অদ্ভুত_সম্মোহনী PART_14

0
2280

অদ্ভুত_সম্মোহনী
PART_14
#FABIYAH_MOMO

রাহাত ভাই প্যান্টের চেইন খুলে ঝর্নার মতো বর্ষন করছে ছোট ছোট ঘাসের জমিতে!লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে! ছি! আবার হ্যাংলার মতো হি হি করে গান ধরেছেন ইতিমধ্যে,

‘মাতাল হয়ে হিসু করবো দেয়ালে,
যা হবে দেখা যাবে কাল সকালে, আহ্!
মাতাল হয়ে হিসু..

মাতলামির একটা লেভেল থাকে ভাই! রাহাত ভাইয়ের কীর্তি দেখে দুবোন লজ্জায় মরে যাচ্ছি। চোখ ঢেকে আছি! কি ফাউল গানে রাস্তার ধারে একনাম্বার সাড়ছেন ছি ছি! সাদ ভাইয়া হাবার মতো হা করে তাকিয়ে আছেন! উনি বুয়েটের শতশত হিসাব তুড়ি বাজিয়ে করলেও এই পরিস্থিতি সামলানোর মতো হিসাব উনার নেই। রাহাত ভাইয়ের হুশ জ্ঞান তো নেই, উল্টো প্যান্টের চেইন না লাগিয়ে হেলতে দুলতে ঝাপিয়ে পড়লো সাদ ভাইয়ার উপরে! সাদ ভাইয়া লজ্জায় চোখ আকাশে তুলে একটা হাত নিচু করে চেইন লাগিয়ে দিলেন ভাইয়ার। রাহাত ভাইয়া পাগলের মতো বকবক করছে। কি জ্বালা!

— সাদু? তোর এতো কেন জাদু? সাদু? ওই সাদু? তুই আমাদের সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম কেন শালা! এই আমাদের ধার দে, বুয়েটের মাইয়াগুলির জান আটকায়া দেস তো! একটু শান্তি দেস না! ইউ আর টু মাচ কিউটু…
সাদ ভাইয়া কোনোমতো উনাকে আগলে ধরে বললেন,
— চড় মারবো শালা! তুই গে’র মতো কথা বলছিস কেন? তুই কি গে? সোজা হ বলছি!
— সাদু? ও বাবু? বাবু খাইছো? বাবু রাগ করে কেন??

সাদ ভাইয়া ভ্রুকুটি করে অসহায় দৃষ্টিতে এবার আমার দিকে তাকালেন। আমি ইশারায় বোঝালাম, প্লিজ কষ্ট করুন!!

— বাবা তোমার দরবারে সব পাগলেরই মেলা…হই! বাবা তোমার দরবারে আহা!

ভাই হাত নাড়িয়ে কোমর ঢুলিয়ে নাচছেন। আবার আরেক গান ধরলেন,
— চুম্মা চুম্মা লো গে…চুম্মা চুম্মা লোগে জারা…

রাহাত ভাইকে সামলানো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। সাদ ভাইয়াও ধরতে ছাড়লেন উনাকে। বেজির মতো তিড়িং বিড়িং করে লাফাচ্ছেন। হঠাৎ সাদ ভাই রাহাত ভাইয়ের গালে কষিয়ে এক থাপ্পর মারলো। ভাই বেহুশ হয়ে গেলেন। সাদ ভাইয়া একহাত দিয়ে রাহাত ভাইকে ধরে দাড় করালো। ভাই চোখ বুজে বমি করে দিয়েছেন। সমস্ত শরীরের ভর ছেড়ে উনি সাদ ভাইয়ার উপর লাগাতার বমি করছেন। সবচেয়ে বেশি সাফার করছেন সাদ মশাই। বেচারার হাল খুবই বাজে। বমিতে মাখামাখি হয়ে নাজেহাল অবস্থা!

