অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি #পর্ব_৪

0
502

#অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_মুসাফফা_মারহামা_মিম

_____________________
সাদিয়ারা জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই লক্ষ্য করলো দুরে মশাল হাতে নিয়ে সানজানা দাঁড়িয়ে আছে।মৃদু বাতাসের কারনে মশালে থাকা আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।সানজানার পাশেই আফজাল সাহেব কুড়াল হাতে দাঁড়ানো।তাদের সাথে সেখানে আরেকজনকেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।কিন্তু সে কি পুরুষ নাকি মহিলা তা বুঝা মুশকিল। কারন মানবটির গাত্রে লম্বা চাদর ঝুলছে।আর এতটা দূর থেকে বিশ্লেষণ করাও কোনো সহজসাধ্য কাজ নয়।ক্ষানিকটা পর আফজাল সাহেব কুড়াল দিয়ে ভুতলে আঘাত করতে থাকলেন।দূর থেকে আপাতত এটাই মনে হচ্ছে।কিন্তু সাদিয়া বেশ বুদ্ধিমতী তরুণী। তার বুঝতে বিলম্ব হলোনা যে এখানে কি হচ্ছে।আফজাল সাহেব মুলত কবর খুড়ছেন।কিন্তু কার জন্য এটা বুঝা যাচ্ছেনা।সেই সাথে সানজানাকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের বিস্ময়ের পরিসীমার যেন অন্ত নেই।তবে তারা প্রচণ্ড ভীতিগ্রস্ত এবং বিস্ময় হয়ে সেথায় অবস্থান করছে। মাঝ রাতে উঠে কবর খনন করা এবং সেটাকে প্রচ্ছন্নে( লুকায়িত) অবলোকন করা মোটেও স্বাভাবিক কাজ নয়।এসবে নিজের মধ্যে ভয়ের আবির্ভাব হবে এটাই নৈসর্গিক (স্বাভাবিক)। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ থেকেই ফিজার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো।সে বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে মূর্ছা যাওয়ার পূর্ব মূহুর্ত এটি।অবস্থা বেগতিক দেখে সাদিয়া কক্ষে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।সাদিয়ার পরিকল্পনা ছিলো সে কিছুক্ষণ এখানে থেকে দেখবে কবরটি আসলে কার।কিন্তু তা দেখা হবেনা ফিজার জন্য।সাদিয়া বাধ্য হয়েই কক্ষে ফিরে আসলো।।ফিজাকে খাটে শুইয়ে দিলো। সাজিদকেও অস্বাভাবিক লাগছে।কিন্তু সে ফিজার মত অতটা ভেঙে পড়েনি। সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিমূহুর্তে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
রিফা এবং রাজিয়া সাদিয়াদের দেখেই সানজানার সম্পর্কে জানতে চাইলো।সাদিয়া বললো -সেখানে কি দেখেছি এটা না হয় তোদের সকালে বলি।দেখতেই পাচ্ছিস ফিজার অবস্থা। তোরাও যদি অস্বাভাবিক হয়ে যাস তবে সানজানার কাছে আমরা ধরা পরে যাবো। সাদিয়া সাজিদের দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বললো।

“ভাই তুই তোর রুমে চলে যা। চিন্তা করিস না কাল আমরা গ্রামের মানুষদের থেকে এখানের রাস্তাঘাট সম্পর্কে জেনে নিবো।এবং কালই আমরা চলে যাবো এখান থেকে।

” রিফা বললো- সানজানাকে রেখেই?

“হ্যাঁ, আমরা যে যাবো সেটা সানজানা বা আফজাল সাহেব কাওকেই আমরা বলবোনা।আল্লাহ আল্লাহ করে এই রাত টা পাড় হতে পারলেই হলো।

” রাজিয়া বললো-দোস্ত খারাপ কিছুকি দেখেছিস?

