অদ্ভুত_সম্মোহনী❤ PART_15

0
2523

অদ্ভুত_সম্মোহনী❤
PART_15
#FABIYAH_MOMO

?
রাহা বুকে মুখ লুকিয়ে চুপ করে আছে। সাদের মনভ্রমরে হাজারো সুখের দোলা। কেন এই সুখ সুখ লাগছে? কারন কি এসবের সাদ তা জানেনা। ও আরো শক্ত করে রাহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরলো।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে স্কচট্যাপ দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে রাখি। রাহা শিউরে উঠে হালকা কেঁপে উঠলো। কেমন শিরশির করে কম্পিত হচ্ছে শরীর! আগে তো কখনো এমন অনুভূতির শিকার হয়নি! তবে এটাই কি আপনজনের স্পর্শ ছোঁয়া? রাহা প্রশান্তি মনে সাদের খালি পিঠে কাথা টেনে ঢেকে দিলো। নিজেও ছোট্ট বাচ্চার মতো লুকিয়ে পড়লো ওর বুকে। সাদ অন্ধকারের ঝাপসা আলোতে একপলক দেখলো রাহার ঘুমঘুম মুখটা। মুখের উপর এলোমেলো কিছু চুল সরিয়ে কপালে ঠোঁট বসিয়ে বললো,

— একদিন সব সীমা লঙ্ঘন করে আমরা এক হবে। প্রকৃতির খোলা আকাশে কোনো এক জোৎস্নার রাতে সুখবিলাস করবো। ততদিন পযর্ন্ত তুমি অপেক্ষায় থাকবে রাহা। তোমাকে আমার দুনিয়া বানিয়ে তাতে আমি লুকিয়ে পড়বো। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে কুড়াবো, গড়বো, নতুন করে দেখবো। তোমার হাতের ভাজে আমার হাত মিলিয়ে তোমার মিষ্টি ঠোঁটের হাসির কারন হবো। হঠাৎ তুমি চোখ গলিয়ে কান্না করবে ফুপিয়ে কেদেঁ বলবে আমাকে কখনো একা ছাড়বেন না! আমি মরে যাবো! আপনাকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো না! আপনাকে আমার প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ডে চাই। আপনি যেখানেই যাবেন কষ্ট হলেও আমাকে নিবেন। তবুও একা ফেলে যাবেন না। আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার আকুতি শুনবো। তোমাকে দম করা সেই হাতযুগলে জড়িয়ে ধরবো। তুমি শ্বাস নিতে পারবেনা। কয়েক মিনিট জমের মতো স্থির থেকে আমার বুকেই হাফাতে থাকবে। তবুও আমি ছাড়বো না। তুমি পিঠে নখ আচঁড়ে বলবে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সাদ ভাই! আমাকে ছাড়ুন! আমি তখনও কথা শুনবো না। তুমি হাপাতে হাপাতে আমাকে মারতে শুরু করবে আমি তোমার কাধে মুখ গুজে তোমার স্নিগ্ধ ত্বকে ছোঁয়া ছোয়াবো। তুমি পিঠের চামড়া উঠিয়ে দিবে আমি আর্তনাদ না করে উল্টো তোমাকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি করে হাসবো। যেই মিষ্টি হাসিটা শুধু তোমার প্রাপ্য। তুমি আমার হাসি দেখে সব কষ্ট ভুলে যাবে। আমার টিশার্ট খুলে পিঠ দেখার জন্য পাগল হয়ে উঠবে। যখন দেখবে তোমার নখের আচঁড়ে জায়গায় জায়গায় কেটে গেছে তুমি টলমল চোখে তোমার ওই নরম দুটি হাত পিঠে বুলিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিবে। আমি হুহু করে ঠোঁটে টিপে হাসবো। তুমি আমার হাসির শব্দ শুনে ঠোট ভেঙে কেদেঁ দিবে কিন্তু কোনো শব্দ হবেনা। তখন আমার ক্ষতপূর্ণ জায়গায় তুমি ঠোঁট বসিয়ে ঔষুধ দিবে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলবো তোমার কষ্টটা অনুভব করবো। এরপর কি করবো জানো? পেছন থেকে হেচকা টেনে আমার সামনে দাড় করিয়ে তোমার চোখ দুটিকে দখল করবো। তুমি অনুশোচনা করে বলবে, আপনার পিঠে খুব কেটে গেছে। আমাকে ক্ষমা করুন। আমি তখন না বুঝেই খামচানো শুরু করেছিলাম। আপনি আমার দম আটকে ফেলেছিলেন। আমি দুঃখিত। এরপর তুমি…

রাহা মন দিয়ে সাদের সুকন্ঠ গলার কথাগুলো শুনছিলো। অন্যরকম ঘোরে চলে যাচ্ছিলো সে। সাদ এতো সুন্দর করে কথাগুলো বলছে যেনো সাক্ষাৎ ও নিজের চোখের সামনে দৃশ্যপটগুলো দেখছে। সাদের প্রতিটা বলার ভঙ্গিতে উত্তেজিত হচ্ছে রাহা। সাদ এতো গুছিয়ে সুন্দর পরিপাটি করে কথা বলতে পারে? একটা মোটিভেশনাল লেকচারার হলে সাদকে দারুণ মানাতো! খাপে খাপে মিলে যেতো ব্যাপারটা। সাদ বলতে লাগল,

