অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 45

1
5756

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 45
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
ইমরান- সরি মাই লাভার কুইন! একবার সুযোগ দাও আমাকে! আর কাদতে দিবো না কখনো তোমায়! হয়েছে তো এবার! আর কতো কাদবে! দেখো চোখের পানি, নাকের পানিতে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছো!
নাফিসা নাকটা আরেকটু ভালোভাবে ইমরানের শার্টে মুছে নিলো। একে অপরের সাথে কথা বলে নিজেদের মধ্যকার ঝামেলা মিটিয়ে দুজনের মনই হালকা হয়ে গেছে। ইমরান মুচকি হেসে বললো,
ইমরান- নাক মুছা শেষ হলে এবার একটু সোজা হও দেখি বাবুর আম্মু!
নাফিসা- কেন?
ইমরান- না মানে খুশির খবর শুনলে মিষ্টি খেতে হয় জানো না!
নাফিসা ড্রেসিং টেবিল ও খাটের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
নাফিসা- কোথায় মিষ্টি?
ইমরান- তুমি তো দোকানের মিষ্টি খাও না! তাই তোমার জন্য সুগার ফ্রি সুইট এনেছি!
ইমরান সাথে সাথে নাফিসাকে মিষ্টি খায়িয়ে দিলো! তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার বললো,
ইমরান- ইট’স কলড সুগার ফ্রি সুইট!
নাফিসা- ছি!
ইমরান- হাহাহা! এতো লজ্জা পাও তুমি! তাহলে তো বাবুও লজ্জা পেতে শিখবে!
নাফিসা- বাচ্চার কথা জানলে কিভাবে?
ইমরান- শান্তা নারায়ণগঞ্জ গিয়েছে রিপোর্ট নিয়ে।
নাফিসা- গালে কি হয়েছে?
ইমরান- এতো বড় হয়েও আজ থাপ্পড় খেয়েছি বাবার হাতে! আমাকে পর করে ডিরেক্টলি বলে দিয়েছে, ” এই মুহূর্তে আমার মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আয় বলছি! ফিরে না আসা পর্যন্ত তোর চেহারা দেখাবি না।”
নাফিসা ইমরানের গালে হাত বুলিয়ে বললো,
নাফিসা- কয়টা থাপ্পড় দিয়েছে?
ইমরান- প্রথমটা মনে আছে কিন্তু পরে কয়টা দিয়েছে মনে নেই!
নাফিসা- কতো জোরে দিয়েছে দাগ বসে গেছে!
ইমরান- আরও বেশি শাস্তির প্রয়োজন ছিলো!
নাফিসা ব্রু কুচকে তাকালো। ইমরান মুচকি হেসে নাফিসার গালে গাল ঘসে বললো,
ইমরান- দ্রুত রেডি হয়ে নাও। নারায়ণগঞ্জ ফিরতে হবে। আমি আসছি!
নাফিসা- কোথায় যাবে?
ইমরান- বাকিদের তো উইথ সুগার সুইট খাওয়াতে হবে! বাজার থেকে ঘুরে আসি।
নাফিসা পেছন থেকে শার্ট টেনে ধরলো। ইমরান ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
ইমরান- বাহ! এতোক্ষণ তারিয়ে দিচ্ছো আর এখন যেতেই দিচ্ছো না!
নাফিসা- শার্ট চেঞ্জ করে যাও।
ইমরান- কেন সমস্যা কি?
নাফিসা- দেখছো না, চোখের পানি নাকের পানি লেগে আছে! লোকে দেখলে কি বলবে!
ইমরান- কি বলবে! বউয়ের নাকের পানিই তো! আমার সমস্যা নেই তাদের কি সমস্যা!
নাফিসা- ছি! কথার কি শ্রী!