রাত বোধহয় সাড়ে আটটা! নাইমার আপুর শ্বশুরবাড়িতে সবাই আমাদের জন্য টেনশন করছে নিশ্চয়ই! বাসায় পৌছে কি জবাবটা দিবো? রাহাত ভাইয়ের মাতাল দশা কিভাবে উল্লেখ করবো? আব্বু দেখলে ভাইকে খুনই করে ফেলবে আল্লাহ! কি যে হবে! আমরা সবাই রাস্তায় ঝিম মেরে বসে আছি। আমাদের দেখে বলবে, ওই যে রাস্তার ফকিরগুলা ভিক্ষা করতে বসেছে! কি লজ্জার কথা!

সাদ ভাইয়ার কোলে রাহাত ভাই ঘুমিয়ে আছে। রূপ আপুর মাথা আমার কাধে। সবাই খুব ক্লান্ত। তার উপর নিস্তব্ধ সড়ক, জনমানবশূন্য, গাড়িহীন। আল্লাহ্? প্লিজ আমাদের উদ্ধার করো! আমরা বেচে গেলে সত্যি দু রাকাত নফল নামাজ পড়বো! হঠাৎ আশার আলো জ্বেলে উঠলো বুঝি দূর থেকে হেডলাইটের সাথে এগিয়ে আছে গাড়ি। রাহাত ভাইকে মাটিতে শুয়িয়ে সাদ ভাইয়া গেলেন গাড়ি আটকাতে! রাস্তার মাঝখানে দুইহাত মেলে উনি হাত নাড়ালেন ইশারাতে! গাড়ি হুশ করে থামলো সাদ ভাইয়ার পায়ের কাছে।

সাদ ভাইয়া লোকটার সাথে কথা বলে ফিরে এলেন আমার কাছে। মাথা কিছুটা আমার দিকে ঝুকিয়ে বললেন,
–রাহা একটা ঝামেলা!
— কি ঝামেলা?, আমি অবাক হয়ে বললাম।
— রাহা গাড়িতে কেবল দুটো সিট আছে। তিনটে হবেনা। গাড়িটা নাইমা বুবুর বাসার কাছ দিয়ে যাবে। কি করবো?

আমি কিছু সেকেন্ড চিন্তা করে বললাম,
— ভাইয়া আমি আপনাকে ছেড়ে যাবোনা! কাজেই রূপ আপু ও রাহাত ভাইকে পাঠিয়ে দিন।
— তুমি যাবে না মানে? কি বলছো! তুমি আর রূপ যাও! ইটস সেইফ!
— প্লিজ বাধা দিবেন না! আমি আপনাকে একা রাস্তায় ফেলে কোত্থাও যাচ্ছিনা। আপনাকে আমার কথা মানতে হবে সাদ! প্লিজ তর্ক করবেন না।

আমি তেজী গলায় কথাগুলো বললাম। সাদ ভাইয়া মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে পসেসিভ! কাজেই আমাকে ও রূপ আপুকে একা এই রাতে অবশ্যই থাকতে দেওয়ার প্ল্যান করবেন না। তাছাড়া রাহাত ভাইয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো না। সাদ ভাইয়া আগের চেয়েও বেশি অসহায় চাহনি দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। উঠে দাড়িয়ে রাহাত ভাইকে নিয়ে সিটে বসিয়ে দিলেন। রূপ আপুর ঘুম ভাঙ্গিয়ে আমি আপুকে বাসার সবাইকে বুঝিয়ে বলার জন্য সামলে দেই। আপু আমার হাতটা হঠাৎ শক্ত করে ধরলেন। খুবই শক্ত করে। বললেন,

— রাহা? প্লিজ বোন ! আমি ভুল করে থাকলে মাফ করে দিস তবুও একা ছেড়ে থাকিস না। তোকে ফেলে যেতে পারছিনা। তুই আয় না প্লিজ। তোকে আমি কোলে বসিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। তবুও আয়..