— তুমি আমার গলায় একটা হাত জড়িয়ে আমাকে তোমার দিকে ঝুকিয়ে নিবে। আমি আলতো হাসিতে তোমার দিকে ঝুকবো। তুমি আরেকটা হাত আমার কানের পাশ দিয়ে চুল টেনে ধরবে। আমার ঠোঁটে হালকা করে ছোঁয়া দিয়ে তুমি সিক্ত চোখে আমার চোখজোড়াকে আবদ্ধ করবে। তুমি তখন দেখতে পাবে সাদের চোখে অগাধ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভালোবাসা। সেই ঢেউগুলো আছড়ে পড়তে চাইছে রাহা নামক তীরের কাছে। তুমি স্থির হয়ে যাবে চোখের পলক ফেলবে না। অদ্ভুত দুনিয়ায় নিজেকে আবিস্কার করবে। সেখানে আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাবে না। আমি তোমার কাছে এসে হাসিমুখে বাহু মেলে বলবো ‘আসো’। তুমি ধীরগতিতে আমার কাছে এসে দাড়াবে। আমি বলবো, ‘আমাকে তুমি ধরবেনা?’ তখনই তুমি আচমকা আমায় জাপটে ধরে বলবে, আপনি ছাড়া কাউকে আমি সেই সুযোগ দিবো না। আপনি আমাকে প্রথম স্পর্শ করবেন এবং আপনি শেষ। এই শরীরের কোনো অংশ আমি কাউকে দেখাবো না, কাউকে ধরার অধিকারও দিবো না। আমি আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে মেরে ফেলুন। চেপে ধরে দম বন্ধ করতে চাইলে তাও করুন। কিন্তু আমাকে এমনভাবে ধরে রাখুন যেনো শেষ নিশ্বাসের অন্তিম মূহুর্ত্তেও আমি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবে হাজারবার শেষ হবো! আমি তোমার মুখটা তুলে থুতনিতে ঠোঁটে ছুয়িয়ে বলবো, সাদের সম্মোহন দুনিয়ায় তোমায় স্বাগতম। এ দুনিয়া শুধু তোমার দখলে। প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত প্রতিটা মূহুর্ত শুধু তুমি এই দুনিয়াটা সাজাবে। এ দুনিয়াতে দিনশেষে ভালোবাসা এবং ভালো রাখা শিখানো হবে। শত খুনশুটি, হাজার ত্যক্ত কথা, প্রতিটা ঝগড়ার সমাপ্তি হবে সম্মোহন দুনিয়ায় এসে। এই দুনিয়াটার নাম হবে ‘অদ্ভুত সম্মোহনী’….অদ্ভুত কাজ দ্বারা নিজেদের ভালো করে চিনতে, জানতে, বুঝতে শিখবো আমরা। কখন তুমি সুখী হয়ে কাঁদো, কখন তুমি উদাসী মনে থাকো, কখন তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো…সব উন্মোচন করবো আমি। এই দায়িত্বটা কেবল স্বামী হিসেবে তখন আমার থাকবে। তুমি আমাকে প্রতিটা সকাল নতুনভাবে দেখতে শিখাবে, প্রতিটা ভোরের কাকপক্ষিকে চিনাবে, সবসময় ঝগড়া শেষে আমার কাছে এসে বলবে আমার মন খারাপ, ঘুম আসছেনা, আমি চলে যাবো। তখনই আমি সব ঝগড়া বিবাদ ভুলিয়ে ছুটে আসবো তোমার কাছে। বিছানায় শরীর থাকবে আমার। কিন্তু আমার উপর ঘুমাবে তুমি। তোমাকে বিছানায় থাকতে দিবো না আমি। তখন আমার মধ্যে লুকিয়ে রাখবো চোরের মতোন। আমাদের মধ্যে নিবরতা থাকবে কিন্তু আত্মার সাথে দুটো আত্মা এক হয়ে বহু কথা ব্যক্ত করবে। আমাকে….

রাহা সাদের কথা শুনে চরম উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। সাদকে এক্ষুনি বিয়ে করে সাথে রাখতে পারলে ভালো হতো। সাদের কাছ থেকে কোনো দূরত্ব রাহার সহ্য হচ্ছেনা। রাহা বুকে আরো গুটিয়ে গেলো।

