অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 4
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা- এতোক্ষণ সময় লাগে রেডি হতে! এক এক জনের সাজ দেখলে গা জ্বলে যায়! সেখানে যাবো কখন আর আসবো কখন! বাসায়ই ২টা বেজে গেছে! ভাইয়া মাহিকে মায়ের কাছে দিয়ে চলুন সাঈদ, ইফাজকে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ি। ওদের যেতে হবে না।
মাহিন- হাহাহা…. দেখো আরও ২ঘন্টা লাগবে হয়তো…
শান্তা- এহহ! আগে রেডি হয়ে একেবারে দাপটে পড়েছে! সেজেছি আমরা!
নাফিসা- তাহলে এতো দেড়ি কেন, আমিও তো রেডি হয়েছি এতো সময় লেগেছে! আল্লাহ বাচাইছে হিমালয় আর ইয়াহিয়া খান নেই এখানে! তাহলে বাসায়ই মাগরিবের আযান দিতো!
ইমা- হাহাহা… রেডি আমরা, চল এবার।
নাফিসা- ভাইয়া, ফাহিম ভাইয়া কোথায় আছে কল করে জানুন।
মাহিন- চলো, যেতে যেতে কল করি।
(মাহিন স্যার এর গাড়িতে সবাই রওনা দিলো। নন্দন পার্কের সামনে ফাহিম ভাইয়ার গাড়ি!)
নাফিসা- ফাহিম ভাইয়া তো আগেই এসে বসে আছে!
মাহিন- আমরা মাঝরাস্তায় থাকতেই ভাইয়া এসেছে।
(ইফাজ তাদের গাড়ি দেখে দ্রুত নেমে দৌড় দিলো। তারপর একে একে সবাই নামলো। ইফাজ গাড়ির কাছে যেতেই ফাহিম আর ইমরান বের হলো গাড়ি থেকে!)
নাফিসা- ভাইয়া! তুমি এখানে!
ইমরান- না আমার প্রেতাত্মা এখানে, হাহাহোহো…
নাফিসা- শাটআপ! তুমি আসছো তাহলে হিমা, হিয়া, রেহানকে সাথে আনলে না কেন?
ইমরান- আমি বাসা থেকে আসিনি, অফিস থেকে এসেছি।
নাফিসা- এমন সাহেবি বেশে অফিস যাও!!
ইমরান- ফকিরের বেশে যাওয়ার কথা ছিলো অফিস!
নাফিসা- (ভেংচি কেটে) আহ! কি ভাব, যেন ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেছে!
ইমরান- (মাথা চুলকাতে চুলকাতে) ব্যারিস্টার তো পাশ করিনি, কিন্তু মাস্টার্স পাশ করেছি।
নাফিসা- মাথা চুলকাও কেন! উকুন আছে নাকি? হিহিহিহি….
ইমরান- হুহ! তুই বুঝবি কি! এটা স্টাইল..
নাফিসা- হাহাহা….
(কথা বলতে বলতে দুজন কোথায় চলে এসেছে খেয়াল ই নেই কারো! “হঠাৎ এক লোক বললো ম্যাম, টিকেট দেখান।” দুজনেই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো! পেছনে তাকিয়ে দেখলো হাসতে হাসতে বাকিরাও আসছে। ফাহিম ভাইয়া এসে সবার টিকেট দেখালো।)
শান্তা- বাবাহ! এতো আলাপন জমা! আমরা যে আশেপাশে আছি সে খেয়ালই নেই কারো!
ইমরান- কেন! তোর খেয়াল রাখার লোক নেই?
শান্তা- সে তো আছেই..
ইমরান- তাহলে আর কি, যা ভেতরে যা। নাহলে গেইট বন্ধ করে দিবে।
শান্তা- হিহিহিহি….