“হ্যাঁ অনেক খারাপ।সানজানাকে বিশ্বাস করা আমাদের উচিত হয়নি।

ফিজা শুয়ে শুয়েই বললো।সানজানা কেন আমাদের কাছে বিষয় গুলো লুকাচ্ছে।আমি আর কিছু চাইনা শুধু এখান থেকে বের হতে চাই।

সাদিয়া বললো- হবো হবো আমরা সবাই এখান থেকে বের হবো।কালই আমরা গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলবো।নে এবার তোরা শুয়ে পড় আর নয়তো সানজানা আমাদের জাগ্রত দেখতে পেলে বুঝে যাবে আমরা যে তাকে লক্ষ্য করছি।

সাদিয়ার কথা শুনে সকলে শুয়ে পড়লো।সাজিদও উপরে চলে গেলো।সাজিদ যাওয়ার পূর্বে সাদিয়া আয়াতুল কুরসি, চার কুল পড়ে তার শরীরে ফুঁ দিয়ে দিয়েছে। সাদিয়া চিন্তা করলো সে আবারো ওই ঘরটিতে যাবে।সেখানে কি হচ্ছে এটা তাকে জানতেই হবে।সাদিয়া একপলক ঘড়ির দিকে তাকালো।ঘরিতে সময় দেখাচ্ছে দেড়টা।মানে সানজানাদের যাওয়ার পর পুরো দেড় ঘন্টা কেটে গিয়েছে। সাদিয়া ফিজার পাশেই শুয়ে থাকলো।ফিজা, রিফা,আর রাজিয়া ঘুমিয়ে গেলেই সে আবারো ওই কক্ষে প্রবেশ করবে। গতকাল ভালো ঘুম না হওয়ার দরুন বিছানায় গা এলাতেই সাদিয়া গভীর ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো।সাদিয়ার যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে নিজেকে আবিস্কার করলো উত্তরের বাড়ির জংগলটিতে।সে এখানে কিভাবে এসেছে তার জানা নেই। এখনও ভোরের আলো ফুটেনি। গগনে নক্ষত্ররা ঘুরে বেড়াচ্ছে।ঝিঁঝিরা একমনে ডেকে যাচ্ছে।কিছুক্ষন পর সাদিয়া সানজানার আওয়াজ শুনতে পেলো।সানজানা তার পাশেই বসে আছে।দু পা ভাজ করে বসে আছে।চুল গুলো তার মুখের উপর। সে সেথায় বসে থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ করছে।সাদিয়া সানজানাকে এহেন অবস্থায় দেখে আতকে উঠলো।সে মন্থর( ধীর) গতিতে উঠে বসলো।এবং কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো।দোস্ত কি হয়েছে তোর।জংগোলের মাঝখানে চুল ছেড়ে বসে আছিস কেন?

সানজানা কিছু না বলে মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিলো। তাকে অস্বাভাবিক লাগছে।চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে।দেখে মনে হচ্ছে সে সাদিয়ার উপর প্রচণ্ড রেগে আছে।কিছুক্ষণ পর সে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।তার হাসির শব্দ পুরো জংগোলে প্রতিধ্বনিত হয়ে দ্বিগুণ আকার ধারণ করলো।সাদিয়া স্বীয় কর্ণ চেপে ধরলো। সে খুব ভয় পাচ্ছে।সাদিয়া আশে পাশে চোখ বুলালো।সে কাওকেই দেখতে পেলোনা।ইচ্ছে করছে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।কিন্তু কোন দিকে যাবে সে!সাদিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে সানজানাকে নরম গলায় বললো- দোস্ত তুই ঠিক আছিস?

সানজানা সাদিয়ার এহেন প্রশ্নে রেগে গেলো।সে সাদিয়ার বাহুতে শক্ত করে ধরে ক্ষুব্ধ গলায় বললো।আমি এতক্ষণ ঠিকই ছিলাম কিন্তু এখন আর ঠিক নেই।তুই ফিজাকে নিয়ে ওই ঘরে কেন গিয়েছিলি।

“কোন ঘরে?

” নাটক করিস না,তুই ওই ঘরের জানালা দিয়ে আমাদের দেখছিলি না? সানজানা হাত উঁচু করে শেষ কক্ষটির দিকে ইশারা করলো।

“সাদিয়া নিশ্চুপ।

” সানজানা আবারো বললো।তুই জানতে চাস আমি কাকে কবর দিয়েছি।আয় তোকে দেখাচ্ছি।
সানজানা সাদিয়াকে কবরের সম্মুখে নিয়ে এলো।সাদিয়ার হৃদস্পন্দন ধুকধুক শব্দ করছে।অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে।সে ভয়ে ভয়ে সেদিকে তাকালো।আফজাল সাহেব একটি কুড়াল দিয়ে কবরটি পুনরায় খুদাই করলেন।কবর খনন কাজ প্রায়ই শেষ।সাদা কাপড়ে আবৃত একজন মানুষ সেখানে শুয়ে আছে।সাদিয়া লাশের পাশেই দণ্ডায়মান। তার পা থরথর করে কাপছে।মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরেই পৃথ্বীতে থাকার সময় শেষ হয়ে যাবে তার।সাদিয়াকে অপ্রস্তুত দেখে সানজানা তার কানে ফিস ফিস করে বললো।যা নিজেই দেখে নে এটা কে?