ইমরান হাহাহোহো করে হেসে উঠলো। নাফিসা নিজ হাতে শার্ট খুলে, ওয়ারড্রব থেকে টিশার্ট আর প্যান্ট বের করে ইমরানকে গোসল করার জন্য বাথরুমে পাঠিয়ে দিলো। ইমরান গোসল করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে নাফিসাও গোসল করে নিলো। বাচ্চার কথা ফুপিকেও জানিয়েছে ইমরান নিজেই, আর মিষ্টিও কিনে দিয়ে গেছে! মা অনেক খুশি! দুজনেই দুপুরের খাবার খেয়ে মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে এলো। শান্তা আপু এখনো এখানেই আছে। মামামামী যেতে দেয়নি। নাফিসা আর কাউকে কথা বাড়াতে দিলো না। নিজেরাই মীমাংসা করে নিয়েছে জানিয়ে দিলো। ইমরানের প্রতি সবাই ক্ষুব্ধ হলেও এতে সবাই খুশি যে, তারা নিজেরা মীমাংসা করে নিয়েছে। তবে এটাই ঠিক, কেননা নিজেদের মধ্যে এক হওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকলে পৃথিবীর কেউ তাদের একত্রিত করতে পারবে না! পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মানতে বাধ্য হলেও মনে শান্তি না থাকলে সেই সম্পর্ক টিকবে না! তার চেয়ে ভালো নিজেদের ভুলগুলোকে কোনো না কোনো দিক থেকে সেক্রিফাইস করে নিজেদেরই মীমাংসা করা। যেটা নাফিসা ইমরান করেছে! সামান্য ভুল বুঝাবুঝির জন্য কি বড় ধরনের অঘটনই না ঘটতে চলেছিলো আজ! ইমরান যখন রেগে ছিলো নাফিসা ত্যাগ স্বীকার করেছে আবার নাফিসাকে মানাতে গেলে নাফিসা যখন রেগে কথা বলছিলো ইমরান ত্যাগ স্বীকার করেছে। সঠিক সময়ে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত না করতে পারলে দুইটা পরিবারের সম্পর্কের মধ্যে হয়তো অনেক বড় ফাটল ধরে যেতো।
বিকেলে শান্তা আপু চলে গেছে। আজ অফিসের দিকটা ম্যানেজারই সামলিয়েছে। শেষ সময়ে মেঝ মামা ঘুরে এসেছিলো। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে ইমরান বাসায় ফিরে দেখলো নাফিসা জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। ইমরান কাছে এসে তাকে সরিয়ে জানালার গ্লাস লাগিয়ে দিলো।
ইমরান- এখনো গ্লাস খোলা রেখেছো কেন, মশা আসছে তো। তাকাও আমার দিকে। চোখে পানি কেন? ক্ষমা করতে পারবে না কখনো আমায়? পায়ে পড়লে ক্ষমা করবে?
নাফিসা- এই, কি বলছো এসব! কিছু হয়নি আমাদের মাঝে। সব ঠিক আছে।
ইমরান- তাহলে কাদছো কেন এখানে দাড়িয়ে?
নাফিসা ইমরানকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না আরও বেশি আসছে তার!
নাফিসা- ওগো, ভুলতে পারছি না কেন কথাগুলো আমি! না চাইলেও বারবার মনে পড়ে যায়! আমি কি করবো বলো!
ইমরানের ভেতরটাও চিনচিন ব্যাথা করছে! নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
ইমরান- সাঈফা, চলো একটু ছাদে ঘুরে আসি! ঝিনুকের মালা পড়ো আজ।
নাফিসাও নিজেকে স্বাভাবিক করতে ইমরানের কথায় সাড়া দিলো। ঝিনুকের মালা, ব্রেসলেট সাথে গোলাপি টুপিটাও পড়ে ইমরানের সাথে ছাদে গেলো। অনেক্ক্ষণ তারা গল্প করলো। বাবুকে নিয়েই বেশি কথা হলো। আগে ছেলে বাবু হবে নাকি মেয়ে বাবু, বাবুর নাম সাথে নানান পরিকল্পনা নিয়ে দুজনের মাঝে মিষ্টি ঝগড়াও হলো। আবার দুজনেই অদ্ভুত ভাবে কথার মাঝখানে হেসে হেসে কথায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে দেয়! খাবারের সময় হয়ে এলে নিচে নেমে আসে। খেয়েদেয়ে রুমে এসে ইমরানের ল্যাপটপ নিয়ে নাফিসা বাহিনীকে নিয়ে বাংলা নাটক দেখছে নাফিসা! “ভালোবাসা একশো এক” নাটক দেখে এক এক জনের নাজেহাল অবস্থা! সবারই গানটা মুখুস্ত!