— আমাকে আদর করবে ঠিকই কিন্তু শারীরিক তৃপ্তি দিয়ে না। আগে মনের তৃপ্তি মিটাবে। আমার মন যা চায় তাই তুমি পূরণ করবে। আমি সুস্থ একজন ছেলে অবশ্যই আমার মধ্যে শারীরিক, মানসিক দুটোরই চাহিদা আছে। কিন্তু বিয়ে হয়েছে বলে আগে শরীর দিয়ে পূর্ণতা করবে তা আমি চাইনা। আগে আমার মনকে ঘেটে দিবে। আমার মন শুধু একজনকে ভালোবাসা দেওয়ার জন্য বরাদ্দ। সেই বরাদ্দকৃত ভালোবাসাকে তুমি ধাপে ধাপে টেনে নিজের করবে। আমার মনকে তোমার বুকের ওই হাড়ের আড়ালে থাকা ছোট্ট মনটার সাথে সংযোগ করে দিবে। এমন সংযোগ করে দিবে যেনো আমি সুক্ষতম দুঃখ পেলেও তুমি ধরে ফেলতে পারো। আমার দুশ্চিন্তায় তুমি আমাকে সাহায্য স্বরূপ নিজের নিরাপদ হাতদুটো দিয়ে কাছে টানতে পারো। সবসময় শুনে থাকবে মেয়েরা স্বামীর বুকে সবচেয়ে নিরাপদ। উহু…একটু ভুল আছে। মেয়েরা নয়, সব মানুষরা হবে কথাটা। সব মানুষরা স্বীয় আপন মানুষটার কাছে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। হোক সে স্বামী, হোক সে স্ত্রী। দুজনের মর্যাদা সমান! হক সমান। কেবল স্বামীরই উচিত স্ত্রীকে নিরাপদ ভাবানো তা কিন্তু নয়। যেকোনো খারাপ মূহুর্তে স্বামীকেও নিরাপদে বুকে টেনে আশ্বস্ত করতে হয়। আমাদের মধ্যে কোনোকিছু গোপন থাকবেনা। মনে রাখবে, গোপন মানেই সম্পর্কে একটু একটু করে ফাটল। কাজেই যত ভয়ঙ্কর গোপন কথাই হোক কেনো কেউ কাউকে না জানিয়ে স্বস্তির নিশ্বাসে ঘুমাতে পারবেনা। তাছাড়া তুমি কিছু লুকালে অথবা আমি কিছু না বললে চট করে দুজনেই বুঝে যাবো আমাদের সমস্যা। কারন মন তখন একমুখো থাকবে শুধু একটা। এরপর তুমি শারীরিক চাহিদা পূর্ণ করবে যেটা লজ্জার কিছু নেই। কেননা আমরা একে অপরের জন্য চুম্বকধর্মী তা উপরওয়ালা থেকেই সৃষ্ট। এই ধর্মটা না থাকলে তুমি আমি কেউই দুনিয়ায় আসতে পারতাম না। তাই বলে এই ধর্ম জনে জনে বিস্তার করবে তা কিন্তু না। এই ধর্মটার জন্য শুধু নির্ধারিত আমরা দুজন থাকবো। তৃতীয়জন ভুলেও এখানে দাগ-দায়িত্ব দেখাতে আসবেনা।

