অদ্ভুত_সম্মোহনী ❤ PART_11

0
2430

অদ্ভুত_সম্মোহনী ❤
PART_11
#FABIYAH_MOMO

.
ছাদের দিকে কেউ ভয়ানক স্পিডে এগিয়ে আসছে! পায়ের প্রতিটা কদম বুকের হার্টবিট তুখোড় কাপিয়ে দিচ্ছে! এরূপ প্রতিকূলতায় নিজেকে শান্তা করে ঠান্ডা মগজে উপায় ভাবলো! পদধ্বনি আরো সন্নিকটে আসছে, যেকোনো মূহুর্তেই তার প্রবেশ ঘটতে পারে! পাচঁ সেকেন্ডের মাথায় সাদ উপায় বের করলো! কিন্তু সেটা খুব ঝুকিপূর্ণ! সাদ রাহার দিকে তাকিয়ে দেখলো, মিস্টি মায়া মুখটা কেমন ভয়ের ক্রোশে মিইয়ে গেছে!! আধবোজা দরজাটার দিকে একবার তাকালো, পরক্ষনে রাহার দু বাহু ধরে নিজের দিকে রাহাকে ঘুরিয়ে হনহন করে বলে উঠলো,

— তুমি পেছন গেট দিয়ে পালাও রাহা! আই সেইড গো! সদর গেটটা আমি হ্যান্ডেল করছি! জাস্ট গো ফ্রম হেয়ার!!

রাহা তাই করলো! একদৌড়ে পেছন গেট ধরে নেমে রুমের ভেতর পৌছে ছাড়লো! রুমের দরজা লাগিয়ে হাফাচ্ছে রাহা! বুকের ভেতর ধপাস ধপাস করে লাফাচ্ছে যন্ত্রটা! দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো রাহা! ডান হাতটা উঠিয়ে ঠোঁটের উপর ঘাম মুছেই উঠে দাড়ালো! একগ্লাস পানির সবটুকু গিলে বিছানায় গিয়ে শোয়ার চেষ্টার করলো!

.
সদর দরজা দিয়ে ছাদে ঢুকলো নিবির। এখান থেকেই কারো গলার আওয়াজ পেয়েছিলো এতো রাতে! কিন্তু হতে পারে তা চেক দিতেই খটকা লাগলো মনে!চোখের সামনে রেলিংয়ে দুহাত রাখা সাদকে দেখলো সে! বৃষ্টির বেগ নেই এখন, আকাশ একদম পরিস্কার, রূপকথার সেই জ্বলজ্বল তারাগুলো কালো আসমানে ফুটেছে! নিবির এগিয়ে গিয়ে দেখলো সাদ কাকভেজা অবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সে প্রশ্নবিদ্ধ করে বললো,

— এই যে হ্যালো মিস্টার? এই রাতে এখানে কি?
মাথা ঘুরিয়ে নিবিরের চোখের দিকে তাকালো সাদ। ঠোঁটে হাসি টেনে বলে উঠলো,
— কিছু না ব্রো। রাতের বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি দেখতে এসেছি।
— আর ইউ কিডিং উইথ্ মি? গাধা ভাবছো আমাকে?

সাদ ভ্রু কুচকে তাকালো! ”সিট! নিবির কি জেনে গেলো নাকি! অনেকটা শান্ত কন্ঠে নিবিরকে বললো,
— তুমি নিশ্চয়ই গাধা না নিবির। তাই তোমাকে বোকা বানানোর মতো ভুল আমি করতে পারি না।
নিবির অনেকটা ক্ষুদ্ধ হয়ে বললো,
— জাস্ট সাট আপ!! হাউ ডেয়ার ইউ? আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কি করে হলো!
— এক্সট্রা বুঝলে ফিউচার অন্ধকার ডুড! এজ আই নো ‘গাধা’ ওয়ার্ডটা আমি বলিনি।চলি!

সাদ নিবিরের কাধে দুটো হালকা চাপর মেরে মৃদ্যূ হাসিতে প্রস্থান করলো। নিবির সাদের যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধীরগতিতে কাধ ঝাড়লো। যেনো সাদের ছোয়াতে নোংরা লেগে গেছে এবং সেটা পরিস্কার করাই নিবিরের প্রধান কর্তব্য ! নিবির শক্ত গলায় বিড়বিড়িয়ে বললো,

‘ ইউর টাইম স্টার্ট্স নাও মিস্টার সাদ আরাফ! তোর অবস্থা যদি নাজেহাল না করি! আমার নামও নিবির নাহ্! ‘

বাম পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল করলো নিবির! কলের ওপাশের ব্যক্তিকে কিছু বলতে না দিয়ে শুধু বললো,

‘স্টার্ট ইউর টাস্ক বেবি!’

