অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 39

0
2552

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 39
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
সারাদিন বিয়ে বাড়িতে কাটালো। রিমার বিদায়ের সময় এক একজনের কি কান্না! কারো কান্না দেখলে নাফিসারও অটোমেটিক কান্না চলে আসে! রাফসান ভাইয়াও বোনের জন্য কেদেছে। একে একে মেহমান গুলোও বিদায় নিচ্ছে।
বিদায়ের বেশ কিছুক্ষণ পর ইমরান এসে বললো ঘুরতে যাবে। নাফিসা, হিমা, হিয়া, ইতি, রেহান, ইমরান ও রাফসান বেরিয়ে গেলো ঘুরতে। ইমরান ও রাফসানের কাধে একটা করে ব্যাগ আছে! তারা হাটতে হাটতে নাফিসা বললো,
নাফিসা- ব্যাগ নিয়েছো কেন? কোথায় যাবে?
ইমরান- এই যে ঘুরতে বেরিয়েছি।
নাফিসা- এখানে ব্যাগের তো কোনো প্রয়োজনই পড়ে না!
ইমরান- বিয়ে বাড়ি, বুঝো না! চোর টোর যেকোনো সময় আসতে পারে। তাই মূল্যবান সম্পদ কাধে নিয়ে ঘুরছি।
নাফিসা- আযব কথাবার্তা!
তারা কথা বলতে বলতে ও হাটতে হাটতে কমলাপুর রেলস্টেশনে এলো। বাদাম খাচ্ছে, কখনো চিপস খাচ্ছে আর হাটছে। যাত্রীরা তারাতাড়ি উঠার চেষ্টা করছে। ট্রেন ছেড়ে দিবে হয়তো! রেলস্টেশনে দাড়িয়ে তারা আবার ফুসকা খেতে শুরু করলো। এক রকম প্রতিযোগিতা চললো তাদের মাঝে! তবে মেয়েদের সাথে ছেলেরা পারলো না! ট্রেনের বেল বেজে গেছে আর তারা কাছেই দাড়িয়ে। যাত্রীরা সব উঠে গেছে, তেমন ভীড় নেই।
রাফসান নিচে থেকেই তার কাধের ব্যাগটা ঢিল মেরে ট্রেনে ফেলে দিলো। ইমরান নিজের ব্যাগসহ ট্রেনে উঠে নাফিসার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো!
কেউই কিছু বুঝতে পারছে না! শুধু রাফসান আর ইমরান হাসছে আর বাকিরা সবাই হতবাক!
নাফিসা- তুমি ট্রেনে উঠলে কেন?
ইমরান- তুমিও উঠো।
নাফিসা- পাগল হয়ে গেছো! ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে তো নামো!
ইমরান- সাঈফা, উঠো।
রাফসান- নাফিসা, উঠে যাও।
নাফিসা হতবাক হয়ে দাড়িয়েই আছে! এদিকে রাফসান বারবার বলছে উঠতে আর ইমরান তার দিকে হাত বাড়িয়েই রেখেছে। ট্রেন চলতে শুরু করেছে! বাকিরা সবাই চিৎকার করে ইমরানকে নামতে বলছে! ইমরান তো চলে যাচ্ছে! নাফিসা আর কিছু না ভেবে দৌড়ে ইমরানের হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়লো! এইটুকু দৌড়ে চলতি ট্রেনে উঠে নাফিসা হাপিয়ে গেছে! খুব শক্ত করে ইমরানকে জড়িয়ে ধরে আছে সে! পিচ্চিরা সব চেচামেচি করছে। ইমরান মাথা বাড়িয়ে রাফসানকে জোরে বললো,
ইমরান- রাফসান, সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে যা। মা কে বলে দিস!
