অদ্ভুত_সম্মোহনী♥ PART_13

0
2300

অদ্ভুত_সম্মোহনী♥
PART_13
#FABIYAH_MOMO
?
পরপর দুটো ভয়ংকর শব্দের আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়লো রুমে! আমি কানে হাত লাগিয়ে গলা ফাটিয়ে চিল্লাচ্ছি, ‘থামো! প্লিজ থামো!’ কেউ কথা কানে নিচ্ছেনা। হরতালের মতো দুপক্ষের সংঘর্ষ হচ্ছে চোখের সামনে! নিবির ভাই প্রচুর জখম হয়েছেন মারামারিতে! প্রায় বেহুঁশ হবে হবে অবস্থা! হঠাৎ কেউ চিৎকার দিয়ে উঠলো! আমিসহ উনারা দুজন আগত শব্দের দিকে তাকালো! নাইমা আপু দরজায় লেহেঙ্গা ধরে দাড়িয়ে! চোখেমুখে অবাকের স্তুপ! আপুকে দেখে দুজনেই শান্ত হয়ে কলার ছেড়ে দাড়ালো। আপু এগিয়ে এসে একবার সাদ ভাইয়ার ঘুষি খাওয়া গালের দিকে তাকালেন, আরেকবার তাকালেন নাক দিয়ে রক্ত পড়া নিবির ভাইয়ার মলিন মুখের দিকে! শেষে আমার পাশে দাড়িয়ে কঠিন শব্দে বলে উঠেন,

— তোমরা এখানে মারপিট করছো! ছি!নিবির? তুই কিছু বলবি? মুখে তালা লাগালি কেন? আন্সার মি রাবিশ!

সাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে,
— সাদ? তোমাকে তো আমি সেন্সিব্যাল মনে করছিলাম! এই ছিলো তোমার সেন্সিবিলিটি? ওহ্ গড! তোমাদের এই সিচুয়েশন আউটসাইডের কেউ জানলে কি ঝামেলা হবে! ক্যান ইউ ইমেজিং গাইজ?

সাদ এবং নিবির দুজনেই মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। নাইমার কথার উপর কথা বলাটা বড় ধরনের বেয়াদবি এটা পরিস্কারভাবে জানে দুজন। নিবির তো রীতিমতো মান্য করে চলে নাইমাকে! নাইমা যদি মিথ্যাকে সত্য বলেও পাচার করে, সেটাই নিবির শান্তভঙ্গিতে গ্রহন করবে। টু শব্দ বা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারবেনা কিছুতে। নাইমার রাগারাগিতে নিবির ‘সরি’ বলে চলে যায় পার্কিং লটে। সাদ ক্ষমা চেয়ে চলে যায় বাইরে ভীড়ের মাঝে। রাহা নিজের উপর আছড়ে পড়া ঘটনাচক্র নাইমাকে জানালো না। এই মূহুর্তে নাইমাকে নিবিরের ব্যাপারে বলে মন খারাপ করার কোনো মানে হয়না। চুপচুপি সে-ও কেটে পড়লো সেখান থেকে। নাইমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লেহেঙ্গার ফিতা টাইট করে প্রস্থান করলো স্টেজে।

নাইমা আপু না থাকলে অধমটা কে শুয়োপোকার মতো পেটাতাম! যাক ওর কপাল লাখগুণে ভালো, আজ বেচে গেলো। ওফ! নিবিরের ম্যাটারটা এখনো ক্লিয়ার হলো না। বদমাইশটা চায় কি? মোটিভ যদিও রাহার সাথে কানেক্টেড বাট আ’ম প্রিটি সওর, এখানে কিছু অদৃশ্য কাহিনি আছে। উম..আই ক্যান স্যে, নিবির রাহাকে ভালোটালো বাসেনা। ইটস জাস্ট ক্রেজিনেস, নাথিং টু অল! গড নৌস বেস্ট নিবিরের মধ্যে কতোটা নিবিড়তম ম্যাটার আছে। রাহার হাত পুড়িয়ে দেওয়া, থ্রেড দেওয়া, আজকের খাপছাড়া বিহেভ..সামহাও কিছু রিজ্যান মাস্ট আছে! হুট করে একটা মানুষের চেন্জ, মানা যায় না বস! রাহার ম্যাটারে ও যে হেল্প করেছে সেটা সার্ডেন বাজি ঘুরিয়ে অন্যদিকে যাবে..ব্যাপারটা যত ইজি দেখাচ্ছে তত আসলে ইজি না। বেসিনে মুখ ঝুকিয়ে পানির ছিটা দিচ্ছি আর অফটপিকগুলো ভাবছি। নাইমা আপুর বিদায় শেষে সবাই এখন যার যার রুমে ঘুমাতে গিয়েছে। আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে টাওয়ালে মুখ মুছতেই একটা অস্থির গলা শোনা গেল। এটা রাহাতের গলা নিশ্চিত! শালা স্থির হয়ে চলতেই পারেনা।