রাহা সাদের বুকে আলতো ঠোঁট বসিয়ে বললো, আপনাকে আমি এক্ষুনি বিয়ে চাই! আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।
সাদ কথা থামিয়ে রাহার মুখ উঠিয়ে নাকে নাক লাগিয়ে বললো,
— কি বলেছি আমি? আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। কিন্তু তোমাকে আমার মানসিক চাওয়া পূর্ণ করতে হবে। এক্ষুনি ব্যস্ত হলে চলবে না। আমি তোমার বাবার সাথে খোলামেলা সব আলোচনা করবো। জানি তোমাকে কোর্টে নিয়ে যেখানে সাইন করতে বলবো সেখানেই করবে। কিন্তু আমি সব দিক দিয়ে জিনিসটা সুন্দর করে চাই। একদিকে তোমাকে আমার বউ বানাবো। অপরদিকে তোমার বাবা-মা কে নিজের অংশ বানাবো।
— আপনি কবে বলবেন আমাদের বিয়ের কথা?
— মাত্র নাইমা বুবুর বিয়েটা শেষ হলো। দুসপ্তাহ সময় নেই। তারপর আমি সব ডিসকাস করতে আসবো।
— দুটো দিনই আমার তর সইছে না আপনি দুটো সপ্তাহ চাচ্ছেন?
— বুঝতে হবে রাহা। আমার সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্টটা এখনো দেয়নি। পরশু রেজাল্টটা পাবো। রেজাল্টটা পেয়ে সবটা গুছিয়ে তবেই কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবো।
— আপনি যদি চাকরির ব্যাপারে আরো সময় নেন তাহলে?
— আমি ঠিকমতো স্যাটেল হয়ে তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যাবো….তা করবো না।এতে অনেক সময় লেগে যাবে। আপাতত কোম্পানিতে ঢুকার পরদিনই তোমার বাসায় যাবো।
— দুসপ্তাহ খুব বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? যদি আপনি চাকরি পেয়ে মত ঘুরিয়ে ফেলেন তখন?
— এতদিনে আমাকে এই চিনলে?
— না, আমি ওভাবে মিন করিনি…
— দুসপ্তাহ ঠিক হবে আমাদের জন্য।। খুব ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরশু রেজাল্ট দিলে চাকরিতে জয়েন্ট করবো দুটো দিন পর। এরপর চাকরির সব প্লেস, স্টাকচার ঠিক করে তোমার আব্বুর কাছে যাবো।
— যদি বিয়েতে আব্বু মত না দিলো তখন কি হবে?
— তুমি বিয়ে করতে চাও নাকি সেটা বলো। তোমার আব্বু তো আর আমার সাথে সংসার করতে আসবেনা।
— আপনি আমার উত্তর জানেন।
— ব্যস তাহলে তো হয়েই গেল। ডিসিশন ফাইনাল এখন! দুই সপ্তাহ পরে আমাদের বিয়ে পাকাপাকি হবে।
— চৌদ্দ দিন..
— হোক চৌদ্দ দিন। তোমার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করেছি আর এই চৌদ্দ দিন তো কিছুইনা। পলক ঝাপটাতেই ফুরুৎ হয়ে যাবে।
— বিয়ের পর কি আমাদের মধ্যে এরকম অনুভূতিগুলো থাকবে?
— কেন থাকবেনা? চেষ্টা করলে সব নতুনের মতো যত্নে থাকবে।
— যদি তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে বিতৃষ্ণা হয়ে যাই ছুড়ে ফেলবেন?
— আবার নতুন করে সব শুরু করবো। সাপোস আমাদের সম্পর্কটা ঠিক মোবাইল গেমসের মত। সেখানে অনেকগুলো লেভেল আছে কিন্তু শেষে কি আছে তা কেউ জানিনা। প্রতিটা রাউন্ড যদি টেকনিক্যালি খেলা হয় তাহলে এক চান্সে সব লেভেল কভার করা যায়। বাট খেলতে খেলতে অবশ্যই একঘেয়েমি চলে আসবে তখন মনোযোগ হারাবে দ্যান রাউন্ড হেরে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। এরপর রেস্ট নিয়ে আবার যখন ফুল এনার্জিতে ফেলতে থাকবে তখন ঠিকই উইনার হবে। কিন্তু আল্লাহ না করুক যদি কখনো আমাদের সম্পর্কে একগুঁয়ে ভাব চলে আসে তখন আমরা কিছুদিন আলাদা হয়ে যাবো অচেনার মতো থাকবো। তুমি বাপের বাড়ি চলে যাবে আমি অফিসে বসে দিন কাটাবো। বহুদিন দেখা না হবেনা আমাদের। অজানা উত্তেজনায় আমাদের আত্মা দাপাদাপি করবে একে অপরকে একপলক দেখার জন্য। যখন অস্থির হয়ে উত্থালপাতাল ঝড় দুজনের ভেতরে সব লন্ডভন্ড করবে তখন আমরা আবারো ছুটে আসবো নিজেদের কাছে। পাগলামি করবো কিছুদিন দূরে থেকেছি বলে। অসম্ভব পাগলামি করবো। তুমি রান্নাঘরে গেলেও আমি চিপকে থাকবো! ওয়াশরুমে গেলেও আমি পিছু ছাড়তে চাইবো না। বুঝতে পারছো তখন কি অবস্থা হবে?
— আপনি তখন চিপকে থাকলে আমার সমস্যা নেই। আমি পাশে থাকতে প্রস্তুত।
— হা হা গুড গুড। এবার ঠিক হয়েছে। আমার জন্য সর্বদা এরকম প্রস্তুত থাকবে। এখন ঘুমাও। একটু পর সকাল হলেই আমরা বেরিয়ে পড়বো।

সাদ কাথা দিয়ে মাথা অবধি ঢেকে ঘুমিয়ে পড়লো। রাহাও পরম শান্তিতে প্রফুল্ল মনে চোখ বন্ধ করলো। চৌদ্দ দিন! আর মাত্র চৌদ্দ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

?

— আপনি ঠিক নেই!! প্লিজ আপনি শুয়ে পড়ুন!! প্লিজ আমার কথা মানুন!! দোহাই লাগি আপনার, কথা শুনুন!!

রাহা ঘুম থেকে উঠেই অস্থির হয়ে উঠলো! সাদের শরীর প্রচণ্ড খারাপ করেছে হঠাৎ। এতো খারাপ যে বারবার বমি হচ্ছে! ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই শরীর ছেড়ে দিয়ে বমি করছে বাইরে! রাহা সাদের গায়ে চাদর জড়িয়ে কলপাড় থেকে মুখ ধুয়িয়ে রুমে নিয়ে বসালো। গায়ে জ্বর নেই তবুও শরীর মারাত্মক খারাপ! রাহা বৃদ্ধকে পোশাকের কথা বলতেই বৃদ্ধ একটা পান্জাবী এনে সাদকে পড়াতে বলে। সাদ চোখ বন্ধ করে মুখ সিলিংয়ের দিকে করে শ্বাস ছাড়ছে। লাগাতার পাচঁ/ছয়বার বমি হওয়াতে মনেহচ্ছে গলা ঝাঝড়া মতো ছিড়ে গেছে। রাহা দরজা চাপিয়ে দ্রুত পান্জাবীর গলা গলিয়ে সাদের কথা ঢুকিয়ে পান্জাবী পড়িয়ে দিলো। সাদের সামনে বসে দুহাতে ওর মুখ ধরে বললো,
— আপনি হঠাৎ অসুস্থ হলেন কেন? আমার প্রচুর ভয় লাগছে সাদ ভাইয়া! প্লিজ আমাকে ভয় দেখাবেন না..