(সবাই ভেতরে প্রবেশ করলো। প্রথমে সম্পূর্ণ পার্ক ঘুরে দেখলো। এরিয়া বেশি বড় না তবে ভেতরের পরিবেশটা অনেক সুন্দর। সবাই ছবি তুললো তবে আজ ক্যামেরা নয়, মোবাইলে তুলেছে। নাফিসা মূর্তিগুলোর সাথে ভেংচি কেটেও অনেক ছবি তুলেছে। অত:পর বরফের ঘরে এলো সবাই। মানুষ খুব কম এখানে। মিউজিক বেজে চলেছে সাথে ডিজে লাইটিং! নাচতে তো হবেই সবাইকে, যদিও কেউই নাচেনি হাহাহা! সাঈদ আর ইফাজের ওরা-দুরা নাচ! নাফিসার বরফের উপর লাফালাফি! কয়েকবার পিছলেও পড়ছিলো পাশে ইমরান থাকায় রক্ষা! অত:পর তারা রাইডে চড়ার জন্য এলো। রাউন্ড রাইডে নাফিসা উঠেনি। অল্পতেই মাথা ঘুরিয়ে পড়বে সে! শান্তা, ইমা আপুও উঠে নি। শুধু ছেলেগুলো উঠেছে। ওয়াটার কোস্টারে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে নাফিসার ভয় করছে! আবার চড়ার ইচ্ছেও হচ্ছে খুব! এদিকে কোস্টার ম্যান গুলো দ্রুত উঠার জন্য বলছে তাদের। ফার্স্টেই সাঈদ আর ইফাজ একসাথে উঠে পড়লো, তারপর মাহিন স্যারের সাথে শান্তা, ফাহিম ভাইয়ার সাথে ইমা অবশেষে বাকি ইমরান ও নাফিসা।)
নাফিসা- ভাইয়া, আমার ভয় লাগছে!
ইমরান- এমন পিচ্ছিরা উঠে আগে চলে গেছে আর তোর ভয় লাগছে! উঠ…
নাফিসা- যদি উল্টে পড়ে যাই!!
ইমরান- বইন…. ওইদিকে সিড়ি আছে, তুই নিচে যা। আর আমি এদিকে যাই…
নাফিসা- নায়ায়ায়া, আমি যাবো…
(ইমরান কোনো উত্তর না দিয়েই উঠে পড়লো সাথে সাথে নাফিসাও ইমরানের পেছনে উঠে বসলো। কোস্টার ম্যান নৌকা ছাড়তেই নাফিসা চিৎকার করে উঠলো। নিচে নেমে সবাই হাসতে লাগলো।)
নাফিসা- আহা! মজা লেগেছে খুব! আরেকবার উঠতে চাই…
ইমরান- আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে বোধহয়! এতোক্ষণ উঠতে চায় না এখন মজা পেয়ে আবার!
(এবার তারা রোলারকোস্টারে উঠলো। এখানে সবাই একসাথে চিৎকার করেছে!)
ফাহিম- রেস্টুরেন্টে চলো, খেয়ে আসি….
ইমরান- ভাইয়া কিছু বলেছেন? জোরে বলেন, শুনিনা কিছু!
ফাহিম- ইমরান কিছু বলছো? শুনতে পাচ্ছি না… হাহাহা…
ইমরান- আল্লাহ! মেয়েদের গলায় কতো জোর দিয়েছো তুমি!
ইমা- সাধু সাজতে আসছে! তুই চিৎকার করছ নাই?
ইমরান- তোমাদের মতো এমন!
নাফিসা- চুউউপ! ভাইয়া, চলুন। আমার ক্ষুধা লাগছে খুব।
ইমরান- আসছে আর এক খাদক! বাসা থেকে আসার সময় খাস নাই?
নাফিসা- কোস্টারে উঠে হজম হয়ে গেছে!
খাওয়াদাওয়ার পর…
নাফিসা- আল্লাহ! ১প্যাকেট বিরিয়ানি ২৫০টাকা তাও আবার চিকেন! বাসায় ২৫০টাকার আয়োজন করলে প্রায় সবার খাওয়া শেষ হয়ে যেতো!
ইমরান- তোর মতো হিসেব করে তো কেউ রেস্টুরেন্ট আসে না!
নাফিসা- হুহ!
ইমরান- নাফিসা, কফি খাবি? এই কফিশপের কফি খুব মজা। এতোটুকু কাপের মূল্য ৫০টাকা।
নাফিসা- দরকার নেই আমার কফি খাওয়ার। ভাইয়া বের হন, আর থাকতে চাচ্ছি না এখানে।
মাহিন- নৌকায় ঘুরবে না?