— সাদ বাবাজি ছাদে চল! সবগুলা মিলে প্ল্যান করছি আজকে ছাদে শুবো!! চল মজা হবে!! আমি স্টোররুম থেকে ট্যান্ট আনতেছি!
টাওয়াল চেয়ারে ছুড়ে বিছানা থেকে টিশার্ট নিয়ে গায়ে জড়াতে বলে উঠলাম,
— এই ‘সবগুলা’ কারা? শীতের মধ্যে ছাদে শোয়ার হিসাব বুঝলাম না দোস্ত! আমাকে কষ্ট করে বুঝা !
— ধুর ! তুই ঠান্ডা কই দেখোস?আজকে ঠান্ডা পড়ছে? চল এখন, কাজ আছে। আমি স্টোররুমে যাচ্ছি। তুই কম্বল নিয়ে উপরে যা।
— ওকে, ওকে বৎস যাচ্ছি।

রাহাত ট্যান্টের কাজগুলো দেখছে। ছেলেটা চটপটে! মোটমাট চারটা ট্যান্ট পরপর সাজিয়ে বেটা নিজেরটা এখন সাজাচ্ছে। আমি হাজার চেষ্টা করেও রাহার পাশের ট্যান্টটা নিতে পারলাম না। ফালতু মেয়ে রূপ আমার শেষ সম্বলটা জব্দ করে শুয়ে পড়েছে। গায়ে জ্যাকেট পড়ে ট্যান্টের চেইন লাগিয়ে সবার আগে আমি কম্বল মুড়ি দিলাম। ডোন্ট নো হোয়াই, আমার মেজাজ খিটখিট করছে। ইচ্ছা করছে রূপকে তুলে ছাদ দিয়ে ফেলে দেই। পারলে সিরিয়াসলি রূপকে ছাদের বাইরে আছাড় মারতাম! রাগ দমিয়ে কম্বলের নিচে কুমিরের মতো ফুসফুস করছি। সময় কতক্ষন পেরুলো জানিনা আমার অবচেতন মন কিছুতেই স্বস্তি স্বাভাবিক হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কিছু একটা খারাপ হচ্ছে। আমার মন ও মস্তিষ্ক কিছু একটার পূর্বাভাসে আনচান করছে। আমি আর পারছিনা কম্বল ফেলে ট্যান্টের বাইরে এসে ছাদের রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসি। চাঁদের আলো পান করা সেই অদ্ভুত পথিকের মতো মনেহচ্ছে নিজেকে। চারপাশ কি শান্ত, কোলাহলমুক্ত, নির্জন। দূর থেকে ঝিঝি পোকার শব্দসুর কানে আসছে। চোখ বন্ধ করে জ্যাকেটের দুপকেটে হাত ঢুকিয়ে শীতের হালকা হাওয়া গায়ে মাখছি। প্রকৃতির নির্জনবাসে কি অদ্ভুত শান্তি! কি মায়াজালে আবদ্ধ করা নিঝুম রাত্রি! মানুষের উচিত একবার হলেও ছাদে এক রাত কাটানো, নিজের গভীর থেকে গভীরতম স্থলে ডুব দিয়ে প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করার মতো অন্যরকম ভালোলাগায় শরীর সাড়া জাগায়। তন্দ্রা মতো লেগে আসছিলো কিন্তু মস্তিষ্ক তখনো সচল। এইসময় ঘুমানো মানে ছাদ থেকে ধপাস করে পড়ে আজীবনের জন্য ঘুম দেওয়া। কাজেই ঘুমকে পাত্তা দেওয়া যাবেনা। হঠাৎ একটা আলাদা রকমের শব্দ হচ্ছে। শব্দটা এমন ছিলো যেটা প্রকৃতির সাথে খাপ খায়না। এটা কেমন শব্দ? আমি চোখ খুলে রেলিং থেকে নেমে সবদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছি। চোখে পড়ার মতো তো কিছুই নেই। ছাদের দরজা ভেজানো, সবক’টা ট্যান্টের চেইন লাগানো, দরজার কাছে একটা নিয়নবাতির স্বল্প আলো জ্বালানো। আরেকটু কান খোলা রেখে আমি আবিস্কার করলাম শব্দটা রাহার ট্যান্ট থেকে আসছে। জ্যাকেটের পকেট থেকে হাত বের করে আমি ট্যান্টের দিকে এগিয়ে সেখানে ঝুকে বসলাম। কান পেতে শুনতে পেলাম কান্নাকাটির ফুপানো শব্দ। আমি তড়িঘড়ি করে ফিসফিস গলায় বলে উঠলাম,

— রাহা! রাহা তুমি শুনতে পাচ্ছো! আমি সাদ! ট্যান্টের চেইনটা খোলো!
আমার গলার স্বর পেয়েই রাহা চুপ হয়ে গেল। একটু আগে যেই স্বর পাচ্ছিলাম এখন তা নেই। কিছুক্ষণ যেতেই ও ট্যান্টের চেইন খুলে দিল। চাদেঁর সলাৎ করে আসা আলো রাহার গালদুটোতে তীর্যক ভাবে পড়লো। গাল চিকচিক করছে। কৌতুহল মনে আমি ঠান্ডা হাত এগিয়ে ওর গাল স্পর্শ করতেই বুঝি ওগুলো চোখের পানি। সেই সাথে আরো আবিস্কার করি ওর গায়ে হালকা মতোন জ্বর। আমি বললাম,