সাদ দূর্বল দৃষ্টিতে ঠোঁটে হাসির ঝিলিক ফুটিয়ে একহাতে রাহাকে কাছে টেনে বুকে মাথাটা নিলো। শরীরে নূন্যতম জোর পাচ্ছেনা তবুও রাহাকে সর্বস্ব দিয়ে আগলে নিলো।
— আমি সুস্থ তো বোকা মেয়ে। আমি পুরোপুরি সুস্থ।
রাহা দুহাতে পান্জাবী আকড়ে সাদের গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,
— আপনার কি অসুখ হয়েছে বলুন প্লিজ। অন্তত আমার কাছে বলুন। সেদিন আপনি গান গাইতে গিয়ে যখন কাশতে কাশতে বেসিনে মুখ ধুয়েছেন ওখানে রক্ত ছিলো। প্লিজ আমার কথাটা একবার ভাবুন??
হালকা কাশতে কাশতে চোখ বন্ধ করে সাদ দুইহাতে রাহাকে ধরলো। এরপর বললো,
— যদি বলি কঠিন অসুখ হয়েছে তখন কি করবে? আমায় ছেড়ে যাবে? গেলেও আমার আপত্তি নেই রাহা।
ছ্যাত করে উঠলো রাহার বুকটা। অসম্ভব চিনচিন করছে ব্যথায়! রাহা নখ বিধিয়ে সাদের পিঠে আকড়ে ধরলো! পিঠে ছিলে যাচ্ছে বোধহয় তবুও চুপ সাদ! রাহা প্রায় কাঁদোকাঁদো গলায় বলে উঠলো,

— আমার সাথে এমন মস্কারা করবেন না প্লিজ!! আমি আপনার দুটি পা ধরতেও রাজি তবুও এসব বলবেন না।
— আমার রাহা টা তাহলে ভয় পেয়েছে দেখছি…
— প্লিজ বলুন! একবার বলুন যে আপনি যা যা বলেছেন মিথ্যে বলেছেন! একবার বলুন!!
— হু মিথ্যে। ঠান্ডা থেকে বুকে কফ বাধলে এরকম হয় মাঝেমাঝে। অগণিত বার বমি হয়।
— আপনি জানেন! আপনি কতোটা ভয় পাইয়ে দিয়েছেন? দেখুন এখনো বুকটা ধকধক করছে!
— আমার বুকে মিশে থাকো। দেখবে ঠিক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। চিন্তা করো না পাগলী। আমি তো ঠিক আছি।

রাহা সাদকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো। পিঠে একটা বালিশ দিয়ে সাদকে হেলান দিয়ে শুয়ালো। নিজে গেলো সাদের জন্য হালকা কিছু খাবার আনতে। বৃদ্ধটার ছেলের বউ জমিলা রাহার হাতে খিচুড়ির প্লেট দিয়ে বললো,
— ছেলেটা ভারি সুন্দর। নাম কি গো মা?
— জ্বি সাদ।
— মাশাআল্লাহ, নামের সাথে পবিত্রতা আছে। দেখলেই বুঝা যায়। সকাল থেকে কি বমিগুলোই না করলো। একটু দেখে রাখো মা। কিছু লাগলে ডাক ছাইড়ো।

রাহা প্লেট নিয়ে বিছানার উপর বসলো। লাফিয়ে সাদের পাশে গিয়ে সাদের নির্মল মাথাটা নিজের কাধে রেখে বামহাতে আগলে ধরলো। আরেকহাতে খাবার নিয়ে সাদের মুখে তুলে ধরতেই সাদ প্রথম দফাতে খাবেনা বলল। শেষে রাহার জিদে কাছে হার মেনে কয়েক চামচ মুখ নিলো। আর খেতে পারলো না পলিথিন নিয়ে গড়গড় বমি করে ফেললো। রাহা জোরে নিশ্বাস ছাড়লো। সাদকে স্যালাইন গুলানো পানি খাইয়ে শুয়িয়ে দিলো। রাহা জানালাটা পুরো খুলে আবার বিছানায়ে এসে সাদের মাথাটা কোলে নিয়ে একটা ফোন করলো। নেটওয়ার্ক একটু আধটু পেয়েছে এখন। রূপকে কল করতেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত সুরে কেউ বললো,

— ভাইয়া আপনারা কোথায়? সেই ভোর থেকে আমি, নিবির ভাইয়া আপনাদের খুজছি।
— আপু রে আমি বলছি। সাদ ভাইয়ার অবস্থা ভালো না। সকাল থেকে যে হারে বমি করছে শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। তুমি থাকো আমি আসছি,
— না তুই আসিস না!! তুই ঠিকানা বল আমরা আসছি। তুই সাদ ভাইয়ার ওখানেই থাক।