নাফিসা- ওহ! হ্যাঁ
(কিছুক্ষণ নৌকায় ঘুরাঘুরি করে তারা বেরিয়ে এলো পার্ক থেকে।)
নাফিসা- ভাইয়া এখন কিন্তু আমাদের বাসায় যেতে হবে। কোনো কথা শুনছি না আপনার।
ফাহিম- কালকেই না এলাম
নাফিসা- তো কি হয়েছে! আজ গিয়ে থাকবেন।
ইমরান- এতো মানুষ জায়গা দিবি কোথায়?
নাফিসা- (রেগে) আমাদের বাসায় মেঝেতে থেকেছো কোনোদিন!
ফাহিম- আমি বাসায় বলে আসিনি
নাফিসা- ছোট বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন কেন! ফোন করে বলে দিন।
ফাহিম- অফিস যেতে হবে কাল
নাফিসা- আমাদের বাসা থেকে যাবেন।
ফাহিম- তাও যেতেই হবে?
নাফিসা- অবশ্যই
ইমরান- প্যাচওয়ালীর সাথে কথা বলে লাভ নেই ভাইয়া!
নাফিসা- বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। তোমার মুখ বন্ধ করতে হবে…
(নাফিসা ইমরানকে টেনে বাদামওয়ালার কাছে নিয়ে গেলো।)
নাফিসা- মামা, ২০ টাকার বাদাম দিন। (বাদামওয়ালা বাদাম দিলে) এখানে ২০টাকার বাদাম! আমাদের কলেজের সামনে থেকে কিনলে ৫টাকায় পেতাম এগুলো।
ইমরান- এটা তোদের কলেজ না।
নাফিসা- এগুলো রাখেন ৫০টাকার দিন। অর্ধেক দাম তো ছোলার মধ্যেই চলে গেলো।
বাদামওয়ালা- তা তো যাইবোই
নাফিসা- আমি ছোলা বিক্রি করবো। কিনবেন?
(বাদামওয়ালা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো!)
ইমরান- হাহাহোহো….. ছোলা তুই বাসায় নিয়ে জমা কর।
নাফিসা- (বাদাম নিয়ে) টাকা দাও।
ইমরান- কিনলি তুই, খাবিও তুই, আমি কেন টাকা দিবো!
নাফিসা- তোমাকে কি আমার রূপ দেখার জন্য এখানে এনেছি! বেশি কথা বলছো তুমি, তাই তোমার জরিমানা এটা। টাকা দিয়ে আসো, আমি গেলাম। মামা, এই ছেলের কাছ থেকে টাকা নেন। না দিলে পিটিয়ে নেন।
( বাদামওয়ালা নাফিসার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো! ভাবছে, বাদাম দিয়ে এ কোন প্যাঁচ এ পড়লো! নাফিসা চলে গেলো ইমরানকে রেখেই। ইমরান টাকা দিয়ে তারপর গেলো। নাফিসা গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলো ফাহিম ভাইয়া তার গাড়ির কাছে একা দাড়িয়ে আছে।)
নাফিসা- ভাইয়া, বাকিরা কোথায়?
ফাহিম- মাহিনের গাড়িতে চলে গেছে। সাঈদ, ইফাজ ঘুমে লুটিয়ে পড়ছে। তাই আর ওয়েট করেনি।
নাফিসা- যাক ভালো হয়েছে। নিন, বাদাম খান।
ফাহিম- না, খাও তুমি।
নাফিসা- আমিতো খাব ই।আপুদের জন্য বেশি করে আনলাম, আপুরা চলেই গেছে। নিন, ধরুন।
ইমরান- চলে গেছে ওরা?
ফাহিম- হুম।
ইমরান- ভাইয়া, আমি ড্রাইভ করি..
ফাহিম- করো…
(ইমরান ড্রাইভিং সিটে বসলো পাশে ফাহিম ভাইয়া বসে বাদাম খাচ্ছে আর পেছনে একা বসে নাফিসা বাদাম খাচ্ছে।)
নাফিসা- তুমি ড্রাইভ করছো! আবার রাস্তা ছেড়ে ঢালে নিয়ে যেও না!