.

রাহা চোখ বন্ধ করে আছে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি তার হার্টবিটটা! কি দ্রুতই না ধুকপুক ধুকপুক করছে! যেনো হাই স্পিডের বুলেট ট্রেনকেও হার মানিয়ে ছাড়বে। ঠোঁট দুটো প্রসার করে শ্বাস ছাড়তেই সাদের উপস্থিত বুদ্ধির ব্যাপারটা খেয়াল হলো রাহার! নিজেদের বাসা অথচ ওমন সাংঘাতিক পরিস্থিতিতে এটুকুও ভাবতে পারছিলো না, এ ছাদে দুটো গেট আছে! মানে দুটো প্রবেশ পথ! নিজের বোকামির জন্য নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে করছে হলো! নিজের এত্তো বড়ো বোকামির জন্য সাদ খামোকা বিপদে ফেসে যেতো!

.

বাড়িটা আজ হৈচৈয়ে মত্ত। সেই ভোর পাচঁটা থেকে সবাই চুটিয়ে কাজে লিপ্ত। ভাইয়া, আব্বু সহ বাড়ির সব ছেলেরা খাবারদাবার ও ‘ওয়েডিং হল’ নিয়ে ব্যস্ত। আম্মু ডেগ পাতিলের পাশে দাড়িয়ে খুটিনাটি সব পরীক্ষা করছেন, ফুপি সাজসজ্জা ও পোশাকআশাক নিয়ে পরার্মশে আছেন। আমরা সব মেয়েরা স্টেজের আশপাশে বসে ‘হলুদ ছোঁয়ার’ ডেকোরেশন দেখছি। কাজ প্রায় সবটা শেষ। ফিনিশিংয়ের কাজটা শেষ হলেই শান্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবো। স্টেজের মূল ব্যানারটা ঠিক করতেই কেউ সজোরে ধমক দিলো আমি গাদা ফুলের ঢালা ফেলে চমকে উঠি! কন্ঠটা যে রাহাত ভাইয়ার সেটি বুঝতে হলো একসেকেন্ড দেরি!

— রাহার বাচ্চা! তোকে যদি চিবিয়ে না ধরছি!

ভাইয়ার হুঙ্কার মার্কা চিৎকারে আমার ষষ্ঠইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে, রাহা পালা! রাহাত ভাইয়া তোকে ধরতে পারলে কেউ রক্ষা করবেনা! হঠাৎ ভাইয়া আমার চিন্তার সাগরে নৌকা ভাসিয়ে এমন তাড়া দিলো, সাতপাচঁ না ভেবে দৌড়ে সিড়ি ধরলাম। দ্রুত পা ফেলে দৌড়াচ্ছি আর চিল্লাচিল্লি করছি!!

— ‘মা বাচাঁও মা!!! ও মা কোথায় তুমি! আল্লাহ্ গো!! মা তোমার গন্ডার আমায় ধাওয়া দিচ্ছে মা!’
— তোকে আমি ছাড়বো না!! তুই আমার পকেট থেকে কত নিয়েছিস নিমোকহারামী! পুরো পকেট খালি করে দিছিস! একটা পয়সাও রাখিস নি!! বজ্জাত!! ইতর!!

আল্লাহ্! ও মাবুদ! ও খোদা! মোরে আজকের মতো বাচাও!! ভাইয়া তো আমার পিছুই ছাড়ছেনা!!ইশশ আল্লাহ্.. কোন কামলা দিতে টাকা নিছিলাম??ভাইয়ার সুবাদে কুকুরের দৌড়ানি খাওয়ার মতো এতোবড় সুবোধ ভাগ্য পেয়েছি যে বাড়িময় দৌড়াচ্ছি! এই রুম থেকে ওই রুম, এই জানালা থেকে ওই জানালা, সোফা থেকে লাফিয়ে বিছানা, বিছানা থেকে লাফিয়ে সোফা….সর্বত্র আমাদের দৌড়ঝাঁপের ফলে হৈ হুল্লাড়ে সমাগম হয়েছে! ডাইনিং স্পেসে থাকা ফুপির পেছনে লুকাতেই ফুপি তাড়াতাড়ি দু’হাত প্রসারিত করে ভাইয়াকে আটকে দিলো! অতঃপর ধমকানির সুরে বললো,