“সাদিয়া ঠান্ডা দৃষ্টিতে সানজানার দিকে তাকালো।।সানজানার চোখে মুখে এক ধরনের হিংস্রতা বিরাজ করছে।সাদিয়া তাকে এই আকৃতিতে প্রথম দেখেছে।এর আগে কখনো সানজানাকে এমন লাগেনি।সাদিয়াকে স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সানজানা আবারো বললো।

” কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দেখ মানুষটা তোর পরিচিত কিনা?

সাদিয়া ছলছল নয়নে লাশ টির কাছে এগিয়ে গেলো।লাশ টির মাথা থেকে কাপড় সরাতেই সে চিৎকার দিয়ে উঠলো।এবং সানজানার সম্মুখে এসে ক্ষুব্ধ গলায় বললো।

” আমি তোর এমন কি ক্ষতি করেছি যে আমার ভাইয়ের সাথে এমন করলি।

“সানজানা কিছুই বললোনা সে পুনরায় বিকট স্বরে হাসতে থাকলো।কিছুক্ষণ পর সানজানার মুখের অবয়ব পরিবর্তন হয়ে গেলো। সাদিয়া সানজানার দিকে তাকিয়ে বিস্ময় গলায় বললো ।

” আপনি সানজানা নন।সেদিন আপনিই আমাকে বলেছিলেন সাদমানকে সাহায্য না করতে।আপনি কে বলুন?

“আমি আবার কে হতে যাবো।আমি সানজানা।আর সানজানাই আমি।আমি হলাম ডাইনী।তোরা একটাও এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবিনা।আমি সবাইকে মেরে ফেলবো। এটুকু বলেই সে আবারো তার বিকট হাসিতে ফিরে গেলো। পুরো জংগোলে বিরাজ করছে এক ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা।

সাদিয়া তার ভাইয়ের লাশ দেখবে সে কস্মিনকালেও এটা ভাবেনি।সে এখন আর তার মধ্যে নেই।ভয়, কষ্ট সব কিছু দুর হয়ে গেছে তার মধ্য থেকে।এখন শুধু তার মধ্যে যেটা রয়েছে সেটা হলো রাগ,ঘৃণা ,সে প্রচণ্ড রেগে আছে।তার ললাটের পার্শ্বদেশ ফুলে গিয়েছে।সাদিয়া ওই মূহুর্তে কোনো কিছু না ভেবেই আফজাল সাহেবের থেকে কুড়ালটি নিয়ে নিলো।কুড়াল দিয়ে ওই ডাইনীকে আঘাত করতেই যাবে এহেন সময় সে বায়ুপ্রবাহের সাথে মিলিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর আফজাল সাহেব ভয়ঙ্কর দানবের রুপ নিলেন।তিনি সাদিয়াকে পিছন থেকে ধাওয়া করলেন।সাদিয়া দৌড়ে সেই উত্তরের বাড়িটিতে প্রবেশ করলো। পুরো বাড়িতে ভয়াবহ তিমির আবির্ভাব। সাদিয়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।সে দেয়াল ছুয়ে ছুয়ে সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর ফিজার চিৎকার শুনা গেলো। ফিজা যেন এটাই বলতে চাচ্ছে সাদিয়া আমাকে বাঁচা।ফিজার আওয়াজ অনুসরণ করে সাদিয়া সেদিকে আগাতে থাকলো। সে কক্ষটির সম্মুখে চলে এসেছে।দরজার সম্মুখে দাঁড়াতেই সানজানা বিকট হাসি দিয়ে কক্ষের দরজা খুলে দিলো।সাদিয়ার গা শিরশির করে উঠলো। শ্বাস প্রশ্বাসের ঘনত্ব বাড়তে থাকলো।
সে প্রানপনে পিছন দিকে দৌড়াচ্ছে।কিছুক্ষন পর কিছু একটার সাথে সংঘর্ষ লেগে সাদিয়া সেখানেই পরে গেলো।সে উঠতে চাইলো।কিন্তু ব্যর্থ হলো।আকস্মিক নিচ থেকে কেউ একজন তার হাত চেপে ধরলো।সাদিয়া উচ্চরবে চিৎকার করলো।হাত ধরে থাকা ব্যক্তিটি সাদিয়াকে আপু বলে ডাক দিতেই সাদিয়া নিজেকে শান্ত করে নিলো।সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো।ভাই তোর কিছু হবেনা।আমি তোকে এখান থেকে বের করবো।সব দোষ আমার আমি কেন তোকে ওই ঘরে নিয়ে গিয়েছিলাম।