নিষ্ফল আবেদন! যেটা রাখার জো আমার নেই। আপু আমার শত ব্যাপারে হিংসা করুক, দিনশেষে আগলে কাছে নিবেই — এটাই উনার ভালোবাসা প্রকাশের পন্থা। বড় বোন বোধহয় এরকমই হয়। সবাই না তবে কিছুকিছু। আপুকে আমার খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে, আপু তুমি টেনশন নিও না, আমি আসবো। তুমি প্লিজ ঠান্ডা হও তো।

আপু আমার হাতে উনার পার্সটা ধরিয়ে বললেন,
— পার্সটা রাখ। টাকা আছে ওতে। যাচ্ছি রে…

এটুকু বলেই আপুর শক্ত হাতের বাধন ঢিলে হয়ে যেতে লাগল। গাড়িটা আমাদের পাশ কাটিয়ে সজোরে চলে গেল। শুধু লাল দুটো ব্যাক লাইট দেখা যাচ্ছে চোখে। কাধের উপর ভারি কিছুর অনুভূব হলো। ঘাড় বাকিয়ে দেখি সাদ ভাইয়া কাধে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে বলছেন। আমি মৃদ্যু হেসে সম্মতি জানাই, ‘প্রচন্ড ভরসা করি আপনাকে’।

রাহা দেখলো সাদের সাদা পান্জাবীটা বমিতে লেপ্টে আছে। বিকট গন্ধ ছড়িয়ে দেখতে বিশ্রী ঠেকছে। রাহা তাড়াহুড়ো করে পার্স থেকে টিস্যু নিয়ে মুছে দিতে লাগল বমির নোংরা। সাদ মায়া মায়া চোখে রাহাকে দেখছে। মেয়েটা ভারী অদ্ভুত! বমির গন্ধে নিজেরই নাড়িভুঁড়ি উল্টে বমি আসছে অথচ মেয়েটা কিরকম শান্ত স্বাভাবিক ভাবে কাছে ঝুকে বমি সাফ করছে যেনো কিছুই হয়নি। রাহাকে দেখে মুগ্ধ হলো সাদ। রাহা আসলেও খুব মিষ্টি। কখনো কোনো পরিস্থিতিতে ভয় পায় না সহজে। আড়চোখে সাদের চাহনিতে চোখাচোখি করতে ভীষণ লজ্জা করছে রাহার! কারন এখন ওরা একা যদি কিছু করে ফেলে? এই নিশুতি রাত্রিরে মানবহীন সড়কে ওদের চারধারে কেউ নেই। শূন্যতার মতো প্রকৃতি। সব স্তদ্ধরকম ঠান্ডা।

সাদের খুব চিন্তা হচ্ছে। রাতেরবেলা মেয়ে সাথে থাকা মানে ভীষন ভয়ঙ্কর ব্যাপার! দেশের যা করুণ অবস্থা! মেয়েদের নিয়ে বাজে কিছু ঘটতে টাইম লাগেনা। রাহা সামনে হাটছে, ঠিক পিছুপিছু হাটছে সাদ। হঠাৎ জঙ্গলের ডানপাশ থেকে কেউ ‘কে কে’ করে উঠলো। রাহা ও সাদ চমকে উঠে থমকে দাড়ালো। রাহা দ্রুতবেগে সাদের পাশে গিয়ে দাড়ালে সাদ ওকে নিজের পেছনে লুকিয়ে নেয়। জঙ্গলটার ওখান থেকে শুকনো পাতা মচমচ করার আওয়াজ আসছে। মাটিতে ঠকঠক লাঠির মতো শব্দ তুলে কেউ হেঁটে আসছে আর থেমে থেমে বারবার প্রশ্ন করছে, ‘কে! কে ওখানে! আমি জিজ্ঞেস করছি কে!’ রাহার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে কারো ঘ্যাড়ঘ্যাড় গলা শুনে। প্রচন্ড ভয়ে পান্জাবীর পিঠের অংশে হাত বসিয়ে খামচে ধরলো। সাদ মাথা না ঘুরালেও বুঝতে পারছে রাহা ভয় পাচ্ছে। একটা বুড়ো বেরিয়ে এলো টর্চলাইট হাতে। পড়নে সাদা লুঙ্গি, মুখে শতশত বয়সের ভাঁজ, ভারী চাদরে মাথা পেচানো। লোকটা ওদের দেখে এগিয়ে এসে অভয় সুরে বললো,
— তোমরা কি রাস্তা ভুলে গেছো বাবা?
সাদ তটস্থ গলায় বললো,
— জ্বী চাচা, এমনই ধরতে পারেন। আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, তার উপর রাস্তায় কোনো মানুষ নেই যে হেল্প চাবো।
— এলাকা ভালো না বাবা। এসময় চোর ডাকাতের দল ঘুরে। সঙ্গে বউ নাকি?
সাদ একপলক রাহার দিকে আড়চোখে তাকালো। এরপর বললো,
— জ্বী চাচা, বউ।
— তাহলে তো তোমাদের একা ঘুরাঘুরি নিরাপদ না বাবা। জমানা ভালো না মেয়েছেলে দেখলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা চাইলে আমার বাড়িতে রাতটুকু থাকতে পারো। ভোরে গাড়ি চলা শুরু করবে। চলে যেও। এখন গাড়ি পাবা না।
সাদ ইতস্তত বোধ করছে অচেনা মানুষের বাড়িতে উঠা নিয়ে। খোশগল্পে ওদের ভুলিয়ে ভালিয়ে কোনো খারাপ কিছু করার মতলব নেই তো? বৃদ্ধটা ওর সমস্যা বুঝতে পেরে শান্ত হাসিতে বললো,
— ভয় পেও না বাবা। উপরে আল্লাহ্ আছে তো। ভরসা করে আমার সাথে আসতে পারো। ভয়ের কারন নেই।