” উলাল্লা উলাল্লা, ধান ক্ষেতে নিয়া মাইরালা!”
নাটক শেষ কিন্তু তাদের কপি করা গান নিয়ে হাসাহাসির কোনো শেষ নেই। ইমরান সবাইকে ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দিলো। নাফিসা দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে আবার আরেকটা নাটক দেখতে বসলো, শর্ট ফিল্ম “ফুটবল”! ইমরান ফ্রেশ হয়ে খাটে উঠে বললো,
ইমরান- অনেক হয়েছে দেখা এবার ঘুমাও।
নাফিসা- এই এই, আরেকটু বাকি আছে দাও প্লিজ।
ইমরান- একটুও না।
ইমরান ল্যাপটপ নিয়ে রেখে দিলো। নাফিসা মুখ গোমড়া করে বসে রইলো! ইমরান শুয়ে নাফিসাকে জোর করেই টেনে শুয়িয়ে দিলো। কম্বল নিয়ে দুজনের উপর ছড়িয়ে দিয়ে মোবাইলে ফুটবল বের করে যে পর্যন্ত দেখেছে সেখানেই এনে নাফিসার হাতে দিলো। নাফিসা খুশি হয়ে দেখতে লাগলো। নাফিসা সোজা হয়ে শুয়ে দেখছে আর এদিকে কোলবালিশ ন্যায় নাফিসার উপর ইমরান হাত পা তুলে রেখেছে। নাফিসা সম্পূর্ণ নাটক শেষ করে ঘাড় ঘুরিয়ে ইমরানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইমরান ঘুমিয়ে গেছে। ফোনের আলোতে ঘুমন্ত মুখটা দেখে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিলো। সাথে সাথে ইমরানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো! নাফিসা চমকে উঠলো! ইমরান তাহলে ঘুমায়নি শুধু চোখ বন্ধ করে ছিলো! চোখ খুলেই ইমরান এই মাত্র নাফিসার দেখা নাটকের ভাষাকে অনুসরণ করে বললো,
ইমরান- ওমায়মা! ঢাকাইয়া হুরি নাকি!
নাফিসা- হয়, নারায়নগঞ্জের হোলা! হিহিহি….
ইমরান- বাহ! নাটক দেখেও দেখছি রোমাঞ্চ জাগে!
নাফিসা- স্টুপিড! তুমি কি এতোক্ষণ আমার সাথে নাটক দেখছিলে?
ইমরান- উহুম! চোখ বন্ধ করে শুনছিলাম!
নাফিসা- আমার উপর হাতপা তুলে রাখছো কেন? বাবুর কথা ভুলে গেছো!
ইমরান- উহুম, ভুলিনি! পায়ের উপর পা তুলেছি, পেটে তো আর রাখিনি। এতে বাবুর কোনো প্রব্লেম হবে না। এটা অভ্যাস হয়ে গেছে, চেঞ্জ করছি না আর! সুইট নাইট!
ইমরান নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে দেখলো নাফিসা মাত্রই কুরআন পড়ে উঠে জায়নামাজ রাখছে। মাথায় ওড়না পেচিয়ে পড়ায় খুব সুন্দর লাগছে তাকে! ইমরান পকেট থেকে টুপি বের করে মাথায় দিয়ে নাফিসাকে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাড় করালো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নাতে ছবি তুললো। অনেক সুন্দর হয়েছে ছবিটা। সাথে সাথে ওয়ালপেপারে সেট করে দিলো ইমরান। ফোন পকেটে রেখে নাফিসার কাধে থুতনি রেখে আয়নায় তাকিয়ে আছে। নাফিসা ব্রু কুচকে বললো,
নাফিসা- কি?
