তার রুমের দরজায় আসতেই নাফিসা সামনে এসে চিকন কন্ঠে অদ্ভুত শব্দ করে ভয় দেখালো। রেহান বেচারা ভয়ে চিৎকার করে এক দৌড়ে হিমাদের রুমে এসে খাটে উঠে পড়লো। ভয়ে তার মুখ থেকে আর কথা বের হচ্ছে না।
হিয়া- কি হইছে! এখানে উঠলি কেন! নাম, বিছানা ঠিক করবো।
রেহান- ভভ…ভুত!
হিমা- কিসের ভুত! নাম.. আয়ায়ায়ায়ায়ায়া….
নাফিসা তাদের রুমে আসতেই সবগুলো ভয়ে চিৎকার করে খাটে উঠে পড়লো। এ তো ঘোমটা দেওয়া ভুত! নাফিসা খাটের দিকে যেতেই তারা চিৎকার করতে করতে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে! ইমরান তাদের চিতকার শুনে বেরিয়ে এলো। নাফিসাকে চিনতে তার কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছে।
ইমরান- নাফিসা স্টপ। ভয় পাচ্ছে ওরা।
নাফিসা- হুউউউ… আমি নাফিসা না! ছদ্মবেশী ভুত! তোদের সব কটার ঘাড় মটকে খাবো! হা হা হা!
মোটা কন্ঠ করে অদ্ভুত শব্দ করে নাফিসা কথা বলে হাসতে লাগলো ! ইমরানকে দেখে ও তার কথা শুনে তারা হাফ ছেড়ে বাচলো! সত্যিই খুব ভয় পেয়েছে। সবাই হাপাচ্ছে! ইমরান কাছে এসে শাড়ির লম্বা আঁচল তুলে নাফিসার হাতসহ পেচিয়ে ফেললো। নাফিসা হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো! ইমরান আচমকা নাফিসাকে কোলে তুলে নিলো।
ইমরান- ধরে ফেলেছি ভুতকে! এবার দেখি কিভাবে ঘাড় মটকান! ভুতকে এবার মানুষ বানিয়ে ফেলবো, চলুন। এই তোরা ঘুমা সব।
নাফিসা- আয়ায়ায়া… আমার ভয় দেখানো শেষ হয়নি! নামাও, আমি ভয় দেখাবো আরও। নামাও আমাকে! এএএ এহহেএএএ…!
নাফিসা ইমরানের কোলে ছটফট করছে, কিন্তু হাতসহ পেচানো থাকায় নড়তে পারছে না। ইমরান তাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো, বাকিরা সবাই হাসছে। রেহান ভয়ে আর নিজের রুমে গেলো না, হিমাদের সাথেই থাকবে। ইমরান নাফিসাকে খাটে নামিয়ে দরজা লক করতে গেলো। তার মজাটা নষ্ট করে দেয়ায় হাত ছুটিয়ে নাফিসা জোর গলায় বললো,
নাফিসা- ইমরাইন্নার বাচ্চাআয়ায়ায়া….
ইমরান দরজা লক করে মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে নাফিসার কাছে এলো।
ইমরান- কোথায় আমার বাচ্চা? বলো, বাচ্চা কোথায়? এখানে নাকি এখানে! কোথায়?
ইমরান নাফিসার পেটে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। নাফিসা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এদিকে সেদিক লাফালাফি করছি ইমরানকে থামানোর জন্য। ইমরান থামছে না। হাসতে হাসতে হঠাৎ করে নাফিসা বিষম খেল! এবার কাশতে কাশতে আর শ্বাস নিতে পারছে না! ইমরান ভয় পেয়ে গেল! এক টানে নাফিসাকে সোজা করে বসিয়ে দিলো! নাফিসার মাথায় হাতাচ্ছে, বুকে মালিশ করতে লাগলো! দৌড়ে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে পানির গ্লাস নিয়ে এলো। পাগলের মতো করছে ইমরান! আর এদিকে নাফিসা কাশছে আর ইমরানকে দেখছে! কাশি একটু কমতেই ইমরান পানি খাওয়ালো। কাশি থামলে নাফিসা ইমরানের দিকে তাকিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো।
ইমরান- ঠিক আছো তুমি?
নাফিসা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। ইমরান একটানে নাফিসাকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো! এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো কলিজাটা তার ছিড়ে যাচ্ছে! খুব শক্ত করে বাহুডোরে বেধে রেখেছে! চুলের উপরেই মাথায় অসংখ্য চুমু দিতে দিতে বললো,
ইমরান- সরি, বুঝতে পারিনি। আর দিবোনা কখনো সুড়সুড়ি। সরি…
নাফিসা মুচকি হেসে ইমরানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
নাফিসা- ঠিক আছি তো আমি। এভাবে বসে পায়ে ব্যাথা পাচ্ছি, ছাড়ো।
ইমরান ছেড়ে পা সোজা করে বসালো।
ইমরান- এগুলো কি পড়েছো! কোথায় পাইছো এটা!
নাফিসা- নানুর শাড়ি। হিহিহি….
ইমরান- পড়া ও তো হয়নি। দেখি খুলো।
নাফিসা- আরে আরে! কি করছো!
ইমরান এক টানে পেচানো শাড়ি খুলে ফেললো। ঢিল দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো। নাফিসা খাট থেকে নামতে গেলে তাকে টেনে শুয়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করলো ইমরান। নাফিসা দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে বললো,
নাফিসা- ছাড়ো, রেহানের রুমে আমার ওড়না।
ইমরান- ওড়না দিয়ে কি করবা?
নাফিসা- ছি! ওড়না দিয়ে কি করে জানো না!
ইমরান- এখন ওড়না লাগবে না।
নাফিসা- আমার লজ্জা লাগে!
ইমরান- আস্তে আস্তে সব দূর হয়ে যাবে।
ইমরান নাফিসার হাত মুখ থেকে সরিয়ে টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে লিপস্টিক মুছে দিলো। মুখ থেকে পাউডার সরিয়েও হালকা করে দিলো। নিজেকে সামলাতে না পেরে ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো। নাফিসা ইমরানের টিশার্ট খামচে ধরলো। ঠোঁট ছেড়ে থুতনিতে, গলায় কাধে ছোট ছোট কামড় বসিয়ে দিচ্ছে। নাফিসা প্রতিটি স্পর্শে কেপে উঠছে আর এক অজানা অনুভূতিতে মিশে যাচ্ছে! একসময় ইমরান টিশার্ট খুলে ফেললে নাফিসা ঝাপটে তার বুকে পড়ে রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here