রাহা ওদের ঠিকানা বলে ফোন কেটে দিলো। সাদের মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। দেখতে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। রাহা ওর মুখের কাছে ঝুঁকে গালে চুমু দিলো। কিছুক্ষণ বাদে রূপ ঠিকানা বুঝে বৃদ্ধকে সব জানালে সে ঘরটার দিকে আঙ্গুল তুলে ইশারা করে, ‘ওরা ওখানে আছে’। হঠাৎ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই রাহা দরজায় তাকিয়ে দেখলো রূপ এসেছে। পেছনে দাড়িয়ে আছে নিবির। রূপ খুশির হওয়ার বদলে উল্টো আশ্চর্য হয়ে গেল। সাদ ভাইয়া আর রাহা এক রুমে ঘুমিয়েছে? বুড়ো লোকটা তো সেটাই বললো!! রূপ কৌতুহল মনে আমতা আমতা প্রশ্ন করলো,
— তুই আর সাদ ভাইয়া এক রুমে ছিলি?
— হ্যাঁ আপু। রাহার নির্দ্বিধায় উত্তর।

রূপ ও নিবিরে নিজেদের মধ্যে চাওয়া চাইয়ি করে অবাক হলো। কিছুক্ষণ থেমে পুনরায় প্রশ্ন করলো,
— রাতে তোদের মধ্যে কিছু হয়েছে?
— কি হবার কথা বুঝাচ্ছো? যদি ওইসব বুঝাও তাহলে বলবো সাদ ভাই নির্লজ্জ না। উনি নিজের সীমাবদ্ধতা ভালোকরে জানেন।
— সীমাবদ্ধ ছাড়া আর কিছু হয়েছে?
— তুমি আমাকে জেরা করছো কেন আপু? চোখে দেখো না সাদ ভাই অসুস্থ?
— রাহা চোখে সবই দেখতে পাচ্ছি। এটাও দেখতে পাচ্ছি তুই কেমন হালে আছিস। তোর লেহেঙ্গা কই? গায়ে এমন পোশাক কেন?

রূপের কথায় রাহার খেয়াল হলো আসলে রূপ যা ভাবছে তা সম্পূর্ণ ভুল। লেহেঙ্গার মতো জোব্বা গায়ে দিয়ে কখনো ঘুমানো যায়না। উৎকট অবস্থায় গা ঘিনঘিন করে। রূপকে পুরো বিষয়টা বুঝাতে রাহা কিছু বলবে তার আগেই নিবির বলে উঠলো,
— তোদের মধ্যে রুমডেট হয়েছে?
রাহার কপালে ভাঁজ পড়লো রাগের। আশ্চর্য একসাথে শুয়েছে বলে রুমডেট করবে? কয়দিন পর তো বিয়েই করবে এখন কিসের রুমডেট? তাছাড়া সাদ রাহাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রেখেছিলো। রাহা তেজী গলায় বললো,
— এটা আমেরিকা না ভাই! কথায় কথায় রুমডেট ওয়ার্ডটা প্রযোজ্য হবে!
রূপ কথা কাটিয়ে বললো,
— রাহা সব বাদ দে। আগে লেহেঙ্গাটা পড়, বাইরে গাড়ি থামানো আছে আমরা সাদ ভাইকে তুলি।

রাহা কোলের মধ্যে সাদকে ডাকতে লাগলো। কয়েক ডাক শুনে সাদ চোখ মেলে তাকালে নিবির এগিয়ে এসে সাদকে নিয়ে যেতে লাগল। দরজার বাইরে যেই যাবে ওমনেই সাদ পা থামিয়ে মাথা ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
— রাহা তুমি আসতে পারবে?
রাহার এই মূহুর্তে হাসি পেলো। নিজেকেই আরেকজন ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে সে আবার রাহাকে নিয়ে আসার কথা জিজ্ঞেস করছে। মাথা ঝাকিয়ে বললো,
— হু পারবো।

বাড়ি পৌছে দেখলো আত্মীয় স্বজন সবাই নাইমা আপুর শ্বশুরবাড়িতেই রয়ে গেছে। এখন বাড়িতে আছে রূপ, নিবির, ফুপি ও রাহাত। সাদ ও রাহার ঘটনা শুনে সবাই বাড়ি ফিরতে চাইলেও রাহার ফুপি সবটা সামলে এখানে এসে পড়ে। রাহা লেহেঙ্গা ধরে রুমের দিকে যেতেই দেখলো রাহাত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মুচকি হাসি দিয়ে সে নিজের রুমে চলে গেলো। গোসল সেরে নরমাল জামা পড়ে সে সাদকে দেখতে চলে গেলো। সাদের রুমের সামনে দাড়াতেই যে দৃশ্য দেখলো এতে ওর কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। রূপ সাদে পান্জাবী খুলতে বোতামে হাত দিয়েছে। পাশে ভালো পোশাক রাখা। সাদ চোখ বন্ধ করে আছে। রাহা একমিনিট অপেক্ষা করলো না দ্রুত যেয়ে রূপের হাত চেপে বললো,
— আপু? তুমি গোসল নেই এখানে কি?
রূপ ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে বললো,
— কি করছি দেখছিস না? ভাইয়ার পান্জাবী বদলাচ্ছি। বাসি কাপড়ে থাকা ঠিক?
— তুমি নাস্তার ব্যবস্থা করো আমি দেখছি।
— তুই দেখবি মানে? ফাজলামো করছিস? তোর টিচার দেখে এখন খাটি বউয়ের লটকে থাকবি?
— আপু তুমি অতিরিক্ত কথা বলছো! আমি মোটেও বউয়ের মতো বিহেভ করিনি!
— তুই যদি পান্জাবীটা পাল্টে দিস আর এই দৃশ্য যদি ফুপি দেখে কি ভাববে বলতো?
— ভাবুক তাতে আমার কি? একটা অসুস্থ মানুষের সেবা শুশ্রূষা করা অবশ্যই জঘন্য কাজ না?
— মানুষ তো সেটা বুঝবে না রে গাধি। ফুপি এসেই আমাকে বলে গেছে পোশাক যেনো আমি পাল্টাই। তুই যেনো দ্বারে কাছেও না থাকিস। বুঝতে পারছিস ফুপির মনে কি চক্কর চলছে?
— ফুপি কি তাহলে উটকো থট করছে?
— হ্যাঁ, জানিস আমাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসাও করেছে কাল রাতে যে একা ছিলি তোরা একসাথে একরুমে ছিলি কিনা। আমি সাফ সাফ না করে দিছি। এবার বুঝ ফুপি কোন চড়কায় চড়কি ঘুরাচ্ছে। বাবা জানলে কিন্তু শেষ…
— এখন কি করবো? ফুপি যদি বাবার কানে কথা লাগায়?
— আস্তে বল বেক্কল! কেউ শুনে ফেলবে। আগে দরজা লাগিয়ে দে।