সাদিয়ার প্রফুল্ল কপোল বয়ে অশ্রুজল মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে।সে যে করেই হোক এসব থেকে মুক্তি চায়।সাদিয়া তার ভাইকে উঠাতে চাইলো।ঠিক সেই মুহূর্তে সাজিদ তার গলা চেপে ধরলো।এবং গলার স্বর পালটিয়ে বললো।

কিরে কেমন দিলাম বল? আমি তোর ভাই না।আমি ডায়নী।এটুকু বলেই সে আবারো অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। পুরো অন্দরমহলে হাসির বিকট শব্দ বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে অন্দরমহলেই আটকে থাকলো।সাদিয়ার প্রান যায় যায় অবস্থা। সে শ্বাস নিতে পর্যন্ত পারছেনা।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। এহেন সময় কক্ষে মশাল হাতে কেউ প্রবেশ করলো। মশালের দীপ্ত আলো দেখে ডায়নী উধাও হয়ে গেলো।মশাল হাতে থাকা ব্যক্তিটি সাদিয়ার কাছে আসতেই সাদিয়া কাশতে কাশতে বললো।প্লিজ আমাকে এখান থেকে বের করুন।আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে চাই । মশাল হাতে ব্যক্তিটি উদাস গলায় বললো।তুমি এখানে কি করছো সাদিয়া।

“কন্ঠটি সাদিয়ার বহু পরিচিত।সাদিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো।সাদমান ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।এখন আমাকেও মেরে ফেলতে চায়।আমাকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করুন।

” আমি কি করে সাহায্য করবো তোমাকে। আমিতো সকলের কাছে মৃত।

“সবাই আপনাকে মৃত ভাবলেও আমি জানি আপনি মৃত না।আমি আপনাকেও এখান থেকে নিয়ে যাবো।

“আমি কখনোই এখান থেকে বের হতে পারবোনা সাদিয়া।কারন এখানে যারা একবার আসে তারা কখনোই এখান থেকে বের হতে পারেনা।তুমিও হয়তো পারবেনা।

” না আমি পারবো।আপনিও পারবেন। আপনি শুধু আমাকে বলুন বের হওয়ার রাস্তা কোথায়?

“আমি নিজেও জানিনা সাদিয়া।আমিতো এখানে আসার পর হাঁটাই ভুলে গিয়েছি।

” তাহলে আমার কাছে কিভাবে আসলেন।

“তুমি স্বপ্নে আছো তাই আমাকে হাঁটতে দেখেছো।বাস্তব জীবনে আমি রোগক্লিষ্ট অতিসয় দূর্বল একজন মানুষ।

” না আমি স্বপ্নে নাই।আমি আপনাকে ভালোবাসি সাদমান।স্বপ্ন এতটা পরিস্কার কখনো হয়না।আপনি আমার সাথে চলুন প্লিজ।