বৃদ্ধটার ব্যবহার অমায়িক, শান্ত, বিশ্বাসযোগ্য। আমার লোকটাকে দেখে ভয় লাগছে না। শরীর প্রচুর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আমার, হাটতে পারবো না আর। আমি সাদ ভাইয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,
— শরীর খারাপ লাগছে ভাইয়া। আমি আর এক কদম হাটতে পারবো না। হয়রান লাগছে নিজেকে…

সাদ ভাইয়া আমার কথা শুনে বৃদ্ধকে প্রশান্তিময় হাসিতে বললেন, চলুন চাচা যাবো।

জঙ্গলের ভেতরে সরু চিলতে মেঠোপথ। দুপাশে প্রচুর গাছ। ছোট্ট উঠোন পেরুতেই ইট সিমেন্টের পাকা একতলা বাড়ি। বাড়ির সদর দরজায় হলুদ বাতি জ্বলছে। জমিল চাচা দরজায় দাড়িয়ে গলা উচিয়ে কারো নাম ধরে দু’তিনবার ডাকলে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক মহিলা। মহিলার গায়ে সুতির শাড়ি পড়নে মাথায় আচল টেনে ঘোমটা। সম্ভবত ছেলেবউ হবে বৃদ্ধটার। আমাদের পরিচয় জ্ঞাপন করতেই মহিলাটা তৎপর হয়ে উঠলো আমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে।

সাদের অবস্থা ভালো না। শরীরটা খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবুও রাহার সামনে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করা এক প্রকার লজ্জা। রাহা হাতমুখ ধুয়ে লেহেঙ্গা পাল্টে একটা ঢিলেঢালা পোশাক পড়েছে। একদম পায়ের পাতা পযর্ন্ত ছুয়েছে গোল মতোন জামাটা। সাদ সবেমাত্র হাত মুখ ধুয়ে নিজেকে ঠান্ডা করতে বিছানায় বসেছিলো কিন্তু রাহাকে দেখে কেনো যেন ওর বড্ড হাসি পেলো! গর্ভবতী মহিলার মতো ঢিলামার্কা পোশাক পড়েছে। রাহার তাহলে কি বাচ্চা হবে? ভেবেই হো হো করে হাসছে সাদ। রাহা ভ্রুকুচকে বললো,

— সমস্যা কি? দাতঁ বের করে হাসছেন কেন?
সাদ আরো হাসতে লাগলো। কেউ বিনা কারনে হাসে? পাগলরা কারনে অকারনে হে হে করে হাসে!
— উফ! হাসছেন কেন বলুন! নাহলে আমি বাইরে গেলাম ! কথা বলবো না!
— আরে না না বাইরে যাচ্ছো কেন? আসো শুয়ে পড়ো।
— আপনি হাসছেন কেন?