— এ কোন ধরনের অসভ্যতা রাহাত! ছোটবোনের সাথে কেউ এমন করে! তোর মাকে নালিশ দেবো? কিরে বল, দেবো?
— তুমি সামনে থেকে সরে দাড়াও, ফুপি! আজকে এই বজ্জাতকে আমি ছাড়বো না! কতদিন বলেছি আমার টাকা চুরি করবিনা, তাও.. !
ভাইয়ার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে ফুপি বলে উঠে,
— এই তুই কাকে হুকুম দিচ্ছিস খেয়াল আছে? চলে যা বলছি! চলে যা! আমার সামনেই মেয়েটাকে হুমকি দিচ্ছিস!…চড় খাবি!
— চড় খাবো না! খিদে নেই! আহা…তুমি সরো না!!

— ভাবি! ভাবি?রাহাতের মা! এদিকে আসুন তো! জলদি আসুন!

ফুপির ডাকাডাকিতে রাহাত ভাইয়া সাময়িক থামলেন। এরই মধ্যে দুইভাইবোনের ছেলেমানুষি ঝাগড়ার জেরে চারপাশে ছোটখাটো জটলা বেধেঁ গেলো। একদল ভাইয়াকে সর্মথন করছে, অপরটা আমাকে। ফুপি শুধু মায়ের আসার অপেক্ষায় আছেন! সাদ ভাইয়া বাইরে থেকে এসেই দেখেন আমাদের এই অবস্থা। ছোট্ট জটলার ভেতরের ঢুকে আমাদের কাছে আসতেই ফুপি উনাকেও আমাদের ঐতিহাসিক ঘটনাটা বললো! সাদ ভাইয়া শোনামাত্র হো হো করে হেসে দিলেন। যেনো মজার কিছু শুনেছে। পরক্ষনে গণিতের কড়া মাস্টারের মতো গম্ভীর হয়ে বললেন,

— রাহাত? এইসব কি শুনছি ? তোকে আজকে বিয়ে কাল দুইটা বাচ্চা নিয়ে বাবা হয়ে যাবি, অথচ বোনের সাথে এমন বাচ্চামো করছিস! ছিঃ বাইরের মানুষ কি ভাববে বলতো? অতগুলা মানুষের এভাবে ধাওয়া করলি!

এবার আমার দিকে দ্বিগুন কঠিন দৃষ্টি ছুড়ে বললেন,

— রাহা? তোমাকে বলার মতো ভাষাই পাচ্ছিনা! তুমি না ম্যাচিউর? একটা ম্যাচিউর মেয়ে বাড়িভর্তি মানুষের সামনে ওমন দৌড় খেলা খেলে? লোকে কি বলবে ভেবেছো? বংশ পরিবার তুলে যা-তা বললে কেমন লাগবে!

সাদ ভাইয়ার মাস্টার দ্যা সূর্যসেন টাইপ দুমিনিটের ভাষন শেষ করতে না করতেই মা কাঠের চামচ হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন! মায়ের অস্ত্র দেখে ভাইয়া চট করে মুখ পাল্টে লোকদেখানো হাসিতে আমার কাছে এসে বলে,

— আহারে আমার কুতুকুতু, পুতুপুতু, টুক্কুটুক্কু বোনটা!! আমার লাল টুকটুক পরীমনিটা!! কি যে সুন্দর বোনটা,ও মা শুনো….বোনটারে তুমি চারটা বছর আগে দুনিয়ায় আনলা না কেন্? আহারে…আমার জায়গায় ওরে আনলে কি হতো হ্যাঁ… এই বজ্জাতের থুক্কু থুক্কু বুবুটার বিয়ে হয়ে যেতো..

ভাইয়ার বদলে যাওয়া রূপ দেখে আম্মু, ফুপি এমন কারেন্ট খেলো! সেই কারেন্টে পৃষ্ট হয়ে আম্মু হাত থেকে কাঠের চামচ অজান্তেই ছেড়ে দিলো…

-চলবে❣

#ফাবিয়াহ্_মম ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here