ইমরান- হুজুরের হুজুরাইন!
নাফিসা- হিহিহি! শুধু টুপি পড়ে নামাজ পড়লেই হুজুর হয়ে যায়!
ইমরান- কেন, নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, বছরে দুইবার কুরআন খতম করি। সৎ পথে চলার চেষ্টা করি। আর কি লাগে!
নাফিসা- কুরআন পড় তুমি? আমি তো দেখলাম ই না কখনো!
ইমরান- দেখবা কি করে! মসজিদে পড়ি! রমজান মাসে এক খতম আর সারাবছর পড়ে এক খতম। প্রতি শুক্রবার পড়ি শুধু, এজন্যই একটু লেট করে বাসায় ফিরি। আজকেও পড়েছি।
নাফিসা- আজ তো শুক্রবার না, তাহলে?
ইমরান- হুম! দুইটা কারণ আছে আজ পড়ার পেছনে। বলোতো কি হতে পারে?
নাফিসা- একটা আমাদের সন্তান।
ইমরান- হুম।
নাফিসা- আরেকটা…..! আরেকটা কি?
ইমরান নাফিসার কানে কামড় দিয়ে বললো,
ইমরান- আরেকটা আমার রানী, মিসেস সাঈফা ইমরান এর জন্মদিন আজ।
নাফিসা অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে! আজ প্রথম সে ভুলে গেছে তার জন্মদিনের কথা! চোখ দুটো তার ছলছল করছে!
ইমরান- কাল বারোটায় উইশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি এতো সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছিলে যার ফলে আর ঘুমটা ভাঙতে ইচ্ছে করেনি! তাই এখন করছি, হেভ এ গ্রেট বার্থডে মাই কুইন!
নাফিসা- লাভ ইউ!
ইমরান- লাভ ফর মাই বার্থডে কুইন! দুপুরে বাসায় ফিরবো, কোথায় যাবে বলো।
নাফিসা- ভেবে বলবো।
ইমরান- ওকে।
নাফিসা- বৃদ্ধাশ্রম রেজিস্ট্রি করালে কিন্তু সেটা হবে কোথায়? কিছুই তো ঠিক হলো না! আমি নিজেকে আগে কোনো কাজে জড়িত করতে চাইছিলাম!
ইমরান- আপাতত যা আছে তা দিয়ে শুরু করো আর আমি তো আছি। তাছাড়া ফুপা আছে বাবা চাচ্চুরা আছে, একবছর পর না হয় ফ্যাক্টরির পার্টনারশিপে যোগ দিবে তুমি। টুকটাক কাজ করে সেখান থেকে আয় হলেই চলবে। আর জায়গাটা হচ্ছে তোমার মামাদের সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন কেনা জায়গা। দু বছর ধরে পরিকল্পনাই করছে কি করবে সেখানে। আমি তাদের পরিকল্পনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ওটাই ঠিক করে ফেলি।
নাফিসা- তুমি কি জানো, তুমি একজন স্বামী হিসেবে শ্রেষ্ঠ?
ইমরান- মোটেও না। তুমি স্ত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠ বলেই আমাকে এমনটা ভাবছো।
নাফিসা- নিজের কৃতিত্ব স্বীকার করবে না তবুও!
ইমরান- তুমিই বা করছো কোথায়!
.