— রাহা তোমার জ্বর! ডাক্তার ডাকবো? ঔষুধ খেয়েছো?
— ঔষুধ খেয়েছি। কমে যাবে ভাইয়া।
— যদি না কমে? আচ্ছা? আমি কিছুক্ষণ এখানে বসলে তোমার সমস্যা হবে ?
রাহা মাথা নাড়ালো। ওর সমস্যা হবেনা। আমার বুকে প্রচুর চাপ অনুভব হচ্ছে ওর ঠান্ডা কন্ঠস্বর শুনে। মেয়েদের স্বভাব – ‘অল্পতে চুপ, বেশিতে আরো নিশ্চুপ!’ মুখ ফুটে ব্যথার কথা বলতে পারেনা, অদ্ভুত নিয়মে সহ্য করে। আল্লাহ্ ওদের কিভাবে এতো ধৈর্য্যশক্তি দিয়েছেন! এর এককোণা যদি আমি ভোগ করি হয়তো মরেই যেতাম!আপাতত আমি রাহার পাশ থেকে সরতে চাচ্ছিনা। ওর ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আমার শ্বাসনালিতে অক্সিজেন কমছে। রাহার এই অবস্থা দেখে ওকে এক্ষুনি বুকে চেপে ধরতে পারলে কলিজায় শান্তি লাগতো! বাট আমি পারছিনা! গাল দুটোতে নিজের ঠান্ডা গাল লাগিয়ে পাজকোলে চেপে ধরলে আমি কিছূটা অস্থিরতা কমাতে পারতাম! রাহা আমাকে সেই সুযোগ দিবে? আমি ওকে ভালোবাসার নিয়মে সবসময় চাই! এই বুকে ওর মাথাটা চেপে ঘুমাতে চাই। রাহা আমাকে মানবে? জানিনা হঠাৎ আমার মধ্যে কি জেকে বসলো! আমি দৌড়ে নিজের কম্বলটা এনে ওর সামনে আকুতি সুরে বলি,
— প্লিজ প্লিজ আমি তোমার পাশের জায়গাটায় শুতে চাই! আমার একা শুতে ভয় খুব করছে! প্রচুর ভয় করছে আমার! প্লিজ রাহা!!

মিশর পিরামিডের সেই বিখ্যাত মমি দেখার মতো দূর্লভ দর্শনে রাহা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জায়গা ছেড়ে দিতেই আমি ভেতরে ঢুকি চেইন লাগিয়ে শুয়ে পড়ি। রাহার অবাকের রেশ এখনো অটল। হয়তো বুঝে গেছে আমার মতো দামড়া নিছক ভয় বলে পাশে থাকতে চাচ্ছে। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠি,
— রাহা আমি না ভোর হওয়ার পূর্বেই ফিরে যাব। চিন্তা করো না।

রাহার আশ্চর্যের ঘোর কাটতে সময় লাগলেও পরক্ষনে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। অন্ধকারময় ট্যান্টের ভেতর এখনো রাহাকে নিয়ে গোজামিল সৃষ্টি হচ্ছে। ও কি এখনো কাদছে? কেন কাদছে? রাহাকে জড়িয়ে ধরবো? এমন হাজারো প্রশ্নে মনটা কিলবিল করছে। শান্তিতে ঘুমুতে পারছিনা। অন্ধকারে হাত একটা ওর কপালে রাখলাম। নাহ্ জ্বর কম হলেও কম্বলের ভেতর থেকে কাপছে রাহা। জ্যাকেট খুলে ফেললাম। মাথার কাছে সেটা রেখে কম্বল মেলে শুলাম। এখন এই অন্ধকারটা চোখ সয়ে গেছে বিধায় সুযোগ বুঝে কম্বলের নিচ থেকে একটান মারলাম। ছিটকে আমার বুকের সাথে ওর মাথাটা লেগে গেলো। আমি শক্ত করে ওকে চেপে ধরি। রাহা নিশ্চয়ই আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে! আমি ওকে দূরে যেতে দিবো না! নাহলে আমি পাগলা গারদের আসামী হয়ে যাবো সিউর! একহাতে মাথাটা চেপে অন্যহাতে জ্যাকেট নিয়ে ওর পিঠ ঢেকে দিলাম। আমার কম্বলটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিতেই টিশার্ট কেমন যেনো ভিজা ভিজা লাগলো। আমি থমকে গেলাম! টিশার্ট ভেজা মানে? ও কি আবার কাদছে? আমি অস্থির হয়ে পড়ি। দুইহাতে ওকে চেপে মাথায় অজস্র ঠোট ছোঁয়াতে থাকি।
— রাহা প্লিজ চুপ কর। চুপ কর। দেখো আমি আছি তো। আমি থাকতে কাদছো কেন রাহা? প্লিজ কেদোনা।