সাদ বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে দিলো। রাহা বিছানায় বসে এখনো উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। সাদ পান্জাবীর বোতাম খুলতে খুলতে বললো,
— তোমাকে প্রেগনেন্ট প্রেগনেন্ট লাগছে বুঝছো?
— কি সাংঘাতিক! ছি! কথা বলবেন না আমার সাথে!
— ছি ছি না করে বিছানায় শুয়ে পড়ো। তাছাড়া একদিন না একদিন তোমার প্রেগনেন্ট হওয়াই লাগবে। তাও আমার বাচ্চার। ইন্ট্রেসটিং না?
— অযথা কথা বলছেন আপনি!

রাহা বিছানায় শুয়ে কাথা গায়ে দিল। সাদ পান্জাবী খুলে ফেলেছে ততোক্ষনে। পান্জাবী থেকে এখনো বমির উৎকট গন্ধ আসছে। এটা পড়ে শোয়া সম্ভব না। উন্মুক্ত বুক নিয়ে আয়নায় সামনে হাত বুলিয়ে ঝরঝরে চুলগুলো ঠিক করছে সে। রাহা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে সাদের দিকে। সাদের কাছ থেকে চোখ ফেরানো বিশাল কষ্টকর! কিছুতেই চোখ সরিয়ে অন্যদিকে আনা যাচ্ছেনা! চোখ চলে যাচ্ছে উন্মুক্ত, প্রশস্ত আর্কষনীয় বুকের প্রতিটা শেপের দিকে। ঢোক গিলে আবারো পিটপিট করে তাকাচ্ছে রাহা। অজানা উত্তেজনায় শরীর শিরশিরিয়ে উঠছে। কেমন অদ্ভুত সেই অনুভূতি! ভাষায় ব্যাখ্যা করার শব্দ নেই । সাদের মাদকতায় মাতাল হচ্ছে রাহা এটুকু অনুমান করেছে মনেমনে। সাদকে এতো বিশুদ্ধ রকম মুগ্ধ লাগছে! ওকে খোলা বইয়ের মতো ঠান্ডা স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে। সাদ হাতের ঘড়িটা খুলে টেবিলের উপর রেখে বিছানার কাছে উঠতে উঠতে বললো,

— আমাকে দেখতে হট লাগলে একটু আধটু প্রশংসা করতে পারো মিস। আই ডোন্ট মাইন্ড।
— কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি আপনাকে দেখছি? কি দেখছি? ওই খালি বুক?মেয়েরা আপনার বুক দেখলে হুশ হারিয়ে ফেলবে? জীবনেও না! ছাই!
— আমি কখন বললাম এসব?একলাইন বেশি বললে না? ইয়া আল্লাহ্!!! রাহা? তুমি কি আমার খালি বুকের মজা লুটছো? কি সর্বনাশ ! অসভ্য মেয়ে!
— আপনাকে আমি সভ্য সরল ভেবেছি সাদ ভাই।
— আমি তো কাউকে ভাবতে বলিনি।
— আপনি ভাবতে বাধ্য করেছেন!
— আচ্ছা সরি। আসলে পান্জাবীর অবস্থা তো তুমি জানো। আমি গন্ধযুক্ত পোশাক পড়ে ঘুমাতে পারবো না। তাই খুলে ফেলেছি। আমি সিচুয়েশনের উপর নত রাহা। বুড়োটা আমাকে আলাদা পোশাক দেয়নি। অদ্ভুত!
— কৈফিয়ত দেওয়া লাগবেনা। শুয়ে পড়ুন।

সাদ বালিশে মাথা রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। কালো চাদঁরে মিটমিট করে জ্বলছে নক্ষত্র তারা। শীতের প্রকোপে বক্ষস্থল পযর্ন্ত শুকিয়ে গেছে ঠিক খরার মতো। তবুও মুখ খুলে কোনো সাড়াশব্দ করছেনা। শ্বাস নিতে নিতে নাক বরফের ঠান্ডা হয়ে গেছে, গলা খুশখুশ করছে, হাত পা অবশ হয়ে আসছে রীতিমতো। বিছানায় কেবল একটা কাথা যেটার ভেতরে দুজন একসাথে ঘুমানো ঠিক হবেনা। ভুলবশত কিছু ঘটে গেলে রাহার জন্য বিপদ হবে। সাদ ওপাশ ফিরে হাটু গুটিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।