প্রায় পাচ বছর কেটে গেছে। তাদের কোলে প্রথম ছেলে সন্তান রাফি! ইমরানের রা আর নাফিসা থেকে ফি শব্দদ্বয় নিয়ে তার নাম রাখা হয়েছে। বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে সবে! সবার আদরে আদরে শ্রেষ্ঠ বাদড়! এইটুকু বয়সে পড়াশোনায় বেশি পাকামো করে বলে স্কুলে প্রি প্লে তে ভর্তি করিয়েছিলো। টিচার তাকে কি পড়াবে! টেবিলের উপর দাড়িয়ে বেত হাতে নিয়ে টিচারকে উল্টো পড়ায়! টিচার স্বরবর্ণ পড়াতে গেলে সে বলে, ” এসব কোন পড়া হলো! এসব তো আমিই পারি, তাহলে আপনি আমার সিটে বসুন আমি আপনাকে পড়াই!” তাছাড়া, স্কুলের বাচ্চাদের উপর স্পেশাল টর্চার করে! কখনো কেউ তার মতের একটু বাইরে গেলে ব্যাগের ভেতর বালি, ঝালমুড়ি, চিপসের প্যাকেট হাবিজাবি রেখে দেয়! এক জনের বই অন্যের ব্যাগে লুকিয়ে রাখে! টিচাররা ধমক দিলে দৌড়ে গিয়ে হেড টিচারের কাছে নালিশ জানায়! আবার বুঝে আর না বুঝে পুলিশের ভয় দেখায় টিচারদের! প্রতিদিন কেউ না কেউ তার সাথে স্কুলে গিয়ে বসে থাকে, তবুও কখন কি করে টেরই পায়না! অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পনেরো দিনের মাথায় ইমরান ও নাফিসাকে ডেকে রাফিকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে হেড টিচার! আর দুএক বছর পর স্কুলে ভর্তি করার পরামর্শ দেন তিনি। এতো দুষ্ট বাচ্চা নিয়ন্ত্রণ করা টিচারদের পক্ষে সম্ভব না। ছয় বছর পর্যন্ত বাসায় রেখে তারপর স্কুলে ভর্তি করার সিদ্ধান্তই নেয় নাফিসা। বাসায়ও দুষ্টুমি কম করে না। তবে নাফিসাকে বেশি না, একটু একটু ভয় পায়৷ আর কাউকে বিন্দু পরিমাণও না! অবশ্য ভয় জিনিসটাই শিখতে দেয়নি কেউ! কিছুদিন আগে ঢাকায় বেড়াতে গিয়েও একা একা ছাদে গিয়ে কাচি নিয়ে সাঈদের একটা পায়রা ধরে জবাই করে ফেলেছে!
নাফিসা এখন দ্বিতীয়বারের মতো চারমাসের অন্তসত্ত্বা। সে রাফির জন্য প্রথম বছর গেভ দিয়ে পরবর্তী বছরে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। এখন সে ফ্যাক্টরির পার্টনার, সেই সাথে বৃদ্ধাশ্রমও চলছে। সপ্তাহে একদিন সেখানে যায়। আর অফিসের কাজগুলো যথাসম্ভব বাসায় বসেই হিসাব নিকাশ করে দেয়। পাশাপাশি সংসারে মনযোগীও হয়েছে। এই পরিবারই সব দিক থেকে সাপোর্ট করেছে তাকে! ধন্য সে ইমরানকে পেয়ে, ধন্য এমন একটা পরিবার পেয়ে।
বিকেলে ছাদ থেকে কাপড়চোপড় এনে খাটে রেখে ভাজ করছিলো। রাফি সোফায় লাফালাফি করছিলো। হঠাৎ করেই “মা” বলে তাকে ডাকলো। নাফিসা ঘুরে তাকাতেই দেখলো, প্যান্ট পড়নে থেকেই সোফায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দিছে মুইত্তা!!!
নাফিসা- হায় হায়! দেখছোস কি করছে! ইমরাইন্নার বাচ্চা…..!