রাহা আমার পিঠে শক্তযুগলে নখ বসিয়ে চেপে ধরলো। পিঠে নখের আচঁড়ে রক্ত বন্যা বইলেও আমি রাহাকে ছাড়বোনা! আমার রাহা কাঁদছে! আমি আমি আমি কি করবো?? কি করবো? আমি রাহাকে চেপে আমার বুকের উপর উঠিয়ে আমি সোজা হয়ে শুই। রাহা কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু না দেখলেও রাহার জরতপ্ত নিশ্বাস আমার থুতনির কাছে পরপর পড়ছে। আমি ওর মাথা নুয়িয়ে বুকে শুয়িয়ে বললাম,
— ঠিক আছো? বলো না প্লিজ, কি হয়েছে? কাদছো কেন? আমি তোমাকে ধরেছি বলে মন ক্ষুদ্ধ করছো?
রাহা বুকের উপর কপাল ঠেকিয়ে বললো,
— আমি আপনার যোগ্য না টিচার। আপনি কি দেখে আমায় পছন্দ করলেন? বুয়েটের ছেলেরা তুড়ি বাজাতেই মেয়েদের লাইনে গিজগিজ করে। হাজারটা মেয়ে উপচে এসে প্রেমপত্র দিবে, আপনাকে নিয়ে পাগলামি করবে। আপনি আমায় চুজ করলেন কেন?

আমি চোখ বন্ধ করলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে কানের কাছে চুল গুজে হালকা হেসে বললাম,
— আমি বুয়েটে পড়ি বলে সাদা চামড়ার বিউটিফুল লাগবে? সব মেয়েরা বিউটিফুল জানো না? কেন চামড়া দিয়ে মেয়েদের সৌন্দর্যকে আলাদা করছো? তুমি নিজেও সুন্দর! তোমার চেয়ে কয়েকস্তর কালো মেয়েরাও আপনসত্ত্বায় সুন্দর!
— আমরা সাদা স্কিনের জন্য আলাদা হলাম কেন সাদ ভাইয়া? কেনো কোম্পানি গুলো হোয়াইটিনিং ক্রিম বানাচ্ছে?
— প্রথম কথা, আল্লাহ্ মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর সত্ত্বায় সৃষ্টি করেছেন। সে যদি ফর্সা হয় তাহলে ভালো। যদি সে কালো হয় আরো ভালো। তবুও কষ্ট পাওয়া যাবেনা। আল্লাহ্ এতো সুন্দর পৃথিবী সাজিয়েছেন শুধু মানুষের জন্য। মানুষ যদি উনার সৃষ্টির উপর আঙ্গুল তুলে! মনে রাখবে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হবেন। এতে আল্লাহ কি পরিমাণ গযব দিবেন শুধু সেই পবিত্র মাওলা জানেন। প্লিজ কখনো নিজেকে নিয়ে হেয়পনা করবেনা। যদি অন্যকেউ তোমাকে কটু করে শোনায়! এটাও মনে রাখবে আল্লাহ্ কখনো ছাড় দিবে না!
দ্বিতীয় কথা, যারা চামড়া সাদা করার জন্য বেহুদা জিনিস বানাচ্ছে! এতে ব্যবসায় সবুজবাতি জ্বললেও কপালে দূর্গতি বয়ে আনছে!

— আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন এটা গুনাহ্ হচ্ছে না?
— কে বলছে হচ্ছে না? অনেক হচ্ছে। কিন্তু আমি পারছিনা তোমার কষ্ট দেখতে। আমার পক্ষে তোমার কষ্ট দেখা সম্ভব না।
— দেখি ছাড়ুন তো! আপনি আমায় ছেড়ে দিন!
— কি আশ্চর্য! আমার সাথে রাগ করছো? প্লিজ রাহা আমি নিরুপায় হয়ে তোমার কাছে আসি। আমি তোমার সিচুয়েশন এক সেকেন্ডের জন্য নিতে পারিনা। প্লিজ..
— আপনার হার্টবিট এতো ধুপধুপ করছে!! একটু স্লো করুন না..
— পাগল! আমি স্লো করবো কিভাবে? তোমার কি শুয়ে থাকতে খারাপ লাগছে?লাগলে বলো,
— আমার ভালো লাগছে না। আবার খারাপও লাগছেনা। আমার শীত করছে।
— শীত করলে জ্যাকেটটা ঠিক করে পড়ো। জিপ লাগিয়ে চুপচাপ ঘুমাও। আমি ধরেছি তো শীত কমে যাবে।
— সাদ ভাইয়া?
— হুম,
— আপনি বিয়ে করবেন?
— কেন করবো না?
— আমাকে করবেন?
— অবশ্যই! তুমি ছাড়া কাকে ভালোবাসি যে বিয়ে করবো?
— বুয়েটের পড়া কবে শেষ হবে?
— যখন তুমি নিজেই আমার সাথে আমার ক্যাম্পাসে আসবে।
— আমি কি সেখানে টিকবো?
— হ্যাঁ টিকবে। তোমার ভর্তি শেষে আমি মাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। তোমাকে বিয়ে করে আমার কাছে রেখে দিবো। রাতে খুব সমস্যা হয় জানো! একা একা ঘুমাতে ভালো লাগেনা। একটা বউ থাকলে শান্তিতে জাপটে ধরে ঘুমানো যায়।
— এহহে! আপনি কোন ডিরেকশনে কথা বলছেন সাদ ভাইয়া!! থামুন!
— উহু আমিতো কোনো হেনতেন ডিরেকশনে যাইনি,
— আপনি বেশ রোমান্টিক। সেই সাথে চালাক!
— কেন কেন?
— আপনি ইনডাইরেক্টলি সব করেন। যেমন, নাইমা আপুর বিয়েতে রূপ আপুকে কেমন টাইট দিয়েছেন তা তো দেখতেই পাচ্ছি। আপু আপনার কাছ থেকে ভয়ে দূরে দূরে থাকে। নাইমা আপু তো সাদ বলতেই অজ্ঞান। আপনাকে স্পেশাল ভাবে ট্রিট করে। আম্মুকে যেভাবে রান্নার জিনিসে হাত লাগিয়ে দেন, আম্মুতো খুশিতে গদগদ। আব্বু অবশ্য আপনার সাথে খুব একটা ঘোলমিল করেন না। তবুও আব্বু আপনাকে বিশ্বাসের নজরে দেখে। রাহাত ভাই? ভাইয়ার কথা কি আর বলবো! ভাই তো আপনাকে ছাড়া চলতেই পারেনা। সব নষ্ট কাজ আপনাকে দিয়ে সংশোধন করে নিজের নামে ক্রেডিট খাবে! নিবির ভাইকে আমার পছন্দ না। আজ তাকেও আপনি রফাদফা করে দিয়েছেন। এগুলো আপনার চালাকি না তো কি? আপনি যতো সরল সেজে থাকেন। আসলে ততো না।
— আমাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি চলছে মেমসাব? ভালোই তো!! সাদ আরাফ একটা হাইপার লেভেলের ইন্টেলিজেন্ট মানেন?
— কড়ায় দন্ডায় মানি। আপনি খুব চালাক। মুখে কম, কাজে বেশি প্রখর। এজন্যই হয়তো আপনাকে সবাই ভালোবাসে।
— রাহা সমস্যা একটাই! আমি রূপকে দেখতে পারিনা। ফালতু একটা! ওর মতো থার্ড লেভেলের মেয়ে আমি আজ পযর্ন্ত দেখিনি। ক্যাম্পাসে আমার মেয়ে বন্ধু আছে। কিন্তু ওর মতো ছ্যাঁচড়ামি করেনা। না চাইতেই গা ঢলে ঘেঁষে বসে। ফালতু!
— আপনি যদি উনার সাথে রিলেশনে যেতেন তাহলে এগার তম বফ হতেন। এই পযর্ন্ত অনেক ছেলের সাথে আপুর উঠবস হয়েছে।
— আল্লাহ্ কি বলছো! ইলেভেন?
— চলতি বয়ফ্রেন্ডের নাম ইনান। ছেলেটা পরশু প্রোপোজ করেছে সাথে সাথেই একসেপ্ট। নাইমা আপুর কাছ থেকে শুনেছি ছেলের নাকি খুব টাকা। টাকা রাখার জন্য সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে লেনদেন হয়।
— টাকা দিয়ে ভালোবাসা না, দুনম্বরি আবেগ কেনা যায়। কিছুদিন পর টিস্যুর মতো মুচড়ে ওটা ডাস্টবিনে ফেলা লাগে। এখন ঘুমাও তো। রূপের কথার শুনতে ইচ্ছে করছেনা।

আমি চোখ বুজলাম। গায়ে শীতের শিরশিরানি কমে গেছে গরম পাজকোল পেয়ে। দুচোখে ঘুমের পরশ পড়তেই ঘুমিয়ে গেলাম আনমনে। খেয়াল নেই বাকিটা,

সকালের তেজী সূর্য দারুণ তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে ছাদের কোলে। সেই সাথে শোনা যাচ্ছে পাখির কিচিরমিচির। আমি ঘুম ঠেলে উঠে বসতেই আপু, ভাইয়া, সাদ ভাইয়াকে গোল করে চেয়ার টেবিলে চা খেতে দেখি। আপু চায়ের মধ্যে পরোটা ডুবিয়ে খাচ্ছেন। আমাকে সজাগ দেখে সাদ ভাইয়া উঠে এলেন পাশে। প্রথম প্রশ্ন করে বললেন,
— জ্বরজ্বর লাগছে?
আমি ঘুমঘুম কন্ঠে আধবোজা চোখে বললাম,
— না, কমে গেছে।
— নিচে গিয়ে ব্রাশ করে আসো। আমি অপেক্ষা করছি। খাবো।
আমাদের কথা বলতে দেখে রাহাত ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,
— তোরা কি কথা বলছিস?
সাদ ভাইয়া ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন,
— নাথিং দোস্ত। তোর বোন তো আস্তো বোকা। রাতে জ্বর হয়েছে কাউকে জানায়নি। এগুলা মানা যায়?
— তুই ওর খবর জানোস কিভাবে? ও না বলে কাউকে জানায়নি! তাহলে কিভাবে জানলি?
— আরে তুই দেখি ওর চেয়ে বড় বোকা! টিচারের কাছে পড়া ফাকি দিতে অসুস্থতার কথা বলবেনা? পাগল নাকি তুই!