আজব তো! সাদ ভাইয়া কাথা কি নেন নি? কাথায় টান লাগছে না কেন্? উনি তো পান্জাবী ছাড়া ঘুমিয়েছেন, তার উপর গাছগাছালিতে ঢাকা এই ঘরটাতে অতিরিক্ত ঠান্ডা। উনি কি তাহলে খালি গায়ে….অসম্ভব! অসুখ বাধিয়ে ফেলবেন!

রাহা ঝট করে কাথা ফেলে উঠে বসে। চাঁদের কিরণে সাদের গুটিশুটি শরীরটা অন্যপাশ ফিরে শুয়ে আছে। রাহা সাদের মুখের দিকে ঝুঁকে দেখলো সাদ পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে। স্নিগ্ধ মায়াময় আর্কষিত লাগছে মুখটা। চাঁদের আলোতে চুম্বক ধর্মের মতো খুব করে টানছে। উনার কি শীত করেনা? গায়ের চামড়া কি গন্ডারের চামড়া নাকি? বলতে না বলতে রাহা দেখলো সাদ মৃদ্যূ কম্পনে কম্পিত হচ্ছে, থুতনির উপর সরু ঠোঁটজোড়া হালকা করে কাপছে। হঠাৎ জানালা দিয়ে দুমকা শীতের কনকনে হাওয়া ঢুকে সাদের শরীর সহ চুলগুলোকে কম্পিত করে দিলো। হু হু বাতাসে কপালের উপর চুল আছড়ে পড়ছে অনবরত। কিছু চুল ঘুমন্ত পাপড়িভরা চোখ ছুইয়ে চলছে আবার। কি দারুণ সেই দৃশ্য! ফ্রেমে বন্দি করার মতো মনোরম দৃশ্য! এই দৃশ্য দেখার জন্য পুরো রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে দ্বিধা করবেনা সে! রাহা ঘোর লাগা নয়নে সাদের সৌন্দর্য্য পরিক্রমা অবলোকন করতেই বুঝতে পারলো সাদের শরীর খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে। বুকটা হঠাৎই মোচড় খেয়ে উঠলো। মানুষ মরে গেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়! ভয়ঙ্কর রূপে ঠান্ডা! মৃত্যু — কথাটা রাহার মাথায় খেলে এমন ভয়ংকর ভাবে অস্থির করে তুললো! রাহা সাদকে ওর দিকে ঘুরিয়ে আচমকা সাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আকষ্মিক ঘটনায় সাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে দেখে রাহা তার বুকে মাথা লুকিয়ে পিঠ খাবলে কুকড়ে আছে। গরম হাতদুটো পিঠের উপর লাগাতার উপর টু নিচে বুলাচ্ছে। সাদ মাথাটা একটু নুয়ে দেখলো রাহা কি নিয়ে যেনো ভীষণরূপে ভয় পেয়েছে। খারাপ স্বপ্ন দেখলো নাকি? সাদ ওকে চেপে ধরলো নিজের সাথে। রাহা বুকে মাথা লুকিয়ে নিশব্দে চোখ থেকে তরল কণা ফেলছে। সাদ দুইহাত দিয়ে রাহাকে আবদ্ধ বন্ধনে ঢেকে ধরলো।

— ভয় পাচ্ছো কেনো? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো নাকি? বোকা মেয়ে আমি তো পাশেই শুয়ে আছি। ভয় পেলে কেনো?

রাহা অশ্রান্ত গলায় থেমে থেমে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করে বললো,
— আপনার…শরীর…খুব….ঠান্ডা…ছিলো…
— তুমি ভেবেছো আমি মরে গেলাম নাকি? হা হা রাহা!!