নাফিসা গেলো দৌড়ে তাড়া করতে। ইমরান মাত্রই প্রবেশ করছিলো রুমে। রাফি বাবার পাশ দিয়েই দৌড়ে একেবারে রেহানের রুমে চলে গেছে। প্যান্ট খুলে আবার ঢিল মেরে রেহানের রুমের দরজার বাইরে ফেলে দরজা লক করে দিলো। নাফিসা পিছু পিছু যেতে নিলে ইমরান ধরে ফেললো।
ইমরান- আরে তুমি দৌড়াচ্ছো কেন!
নাফিসা- দৌড়াবো না! আদর দিয়ে তো একেবারে মাথায় তুলে ফেলছো! কি করছে দেখছো! এতো বড় হয়ে সোফার উপর দাড়িয়ে হিসু করে গেছে!
ইমরান- আস্তে বলো, কাছেই তো আছি আমি।
নাফিসা- কেন বলবো আস্তে! সারাদিন কাজ করতে করতে আমি শেষ! পুরো বাড়ির মানুষ হাপিয়ে যায় তার পিছু দৌড়ে! আজ তো খবর নিয়ে ছাড়বো, এসব কি তার বাপ ধুয়ে দেয়!
ইমরান- ছোট থেকে তো তার বাপই ধুয়ে দেয়!
নাফিসা- কি বললে তুমি!
ইমরান- না কিছু না! তাই বলে তুমি এ অবস্থায় তার পিছু দৌড়াবে! ওর সাথে দৌড় দিয়ে পারবে! নিজের ক্ষতি করে ফেলবে এভাবে! এসো আমার সাথে।
নাফিসা- ছাড়ো আমাকে! এসব নিয়ে জলদি ধুয়ে দাও। নাহলে তোমাদের বাপ ব্যাটার খবর আছে আজ!
ইমরান- আচ্ছা, ধুয়ে দিবো। তুমি নড়াচড়া কম করে বসে থাকো। আর কখনো রাফির পিছু নিবে না! বাচ্চা মানুষ, দুষ্টুমি করবেই। বড় হলে দেখবে ঠিক হয়ে গেছে।
নাফিসা- হ্যাঁ হয়েছে আর ঠিক!
ইমরান রাফির প্যান্ট নিয়ে রেহানের রুমের দিকে গেলো।
ইমরান- বাবা, দরজা খুলে প্যান্ট নাও।
রাফি উকি দিয়ে বেরিয়ে বাবার হাতে প্যান্ট পড়ে নিলো। আর ইমরানের পকেট চেক করে চকলেট নিয়ে বাবার গালে চুমু দিলো। গাল পেতে রাখলো আবার তাকে রিপিট করার জন্য। ইমরানও তাকে রিপিট করলো। মায়ের জন্য দুইটা চকলেট বাবার পকেটে রেখে আবার রেহানের রুমে চলে গেলো। ইমরান মুচকি হেসে ফেলে রাখা প্যান্ট নিয়ে রুমে চলে এলো। দেখলো নাফিসা সোফার কভার খুলে নিয়েছে, ইমরানের হাত থেকে প্যান্টও নিয়ে বাথরুমে যেতে লাগলো।
ইমরান- তুমি কোথায় যাচ্ছো, দাও আমার কাছে। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।
নাফিসা- লাগবে না! একদিন ধুয়ে সাতদিন খোটা দিবে!
ইমরান- না, দিবো না।
নাফিসা- প্রয়োজন নেই কোনো। বাইরে থেকে এসেছো, ফ্রেশ হও।
নাফিসা নিজেই ধুয়ে দিলো।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে এসে দেখলো রাফি খাটের মধ্যে খেলনা ছড়িয়ে রেখে গেছে! নাফিসা তুলে গুছিয়ে রাখছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
নাফিসা- হয়েছে একটা নাটেরগুরু! যেমন বাপ তেমন ছেলে! জ্বালিয়ে মারলো একেবারে! বাবু, তুই একদম তোর বাবা আর ভাইয়ার মতো দুষ্টু হবি না। একদম নম্র ভদ্র হবি!