আমি মুখহাত ধুতে ওয়াশরুমে গেলাম। জ্বর থেকে উঠলে শরীর কেমন হালকা নিস্তেজ লাগে, মনেহয় হাসপাতালে থাকা বহুদিনের রোগী। আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেই হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়লো। অজান্তেই হেসে ফেললাম। সেই সাথে লজ্জামিশ্রিত চোখ। এই চোখ কেউ দেখে ফেললে পাক্কা বুঝে যাবে আমি প্রেমে পাগল। এই চোখ তো কাউকে দেখানো যাবেনা!!

সাদ ভাইয়ার পাশের চেয়ার টেনে বসতেই রাহাত ভাই পরোটা কামড়ে বললো,
— সাইফা? নিবির মশাই কোথায় গেছে জানিস?
আমি টেবিল থেকে পরোটা নিয়ে বললাম,
— আজব! আমি জানবো কি করে?
— রাইফা তুই জানিস?
— না ভাইয়া জানি না। নিবির ভাই তো বিদায়ের সময়ও ছিলো না।
সাদ ভাইয়া পরোটা ছিড়ে ভাজি টুকতেই বললেন,
— দেখ দোস্ত। আমরা কেউই ওর পার্সনাল এসিসটেন্ট না। প্লিজ অফ যা। ওর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিস না।

হঠাৎ আম্মু আমাদের পেছনে এসে দাড়িয়ে বললো,
— তোদের কি পরোটা আরো লাগবে? ভাজি কিন্তু শেষ, ডিম ভাজা আছে।
সাদ ভাইয়া বললেন,
— আন্টি যেই মুখরোচক ভাজি রেধেছেন শেষ হবারই কথা। রাতের পায়েসটা মতো ভাজিটার টেস্টেও অস্থির!লাজাবাব! আন্টি? একটা পরোটা লাগবে।
— দাড়াও বাবা নিয়ে আসছি। তোমার আঙ্কেলের জন্য ভাজি রেখেছিলাম ওটাও দিচ্ছি কেমন?
— আরে না না আন্টি। ভাজি আঙ্কেলকেই দিন। আমি শুকনো পরোটা খেতে পারবো।
— না বাবা। তুমি তো ডিম খেতে পারো না। তোমার আঙ্কেল ডিম খেয়ে নিবে।

রাহাত ভাইয়া বেকুবের মতো বলে উঠলো,
— মা ওই মা তুমি আমাকে ভাজি দেও! ওরে দিবা কেন? আমি কানে ধরছি এই দেখো! জীবনেও তোমার রান্নায় আমি নখ মারবো না। আমাকে ভাজি দেও না!!
— ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো মা মা করবি না! তুই খালি পরোটা চাবাবি! এটাই তোর শাস্তি। কাল রাতের কথা ভুলিনাই।
— তুমি কি আমার মা! নাকি সাদের! আমার তো ডাউট লাগতেছে! সাদ কি আমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই নাকি আম্মা?এতো মহব্বত কিসের?
— সাত সকালে জুতার বারি খাওয়ার কাজ করিস না! আমার কিন্তু হাত চুলকাচ্ছে, ব্যাপারটা বুঝিস!

কিসমিসের মতো চুপসে গেল ভাইয়া। আম্মু দাপটে দেখিয়ে চলে যেতেই হোহো করে হেসে দিয়েছি আমরা। রাহাত ভাইয়া চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। রূপ আপুকে পিঠে কনুই মারলেও আপু আরো কান ফাটিয়ে হাসছে। সাদ ভাইয়া পেট চেপে অট্টহাসি! আল্লাহ্ রে, এক্কেবারে ঠিক হইছে! গতরাতে আম্মুর পায়েসে মিষ্টি বেশি নিয়ে খুব কথা শুনিয়েছো না? রাতে চটকনা না মারলেও এখন নগদ থাবড়া দিয়ে গেছে!লও ঠেলা!