রাফসান হেসে হাতে ইশারা করে বিদায় জানালো সাথে বাকিরাও! ইমরানকে ধরে নাফিসাও মাথা বাড়িয়ে সবাইকে ইশারা করে বিদায় জানালো। স্টেশন ছেড়ে গেছে ট্রেন, তারা এখনো দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে। ইমরান এক হাতে দরজার হাতলে ধরে আছে অন্যহাতে নাফিসাকে ধরে রেখেছে। নাফিসার খুব ভালো লাগছে! ইমরান তাকে এমন একটা চমৎকার সারপ্রাইজ দিবে সেটা নাফিসা ভাবতেই পারেনি! আজ প্রথম ট্রেনে উঠেছে সে। অন্যান্য যেখানেই গিয়েছ শুধু বাস ভ্রমণ! দু’হাতে ইমরানকে আকড়ে ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নাফিসা। ইমরান ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো “কি?” প্রতুত্তরে নাফিসা মুচকি হাসলো। প্রোগ্রাম উপলক্ষে যা পড়েছিলো এখনো সেভাবেই আছে নাফিসা। চেঞ্জ করেনি। শাড়ির আঁচলটা উড়ছে বিধায় পেচিয়ে কোমড়ে গুজে নিলো। ট্রেনের গতি এখন অনেক বেড়ে গেছে। প্রচন্ড বাতাস লাগছে তারউপর তারা দরজার সামনে দাড়িয়ে! ইমরানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে নাফিসা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনেই রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে! নাফিসা জিজ্ঞেস করলো,
নাফিসা- কোথায় যাবো আমরা?
ইমরান- ট্রেন যেদিকে নিয়ে যায়!
নাফিসা- সেটা তো জানিই! আমাদের গন্তব্য কোথায়?
ইমরান- কক্সবাজার।
নাফিসা আরো জড়ো হয়ে উৎফুল্লভাবে বললো,
নাফিসা- থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ!
ইমরান- এটায় কিছুই হলো না!
নাফিসা মাথা তুলে তার দিকে তাকালো। ট্রেনের ভেতরের দিকে একটু তাকিয়ে এদিকে কাউকে না দেখতে পেয়ে চট করেই ইমরানের গালে একটা চুমু দিলো! আবার আগের ন্যায় থেকে বললো,
নাফিসা- এবার হয়েছে?
ইমরান- হাহাহা…. চলো ভেতরে যাই।
নাফিসা- না, এখানে থাকতেই ভালো লাগছে।
ইমরান- ভালো লাগলেও বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। স্টাফরা দেখলে আবার চেচামেচি করবে। ভেতরে সিট ফাকা আছে। পরের স্টেশনে গেলে আবার সিট পাবো না।চলো।
আরও পাচ মিনিটের মতো এখানে থেকে তারা ব্যাগ দুইটা সাথে নিয়ে ভেতরে এসে সিটে বসলো। নাফিসার সিট সবসময়ই জানালার পাশে। ইমরান তার পাশেই বসা। নাফিসা গহনা গুলো খুলে ব্যাগে রেখে দিলো। হঠাৎ করেই পাশের সিটে চোখ পড়লো। একজন গর্ভবতী মহিলা আর একজন পুরুষ একসাথে বসে আছে। যেভাবে বসেছে এমনিতেই বুঝা যাচ্ছে তারা কাপল হবে হয়তো। পুরুষ লোকটির পেট এতোটাই বড়, যতটা বড় গর্ভবতী মহিলারও না! নাফিসা ফিক করে হেসে উঠলো! নাফিসাকে হাসতে দেখে ইমরান তার দিকে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- কি হয়েছে?
নাফিসা একহাত ইমরানের কাধে রেখে মুখ একটু কাছে এনে ফিসফিস করে বললো,
নাফিসা- স্বোয়ামি, একটু পাশের সিটে তাকাও।
ইমরান- কেন?
নাফিসা- আরে তাকাও না একবার।
ইমরান একবার ওদিকে তাকিয়ে আবার নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- তাকিয়েছি, কি হয়েছে?
নাফিসা- বাচ্চা কি ওই মহিলার পেটে নাকি পুরুষ লোকটির পেটে আছে?
এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে ইমরান বড় বড় চোখ করে তাকালো নাফিসার দিকে! ইমরানের দৃষ্টি দেখে নাফিসা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে হাসছে! হাসি যেন তার থামছেই না! হঠাৎ ইমরান পেছন দিয়ে এক হাত নিয়ে নাফিসার পেটে রাখলো। কাধে থুতনি রেখে কানের কাছে মুখ এনে বললো,
ইমরান- ট্রাই করে দেখতে হবে বাচ্চা তোমার পেটে আসে নাকি আমার পেটে।
নাফিসা- ছি!
নাফিসার হাসি আগের চেয়ে কমে লজ্জায় পরিনত হয়েছে! ইমরান তাকে লজ্জা পেতে দেখলে আরও লজ্জা দিবে! তাই সে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করতে ইমরানের দিকে ঘুরে ইমরানের পেটে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
নাফিসা- না, ঠিক আছে।
ইমরান ছাতামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। তাই জিজ্ঞেস করলো,
ইমরান- কি ঠিক আছে?
নাফিসা- তোমার পেট ঠিক আছে। শুনেছি যারা ঘুষ খায় তাদের পেট নাকি ইয়া বড় হয়ে যায়! তোমার পেট তো বড় না, তার মানে তুমি ঘুষ খাও না। সলিট মানুষ!
ইমরান হেসে উঠলো নাফিসার কথায়। তাদের বিপরীত সিটে কোনো মানুষ না থাকায় নাফিসা জুতা খুলে পা তুলে দিলো সিটের উপর। এক সিটে বসা অন্য সিটে পা দেয়ায় ইমরান বললো,
ইমরান- পা নামাও। লোকজন উঠলে বসবে না!
নাফিসা- যখন উঠবে তখন না বসবে! তখন সরিয়ে নিবো। আগে আরাম করে ভাড়ার উশুল তুলে নেই!
নাফিসা ইমরানের উপর হেলান দিয়ে আরাম করে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। নাফিসার সুবিধার্থে ইমরান আরেকটু মোচড় দিয়ে বসে সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। দুজনেই টুকটাক গল্প করছে আর বাইরে তাকিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। রাতের বেলা ট্রেন জার্নি করার মজাই আলাদা! তাও যদি হয় সেটা প্রিয় মানুষের সাথে!
ঘুমে নাফিসার চোখের পাতা এক হয়ে যাচ্ছে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামলে নাফিসাকে ডেকে তুলে ইমরান নেমে ফাস্টফুড জাতীয় কিছু কিনে নিয়ে এলো। দুজনেই হালকা খাবার খেয়ে নিলো। বিপরীত সিটে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা বসেছে কোলে একটা দু বা তিন বছরের বাচ্চা। ট্রেন আবার ছুটে চলেছে। এমনিতেই ঠান্ডা আবহাওয়া তার উপর সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত তীব্র বাতাস লেগেছে গায়ে যার ফলে এখন শীত লাগছে! নাফিসার শরীর ঠান্ডা দেখে ইমরান ব্যাগ থেকে মোটা চাদর বের করলো। এটাও নিয়ে এসেছে! আর কি কি এনেছে কে জানে! বাসা থেকে তাহলে সব ব্যবস্থা আগেই করে এসেছে। ব্যাগ তো আর নাফিসা গুছায়নি। ইমরানই গুছিয়েছে বারবার। নাফিসা পা সিটে তুলে শাড়ি মুড়িয়ে বসলো। ইমরান নিজেকেসহ নাফিসাকে জড়িয়ে চাদরের মাঝে গুটিয়ে নিলো।
চলে এসেছে কক্সবাজার। সকালে নাস্তা সেড়ে এক রিসোর্টে উঠেছে দুজন। ট্রেনে ভালো ঘুম হয়নি তাই ইমরান ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত। নাফিসা বাথরুম থেকে বেরিয়ে ইমরানকে টানতে শুরু করলো।
নাফিসা- এই তুমি শুয়ে পড়লে কেন! উঠো, সমুদ্রের তীর ঘুরবো।
ইমরান- পরে।
নাফিসা- না, এখন।
ইমরান নাফিসাকে টেনে খাটে ফেলে দিলো। কম্বল টেনে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে বললো,
ইমরান- এসেছি ই তো ঘুরার জন্য। আগে ঘুমিয়ে নিজে ফ্রেশ হও পরে ঘুরাঘুরি।
নাফিসা- আমি ফ্রেশই আছি। চলো।
ইমরান- আমি ফ্রেশ নেই। নড়াচড়া করবে না, চুপচাপ ঘুমাও।
নাফিসার আর কিছু বলার সুযোগ নেই। ঘুমিয়ে পড়লো দুজনেই। ইমরানের ডাকে চোখ খুলে তাকাতেই ইমরান বললো,
ইমরান- সাঈফা, উঠো। আড়াইটা বেজে গেছে। যোহরের নামাজ পড়বে না?