ইমরান নাফিসার বিড়বিড় শুনে পেছন থেকে পেটে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো।
ইমরান- বাবা দুষ্টু, মা দুষ্টু, তাহলে বাচ্চারা কেমন হবে! তাদের রক্তেই তো মিশে দুষ্টুমি!
নাফিসা- আবার কথা বলো তুমি!
ইমরান- বাপ ব্যাটা মিলে খুব জ্বালাতন করি তোমায়?
নাফিসা- আবার জিজ্ঞেস করো! শুধু খুব না! খুবের চেয়েও অনেক!
ইমরান- আচ্ছা! আর ভালোবাসি কতোটা?
নাফিসার রাগ শূন্যে মিশে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ইমরানের থুতনিতে চুমু দিয়ে বললো,
নাফিসা- তার চেয়েও অনেক বেশি! তোমাদের সকল দুষ্টুমি সহ্য করে যাবো, বিনিময়ে সারাজীবন শুধু এভাবে ভালোবেসে যেও। আর কিছু চাই না আমি!
ইমরান নাফিসার মাথার একপাশে গভীরভাবে চুমু দিয়ে বললো,
ইমরান- বাবু, তুমিও তোমার বাবা আর ভাইয়ার মতো মাকে বেশি বেশি ভালোবাসবে আর জ্বালাতন করবে।
নাফিসা- স্টুপিড!
ইমরান হাহাহোহো করে হেসে নাফিসার একটা হাত তার পকেটে নিয়ে গেলো। নাফিসা পকেটে হাত নেড়ে দুইটা চকলেট পেয়ে বললো,
নাফিসা- আমার জন্য রেখে দিছে! কোথায় সেই বাদড়টা!
ইমরান- হিমেল রিয়াদের সাথে।
নাফিসা উঁচু গলায় রাফিকে ডাকলো। ইমরান নাফিসাকে কোলে তুলে খাটে নিয়ে বসালো। নাফিসার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সে। রাফি এসে দরজার কাছ থেকে উঁকি দিয়ে বললো,
রাফি- বাবা, মায়ের হাতে কি লাঠি আছে? আমাকে মারার জন্য ডেকেছে?
ইমরান হাহাহোহো করে হেসে উঠলো আর নাফিসা ছেলের কান্ড দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো।
নাফিসা- আয় এদিকে, দেখাচ্ছি তোকে!
রাফি- তাহলে আসছি না।
নাফিসা- চকলেট নিয়ে যাও।
রাফি দৌড়ে এসে খাটে উঠে পড়লো। চকলেট নিয়ে মায়ের গালে একটা চুমু দিলো। আবার নিজেও গাল পেতে রইলো! নাফিসা মাথায় হাত বুলিয়ে রিপিট করে দিলো। বাবার পেটের উপর বসে কিছুক্ষণ গাড়ি চালিয়ে আবার দৌড় দিলো।
নাফিসা- রাফি, ঘুমাবে। এদিকে এসো।
রাফি- আজকে চাচ্চুদের সাথে ঘুমাবো মা। গুড নাইট।
নাফিসা- না, এখানে আসো। এই যাও না, ধরে নিয়ে আসো।
ইমরান উঠে দরজা লাগিয়ে আবার খাটে চলে এলো।
ইমরান- যাক না! আজ বাবা মাকে সময় দিয়ে গেছে আল নিসার সাথে।
নাফিসা- তুমি জানো কিভাবে এবার আল নিসা আসবে !
ইমরান- জানি না, তবে প্রত্যাশিত আরকি!
নাফিসা- যদি না আসে!
ইমরান- এটা কেমন কথা বললে! আসতেই হবে এমন কিছু বলেছি আমি! আল্লাহ যা দেয় তাতেই সন্তুষ্ট। প্রয়োজনে বিশ পঁচিশ টা বাবু এনে ট্রাই করবো!
নাফিসা- ছি! কি অদ্ভুত কথাবার্তা বলো!