বিকেলে সবাই নাইমা আপুকে আনতে যাবো। ভাইয়া স্টাইল মারতে গিয়ে চুলে কালার করে পুরো বাড়িতে টোটো করে ঘুরছে। আব্বু মিস্টির ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই ভাইয়ার চুল দেখে এক ধমক দিলেন! ভাইয়াসহ পুরো বাড়িতে নিরবতা! আমি রান্নাঘর থেকে ভাইয়ার দিকে দেখলাম। ভাইয়া ভয়ে ঢোক গিলছে। আব্বু মিস্টির ব্যাগ টেবিলের উপর রেখে ভাইয়ার চুল দেখে বললেন,

— চুলে গোবর মাখতি! অন্তত বুদ্ধিটা হতো!
— আব্বু চুলে কেউ গোবর দেয়?
— কেউ না দিলেও তোর দেওয়া উচিত! গাধার বাচ্চা!
— আব্বু তুমি নিজেকে নিজে গালি দিচ্ছো কেন?
— কি বললি!
— আমি গাধার বাচ্চা হলে তুমি কি গাধা?
— কত্তো বড় সাহস! তুই আমাকে গাধা বললি!
— তুমি তো নিজেকেই গাধা বললা আব্বু। আমি তো কারেকশন করছি মাত্র।

আব্বু চড় মারতে গিয়ে হাত গুটিয়ে ফেললো। কিছু বললো না।গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেলো। বাড়ির সবাই সহসা মামলায় শব্দ করে নিশ্বাস ছাড়লো। আব্বুকে দেখলে সবাই কেন ভীতু হয়ে যায়, জানিনা। আসরের আযান পড়তেই আমরা প্রস্তুত হলাম যাওয়ার জন্য। পাচঁটা মাইক্রো বোঝাই সব আত্মীয়স্বজন রওনা দিলো। প্রথম গাড়িতে আম্মু, আব্বু, ফুপি, ফুপা উঠে গেছে। কিন্তু আমাদের জন্য বরাদ্দ গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। এই গাড়ির ব্রেকে সমস্যা। বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পাকা সড়কে উঠে গেলাম আমরা। সাদ ভাইয়া সাদা পান্জাবী পড়েছেন। কলারটা সাদার সাথে কালো মিশ্রনে চমৎকার লাগছে। আজকে হাতাটা গুটাননি উনি। তবুও ট্রিপিক্যালি হ্যান্ডসাম লাগছে। চুলগুলো সদ্য কাট দিয়েছেন মেবি। কানের দুইপাশে চুল ছাটা! হেয়ারকাটটা জাস্ট ফাটাফাটি! পড়নে কালো প্যান্ট, পায়ে কালো জুতা। বিকেলের তীর্যক রৌদ্রে মোহনীয় লাগছে উনার নতুন বেশভূষা। ভাগ্যিস রাস্তায় মানুষ নেই। উনার দিকে হা করে ঢোক গিলতো মেয়েরা। রূপ আপু সবার আগে আগে হাঁটছেন। পড়নে গাঢ় সবুজের নরমাল কারুকার্যের লেহেঙ্গা। দুইহাতে সোনালি বাহারের পাথর বসানো মোটা চুড়ি। ঠোঁটে মেরুন রঙের লিপস্টিক, কানে বড় ঝুমকা। চুল পিঠের উপর ছেড়ে দিয়ে সাইডে সিথি গাঁথা। আপুকে অপূর্ব লাগছে! রূপ আপু উনার রূপের মতোই রূপবতী! রাহাত ভাই চুলের লাল্লু মার্কা কালার পাল্টে কালো কালার করেছেন। ডিপ ব্লু রঙের পান্জাবী সেই সাথে সাদা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পড়েছেন। অস্থির চোখে সিএনজির খোঁজে রাস্তার দুইদিকে দেখছেন। হঠাৎ শো করে দূর থেকে একটা সিএনজি আসতেই সাদ ভাইয়া সেটাকে থামিয়ে আমাদের উঠতে বললেন। আগে আপু, তারপর আমি, আমার পাশে সাদ ভাইয়া। রাহাত ভাইয়া পাকনামো করে ড্রাইভারের সাথে বসেছেন। গাড়ি বেশ স্পিডে চলছে বটে। কিন্তু হাইওয়ের রাস্তায় জ্যাম বলে মেইনরোড দিয়ে গাড়ি চলছে। পৌছতে লাগবে তিনঘন্টা।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের আধারে প্রকৃতি ডুবে যাচ্ছে। রাস্তায় দশ বারোটা নেড়ি কুকুড় ঘেউঘেউ করে ডাকছে। রূপ আপু জানালায় হেলে ঘুমিয়ে গেছেন। সামনের সিটে রাহাত ভাইয়েরও একই দশা। পথ বাকি আরো দেড় ঘন্টা। সাদ ভাইয়া কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ বন্ধ করে আছেন। আমি ঘেউঘেউ শব্দে উঠেছি কেবল। পরিস্কার চোখে জালির বাইরে দেখি নিয়ন বাতিতে রাস্তা আলোকিত। হঠাৎ বিকট একটা শব্দে গাড়ি জোরে ব্রেক কষলো! আমি তাল হারিয়ে সামনে থাকা জালির সাথে ধাক্কা খেলাম। কিন্তু আমার ব্যথা অনুভব হলো না! আমি চোখ খুলে কপাল উঠাতেই দেখি সাদ ভাইয়া উনার হাত দিয়ে আমাকে বড় ব্যথা থেকে বাচিঁয়ে দিয়েছেন। আমার কপাল ফাটতো নির্ঘাত! রূপ আপু গালে ব্যথা পেয়ে উহ্ আহ্ করছে। রাহাত ভাই তুইতোকারি করে ড্রাইভারকে ইচ্ছামতো গালি! সিএনজির একচাকা ব্রাস্ট হয়েছে! আল্লাহ্ বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে বাচিয়েছে! গাড়িতে আগুন লাগলে কি হতো!!!