নাফিসা ধরফরিয়ে উঠে বসলো! আড়াইটা বেজে গেছে! বলেছিলো সমুদ্রের নোনা জলে গোসল করবে ইমরানের জন্য পারলো না। করলো কতোক্ষন রাগারাগি! ইমরান বললো, কাল গোসল করবে সমুদ্রে। নাফিসা বাথরুমে গোসল করে ওড়না বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিলো। ইমরানও নাফিসার ওড়না বিছিয়েই নামাজ আদায় করেছে। দুপুরের খাবার কিনে রুমে নিয়ে এসেছে। তারপর তারা ঘুরতে বের হলো। নাফিসা লং কটি পড়েছে আর ইমরান টিশার্ট আর জিন্স ফোল্ড করে নিয়েছে। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাটার সময় সামনে পড়লো তিশা! সাথে তিশার হাসব্যান্ড আর কোলে বাচ্চা। একে অপরকে দেখে সবাই অবাক! ইমরানকেসহ তাদের বন্ধুবান্ধব সবাইকেই চিনে তিশার হাসব্যান্ড। নাফিসাকে পরিচয় করিয়ে দিলো ইমরান। ইমরান আর তিশা এমনভাবে কথা বলছে এরা যে কখনো প্রেমিক প্রেমিকা ছিলো বুঝাই যাচ্ছে না! নাফিসা শুধু হতবাক হয়ে তাদের কথা শুনছে! তিশারা নাকি আরও দুদিন আগে এসেছে আগামীকাল চলে যাবে।
তিশা- তোরা দুজনেই এসেছিস নাকি পরিবারের আরও কেউ এসেছে সাথে?
ইমরান- না দুজনেই। আর কেউ না।
তিশা- বাব্বাহ! বিয়ের পর প্রথম হানিমুনে কক্সবাজার! আফসোস তোর বিয়েতে যেতে পারলাম না!
ইমরান শুধু মুচকি হাসলো। নাফিসার মাথায় সব গোলমাল লেগে যাচ্ছে! এখন তো ইমরানকে অন্যভাবে সন্দেহ হচ্ছে! তিশা আপু তো মনে হয়না ওর সাথে রিলেশনে ছিলো কখনো! তাহলে কি একতরফা প্রেম ছিলো! তিশার অজান্তে কি শুধু ইমরান তিশাকে পছন্দ করতো! হাজার কথা চিন্তা করছে নাফিসা!
দশ মিনিটের মতো তাদের সাথে আড্ডা দিলো। তারা আবার অন্যপ্রান্তে চলে গেলো নাফিসা ইমরানের সাথে হাটতে লাগলো। আসরের আযান দিলে তারা রিসোর্টে এসে নামাজ পড়ে নিলো। কোনো প্রয়োজনে ম্যানেজার ডেকেছে ইমরানকে। তাই সে নিচে যাবে। নাফিসার মনের ভেতর খুচুরখুচুর করছে কিছু। বের হতে যাবে এমন সময় বললো,
নাফিসা- কয়টা প্রেম করেছো জীবনে?
ইমরান- এতো দিনে প্রেমের খবর! একশো একটা প্রেম করেছি।
নাফিসা- আমি সিরিয়াস কোশ্চেন করেছি ,সুতরাং সিরিয়াসলি আনসার দিয়ে যাবে। এজ এ বয়ফ্রেন্ড, কয়টা মেয়েকে ভালোবেসেছো আজ পর্যন্ত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here