ইমরান- এখনো লজ্জাবতী আছো ভাবতে পারিনা আমি! তাছাড়া পাগলের সাথে থাকলে ভালো মানুষও পাগল হয়ে যায়। তাহলে অদ্ভুত মেয়ের সাথে থাকলে তো অদ্ভুত কথাবার্তা বলতেই হয়! হাহাহা….
এভাবে হাসায়, নাফিসা লজ্জা পেয়ে ইমরানের মাঝেই লুকালো! ইমরান হেসেই যাচ্ছে। সেই ঝামেলার পর থেকে আর তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি। যে কোনো বিষয়ে মন খারাপ হলে নিজেরাই একে অপরের সাথে কথা বলে ভ্রান্তি দূর করে দিয়েছে। সুখেই কাটছে তাদের দিন। এভাবে দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসাও বেড়ে গেছে বহুগুণে। হয়তো কিছুদিন পর আবার এই সুখের সংসারের রাজকন্যা হয়ে আল নিসা আসবে তাদের কোলে!
.
(সমাপ্ত)
.
.
সবাই তো এমন সুখী জীবনের প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কয়জন এতো সুখের ভাগীদার হয়? সব ছেলেরাই হয়তো চাইবে এমন একটা নাফিসা আসুক তার জীবনে। তবে এটা বুঝতে হবে, নাফিসাকে পেতে হলে তাকেও ইমরান হতে হবে। অনুরূপ, সব মেয়েরাও হয়তো চাইবে ইমরানের মতো কাউকে পেতে। কিন্তু তাদেরকেও নাফিসার মতো হতে হবে।
সংসার একপাক্ষিক নয়! দুটি মানুষ থেকে শুরু হয়ে দুটি পরিবারকে এক হতে হবে। যেকোনো বিষয়ে প্রত্যেকেরই আলাদা মতামত থাকতে পারে, তাই বলে নিজের মতামতের উপর জেদ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না! অন্যেরটাও বিবেচনা করে দেখতে হবে। সুখ এমনি এমনি চলে আসে না! নিজের দিকটা একটু সেক্রিফাইস করেই অন্যের মতে সন্তুষ্ট হতে পারলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন সকলের কাছে প্রিয়। এবং বয়ে আনতে পারেন জীবনে প্রকৃত সুখ।
দম্পতির মাঝে বেশির ভাগ বিচ্ছেদ ঘটে অমত পোষণের জন্য! দুজন দুই মতে ক্ষিপ্ত থাকে, রেগে গিয়ে গালাগালি, মারামারি অবশেষে বিবাহ বিচ্ছেদ!
সকল পুরুষদের উচিত স্ত্রী রেগে গেলে নিজে শান্ত হয়ে থাকা, সুযোগ বুঝে স্ত্রীকে বুঝানো। অনুরূপ স্ত্রীদেরও উচিত স্বামী রেগে গেলে নিজেরা চুপ থাকা আর সুযোগ বুঝে বুঝিয়ে দেওয়া। যেকোনো বিষয়ে ঠান্ডা মাথায় পরামর্শ করা উচিত।
আর বেশি কিছু বলবো না, আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। তবুও আপনাদের মতামত জানতে চাচ্ছি।
( যারা গল্পের সমাপ্তি চায়নি, খবরদার কেউ সেড রিয়েক্ট দিয়েছো তো! মানুষের জীবনেরই তো সমাপ্তি ঘটে তাহলে গল্পের বেলায় কেন নয়! সুতরাং, be সুখী! ?? )
অদ্ভুত মেয়ের মতো নিজে ভালো থাকুন, সাথে পাশের মানুষগুলোকে ভালো রাখুন। আল্লাহ হাফেজ। 🙂

1 COMMENT

  1. Shotti golpota Pura cute er Dibba hoise???????just wowww♥️♥️♥️♥️♥️ar khub khub funny chilo ….haste haste Pete betha hoye geche???????golpe Onek shikhonio bishoy o chilo ….shob miliye just fatafati??????????????????thanks Nur Apu ato shondor akta golpo dear Jonno ❤️❤️❤️❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here