রাহা দরজার বাইরে এপাশ ওপাশ দেখে তারপর আটকে দিলো। রূপের কাছে আসতেই রূপ বিছানা থেকে উঠে বললো,
— তুই চেন্জ কর। আমি তো আগেই ডাকতে গিয়েছিলাম কিন্তু তুই গোসলে ছিলি। শোন কেউ রাতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলবি এক বুড়োর বাড়িতে ছিলি আর সাদ ভাইয়া বুড়োর সাথে ঘুমিয়েছে। ঠিক আছে?
— আচ্ছা।

রূপ দরজা খুলে অনেকটা নিচু স্বরে বললো,
— রাহা দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দে। আমি তোর রুমে গেলাম। কেউ এলে দরজা খুলবি না। আর তোর রুমের দরজায় পরপর চারটা নক করবি আমি বুঝে যাবো তুই এসেছিস। মনে থাকে যেনো। জলদি লাগা।

রাহা মাথা ঝাকিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দিলো। দরজায় পিঠ লাগিয়ে জোরে ঠোট দিয়ে শ্বাস ছাড়লো। কি জ্বালা! সাদ ভাইয়া অসুস্থ উনাকে নিয়ে যদি ফুপি কাহিনী রটায়? কে জানে কি হবে! রাহা বিছানায় বসে সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সাদকে ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছে। গাড়িতেও অনেকবার বমি! ছেলেটার মাসুম চেহারা দেখে কান্না পাচ্ছে রাহার। হাতের উল্টোপিঠে চোখ ডলে পান্জাবী খুলতে লাগলো। ধীরে ধীরে পান্জাবী খুলে টিশার্ট পড়িয়ে দিলো। প্রচুর বেগ পেতে হলো টিশার্ট পড়াতে, সাদের যা শরীর। একটা বাহু উঠাতেই রাহার অবস্থা নাকানিচুবানি হয়ে যায়। বাবা রে!

দুপুর তিনটা। মধ্যদুপুরে খা খা করে রৌদ্রের দাপট তীব্রতা বিরাজ করে কিন্তু আজ তা হচ্ছে না। কারন কি? আজ ভ্যাপসা গরমেও গা গুলাচ্ছে না। ঝট করে কোনোকিছু না ভেবে চোখ পিটপিট করে উঠতে গেল! ইশ উঠতে পারছেনা কেন? বস্তার মতো ভারী লাগছে যে? অদ্ভুত তো!! আরেকবার উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না চিত হয়ে শুয়ে রইলো! এবার তো ঘাটিয়ে দেখতে হচ্ছে!মাথা একটু উচু তুলে নিজের তাকাতেই হিমশিম খেলো সাদ। এ যে রাহা! রাহা এভাবে দিনদুপুরে বুকে শুয়ে আছে! আশেপাশে চোখ বুলাতেই বুঝলো এটা রাহাদের বাসা! কি সাংঘাতিক রাহার বাসায় কেউ যদি ওকে এ অবস্থায় দেখে ফেলে? সাদের মাথা ঝিমঝিম করছে। মাত্র ঘুমের ডোজ কাটলো এখনো সে শারীরিক ভাবে দূর্বল। বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফ্লাসব্যাকে গেল। রাতে ওরা একটা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো, কিছু অসাধারণ মূহুর্ত কাটিয়েছে, সকালে অসুস্থ হয়ে বমি করে নাজেহাল অবস্থা। ও হ্যাঁ নিবির আর রূপ এসেছিলো তখন। ওরা আমাকে গাড়িতে বসিয়ে এখানে আনে। পুরো রাস্তায় রাহার কাধে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়েছি। ওর লেহেঙ্গাতে বমি করেছি। মেয়েটা আমাকে দূরদূর করে না তাড়িয়ে উল্টো আমার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। ডাক্তার দুটো ক্যাপসুল খাইয়ে ছিলো আমায় এরপর কিছু মনে পড়ছে না। রাহা ঘুমিয়ে আছে। আমি হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখে তন্দ্রা মতো ঘোর চেপে আসলো। হঠাৎ একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে লাগলাম, রাহা আমার দিকে একটা হাত বারিয়ে বলছে ‘প্লিজ আমার হাতটা ধরুন সাদ ভাই! আমার হাতটা শক্ত করে ধরুন!’ পরপর এই কথাগুলো রাহা বলছে। আমি আরো কিছু দেখতে যাবো হঠাৎ কেউ নড়েচড়ে উঠে আমার গলায় জড়ানো হাত ছেড়ে দিলো। আমার মুখের উপর তপ্তকর নিশ্বাস ঝড়ছে। আমি চোখ খুলতে যাবো তখনই কপালে নরম ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পড়লো। চুলগুলোতে হাত ছুয়িয়ে সেখানেও আরেকটি উষ্ণ ছোয়া বসালো। মেয়েটা একদিনের মাথায় এতো রোমান্টিক হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি!! হঠাৎ করেই যেনো রোমান্টিজ্যাম নিয়ে উছলে পড়ছে।