সুনশান রাস্তা তার উপর কোনো গাড়ি চলছেনা। আমরা ঘেমে একাকার হয়ে ক্লান্ত পায়ে হাটছি তো হাটছি। নাইমা আপুর শ্বশুরবাড়িতে যেতে এতো কষ্ট পোহাতে হলে জীবনেও যাওয়ার নাম নিতাম না। রূপ আপু এক কদম হাটছেন আর বকাবকি করছেন। রাহাত ভাইয়ার তেষ্টায় তালু নাকি জ্বলছে। সাদ ভাইয়া প্যান্ট গুটিয়ে, হাতা গুটিয়ে হাটঁছেন। ঘেমে গায়ের সাথে পান্জাবি লেগে গেছে। আমার পা চলছে কি চলছেনা। ঠেলাগাড়ির হাটছি। হঠাৎ মাঝরাস্তায় রাহাত ভাই ধুপ করে পাথরের উপর বসে প।ড়লো। হা করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,

— ভাই আমার তেল শেষ। আমি আর হাটতে পারবো না। গলা শুকিয়ে শেষ। তোরা যা।
সাদ ভাই ঝাঝালো গলায় বললেন,
— তুই পাগল নাকি রাহাত! এই সুনশান রাস্তায় একা থাকা কি ডেন্জারাস! চল তো প্লিজ। একটু কষ্ট কর!
— সাদ বিলিভ মি দোস্ত। আমি খুব টায়ার্ড! হাটতে পারছিনা। আমি পানি খাব। গলায় পানি না দিলে আই উইল সেন্সলেস!
— কি যে করি! এখন এই গুমোট রাস্তায় পানি কোথা থেকে জোগাড় করি!
রূপ আপুও রাহাত ভাইয়ের পাশে ধপ করে বসলেন। ক্লান্ত সুরে থেমে থেমে বললেন,
— সাদ ভাইয়া আমিও পারছিনা। প্রচণ্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। গালটাও পেইন করছে, আই কান্ট…
সাদ ভাইয়া আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ভাইয়া নিজেই ক্লান্ত উনি সেটা মুখ ফুটে বলতে যেয়েও বলতে পারছেননা। উনি চোখ নামিয়ে রাস্তার দুইধারে দেখলেন। একপাশে ঘণ জঙ্গল, অপরপাশে বাঁশঝাড়। হঠাৎ কি যেন দেখে চমকিত চাহনিতে সাদ ভাইয়া ডান হাতাটা কনুইয়ে উঠাতেই বলে উঠলেন,

— এই এই ওখানে কে যেন আছে!!
— কোনখানে?, রাহাত ভাই বিস্মিত হলেন।

সাদ ভাইয়া উত্তর না দিয়ে ওইদিকটায় দৌড়ে গেলেন। হন্তদন্তে দৌড়ে পালানোর শব্দ সবাই পেলাম। আমি বললাম,

— আপু? ভাইয়া? সাদ ভাইয়া ওখানে একা! একা থাকা রিস্ক! আমরাও যাই চলো!!
— চল!
— চল সাইফা!

আমরা ওখানে গিয়ে দেখি সাদ ভাইয়ার ধাওয়াতে একদল লুঙ্গি ধরে দৌড়াচ্ছে। সবার হাতে টর্চলাইট। মাটিতে চারটা কাঁচের বোতলভর্তি পানি। কিছু ম্যাচবাক্স, একটা লাইটার, দুইজোড়া স্পন্জের জুতা। রাহাত ভাইয়া লোভাতুর দৃষ্টি কাচের বোতলের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদ ভাইয়া দৃশ্যটা একপলক দেখে বললেন,
— খবরদার রাহাত! এগুলা না বুঝে গিলতে যাস না! বিষও হতে পারে!

কে শুনে কার কথা! রাহাত ভাই মাটিতে হাটুগেড়ে ছিপি খুলে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নিলেন। মূহুর্ত্তের মধ্যে এই ঘটনা ঘটবে কেউ বুঝে উঠতে পারেনি! সাদ ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে হা করে আছেন! রূপ আপু ইয়া বড় হা করে মুখ ঢেকেছে! আমি প্রতিক্রিয়াহীন রোবটের মতো শকে আছি! রাহাত ভাই চোখ বন্ধ করে ফেলেছেন!! ভাইয়া কি মরে যাচ্ছে? বোতলের মধ্যে কি বিষ ছিলো?

-চলবে

#ফাবিয়াহ্_মমো❤

(আমি কিন্তু বিশাল বড় পার্ট দিয়েছি…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here