সাদ হো হো করে হেসেই চলছে। এই মেয়ে আস্তা একটা বোকা! সাইন্সে পড়ছে তবুও সাইন্স দিয়ে মাথা খাটায় না। হায়রে! শরীর ঠান্ডা হলেই কেউ মরে যায়? কার্ডিয়াক পেশির কার্যক্রম অচলাবস্থা হলে ব্রেনের সেল সংযোগ হারালে তবেই না আমি মরবো! এভাবে বোকার মতো ভাবলে চলে? রাহার কান্নার ঢল বেড়েই চলছে। নো থামাথামি। সাদ বুঝতে পারলো, যার জন্য নিজে শীত ভোগ করে কাতরাচ্ছে সেই ব্যক্তি শীতল দেহ দেখে ভয় পেয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বুকে কাঁদছে। সাদ হাত বাড়িয়ে কাথাটা নিয়ে নিজের শরীরসহ রাহার শরীরটাও ঢেকে দিলো। রাহার উষ্ণ শরীরের কারনে সাদের শীতল দেহ গরম হতে লাগলো ধীরেধীরে। সাদ বললো,

— তুমি আমাকে ধরেছো ভালো কথা জাস্ট একটু এলার্ট থাকো প্লিজ। আমি চাইনা এক্সেস কিছু হোক।

রাহা পাপড়িভেজা চোখদুটো তুলে পিটপিট করে তাকালো সাদের দিকে। সাদ চোখবন্ধ করে কথা বলছে। রাহা বললো,
— আমি ধরলে যদি আপনার সমস্যা হয়, অস্বস্তি লাগে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। দুঃখিত আমি। ভুল করেও আমি আপনাকে ধরবো না। আর কখনো আপনার অনুমতি ছাড়া কাছে আসবো না। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি…ভুল হয়ে গেছে,

রাহা ছেড়ে দিতে চাইলে সাদ আরো দৃঢ় করে চেপে ধরলো নিজের সাথে। দম আটকে আসলো রাহার। কিছু বললো না। সাদ চুপটি মেরে আছে। রাহা ফের বললো,
— আমি বুঝতে পেরেছি সাদ ভাইয়া আপনার সমস্যা হচ্ছে। প্লিজ আমার মন রাখার জন্য ধরতে হবেনা। ছেড়ে দিন,
সাদ রাগের সাথে তেজ মিশিয়ে বললো,
— কিসের সমস্যা? একদম বুকের সাথে মিশিয়ে দম আটকে মেরে ফেলবো! পিঠে হাত বুলিয়ে দাও ভালো লাগছে।

রাহা কথামতো পিঠে আলতো স্পর্শে হাত চালাতে লাগলো। সাদের বুকে যতবার নাক ঠেকছে সেই পরিচিত ঘ্রাণের সুভাস পাচ্ছে। ঘ্রাণটা শুকলেই বোঝা যায় সাদ সাদ ঘ্রাণ। এটা কেবল সাদের নিজস্ব! মিষ্টি সেই ঘাণ! যেটা সাদ ছাড়া অন্যকারোর কোনোদিন হবেনা। কখনো না। সাদ অনেকক্ষন চুপ থেকে নিবরতা চিড়ে বলে উঠলো,

— তোমায় পেলে স্বর্গীয় সুখ কেনো হয় রাহা? কি আছে তোমাতে যেটা অন্য কারোর মধ্যে পাইনা? তুমি আমার কাছ থেকে দূর থাকলেও মনেহয় কতো যে কাছে আছো। আচ্ছা এই সুখের নাম কি? সুখটাকে অনুভব করলে মনে হয় I’m the king of the world! I’m the most happiest person in my own kingdom! রাজকীয় সভায় সবচেয়ে দামী রাজা মনে হয় তোমাকে পেলে। অদ্ভুত কেনো এই সুখটা? বলতে পারবে তুমি? চোখে যা দেখতে পাই নতুনভাবে জিনিসটার প্রেমে পড়ে যাই – নাম কি এই অনুভূতির? আমাকে কঠিন ভাবে সম্মোহন করেছো রাহা! এই সম্মোহন করার মতো প্রাপ্তিটার নাম তবে কি অদ্ভুত সম্মোহনী? প্লিজ বলো না!!

-চলবে

(রিচেক দেয়নি! সরি!তবে সম্মোহন শুরু হবে সম্মোহন❤)

#ফাবিয়াহ্_মম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here