“সাদমান সাদিয়াকে স্বীয় স্থানে রেখেই অদৃশ্য হয়ে গেলো।সাদিয়া জানালার দিকে দৃষ্টি রাখতেই লক্ষ্য করলো।গগনের বুক চিরে সূর্যিমামা ধরণিতে উঁকি দিচ্ছেন। এখন হয়তো পৃথিবী জেগে উঠবে।
রাতের এই ভয়ানক তাণ্ডব ভুলে যাবে।দিন গড়িয়ে যখন রাত হবে তখন আবারো এই বাড়িটি ভয়াবহ ধ্বংসলীলায় মেতে উঠবে। সাদমানের প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে সাদিয়ার চোখ ভিজে উঠলো।সে স্বীয় চক্ষু বন্ধ করে ফেললো।ঊষারবির সূক্ষ্ম আলোকরশ্মি তার চোখে পড়তেই সে আবারো চোখ খুললো।সে এবার নিজেকে আবিস্কার করলো সানজানাদের বাড়িতে।সে খাটের উপর শুয়ে আছে।জানালা ভেদ করে সূর্যিমামার রাজত্ব এখন কক্ষে।সাদিয়া উঠে বসলো।সে পুরো কক্ষে কাওকেই দেখতে পেলোনা। হন্তদন্ত হয়ে খাট থেকে নামলো। এবং জোড় গলায় সাজিদের নাম ধরে ডাকতে থাকলো।সাজিদ উঠান থেকে দৌড়ে সাদিয়ার সম্মুখে আসতেই সাদিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।সাদিয়াকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে।বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটি মানসিক ভাবে ভালো নেই। সাজিদের সাথে ফিজা আর রিফাও এসেছে।সাজিদ বোনের এহেন আচরণে কিছুটা অবাক হলো।

সাদিয়া কোমল গলায় বললো।ভাই তুই ঠিক আছিস?

” হ্যাঁ আপু আমি একদম ঠিক আছি।আমি ফজরের নামাজ পড়েই তোমার কাছে এসেছিলাম।কিন্তু তুমি ঘুমাচ্ছিলে।অনেকবার তোমাকে ডেকেছি। তুমি উঠোনি এরপর ফিজা আপু বললো আর ডাক না দিতে।তাই আর ডাক দেইনি।
তুমি কি ঠিক আছো আপু।

“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।তবে আর ঠিক থাকবোনা।সাদিয়া কঠিন গলায় ফিজাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

সানজানা কোথায়?

” ও রাজিয়াকে নিয়ে পাশের বাড়ি থেকে পেয়াজ আনতে গেছে।

“আমি ওকে নিজ হাতে খুন করবো।ও একটা ডায়নী।

” ফিজা অপ্রস্তুত গলায় বললো।তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিস।

“হ্যা আমি সব বুঝেই বলছি আমি স্বপ্নে সব দেখেছি।

সাদিয়া তার কথার ইতি টেনে ব্যাগ থেকে চাকু বের করলো।খুবই ধারালো চাকু।কিনেছে বেশিদিন হয়নি। সে এই চাকুটি দিয়েই আপাতত সানজানাকে মারতে চায়।ফিজা সাদিয়ার এ কাণ্ড দেখে তার সম্মুখে এসে দাড়ালো। সাদিয়া রেগে অগ্নিশর্মা। ফিজা সাদিয়ার দু বাহু ধরে শান্ত গলায় বললো।

” শোন আগে মাথা ঠান্ডা কর। স্বপ্নে কি কি দেখেছিস আমাদের বল।

“আমি আমার মাথা ঠান্ডা করতে পারছিনা ফিজা।স্বপ্নের কথা ভাবতেই আমার শরীর কেঁপে উঠছে।

” আচ্ছা ঠিকাছে তোর স্বপ্নের কথা বলতে হবেনা।কিন্তু আমার কথা শোন এখন যদি তুই সানজানাকে মেরে ফেলিস।তাহলে আফজাল সাহেব সাজিদকে মেরে ফেলবে।এটাকি তোর ভালো লাগবে?

“সাদিয়া ছলছল নয়নে সাজিদের দিকে তাকালো।সাজিদও বোনের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সাজিদ হয়তো বোনকে কিছুটা বুঝতে পারছে।সাদিয়া খানিকক্ষণ পর তার হাতে থাকা চাকুটি ফিজার হাতে দিয়ে দিলো।এবং স্বাভাবিক গলায় বললো।আমি ওই বাড়িটিতে যেতে চাই।

” ফিজা,রিফা,সাজিদ তিনজনই সাদিয়ার কথা শুনে তাদের কপালে ঈষৎ ভাজ ফেললো। তারা ঘাবড়ে গেলো। ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কাল রাতে তারা স্বচক্ষে দেখেছে সেখানে কি হয়।ভালো কিছুযে হয়না এটা নিশ্চিত। অথচ তার নাকি সেই বাড়িতে যাওয়ার সখ হয়েছে।তিনজনকে নিরব থাকতে দেখে সাদিয়া নিরবতা ভেঙে বললো।আমি জানি তোরা আমাকে বিশ্বাস করবিনা।কিন্তু সত্যি বলছি ওই বাড়িতেই সাদমান রয়েছে।

“ফিজা বললো।সাদমান ওই বাড়িতে আছে এটা তোকে কে বলেছে শুনি?