রাহা ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতেই দরজায় ধামধাম করে ধাক্কার আওয়াজ হলো। ওপাশ থেকে চিল্লাচ্ছে, ‘সাদ! সাদ দরজা খোল! ওই সাদ খোল না!!’ সাদ চিৎকারের শব্দ শুনে চোখ মেলতেই রাহা মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে সাদ ওর মুখ চেপে ধরলো। মাথা ডানেবামে নাড়িয়ে ‘না’ সূচক বুঝিয়ে চুপ থাকতে বললো। রাহার মুখ থেকে হায় সরিয়ে ফ্লোরে পা রেখে দরজা খুলতে যাবে আগে রাহাকে কোথাও লুকিয়ে পড়তে বললো। রাহা কোথায় লুকাবে ভেবে না পেয়ে দরজার পেছনেই লুকালো। রাহাত ঢুকলে ওমনেই টুপ করে বেরিয়ে পড়বে। সাদ দরজা খুলতেই বাতাসের স্পিডে ঢুকলো রাহাত। রুমের এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে বলে উঠলো,
— রুমে কেউ আছে নাকি? দরজা খুলতে এতো টাইম লাগলো কেন?
সাদ শান্তভঙ্গিতে বললো,
— বিয়ে করলে ঠিকই একটা বউ কোলে দেখতি। বিয়ে তো করিনি জানিস। তাই রুম খালি হাহা…
রাহাতের সন্দেহ হচ্ছে। কারন একটু আগে গোপনসূত্রে খবর পেয়েছে সাদের রুমে নাকি খুটিনাটি শব্দ শোনা যাচ্ছে। মেয়েলি গলায় কান্নার আওয়াজ। সন্দেহটা কাটাতে রাহাত বিছানার নিচে, সোফার পিছনে, পর্দা আড়ালে সব খানে চেক করলো। কিন্তু কাউকে পেলোনা। সাদ অনেকবার জিজ্ঞেস করলেও রাহাত কিছু বলছেনা। রাহাত দরজা পেছনে দেখতে যাবে কিন্তু সাদ কেনো যেনো আড়াল করে দাড়িয়ে আছে। বেটার মাস্তান বডির পেছনে কোনো মেয়ে লুকালে কেউ কি স্পষ্ট দেখবে? সাদ রাহাতের কাধ ধরে থামিয়ে বললো,

— বন্ধু আমাকে বলো কি খুজছো? আমি খুজে দিচ্ছি।
— তুই আগে সর! তোর খোজা লাগবেনা।
— আমার রুমে এসে এভাবে হন্য হয়ে খুজছিস সেটা বলবিনা?
— এটা আমাদের বাড়ি! তোর না। তুই জাস্ট গেস্ট!

রাহাত রাগী সুরেই সাদকে কথাটা বললো। এরপর রুম থেকে দরজা টেনে চলে গেল। রাহা দরজার পেছনে ছিলো যেটা সাদ ঢেকে দাড়িয়েছিলো। রাহাত দেখতে পায়নি ওকে। স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে রাহা সাদের পিঠে গাল লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

— বড় বাঁচা বেঁচে গেছি সাদ ভাইয়া। যদি ভাইয়া আপনার সাথে দেখতো…

সাদ পেছন থেকে রাহার হাত এনে নিজের হাতের ভাজে মিলিয়ে বললো,
— টেনশন নট বাচ্চা। রাহাত চলে গেছে,

ওমনেই দরজাটা ক্যাট করে খুলে গেল। দরজাটা দেয়ালে লেগে ঠক করে শব্দ হতেই ওরা দুজনে দরজার বাইরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। রাহা আস্তে আস্তে গাল উঠিয়ে চোখের অক্ষিগোলক বড় করে নিচু গলায় বললো,

— ভা..ই…য়া…

-চলবে

#আসসালামু_আলাইকুম (সালাম নিবেন কিন্তু!! গঠনমূলক মন্তব্য দ্বারা ত্রুটিমোচন সাহায্য করুন!! ভালোবাসা❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here