ইমরান- নাফিসা যেহেতু গাড়িতে আছে গাড়ি ঢালে যেতেও পারে!
ফাহিম- হাহাহা….
ইমরান- ভাইয়া, একটা গাড়ি কিনবো। কোন ব্রান্ড ভালো হবে?
ফাহিম- ট্যাক্সি ক্যাব? নাকি মাইক্রো?
ইমরান- মাইক্রো….
ফাহিম- মার্কেটে যেটার চাহিদা বেশি, ওটাই দেখো।
ইমরান- আচ্ছা।
নাফিসা- গাড়ি কেনার কি দরকার! এতো বিলাশ বহুল জীবনযাপন ভালো না।
ইমরান- আমার জন্য কিনছি না, আপনার মামাদের জন্য দরকার।
(নাফিসা আর কিছু বললো না, চুপচাপ বাদাম খাচ্ছে)
ইমরান- কি ভাইয়া! আপনিও যেমন ইফাজের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছেন!
ফাহিম- হাহাহা… বাবা-ছেলের কানেশন তো, বোঝো না!
নাফিসা- ইফাজ যখন দুপুরে ঘুমায় আপনিও কি অফিসে থেকে ঘুমান?
ফাহিম- আমি ঝিমাই!
ইমরান- হাহাহা….! নাফিসা বাইরে হাত দিবিনা।
(একটানে গাড়ি চালাচ্ছে ইমরান। নাফিসা বাদাম খেতে খেতে জানালায় হেলান দিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কোথাও আলো, কোথাও অন্ধকার! চলন্ত গাড়িতে তীব্র গতিতে বাতাস প্রবেশ করছে। অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর…)
ইমরান- নাফিসা কি ঘুম?
নাফিসা- উহুম….
ইমরান- দেখ কোথায় এসেছি! নামবি?
(নাফিসা জানালা থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে সামনের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলো…)
নাফিসা- ওয়াও! হাতিরঝিল!! নামবো না মানে!!! গাড়ি থামাও, ভাইয়া।
(ইমরান রাস্তায় একপাশে গাড়ি থামালো। নাফিসা, ফাহিম ও ইমরান গাড়ি থেকে নামলো। লাইটগুলো জ্বালানো, মানুষের ভীড় কম। ৩ জন একসাথে নিবিড় রাস্তায় হাটতে লাগলো)
নাফিসা- আহ! কতোদিন পর অবশেষে আজ!
ফাহিম- আসোনি কখনো?
নাফিসা- উহুম। শুধু পরিকল্পনা ই করেছি, আসার সুযোগ আর হয়নি। শুনেছি এখানে নাকি সন্ধ্যার পর অনেক ভীড় থাকে! এখন তো দেখছি মানুষই নেই!
ইমরান- তাহলে ব্রিজের এদিক সেদিক এগুলো কি গরু?
নাফিসা- আমি সেটা বলছি! যেমনটা শুনেছি তেমন লোকজন নেই।
ইমরান- শুক্রবার বেশি থাকে।
নাফিসা- চারিদিকে জোড়া পাখি! শুধু আমরাই ৩জন! হিহিহিহি….
ফাহিম- হাহাহা… সন্ধ্যার পর জোড়া পাখিদের জন্য উন্মুক্ত জায়গা এটি। সব সিঙ্গেল! বিবাহিত জোড়া পাবে কিনা সন্দেহ! তোমাদের জন্য ঠিক ছিল ইমরান…
(ইমরান ফাহিম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। কিন্তু নাফিসা কোন রিয়েক্ট করলো না।)
ফাহিম- আমি মা কে কল করে আসি, টেনশন করবে আবার।
নাফিসা- ভাইয়া, ফোনটা দাও ছবি তুলি। আমারটা সাঈদের কাছে রয়ে গেছে।
(ফাহিম একপাশে চলে গেলো কল করতে। ইমরান ও নাফিসা দৃঢ় গতিতে হাটতে লাগলো। নাফিসা একা ও ইমরানের সাথেও ছবি তুলে নিলো ইমরানের ফোনে । ইমরান ও ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে নাফিসার ছবি তুলে দিলো।)
নাফিসা- ভাইয়া, আইস্ক্রিম খাবো।
.
.
চলবে……