” স্বপ্নে দেখেছি।

“আমি খুব অবাক হচ্ছি সাদিয়া তোর কথা শুনে।তোর মত একটা ধার্মিক মেয়ে স্বপ্নে তোকে যা বলেছে তাই বিশ্বাস করছিস।এবং সেটা বিশ্বাস করে সানজানাকেও মারতে যাচ্ছিস।এখন আবার সাদমানের কথা বলছিস। তুই কি আদৌ ঠিক আছিস?

” সাদিয়া নিশ্চুপ।তার দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ।দু চোখ অশ্রুসিক্ত।

“সাদিয়াকে কাঁদতে দেখে সাজিদ তার পাশে এসে বললো।আপু ঠিকাছে আমরা যাবো ওই বাড়িতে বলো কখন যাবে?

” ফিজা উদাস গলায় বললো।সাজিদ তুমিও কি তোমার বোনের সাথে পাগল হয়ে গেলে।ও মানসিক ভাবে ভালো নেই তাই এসব আবোলতাবোল বলছে।

“সাজিদ বললো।আপুর যদি মনে হয় সেখানে গেলে সাদমান ভাইয়াকে পাবে তবে আমাদের একবার সেখানে গিয়ে দেখা উচিত। কারন আপু এখানে আসার পর থেকে সাদমান ভাইয়াকে এ নিয়ে দু বার স্বপ্নে দেখেছে।যেহেতু বারবার একই স্বপ্ন দেখেছে আমার কাছে মনে হচ্ছে এ স্বপ্ন অর্থবহ।

” ও সাদমানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে এই কারনেও হতে পারে বারবার স্বপ্ন দেখছে।

“সাদিয়া এবার নিরবতা ভেঙে বললো।তোরা না যেতে চাইলে যাসনা কিন্তু আমি যাবো।ওই বাড়িতে না যাওয়া অবধি আমি ঢাকা ফিরে যাবোনা।

” সানজানার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।বুঝাই যাচ্ছে সে তার কাজ সম্পন্ন করে ফিরে এসেছে।উঠানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফিজা আর রিফার নাম ধরে ডাকছে।সকালের জন্য কিছু একটা রান্না করতে হবে।তাই সকলের থেকে জেনে নিতে চায়।ফিজা সানজানার ডাক শুনে রিফাকে বাহিরে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো।রিফা চলে গেলো।

ফিজা সাদিয়াকে শান্ত করে বললো।আচ্ছা ঠিকাছে তুই যা চাচ্ছিস তাই হবে।কিন্তু সানজানার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করবিনা কেমন? আর আজ আমরা গ্রামের মানুষদের কাছে এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা জেনে নিবো।

“সাদিয়া মাথা নাড়ালো।ফিজা চলে গেলো।সাজিদ এসে সাদিয়ার পাশে বসলো। বোনের কাধে হাত দিয়ে বললো।আপু তুমিই আমাকে বলেছো ওরা যদি আমাদের কাছে ধরা না দেয় তবে যেন আমরাও চুপ থাকি।অথচ আজ তোমার কি হলো বলোতো?

” সাদিয়া শুকনো দৃষ্টিতে সাজিদের তাকিয়ে বললো।আমি ঠিক আছি ভাই।এখন নামাজ পড়তে চাই।ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছে।ব্যপারটি ভেবে খারাপ লাগছে।

“থাক কষ্ট পেওনা। তুমিতো আর ইচ্ছে করে কাজা করোনি।তোমাকে দেখেও ক্লান্ত লাগছে খুব।যাও এখন অজু করে নামাজ পড়ে নাও।

” সাজিদ চলে আসার জন্য উদগ্রীব হলো। পিছন থেকে আবারো সাদিয়ার ডাক পড়লো।সাজিদ ঘুরে দাড়ালো। সাদিয়া নরম গলায় বললো।আমি কিন্তু সত্যিই সেখানে যেতে চাই সাজিদ।

“সাজিদ ঈষৎ মাথা ঝুকালো।

আসছে।

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here